আলমডাঙ্গা আইলহাস গ্রামে ছাত্রী অপহরণের অভিযোগ

আলমডাঙ্গা আইলহাস গ্রামের অন্তুর বিরুদ্ধে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী কে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে। অপহৃত স্কুল ছাত্রীকে মানবতা ফাউন্ডেশনের আইনি সহায়তায় প্রদান করবে বলে জানা গেছে।

চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার আইলহাস গ্রামের মধুর ছেলে অন্তু (২০) ও তার ২/৩ জন বন্ধুর সহযোগিতায় চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার পদ্মবীলা ইউনিয়নের হায়দারপুর গ্রামের এক দরিদ্র কৃষকের ৭ম শ্রেণির স্কুল পড়ুয়া মেয়েকে অপহরণ করে গত ৭ই সেপ্টেম্বর। ঘটনাটি ঘটে সীমান্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৩ নং গেটে।

মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, মেয়েটি স্কুলে যাওয়া-আসার পথে বখাটে হোটেল বয় অন্তু প্রতিদিন উত্যক্ত করতো। অন্তু সরোজগঞ্জ বাজারে এক হোটেলে কাজ করে।মেয়েটিকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে প্রতিদিন বিরক্ত করে। মাত্র ১৩ বছরের মেয়েটি সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে অন্তু তার বন্ধুদের সহোযোগিতায় স্কুল গেট থেকে জোরপূর্বক অটোরিকশায় তুলে নিয়ে যায়।

পথচারীদের ভাস্যমতে জানতে পারা যায়, আইলহাস গ্রামের মধুর ছেলে অন্তু তার মেয়েকে তুলে নিয়ে গেছে। অন্তুর পিতার সাথে যোগাযোগ করা হলে, তিনি সুস্থ শরীরে মেয়েকে ফিরিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেয়। মধুর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় তারা পালিয়ে গেছে। মেয়ের পিতা আত্মসম্মানের ভয়ে গোপনে খোঁজাখুঁজি করেও মেয়েকে না পেয়ে চুয়াডাঙ্গা মানবতা ফাউন্ডেশনের দারস্থ হয়। চুয়াডাঙ্গা মানবতা ফাউন্ডেশনের আইনি সহায়তায় ভিকটিমের পিতা গতকাল চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় মামলা দায়ের করেছেন।

মানবতা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট মানি খন্দকার বরাবর আইনি সহায়তা চেয়ে আবেদন করেন এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন। অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করেন চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ খালিদুর রহমান। এ সময় বাদীর পাশে উপস্থিত ছিলেন, মানবতা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট মানি খন্দকার, সংস্থার মানবাধিকার সেলের প্রধান সমন্বয়কারী রউফুন নাহার রিনা, তথ্য কর্মকর্তা অ্যাড: নওশের আলী, অপারেশন অফিসার অ্যাড: জীল্লুর রহমান জালাল, লিগ্যাল এইড সেলের মুখ্য সমন্বয়ক অ্যাড: শামীমুর রহমান সবুজ, গণসংযোগ কর্মকর্তা হাফিজ উদ্দিন হাবলু, শিশু অধিকার বিষয়ক কর্মকর্তা মোঃ ইনতাজ, মোটিভেশন অফিসার জাকিয়া সুলতানা ঝুমুর।

মানবতা ফাউন্ডেশন ভিকটিম এর পিতা এজাহারকারী ও ভিকটিমকে যাবতীয় আইনি সহায়তা দেবে। দ্রুত ভিকটিম উদ্ধারের বিষয়ে চুয়াডাঙ্গার মাননীয় পুলিশ সুপারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন মানবতা ফাউন্ডেশন এর নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট মানি খন্দকার।




আলমডাঙ্গায় ৪৮ তম বিসিএস ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন ২জন

আলমডাঙ্গা উপজেলার দুই কৃতি সন্তান ৪৮ তম বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়ে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন হলেন, আলমডাঙ্গা উপজেলার চিৎলা ইউনিয়নের রুইথনপুর গ্রামের কৃতি সন্তান ডা. প্রশান্ত কুমার ধর। তিনি ৪৮তম বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।

ডা. প্রশান্ত কুমার ধর শ্রী পরিমল কুমার ধরের বড় ছেলে। ছোটবেলা থেকেই তিনি শিক্ষাজীবনে মেধার উজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখে আসছেন। ২০০৬ সালে চিৎলা রুইথনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি লাভ করেন। ২০১২ সালে সি.এইচ.আর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫  নিয়ে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ২০১৪ সালে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সফলতার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সক্ষম হন। ২০২০ সালে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি ঢাকার জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউট (NIKDU)-এ ইউরোলজি (কিডনি সার্জারি) বিষয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।

অপরদিকে আলমডাঙ্গার চিকিৎসা জগতের অন্যতম জনপ্রিয় চিকিৎসক এবং গরীবের ডাক্তার নামে খ্যাত ডা. শাফায়েত উল্লাহ ও মোছাঃ নাসিমা বানু বন্যার একমাত্র কন্যা ডাঃ নাফিসা আনজুম (হিমু) ৪৮তম বিসিএস (স্বাস্থ্য) পরীক্ষায় সহকারী সার্জন পদে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছে। ডা:নাফিসা আনজুম হিমুর পিতা আলমডাঙ্গা ও তার আশেপাশের এলাকার মানুষের কাছে অতি প্রশংসনীয় ও জনপ্রিয় চিকিৎসক সাফায়েত উল্লাহ। তিনি এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মক ভাবে আহত হয়ে অচল অবস্থায় বিছানায় কষ্টের মধ্য দিয়ে জীবন-যাপন করছেন। এলাকার মানুষ আজও তাঁকে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্বরণ করে।

ডাঃ নাফিসা আনজুম হিমুর এই সাফল্য এলাকাবাসীর মনকে আবার নাড়া দিয়েছে। পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে হয়তো তিনি আবার পিতার ছায়ায় আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন বলে এলাকাবাসীর সুধীজনেরা মনে করেন।

ডাঃ. প্রশান্ত কুমার ধর ও ডাঃ নাফিসা আনজুম হিমুর এই ধারাবাহিক সাফল্য চুয়াডাঙ্গার তরুণ প্রজন্মের জন্য এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হতে পারে বলে সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনের অনেকেই তাদের এই অর্জনে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।

 




পানাম সিটি: বাংলার ঐতিহ্যের নীরব সাক্ষী

গতকাল রোববার দিনের সিংহভাগ সময় কাটালাম নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁয়ে অবস্থিত প্রাচীন শহর পানাম সিটিতে। পানামা যেন হারিয়ে যাওয়া এক গৌরবগাথার জীবন্ত স্মৃতি। ইতিহাস, স্থাপত্য ও ঐতিহ্যের অপূর্ব সংমিশ্রণে গড়ে ওঠা এই শহরটি আজো দাঁড়িয়ে আছে শ শ বছরের পুরনো অনেক গল্প নিয়ে।

