মেহেরপুর সদর উপজেলা ও পৌর বিএনপি’র দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন

মেহেরপুর সদর উপজেলা ও পৌর বিএনপি’র দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন ২০২৫ এর আয়োজন করা হয়েছে।

আজ শনিবার সকালে জাতীয় ও দলিয় পতাকা উত্তোলন ও শান্তির প্রতিক কবুতর উড়িয়ে মেহেরপুর সরকারি কলেজ মাঠে সদর উপজেলা ও পৌর বিএনপি’র দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধন করেন, জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক জাভেদ মাসুদ মিল্টন।

জেলা বিএনপি’র সদস্য মোঃ ইলিয়াস হোসেনের সভাপতিত্বে সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, খুলনা বিভাগ বিএনপি’র সহ সাংগঠনিক সম্পাদক বাবু জয়ন্ত কুমার কুন্ড।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, জেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব এ্যাড. কামরুল হাসান, যুগ্ম আহ্বায়ক মোঃ আমিরুল ইসলাম, সদস্য মোঃ আলমগীর খান ছাতু, মোঃ আনছারুল হক, মোঃ হাফিজুর রহমান ও মোঃ খাইরুল বাশার।

প্রথম অধিবেশনে আলোচনা সভা ও দ্বিতীয় অধিবেশনে কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে।




মুলির আয়নায় পেছনের পথ

মেহেরপুর শহরের হোটেল বাজারের সবচেয়ে সরু গলিটায় থাকে বুদু শেখ। মানুষ যাকে “মুলি” নামে ডেকে ডেকে ক্ষুদ্র করে দিয়েছে। সাড়ে তিন ফুটের শরীরটা কারো হাসির খোরাক, কেউ ভাবে প্রাকৃতিক। কিন্তু মুলির চোখে জীবন শুধু একটা লরি, যার চাকায় ঘুরে যায় রুটির হিসাব।

তার বাবা, একজন মৃতপ্রায় দিনমজুর, জীবনের শেষে বিছানায় শুয়ে কেবল একটা কথাই বলে গেছেন বারবার: “মানুষ হবি, গায়ের আকারে না, মনে। চাকা ঘুরা থামায় দিস না।”
বাবা চলে যাওয়ার দিন মুলির বয়স মাত্র বারো। সে জানত, কাঁদা নিষেধ। কারণ, কান্না গরিবের রোজগার বন্ধ করে দেয়।
বাস টার্মিনালের ধুলোতে মুলির কৈশোর গলতে থাকে। নোংরা হেলমেট, গ্রীজ মাখা শার্ট, আর লরি চালকদের অশ্রাব্য হাসাহাসিতে সে

ধীরে ধীরে একটা শব্দের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে: “চালাবি?”
প্রথমবার, এক মাতাল চালক কাঁধে হাত রেখে জিজ্ঞেস করেছিল। মুলি মাথা নিচু করে বলেছিল,
“শিখতে চাই। শুধু শেখা।”

কেউ গুরুত্ব দেয়নি। কিন্তু সে থেকে গিয়েছিল। চাকা ধুতো, পাম্প করতো, প্যাডেল টিপে ব্রেক কষার কায়দা শিখত পেছন থেকে। ধীরে ধীরে, হেলপার থেকে সহকারী।

একদিন এক চালক বলেন,
“তুই ছোট মানুষ না, তুই হলি চাকার নিচে চাপা পড়া মাটির ছায়া।”
এই কথা তার মগজে থেকে যায়। পুরোনো এক লাল-কালো লরি। ইঞ্জিনে দম্ভ, দরজায় আঁচড়ের নকশা, নম্বর প্লেট ঝাপসাÑ তার হাতে আসে। লাইসেন্সটাও হয়, যদিও অফিসের এক ‘ভাই’-কে খুশি করতে হয়েছিল এক রাতের কাজ দিয়ে।

এপ্রিলের এক পাগল করা রাতে মুলি পাথর বোঝাই লরি নিয়ে ফিরছিল সিলেট থেকে। নির্জন রাস্তা। চারদিকে ঝিঁঝিঁ পোকার আওয়াজ। চাঁদের আলোয় পিচ রাস্তা সাপের মত চকচক করছে।

