আমঝুপিতে জামায়াতের এমপি প্রার্থী তাজউদ্দিন খানের গণসংযোগ

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মেহেরপুর জেলা শাখার উদ্যোগে সদর উপজেলার আমঝুপি ইউনিয়নের গণসংযোগ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল সোমবার বিকাল ৫টার দিকে আমঝুপি গ্রামের প্রধান সড়ক ও দোকানপাটে এ গণসংযোগ অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে নেতৃত্ব দেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মেহেরপুর-১ আসনের প্রার্থী মাওলানা তাজউদ্দিন খান।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, মেহেরপুর শ্রমিক ফেডারেশনের জেলা সভাপতি আব্দুর রউফ মুকুল, মেহেরপুর জেলা সেক্রেটারি ইকবাল হুসাইন, মেহেরপুর সদর উপজেলার আমীর সোহেল রানা, সদর উপজেলার সেক্রেটারী ও আমঝুপি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী জাব্বারুল ইসলাম মাষ্টার, মেহেরপুর শ্রমিক ফেডারেশনের সদরের সভাপতি আবুল হোসেন, আমঝুপি ইউনিয়নের আমীর মহসিন আলী, সেক্রেটারী রকিবুল আলম মুক্ত প্রমুখ।

গণসংযোগ কর্মসূচিতে আসন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানো এবং দলীয় প্রার্থীর পক্ষে সর্বাত্মক সমর্থন প্রদানের আহ্বান জানানো হয়।




