চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর মহাসড়কে বাসের ধাক্কায় দুইজন নিহত

চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর মহাসড়কের আলুকদিয়া বাজার এলাকায় বাসের ধাক্কায় দুইজন নিহত হয়েছেন। রোববার দুপুর সাড়ে ১টার দিকে আলুকদিয়া বাজারের অদূরে এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন চুয়াডাঙ্গা সদরের আলুকদিয়া ইউনিয়নের মনিরামপুর গ্রামের কাছারিপাড়ার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী পারভীনা খাতুন (৪৫) এবং একই এলাকার ভ্যানচালক রমজান (২৮), তিনি আব্দুর রহমানের ছেলে।

এ ঘটনায় আহত হয়েছেন পারভীনার পুত্রবধূ আনিকা খাতুন (১৮) এবং রাজাপুর গ্রামের ইসরাত জাহান (২৬)।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চুয়াডাঙ্গা শহর থেকে একটি পাখিভ্যান তিনজন যাত্রী নিয়ে আলুকদিয়ার দিকে যাচ্ছিল। আলুকদিয়া বাজারের নিকটে পৌঁছালে চুয়াডাঙ্গা থেকে আসা মেহেরপুরগামী একটি যাত্রীবাহী বাস পেছন দিক থেকে ভ্যানটিকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান পারভীনা খাতুন। গুরুতর আহত ভ্যানচালক রমজান ও অন্যান্য যাত্রীদের স্থানীয়রা উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে যান।

সদর হাসপাতাল থেকে অবস্থার অবনতি হওয়ায় রমজানকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। তবে পরিবারের সদস্যরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে চুয়াডাঙ্গার নয়মাইল এলাকায় শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হলে পুনরায় সদর হাসপাতালে ফেরত আনেন। বিকেল ৪টায় জরুরি বিভাগে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

দুর্ঘটনার পর বাসচালক ও হেলপার পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিস স্থানীয়দের সহায়তায় উল্টে থাকা বাসের নিচ থেকে পারভীনার মরদেহ উদ্ধার করে। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খালেদুর রহমান জানান, ঘাতক বাসটি জব্দ করা হয়েছে। নিহতদের ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।




মেহেরপুরে তিন প্রতিষ্ঠানে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা

মেহেরপুরে ভোক্তা অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে তিনটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।

আজ রবিবার বিকেলে জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ মামুনুল হাসানের নেতৃত্বে এ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়।

অভিযান সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার রায়পুর বন্দর ও হোটেল বাজার এলাকায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯-এর ৫২, ৪৩ ও ৪৪ ধারায় অভিযুক্ত করা হয়। লাইসেন্স ছাড়া তেল ও গ্যাস বিক্রির অপরাধে মেসার্স শাহিন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী শাহিনুল ইসলামকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এ ছাড়া, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে বেকারি পণ্য উৎপাদনের অভিযোগে নিউ বেঙ্গল ফুডসের স্বত্বাধিকারী আলী হোসেনকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

অন্যদিকে, অবৈধ প্রক্রিয়ায় পেইন্ট উৎপাদনের অপরাধে নিভালাক পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী নাইমুর রহমানকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

অভিযানকালে জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা রিয়াজ মাহমুদ, র‌্যাব-১২ সিপিসি-৩ গাংনী ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার এস.বি. ওয়াহিদুজ্জামান এবং জেলা পুলিশের একটি টিম উপস্থিত ছিলেন।




নতুন কুঁড়িতে সেরাদের সেরা সুনামগঞ্জের শুভমিতা তালুকদার

সুর তাকে ডাকত। মঞ্চ তাকে টানত। এই টানে সাড়া দিয়েই সুনামগঞ্জের শুভমিতা তালুকদার নতুন কুঁড়ি প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। নতুন কুঁড়ির প্রতিটি ধাপেই শুভমিতা তার নিষ্ঠা, পরিশ্রম ও সংগীতের প্রতি গভীর ভালোবাসার পরিচয় দিয়েছে। নতুন কুঁড়ির আলো ঝলমলে মঞ্চে দাঁড়িয়ে সে প্রমাণ করেছে—মনোযোগ, অনুশীলন ও সৃজনশীলতা থাকলে যে-কোনো প্রতিযোগিতায় সফল হওয়া যায়।

বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) আয়োজিত শিশু-কিশোরদের প্রতিভা অন্বেষণ প্রতিযোগিতা ‘নতুন কুঁড়ি ২০২৫’-এ শুভমিতা তালুকদার ‘খ’ বিভাগে দেশসেরা হয়েছে। এই প্রতিযোগিতায় শুভমিতা রবীন্দ্রসংগীতে প্রথম, নজরুলসংগীতে দ্বিতীয় এবং দেশাত্মবোধক গানে পঞ্চম স্থান অর্জনের মাধ্যমে বহুমাত্রিক সংগীত প্রতিভার পরিচয় দিয়েছে। একই প্রতিযোগিতায় একাধিক বিষয়ে এমন সাফল্য তার সংগীতচর্চার গভীরতা ও নিষ্ঠারই বহিঃপ্রকাশ। শুভমিতার এই অসাধারণ সাফল্যে তার পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, শিক্ষক, সহপাঠী সকলেই অনেক আনন্দিত হয়েছেন।

এর আগেও জাতীয় পর্যায়ে সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে শুভমিতা তালুকদার। ২০২৩ সালে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি আয়োজিত জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতায় শুভমিতা উচ্চাঙ্গ সংগীতে তৃতীয় স্থান অর্জন করে। ২০২৪ সালের জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্রসংগীতে সে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে। ছোটবেলা থেকেই তার কণ্ঠে সংগীতের যে সাবলীলতা, মনোযোগ ও আবেগের প্রকাশ দেখা যায়, তা জাতীয় মঞ্চে তাকে পরিচিত করে তোলে।

শুভমিতা ২০১২ সালের ১৪ অক্টোবর সুনামগঞ্জ জেলার মধ্যনগর উপজেলার কলুমা গ্রামে জন্মগ্রহণ করে। বর্তমানে সে সুনামগঞ্জ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। মর্নিং শিফটের বি শাখায় শুভমিতার রোল ০১। পড়াশোনা ও সংগীত—দুটিই সমান যত্নে সামলে নেওয়ার চেষ্টা করছে দেশসেরা এই শিশুশিল্পী।

শুভমিতার বাবা দ্বীপন কুমার তালুকদার এমপিওভুক্ত একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেন। মা শান্তনা সরকারও শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত। বাবা-মায়ের সাংস্কৃতিক অনুরাগ, উৎসাহ ও সহায়তা শুভমিতার সংগীতযাত্রাকে করেছে শক্তিশালী ও গতিময়। প্লে-গ্রুপে থাকা অবস্থায় শুভমিতা সংগীতচর্চা শুরু করে। মনের ভালো লাগা থেকে সে সংগীতচর্চা চালিয়ে যাচ্ছে। তার কাছে গান শুধু প্রতিযোগিতার প্রস্তুতি নয়, এটি তার আনন্দ, আবেগ ও আত্মপ্রকাশের অন্যতম প্রিয় মাধ্যম। সংগীতচর্চায় সে কখনো ক্লান্ত হয় না; বরং নতুন সুর শেখার আগ্রহ তাকে আরও উদ্দীপনা দেয়।

