
গাংনী উপজেলার কাথুলী ইউনিয়নের সিমা খাতুন নামের এক উপকার ভোগীর সরকারী খাদ্যবন্ধব কর্মসুচির কার্ডে চাউল না দিয়ে কার্ড ছিড়ে টুকরো টুকরো করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে কর্মসুচীর ডিলার আব্দুস সবুর ইলিয়াসের বিরুদ্ধে। গতকাল বুধবার বেলা ১১ টার সময় খাদ্যবান্ধব কর্মসুচীর কার্ডে চাউল উত্তোলনের সময় কার্ড ছিড়ে ফেলার ঘটনা ঘটে। পরে ছেড়া কার্ডের টুকরোগুলোও সযত্নে গুছিয়ে নিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বাড়ি ফেরেন অসহায় নারী সিমা খাতুন।
সিমা খাতুন গাংনী উপজেলার কাথুী ইউনিয়নের গাড়াবাড়িয়া গ্রামের মৃত মাহাবুলের স্ত্রী।
সিমা খাতুনের অভিযোগে জানাগেছে, আমার স্বামী একমাত্র উপার্জনের ভরসা ছিল। ছোট ছোট ছেলে মেয়ে নিয়ে কোন রকমে সংসার চলতো। এর মধ্যে অসুস্থতার কারনে আমার স্বামী মারা যায়। বিষয়টি জেনে কাথুলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমাকে খাদ্যবান্ধব কর্মসুচির একটি কার্ড করে দেন। সেই কার্ডেও চাউল নিয়ে কোন রকমে আমার ছেলে মেয়েদের খাবার জোগায়।
খাদ্যবান্ধব কর্মসুচীর কাথুলী ইউনিয়নের ডিলার গাড়াবাড়িয়া গ্রামের আব্দুস সবুর ইলিয়াস ইউনিয়নের ৩২৯জন সুবধাভোগীদের কার্ডের মাধ্যমে ১৫ টাকা কেজি দরে চাউল বিক্রি শুরু করেন। প্রথম থেকেই ডিলার ইলিয়াস কার্ডধারীদের চাউলে ওজনে কম দিয়ে আসছেন।ইলিয়াসের চাউল মাপার কাজ করেন সিমা খাতুনের ছেলে মারুফ হোসেন। বুধবার চাউল ওজনের সময় মারুফ প্রচন্ড গরমে হঠাৎ অসুস্থ্য হয়ে পড়লে সে বাড়ি চলে যায়।
এসময় ইলিয়াস তাকে ডাকতে গেলে অসুস্থ্য এই মুহুর্তে চাউল ওজনের কাজ করতে পারবেনা বলে জানায় মারুফ। সে সময় মারুফের মা সিমা খুতন তার কার্ডে চাউল নেয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। মারুফ চাউল ওজনের কাজ করবে না এমন ক্ষোভে সিমা খাতুনের হাত থেকে কার্ড কেড়ে নিয়ে ছিড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলে দেয় ডিলার ইলিয়াস হোসেন। ছেড়া কার্ডের টুকরো গুলো কুড়িয়ে আচলে ঁেবধে চোখ মুছতে মুছতে বাড়ি যান সিমা খাতুন। ডিলার ইলিয়াসের চাউল বিতরণ কাজে নিয়োজিত শ্রমিক মারুফ জানায় শুরু থেকে এ পর্যন্ত সে ইলিয়াসের শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। প্রতিমাসে চাউল বিতরনের সময় ৩০ কেজি চাউলে এক কেজি থেকে ৮০০ গ্রাম চাউল ওজনে কম দেন উপকারভোগীদের। ডিলার ইলিয়াস এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ ভয়ে মুখ খোলেনা বলেও অভিযোগ করেন তিনি। এবিষয়ে গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে মৌখিক আবেদন করেন ভুক্তভোগী সিমা খাতুন।
ডিলার আব্দুস সবুর ইলিয়াস অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,এমন কোন ঘটনায় ঘটেনি। সিমার ছেলে আমার গোডাউনে চাউল ওজনের কাজ করে। সে হঠাৎ কাজ করবেনা বলে চলে যায়। এদিকে আমার ইউনিয়নের ৩২৯জন কার্ডধারী সুবিধাভোগী মানুষ এসে লাইনে দাঁড়িয়ে গরমে কষ্ট করছেন। চাইল না দিতে পারলে তিন শতাধিক মানুষ কষ্ট পাবে এমন ভেবে মারুফকে বার বার অনুরোধ করি। তবুও সে কাজে আসেনি। এি নয়ে একটু কথা কাটাকাটি হয়েছে।
কাথুলী ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান রানা জানান, বর্তমান জনবান্ধব সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কোটি কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়ে দুস্থ অসহায় মানুষকে খাদ্য সহায়তা করে চলেছেন। এটি বিশ্বব্যাপী সরকারের সফলতা। আর এই কার্যক্রমকে যদি কোন ডিলার বাধাগ্রস্থ কওে তার বিরুদ্ধে লাইসেন্স বাতিলসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থঅ নেয়া হবে। তিনি আরও জানান, ঘটনাটি আমি শূনেছি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমার কাছে সিমা খাতুনকে পাঠিয়েছিলেন। আমি এ বিষয় নিয়ে পরিষদে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানাবো।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা ইশরাত জাহান জানান, ডিলার যদি কোন উপকার ভোগীর কার্ড ছিড়ে ফেলে সেটি কঠিন অপরাধ। বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখে ডিলঅরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজিয়া সিদ্দিকা সেতু জানান, সিমা খাতুন নামের একজন নারী আমার কাছে এসে ডিলারের বিরুদ্ধে কার্ড ছিড়ে দেয়ার অভিযোগ করেছেন। আমি তাৎক্ষণিক স্থানীয় চেয়ারম্যান সাহেবকে বিষয়টি তদন্ত করে লিখিত প্রতিবেদন দিতে বলেছি। প্রতিবেদন পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

								
				
