মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলায় এক সপ্তাহের ব্যবধানে দু’দফায় বৃষ্টি এবং ঘূর্ণিঝড় অসনির কারনে গত কয়েক দিন ধরে থেমে থেমে বৃষ্টির কারনে ক্ষেতের পাকা ধানে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
এতে চরম হতাশায় পড়েছে কৃষক। একদিকে শ্রমিক সঙ্কট, অন্য দিকে বৈরী আবহাওয়া যেন তাদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্ষেতে কেটে রাখা ধান ঘূর্নিঝড় অশনি বৃষ্টির পানিতে ভাসছে। ধানের ফলন ও দাম ভালো হলেও কৃষকের মুখে হাসি নেই। ধান ঘরে তোলার মুহূর্তে বৈরী আবহাওয়া ও ভারী বৃষ্টির কারণে চাষিরা পড়েছেন উৎকণ্ঠায়। এ ছাড়া শ্রমিক সঙ্কটে ধান ঘরে তোলা নিয়ে খুব চিন্তায় পড়েছেন প্রান্তিক কৃষকরা।তার পরেও মরার উপর খাড়ার ঘা চরম শ্রমিক সংকট। বৃষ্টির কারণে মাঠ কর্দমাক্ত হাওয়াই বেড়েছে শ্রমিকের মজুরি, বেড়েছে পরিবহন খরচ। যে ধান নিয়ে কৃষক স্বপ্ন দেখেছিল সে স্বপ্ন এখন অনেকটাই মলিন।
এ উপজেলায় ঈদের পর থেকে ধান কাটা শুরু হয়েছে। তবে বৈরী আবহাওয়া কৃষকদের ভাবিয়ে তুলেছে। বৃষ্টি হওয়ায় অনেক কৃষক তাদের আধা পাকা ধান কেটে ঘরে তোলার চেষ্টা করছেন। এ সময় পুরোদমে ধানকাটার মৌসুম শুরু হলেও এখনও অধিকাংশ কৃষক ক্ষেতের ধান ঘরে তুলতে পারেনি। আর ২-১ সপ্তাহের মধ্যে মাঠের পাকা ধানগুলো কেটে ঘরে তুলে নেয়ার অপেক্ষায় ছিল। এদিকে সপ্তাহ পার না হতেই ফের গত সোমবার থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় মাঠের পর মাঠ পাকা ধান মাটিতে নূইয়ে পড়েছে। অনেক জমিতে কেটে রাখা ধান বৃষ্টির পানিতে ভাসছে। ধানের সঙ্গে ভাসছে কৃষকদের স্বপ্নও।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, মুজিবনগর উপজেলায় ধানচাষের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছিলো ৩ হাজার ৩ শত ৩০ হেক্টোর। চাষ হয়েছে ৩ হাজার ৫’শ ১৫ হেক্টোর বেশি জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৮৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান বেশি চাষ হয়েছে।
এরমধ্যে মাত্র ৩০ থেকে ৪০ ভাগের মত ধান বাড়িতে এনে পালা দিয়ে রেখেছেন আর গুলো ক্ষেতেই পড়ে ঘূর্ণিঝড় অশনি বৃষ্টির পানিতে ভিজছে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গত সোমবার থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় মাঠের পর মাঠ পাকা ধান মাটিতে নূইয়ে পড়েছে। অনেক জমিতে জমে থাকা পানি কেটে রাখা ধানের ওপড়ে উঠে গেছে। এ বিষয়ে উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়েনের বল্লভপুর গ্রামের চাষী রবিউল ইসলাম জানান, এ বছর আড়ায় বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছিলাম। কষ্টার্জিত ফসল ঘরেতোলার আগেই বৃষ্টির পানিতে ভিজে গেছে তার জমির কেটে রাখা পাকা ধান। কিছু ধান জমিতে কলিয়ে গেছে। একই এলাকার আরো অনেক কৃষক জানান, তাদের কিছু পরিমান ধান ঘরে তুলতে পেরেছেন বাকি কাটা ধান পানিতে ভিজছে,মাঠের আনেক কাটা ধান পানিতে ভাসছে।
মুজিবনগর উপজেলা কৃষি অফিসার আনিছুজ্জামান খান জানান, উপজেলায় এ বছর বোরো ধানের আবাদ লক্ষমাত্রা চেয়ে বেশিই হয়েছে। তেমনি ভাবে ফলনও ভালো হয়েছিলো। গত সোমবার হতে ঘূর্ণিঝড় অশনি প্রভাবে বৃষ্টির কারণে যে সমস্ত বোরো ক্ষেত তলিয়ে গেছে সে সমস্ত ক্ষেতের আইল কেটে দ্রুত পানি বের করে দিতে হবে। তা ছাড়া যেসব ক্ষেতে ধান নুয়ে পড়েছে সেসব ক্ষেতের ধান দ্রুত কাটার জন্য আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি। আমরা কৃষকদের পাশে আছি। মাঠে গিয়ে কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন হস্তান্তর করছি। যাতে করে কৃষকদের কষ্টে অর্জিত ফসল ভালভাবেই সংগ্রহ করতে পারে।
ক্যাপশন:: শ্রমিকের মজুরি বেশি হাওয়ায় মুজিবনগর উপজেলার নাগার মাঠের পানিতে ডুবে যাওয়া কাটা ধান তুলে ডাঙ্গায় নিয়ে আসছে কৃষক ও নাবালক ছেলেরা।