বাংলাদেশে শিক্ষকের সন্তানদের সাফল্যের হার যে তুলনামূলক বেশি—শুভমিতার ক্ষেত্রে সেটি আরও একবার প্রমাণিত হয়েছে। পারিবারিক শিক্ষামূলক পরিবেশ, শৃঙ্খলার চর্চা এবং মূল্যবোধ শুভমিতাকে সংগীতে মনোযোগী ও অধ্যবসায়ী করে তুলেছে। পারিবারিক শিক্ষার এই মজবুত ভিত্তি তাকে জাতীয় পর্যায়ের সেরা হওয়ার পথে এগিয়ে যেতে সবচেয়ে বেশি সহায়তা করেছে।

শুভমিতার গানের শিক্ষক দুজন—সন্তোষ কুমার চন্দ মন্তোষ ও অনিমেষ বিজয় চৌধুরী। গুণী এই দুই শিক্ষকের আন্তরিক প্রচেষ্টা শুভমিতার সংগীতশিক্ষার মূল ভিতকে শক্ত করেছে। তাঁরা দুজনেই মনে করেন—সংগীতের প্রতি ভালোবাসা এবং অধ্যবসায়ের কারণে শুভমিতা নতুন কুঁড়ি প্রতিযোগিতায় অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে। এভাবে সংগীতচর্চা চলমান রাখলে একদিন সে দেশের স্বনামধন্য কণ্ঠশিল্পী হবে।

নতুন কুঁড়ির আঞ্চলিক বাছাই পর্বে শুভমিতা অংশ নেয় সিলেট শিল্পকলা একাডেমিতে। সেখানে তার প্রথম পরিবেশনা বিচারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। আঞ্চলিক পর্বে উত্তীর্ণ হওয়ার পর শুভমিতাকে নিয়ে তার পরিবার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। প্রতিযোগিতার প্রতিটি পর্যায়ে পরিবার ও আত্মীয়-স্বজন শুভমিতাকে উৎসাহ দিয়েছে।

নতুন কুঁড়ির মঞ্চে শুভমিতার প্রতিটি পরিবেশনা হাজারো দর্শক-শ্রোতাকে মুগ্ধ করেছে। নতুন কুঁড়ি প্রতিযোগিতায় শুভমিতার পরিবেশিত গানের মধ্যে ছিল—‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে…’, ‘দোলা লাগিল দখিনার বনে বনে…’, ‘আমারে তুমি অশেষ করেছ…’ প্রভৃতি। তার কণ্ঠ, সুর ও গায়কি বিচারকমণ্ডলীকে মুগ্ধ করেছে।

গত ১৩ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের কাছ থেকে ট্রফি ও তিন লক্ষ টাকার চেক গ্রহণ করে ‘খ’ শাখার দেশসেরা শিশুশিল্পী শুভমিতা। পুরস্কার গ্রহণের পর শুভমিতা জানায়, ‘‘আমি বড় হয়ে একজন গুণী শিল্পী হতে চাই। দেশের সংগীতকে বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে চাই। নতুন কুঁড়ি প্রতিযোগিতার সাফল্য আমার সংগীতজীবনে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।’’

বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নতুন কুঁড়ি প্রতিযোগিতার ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে। নতুন কুঁড়ির মঞ্চ শিশুদের শৈল্পিক বিকাশের পাশাপাশি তাদের দায়িত্ববোধ, শৃঙ্খলা ও আত্মবিশ্বাসও বাড়িয়ে তোলে। ১৯৭৬ সালে যাত্রা শুরু করা এই প্রতিযোগিতা ২০০৫ সালে এসে বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মোঃ মাহফুজ আলমের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দীর্ঘ ২০ বছর পর নতুন উদ্যমে শুরু হয় নতুন কুঁড়ি প্রতিযোগিতা। এ বছর নতুন কুঁড়ি প্রতিযোগিতায় প্রায় ৩৯ হাজার প্রতিযোগী অংশ নেয়। ৬৪ জেলাকে ১৯টি অঞ্চলে ভাগ করে ২৪ থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আঞ্চলিক বাছাই পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। আঞ্চলিক পর্ব থেকে ‘ক’ ও ‘খ’ উভয় শাখার সকল ক্যাটাগরিতে প্রায় ১৪ হাজার প্রতিযোগী বিভাগীয় পর্যায়ে উন্নীত হয়। দেশের আট বিভাগে একযোগে এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিযোগিতায় মোট বিষয় ছিল ১২টি। এগুলো হলো : অভিনয়, আধুনিক গান, আবৃত্তি, উচ্চাঙ্গ নৃত্য, কৌতুক, গল্পবলা, দেশাত্মবোধক গান, নজরুলসংগীত, রবীন্দ্রসংগীত, লোকসংগীত, সাধারণ নৃত্য ও হামদ-নাত। বিভাগীয় পর্যায় শেষে শুরু হয় চূড়ান্ত পর্ব। আট বিভাগ থেকে ১ হাজার ৪০ জন প্রতিযোগী চূড়ান্ত পর্বে অংশ নেয়। চূড়ান্ত পর্বে উত্তীর্ণ ২৭৯ জন প্রতিযোগী সেরা ১০ পর্বে অংশগ্রহণ করে। এই পর্ব থেকে সেরা ৫ জন বাছাই করা হয়। এরপর ফাইনালে ‘ক’ বিভাগ থেকে ৩৬ জন এবং ‘খ’ বিভাগ থেকে ৩৭ জন প্রতিযোগীকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়। দীর্ঘ এই প্রক্রিয়ায় ‘খ’ বিভাগে সেরাদের সেরা অর্থাৎ চ্যাম্পিয়ন হয় শুভমিতা তালুকদার।

সদ্য সমাপ্ত নতুন কুঁড়ি প্রতিযোগিতার বাছাই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও ন্যায্যভাবে পরিচালিত হয়েছে। এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের প্রতিভা যাচাইয়ের দায়িত্বে ছিলেন ২৯৩ জন বিজ্ঞ বিচারক, যাঁরা প্রতিটি পর্যায়ে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে মূল্যায়ন করেছেন। প্রতিযোগিতাটিকে অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে এবার ব্যাপক প্রচার কার্যক্রম চালানো হয়েছে। এর ফলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিশু-কিশোররাও এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। ধর্ম, বর্ণ-নির্বিশেষে সকল শ্রেণির শিশু-কিশোর এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। বিটিভিতে প্রচারিত নতুন কুঁড়ি প্রতিযোগিতার প্রতিটি পর্ব বিটিভির ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেলেও প্রচার করা হয়েছে। অনেকেই পরিচিত শিশু-কিশোরদের পরিবেশনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেছেন। এর ফলে নতুন কুঁড়ি প্রতিযোগিতাটি নেটিজেনদের কাছে অনলাইন বিনোদন হিসেবেও বিবেচিত হয়েছে।

