হরিণাকুণ্ডুতে মাদক বিরোধী অভিযানে গাঁজার গাছ উদ্ধার

 ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডুর জোড়াদহ ইউনিয়নের হরিশপুর গ্রামে মাদক বিরোধী অভিযানে আসাদুল ইসলাম চন্টুর বাড়ি থেকে ১২ ফুট লম্বা গাঁজার গাছ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

গতকাল মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকালে এই অভিযান পরিচালনা করেন হরিণাকুণ্ডু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম হাওলাদার।

পুলিশ জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ হরিশপুরের আব্বাস মোড়ের পার্শ্ববর্তী চন্টুর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে একটি বৃহদাকারের ১২ ফুট লম্বা গাঁজার গাছ উদ্ধার করে। তবে অভিযানের সময় চন্টু পলাতক ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। উদ্ধারকৃত গাঁজার গাছ থানায় নিয়ে আসা হয়েছে এবং এ ঘটনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে ওসি শহিদুল ইসলাম হাওলাদার জানান।

তিনি আরও বলেন, “মাদক বিরোধী এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে কাজ করছে হরিণাকুণ্ডু থানার পুলিশ।”

স্থানীয়দের মতে, আসাদুল ইসলাম চন্টু দীর্ঘদিন ধরে গোপনে মাদক চাষ ও সরবরাহের সাথে জড়িত আছে বলে জানা যায়। হরিনাকুণ্ডু থানা পুলিশের মাদক বিরোধী এই অভিযান জনমনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করবে বলে সচেতন মহল অভিমত ব্যক্ত করেন।




ব্যায়ামে আগ্রহ বাড়াচ্ছে ঝিনাইদহের ফিটনেস একাডেমি

প্রতিদিন সকাল হলেই একঝাঁক বয়স্ক মানুষের মেলা বসে ঝিনাইদহের ঐতিহ্যবাহী নবগঙ্গার দেবদারু চত্বরে। অন্য কোন উদ্দেশ্য নয় শুধু একটু সুস্থ থাকার প্রানন্ত এই চেষ্টা। যারা এখানে আসেন তাদের অধিকাংশের বয়স ৪৫ থেকে ৬৫ বছরের মধ্যে।

বলছিলাম ঝিনাইদহের ফিটনেস একাডেমির কথা। এই ফিটনেস একাডেমিটি গড়ে তুলেছেন সোতোকান কারাতের ব্লাকবেল্টধারী কারাতে প্রশিক্ষক কাজী আলী আহম্মেদ লিকু।

ঝিনাইদহের বয়স্ক মানুষদের সুস্থ রাখতে প্রথমে স্বেচ্ছাশ্রমেই তিনি গড়ে তুলেছেন এই প্রতিষ্ঠানটি। হাতেগোনা কয়েক জকনকে নিয়ে এবছরের জুলাই মাসের প্রথম থেকে প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করে। মাত্র তিন মাসে এই একাডেমির সদস্য সংখ্যা এখন ৭০জন। প্রতিদিন সকাল ৬টার পর পরই ব্যায়ামের স্থানে উকিঁ মারে এসব আধা পৌড়ের দল। দলমত নির্বিশেষে ধর্মবর্ণের পরিচয় ভুলে নিজস্ব পদ পদবী উপেক্ষা করে প্রশিক্ষকের নির্দেশনায় চলতে থাকে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গের এই ব্যায়াম।

যারা একবার মানিয়ে নিয়ে এই ব্যায়ামে যোগ দিয়েছে, তাদের কাছে এই ব্যায়াম নেশা জাগিয়েছে, সকাল হলেই তারা আর ঘরে বসে থাকতে পারে না। সোমবার বাদে প্রতিদিন সকাল ৬টা ১৫মি. থেকে শুরু হয়ে শেষ হয় ৭টার কিছুটা পরে।

রাজনীতিবিদ, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যাংকার, শিক্ষক, ব্যবসায়ীসসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ সামিল হয় এক কাতারে। দিনে দিনে এই প্রতিষ্ঠানের কলেবর আরও বৃদ্ধিপাবে বলে ধারণা করেন অংশ গ্রহনকারীরা।