সার্বিক কর্মকান্ডে প্রবীণরা হোক চালিকা শক্তি

জীবন যখন শুকায়ে যায় করুণা ধারায় এসো——, রবি ঠাকুরের এই গানটি সত্যি অসাধারণ। একদম মিলে যায় প্রবীণ ভাই-বোনদের সাথে। বয়েসের ভারে নুয়ে পড়া জীবন এ যেন করুণার জীবন, স্বপ্নহীন জীবন। এই সময় কেবল দিনকাটে প্রবীণদের ধর্মচর্চা করে আর অপেক্ষায় পার করতে হয় ওপারের ডাকের।
১লা অক্টোবর আর্ন্তজাতিক প্রবীণ দিবস হিসেবে পালিত হয়। এটি পালনের মূল উদ্দেশ্য হলো প্রবীণদের জীবনযাএার মানোন্নয়ন করা এবং সমাজে তাঁদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা।
প্রতিবছর নতুন নুতন থিম বা প্রতিপাদ্য নিয়ে বিশ^ব্যাপী দিবসটি পালন করা হয়। এবার ৩৫তম আর্ন্তজাতিক প্রবীণ দিবস পালন করা হচ্ছে। এবছর প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘‘Older Persons Driving Local and Global Action: Our Aspirations, Our Well-being, Our Rights” অর্থাৎ স্থানীয় ও বৈশি^ক পর্যায়ে প্রবীণদের প্রত্যাশা,কল্যাণ ও অধিকার আদায়ে এবং সার্বিক কর্মকান্ডে প্রবীণ হোক চালিকা শক্তি। বাংলাদেশ সরকার এবার প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে- “একদিন তুমি পৃথিবী গড়েছো আজ আমি স্বপ্ন গড়বো সযতেœ তোমায় রাখবো আগলে”।
জাতিসংঘ ১৯৯১ সাল থেকে প্রতিবছর ১লা অক্টেবরকে আর্ন্তজাতিক প্রবীণ দিবস হিসেবে ঘোষনা করেছে। প্রতি বছরই একটি নতুন প্রতিপাদ্য বা থিম নিয়ে দিবসটি উদযাপন করা হয়, যা প্রবীণদের জীবনের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং তাঁদের প্রতি সমাজের করনীয় বিষয়ে আলোকপাত করে।
মানবজাতির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো বার্ধক্য। বাংলাদেশের জনসংখ্যার একটি বিরাট অংশ প্রবীণ। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নয়নের ফলে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। ফলে জনসাংখ্যা বৃদ্ধির হারের চেয়ে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা তুলনামুলকভাবে বেশি হচ্ছে। আমাদের গড় আয়ু এখন ৭৩ বছর। এটি সৃষ্টিকর্তার আর্শীবাদ বলা যায়। বার্ধক্যকে মানব জীবনের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিবেচনা করে প্রবীণদের জীবনমান উন্নয়ন,প্রবীণদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা, প্রবীণ জনগোষ্ঠীর প্রতি সহনশীল আচরণ প্রর্দশন এবং তাদের সমস্যাগুলো সর্ম্পকে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে জাতিসংঘ ১৯৯১ সাল থেকে প্রতিবছর ১লা অক্টোবরকে আর্র্ন্তজাতিক প্রবীণ দিবস ঘোষণা করেছে। প্রতিবছর ১লা অক্টোবরকে আমরা প্রবীণ দিবস হিসেবে পালন করলেও এবছর সরকারী সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রবীণ দিবস পালন করা হচ্ছে ৭ই অক্টোবর। আমাদের দেশের চলমান আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে অধিকাংশ প্রবীণকে দূর্বল স্বাস্থ্য, বিভিন্ন ধরনের বার্ধক্যজনিত রোগ, আর্থিক দৈন্যতা ও সামাজিক নিরাপত্তাহীনতার মধ্য দিয়ে দৈনন্দিন জীবন অতিবাহিত করতে হয়। দেশে অনেক দক্ষ, অভিজ্ঞ, কর্মঠ ও সৃজনশীল প্রবীণ রয়েছেন; তাঁদের কোথাও কোনো কাজে লাগানো হয়না। বিধায় ঘরে বসে কর্মহীন জীবনযাপনের ফলে তাঁরা বিভিন্ন ধরণের শারীরিক ও মানসিক রোগে ভুগতে থাকেন। এ অবস্থা থেকে উত্তোরণের জন্য তাঁদের সম্মানজনক কাজে নিয়োগ করে সমাজ জীবনের মূল ¯্রােতধারায় সম্পৃক্ত করতে হবে।
আমাদের স্বাধীনতার মূলমন্ত্র ছিল দেশের মানুষের ক্ষুধা ও দারিদ্রতা থেকে মুক্তি, সামাজিক বৈষম্য থেকে মুক্তি, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেয়া ইত্যাদি। কিন্ত প্রবীণ জনগোষ্ঠী এ সমাজের জ্যেষ্ঠ নাগরিক হলেও তাঁরা এসব সুযোগ-সুবিধা থেকে প্রায় বঞ্চিত। ১৯৮২ সালে প্রবীণ বিষয়ক সম্মেলন ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের উদ্দেশ্য ছিল বার্ধক্য স্বাস্থ্য সমস্যা, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্নতা, একাকিত্ব ইত্যাদি বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া । কিন্ত বাস্তবতা হলো ২০২৫ সালে এসেও অর্থাৎ দীর্ঘ ৪৩ বছর পেরিয়ে গেলেও এ অবস্থা এখনো বিরাজমান। ২০১৩ সালে দেশে প্রবীণ নীতিমালা ও পিতা-মাতার ভরণপোষণ আইন প্রণয়ন করা হয়। কিন্ত অদ্যাবধি এর বাস্তবায়নে কোনো অগ্রগতি দৃষ্টিগোচর হয়না, তৈরী হয়নি বিধি। এ অবস্থার উত্তোরণ ঘটাতে হবে।
প্রবীণ জনগোষ্ঠীর কল্যাণের কথা চিন্তা করে এ দেশের একজন বিশিষ্ট চিকিৎসাবিদ ড.একেএম আব্দুল ওয়াহেদ ১৯৬০ সালে নিজ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করেন একটি প্রতিষ্ঠান, যা ঢাকার ধানমন্ডিতে তাঁর নিজ বাসভবনে শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে রাজধানী আগারগাঁওয়ে সরকারের দেওয়া প্রায় এক একর জায়গার উপর ১৯৮৮ সালে হাসপাতাল ও একটি প্রবীণ নিবাস স্থাপন করা হয়। পরে একটি জেরিয়াট্রিক ইনস্টিটিউটসহ এর নামকরণ করা হয় বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘ ও জরাবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান। সারা দেশে প্রতিষ্ঠানটির ৯২টি শাখা রয়েছে, যার সদস্য সংখ্যা প্রায় ১০হাজার।
প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য: বার্ধক্যে যতটা সম্ভব শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ ও স্বস্তিতে থেকে প্রবীণরা যেন তাদের পরিপক্ক অভিজ্ঞতার আলোকে দেশ ও সমাজের উন্নয়নে অবদান অব্যাহত রাখতে পারেন, সে লক্ষ্যে তাঁদের জন্য নানামুখী কর্মকান্ড পরিচালনা করা। প্রবীণ বয়সে সবার শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বজায় রাখা এবং চিন্তাভাবনাহীন শান্তিপূর্ণ ও আনন্দময় জীবনযাপনের দিকনির্দেশনা দেওয়া।