ব্যতিক্রম ক্ষেত্র ছাড়া প্রতিটি শিশু বিশেষ কোনো প্রতিভা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। শিশুদের বিশেষ প্রতিভা খুঁজে বের করাই নতুন কুঁড়ি প্রতিযোগিতার মূল উদ্দেশ্য। নতুন কুঁড়ি প্রতিযোগিতা শুভমিতার মতো অসংখ্য প্রতিভা আবিষ্কার করেছে, যা দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে সমৃদ্ধ করেছে। নতুন কুঁড়ি শিশু-কিশোরদের কাছে শুধু একটি প্রতিযোগিতা নয়, বরং শিল্পজীবনের প্রথম পাঠশালা। অল্প বয়সে প্রতিযোগিতার মঞ্চে দাঁড়িয়ে অভিনয় করা, গানের সুর তোলা, গল্পবলা কিংবা আবৃত্তি শিশু-কিশোরদের সারাজীবনের আত্মবিশ্বাস গড়ে দেয় এবং তাদের ভবিষ্যতের পথকে আলোকিত করে।

প্রত্যন্ত গ্রামের সাধারণ পরিবেশ থেকে উঠে এসে জাতীয় মঞ্চে নিজের জায়গা করে নেওয়া শুভমিতার জন্য মোটেই সহজ ছিল না। শহরের মতো পর্যাপ্ত সাংস্কৃতিক অবকাঠামো বা প্রশিক্ষণের সুযোগ না থাকলেও তার দৃঢ় মনোযোগ, নিয়মিত অনুশীলন এবং অবিচল অধ্যবসায়ই তাকে সামনে এগিয়ে নিয়েছে। পরিবার ও শিক্ষকদের অকুণ্ঠ উৎসাহ এবং নিজের ইচ্ছাশক্তিকে পাথেয় করে সে ধাপে ধাপে তৈরি করেছে সাফল্যের পথ। গ্রামের সীমাবদ্ধতা পেরিয়ে জাতীয় পর্যায়ে শুভমিতার দেশসেরা হওয়া প্রমাণ করে—বাংলাদেশের যে-কোনো প্রান্তের শিশুই পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে বড় সাফল্য অর্জন করতে পারে। শুভমিতার এই সাফল্য দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের আরও অনেক শিশু-কিশোরকে স্বপ্ন দেখাতে অনুপ্রাণিত করবে।

লেখক : বিসিএস তথ্য ক্যাডারের সদস্য এবং জনসংযোগ কর্মকর্তা পদে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে কর্মরত




মেহেরপুরের গড়পুকুর এখন বিনোদন ও খাবারের কেন্দ্রস্থল

মেহেরপুর শহরের রাস্তাঘাট একসময় ছিলো নানান ধরনের রাস্তার খাবারের দোকানে ভরপুর। ফুটপাতজুড়ে চলতো জমজমাট ব্যবসা, তবে এতে সাধারণ মানুষের চলাচলে ভোগান্তিও ছিলো কম নয়। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে মেহেরপুরের তৎকালীন জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ আবদুল ছালামের সিদ্ধান্তে ফুটপাতকে পুরোপুরি পথচারীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া এবং এসব দোকানিকে গড়পুকুর এলাকায় স্থানান্তর করা।

গড়পুকুর চত্বর ব্যবসায়ীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হলে সেটি ধীরে ধীরে রূপ নেয় এক অনন্য আড্ডাখানায়। এখন গড়পুকুর শুধু পুকুর নয় এটি এক প্রকারের মেলা। প্রতিদিনই এখানে মানুষের সমাগম বেড়েই চলেছে। পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, তরুণ-তরুণী সকলের ভিড় জমে থাকে সারাদিন।

ঘুরতে আসা মোঃ সাওন হোসেন বলেন, গড়ে এখন একটা মনোরম পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছি। খাওয়া-দাওয়া করব আর সময় কাটাবো।

মাহি মুবাশ্বেরা বলেন, এখন খাবার কিনতে অনেক সুবিধা হচ্ছে। আগে রাস্তায় দাঁড়িয়ে খাবার কেনার সময় দুর্ঘটনার ঝুঁকি ছিল, কিন্তু এখন আর সে ঝুঁকি নেই। বাচ্চারাও গড়ের পাশে গিয়ে খেলতে পারে। যদিও পুকুরে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তবে একটু খেয়াল রাখলেই ঠিক থাকবে। এখন বসে খাওয়া যায়, গল্প করা যায় একটা সুন্দর পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

শুবতিপুরের মোঃ রাব্বি বলেন, রাস্তার তুলনায় গড়ের খাবার অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর। আগে ধুলাবালি, ময়লা খাবারে পড়ত, এখন আর সেই সমস্যা নেই। এছাড়া যানজটের সমস্যা থেকেও আমরা মুক্ত।

এনামুল হক বলেন, আগে রাস্তায় প্রচুর যানজট হতো। কিন্তু দোকানগুলো গড়ে স্থানান্তর হওয়ায় রাস্তা ফাঁকা হয়েছে এবং গড় এখন মেলার মতো লাগছে।

বিভিন্ন ধরনের খাবারের সমাহার ও খোলামেলা পরিবেশ সবমিলিয়ে গড়পুকুর এখন ঘুরতে যাওয়ার অন্যতম জনপ্রিয় স্থান। দোকানিরাও নতুন জায়গায় স্বস্তি নিয়ে ব্যবসা করছেন। তাদের মতে, আগে ফুটপাতে জায়গা সংকট, যানজট আর বসার স্থানের সংকটে ব্যবসা করা কঠিন ছিলো। এখন গড়পুকুরে তারা নির্ভয়ে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশে কাজ করতে পারছেন।

এ জে মোমো স্টেশনের আয়শা বলেন, আগে রাস্তায় মানুষজনকে বসানো সম্ভব ছিল না। কিন্তু এখন বসার ব্যবস্থা করায় ব্যবসা ভালো হচ্ছে।

মিস্টার স্মুদির ব্যবসায়ী সাকিব মাহমুদ বাপ্পী বলেন, রাস্তার তুলনায় এখানে অনেক ভালো ব্যবসা করছি। আগে জায়গা ছিল ছোট, অস্বাস্থ্যকর এবং নানা সমস্যায় পড়তে হতো। এখন আমরা ভালোভাবে খাবার রান্না করতে পারি, বিক্রি করতে পারি সবই সুবিধা হচ্ছে।

বার্গার ব্রাইটের রাকিবুল হাসান বলেন, এখানে খেতে আসা মানুষ আছে, কিন্তু খাবার নিয়ে যাওয়ার (টেকঅ্যাওয়ে) মানুষ কম। রাস্তায় যতটা বিক্রি হতো, এখানে তার চেয়ে কিছুটা কম বলা যায়।

গড়পুকুরের এই রূপান্তর শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে, পথচারীদের চলাচল সহজ করেছে এবং ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য সৃষ্টি করেছে নতুন সম্ভাবনা।




মেহেরপুরে ভরা মৌসুমেও সকল সবজির দাম বাড়তি 

মেহেরপুর কাঁচাবাজারে কয়েকদিন স্বস্তির পর আবারও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। তবে শীতকালীন সবজির দাম স্বাভাবিক রয়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে বেশ কিছু সবজি ও নিত্যপণ্যের দামে কেজিপ্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত কম-বেশি দেখা গেছে।

গত শুক্রবার মেহেরপুর কাঁচাবাজার পরিদর্শন করে প্রত্যেকটা সবজি, মাছ, মাংস ও মুরগি বাজারে দাম ওঠানামা লক্ষ করা গিয়েছে।