এবিষয়ে একাডেমির প্রশিক্ষক কাজী আলী আহম্মেদ লিকু বলেন, আমি প্রতিষ্ঠান টি শুরু করেছিলাম বয়স্ক মানুষের কথা চিন্তা করেই, তিনি বলেন বাচ্চাদের জন্য “সোতোকান কারাতে দো নামে” আমার একটা প্রতিষ্ঠান আছে সেখানে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রশিক্ষণ নেয়। আমি চিন্তা করলাম এই শহরে বয়স্কদের জন্য ব্যায়ামের কোন প্রতিষ্ঠান নেই, অথচ বয়স্কদের সুস্থ থাকাটা বেশি জরুরি। এসব চিন্তা করেই কয়েকজন কে নিয়ে জুলাই মাসের প্রথম থেকে এই প্রতিষ্ঠানটি শুরু করি। তিনি প্রতিষ্ঠানটি সুন্দর ভাবে পরিচালনা করতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।

এই বিষয়ে একাডেমির নিয়মিত সদস্য ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আশরাফুল ইসলাম পিন্টু বলেন, এই ব্যায়াম আমাদের শরীর সুস্থ রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, ঝিনাইদহ শহরে এই প্রতিষ্ঠানটি চলমান রাখার জন্য আমাদের সকলের সহযোগিতার দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে হবে। প্রশিক্ষককে উপযুক্ত সম্মানের সাথে রাখার চেষ্টা থাকবে সকলের।

ডা. রেজাউল ইসলাম রেজা বলেন শরীর সুস্থ রাখার জন্য ব্যায়ামের বিকল্প নেই। খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণের সাথে সাথে প্রতিদিন নিয়ম করে ৪৫মিনিট ব্যায়াম করা জরুরি। নবগঙ্গা ফিটনেস একাডেমি আমাদের সেই সুযোগ করে দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব আমাদের সকলের।




মুজিবনগর সরকারি ডিগ্রি কলেজে নবীনবরণ অনুষ্ঠিত

মেহেরপুরের মুজিবনগর সরকারি ডিগ্রি কলেজে ২০২৫ সালে ভর্তিকৃত অনার্স প্রথম বর্ষ ও একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নবীনবরণ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ইসমাইল হোসেনের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মেহেরপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. শেখ বখতিয়ার উদ্দিন।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন কলেজ শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক হেলাল উদ্দিন, ছাত্র উপদেষ্টা মোঃ মফিজুল ইসলামসহ নবীন ও প্রবীণ শিক্ষার্থীরা।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রফেসর বখতিয়ার উদ্দিন বর্তমান প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের প্রশংসা করে বলেন, তাদের নেতৃত্বে এই ২৪ এর গণঅভ্যুত্থান ঘটেছে, আমরা পেয়েছি নতুন এক বাংলাদেশ।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তোমরা পড়াশোনা করে মানুষের মতো মানুষ হবে। কিন্তু সমাজের এক শ্রেণির মানুষ আছেন, যাদের ক্ষোভ ও কষ্ট শুধু শিক্ষকদের প্রতি। তাঁরা অন্যান্য সমস্যার প্রতি দৃষ্টি না দিয়ে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বলছেন এটা ভালো লক্ষণ নয়। তোমরা লেখাপড়া করবে, শিক্ষক-গুরুজনদের সম্মান করবে, এবং আমাদের যে কোনো ক্রুটি বা বিচ্যুতির বিরুদ্ধে যুক্তিসঙ্গত কথা বলবে। আগামীতে তোমাদের নেতৃত্বেই একটি সুখী, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে উঠবে আমি বিশ্বাস করি।

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যক্ষ শিক্ষার্থীদের নিয়মিত শ্রেণিকক্ষে অংশগ্রহণের ওপর বিশেষভাবে নির্দেশনা দেন। তিনি বলেন, আগামীতে শ্রেণি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না।

অনুষ্ঠানে ফুল ছিটিয়ে নবীন শিক্ষার্থীদের বরণ করা হয় এবং তাদের হাতে কলেজের লোগো সংবলিত একটি কলম ও রজনীগন্ধার স্টিক উপহার দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা গান পরিবেশন করেন।




কোটচাঁদপুরে গভীর রাতে ২ কৃষকের ৫ গরু চুরির অভিযোগ

ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর কাগমারী গ্রামে একরাত্রে ৫টি গরু চুরির ঘটনা ঘটেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার রাত্র দুইটার সময় ১০ থেকে ১২ জন চোর চক্রের সদস্য পিকআপ ভ্যান, ধারালো অস্ত্র ও পিস্তল নিয়ে এ চুরি সংঘঠিত করেন। গরুর মালিক আলম ও কলম ওই গ্রামের হযরত আলীর ছেলে।

ভুক্তভোগি কলম জানান আমরা কিছু বুঝে উঠার আগেই ১০ থেকে ১২ জন চোর চক্রের সদস্যরা রাত্র ২ টার সময় মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যেই আমাদের গোয়ালঘর থেকে ৩টি গাভী গরু ও ২টি বাছুরসহ মোট ৫টি গরু গাড়িতে তুলে নিয়ে চলে গেছে। আমরা ওই রাতেই কোটচাঁদপুর থানাকে অবহিত করেছি।