গাড়ির গতি ৮০ কিমি। হঠাৎ এক শব্দ! চিৎকার নয়, যেন পাতা চাপা পড়ার আওয়াজ।
চোখের সামনে এক বৃদ্ধা। সবকিছু ঘটে যায় এক সেকেন্ডে। বুড়ি শুয়ে ছিলেন রাস্তার পাশে। ঘুমের ঘোরে গড়িয়ে এসেছিলেন রাস্তায়। চাকা চলে যায় তার পায়ের ওপর।

মুলির বুক ধক করে ওঠে। হাত কাঁপে, পা কাঁপে, কিন্তু সে গাড়ি থামায়।
লরি আলো ফেলে রেখেছে একফালি আলোকছায়া। বৃদ্ধা কাতরাচ্ছেন। রক্তের ছিটে গরম পিচে শুকিয়ে যাচ্ছে।
চারপাশে কেউ নেই। নিঃশব্দ এক শূন্যতা। কুকুরও নেই।
মুলি হাঁটু গেড়ে বসে। বৃদ্ধার মুখে পানি দেয়। বৃদ্ধা চোখ খুলে তাকান, কিন্তু কিছু বলেন না। শুধু হালকা শব্দে “মা,” বলে যেন দূরে কোথাও হারিয়ে যেতে চান।
তখনই আসে প্রশ্নটা।

“এই বৃদ্ধ বাঁচলেও কী হবে? চিকিৎসা করতে পারবে না। ঘরে অভাব। হয়তো ছেলে-মেয়েরা তাকে বোঝা ভাববে। আমি যদি এখনই শেষ করে দিই; তাকে কষ্ট থেকে মুক্তি দিতে পারি।”
এই ভাবনা তার নিজের নয়। সেটা সে জানে। কিন্তু কখনও কখনও মানুষের মধ্যে একটা অন্ধরূপ জন্ম নেয়Ñ অতিমাত্রায় যুক্তিভিত্তিক, নির্দয় এক বিবেক।

সে লরি পিছিয়ে নেয়। এবার পুরো বুকের উপর তুলে দেয় চাকা। মুলি লরি ছালিয়ে চলে আসে মেহেরপুর। তবে ঘুম আসে না মুলির। তবু অদ্ভুতভাবে শান্তি লাগে। এক নিষ্ঠুর আত্মতৃপ্তি। যেন জীবনকে একবার বশে আনতে পেরেছে সে।
পরদিন পত্রিকায় খবর: “রাস্তার ধারে শুয়ে থাকা কোরবান নামে এক দিনমজুর বৃদ্ধ লরি চাপায় নিহত। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৃদ্ধটি ঘুমঘোরে অসাবধানতাবশত রাস্তায় চলে গিয়েছিলেন।”

মুলি চা খায় রাস্তার ধারের দোকানে। পত্রিকা হাতে। চোখ যায় নিজের হাতের দিকে। মনে হয় হাতটা কাঁপছে। চা-ও ভালো লাগে না আবার লাগে। জীবন যেমন চলে, পাপও চলে সাথেই।
তবে তারপর থেকে কিছু বদলে যায়।

মাঝরাতে এক অদ্ভুত ঘুম ঘিরে ধরে মুলিকে। সে দেখে তার লরির সামনে দাঁড়িয়ে আছেন বৃদ্ধ, একই কাপড়, একই মুখ, একফালি হাসি নিয়ে। কখনও তার দরজা খুলে যায় নিজে নিজে। কখনও ব্রেক ধরে না। সে জানে, কিছু একটা আছে, যা রয়ে গেছে।
একদিন লরির আয়নায় হঠাৎ দেখে এক জোড়া চোখ। পেছনে কেউ নেই। তবু চাকা ঘোরে না।
আজও মুলি চালায়। তবে আয়নায় সবসময় খোঁজে কিছু। এক মুখ, এক চোখ, এক ভার।

পাপ যেমন চাপা থাকে, তার একটা ওজন থাকে। সেটা গরিব হোক, চালক হোক, ছোট মানুষ হোকÑ ভুল কখনো ছোট হয় না।
মুলির চাকার নিচে শুধু রাস্তাই থাকে না, থাকে তার অতীত। আর যখনই সে নতুন হেলপারদের শেখায়, চাকা ঘোরাতে দেয়, সে কেবল একটা কথাই বলে।