পাইকারী বাজারে আলু ১৮ টাকা থেকে বেড়ে ২১ টাকা, পেয়াজ ও রসুন ৯৫, ৬০ টাকায় স্থিতিশীল। কাঁচামরিচ ১১০ টাকা থেকে কমে ১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। আদা ৩০ টাকা কমে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বেগুন ৬০ টাকায় অপরিবর্তিত, সিম ৮০ টাকা থেকে কমে ৭০ , পটলে ৫ টাকা বেড়ে ৪০ টাকা, পেঁপে ও শশা ১৫ ও ৬০ টাকায় স্থিতিশীল থেকে বিক্রি হচ্ছে।

শীতকালীন সবজির মধ্যে ফুলকপি, বাঁধাকপি, পালাংশাক ও মূলার দাম ওঠানাম রয়েছে। ফুলকপি ৪০, বাঁধাকপি ৩০ ও মূলা ২৫ টাকা অপরিবর্তিত এবং পালাংশাক ৫০ থেকে কমে ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

খুচরা বাজারে আলু ২২ টাকা থেকে বেড়ে ২৫ টাকা, পেয়াজ ১১০ টাকায় স্থিতিশীল, রসুনে ২০ টাকা বেড়ে ৯০ টাকায়। কাঁচামরিচ ১২০ টাকা থেকে বেড়ে ১৩০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। আদা ২২০ টাকা ৫০ টাকা কমে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বেগুন ৭০ টাকা থেকে বেড়ে ৯০ টাকায়, সিম ৯০ টাকা থেকে বেড়ে ১২০ টাকায়, পটলে ১০ টাকা বেড়ে ৫০ টাকা, পেঁপে ১০ টাকা বেড়ে ৪০ টাকা, শশা ৮০ টাকায় স্থিতিশীল থেকে বিক্রি হচ্ছে।

শীতকালীন সবজির মধ্যে ফুলকপি ৬০ থেকে বেড়ে ৭০ টাকায়, বাঁধাকপি ১০ টাকা বেড়ে ৫০ টাকায়, পালাংশাক ৫০ ও মূলা ৩০ টাকা অপরিবর্তিত থেকে বিক্রি হচ্ছে।

মাছের বাজারে রুই ৩০০, তেলাপিয়া ১৬০, পাঙাস ১৫০ , সিলভার ২০০ , স্বরপুটি ৫০০, জিওল ৪০০, ইলিশ ৭০০-১২০০, চিংড়ী ৭০০, গলদা ৮০০।

মুরগীর বাজরে ব্রয়লার মুরগী ১৭০ টাকা, সোনালী মুরগী ২৭০ এবং লেয়ার মুরগি ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ছাগলের মাংস ১১০০ টাকায় এবং গরুর মাংস সর্বদা ৭৫০ টাকায় অপরিবর্তিত।

সবজি বিক্রেতা মহির বলেন, “দাম বেশি হওয়ায় লোকজন কিনতে আসছে কম, ফলে বিক্রিও কমে গেছে আশানুরূপ বিক্রি হচ্ছে না।”

সবজি বিক্রেতা হাফিজুর রহমান বলেন, “ আগের সপ্তাহ থেকে কাচামালের দাম বাড়তে শুরু করেছে। আগের সপ্তাহে বেশি দামে বেচা-কেনা করতে হয়েছ একসপ্তাহে তার থেকেও ও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।“

ক্রেতারা অভিযোগ করেছেন, দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য এভাবে প্রতিদিন দাম ওঠানামা খুবই কষ্টকর এবং সংসার চালানো হুমকির মুখে।

সবজি ক্রেতা গোলাপ রব্বানী শুভ বলেন, “গত সপ্তাহের থেকে আজকে বাজারে সব ধরনের সবজির দাম অতিরিক্ত বেশি। এভাবে চলতে থাকলে আমার মতো সাধারণ জনগণ তো চলতে পারবে না।“

আরেক ক্রেতা নজমুল জানান, “যা টাকা হাতে নিয়ে আসি, তাতে সবকিছু কেনা সম্ভব হয় না। আগের চেয়ে বাজারে খরচ দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে। সংসার চালানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে।”

তহ-বাজার সভাপতি হাফিজুর রহমান হাফি বলেন, কাঁচামাল আমদানি খুবই কম আমদানি নাই বললেই চলে যার প্রেক্ষিতে দু-একটা মালের দাম একটু বেশি। কারণ আমদানি একেবারেই নাই। আমি একজন আরবদার প্রত্যেকদিন আমার ঘরে ৫০০ থেকে এক-দুই হাজার কেজি কাঁচামাল আসে আজকে মনে হয় সবমিলিয়ে ৫০-৬০ কেজি কাঁচামাল আসছে। যার কারণে পটলটা আজকে বেশি দামে বিক্রি হলো।

তিনি আরও বলেন, গত সপ্তাহের তুলনায় এই সপ্তাহে কিছু সবজির বাজার দাম তুলনামূলক বেশি। কাঁচামালের দাম সাধারণত আমদানি রপ্তানির উপর নির্ভর করে। আমদানি স্বাভাবিক থাকলে দাম স্বাভাবিক থাকে। বর্তমানে কিছু কাচাঁমালের আমদানি স্বাভাবিক না থাকায় সেগুলোর দাম অস্বাভাবিক ও দাম বেশি।




সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অশ্লীলতা: করণীয়

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আধুনিক জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ। তথ্য বিনিময়ের পাশাপাশি এটি মতপ্রকাশ, বিনোদন ও সমাজ গঠনের একটি শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত। বর্তমান সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (যেমন: ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক, ইনস্টাগ্রাম, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ ইত্যাদি) মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে। যোগাযোগ, বিনোদন, তথ্য সংগ্রহ, মতবিনিময় সবক্ষেত্রেই এগুলি ব্যবহৃত হচ্ছে।  এ মাধ্যমের নেতিবাচক দিকগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো অশ্লীলতা বা পর্নোগ্রাফির বিস্তার। বাংলাদেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে অশ্লীল কনটেন্ট শুধু ব্যক্তিগত মূল্যবোধকেই প্রভাবিত করে না, বরং এটি সামাজিক অপরাধ, নারীর প্রতি সহিংসতা ও মানসিক বিকৃতি বাড়াতেও ভূমিকা রাখে। অপ্রয়োজনীয়, অশ্লীল ও অনৈতিক ব্যবহার বিশেষ করে অশ্লীলতা, যৌন চেহারা বা কণ্ঠস্বরের অপব্যবহার সমাজে নানান নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।  এ প্রেক্ষাপটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অশ্লীলতার মোকাবিলা করা, সচেতনতা সৃষ্টি করা ও এর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।