১৫শ শতকে প্রতিষ্ঠিত এই নগরী মধ্যযুগে বাংলার অন্যতম প্রশাসনিক ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছিল। সুলতানি ও মুঘল আমলে সোনারগাঁ ছিল বাংলার রাজধানী, আর পানাম ছিল সেই রাজধানীর গৌরবময় আবাসভূমি। বিশেষ করে হিন্দু জমিদার ও ব্যবসায়ীদের আধিপত্যে গড়ে ওঠা পানাম নগরীতে ইউরোপীয়, মুঘল ও বাংলা স্থাপত্যরীতির অপূর্ব মিশ্রণ দেখা যায়।

বর্তমানে পানাম নগরীতে প্রায় ৫২টি ঐতিহাসিক ভবন রয়েছে, যেগুলোর প্রতিটিই একেকটি স্থাপত্য শিল্পের নিদর্শন। সড়কের দু’পাশে সারি সারি দালান যেগুলোর দেয়ালে আজও জেগে আছে পুরোনো দিনের কারুকাজ, রঙিন কাচের জানালা, কাঠের ফ্রেম আর চুন-সুরকির প্রাচীন প্রযুক্তির ছাপ। জমিদারের ৫ শ মিটার পুকুর। পুকুরে অনেকগুলো গোসলের জন্য সানবাঁধানো সিঁড়ি। সেই সময়ের সুপেয় পানির বেশ কটি পাকা কুয়া। কালের সাক্ষি হয়ে পড়ে আছে পাকা পায়খানা।

সংস্কারহীনতায় হারাতে বসেছে সেসব ঐতিহ্য।

যদিও ২০০৬ সালে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর পানাম সিটিকে “সংরক্ষিত প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান” হিসেবে ঘোষণা করেছে, বাস্তবতা হলো অনেক ভবন আজ ধ্বংসপ্রায়। অবহেলা, যথাযথ সংরক্ষণের অভাব এবং পর্যটন চাপে এই ঐতিহ্যবাহী স্থানটি হুমকির মুখে পড়েছে।
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন সংস্কারের উদ্যোগ না নেওয়ায় অনেক ভবন ধসে পড়েছে। বৃষ্টির মৌসুমে পানিতে ভিজে কাঠ ও চুন-সুরকির দেয়াল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অপরিকল্পিত পর্যটন ও স্থানীয় দখলদারদের কারণে ঐতিহাসিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।

পানাম নগরী বর্তমানে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী এখানে ভিড় করেন ইতিহাস ছুঁয়ে দেখতে। কিন্তু পর্যাপ্ত গাইড, তথ্যচিত্র, পর্যটক ব্যবস্থাপনা এবং পরিবেশ সংরক্ষণের ঘাটতি দেখলাম।

পর্যটন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যদি সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া হয়, তবে পানাম সিটি হতে পারে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সফল হেরিটেজ ট্যুরিজম স্পট।

কেয়ার টেকার রফিকুল ইসলাম জানালেন-পানাম সিটি শুধু একটি পুরনো শহর নয়, এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অমূল্য দলিল। এই নগরীর দেয়ালে লেগে আছে বাঙালি জাতির শিল্প, সংস্কৃতি ও সংগ্রামের ছাপ। প্রয়োজন এখন শুধু সময়োচিত উদ্যোগ, সচেতন সংরক্ষণ এবং সম্মিলিত দায়িত্ববোধ।

পানামকে যদি সময়মতো বাঁচানো যায়, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এই গৌরবময় ইতিহাসের সাক্ষী হতে পারবে-নয়তো এটি হারিয়ে যাবে কালের অতলে, আর আমরা হারাবো এক অপূর্ব ঐতিহ্য।




বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে মেহেরপুরের ১১ চিকিৎসক সুপারিশপ্রাপ্ত

৪৮তম বিশেষ বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফলে মেহেরপুর জেলা থেকে বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে সহকারী সার্জন পদে ১১ জন সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।

গত বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) থেকে ফলাফল ঘোষণা করা হয়। মেহেরপুর জেলার সুপারিশপ্রাপ্ত ১১ জনের মধ্যে গাংনী উপজেলায় রয়েছেন ৯ জন এবং সদর উপজেলায় রয়েছেন ২ জন।

সুপারিশপ্রাপ্তরা হলেন, সিরাজগঞ্জ মেডিক্যাল কলেজের ডা. সামিয়া সুলতানা, রংপুর মেডিক্যাল কলেজের ডা. আবু জার গিফারী, বরিশাল মেডিক্যাল কলেজের রুবিয়া খাতুন, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের ডা. আসিফ হাসান, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজর ডা. নাহিদ হাসান, ডা. ইশতিয়াক হোসেন, খুলনা মেডিক্যাল কলেজর ডা. মো. মাহবুবুর রহমান নয়ন, খাজা ইউনুস আলী মেডিক্যাল কলেজর ডা. ওমর ফারুক, ডা. ফারিহা, ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের ডা. সরোয়ার রাব্বি ও ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজের ডা. রাসেল রানা।

গত ২০ জুলাই লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এতে মোট ৫ হাজার ২০৬ জন সাময়িকভাবে উত্তীর্ণ হন। এর মধ্যে সহকারী সার্জন পদে ৪ হাজার ৬৯৫ এবং সহকারী ডেন্টাল সার্জন পদে ৫১১ জন প্রার্থী সাময়িকভাবে উত্তীর্ণ হন। পরে সহকারী সার্জন পদে ২ হাজার ৮২০ জন এবং সহকারী ডেন্টাল সার্জন পদে ৩০০ জনকে চূড়ান্তভাবে সুপারিশ করা হয়।




দর্শনায় সড়ক দুর্ঘটনার শিকার ব্যাংকের টাকা বহনকারী মাইক্রোবাস, আহত ৩

চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় দুই দফায় সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে সোনালী ব্যাংকের টাকা বহনকারী একটি মাইক্রোবাস। এতে দুই পুলিশ সদস্যসহ তিনজন গুরুতর আহত হয়েছেন। তবে বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছে মাইক্রোবাসটি। দুর্ঘটনার পর চালক পালিয়ে যায়।

গতকাল শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১টার দিকে দর্শনা হঠাৎপাড়া রেলগেট এবং মা ও শিশু হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা আহত ভ্যানচালককে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রথমে হঠাৎপাড়া রেলগেট এলাকায় বাসের সাইড দিতে গিয়ে ব্যাটারিচালিত পাখিভ্যানকে ধাক্কা দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায় সোনালী ব্যাংকের টাকা বহনকারী মাইক্রোবাসটি। এতে গুরুতর আহত হন ভ্যানচালক। তবে মাইক্রোবাস চালক পেছনে ফিরে তাকাননি।