ঘটনার প্রতক্ষ্যদর্শি বাওড়ের গার্ড নিলু জানান, রাত ২টা থেকে বাওড়ে আমার ডিউটি ছিলো, আমি ইসমাইল ভাইকে ডাকতে যাচ্ছিলাম, তাকে সাথে নিয়ে বাওড় পাহাড়ায় যাবো বলে। গাড়ি ও লোকজন দেখে আমি তাদের কাছে যায়, তখন চোর চক্রের সদস্যরা আমার গলায় ধারালো অস্ত্র ধরে ও মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে ভয় দেখিয়ে বেধে রাখে। ভয়ে আমি কথা বলতে পারিনি । তারা সংখ্যায় ১০ থেকে ১২ ছিলো।
আপনি কাউকে চিনতে পেছেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি জানান আমি কাউকে চিনতে পারিনি।

গরু চুরির ঘটনায় কোটচাঁদপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ কবির হোসেন মাতুব্বর বলেন, মৌখিক ভাবে ঘটনা জানতে পেরে আমি সঙ্গীও ফোর্সসহ ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম, গরু গুলো একেবারেই অরক্ষিত অবস্থায় ছিলো। গরুর মালিকপক্ষ কাউকে সন্দেহ করতে পারছেন না, তারা অজ্ঞাত ১০ থেকে ১২ জনের নামে লিখিত অভিযোগ করেছেন। আমরা তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করবো।




মেহেরপুরে পর্নোগ্রাফি মামলায় এক আসামির ৩ বছরের কারাদণ্ড

মেহেরপুরে পর্নোগ্রাফি মামলায় মোঃ লাবলু নামের এক ব্যক্তিকে ৩ বছর কারাদণ্ড ও ১ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার দুপুরে মেহেরপুরের চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ শাজাহান আলী এ আদেশ দেন।

ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, আসামি বাদীর সাবেক স্বামী। সংসারিক সমস্যার কারণে বাদী তাকে ২৬ নভেম্বর ২০২২ তারিখে তালাক দেন। বিবাহিত জীবনে আসামি বাদীর অজান্তে তার মোবাইলে কিছু আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ধারণ করেন। ডিভোর্সের পর ওই ভিডিও দেখিয়ে বাদীর নিকট থেকে এক লক্ষ টাকা দাবি করেন। এছাড়া ভিডিও ও ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন এবং পরিচিতজনদের দেখান।

বাদী বিষয়টি তার পরিবারকে অবহিত করে র‍্যাবের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে র‍্যাব-১২, সিপিসি মেহেরপুর গোপন তথ্যের ভিত্তিতে গাংনী বাজারস্থ সামাদ হোটেলের সামনে থেকে আসামিকে আটক করে। সাক্ষীদের সম্মুখে জিজ্ঞাসাবাদে আসামি ভিডিও ভাইরাল করার হুমকির কথা স্বীকার করেন। পরে তার পরিহিত প্যান্টের ভেতরের পকেট থেকে একটি রেডমি নাইন সি অ্যান্ড্রয়েড ফোন, দুইটি বাংলালিংক সিম এবং ৮ জিবি মেমোরি কার্ড জব্দ করা হয়। ব্যবহৃত মোবাইল থেকে ধারণ করা আপত্তিকর ছবি ও ভিডিওর ছয় পাতার প্রিন্ট কপি আলামত হিসেবে উদ্ধার করা হয়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। নথি ও সাক্ষ্য পর্যালোচনা শেষে আদালত এ রায় দেন। রায় ঘোষণার পর আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।




দর্শনায় এতিম শিশুর পাখিভ্যান চুরি

চুয়াডাঙ্গার দর্শনা রেল বাজারের দর্শনা জনতা ব্যাংকের সামনে থেকে যাত্রী সেজে এক এতিম শিশুর পাখিভ্যান চুরির ঘটনা ঘটেছে। উপার্জনের একমাত্র সম্বল হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ৪ সদস্যের ভুক্তভোগী পরিবার।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে দর্শনা রেল বাজারের দর্শনা জনতা ব্যাংকের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, দর্শনা থানার কুড়ালগাছি ইউনিয়নের সদাবরি গ্রামের মৃত আরাফাত মোল্লার ছেলে আকাশ (১৩) সদাবরি গ্রাম থেকে একজন যাত্রী নিয়ে দর্শনার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। পথে মধ্যে দর্শনা পুরাতন বাজার থেকে আরেক যাত্রী পাখিভ্যানে ওঠে। ওই দুই যাত্রী দর্শনা রেল বাজারের দর্শনা জনতা ব্যাংকের সামনে নেমে যায়।