“অশ্লীলতা” ও “আচরণ সীমা” ধারণাগত ভাবনায় “অশ্লীলতা” (obscenity, indecency) শব্দের মানে নির্ধারণ করা সহজ নয়। এটি নির্ভর করে সমাজ, সংস্কৃতি, ধর্ম, আইন ও নৈতিকতার ধাঁচ অনুযায়ী। সাধারণভাবে বলা যেতে পারে; কোনো কনটেন্ট (লেখা, ছবি, ভিডিও, অডিও) যদি যৌনাঙ্গ, যৌন সম্পর্ক, নগ্নতা বা যৌন উদ্রেকমূলক উপাদান প্রকাশ করে এবং তা এমনভাবে উপস্থাপন করে যা শ্রোতা, দর্শক বা পাঠকের মনে অশ্লীল অনুভূতি জাগাতে পারে, তাহলে তা “অশ্লীল” বলা যেতে পারে। এছাড়া এমন কনটেন্ট যা “মন্দমনস্কতা, অনৈতিকতা, বিবর্জিত শালীনতা” প্রচার করে; যেমন গালিগালাজ, যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ শব্দ, অশ্লীল ভঙ্গিতে নাচ গান, বিশ্লেষণহীন নগ্ন চিত্র এ গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।

পৃথিবীর অনেক দেশে আইনসম্মতভাবে “অশ্লীলতা” সংজ্ঞায়িত হয়েছে। “যদি কোনো সাধারণ মনোধারক ব্যক্তি কোনো কনটেন্টকে যৌনভাবে উদ্দীপক হিসেবে দেখে এবং যা সমাজে নৈতিকভাবে গৃহীত হয় না, তাহলে তা “কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড” (community standard) নিয়মের ভিত্তিতে অশ্লীল” । তবে “অশ্লীলতা” ও “শোভনতা” এর মাঝখানে একটি সূক্ষ্ম সীমানা রয়েছে। কিছু বিষয় একটি সমাজে অশ্লীল মনে হতে পারে, আবার সে বিষয়টি অন্য সমাজে ন্যায্য শিল্প বা সাহিত্য হিসেবেও গণ্য হতে পারে। অতএব, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় প্রেক্ষাপট এ ক্ষেত্রে গুরুত্ব বহন করে।

সামাজিক নৈতিকতা, স্বাধীনতা ও সীমাবদ্ধতা প্রকাশের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা (freedom of expression) একটি অন্যতম মৌলিক অধিকার। অনেক ক্ষেত্রে শিল্প, সৃষ্টিশীলতা ও মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে কিছুটা “বিস্মৃত” বা “চ্যালেঞ্জিং” উপাদান থাকতে পারে। তবে যে ক্ষেত্রে সেই উপাদান সমাজে অশ্লীলতা বয়ে আনে, অর্থাৎ মানুষের নৈতিক ও মানসিক ক্ষতি, সামাজিক মূল্যবোধ বিনষ্টকারী হয়, সেক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা প্রয়োগ করা প্রয়োজন।

কোনো কনটেন্ট যদি জনসাধারণকে ব্যভিচার বা অনৈতিক কার্যসাধনে প্রলুব্ধ করে, শিশু বা কিশোরকে অনুপযুক্ত প্রভাবিত করে, সামাজিক ন্যায্যতা ও নৈতিকতা বিনষ্ট করে, ব্যক্তির মর্যাদা ও সম্মানহানির কারণ হয়, তাহলে আইন ও নৈতিকতার পরিপ্রেক্ষিতে সেটি নিষিদ্ধ হওয়া উচিত। সুতরাং, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অশ্লীলতা শুধু “ব্যক্তিগত নৈতিকতার” বিষয় নয় বরং “গুরুতর সামাজিক ও সাংগঠনিক” বিষয়ও।

চলমান সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অশ্লীলতার প্রকৃতি বহুবিধ বিস্তৃত। দেখা যায় সোশ্যাল মিডিয়া অশ্লীলতা বা অনৈতিক কনটেন্টের একটি বিশাল মঞ্চ হয়ে উঠেছে। এর কারণ প্রবল সাড়া, প্রতিক্রিয়া, দ্রুততা, গোপনীয়তার ভান এবং সীমিত বিধিনিষেধ।

এর প্রকৃতি ও ধরন হলো; নগ্ন বা আংশিক নগ্ন চিত্র বা ভিডিও। কোনো ব্যক্তি বা মডেল নগ্ন বা আংশিক নগ্ন অবস্থানে দেখা যায় এমন ছবি বা ভিডিও। যৌন সঙ্গম, সঙ্গমই সূচক (explicit sexual acts) চিত্রায়ন। যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ ভাষা, মন্তব্য বা মেসেজ। গালিগালাজ, অশ্লীল শব্দ, যৌন উত্তেজক মন্তব্য, বর্ণনা। মেসেঞ্জার বা চ্যাটে যৌন কুপ্রস্তাব, হার assing, সেক্সটিং (sexual messaging)। অশালীন নাচ-গান, চ্যালেঞ্জ বা ট্রেন্ড প্রকাশ। নির্লজ্জ নাচ, চ্যালেঞ্জ ভিডিও যেখানে নাচ করণের মাধ্যমে প্রলোভনমূলক বিষয় উপস্থাপন করা হয়। গোপন ভিডিও বা ছবি প্রকাশ ও শোষণ। গোপনে ধারণ করা ছবিগুলি সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করা (revenge porn)। ব্যক্তির অনুমতি ছাড়া তার অন্তরঙ্গ ছবি বা ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া। অশ্লীল বিজ্ঞাপন ও মার্কেটিং কন্টেন্ট। বিক্রয় মূলক উদ্দেশ্যে যৌন উত্তেজক কনটেন্ট ব্যবহার করা (যেমন: যৌন ওষুধ, পণ্যের বিক্রিতে উত্তেজক বিজ্ঞাপন)। অশ্লীলতার প্রসার যেভাবে হয়ে থাকে; শেয়ার ও রিডিসট্রিবিউশন। এক ব্যক্তি কনটেন্ট শেয়ার করলে তা দ্রুত ভাইরাল হতে পারে, কপি বা পুনরায় প্রকাশ হতে পারে। রিমিক্স বা মিডিয়া ম্যানিপুলেশন। কোনো সাধারণ ভিডিও বা ছবিকে কেটে প্যাস্ট করে যৌন প্রেক্ষাপটে বদলানো। ফিল্টার ও চ্যানেল। বিভিন্ন গ্রুপ, চ্যানেল বা পেজে পুরানো অশ্লীল বিষয়বস্তু সংরক্ষিত ও পুনরুদ্ধৃত হয়। অ্যালগরিদম বুস্টিং। অধিক “Engagement” (লাইক, শেয়ার, কমেন্ট) সৃষ্টি করতে এমন কনটেন্টকে অ্যালগরিদম স্বয়ং বুস্ট করে শীর্ষে তুলে দেয়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অশ্লীলতা বিস্তারের পেছনে বেশ কিছু কারণ ও চালক শক্তি রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে মূল কারণগুলো হচ্ছে; মনোদৈহিক প্রলোভন ও আকর্ষণ। যৌন প্রলোভন মানুষের একটি স্বাভাবিক প্রবণতা। কিছু মানুষ এই প্রলোভনকে কাজে লাগিয়ে বিশেষ করে দুর্বল মনোসংবেদনশীলতায় অশ্লীল কনটেন্ট বানায় এবং শেয়ার করে। আর্থিক প্রণোদনা প্রাপ্তির ইচ্ছা; কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান অশ্লীলতা ভিত্তিক কনটেন্ট থেকে অর্থ আয় করে। উদাহরণস্বরূপ, বিজ্ঞাপন রাজস্ব, পেইড সাবস্ক্রিপশন, বোনাস বা টিপস ইত্যাদি। অনুকরণ প্রবণতা (Trend / Viral Culture); যখন একটি অশ্লীল ভিডিও বা চ্যালেঞ্জ ভাইরাল হয়, অনেকেই অনুকরণ করতে চায় “ফেম” বা “ভাইরাল স্ট্যাটাস” এর আশায়।