পরে দর্শনা মা ও শিশু হাসপাতালের কাছে মাটি কাটা এক্সকাভেটরকে সাইড দিতে গিয়ে দ্বিতীয়বার দুর্ঘটনার শিকার হয় মাইক্রোবাসটি। এতে সোনালী ব্যাংকের সহকারী অফিসার (অর্থ) আশিকুজ্জামান, দুই পুলিশ সদস্য ও মাইক্রোবাস চালক আহত হন। দুর্ঘটনার পর চালক শাহিন পালিয়ে যান।

সোনালী ব্যাংকের সহকারী অফিসার (অর্থ) আশিকুজ্জামান বলেন, আমি বারবার ড্রাইভারকে বলছিলাম গাড়ি আস্তে চালাতে, কিন্তু তিনি কর্ণপাত করেননি। আমরা চুয়াডাঙ্গা সোনালী ব্যাংক থেকে ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা মাইক্রোবাসযোগে দর্শনা সোনালী ব্যাংকে নিয়ে যাচ্ছিলাম। আল্লাহর রহমতে বড় দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে গেছি।

দর্শনা শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাজিম বলেন, আমি মোটরসাইকেলে চুয়াডাঙ্গার দিকে যাচ্ছিলাম। আমার সামনেই এ দুর্ঘটনা ঘটে। মাইক্রোবাসটি অল্পের জন্য গর্তের ভেতর পড়ে যাওয়া থেকে বেঁচে যায়। পড়ে গেলে কেউই বাঁচতে পারত না। পরে আমি তাদের উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে পাঠাই এবং টাকাগুলো দর্শনা সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তার কাছে বুঝিয়ে দিই।




বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও মেহেরপুর নগরীয় সংকট

নগরের অন্যতম বৈশিষ্ঠ হলো অকৃষি ভিত্তিক আর্থসামাজিক ব্যবস্থাপনা। শিল্প, বানিজ্য, শিক্ষা সহ যত ধরণের অকৃষি ভিত্তিক পেশা ও পেশাভিত্তি সংগঠন বা স্থাপনা আছে সবগুলো পরস্পর নির্ভরশীল হয়ে ক্রমান্বয়ে একটা নগরকে বেষ্ঠন করে সুষমভাবে বিকাশ করতে সহায়তা করে। নগর যত বিস্তৃত হতে থাকে নগরের আদিরূপ ও প্রাকৃতিক পরিবেশ দ্রুতই পরিবর্তিত হতে থাকে।মানুষের জীবনযাপন, চলাচল, বানিজ্যকেন্দ্র, শিক্ষা, চিকিৎসা বিনোদন সহ হাজার রকম সেবাখাত সমুহ প্রতিনিয়িত নাগরীক প্রয়োজনেই গড়ে ওঠে। আবার নাগিরক প্রয়োজনের দিক বিবেচনা করে নগর কতৃপক্ষের দায়িত্বও বেড়ে যায় বহুগুনে।

ফলে সমস্থ স্থাপনা সমুহের সঠিক স্থানসংকুলানের জন্য পরিকল্পনা মাফিক ভূমি অধিগ্রহন সহ নানাবিধ ভাঙ্গাগড়ার মাধ্যমে একটা নগরকে নান্দনিক ও আধুনিক রূপ দেয়া হয়। নগর বৈশিষ্ঠের অন্যতম অনুসংগ হল স্বল্পস্থানে অধিক মানুষের বসবাস সহ আনুসঙ্গিক স্থাপনা সমুহের নান্দনিক, বাস্তব ও পরিবেশ সম্মত সন্নিবেশ ঘটানো। ফলে জনগোষ্ঠির নিত্যপন্যের যোগান ঠিক রাখা, পানি, বিদ্যুত, জ্বালানি সরবরাহ,শিক্ষা ও জনস্বস্থের ব্যবস্থাপনা,কেলা ও বিনোদনের ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয় যেগুলো নগরের অন্যতম নাগরিকসেবা খাত হিসেবেও পরিগনিত হয়ে থাকে। নগর সহজাত হিসেবেই সূচনালগ্ন থেকেই নগরবর্জ্য উৎপাদন অব্যহত রাখে। ফলে বর্জ্যঅপসারণ নগর কতৃপক্ষের প্রাত্যাহিক ও অন্যতম কাজ হিসেবে বিবেচিত হয়। নগরকে পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য পঃয়নিস্ক্ষাণ ব্যবস্থা সহ ড্রেনেজ ব্যাবস্থার উন্নয়নও রাস্তা পথের সাথে সাথে চলতে থাকে। এগুলো নগরবাসির জন্য কতৃপক্ষের পক্ষ থেকে দেওয়া নাগরিক সুবিধা হিসেবে বিবেচিত হয়। মোট কথা একটা নগর, বর্জ্যব্যাবস্থাপনা সহ কতটুকু নাগরিক সুযোগ সুবিধা নগরবাসিকে দিতে পারছে তার পরিমান ও বিস্তৃতিই নগরকে আধুনিক মানে উন্নতি করার অন্যতম মাপকাঠি।

বর্জ্য বলতে মানুষের দৈনন্দিন জীবনে যাবতীয় অপ্রয়োজনীয়, ফেলনাযোগ্য ও ত্যাগকৃত উপাদান সমুহকেই বুঝান হয়। তবে গ্রাম,নগর ও পরিবেশ ভেদে উপাদান গুলোর ধরণ, মাত্রা ও পরিমানগত উৎপাদন কমবেশি হয়ে থাকে। গ্রামীন পরিবেশে যে ধরণের বর্জ উৎপন্ন হয়, দেখা য্য়া শহরে একই বর্জের সাথে একাধিক অন্যন্য বর্জ তৈরি হয়। যেভাবেই তৈরি হোক না কেন সমস্ত বর্জসমুহকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করাহয়। রাবিস ও গার্বেজ। রাবিস গুলো সাধারণত শক্ত, আংশিক রিসাকেলযুক্ত এবং অপচনশীল। নগরে এই প্রকার বর্জের আধিক্য দেখা যায়। পূর্বে এগুলো শুধুমাত্র ভবন ভাঙ্গাগড়ার বা মেরামতের সময় উৎপাদিত হত। এর মধ্যে ইট,শুরকি, সিমেন্ট,বালু কাঠ লোহার টুকররোর আধিক্য থাকত এবং এগুলোর কিছুঅংশ পুঃনব্যবহার যোগ্য, কিছুটা রিসাইকেল যুক্ত ছিল। বর্তমান সময়ে একই বর্জের সাথে যুক্ত হয়েছে কাচঁ, টাইলস, প্লাস্টিক, চিনামাটি, পলিথিন, টিন, পারটেক্স, ফোম কর্কশিট, এলুমিনিয়াম সহ অনেক ধরনের ক্লিনিং এজেন্টে, রং বার্নিশের মত কিছুটা কেমিক্যাল দ্রব্য, ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিকস দ্রব্যের অংশ সমুহ ও হাসপাতাল বর্জ্য।