পরে এতিম শিশু আকাশকে বলে, আমি একটা জিনিস কিনে দেব, তুমি নিয়ে আসবে। আকাশ সহজ-সরল মনে জনতা ব্যাংকের সামনে পাখিভ্যান রেখে রেল বাজার বটতলায় যায়। কিছুক্ষণ পরে আকাশ এসে দেখে, পাখিভ্যান নেই। একমাত্র উপার্জনের পাখিভ্যান হারিয়ে কিছুতেই কান্না থামছে না আকাশের। এ পাখিভ্যান হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে আকাশ।

এতিম শিশু আকাশ কোনো উপায় না পেয়ে দর্শনা পুলিশকে খবর দেয়। দর্শনা থানা পুলিশ সাথে সাথে এতিম শিশু আকাশকে নিয়ে পুলিশের গাড়িতে করে খুঁজতে থাকে। তবে পুলিশ সিসি ক্যামেরা দেখে চোরটিকে শনাক্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, কয়েক মাস ধরে বাড়িতে বাড়িতে তালা ভেঙে, দরজার গ্রিল ও টিন কেটে চুরি এবং দোকানেও একই ধরনের চুরির ঘটনা ঘটছে। এছাড়া বাড়ি, রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে পাখিভ্যান, ইজিবাইক, সাইকেল ও মোটরসাইকেলসহ নানা ধরনের মালামাল চুরি হচ্ছে, যা এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। স্থানীয়রা প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানোর জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে দর্শনা থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ শহীদ তিতুমীর বলেন, চুরির ঘটনা শুনেছি, তখন আমি মিটিংয়ে ছিলাম। তবে আমি সাথে সাথে আমার অফিসার ও ফোর্স পাঠিয়ে বিষয়টি দেখতে বলেছি।




ক্যাম্পাসে ইন্টারমিডিয়েট শিক্ষার্থীদের স্মাার্টফোন নিষিদ্ধ

ইন্টারমিডিয়েট শিক্ষার্থীদের কলেজ ক্যাম্পাসে স্মার্টফোন ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে শেরপুর সরকারি কলেজ কর্তৃপক্ষ। ইন্টারমিডিয়েটের কোনো শিক্ষার্থী কলেজে স্মার্টফোন নিয়ে প্রবেশও করতে পারবে না।

আজ মঙ্গলবার থেকে এমন সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছে শেরপুর সরকারি কলেজ কর্তৃপক্ষ। এদিন কলেজের মূল ফটকে শিক্ষার্থীদের ব্যাগ ও ফোন চেকিং করে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়।

ক্লাসের প্রথম দিন কয়েকজন শিক্ষার্থী স্মার্টফোন নিয়ে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করলেও সেসব ফোন গেটেই জমা রাখা হয় এবং তাদের কড়া সতর্কবার্তা দেওয়া হয়। কলেজ কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন অভিভাবকরা।

গতকাল সোমবার শেরপুর সরকারি কলেজে একাদশ শ্রেণির ওরিয়েন্টেশন ক্লাসে অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আবদুর রউফ ঘোষণা দিয়েছেন একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কলেজে স্মার্টফোন বহন ও ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তবে জরুরি প্রয়োজনে শিক্ষার্থীরা সাধারণ বাটন ফোন সঙ্গে আনতে পারবেন।

এরই ধারাবাহিকতায় আজ কলেজ গেটে শিক্ষার্থীদের ফোন চেকিং করা হয়।

কলেজ প্রশাসন জানিয়েছে, স্মার্টফোন বহন বা ব্যবহার নিয়মিত হলে তা জব্দ করা হবে। কিন্তু জরুরি যোগাযোগের জন্য বাটন ফোন ব্যবহার অনুমোদিত। এটি শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ ও মনোযোগী শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে নেওয়া একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।

মোস্তাফিজুর রহমান নামে শহরের চকবাজার এলাকায় বসবাসকারী এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, কলেজে স্মার্টফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তটি খুবই যৌক্তিক হয়েছে। এজন্য কলেজ কর্তৃপক্ষকে অভিনন্দন জানাই।