এছাড়াও সামাজিক ও নৈতিক সংকটও একটি কারণ। যেখানে পারিবারিক শিক্ষা দুর্বল, নৈতিক শিক্ষা কম বা অসংগঠিত, সেখানে মানুষ সহজেই প্রলোভনপূর্ণ কনটেন্টের প্রতি আকর্ষণ প্রবণ হতে পারে। নিয়ন্ত্রণের অভাব ও অনুপ্রবেশ সংস্কৃতিও দেখা যায় এ ক্ষেত্রে। অনেক দেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা অনলাইন কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণ কঠিন। আইন জানানোর অভাব, মনিটরিংয়ের সীমাবদ্ধতা ও আইন প্রয়োগ অব্যবস্থাপনার কারণে অশ্লীল কনটেন্ট অপসারণ বা দমন করা কঠিন হয়ে থাকে। গোপনীয়তার ভান ও অননুমোদিত প্রকাশ। কোনো ব্যক্তি মনে করতে পারে সামাজিক মাধ্যমে গোপনীয়তা আছে। ফলে নিজের অন্তরঙ্গ ছবি বা ভিডিও আপলোড করতে সাহস পান। পরে সেই কনটেন্ট অন্য কারো দ্বারা অপব্যবহার হতে দেখা যায়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অশ্লীলতার বিস্তার যেমন ব্যক্তিগত ক্ষতি ঘটাতে পারে, তেমনি সামাজিক প্রেক্ষাপটেও বিপদ সৃষ্টি করতে পারে। যার প্রভাব হলো; মানসিক ও আবেগিক ক্ষতি। অশ্লীলতা বা হিংস্রতা দেখলে দর্শক বা পাঠক বিব্রত, লজ্জা বা শোকে ভোগেন। যদি কারো গোপন ছবি বা ভিডিও প্রকাশ পায়, সেই ব্যক্তি মানসিক আঘাত, ট্রমা, সামাজিক কলঙ্ক ও হেনস্তার শিকার হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে আত্মহত্যার প্রবণতা, বিষণ্নতা, উদ্বেগ বৃদ্ধি পেতে পারে। নৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয় হয়। সমাজের নৈতিক মূল্যবোধ ধ্বংস হতে পারে, অনৈতিকতা ও বিবেচনাহীন প্রতিযোগিতা বাড়তে পারে। পরিবার ও সামাজিক বন্ধন ভেঙে যেতে পারে। শিশু ও কিশোররা প্রলোভিত হতে পারে এবং তাদের মন ও আচরণ বিকৃত হতে পারে।

ব্র্যান্ড ইমেজ ও সামাজিক সম্মানহানি ঘটার ঘটনাও দেখা যায়। যদি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অশ্লীল কনটেন্টে জড়িয়ে পড়ে, তার সামাজিক সুনাম ও মর্যাদা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পেশাগত জীবনে (নিয়োগ, বিশ্বাস, সম্মানহানি) নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। কিছু ক্ষেত্রে আইনগত অভিযোগ, দায়বদ্ধতা বা মামলা হতে পারে। সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে উদ্বুদ্ধ হতে পারে। অশ্লীল কনটেন্টের উপস্থিতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ইমেজ ও কার্যকারিতাকে পুনর্বিচার করতে বাধ্য করে। অনেকে এ মাধ্যমকে “নো-মানুষের স্থান” বলেও অভিহিত করে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অশ্লীলতা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে কার্যকর পন্থা অবলম্বন করতে হবে । যা ব্যক্তিগত, পরিবার-স্তর, সামাজিক ও আইনগত পর্যায়ে অনুশীলন প্রয়োজন। ব্যক্তিগত পর্যায়ে করণীয় হলো; সচেতনতা ও নৈতিকতার উন্নয়ন ঘটানো। নিজের মনকে অধিকতর শালীন ও নৈতিক শিক্ষায় প্রশিক্ষিত করা। স্পষ্টভাবে জানা, কী ধরনের কনটেন্ট গ্রহণযোগ্য এবং কী ধরনের অনৈতিক। নিজের অনলাইন ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে রাখা। অশ্লীল বা সন্দেহভাজন লিঙ্ক এড়িয়ে চলা।

প্রাইভেসি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সামাজিক মাধ্যমে গোপনীয়তা সঠিকভাবে সেট করতে হবে। ব্যক্তিগত ছবি বা ভিডিও শেয়ার করার ক্ষেত্রে দলিল বা অনুমতির প্রতিজ্ঞা রাখা জরুরি। সন্দেহভাজন বা অননুমোদিত বন্ধুপত্র বা মানুষকে ফলো না করা। নিরাপদ শেয়ারিং ও মন্তব্য, মন্তব্য বা রিঅ্যাকশনে সংযম বজায় রেখে অশ্লীল মন্তব্য এড়িয়ে যেতে হবে। পাশাপাশি নিরাপদ ব্রাউজার ব্যবহার, অশ্লীল সাইট ব্লক করার টুলস ইনস্টল করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের “কন্টেন্ট ফিল্টার” বা “নেগেটিভ কনটেন্ট ব্লকার” সক্রিয় রাখতে হবে।

পরিবার ও শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে যা করণীয় হতে পারে তা হলো, শিক্ষা ও নৈতিকতা শিক্ষা দেওয়া। বিদ্যালয় ও কলেজে “অনলাইন এথিকস ও নৈতিক ব্যবহার” বিষয়ক শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা। পিতামাতা ও অভিভাবকরা সন্তানদের সঙ্গে প্রযুক্তি ব্যবহারের নৈতিক দিক আলোচনা করবেন। কিশোরদের জানিয়ে দিতে হবে, অনলাইন অশ্লীলতা তাদের মানসিক ও সামাজিক ক্ষতির কারণ হতে পারে।

সামাজিক ও সংগঠন পর্যায়ে করণীয়তা হলো; সচেতনতা ও ক্যাম্পেইন। সামাজিক আন্দোলন, মিডিয়া প্রচারাভিযান (রেডিও, টিভি, অনলাইন) চালাতে হবে, যাতে মানুষ জানতে পারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অশ্লীলতার ক্ষতির দিক। শিক্ষার্থীদের, যুবসমাজকে, পাবলিক স্পেসে ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সচেতনতা বাড়াতে হবে। নিজস্ব মানদণ্ড ও গাইডলাইন তৈরি করা প্রয়োজন। সামাজিক পেইজ, গ্রুপ বা চ্যানেলগুলো তাদের নিজস্ব “কন্টেন্ট নীতিমালা” নির্ধারণ করবে যা অশ্লীল, মানহীন কনটেন্ট বন্ধ করবে। গ্রুপ এডমিন ও মডারেটরদের প্রশিক্ষণ দেয়া উচিত, কোন ধরনের পোস্ট অনুমোদন বা বন্ধ করা হবে সে বিষয়ে। সহযোগীদের সঙ্গে সমন্বয় তথা ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (ISP), সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানি, সিভিল সোসাইটি একসঙ্গে কাজ করবে অশ্লীল কনটেন্ট বাধা দিতে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান, এনজিও, মানবাধিকার সংস্থাগুলো মিলিতভাবে “সাইবার নিরাপত্তা ও নৈতিকতা” বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রোগ্রাম চালাতে পারে।

পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১২ (Pornography Control Act, 2012) অনুযায়ী পের্ভিয়েট ও পারফ্লিক ছবি বা ভিডিও ছড়ানো, প্ৰকাশ করা, রাখা ইত্যাদিতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা রয়েছে। এই আইন অনুসারে, নগ্ন বা যৌন দৃশ্যাবলি প্রচার বা রাখা অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়। এ বিষয়ে শাস্তি হতে পারে কারাদণ্ড ও জরিমানা।

পরবর্তীতে “ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন, ২০১৮” তৈরি করা হয়েছিল অনলাইন অপরাধ নিরোধে। তারপরে এটি পরিবর্তন করে “সাইবার সিকিউরিটি আইন, ২০২৩” প্রণয়ন করা হয়েছিল। এই আইনগুলিতে অনধিকারপ্রবেশ, নকল বা বিকৃত কনটেন্ট প্রকাশ, অপমানমূলক তথ্য প্রচার, গোপন তথ্য প্রতারণা ইত্যাদি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। সর্বশেষ ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দে সাইবার সিকিউরিটি আইনও বাতিল করে বর্তমানে “সাইবার সিকিউরিটি অর্ডিনেন্স, ২০২৫” প্রবর্তন করা হয়েছে। অশ্লীল, অপ্রত্যাশিত, অশ্লীল মেসেজ বা চ্যাট এলে মনিটরিং, রিপোর্টিং ও অপসারণ প্রক্রিয়া সহজতর করা প্রয়োজন। সরকারি বা আধাসরকারি “সাইবার নজরদারি বিভাগ” শক্তিশালী করতে হবে, যারা পর্যবেক্ষণ করবে। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে সমন্বয় রেখে অবিলম্বে অশ্লীল কনটেন্ট অপসারণের প্রক্রিয়া থাকতে হবে। নাগরিকদের জন্য সহজ “রিপোর্টিং মডিউল” থাকা উচিত, যার মাধ্যমে একটি বাটন বা ফিচার যা ব্যবহার করে সহজেই কনটেন্ট রিপোর্ট করা যাবে।

শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ও দায়বদ্ধতা দৃষ্টিগোচর হতে হবে। অশ্লীল কনটেন্ট তৈরি, প্রচার বা বিতরণে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কার্যকর বিচার ও শাস্তি হওয়া উচিত। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সক্ষমতা উন্নয়ন, বিশেষ প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে। প্ল্যাটফর্ম সংস্থাগুলোকেও দায়বদ্ধ করা, যদি তারা দ্রুত অশ্লীল কনটেন্ট অপসারণ না করে। তাদেরকে জরিমানা বা বিধিনিষেধের মুখে রাখা যেতে পারে।

কিছু চ্যালেঞ্জ থাকবে, যা মোকাবিলা করাও জরুরি। সাইবার অপরাধে প্রমাণ সংগ্রহ কঠিন। লগ, সার্ভার ডেটা, আইপি ট্রেসিং ইত্যাদি থেকে প্রমাণ সংগ্রহ চ্যালেঞ্জিং। এছাড়াও গ্লোবাল হোস্টিং, অফশোর সার্ভার ব্যবহৃত হলে তদন্ত জটিল হতে পারে। অনেক সময় “অশ্লীল” বলে যে কনটেন্ট নিষিদ্ধ করা হয়, সেটা আদৌ অপরাধ কি না, বিচার ও আইনগত সীমা স্পষ্ট নয়। আইন প্রয়োগে অতিরিক্ত ক্ষমতা ব্যবহার হলে বাক স্বাধীনতা ক্ষুন্ন হতে পারে।

সম্পদের সীমাবদ্ধতা, বিশেষ করে অনেক স্থানীয় প্রশাসন বা সংস্থার পর্যাপ্ত প্রযুক্তি ও মানবশক্তি নেই। ডিজিটাল নজরদারি ও মনিটরিংয়ে অত্যাধুনিক ব্যবস্থা প্রয়োজন, যা ব্যয়বহুল। দুর্নীতি ও কর্তৃত্ববাদী ব্যবহারও এ ক্ষেত্রে বাধা হয় কখনো। আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে ক্ষমতাবাদী গোষ্ঠী বা রাজনৈতিক দিক থেকে দমনমূলকভাবে ব্যবহার হতে পারে। কখনোবা ক্ষমতাসীন পক্ষের বিরোধী কণ্ঠকে “অশ্লীল” উপাদানের অভিযোগে দমন করতেও দেখা যায়। এ সকল ক্ষেত্রে সমাধান হতে পারে, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ প্রক্রিয়া। মামলায় স্বচ্ছতা, ন্যায্য বিচার ও আপিল প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা। দোষ প্রমাণের ক্ষেত্রে নির্ধারিত মানদণ্ড রাখতে হবে। পাশাপাশি, প্রযুক্তির ব্যবহার করে কনটেন্ট ফিল্টার এবং অটোমেটেড সিস্টেম (মেশিন লার্নিং, AI) ব্যবহার করে অশ্লীল কনটেন্ট শনাক্ত করা যেতে পারে। এসব সিস্টেমকে নানাবিধ ভাষা, সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট, স্ল্যাং, ইয়ারনিক্যাল শব্দ চিনতে সক্ষম করতে হবে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠলেও এই মাধ্যম যদি অশ্লীলতা ও নৈতিক অবক্ষয়ের মঞ্চ হয়ে ওঠে, তাহলে তার নেতিবাচক প্রভাব শিশু, কিশোর, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের ওপর প্রতিকূল হতে পারে। এই সমস্যা মোকাবিলা একমাত্র আইন বা প্রযুক্তি দিয়ে সম্ভব নয়। এটি  সামাজিক আন্দোলন, নৈতিক সংস্কার ও সর্বস্তরের অংশগ্রহণের বিষয়। ব্যক্তি, পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সামাজিক সংগঠন ও রাষ্ট্র একত্রে কাজ করলে এবং সচেতন হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অশ্লীলতা কমিয়ে এনে একটি সুস্থ, নৈতিক ও সমৃদ্ধ সামাজিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গঠন করা সম্ভব।

লেখক: গল্পকার, কথাসাহিত্যিক ও প্রবন্ধকার।




বিএনপি বেহেশতের টিকিট দিতে পারবে না

চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ও বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেছেন, বিএনপি বেহেশতের টিকিট দিতে পারবে না। তাই আমরা এ ধরনের প্রতিশ্রুতি দিতে পারবো না। তবে আমরা এলাকার উন্নয়নের বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিতে পারি।

গতকাল শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে চুয়াডাঙ্গা উপজেলার জীবননগর ইউনিয়নের মনোহরপুরে একাধিক পথসভায় তিনি এই মন্তব্য করেন।

চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সভাপতি বলেন, আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে সেই কথাগুলো বলি যা বাস্তবায়নযোগ্য। যা সম্ভব নয়, বা অসম্ভব, সেটা আমরা বলি না। আমরা কৃষির উন্নয়নের কথা বলি, শিক্ষার উন্নয়নের কথা বলি, তরুণ প্রজন্মের বেকারত্ব কমানো এবং দেশকে এগিয়ে নেওয়ার কথাই বলি।

তিনি আরও বলেন, বিগত ১৭ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামে জাতীয়তাবাদী দলের নেতা-কর্মীরা সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়েছেন। হামলা, মামলা, গুম এবং বিভিন্ন প্রলোভনের কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। তার চেয়েও বেশি ক্ষতি হয়েছে দেশের গণতন্ত্র ও সাধারণ মানুষের।

মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, ভোটের মাধ্যমে যেটা নির্ধারিত হবে, তা হলো আগামী দিনে দেশের উন্নয়ন কী হবে। আর বেহেশতে যাওয়া, জান্নাতে যাওয়া এটা ব্যক্তিগত কর্ম। কেউ যদি কোরআন শরীফের আড়ালে ছোট ছোট প্রলোভন দেখিয়ে ভোট প্রভাবিত করার চেষ্টা করে, তবে জনগণ বুঝবে।

পথসভায় উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ মিল্টন, জীবননগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আনোয়ার হোসেন খান খোকন, সাবেক সভাপতি আক্তারুজ্জামান, সাংগঠনিক সম্পাদক আলতাফ হোসেন,‌ জীবননগর উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব রিমন, মনোহরপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং ইউনিয়ন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের অন্যান্য নেতা-কর্মী।




আলমডাঙ্গায় গণ-অধিকার পরিষদের এমপি মনোনীত প্রার্থীর গণসংযোগ

আলমডাঙ্গায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে গণ-অধিকার পরিষদের এমপি মনোনীত প্রার্থী এ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান গণসংযোগ করছেন।

গতকাল শনিবার আলমডাঙ্গা উপজেলার কুমারী ইউনিয়নে, নুরুল হক নূরের নেতৃত্বে গণ-অধিকার পরিষদের চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের ট্রাক মার্কার মনোনীত প্রার্থী এ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান জনগণের উদ্দেশ্যে বলেন, নির্বাচনের আগে কোন প্রকার হাঙ্গামা বা বিশৃঙ্খলা করা যাবে না। গ্রামের অর্ধশিক্ষিত সাধারণ মানুষকে ধর্মের দোহাই দিয়ে, ধর্মকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় যাওয়ার রাজনীতি করা যাবে না।

গণসংযোগের সময় উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা গণ-অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব ইবনুর রশিদ মাসুক,

যুগ্ম আহ্বায়ক মুজিবুল মেম্বার, যুব অধিকার পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান হিরন, আলমডাঙ্গা যুব অধিকার পরিষদের প্রস্তাবিত সদস্য সচিব আব্দুল মমিন,

এছাড়াও আরও অনেক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।

সংক্ষিপ্ত বক্তব্য শেষে প্রার্থী কুমারী ও হারদি বাজারে গণসংযোগ করেন এবং উপস্থিত মানুষের সাথে কুশল বিনিময় ও দোয়া প্রার্থনা করেন।




আলমডাঙ্গায় ইজিবাইকের সঙ্গে মোটরসাইকেল সংঘর্ষ, আহত ৪

আলমডাঙ্গার নওদাপাড়া নতুন ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় চারজন আহত হয়েছেন।

জানা গেছে, সরজগঞ্জ জলীবিলে গ্রামের বাসিন্দা তোতা মিঞা তার স্ত্রী তানিয়া খাতুনের চিকিৎসার উদ্দেশ্যে পরিবারের চারজনকে নিয়ে অটোরিকশায় করে কুষ্টিয়ায় যাচ্ছিলেন। নওদাপাড়া নতুন ব্রিজ সংলগ্ন স্থানে পৌঁছালে একটি মোটরসাইকেলের সঙ্গে মুখোমুখি ধাক্কা লাগে।

মোটরসাইকেল চালক আমিরুল ইসলাম আলমডাঙ্গা উপজেলার কুমারী ইউনিয়নের দুর্লভপুর গ্রামের মৃত কুদরত আলির ছেলে। দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল চালকের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।

দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আব্দুল আলিমের স্ত্রী পলি খাতুন, মেয়ে চম্পা খাতুন, ছেলে তোতা মিঞা ও তার স্ত্রী তানিয়া খাতুন।

আহতদের আলমডাঙ্গা ফাতেমা ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এরপর তোতা মিঞা ও তার স্ত্রী তানিয়া খাতুনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। অন্য দুইজন, পলি খাতুন ও চম্পা খাতুনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।




দর্শনায় বাবু খানের পক্ষে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ

চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দর্শনায় ধানের শীষ প্রতীকে বাবু খানের পক্ষে গণসংযোগ ও বিএনপির ৩১ দফা বাস্তবায়নে লিফলেট বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনা পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের শান্তিপাড়া এলাকায় এ গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করা হয়।

এ নির্বাচনী প্রচারণায় দর্শনা পৌর বিএনপির অন্যতম সমন্বয়ক আলহাজ্ মোঃ মশিউর রহমানের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করছেন।

গণসংযোগকালে মশিউর রহমান বলেন, চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে জননেতা মাহমুদ হাসান খান বাবু ভাইকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচিত করতে পারলে স্বাধীনতার পরবর্তী অবহেলিত এ অঞ্চলে শুরু হবে উন্নয়নের জোয়ার। চুয়াডাঙ্গা-২ এলাকা হয়ে উঠবে আশপাশের জেলার মধ্যে অন্যতম উন্নত এলাকা। আগামী নির্বাচনে বিএনপি সরকার গঠন করলে দেশে সূচিত হবে উন্নয়নের নতুন দিগন্ত। তাই সবাই আসুন, বিএনপির পতাকার নিচে ঐক্যবদ্ধ হই।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন দর্শনা পৌর বিএনপির সমন্বয় কমিটির সদস্য মাহবুবুল ইসলাম খোকন, রেজাউল ইসলাম; বিএনপি নেতা হাবিবুল্লাহ বিশ্বাস, দর্শনা থানা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মোর্শেদুর রহমান লিংকন, মোস্তাফিজুর রহমান মোহন, আল মুকিত, যুবদল নেতা মোমিনুল ইসলাম, সাব্বির রহমান, দর্শনা পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক আফরাত হোসেন;

দর্শনা সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সদস্যসচিব পলাশ আহমেদ, যুগ্ম আহ্বায়ক মোফাজ্জেল হোসেন মোফা, দর্শনা ডিএস মাদরাসা ছাত্রদলের সভাপতি খন্দকার শাহাব উদ্দিন, ছাত্রদল নেতা আকাশ, ফয়সালসহ অন্যান্য নেতাকর্মী।

অন্যদিকে, দশর্না পুরাতন বাজার থেকে দশর্না পৌর বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি ও প্রধান সমন্বয়ক হাবিবুর রহমান বুলেট এবং মোমিনুলের নেতৃত্বে একটি টিম শহরের অলিগলি ঘুরে ভোট প্রার্থনা করেছেন। এ সময় তারা মাহমুদ হাসান খান বাবুর ছবি এবং ধানের শীষ প্রতীকের লিফলেট বিতরণ করেন।