অন্যদিকে গার্বেজ গুলো সাধারণত শক্ত ও তরল উভয় প্রকারেই হয়ে থাকে। তবে এগুলো পচনশীল,পচনের এক পর্যায়ে প্রচুর পরিমানে দূর্গন্ধ নির্গত করে। এর মধ্যে মানুষ ও পশু পাখির মলমুত্র,মৃতদেহ, গৃহস্থলি, হোটেল ও বাজারের বর্জ্য ও পরিত্যাক্ত পানি, কসায়খানা ও হাসপাতাল বর্জ্য, অন্যদিকে কারখানা, ডাইং, ব্যটারি রি ফুয়েলিং, কৃষিক্ষেত্রে ব্যাবহূত সার কিট নাশক প্রভৃতি এই প্রকার বর্জের মধ্যে পরিগনিত হয়ে থাকে। জরীপে দেখা যায় দেশে রাসায়নিক বর্জ্য উৎপাদনে কৃষি ও শিল্প খাত কেউ কারো থেকে পিছিয়ে নেই। এবং এগুলো ব্যাবস্থাপনার উন্নত কোন কৌশলও আমাদের হাতে নেই। ফলে এই সমস্ত বর্জ্যের প্রভাবে ক্রমাগত মাটি, বায়ু পানি দুষিত হয়ে মানুষ সহ আমাদের জীব বৈচিত্রকে প্রতিনিয়ত ব্যাপক হুমকির মধ্যে ফেলছে।

নগরের তরল বর্জ্য অপসারণের জন্য উন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ পলুশন ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপন করা হয়। কঠিন বর্জ্য সমুহ নগর পরিচ্ছন্নতা কর্মী, সেবাদানকারী সংস্থা, এনজিও ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সংগ্রহ করে নির্দিষ্ঠ ডাম্পিং স্টেশনে জমাকরা হয়। এবং শর্টিং এর মাধ্যমে পচনশীল বর্জ্য থেকে রিসাইক্লিন যোগ্য গার্বেজ গুলোকে আলাদা করা হয়। এই সমস্ত কাজে নগরের নিজস্ব জনবল ছাড়াও অর্থেল বিনিমিয়ে বেসরকারীভাবেও অনেক প্রতিষ্ঠান কাজ করে থাকে। যথাযত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পচনশীল বর্জ্য সমুহ থেকে উন্নতদেশ সমুহে লাভ জনক জৈবসার, জ্বালানী ও বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।

১৩ই জুন ২০২৫ মেহেরপুর পৌরসভা প্রদত্ত তথ্যসূত্রে জানা যায় পৌর এলাকার আয়তন ১৭.৬০ ব.কিমি। এবং শহরে বসবাসকারী লোকসংখ্যা ৭০ হাজারের বেশি। চলাচলের সুবিধার জন্য শহরে ৫৯.৮০ কিমি এইচবি, ৩৯.৭০ কিমি আরসিসি, এবং৩৬.৩০কিমি কাঁচা সড়ক আছে। মোট ড্রেন আছে ৫৩.০৪কিমি। এর মধ্যে প্রাইমারী ১০.৫০,সেকেন্ডরিী ২৫.৮২, টার্সিয়ারী ১৬.৭২ কিমি। ড্রেন নির্গত সমুদয় দুষিত পানি কোন রকম পলুউশন ট্রিটমেন্ট ছাড়াই ভৈরব নদিতে ডিসচার্জ হয়ে থাকে। ৩টা বড়পরিসরের আন্ডার গ্রাউন্ড কনক্রিট পাইপ লাইনের মাধ্যমে গোহাট থেকে রাজাপুর ব্রীজমুখ, হসপিটাল মোড় থেকে থানাঘাট এবং বেনাগাড়ি থেকে কালাচাঁদপুর খাল দিয়ে পানি বেরকরে ভৈরবে ফেলা হয়। মোটা মুটি বড় ড্রেন গুলো সুপরিসর হলেও পাড়া মহল্লা বা ওয়ার্ড সমুহের সংযোগ ড্রেনের সাথে এগুলোর সংযুক্তি কম। কোথাও কোথাও সংযোগহেীন। এর অন্যতন কারণ মেহেরপুরের পরিসর বৃদ্ধি পেলেও এর নাগরিক সুবিধা সে তুলনায় বাড়ে নি। রাস্তাপথ যেমন সুপরিসর নয়,তেমনি ফুটপাত বা উন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থা বা ম্যনহোল গড়ে ওঠেনি। সংযোগ ড্রেনগুলো অপরিকল্পিত, ড্রেনেজ সিস্টেম এখনো অগভীর, বাঁকসর্বস্ব, অপরিসর ও অধিকাংশ স্থানে ড্রেনের মধ্যে বিদ্যুতের খুটির অবস্থানের জন্য অপসৃত বর্জ্য জমাটবেধে ড্রেন উপচে ময়লা বেরহয়ে আসে, ড্রেনগুলো জরুরী সার্ভিসের জন্য কোন ছোট আকৃতির যন্ত্রকৌশলও পরিলক্ষিত হয় না।

পৌরতথ্য মতে মেহেরপুর শহরে প্রতিদিন কঠিন পৌরবর্জ্য উৎপাদিত হয় ১৪ টন,** এবং অপসারিত হয় ১২ টন। শহররে সেপটিক ট্যাংকের ব্যাবহার ৭০% বাড়িতে, এখনও পিট ট্যাংকের ব্যবহার ২৫% এবং অন্যান্য ল্যট্রিন আছে ৫%, এবং প্রতিদিন তরল বর্জ্য উৎপাদিত হয় ৪০০০ লিটার। পৌরসভার তিনটি ভ্যাকু ট্যাং থাকলেও অপরিসর গলি, সংকীর্ন রাস্তা এবং দূরত্তের কারণে এই আধুনিক সুযোগ সুবিধা পৌরবাসি যথাযত ভাবে নিতে পারে না। ফলে এখনও সনাতনি পদ্ধতিতেই ব্যক্তি পর্যায়ে পয়ঃবর্জ্য নিষ্কাশিত হয়। পৌর সভার পরিচ্ছন্নতা কর্মীর সংখা ১০৯ জন। এই অপ্রতুল জনবল দিয়ে প্রধান সড়ক ও অফিস আদালত পাড়া কিছুটা পরিচ্ছন্ন রাখা গেলেও পাড়া মহল্লাগুলো থাকে আপরিচ্ছন্ন।

