মেহেরপুরে ২০২৫ সাল পর্যন্ত সময়ে সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ৪৩ জন নিহত এবং শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে শিশু, শিক্ষার্থী, নারী, সরকারি প্রকৌশলী, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী, প্রবাসফেরত যুবক, কলেজ ছাত্র ও বৃদ্ধ রয়েছেন। দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, ট্রাক, ভ্যান ও বাইসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনের মুখোমুখি সংঘর্ষ এবং নিয়ন্ত্রণ হারানোর ঘটনা রয়েছে।
মেহেরপুর প্রতিদিনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ বিশ্লেষন করে এসকল তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, গত ২৩ ডিসেম্বর, মেহেরপুর সদর উপজেলার আমদহ-টেংরামারি সড়কের আশরাফপুর এলাকায় ড্রামট্রাকের সঙ্গে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে লিজন হোসেন ও রকিবুল ইসলাম নামের দুই যুবক নিহত হন।
কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে গাংনী-কুথিলী সড়কে ইটবাহী ট্রলির সঙ্গে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে নিহত তুহিন হোসেনের (৩২) পর তার শিশু কন্যা তানহাও মারা যায়। গত মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত তুহিন হোসেন গাংনী উপজেলার মাইলমারী ধলা গ্রামের জামাল উদ্দিনের ছেলে।
১৪ ডিসেম্বর, মেহেরপুরের গাংনীতে দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে রাকেশ আহমেদ (১৮) নামের দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ২ জন। রবিবার সকালে উপজেলার বামন্দী বাসস্ট্যান্ডে এ ঘটনা ঘটে। নিহত রাকেশ আহমেদ উপজেলার তেরাইল গ্রামের মো. কমিরুল ইসলামের ছেলে। তিনি স্থানীয় বামন্দী নিশিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্র। আহতরা হলেন মেহেরপুরের আব্দুল বাকীর ছেলে অভিক আহমেদ (২৮) ও শয়ন আলী (১৬)।
৭ ডিসেম্বর, মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সাহেবনগর বাজার এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় শাহিন নামে এক এসএসসি পরীক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। নিহত শাহিন এবছরের এসএসসি পরীক্ষার্থী ও মালয়েশিয়া প্রবাসফেরত কাজিপুর গ্রামের ছাদিমান আলীর ছেলে।
২ ডিসেম্বর, মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার মানিকদিয়া গ্রামে ট্রাক্টরের চাকায় পিষ্ট হয়ে শিহাব হোসেন (৭) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়।
সোমবার দুপুরে নিজ বাড়ির পাশে মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত শিহাব উপজেলার মানিকদিয়া গ্রামের মাঠপাড়ার কৃষক ওসমান আলীর ছেলে।
২৯ নভেম্বর, মেহেরপুরের গাংনীতে অটোবাইকের ধাক্কায় তানিশা (৭) নামে এক কন্যাশিশুর মৃত্যু হয়। শুক্রবার দুপুরে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের গাড়াডোব কাচারি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত তানিশা খাতুন গাড়াডোব কাচারি পাড়ার তামিম ইকবালের মেয়ে।
একই দিনে, মেহেরপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় রিপোর্টার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও আনন্দ টেলিভিশনের মেহেরপুর জেলা প্রতিনিধি মিজানুর রহমান গুরুতর আহত হন। শনিবার দুপুর ২টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
২৬ নভেম্বর, মেহেরপুরের গাংনীতে কাঁঠাল গাছের সঙ্গে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় রানা আহম্মেদ (১৭) নামের এক কিশোর নিহত হয়।
বুধবার দুপুরে সাহেবনগর গ্রামের তালতলা মোড় নামক স্থানে মোটরসাইকেলযোগে বাড়ি ফেরার পথে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত রানা আহম্মেদ বামন্দী ইউনিয়নের নিশিপুর গ্রামের হামিদুল ইসলামের ছেলে।
২৫ নভেম্বর, মেহেরপুর সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের মনোহরপুর গ্রামসংলগ্ন রাস্তায় সবজি বোঝাই ট্রাক উল্টে ট্রাকচালক জাহিদুল ইসলাম (২১) আহত হন। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