রাজু মিয়া নামে সজবরখিলা এলাকার বাসিন্দা আরেক অভিভাবক জানান, কলেজে অবস্থানকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের স্মার্টফোনের কোনো প্রয়োজন নেই। বাসায় কিংবা বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে যোগাযোগে জন্য বাট ফোনই যথেষ্ট। বরং কলেজে স্মার্টফোন নিয়ে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে অলস আড্ডা হবে, এতে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ায় মনোযোগ নষ্ট হবে।

কলেজের স্যারেররা এটা একটা ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

এ ব্যাপারে শেরপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আবদুর রউফ বলেন, ‘এই পদক্ষেপের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে মনোযোগী হবে এবং শিক্ষার মান আরো উন্নত হবে। আমরা চাই শিক্ষার্থীরা প্রযুক্তি সঠিকভাবে ব্যবহার করে তাদের একাডেমিক দক্ষতা বৃদ্ধি করুক। শিক্ষার্থীদের কল্যাণেই কলেজ ক্যাম্পাসে ইন্টারমিডিয়েট পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের স্মার্টফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।’

সূত্র: কালের কন্ঠ




আলমডাঙ্গায় কনা নার্সিং হোমে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা আদায়

অপারেশন থিয়েটারে মেয়াদ উত্তীর্ণ ঔষধ রাখার দায়ে আলমডাঙ্গার কনা নার্সিং হোমকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, চুয়াডাঙ্গা। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে আলমডাঙ্গা বিভিন্ন ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক, ওষুধের দোকানে এই অভিযান পরিচালিতি হয়। দুপুর ১টায় পাওয়া শেষ খবর অনুযায়ী, ভোক্তা অধিকারের অভিযান অব্যাহত ছিল।

দেখা গেছে, আলমডাঙ্গা কনা নার্সিং হোমে মেয়াদোত্তীর্ণ ডেঙ্গু টেস্টের কিট, চিকিৎসা সামগ্রী ও কিছু ইনজেকটেবল এম্পল মিলেছে। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানের হালনাগাদ বৈধ নথিপত্র দেখাতে সক্ষম হয়নি। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চুয়াডাঙ্গা শাখার সহকারী পরিচালক মামুনুল হাসান এই অভিযান পরিচালনা করেন। সঙ্গে র‍্যাবের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, রফিকুল ইসলাম ও আলমডাঙ্গা থানা পুলিশের একটি চৌকস টিম।

জনস্বার্থে এই অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে তারা জানিয়েছেন।




ট্রেনের ৬ বগি লাইনচ্যুত, রংপুর অঞ্চলের রেল যোগাযোগ বন্ধ

রংপুরের পীরগাছায় সান্তাহার থেকে লালমনিরহাটগামী পদ্মরাগ কমিউটার ট্রেনের ছয়টি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও সারা দেশের সাঙ্গে রংপুর অঞ্চলের তিন জেলার আন্তঃনগর, লোকাল ও মেইল ট্রেন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া আরও চার জেলার আংশিক রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে।

জানা যায়, ঢাকাগামী লালমনিরহাট এক্সপ্রেসের সঙ্গে ক্রসিং শেষ করে পদ্মরাগ ট্রেনটি লালমনিরহাটের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার সময় লাইন পরিবর্তনের একটি পয়েন্ট ভেঙে যায়। এতে ইঞ্জিনের পেছনের তৃতীয় বগি থেকে শুরু করে ছয়টি বগি লাইনচ্যুত হয়। দুর্ঘটনার পর হাজারো মানুষ ঘটনাস্থলে ভিড় করেন। অনেক যাত্রী মালামাল খোয়া যাওয়ার অভিযোগ করেছেন। দুর্ঘটনার সময় ট্রেনটিতে প্রায় দুই হাজার যাত্রী ছিলেন।

নুরবানু নামে এক যাত্রী জানান, তিনি বাথরুমে গেলে পাশের সিটে রাখা ব্যাগসহ যাত্রীটি আর দেখা যায়নি। এতে যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

পীরগাছা রেলস্টেশনের মাস্টার জেনারুল ইসলাম বলেন, আউটার সিগনাল এলাকায় লাইন সেপারেটরের প্লেট ভেঙে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ইতোমধ্যে উদ্ধারকারী ট্রেন লালমনিরহাট থেকে রওনা দিয়েছে। উদ্ধার শেষ না হওয়া পর্যন্ত রংপুর এক্সপ্রেস, লালমনি এক্সপ্রেস, কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসসহ দোলনচাঁপা, করতোয়া, রামসাগর ও পদ্মরাগ ট্রেনসহ নাইনটিন আপ-ডাউন রুটের সব ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে।

এতে রংপুর, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলার সম্পূর্ণ এবং নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় জেলার আংশিক যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

