গাংনীতে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে বাবার জানাজায় অংশ নিলেন ছেলে
মাত্র তিন ঘণ্টার প্যারোলে মুক্তি পেয়ে বাবার জানাজায় অংশ নিয়েছেন আপন চাচাকে হত্যার দায়ে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি মশিউর রহমান ওরফে মশা।
গতকাল শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে পুলিশের কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তাকে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার জুগিন্দা গ্রামে নিয়ে আসা হয়। এ সময় গ্রামবাসীর কৌতূহল ও উত্তেজনা ছিল চোখে পড়ার মতো। শত-শত নারী-পুরুষ রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে এই সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে এক নজর দেখার চেষ্টা করেন।
জানাজা ও দাফন কার্যক্রম শেষে বিকাল ৫টার দিকে আবারও তাকে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে মেহেরপুর জেলা কারাগারে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। পুরো কার্যক্রমে গাংনী থানার তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, বাড়ির চলাচলের পথ নিয়ে মাত্র দেড় ফুট জমির বিরোধের জেরে ২০০৩ সালে প্রকাশ্যে দিবালোকে নিজ চাচা আমিরুল ইসলামকে ধারালো হাসুয়া দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন মশিউর রহমান। এ ঘটনায় নিহতের ছেলে সামিকুল ইসলাম বাদী হয়ে গাংনী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঘটনার পরপরই পুলিশ আসামিকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়।
মামলার রায়ে মেহেরপুর জজকোর্ট প্রথমে মশিউর রহমানকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন। পরে আসামিপক্ষ হাইকোর্টে আপিল করলে মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। গত ২২ বছর ধরে তিনি কারাবন্দি রয়েছেন—প্রথমে যশোর এবং বর্তমানে মেহেরপুর জেলা কারাগারে।
গতকাল শুক্রবার সকালে মশিউর রহমানের পিতা মনিরুল ইসলাম বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করলে পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে প্যারোলে মুক্তির আবেদন জানানো হয়। আদালতের নির্দেশে বাবার জানাজায় অংশগ্রহণের জন্য তিন ঘণ্টার প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয় তাকে। এরপর পুলিশ পাহারায় আদালত থেকে নিজ গ্রাম জুগিন্দায় আনা হয়।
নিহত আমিরুল ইসলামের ছেলে সামিকুল ইসলাম জানান, “মাত্র দেড় ফুট জমির জন্য আমার বাবাকে প্রকাশ্যে ধারালো হাসুয়া দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে আমার চাচাতো ভাই মশিউর রহমান। ঘটনার সময় বাবাকে বাঁচাতে অনেক চেষ্টা করা হলেও তিনি পুকুরে নেমে পড়ার পরও ঘাতক তাকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করে। আদালতের রায়ে সে দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে রয়েছে। আজ তার বাবার মৃত্যুতে আদালতের নির্দেশে তিন ঘণ্টার জন্য প্যারোলে মুক্তি পেয়েছে—এতে আমাদের পক্ষ থেকে কোনো আপত্তি জানানো হয়নি।”
স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, হত্যাকাণ্ডটি ছিল অত্যন্ত নৃশংস ও হৃদয়বিদারক। প্রকাশ্যে দিবালোকে বহু মানুষের সামনে সংঘটিত এ হত্যাকাণ্ড এখনো এলাকাবাসীর মনে আতঙ্ক হিসেবে রয়ে গেছে। বিকেলে পুলিশ পাহারায় আসামিকে গ্রামে আনা হলে সেই স্মৃতিই যেন আবার ফিরে আসে গ্রামবাসীর সামনে।