প্রবীণদের প্রধান সামাজিক সমস্যাসমুহ:
১) আর্থিক সহায়তা ও সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের অভাব প্রবীণদের একটি বড় অংশকে দারিদ্র্যের মধ্যে ফেলে দেয়।
২) বার্ধক্যজনিত রোগ, যেমন-ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হদরোগ, কিডনী জটিলতা ও দৃষ্টিশক্তির সমস্যার চিকিৎসা সুবিধার অভাব প্রবীণদের ভোগান্তি বাড়ায়।
৩) একান্নবর্তী পরিবার ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে প্রবীণরা একা হয়ে পড়ছেন, যার ফলে তাঁরা অবহেলা ও একাকিত্বের শিকার হচ্ছেন।
৪) নগরায়ণ ও আধুনিকীকরণ প্রবীণদের জীবনধারাকে প্রভাবিত করছে, যার ফলে তাঁরা সমাজে নিজেদের মূল্যহীন মনে করেন।
৫) আধুনিক সুযোগ-সুবিধা এবং পর্যাপ্ত বিনোদন কেন্দ্র ও আবাসন ব্যবস্থার অভাব প্রবীণদের জীবনকে কঠিন করে তোলে।
৬) আধুনিক সমাজের অংশ হিসেবে পারিবারিক কাঠামো পরিবর্তন হওয়ায় প্রবীণরা অনেক সময় নিজেদের পরিবারেই অবহেলিত হন।
৭) প্রবীণরা চুরি, নির্যাতন এবং অন্যান্য সামাজিক ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারেন, যার কারণে তাঁদের নিরাপত্তা একটি বড় উদ্বেগ।

 

বড় দুখের বিষয়,যে হাতে একদিন সন্তানের মুখে আহার তুলে দিত সে হাতই প্রবীণদের চোখের পানিতে ভিজছে। তারপরেও বৃদ্ধাশ্রমে কিংবা পরিবারে ঘরের কোণায় একাকী বসে প্রিয়জনকে একপলক দেখার আশায় যেন বেঁচে আছেন তাঁরা। নিজ ঘরে বা ঘরের বাহিরে প্রবীণরা অনেকেই শারিরীক ও মানসিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন বছরের পর বছর, আর এই মানসিক প্রতিবন্ধকতার কারণে কেউ বা ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন বৃদ্ধাশ্রমে একটু স্বাধীনভাবে বাঁচার আশায় । বাড়ীর পথ ভুলে কেউ বা পড়ে থাকচ্ছেন পথে ঘাটে, কেউ বা যন্ত্রণায় মৃত্যুকে বেছে নিচ্ছেন বাধ্য হয়ে। যদিও আমি এখানে উল্লেখ করতে চাচ্ছি না, এমনও অনেক শিক্ষিত সন্তান বড় বড় পেশায় নিয়োজিত আছেন তাঁদের পিতামাতাও একরকম মনের কষ্ট নিয়েই বৃদ্ধাশ্রমে দিনাতিপাত করছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্ত:প্রজন্ম সংযোগ তৈরীর পাশাপাশি বয়স্ক ভাতা বৃদ্ধি করা অতি প্রয়োজন। বাংলাদেশে প্রায় ২ লক্ষ্যের উপরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধিত এনজিও রয়েছে এর মধ্যে হয়তো ৫টি এনজিও পাবেন না যারা প্রবীণদের মৌলিক অধিকারগুলো নিয়ে কাজ করছে। এর কারণটা হলো প্রবীণদের নিয়ে কাজ করলে দেশী বিদেশী অর্থ সহযোগিতা নাও পেতে পারে। আর তাই সরকারের প্রয়োজন প্রবীণদের জন্য দীর্ঘমেয়াদী কর্মপরিকল্পনা গ্রহনণ করা। জন্মের পর যে সন্তান নিজের বাবা মায়ের হাত ধরেই খুঁজে পেয়েছিল অবলম্বন আজ সেই সন্তানদের অবহেলা, নির্যাতনেই অনেক প্রবীণ শেষ অবলম্বন খঁজে নেন বৃদ্ধাশ্রমে। দেখুন বৃদ্ধশ্রমে কেউ কারোর আপন নয় তবু সবাই এখানে একে অপরের গল্পে নিজেকে খুঁজে নেয়, পায় স্বান্তনা। যে প্রবীণদের অবদানে রচিত হয় আমাদের বর্তমান, অথচ পারিবারিক অবহেলা ও নির্যাতনে একসময় তাদেরই শেষ ঠিকানা হয় বৃদ্ধাশ্রম। আর এতেই বোঝা যায় প্রবীণরা বয়সের ভারে নয় অবহেলার ভারে নুয়ে পড়ছে ।
তাই আসুন আমরা প্রবীণদের অধিকার আদায়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সমাজ সেবার সাথে একসঙ্গে কাজ করি । আজ প্রবীণ দিবসে বাবা মায়েদের বলছি, সন্তানদের নিজের সর্বস্ব দিয়ে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার পাশাপাশি একজন সঠিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলুন, সাথে সাথে সরকারের প্রতি দাবি জানাচ্ছি, পিতামাতার প্রতি সন্তানদের দায়িত্ব ও কর্তব্যের বিষয়ে ধর্মীয় অনুশাসন কি বলে সে বিষয়টি পাঠ্যপুস্তকে তুলে ধরার জন্য । তাহলে সেই সন্তানই হবে একদিন- বৈশ্বিক পর্যায়ে প্রবীণদের প্রত্যাশা, কল্যাণ ও অধিকার আদায়ে এবং সার্বিক কর্মকাণ্ডে প্রবীণদের জন্য চালিকাশক্তি।