২২ নভেম্বর, মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে তাসিম (২১) নামে এক যুবক নিহত হন। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে মঠমুড়া ইউনিয়নের আকুবপুর গ্রামে মোজাম্মেল হকের বাড়ির সামনে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত তাসিম কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার হিদিরামপুর গ্রামের আ. লতিফের ছেলে।
আহতরা হলেন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার হিদিরাম গ্রামের রমজান আলীর ছেলে আকাশ (২০), একই গ্রামের মিজানুর রহমানের ছেলে রাজা (২০), দৌলতপুর উপজেলার মহিশকুন্ডি মিস্ত্রিপাড়ার মোটরসাইকেলচালক খোকনের ছেলে জিসান (২২) এবং তার সঙ্গে থাকা আরও একজন অজ্ঞাত যুবক।
১৯ নভেম্বর, গাংনীর নওপাড়া বাজারে ট্রলির সঙ্গে দ্রুতগতির মোটরসাইকেলের ধাক্কায় তুহিন আলী, ইমন ও সাব্বির হোসেন নামে তিন যুবক আহত হন। আহত তিনজনের বাড়ি একই গ্রামের নওপাড়া।
১৬ নভেম্বর, মেহেরপুরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় তোফাজ্জেল বিশ্বাস নামের এক শিক্ষক নিহত হন। সদর উপজেলার পুরাতন দরবেশপুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
৯ নভেম্বর, মেহেরপুরে বিআরটিসির একটি বাসের ধাক্কায় শরিফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি নিহত হন। মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের শহরের ব্র্যাক অফিসের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত শরিফুল ইসলাম শহরের মল্লিকপাড়া এলাকার খাদেমুল ইসলামের ছেলে।
২৬ অক্টোবর, মেহেরপুরে ট্রাকের ধাক্কায় শাহিদা খাতুন (৬০) নামের এক নারী শ্রমিক নিহত হন। রবিবার দুপুরে সদর উপজেলার ফতেপুর-শোলমারি সড়কের তেরোঘরিয়া গ্রামের রাস্তায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত শাহিদা খাতুন উজলপুর গ্রামের মৃত আব্দুল গনির স্ত্রী।
২২ অক্টোবর, মেহেরপুরের গাংনীতে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কমিউনিটি ক্লিনিকের সঙ্গে ধাক্কায় সুজন নামের এক মালয়েশিয়া প্রবাসফেরত যুবকের মৃত্যু হয়।
২১ অক্টোবর, মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কের গাংনী উপজেলার শুকুরকান্দী নামক স্থানে ট্রাক ও সিএনজির মুখোমুখি সংঘর্ষে একজন নিহত ও তিনজন আহত হন। শুকুরকান্দীর গ্যাসপাম্পের অদূরে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত হলেন উপজেলার বাদিয়াপাড়া গ্রামের উত্তরপাড়ার আরিফুল ইসলামের স্ত্রী সুমি খাতুন (৩৫)। আহতরা হলেন বাদিয়াপাড়া গ্রামের মফিজুল হকের স্ত্রী নোজিয়ারা খাতুন (৪০), একই গ্রামের আরিফুল ইসলামের ছেলে নিরব (১২) ও মহাব্বতপুর গ্রামের আনারুল ইসলামের ছেলে সিএনজিচালক হযরত আলী (৩২)।
১৫ অক্টোবর, মেহেরপুর সদর উপজেলার ফতেপুর উত্তরপাড়া মসজিদের সামনে ট্রাকের ধাক্কায় ফারহানা ওয়াহিদা অমি (২৬) নামে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের এক ছাত্রী নিহত হন।
বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ফারহানা ওয়াহিদা অমি মেহেরপুর শহরের কাসারিপাড়ার আব্দুল ওয়াহিদ চঞ্চলের মেয়ে এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
১৪ অক্টোবর, মেহেরপুরের গাংনী-কাথুলি সড়কে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে মকলেছুর রহমান নামের এক জমি পরিমাপ আমিন নিহত হন। নিহত মকলেছুর রহমান গাংনী উপজেলার সাহারবাটি গ্রামের আব্দুর রহমান কারিগরের ছেলে। মঙ্গলবার বেলা ২টার দিকে গাংনী-কাথুলি সড়কের এবাদতখানার সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
১ অক্টোবর, মেহেরপুরের গাংনীতে আলমসাধুর ধাক্কায় সাইফুল রেজা ওরফে মহাজন (৩৫) নামে এক ব্যবসায়ী নিহত হন। রাত সাড়ে ৭ টার দিকে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া মহাসড়কের পোড়াপাড়া গ্রামের হঠাৎপাড়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
১৯ আগস্ট, মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের আমঝুপি বাজার এলাকায় প্রাইভেটকার দুর্ঘটনায় দুইজন আহত হন। রাত আড়াইটার দিকে দ্রুতগতির দুই প্রাইভেটকার রেসিং করতে গিয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে দুটি দোকান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রাইভেটকারটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়।
