
দেশের ঐতিহ্যবাহী বড় চিনিকল চুয়াডাঙ্গার দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানি ৬৩ কোটি টাকার পুঞ্জীভূত ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে ৮৮তম আখ মাড়াই মৌসুমের কার্যক্রম শুরু করেছে।
গতকাল শুক্রবার বিকেল ৪টার সময় চিনিকলের ক্যান ক্যারিয়ারে আখ নিক্ষেপ করে মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন করেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। এর আগে মিলের ক্যান ক্যারিয়ার প্রাঙ্গণে চলতি আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রশিদুল হাসান। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি মো. রেজাউল হক।
উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম, সার্বিক ব্যবস্থাপনায় কেরু অ্যান্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রাব্বিক হাসান, দামুড়হুদা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এ এইচ এম তাসফিকুর রহমান, দর্শনা পৌর বিএনপির প্রধান সমন্বয়ক হাবিবুর রহমান বুলেট।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৬৪ মাড়াই দিবসে ৭২ হাজার ২৩৫ মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ৩ হাজার ৬৮৫ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদন করা হয়। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৭২ মাড়াই দিবসে ৭৬ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ৪ হাজার ২৫৬ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে মিল কর্তৃপক্ষ। দৈনিক আখ মাড়াই ক্ষমতা ১ হাজার ১৫০ মেট্রিক টন। মিল চালুর পর থেকে ৮৮টি মৌসুমেই লোকসান হয়েছে, ফলে মিলের ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৩ কোটি ৫০ লাখ ৫১ হাজার ৩৪৫ টাকা। পরে ৮ জন আখচাষীর মাঝে ক্রেস্ট প্রদান করেন শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান।
প্রায় ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে মিল হাউজে নতুন যন্ত্রপাতি সংযোজন করে চিনিকলটিকে আধুনিকায়নের কাজ চলছে। এতে আখ মাড়াই ও চিনি উৎপাদনের সক্ষমতা বাড়বে। তবে এলাকায় আখ চাষ ক্রমাগত কমে যাওয়ায় সংকটে পড়েছে দেশের এই ঐতিহ্যবাহী চিনিকলটি। চাষিদের দাবির প্রেক্ষিতে মৌসুমে আখের ক্রয়মূল্য বাড়িয়েছে সরকার। এবার প্রতিমণ (৪০ কেজি) আখের মূল্য ২৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যদিও চিনির মূল্য বেড়েছে, তবে আশানুরূপ হারে আখের মূল্য বৃদ্ধি হয়নি বলে অভিযোগ আখচাষীদের। তারা আখের মূল্য আরও বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন।
চিনি আহরণের হার ৫ দশমিক ৬০ শতাংশ ধরা হয়েছে। মিলটি দৈনিক ১ হাজার ১৫০ মেট্রিক টন আখ মাড়াই করবে। ৭২ থেকে ৭৫ দিন মিল চালু থাকবে। মিলজোন এলাকায় এবার আখ রয়েছে ৫ হাজার ৫৬২ একর জমিতে। এর মধ্যে চিনিকলের নিজস্ব খামারে ১ হাজার ৬২৫ একর এবং চাষিদের ৩ হাজার ৯৩৭ একর জমিতে আখ চাষ হয়েছে।
অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন মিলের মহাব্যবস্থাপক (কৃষি) আশরাফুল আলম ভুইয়া। দোয়া পরিচালনা করেন কেরু জামে মসজিদের পেশ ইমাম সামসুজ্জোহা আজাদী। অনুষ্ঠানে মিলের কর্মকর্তা ও আখচাষীরা উপস্থিত ছিলেন।