সূত্র: যুগান্তর




দারিদ্র্য দূরীকরণে সম্পদের সুষম বণ্টন

দারিদ্র্য এক নির্মম অভিশাপ। এ অভিশাপ মানুষকে কুঁড়ে কুঁড়ে খায়। সমাজ-সভ্যতাকে এগিয়ে নেওয়ার পরিবর্তে পিছিয়ে দেয়। এটা মানবতাকে পশুত্বের পর্যায়ে নামিয়ে দিতে পারে। দারিদ্র্যের কষাঘাতে, ক্ষুধার নির্মম যাতনায় ও অভাবের অনলে জীবন্ত দগ্ধ হয়ে ন্যায়-অন্যায় বিস্মৃত মানবকুল পাপ-পঙ্কিলে আকণ্ঠ নিমজ্জিত হয়ে নিজের অজান্তেই আত্মবিধ্বংসী পথে অগ্রসর হয়। দারিদ্র্যের এ নির্মম জ্বালায় মানবতাবোধ লোপ পায়, হিংস্রতার প্রসার ঘটে, অন্যায়-অবিচার বিস্তৃত হয়। নারী তার পরম যত্নে লালিত সতীত্বকে বিলিয়ে দিতে পারে, মানুষ তার প্রিয় সন্তানকে বিক্রি করে দিতে পারে, এমনকি হত্যা পর্যন্ত করতেও দ্বিধা করে না। অন্যভাবে বললে, দারিদ্র্য হলো রক্তশূন্যতার সদৃশ। রক্তশূন্যতা দেখা দিলে মানুষের দেহ নানা দুরারোগ্য ব্যাধির আবাসে পরিণত হয়। অনুরূপভাবে সম্পদের স্বল্পতা থাকলে মানুষের জীবনও অচল হয়ে পড়ে।

দারিদ্র্য দূরীকরণে সম্পদের সুষম বণ্টন অত্যন্ত জরুরি, কারণ এটি অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস করে এবং দেশের সম্পদকে কিছু মানুষের হাতে কেন্দ্রীভূত হওয়া থেকে বিরত রাখে। সম্পদের সুষম বণ্টনের মাধ্যমে সমাজের সকল স্তরের মানুষ তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণের সুযোগ পায় এবং অর্থনৈতিকভাবে উন্নত জীবন লাভ করে। আবার, যখন সম্পদ অসমভাবে বণ্টিত হয়, তখন সমাজে ধনী ও গরিবের মধ্যে বড়ো ব্যবধান গড়ে ওঠে। এ বৈষম্য কমলে সমাজে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে, সকলের জন্য ন্যূনতম সুযোগের সমতা তৈরি হয় এবং কেউ বঞ্চিত হয় না। আবার, মুষ্টিমেয় মানুষের হাতে সম্পদ পুঞ্জীভূত হলে তা অপচয়ের আশঙ্কা থাকে। অল্প কিছু মানুষের হাতে যেন সম্পদ পুঞ্জীভূত হতে না পারে সে ব্যাপারে রাষ্ট্র কম-বেশি পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে। সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো এমন নীতি গ্রহণ করতে পারে, যাতে সম্পদের অসম বণ্টন রোধ করা যায় এবং সবাই যেন তাদের মৌলিক চাহিদাটুকু মেটাতে পারে। দরিদ্র মানুষের হাতে পর্যাপ্ত সম্পদ না থাকলে তারা দারিদ্র্যের মধ্যেই ঘুরপাক খায়। সুষম বণ্টন নিশ্চিত করতে পারলেই কেবল তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়।

‘দারিদ্র্য’ ও ‘বাংলাদেশ’ শব্দদ্বয় একত্রে বিসদৃশ লাগে। কারণ বাংলাদেশ একটি অপার সম্ভাবনার দেশ। সম্পদে ভরপুর দেশটির স্বীকৃতি দিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিভিন্ন সময়ে ছুটে আসা পর্যটক, বিশেষজ্ঞ, জ্ঞানী-গুণী ও ভূ-তত্ত্ববিদরা। অথচ বর্তমানে আমাদের দেশে মোট দরিদ্র মানুষের সংখ্যা চার কোটি ৬৭ লাখ ৮৯ হাজার ৭৭২ জন, যা শতকরা বিচারে ৩১ দশমিক পাঁচ ভাগ; এবং অতি দরিদ্র মানুষের সংখ্যা দুই কোটি ৬০ লাখ ৬৫ হাজার ১৭১ জন, যা শতকরা ১৭ দশমিক ছয় ভাগ।