লেখক: সাংবাদিক ও সহ-সভিাপতি, প্রবীন হিতৈষী সংঘ, মেহেরপুর জেলা। 




গাংনীতে ধর্ষণ চেষ্টা মামলায় একজন গ্রেফতার

মেহেরপুরের গাংনীতে ধর্ষণ চেষ্টা মামলায় বাকী মালিথা (৫০) নামক আসামিকে গ্রেফতার করেছে গাংনী থানা পুলিশ। গ্রেফতারকৃত আসামি উপজেলার দেবীপুর ঝোড়াঘাট গ্রামের মৃত লতিফ মালিথার ছেলে।

গাংনী থানা সূত্রে জানা যায়, দেবীপুর ঝোড়াঘাট গ্রামের বাকী মালিথা (৫০) তার নিজ বসতঘরে গত ২ অক্টোবর একটি শিশুকে জোর পূর্বক ধর্ষণ চেষ্টা করে।

এসময় শিশুটি চিৎকার দিলে আশপাশের মানুষ জড় হয়ে বাকী কে ধরে ফেলে। পরে স্থানীয়ভাবে বিষয়টি মীমাংসা চেষ্টা করে কয়েকজন মাতব্বর। কিন্তু ঘটনা জানাজানি হলে আসামিকে ধরে থানায় নিয়ে আসা হয়।

পরে ওই শিশুটির মা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এর ০৯(৪)(খ) মামলা রুজু করে। গাংনী থানার মামলা নং-০৯।

গাংনী থানার অফিসার ইনচার্জ বানী ইসরাইল জানান, ধর্ষণ চেষ্টার মামলায় গ্রেফতারকৃত আসামিকে আদালতে প্রেরণ করা হবে।




মেহেরপুরের বারাদীতে বিএনপির স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিল

মেহেরপুরের বারাদী ইউনিয়ন বিএনপির আয়োজনে বিএনপির প্রয়াত নেতৃবৃন্দের আত্মার মাগফিরাত কামনায় স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টায় বারাদী ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণে স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। বারাদী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আফারুল ইসলাম ডাবলুর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. কামরুল হাসান।

এসময় উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফয়েজ মোহাম্মদ এবং থানা যুবদলের আহ্বায়ক লিয়াকত আলী মেম্বার। আলোচনা ও দোয়া মাহফিল শেষে উপস্থিত নেতৃবৃন্দ বারাদী বাজারে একটি মিছিল বের করেন। পরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একটি সাক্ষাৎকার প্রজেক্টরের মাধ্যমে প্রদর্শন করা হয়।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান মুকুল।




আলমডাঙ্গায় ব্যাংকের চাকরি প্রত্যাশীদের মানববন্ধন

ইসলামী ব্যাংকসহ দেশের ব্যাংকিং সেক্টরে অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত অদক্ষ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অবিলম্বে ছাঁটাই এবং মেধাভিত্তিক নিয়োগের দাবিতে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সোমবার সকাল ১০টার দিকে আলমডাঙ্গা আলতা মোড়ে ইসলামী ব্যাংক গ্রাহক ফোরাম এবং বৈষম্যবিরোধী চাকরিপ্রত্যাশী পরিষদের যৌথ আয়োজনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ২০১৭ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময়ে ব্যাংক লুটেরা ও মাফিয়া চক্র হিসেবে পরিচিত এস আলম গ্রুপের প্রভাবে ইসলামী ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকে বিপুলসংখ্যক অদক্ষ কর্মকর্তা অবৈধভাবে নিয়োগ পেয়েছেন। এর ফলে ব্যাংকিং খাতের পেশাগত মান ক্ষুণ্ন হয়েছে এবং মেধাবী চাকরিপ্রত্যাশীরা বঞ্চিত হয়েছেন।

