
দামুড়হুদায় দায়সারা গোছের জাতীয় প্রাণীসম্পদ মেলার উদ্বোধন করা হয়েছে। “দেশীয় জাত, আধুনিক প্রযুক্তি প্রাণিসম্পদ হবে উন্নতি” এই প্রতিপাদ্য সামনে রেখে দামুড়হুদায় জাতীয় প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ ও প্রদর্শনী মেলা দায়সারা ভাবে উদ্বোধন করা হয়। মেলার মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য উদ্যোক্তা ও খামারিদের উৎসাহিত ও উদ্বুদ্ধ করা হলেও, উপজেলার বড় বড় খামারিদের কেউই মেলা সম্পর্কে অবগত নন।
উদ্বোধনী র্যালীতে অংশ নেন আয়োজক কমিটিসহ সরকারি কয়েকজন কর্মকর্তা। সেখানে খামারী ও উদ্যোক্তাদের উপস্থিতি চোখে পড়েনি। মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও আয়োজনে হ-য-ব-র-ল পরিস্থিতি দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খামারী, উদ্যোক্তা ও সচেতন মহল। এছাড়াও মেলার স্টলগুলো ফাঁকা পড়ে থাকতে দেখা গেছে। গুটি কয়েকটি স্টলে রুগ্ন পশু-পাখি প্রদর্শন করা হয়, যা নিয়েও অতিথিদের মুখে নানা সমালোচনা শোনা গেছে।
গতকাল বুধবার সকাল ১১টায় প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল দামুড়হুদার বাস্তবায়নে এবং প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প (এলডিডিপি), প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় উপজেলা পরিষদ চত্বরে প্রাণিসম্পদ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা।
দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তিথি মিত্রের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্রের উপপরিচালক ডা. আ. হা. ম. শামীমুজ্জামান। তিনি বলেন, প্রাণিসম্পদ দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। পুষ্টি ও দরিদ্র বিমোচনে এবং গ্রামীণ জীবিকায় এ খাতটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
দামুড়হুদা উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা হারুনুর রশিদের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নীলিমা আক্তার হ্যাপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে এইচ তাসফিকুর রহমান, উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা ডা. মশিউর রহমান। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিআরডিবি কর্মকর্তা লুৎফর নাহার, সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা ফারুক মহালদার, আইসিটি কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম প্রমুখ।
উপজেলা পরিষদ চত্বরে প্রদর্শনী দেখতে আসা অনেকেই বলেন, সত্যিকার অর্থে প্রাণিসম্পদ খাতকে উন্নত করতে হলে তৃণমূল পর্যায়ের খামারিদের যথাযথ মূল্যায়ন করা উচিত। তাদের অভিযোগ বছরে এক-দুই দিন মেলার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না; প্রকৃত ও সক্রিয় খামারিদের মূল্যায়ন করা হয় না।
কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের এক ভেড়া খামারী জানান, ৮/১০ বছর ধরে তিনি ভেড়া পালন করছেন এবং তার খামারে প্রায় ৫০টি ভেড়া রয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত তিনি সরকারি প্রাণিসম্পদের কোনো সেবা পাননি। পিপিআরসহ নানা রোগের টিকার জন্য নিজ খরচে বাইরে থেকে সংগ্রহ করতে হয়। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “সরকারি কোনো সেবা পেলাম না, মেলা হলেও জানতে পারি না।”
হাউলী ইউনিয়নের ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল পালনকারী এক নারী খামারী বলেন, তিনি প্রায় ৩০ বছর ধরে ছাগল পালন করছেন। বর্তমানে তার বাড়িতে ২৮টি ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল আছে। কিন্তু কেউ কখনো খোঁজ নেয়নি। তিনি বলেন, “প্রাণিসম্পদ কী—তারা কী করে, আমি জানি না। ছাগলের পিপিআর টিকাও আমাকে নিজের টাকা দিয়ে সংগ্রহ করতে হয়।”
দামুড়হুদা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মুরশেদ বিন ফয়সাল বলেন, সরকার প্রতিটি খাতকে উন্নত করতে প্রচারণা ও সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়োজন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এ মেলা সম্পর্কে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদেরও জানানো হয়নি। তিনি বলেন, “সরকারের উদ্দেশ্য প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনীর মাধ্যমে মানুষকে উন্নত জাতের পশুপাখি লালন-পালনে উদ্বুদ্ধ করা। কিন্তু দামুড়হুদায় তার ঠিক উল্টোটা দেখা গেছে।”
দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তিথি মিত্র বলেন, “আমাকে শুধু অনুষ্ঠানের সভাপতি করা হয়েছে। এর বাইরে আর কিছু আমার জানা নেই।”