দারিদ্র্যের অর্থ হচ্ছে দরিদ্র অবস্থা, অভাব ও দীনতা। দারিদ্র্য বলতে এমন ব্যক্তি বা দেশকে বোঝায়, যার সামান্য সম্পদ ও অল্প আয় রয়েছে, যা দ্বারা ন্যূনতম মৌলিক প্রয়োজন মেটাতে ব্যর্থ। ডেলটুসিং বলেন, “মানুষের প্রয়োজনের তুলনায় সম্পদের অপ্রতুলতাই হলো দারিদ্র্য।” থিওডরসনের মতে, “দারিদ্র্য হলো প্রাকৃতিক, সামাজিক ও মানসিক উপোস।”

কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দেশে দারিদ্র্য কমাতে কৃষি ও শিল্পকারখানার চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষাব্যবস্থা ঢেলে সাজানো দরকার। প্রতিবছর হাজার হাজার তরুণ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষিত হয়ে বের হচ্ছে। একই সাথে কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থার অভাবে দেশে বেকারত্ব বাড়ছে। এমনকি বাংলাদেশে শ্রমিকদের মজুরি প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় অনেক কম। শুধু কৃষি নয়, শিল্প ও অন্যান্য খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানোর চেষ্টা করা প্রয়োজন, যাতে সমাজের সকল স্তরের মানুষ জীবিকা নির্বাহের সুযোগ পায়। সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের পাশাপাশি ব্যবসায়ীরাও সর্বোচ্চ চেষ্টা করে দারিদ্র্য নিরসনে ভূমিকা রাখতে পারেন। দারিদ্র্য কমাতে সবার আগে খাদ্য নিরাপত্তায় জোর দেওয়া প্রয়োজন। আবাদি জমি বাড়াতে সমবায়ের মাধ্যমে কৃষি পরিচালনা, কৃষি যন্ত্রপাতির আধুনিকায়ন, শিল্পনগরীগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন, উপজেলা পর্যায়ে বিশেষায়িত কোল্ড স্টোরেজ প্রতিষ্ঠা, উপজেলা কৃষি উন্নয়ন কর্মকর্তাদের জবাবদিহি ও কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা প্রয়োজন। বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে কর্মসংস্থান তৈরি করা গেলে দারিদ্র্য হ্রাস পাবে।

যদি ইসলামী সমাজব্যবস্থার কথা ভাবি, তাহলে যাকাত প্রদানের মাধ্যমে ধনীরা তাদের সম্পদের কিছু অংশ গরিবদের দান করে, যা সম্পদের সুষম বণ্টনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইসলাম কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য আর্থিক সাহায্যের বিধান রেখেছে। একটি সুখী, সুন্দর ও উন্নত সামাজিক পরিবেশ গঠনে ধনাঢ্য মুসলমানদের অবশ্যই তাদের নিসাব পরিমাণ সম্পদের একটি নির্ধারিত অংশ দরিদ্র ও অভাবগ্রস্ত ব্যক্তিদের দুর্দশা মোচনের জন্য ব্যয় করতে হবে। ফলে কেবল অসহায় ও দুস্থ মানবতার কল্যাণই হবে না; বরং সমাজে আয়বণ্টনের ক্ষেত্রেও বৈষম্য হ্রাস পাবে। পবিত্র কোরআনে সূরা আল-হাশরের সাত নম্বর আয়াতে ধনসম্পদ বণ্টনের মূলনীতি সম্পর্কে ঘোষণা হয়েছে “যাতে তোমাদের মধ্যে যারা বিত্তবান, কেবল তাদের মধ্যেই ঐশ্বর্য আবর্তন না করে।”

নৈতিকতাহীন নেতৃত্বের ফলে সমাজে সম্পদের সুষম বণ্টন বাধাগ্রস্ত হয়। এই বাস্তবতার পটভূমিতে যাকাতকে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কার্যকর মাধ্যম হিসেবে দেখা হচ্ছে। ইসলামী সামাজিক অর্থায়নের ধারণা শুধু দারিদ্র্য দূরীকরণেই নয়, বরং বৈষম্য কমিয়ে একটি ন্যায়ভিত্তিক অর্থনীতি গড়তেও ভূমিকা রাখতে পারে। বিশ্বজুড়ে যাকাতের নীতিমালা সম্পদ পুনর্বণ্টনের একটি স্বীকৃত ও টেকসই উপায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। যাকাত সম্পদের সুষম বণ্টনের অপরিহার্যতা ও মানবিক দায়িত্ববোধকে একসঙ্গে তুলে ধরে।