শহর যেমনই হোক বর্জ্য ব্যাবস্থাপনা অবশ্যই ভালো হতে হবে। মেহেরপুর শহরের রাস্তাগুলো অপ্রসস্থ হওয়ার জন্য যেমন কোন ফুটপাত নেই তেমনি স্থায়ী বিন ব্যবস্থাও নেই। সুনির্দিষ্ঠ ডাম্পিং ব্যবস্থা না থাকা এবং মাঝেমধ্যে অস্থায়ী ব্যাবস্থা গ্রহনের জন্য শহরপ্রান্তে বা পথপার্শে, হাটবাজারে প্রতিনিয়ত আবর্জনা জমা হয়ে ভয়াবহভাবে পরিবেশ দূষন হয়। ইতোপূর্বে মেহেরপুর গোহাট প্রান্তে বৈদেশিক সহায়তায় ছোট আকারে একটা গার্বেজ শর্টিং স্টেশন করা হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল পৌরবর্জ্য থেকে রিসাইকেল যোগ্য ও পচনশীল পদার্থ সমুহ আলাদা করে ব্যবহার উপযোগী করা। জানা যায় পচনশীলদ্রব্য থেকে এখানে জৈবসার উৎপাদনের পরিকল্পনাও ছিল। কিন্তু এই স্টেশটির সঠিক কার্যক্রম সম্পর্কে কেউ তেমন অবগত আছে বলে মনে হয় না।উন্নত নগর সমুহে এই ধরণের কার্যকলাপ পৌর সভার আয়ের একটা বড় উৎস। এছাড়াও উন্নত বিশে^র আদলে দেশে বর্জ্যথেকে জৈবজ¦লানী ও বিদ্যুত উৎপাদনের বিষয়টিও সরকার চিন্তা ভাবনা করছে বলে শুনাযায়।

তবে আশার বিষয়, ”নগরপরিচালন ও অবকাঠামো উন্নতিকরণ প্রকল্পের” অধীনে শহর উপকন্ঠে নির্জনস্থানে ৩ একর যায়গার উপরে প্রায় তিনকোটি টাকা ব্যায়ে একটা এফ এস টি পি (ফিকেল স্লজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট ) স্থাপন করা হয়েছে। ১০ই আগস্ট ২০২১ থেকে এইপ্লানেটর কার্যক্রম শুরু হয়। ভবিষ্যৎ চিন্তা করে এর পরিসর আরো বাড়ানো বাঞ্ছনীয় বলে নগরবাসি মনে করে। বর্তমান স্টেশনে ৭০ সে.মি উচ্চতা বিশিষ্ঠ ৩টা ড্রায়িং বেড আছে। ভ্যকুট্রাকের মাধ্যমে সংগ্রহকৃত মানুষ্য পয়ঃবর্জ্য সপ্তাহে ১-৩ দিন এই বেডেফেলে শুকানো হয়। এগুলো জৈবসার উযোগী।

পৌর তথ্য মতে মেহেরপুর শহরে পানির গ্রাহক ৪৩৭০ জন এবং পানির চাহিদা ১২০০০ ঘন মিটার। ৬টি পাম্প ও ১টি ওভারহেড ট্যঙ্কের মাধ্যমে প্রতিদিন ৩৫০০ ঘনমিটার পানি সরবরাহ করা হয়, যা প্রয়েজনের তুলনায় অপ্রতুল। কিন্তু নগর প্রসারণের সাথে সাথে পানির চাহিদাও ক্রমেই বেড়েই চলেছে। জানা যায় মেহেরপুরের পানিতে সাদা আয়রন ও কোথাও আর্সেনিকের উপস্থিতি লক্ষনীয়। যে পরিমান পানি সরবরাহ করা হয় তার পরিমান ও চাপ এত কম থাকে যে পানি ব্যাবহারের সুবিধা অপেক্ষা অসুবিধা ভোগ করতে হয় আরো বেশি।

অধিকাংশ নগরবাসিকে নিজ উদ্যেগে নলক’প স্থাপন করে পানির ব্যবস্থা করতে হয়। এখানেও সমস্যা প্রচুর। প্রথমত আয়রন, আর্সেনিক মুক্ত পানি পাওয়ার অনিশ্চয়তা, তাপরেও শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর নেমে যাওয়ায় অধিকিাংশ নলকুপ পানিশুন্য হয়ে পড়া। শহরের একমাত্র ওভারহেড ট্যাংকের পানি গ্রাভেল ওয়াস করে তোলা হলেও এখান থেকে প্রচুর পরিমান অপদ্রব্য কোন প্রকার শোধন ছাড়াই সরাসরি ড্রেনের মাধ্যমে ভৈরবে নিস্কাশন করা হয়, প্রত্যক্ষভাবে নদী দূষণ করে।

মেহেরপুর, দেশের অন্যতম কৃষি নির্ভর শহর। এখানে উল্লেখযোগ্য কোন শিল্প নেই ফলে রাসায়নিক দূষণ তুলনামুলক কম। স্বল্পমাত্রার ব্যাটরি রিসাইকেল,জুয়েলারি, ও তেল নিঃসরণ ছাড়া শহরে তেমন রাসায়নিক দূষণ নেই বললেই চলে। তারপরেও নগরকে নগরীয় বৈশিষ্ঠে ফেরাতে হলে সর্বপ্রকার দূষণ মুক্ত রাখা বাঞ্ছনীয়। বর্তমানে শহরে আবাসিক এলাকা বাড়ার পাশাপাশি সেবাদান প্রতিষ্ঠান সমুহও বাড়ছে। বাড়ছে দোকান পাট, মার্কেট, ক্লিনিক হাসপাতাল, খাবার দোকান সহ ক্ষুদ্রাকারের শিল্প। ভবিষ্যতে বিশ^বিদ্যালয় সহ আরো সরক্রী বেসরকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার অপেক্ষায়। এখন থেকেই পরিকল্পিতভাবে বর্জ্য ও সুয়ারেজ ব্যবস্থাপনার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা না করলে ভবিষ্যত প্রজন্ম তার প্রিয় শহরকে একটা পুতিগন্ধময় আবর্জনার ভাগাড় ছাড়া আর কিছুই পাবে না। ফলে এখন থেকেই ঋঝঞচ সংখ্যা ও আয়তন বৃদ্ধি, পরিকল্পিত বিন নির্মাণ, একাধিক শর্টিং স্টেশন স্থাপন, রাস্তা,গলিপথের এবং ড্রেনের বাঁক অপসারণ,ড্রেনের মাঝখানথেকে বৈদ্যুতিক খুটি সরানো, ইটিপির মাধ্যমে দূষিত পানি পরিশোধন করে নদিতে ফেলা সহ সময়মত নগর,হাসপাতাল, গৃহস্থলি বর্জ অপসারণ ও ধংশের ব্যাবস্থা করা সময়ের দাবি। বিষয়টা আগামী প্রজন্মের সার্থে অত্যান্ত জরুরী বলেই নগরবাসি মনে করেন।

বর্জ্যব্যবস্থাপনা নিয়ে দেশ আজ অত্যান্ত আশাবাদি। খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশবিদ্যালয়ের অধ্যাপক প্রফেসর ডা.খালেকুজ্জামান সম্পূর্ন নিজস্ব প্রযুক্তি ও অনুঘটক ব্যবহার করে নগর বর্জ্য ও মানুস্যবর্জ্যনিয়ে দীর্ঘদি ধওে কাজ করছেন এবং সফল হয়েছেন। নগরবর্জ্য থেকে স্বল্পমুল্যে জ্বালানিতেল, গ্যাস ও উন্নত মানের জৈবসার উদ্ভাবন করে বিশ্বব্যাপি সাড়া জাগিয়েছেন, তাঁর এই যুগান্তকারী গবেষণা বেশ কয়েকটি আন্তর্জতিক মানের বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নালে প্রকাশিত হওয়ার পরে বিষটি নিয়ে অনেক দেশই আজ আমাদের দিকে দৃষ্টি ফিরিয়েছে। আশা করি, আমাদের দেশও এর সুফল অচিরেই ভোগ করবে এবং সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভা সমূহ নিজ উদ্যোগে এই আবিষ্কারকে কাজে লাগানোর জন্য এগিয়ে আসবে।