বক্তারা আরও বলেন, অবিলম্বে এসব অবৈধ নিয়োগ বাতিল করে স্বচ্ছতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। অন্যথায় তারা বৃহত্তর আন্দোলনের ঘোষণা দেন।

মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন আলমডাঙ্গার মোবাইল ব্যবসায়ী বিল্লাল হোসেন, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. সুরুজ আলী (মেডিসিন ব্যবসায়ী), ভুসিমাল ব্যবসায়ী আজিজুল হক এবং একতারুজ্জামানসহ স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

আয়োজকরা জানান, এ আন্দোলন দেশের ব্যাংকিং খাতে স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অব্যাহত থাকবে।




আলমডাঙ্গায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একজন অটোরিকশা চালকের মৃত্যু

আলমডাঙ্গায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একজন দরিদ্র অটোরিকশা চালকের মৃত্যু হয়েছে।

আলমডাঙ্গা উপজেলার জেহালা ইউনিয়নের বড় পুটিমারী গ্রামে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মজনুর রহমান (৫০) নামে এক অটোরিকশা চালকের করুণ মৃত্যু হয়েছে। আজ সোমবার ভোরবেলা তার নিজ বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।

মৃত মজনুর রহমান বড় পুটিমারী গ্রামের মৃত আক্কাস আলীর ছেলে। তিনি পেশায় অটোচালক ছিলেন এবং তাঁর এক ছেলে সন্তান রয়েছে। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মজনুর রহমান রাতে নিজের অটোরিকশা চার্জে দিয়েছিলেন।

সোমবার ভোর আনুমানিক সাড়ে পাঁচটার দিকে তিনি চার্জ থেকে অটোরিকসা খুলতে গেলে অসাবধানতাবশত বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। পরিবারের লোকজন দ্রুত তাঁকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে পরীক্ষা করে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে। আলমডাঙ্গা থানা অফিসার ইনচার্জ মাসুদুর রহমান পিপিএম জানান, এ বিষয়ে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে।

অটোচালকের এমন মর্মান্তিক মৃত্যুতে পুরো বড় পুটিমারী গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।




মেহেরপুরে বিশ্ব শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহের উদ্বোধন

বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মেহেরপুর জেলা শাখার উদ্যোগে বিশ্ব শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহের উদ্বোধন করা হয়েছে।

সোমবার বিকেলে জেলা প্রশাসক ড. মো. আবদুল ছালাম বেলুন উড়িয়ে সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) তরিকুল ইসলাম। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক ড. মো. আবদুল ছালাম।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার মো. মনজুর আহমেদ সিদ্দিকী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা আইয়ুব হোসেন।

এছাড়া আলোচনায় অংশ নেন শিশু বক্তা সারা তামান্না রোজা ও সামিয়া রেজা প্রমুখ।

আলোচনা সভা শেষে শিশু একাডেমির শিশু শিল্পীদের পরিবেশনায় এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।




ফরিদপুরে কেরাম বোর্ড খেলা নিয়ে দুপক্ষের সংঘর্ষে আহত ২০, বাড়িঘর ভাঙচুর

ফরিদপুরের সালথায় কেরাম বোর্ড খেলা নিয়ে বিরোধের জের ধরে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। ভাঙচুর করা হয়েছে বেশ কয়েকটি বাড়িঘর।

সোমবার (৬ অক্টোবর) সকাল ৮টার দিকে উপজেলার রামকান্তপুর ইউনিয়নের রামকান্তপুর গ্রামে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে।

আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুই-তিন দিন আগে রামকান্তপুর গ্রামের একটি বাজারে কেরাম বোর্ড খেলা নিয়ে স্থানীয় ওসমান তালুকদারের সমর্থক রাকিব নামে এক তরুণের সঙ্গে প্রতিপক্ষের কুদ্দুস তালুকদারের সমর্থক লায়েক নামে আরেক তরুণের মারামারির ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে তখন পুলিশ গিয়ে ওই কেরাম বোর্ডটি থানায় নিয়ে আসে; কিন্তু ওই দুই তরুণের মারামারি ঘটনা নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা চলছিল। এর জেরে সোমবার সকালে স্থানীয় চায়ের দোকানে দুইপক্ষের কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