আহতরা হলেন চুয়াডাঙ্গা জেলার সিনেমা হলপাড়ার হাফিজের ছেলে ফেরদৌস (১৯) ও পলাশপাড়ার ওহি (১৯)।
১০ আগস্ট, মেহেরপুর সদর উপজেলার মদনা বাজারে দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে আকাশ নামের এক যুবক নিহত ও আরও দুইজন গুরুতর আহত হন।
১৮ জুলাই, মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার তেরাইল গ্রামে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় মোহাম্মদ মন্টু নামের এক পথচারী নিহত হন। আহত হন মোটরসাইকেলের দুই আরোহী।
১৬ জুলাই, মেহেরপুর শহরের হোটেল বাজার এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় সরফরাজ খান সোনা (৫৫) নামের এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হন।
২৫ জুন, মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কের বনবিভাগের সামনে দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে এক সরকারি প্রকৌশলী ও এক কলেজছাত্র নিহত হন। নিহতরা হলেন মেহেরপুর গাংনী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী মো. এ কে এম মাহফুজুর রহমান (৪৭) এবং মেহেরপুর সরকারি কলেজের ছাত্র মো. আকমল হোসেন (২০)।
এছাড়াও চলতি বছরে বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত সড়ক দুর্ঘটনায় শিশু, শিক্ষার্থী ও প্রবাসফেরত যুবকসহ আরও অনেকে নিহত ও আহত হয়েছেন।
এই এক বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে কমপক্ষে ৭ জন শিশু ও শিক্ষার্থী এবং অন্তত ৪ জন প্রবাসফেরত যুবক রয়েছেন।
গত ১০ জুন মেহেরপুর সদর উপজেলার বাড়াদিতে দুই মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে সৌরভ নামের এক যুবক নিহত হন। এ ঘটনায় একই পরিবারের ৪ জন সদস্যসহ মোট ৫ জন আহত হন।
৫ জুন গাংনীতে সড়ক দুর্ঘটনায় আবুল কাশেম (৬২) নিহত হন।
৪ জুন মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা মহাসড়কে দুর্ঘটনায় ছাগল ব্যবসায়ী নজিম উদ্দিন (৬৪) নিহত হন এবং আরও ৪ জন আহত হন।
৩ জুন মুজিবনগরে ট্রলি ও ইজিবাইকের সংঘর্ষে ৪ শিশু শিক্ষার্থী আহত হয়।
১০ মে গাংনীতে রাস্তা পার হতে গিয়ে আড়াই বছরের শিশু তাছনিয়া খাতুন নিহত হয়।
মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কের শুকুরকান্দিতে ট্রাক-মাইক্রোবাস সংঘর্ষে ৩ জন নিহত ও ৩ নারী আহত হন।
৯ এপ্রিল গাংনীতে চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফেরার পথে বৃদ্ধ সামসুল হক (৬৫) নিহত হন।
৩১ মার্চ মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক মহাসড়কে প্রাইভেটকার, ভ্যান ও মোটরসাইকেলের ত্রিমুখী সংঘর্ষে এক ব্যাংক কর্মকর্তা, এক শিশু ও আরও একজন নিহত হন। এ ঘটনায় অন্তত ১০ জন আহত হন। নিহতরা হলেন মেহেরপুর সদর উপজেলার উজলপুর গ্রামের হাসান মোল্লার ছেলে ও এনআরবিসি ব্যাংকের রূপনগর শাখার কর্মকর্তা আক্তারুজ্জামান ওরফে শোভন, সদর উপজেলার বাড়িবাঁকা গ্রামের মোখলেসুর রহমানের ছেলে আল ইমরান এবং গাংনী উপজেলার ধানখোলা গ্রামের ভ্যানচালক আলী হাসানের শিশু পুত্র জুবায়ের হাসান।
২৭ মার্চ সদর উপজেলার আশরাফপুরে মোশাররফ হোসেন (৬০) সড়কে প্রাণ হারান।
২২ মার্চ কুঠি ভাটপাড়ায় শ্যালো ইঞ্জিনচালিত আলগামনের সঙ্গে ধাক্কায় প্রবাসফেরত সাগর মিয়া (২৪) নিহত হন।
৪ ফেব্রুয়ারি আমঝুপিতে ট্রাকের ধাক্কায় লাল্টু হোসেন (৩২) নিহত হন এবং মিনারুল ইসলাম গুরুতর আহত হন।
২৭ জানুয়ারি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জামায়াত নেতা শেখ মোমিনুল ইসলাম (৫৫) মারা যান।
৮ জানুয়ারি গাংনীতে পৃথক দুর্ঘটনায় স্কুলছাত্র তাইমুজ্জামান (৯), কলেজছাত্র সিয়াম হোসেন (১৮) ও আব্দুল্লাহেল বাকী (১৮) নিহত হন।
এছাড়াও জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাসপর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত সড়ক দুর্ঘটনায় শিশু, শিক্ষার্থী, প্রবাসফেরত যুবকসহ আরও বহু মানুষ নিহত ও আহত হয়েছেন।
এই এক বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে কমপক্ষে ৭ জন শিশু ও শিক্ষার্থী এবং অন্তত ৪ জন প্রবাসফেরত যুবক রয়েছেন।