মেহেরপুরে জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবীতে ৬ গ্রামবাসীর মানববন্ধন

ফসলি জমির পানি নিষ্কাশনের দাবিতে মেহেরপুরে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচী পালন করেছেন ৬ গ্রামবাসী।

রবিবার সকালে গাংনী উপজেলার তেরাইল, মহব্বতপুর, বাদিয়াপাড়া, কামারখালি, ষোলটাকা ও সহড়াবাড়িয়া গ্রামের শতাধিক কৃষক মেহেরপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এ কর্মসূচি পালন করেন। মানববন্ধন শেষে তারা জেলা প্রশাসকের কাছে তাদের দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি প্রদান করেন।

মানববন্ধনে নেতৃত্ব দেন বামুন্দি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক জুলফিকার আলী ভুট্টো।

তিনি বলেন, তেরাইল মোহাম্মদপুর ষোলটাকা তিন গ্রামের মাঠে জলাবদ্ধতার কারণে চাষাবাদ বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা ইতিপূর্বে প্রশাসনকে জানিয়েছি মানববন্ধন হয়েছে ওই মাঠে। তখন অল্প ছিল জলবদ্ধতা। আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পেয়ে পুরো মাঠ প্লাবিত হয়েছে। মাঠ প্লাবিত হওয়ার সাথে সাথে গ্রামে চলে এসেছে। গ্রামের রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। এখন এটা যদি নিরসন না হয় ফসলের তো ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে পাশাপাশি গ্রামের মানুষের অনেক ক্ষতি হবে। রাস্তার পাশে ক্যানাল আছে সেগুলো হয়তো বন্ধ হয়ে গেছে। এখন প্রশাসন নজর দিয়ে ক্যানালগুলো যদি ঠিক করে দেয় তাহলে জলবদ্ধতা কমে যাবে।

এ সময় বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, বহু বছর ধরে সঠিক পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় প্রতি মৌসুমে হাজার হাজার বিঘা জমির ফসল পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টি বা সামান্য প্লাবন হলেই জমি ডুবে যায়। ধান, পাট, শাকসবজি থেকে শুরু করে সব ধরনের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

কৃষকরা বলেন, সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বহুবার অভিযোগ জানানো হলেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে কৃষকরা একদিকে লোকসানের বোঝা বইছেন, অন্যদিকে ঋণের টাকা শোধ করতে হিমশিম খাচ্ছেন। বক্তারা দ্রুত সেচ ও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানান। ষোলটাকা ইউনিয়নের সাত আটটা গ্রামের প্রচুর জমিতে সব গ্রামের পানি এসে আটকে থাকে। পানি নিষ্কাশনের কোন ব্যবস্থা না থাকাই জমিতে সারা বছর পানি আটকে থাকে । যার ফলে কোনরকম চাষাবাদ করা যায় না। বড় বড় মাছ ব্যবসায়ীরা পুকুর কাটার জন্য ক্যানাল বন্ধ করে ফেলে। ক্যানাল বন্ধ হাওয়াই মূলত জলবদ্ধতার কারণ। চাষাবাদ না করতে পেরে আমাদের গ্রামের মানুষ অনাহারে না খেয়ে থাকে। এর পাশাপাশি গ্রামের সকল মানুষের গরুর খাবারে সংকট দেখা যায়। তিন থেকে পাঁচ হাজার বিঘা জমি পানি আটকে আছে।

পানি নিষ্কাশনের পদক্ষেপ না নিলে আগামীতে গমের চাষ হবে না, ভুট্টা চাষ হবে না, কৃষকের আরো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়বে। রবিশস্যের চাষ গুলো আমাদের মাঠে সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাবে।

মানববন্ধন শেষে কৃষকরা জেলা প্রশাসকের কাছে একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন।




নাগরিক সেবা বাংলাদেশ

বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিকের কাছে সরকারি সেবা মানেই ছিল দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে অনিশ্চিত প্রতীক্ষা, ফাইল হাতে এক দপ্তর থেকে আরেক দপ্তরে ছোটা, নথিপত্রে ভুল-ত্রুটি হলে আবারও ঘুরে আসা এবং শেষে দালালের ফাঁদে পড়া।

এই অভিজ্ঞতা শুধু হতাশাজনকই নয় বরং সময় ও অর্থেরও অপচয় ঘটাতো। অনেকেই তাই প্রয়োজনীয় সেবা নিতে গিয়েও মাঝপথে বিরক্ত হয়ে হাল ছেড়ে দিতেন। কিন্তু এই পুরোনো বাস্তবতার পরিবর্তনে এক নতুন যুগের সূচনা হয়েছে ‘নাগরিক সেবা বাংলাদেশ’ নামের একটি উদ্যোগের মাধ্যমে। এটি একটি ওয়ান স্টপ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, যেখানে এক ঠিকানা থেকে বহু ধরনের সরকারি সেবা নেওয়া যাবে। নাগরিক আর ফাইল হাতে অফিসে ছুটে বেড়াতে হবে না, বরং অনলাইনে কয়েকটি ধাপে আবেদন জমা দিয়ে কাজের অগ্রগতি সহজেই ট্র্যাক করা যাবে। সময়, খরচ ও হয়রানি কমিয়ে সুশাসনের নতুন মানদণ্ড তৈরি করাই এই প্রকল্পের প্রধান লক্ষ্য।

এই উদ্যোগের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ২৬ মে ২০২৫ সালে। রাজধানীতে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি ঘোষণা দেন দালালের দৌরাত্ম্য কমানো, হয়রানিমুক্ত সেবা নিশ্চিত করা এবং এক জায়গায় সরকারি সেবা পৌঁছে দেওয়ার। তাঁর বক্তব্য শুধু প্রতিশ্রুতিই ছিল না, বরং একটি কাঠামোগত সংস্কারের ইঙ্গিত বহন করছিল। শুরুর দিকেই ঢাকার গুলশান, উত্তরা ও নীলক্ষেতে তিনটি নাগরিক সেবা কেন্দ্র চালু করা হয়। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে এই কেন্দ্রগুলো। এখানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত উদ্যোক্তারা দায়িত্ব পালন করছেন এবং প্রতিটি কেন্দ্রে সরকার নির্ধারিত ফি তালিকা উন্মুক্তভাবে ঝুলানো আছে। ফলে নাগরিকরা আগেই বুঝে নিতে পারেন কোন সেবার জন্য কত খরচ হবে। তথ্য সুরক্ষার জন্য উদ্যোক্তাদের নন-ডিসক্লোজার চুক্তির আওতায় আনা হয়েছে, যাতে নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য নিরাপদ থাকে।