আধুনিক সমাজে সাফল্যের মানদণ্ড হয়ে উঠেছে ভোগের ক্ষমতা; ফলে সামাজিক দায়বদ্ধতা প্রায়শই উপেক্ষিত হয়ে থাকে। অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করতে অতীতে বহু আন্দোলন ও ত্যাগ স্বীকারের পরও অসাম্য আজও টিকে আছে। এর মূল কারণ ন্যায্য সম্পদ বণ্টনের ঘাটতি। তাই বৈষম্য দূর করে সামাজিক সাম্য ও মানবিক মর্যাদা ফিরিয়ে আনতে যাকাতভিত্তিক ন্যায়সংগত অর্থনৈতিক কাঠামো বিনির্মাণ মনোযোগের দাবিদার।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার বেশ আলোচিত হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশ অচিরেই ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির দেশ হতে যাচ্ছে। অর্থনীতির আকার বড়ো হচ্ছে, অগ্রগতির পথে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু অতিদরিদ্র মানুষের সংখ্যা যদি বেড়ে যায়, সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী যদি বঞ্চিত থেকে যায়, তাহলে ওই অগ্রগতি আদৌ অগ্রগতি নয়। আবার, কেবল শহরকেন্দ্রিক উন্নয়ন হলে তা সুষম উন্নয়ন হবে না। পল্লী উন্নয়ন মূলত উৎপাদন বৃদ্ধি, সম্পদের সুষম বণ্টন ও ক্ষমতায়নের মাধ্যমে গ্রামীণ দরিদ্র জনগণের অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনমান উন্নয়নের জন্য এক পরিকল্পিত পরিবর্তন। বাংলাদেশে পল্লী উন্নয়নের চাবিকাঠি হলো দারিদ্র্য দূরীকরণ ও গ্রামীণ দরিদ্রদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, আয় ও সম্পদের সুষম বণ্টন, ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। অনেক উন্নয়নশীল দেশ পল্লী উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণে বেশ সক্রিয়।

১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের জিনি সহগ ছিল মাত্র দশমিক ৩৬। জিনি সহগ মূলত আয়-বৈষম্য পরিমাপের একটি পদ্ধতি। তখন বাংলাদেশ দারিদ্র্যকবলিত দেশ হলেও আয়-বৈষম্য ছিল তুলনামূলকভাবে সহনীয়। সেই জিনি সহগ সর্বশেষ ২০১৬ সালে বেড়ে হয়েছে দশমিক ৪৮৩। অর্থাৎ আয়বৈষম্য অনেক বেড়েছে। এখন আমরা ভাবছি, আমাদের চেয়ে বেশি আয়বৈষম্য কোথায়। সারাবিশ্বে অতিধনী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, বাড়ছে আমাদের দেশেও। মাথাপিছু আয় ক্রমেই বাড়ছে। করোনাকালে এর মান ছিল আরও ভয়াবহ। সরকারি খানা জরিপের তথ্যমতে, দেশের মোট আয়ের দুই-তৃতীয়াংশের মালিক ওপরের দিকে থাকা এক-তৃতীয়াংশ মানুষ। দীর্ঘমেয়াদি টেকসই উন্নয়নের জন্য এই আকাশচুম্বী ব্যবধান কমাতে হবে।

আমাদের অবশ্যই স্বীকার করতে হবে, অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও প্রবৃদ্ধি তখনই অর্থবহ হয়, যখন এর সুফল ভোগ করে দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের বেশিরভাগ মানুষ। যে প্রবৃদ্ধি দারিদ্র্য ও বৈষম্য হ্রাসে ভূমিকা রাখে না, যার সুফল কেবল সমাজের উঁচু স্তরের নাগরিকরা ভোগ করে ওই প্রবৃদ্ধি নিছক সংখ্যা। এ ধরনের প্রবৃদ্ধি কোনোভাবেই কাম্য নয়। বৈষম্য দূর করা না হলে প্রবৃদ্ধি টেকসই হবে না। সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি না হলে বৈষম্য বাড়বে; ধনী হবে আরও ধনী, গরিব হবে আরও গরিব। এমনটি হলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জন কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অভ্যন্তরীণ সম্পদ প্রবাহ বৃদ্ধি করে দারিদ্র্য ও অসমতা দূর করতে হবে। কেবল সম্পদশালীদের প্রণোদনা-সুবিধা দিয়ে অর্থনীতিকে অন্তর্ভুক্তিমূলক করা সম্ভব নয়। আর্থিক খাতে সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা গেলে প্রবৃদ্ধির সুফল পাবে সবাই।

লেখক: সিনিয়র উপপ্রধান তথ্য অফিসার, তথ্য অধিদফতর, ঢাকা