একপর্যায় উভয়পক্ষের সমর্থকরা দেশীয় অস্ত্র ঢাল-কাতরা, টেঁটা, সড়কি, ভেলা ও ইটপাটকেল নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী চলে সংঘর্ষ ও ধাওয়া পালটাধাওয়া। সংঘর্ষের সময় ৪টি বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে অন্তত ১০ জনকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ ও বোয়ালমারী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

সালথা থানার ওসি মো. আতাউর রহমান বলেন, সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ওই এলাকার পরিবেশ শান্ত রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষই অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সূত্র: যুগান্তর ।




সাবেক চেয়ারম্যানসহ আওয়ামী লীগের চার নেতার আদালতে আত্মসমর্পণ

ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসাইন , আওয়ামী সেচ্ছাসেবক লীগের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রানা হামিদসহ আওয়ামী লীগের  নেতারা আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন।

আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১১টায় ঝিনাইদহ সদর,  হরিণাকুণ্ডু ও কালীগঞ্জ আমলী আদালতে তাঁরা স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করেন। আদালত তাদের জেল হাজতে প্রেরনের আদেশ দেন।

তাদের বিরুদ্ধে ৪ আগষ্ট ২০২৪ সালে বিএনপি কার্যালয়, জেলা বিএনপি’র সভাপতির বাড়ি পোড়ান, বিএনপি নেতার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাড়ি ভাংচুর অগ্নিসংযোগ ও জামায়াত নেতা হত্যাসহ একাধিক  মামলা রয়েছে।

আত্মসমর্পণকারী নেতারা হলেন, হরিণাকুণ্ডু উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান , জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক উপ-দপ্তর সম্পাদক ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি  জাহাঙ্গীর হোসাইন, ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সম্পাদক রানা হামিদ, রঘুনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা রাকিবুল হাসান রাসেল ও কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও  উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা রাসেদ সমশের।




শিক্ষা ও সামাজিক নিরাপত্তা নারীর অধিকার

নারীর অধিকার আজকের বিশ্বে আর কেবল একটি আলোচ্য বিষয় নয় বরং এটি মানবাধিকার ও সামাজিক ন্যায়ের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। শিক্ষা নারীর আত্মনির্ভরতার প্রথম শর্ত। আর সামাজিক নিরাপত্তা তার স্বাধীন ও মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপনের প্রধান ভিত্তি। একজন নারী যখন শিক্ষার আলোয় আলোকিত হন, তখন তিনি কেবল নিজের জীবনই নয়, পরিবার ও সমাজকেও উন্নতির পথে এগিয়ে নেন। একইভাবে, রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা তাকে সহিংসতা, বৈষম্য ও অনিশ্চয়তা থেকে রক্ষা করে এবং সামগ্রিক উন্নয়নে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেয়। তাই শিক্ষা ও সামাজিক নিরাপত্তা নারীর অধিকার রক্ষার মূল ভিত্তি এবং টেকসই উন্নয়নের পূর্বশর্ত।

বিশ্বে নারী-পুরুষের সংখ্যা প্রায় সমান। সকল কাজে পুরুষের প্রাধান্য নারীকে পেছনে ফেলে দেয়। কিন্তু এই পৃথিবীর অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে পেছনে ফেলে কখনোই সামনে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। ভবিষ্যৎ বিশ্বের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছুতে হলে নারীকেও সমানতালে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে। নারীর ন্যায্য অধিকারকে সমুন্নত করতে হবে। নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি জাতি সমৃদ্ধ হওয়ার পথে অগ্রসর হতে পারে। নারী শিক্ষিত হলে একটি গোটা জাতির উন্নয়ন সম্ভব। আর তাই নারী শিক্ষা হলো নারীদের অন্যতম প্রধান অধিকার। নারী শিক্ষায় বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। সরকার প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ছাত্রীদের জন্য শিক্ষাবৃত্তি এবং দশম শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে বই বিতরণের মতো কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। সরকারের এসকল নীতি ও উদ্যোগের ফলে শিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে এবং সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের ক্ষমতায়ন হয়েছে।

অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০২৪ অনুযায়ী, বাংলাদেশে মোট স্বাক্ষরতার হার ৭৭.৯% এবং নারী ও পুরুষের সাক্ষরতার হার যথাক্রমে ৭৫.৮% এবং ৮০.১%। তবে বাংলাদেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে নারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা পুরুষ শিক্ষার্থীর সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে প্রাথমিক পর্যায়ে মোট শিক্ষার্থীর ৫০.৭%, মাধ্যমিক স্তরে মোট শিক্ষার্থীর ৫৩% ছাত্রী ও উচ্চ মাধ্যমিকে মোট শিক্ষার্থীর ৪৮.৭৫% ছাত্রী। পাশাপাশি উচ্চশিক্ষায় নারীদের অংশগ্রহণও দিন দিন বাড়ছে। উচ্চশিক্ষায় মোট ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্রী ভর্তির হার ৪৫.৫৭%, যা বিগত বছরগুলোর চেয়ে বেশ সন্তোষজনক।

২০২৫ সালে মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তিকৃত মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ৬৩% ছাত্রী ভর্তি হয়েছে। কারিগরি শিক্ষাতেও নারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। কারিগরি শিক্ষাতে ২০২৩ সালে মোট শিক্ষার্থীর ২৯.৫৩% নারী ছিল, যা ২০২২ সালে ছিল ২৭.১২%। যদিও উচ্চশিক্ষায় নারীদের অংশগ্রহণ এখনো তুলনামূলকভাবে ধীর গতিতে বাড়ছে, তবে নারী শিক্ষার প্রসার দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে এবং নারীর ক্ষমতায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। শিক্ষিত নারীরা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বেশি করে অংশ নিচ্ছেন। ১৯৯০-এর দশকে যেখানে কর্মসংস্থানে নারীর উপস্থিতি ছিল ২৪.৬৫%, বর্তমানে তা বেড়ে প্রায় ৩৭% হয়েছে। এটি দেশের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিতেও সহায়ক।

এছাড়া দেশে পোশাকশিল্পে নারী শ্রমিকের সংখ্যা ছিল প্রায় ৬০-৭৫%। শুধু শিক্ষাই নারীর একমাত্র অধিকার নয়। নারীর পূর্ণাঙ্গ শারীরিক ও মানসিক বিকাশে পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমে সমান অংশগ্রহণ করার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশের সংবিধানের ১৯(৩) নং অনুচ্ছেদে জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে মহিলাদের অংশগ্রহণ ও সুযোগের সমতা নিশ্চিত করা হয়েছে। ২৮(২) নং অনুচ্ছেদে রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী, পুরুষের সমান অধিকার লাভ করবে বলে নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ২৮ (৪) অনুচ্ছেদে নারী ও শিশুদের জন্য বিশেষ বিধান প্রণয়নের সুযোগও রাখা হয়েছে। এছাড়া ২৯ নং অনুচ্ছেদে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিক অর্থাৎ নারী ও পুরুষ সমান সুযোগ লাভ করবেন। অর্থাৎ রাষ্ট্রীয়ভাবে নারীদের অগ্রযাত্রাকে সুষম করে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সাংবিধানিকভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে।

সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে নারীদের জন্য বিভিন্ন ভাতার পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। বয়স্ক ভাতা কর্মসূচিতে মাসিক ৬৫০ টাকা, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা ভাতা মাসিক ৬৫০ টাকা এবং দরিদ্র মায়েদের মাতৃত্বকালীন ভাতা ৮৫০ টাকা করা হয়েছে। এসকল সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সঠিক ব্যক্তি যাতে উপকারভোগী হিসেবে নির্বাচিত হতে পারেন, সে জন্য ‘ডায়নামিক সোশ্যাল রেজিস্ট্রি (ডিএসআর)’ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও নারীদের জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা ৪ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। এতে করে নারীর আর্থিক সক্ষমতা পূর্বের তুলনায় আরও বেগবান হবে বলে প্রত্যাশা করা যায়।

বাংলাদেশে নরীরা বর্তমানে নানা ক্ষেত্রে এগিয়ে গিয়েছেন। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শ্রমবাজারে প্রবেশ, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তবে প্রকৃত সমতা অর্জনের জন্য এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যেমন- পারিবারিক সহিংসতা, সামাজিক অবস্থান, কর্মক্ষেত্রে আর্থিক বৈষম্যসহ নানারকম সমস্যা। বাংলাদেশে নারীর অধিকার রক্ষা ও নারীর প্রতি বৈষম্য নিরসনে সাংবিধানিক মর্যাদার পাশাপাশি বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য আইন রয়েছে। এই আইনগুলো নারীর সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও পারিবারিক সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য প্রণীত হয়েছে। এগুলো মূলত সংবিধানের সমতা ও মৌলিক অধিকার সংক্রান্ত ধারাগুলোর ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে।