তবে নাগরিক সেবা কেবল একটি ফ্রন্ট ডেস্ক নয় বরং একটি পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল ইকোসিস্টেম। এখানে একক সার্ভিস পোর্টাল ও সুপার অ্যাপ থাকবে, থাকবে বিলিং অ্যাগ্রিগেটর ও পেমেন্ট গেটওয়ে। প্রতিটি আবেদনের জন্য স্বয়ংক্রিয় ট্র্যাকিং নম্বর দেওয়া হবে, ফলে একজন নাগরিক যেকোনো সময় জানতে পারবেন তাঁর আবেদন কোন ধাপে আছে। নীতিনির্ধারকরাও দেখতে পারবেন কোথায় কোনো বটলনেক তৈরি হয়েছে। ফলে এই উদ্যোগ কেবল ডিজিটালাইজড ফ্রন্ট ডেস্ক নয়, বরং প্রমাণভিত্তিক প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের দিকেও এক ধাপ অগ্রগতি। নাগরিকের প্রতিটি অভিযোগ, প্রতিটি ধাপের রেকর্ড ও প্রতিক্রিয়া সহজেই নথিভুক্ত হয়ে যাবে।

বর্তমানে পাইলট পর্যায়ে ৮১টি সেবা চালু আছে। তবে লক্ষ্য অনেক বড়। খুব শিগগিরই ৪৫০-এর বেশি সেবা একত্রে আনার পরিকল্পনা রয়েছে। জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন, এনআইডি সংশোধন ও পুনর্মুদ্রণ, নতুন পাসপোর্ট আবেদন ও নবায়ন, অনলাইন জিডি, ই-মিউটেশন ও ই-পর্চা, ভূমি কর পরিশোধ, ট্রেড লাইসেন্স ও ট্রেডমার্ক নিবন্ধন, আয়কর রিটার্ন দাখিল ও ভ্যাট চালান, বিদ্যুৎ-পানি-গ্যাসসহ ইউটিলিটি বিল, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও যানবাহন নিবন্ধন নবায়ন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কৃষি সম্পর্কিত নানা সেবা এক গেটওয়েতে পাওয়া যাবে। যাদের নিজস্ব ডিভাইস নেই বা অনলাইন ব্যবহারে দক্ষতা কম তারা কাছের নাগরিক সেবা কেন্দ্রে গিয়ে সহায়তা নিতে পারবেন। প্রয়োজনে ৩৩৩ নম্বরে কল করে নির্দেশনাও মিলবে। ফলে ডিজিটাল বিভাজনের বাস্তবতাকে মাথায় রেখে অনলাইন ও অফলাইন উভয় চ্যানেলের সমন্বয় ঘটানো হয়েছে।

এই উদ্যোগের মূল ভরসা হলো উদ্যোক্তা মডেল। সরকারের তত্ত্বাবধানে কড়া বাছাই ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উদ্যোক্তা নির্বাচন করা হয়েছে। প্রথম ধাপে ২০০ জন প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তাদের মধ্যে ১০০ জন সার্টিফিকেট অর্জন করেছেন, যাদের মধ্যে ৫০ জন নারী ও ৫০ জন পুরুষ। উদ্যোক্তাদের জন্য থাকছে ব্র্যান্ডেড ইউনিফর্ম, পরিচয়পত্র, সনদ এবং ভবিষ্যতে স্বল্পসুদে আর্থিক সহায়তার সুযোগ। সরকার-আধাসরকারি স্থাপনা, পোস্ট অফিস, বিটিসিএল অফিস, জেলা ও উপজেলা কমপ্লেক্সে কো-ওয়ার্কিং স্পেসে কেন্দ্র বসানো হয়েছে, যাতে বিনিয়োগের বাধা কমে। ভবিষ্যতে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে স্বল্পসুদের ঋণের বিষয়েও আলোচনা চলছে। সেবার মান বজায় না রাখলে উদ্যোক্তার লাইসেন্স স্থগিত বা বাতিল করার বিধানও রাখা হয়েছে। পাশাপাশি কেন্দ্রভিত্তিক র‌্যাঙ্কিং ও নাগরিক ফিডব্যাক প্রকাশ্যে প্রদর্শনের ব্যবস্থা থাকবে, যাতে সেবাদাতাদের মধ্যে ইতিবাচক প্রতিযোগিতা তৈরি হয়।

যদিও পরিকল্পনা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক, তবুও কিছু বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্থিতিশীল ইন্টারনেট ও বিদ্যুতের অভাব সেবার মানে বৈষম্য তৈরি করতে পারে। ডিজিটাল সাক্ষরতার ঘাটতির কারণে অনেকেই নিজের হাতে আবেদন করতে স্বস্তি বোধ করবেন না। তাদের জন্য উদ্যোক্তাদের দক্ষতা ও নৈতিকতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াবে। সাইবার নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, কারণ নাগরিকের তথ্য ফাঁস হলে তা বড় ধরনের বিপদের ডাক আনতে পারে। তাই কে কখন কোন ডেটায় প্রবেশ করবেন, তা কঠোরভাবে নিয়মে বেঁধে দিতে হবে। সমস্ত কার্যক্রম রেকর্ড রাখতে হবে এবং নিয়মিতভাবে সিস্টেম পরীক্ষা করে দুর্বল জায়গাগুলো চিহ্নিত করতে হবে। আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো অর্থায়ন। জাতীয় পর্যায়ে এই সেবা চালাতে হলে নেটওয়ার্ক, যন্ত্রপাতি, সার্ভার, সাপোর্ট টিম ও তদারকির জন্য দীর্ঘমেয়াদি বাজেট দরকার। সরকারি অর্থায়নের পাশাপাশি বেসরকারি খাত ও স্থানীয় সম্প্রদায়ের অংশীদারিত্বও কাজে লাগাতে হতে পারে।

তবুও এই উদ্যোগ নাগরিক জীবনে বিশাল পরিবর্তন আনতে সক্ষম। আগে একটি জন্মনিবন্ধনের জন্য ফাইল হাতে বারবার অফিসে যেতে হতো। এখন কয়েকটি ক্লিকেই আবেদন জমা হবে, সঙ্গে হাতে মিলবে ট্র্যাকিং নম্বর ও এসএমএস আপডেট। ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের ক্ষেত্রেও একই সুবিধা। পুরোনো লাইসেন্স নম্বর ও টিআইএন নম্বর দিলেই সিস্টেম নিজে থেকেই বিলম্ব ফি হিসাব করে দেখাবে। অনলাইনে পেমেন্ট করলে আবেদন স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রক্রিয়ায় ঢুকে যাবে। ফলে নাগরিক আর অযথা সময় নষ্ট করবেন না এবং দালালের ওপর নির্ভর করার প্রয়োজন পড়বে না। সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আসবে নাগরিকের আস্থায়। আগে কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে কোনো ধারণা পাওয়া যেত না। এখন প্রতিটি ধাপ স্বচ্ছভাবে দেখা যাবে, অভিযোগ করলে রেফারেন্স নম্বর পাওয়া যাবে, আর ফিডব্যাকও প্রকাশ্যে থাকবে। এতে মানুষ বুঝবেন সেবা প্রক্রিয়া সত্যিই বদলাচ্ছে। আস্থার এই পরিবেশই হবে নাগরিক সেবার দীর্ঘমেয়াদি শক্তি।

পরিকল্পনা রয়েছে প্রথমে ৬৪ জেলার প্রতিটি উপজেলায়, এরপর ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে এ সেবা পৌঁছে দেওয়ার। প্রতিটি মন্ত্রণালয় থেকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে অন্তত দুটি করে সেবা যুক্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাসপোর্টের মতো বায়োমেট্রিক সেবার ক্ষেত্রেও নাগরিক সেবা কেন্দ্রে সরাসরি আঙুলের ছাপ, চোখের স্ক্যান ও ছবি সংগ্রহের ব্যবস্থা থাকবে। এভাবে নাগরিক সেবা কেন্দ্রগুলো শুধু সেবা দেওয়ার জায়গা নয়, বরং স্থানীয় অর্থনীতির ছোট হাবে পরিণত হবে। তরুণ, নারী ও প্রযুক্তিপ্রেমীরা এখানে কাজ শিখবেন, দক্ষতা বাড়াবেন এবং আয় করার সুযোগ পাবেন।

সবকিছু মিলিয়ে বলা যায়, যদি ডেটা সুরক্ষা, সাইবার নিরাপত্তা, মান নিয়ন্ত্রণ ও জবাবদিহি যথাযথভাবে নিশ্চিত করা যায়, তবে এই উদ্যোগ বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের জটিল আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ভেঙে দিতে সক্ষম হবে। সরকারি সেবা নিতে নাগরিকদের আর ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না, দালালের উপর নির্ভর করতে হবে না কিংবা হতাশাজনক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হবে না। নাগরিক সেবা বাংলাদেশ তাই শুধু একটি প্রযুক্তি প্রকল্প নয়, বরং এটি নাগরিক সেবা সংস্কৃতিতে এক নতুন যুগের সূচনা। মানুষের আস্থা তৈরি হলে এই আস্থাই হবে উদ্যোগটির দীর্ঘমেয়াদি শক্তি।

লেখক: সহকারী তথ্য অফিসার




গাংনীতে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে স্কুলছাত্র রাব্বির মৃত্যু

মেহেরপুরের গাংনীতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে রাব্বি হোসেন (১১) নামের এক স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। আজ রোববার সকালে উপজেলার কাজিপুর গ্রামের মাঠপাড়ায় নিজ বাড়ির দরজা খুলতে গিয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত রাব্বি একই গ্রামের কেরামত আলীর ছেলে ও স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, সকালে স্কুলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল রাব্বি। ঘরের দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশের সময় বৈদ্যুতিক তারের লিকেজে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে গুরুতর আহত হয় সে। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে পার্শ্ববর্তী একটি ক্লিনিকে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ বিষয়ে গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বানী ইসরাইল বলেন, “বিদ্যুৎস্পৃষ্টে একজন শিশুর মৃত্যু হয়েছে এমন সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”




মেহেরপুর সরকারি কলেজের সবুজ চত্বরে শুভসংঘের পাঠচক্র

শিক্ষার্থীদের পাঠঅভ্যাসে অভ্যস্ত করতে শিক্ষার্থীদের নিয়ে মেহেরপুর সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসের সবুজ চত্বরে অনুষ্ঠিত হলো পাঠচক্র অনুষ্ঠান।

রবিবার সকালে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের কয়েকটি কবিতা পাঠ ও কবিতার পটভূমি নিয়ে আলোচনা করেন বসুন্ধরা শুভসংঘ মেহেরপুর জেলা শাখার উপদেষ্টা ও কালের কণ্ঠ প্রতিনিধি ইয়াদুল মোমিন এবং সাংগঠনিক সম্পাদক অনিক হাসান।

বসুন্ধরা শুভসংঘ মেহেরপুর জেলা শাখার সভাপতি রফিকুল আলম বকুলের সভাপতিত্বে পাঠচক্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক নাফিউল ইসলাম।

কালের কণ্ঠ প্রতিনিধি ইয়াদুল মোমিন বলেন, বর্তমান তথ্য-প্রযুক্তির যুগে আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মূল্যবান সময় নিজের অজান্তেই নষ্ট করছি। আমরা যদি দিনের একটি সময় বই পড়ার অভ্যাস তৈরি করতে পারি, তবে ভবিষ্যতে সফলতার গল্প লিখতে এই সময়টির কথা বারবার মনে পড়বে। বিখ্যাত মনীষী এবং সফল ব্যক্তিরা এখনো তাদের দিনের কর্মপরিকল্পনার মধ্যে কিছুটা সময় বই পড়ার কাজে কাটান। আমাদেরও এখন থেকেই বই পড়ার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। নিয়মিত বই পড়ার মাধ্যমে জ্ঞানকে বিকশিত করতে পারব।

সভাপতির বক্তব্যে রফিকুল আলম বকুল বলেন, আমাদের ছোটবেলায় যখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছিল না, তখন সময় কাটানোর মূল উৎসই ছিল বিভিন্ন ধরনের বই পড়া। বই পড়ার মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন দেশের, এলাকার কৃষ্টি-কালচার সম্পর্কে জানতে পারি। শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দিনের একটি সময় হাতের মোবাইলটি দূরে সরিয়ে রেখে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলি। এ অভ্যাসের মাধ্যমে আমাদের মানসিক ও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে।

পাঠচক্রে অংশ নেন সংগঠনের স্বাস্থ্য ও মানবসম্পদ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান, সাংস্কৃতিক সম্পাদক উলমাতুন নেছা পূর্ণিমা, কার্যকরী সদস্য সুরাইয়া আক্তার হ্যাপী। পাঠচক্রে গীতাঞ্জলির বিভিন্ন কবিতা পাঠ করেন শিক্ষার্থী স্মৃতি খাতুন , জেবা আক্তার , উর্মিলা খাতুন, আলিন আহম্মেদ, আয়েশা সিদ্দিকা অ্যানি, সামিয়া আক্তার , সুরাইয়া আক্তার মলি, তাবাচ্ছুম সুলতানা আইরিন, মোছাঃ গোলাপী, ফারজানা আক্তার আশা, সাদিয়া ইসলাম, দিশা দাস , মোঃবিপুল , নাহিদ খান প্রমুখ।

পাঠচক্র অনুষ্ঠানে সকলকে বই পড়ার অভ্যাস তৈরিতে বিশেষভাবে উৎসাহিত করা হয় এবং পাঠঅভ্যাস গড়ে তুলতে প্রতি মাসে অন্তত একটি পাঠচক্র অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।