পারিবারিক অধিকার নিশ্চিত করতে মুসলিম পরিবার আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১; পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ, ১৯৮৫ প্রণয়ন করা হয়েছে। এই আইনগুলোর মাধ্যমে নারীর বিবাহ, ভরণ-পোষণ, তালাক, দেনমোহর, সম্পত্তির উত্তরাধিকারী ও অভিভাবকত্ব বিষয়ে নারীর অধিকার নিশ্চিত করা হয়। নারীর প্রতি যৌন নির্যাতন, ধর্ষণ, এসিড নিক্ষেপ, নারী ও শিশু পাচার, অপহরণ ইত্যাদি বন্ধ ও কঠোর শাস্তি প্রদানের লক্ষ্যে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ ( ২০০৩, ২০২০, ২০২৫ সালে সংশোধিত)। এই আইনের ২০২৫ সালে সংশোধিত অধ্যাদেশের মাধ্যমে ধর্ষণের মামলা তদন্তের সময় ৩০ দিন থেকে কমিয়ে ১৫ দিন এবং মামলার বিচার কাজ শেষ হওয়ার সময় ১৮০ দিন থেকে কমিয়ে ৯০ দিন করা হয়েছে। ফলে নারী নিপীরণের মামলার রায় প্রদান ত্বরান্বিত হবে পাশাপাশি এধরনের অপরাধও কমে আসবে। ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে মেয়েদের বিবাহ দেয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। বিশেষ পরিস্থিতি বাদে বাল্যবিবাহ সম্পাদন করলে শাস্তির বিধান রেখে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭ প্রণয়ন করা হয়। এছাড়াও এসিড অপরাধ দমন আইন, ২০০২; সমান মজুরি, মাতৃত্বকালীন ছুটি (৬ মাস),কর্মক্ষেত্রে সুরক্ষা ও বৈষম্যহীন পরিবেশের নিশ্চয়তা প্রদানে বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৮), স্বামী বা পারিবারিক সদস্য কর্তৃক সহিংসতার শিকার নারীর সুরক্ষা নিশ্চিতে গার্হস্থ্য সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০; জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা, ২০১১; মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন, ২০১২; যৌতুক নিরোধ আইন, ২০১৮ ইত্যাদি।

নারীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ ও নিপীড়ন দমন করতে আইনের বাস্তবায়ন করতে হবে। নারীদের সুরক্ষাজনিত সেবা আরও সহজীকরণ করা যেতে পারে। নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে কলসেবা নম্বর ১০৯ সম্পর্কে নারীদের সচেতন করা যেতে পারে। নারীদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে আইসিটি, ই-কমার্স ও ডিজিটাল কর্মসংস্থানে নারীদের প্রশিক্ষণ ও প্রণোদনা আরও বৃদ্ধি করা যেতে পারে। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, সরকারি নীতি ও সামাজিক উদ্যোগে বাংলাদেশ নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। বর্তমান সরকার, সুশীল সমাজ, ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া যদি যৌথভাবে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করে তাহলে আইন প্রয়োগ, অর্থনৈতিক সমতা, সচেতনতা আর প্রযুক্তিগত সহায়তার মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি বৈষম্যহীন নারীবান্ধব রাষ্ট্রে পরিণত হবে। পাশাপাশি ২০৩০ সাল নাগাদ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) এর দারিদ্র্য দূরীকরণ, ক্ষুধামুক্তি, সুস্থ জীবন, মানসম্মত শিক্ষা ও লিঙ্গ সমতাসহ প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবে।

নারীর ক্ষমতায়ন শুধু কোনো লিঙ্গভিত্তিক বিষয় নয় বরং এটি একটি রাষ্ট্রের সামগ্রিক অগ্রগতি ও মানবিক বিকাশের সূচক। শিক্ষার মাধ্যমে নারীরা যেমন জ্ঞানে ও দক্ষতায় সমৃদ্ধ হয়, তেমনি সামাজিক নিরাপত্তার মাধ্যমে তারা পায় বাঁচার নিশ্চয়তা ও সামাজিক মর্যাদা। তাই নারী যেন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত না হয় এবং সমাজে নিরাপত্তাহীনতায় না ভোগে তার দায়িত্ব রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবারের সকলের। নারী যখন নিরাপদ ও শিক্ষিত, তখনই একটি জাতি প্রকৃত অর্থে আলোকিত ও উন্নত হয়।

লেখক: সহকারী তথ্য অফিসার, তথ্য অধিদফতর