“যার ওপর দিয়েই যাও, আগে দেখে নিওÑ তোমার নিজের ছায়া পড়ে আছে কিনা।”
বৃদ্ধকে পিষে ফেলার পর প্রথম তিন রাত মুলি ঘুমোতে পারেনি।

চোখ বন্ধ করলেই সে এক দৃশ্য দেখেÑ রাস্তার মাঝে একটি কুঁচকে যাওয়া শরীর পড়ে আছে। তার চারপাশে শুধু পাথর ছড়িয়ে ছিটিয়ে, আর লাল রক্তের রেখা আঁকা হয়ে গেছে লরির চাকার পেছনে। আর সেই বৃদ্ধ তাকিয়ে আছেন। কোনো অভিশাপ নয়, কোনো ঘৃণা নয়, বরং এমন এক দৃষ্টি, যেন তিনি কিছু বুঝতেই পারেননি। এই “না বোঝা” টাই মুলিকে গিলে খায়।

সে ভাবে “যদি তিনি চোখে চোখ রেখে কেবল একটা গালি দিতেন, তাহলে সহজ হতো। কিন্তু কিছুই তো বললেন না… এমন কি, মৃত্যুর আগে আমাকে ক্ষমাও করে দিলেন কী? মুলি চেষ্টা করে স্বাভাবিক হতে। চা খায়, হেলপারদের সাথে আড্ডা দেয়, চালায় প্রতিদিনের মতো।কিন্তু তার মধ্যে দুইটা মুলি তৈরি হয়েছে।

একটা লরি চালায়। আরেকটা প্রতিদিন তার ডান কাঁধে বসে কানে কানে ফিসফিস করে বলে “তুই খুনী, মুলি। তোর লরি একদিন তোর দিকেই ফিরবে।”

সে রাস্তার পাশে দাঁড়ানো বৃদ্ধদের দেখে না তা যেন ভয়। কখনও গাড়ি চালাতে চালাতে ব্রেক ছাড়তে ভয় পায়, মনে হয়, হঠাৎ যদি আরেকটা বৃদ্ধ চলে আসে?

সে একবার খোঁজ নিয়েছিল বৃদ্ধ’র পরিবারের। জেনেছিল বৃদ্ধ কোরবান ছিলেন নিঃসন্তান। আশেপাশের লোকজন বলেন,
“তাঁর কারো ওপর ভরসা ছিল না। একা থাকতেন, ভিক্ষা করতেন। কিছু ছিল না হারানোর মতো।”
এই কথাগুলো শুনে মুলির কিছুটা স্বস্তি লাগার কথা ছিল। কিন্তু বরং মনে হয়,

“যার কিছু নেই, তার তো আমিই সব ছিলাম। এমন এক লোকের জীবন আমি কেড়ে নিলাম, যার জন্য কেউ কাঁদেওনি।”
একদিন এক মসজিদের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে সে। ভিতরে ইমাম সাহেব বলছিলেন।

“আল্লাহ ক্ষমা করেন, যদি পাপি অনুতপ্ত হও। কিন্তু যার ওপর জুলুম হয়েছে, যদি সে না করে, তবে সেদিন হিসাব হবে।”
মুলির চোখ ফেটে পানি আসে। সে একা বসে থাকে, মসজিদের পেছনে, মাথা নিচু করে।
ভেতর থেকে একটা কান্না আসে। কিন্তু এটা চোখ দিয়ে না, আসে বুক দিয়ে, হাড়ের ভেতর দিয়ে।

তারপর থেকে মুলি বদলে যায়। সে নিয়মিত এক নির্জন জায়গায় যায়। এক পুরনো গাছের নিচে যেখানে বৃদ্ধ’র দেহ পড়ে ছিল। সেখানে একটা ছোট পাথর বসিয়েছে, কোনো নাম লেখা নেই, শুধু একটা ছোট লাল কাপড় বেঁধে রেখেছে শাখায়।
সে দাঁড়িয়ে বলে,

“আমি জানি আপনি কেউ ছিলেন না। কিন্তু আমার জন্য আপনি ছিলেন। আমি জানি আমি ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য না। কিন্তু আমি প্রতিদিন লরি চালিয়ে আপনার কাছে যাচ্ছি… একদিন আপনিই থামাবেন আমার গাড়ি।”

আজও মুলি লরি চালায়। চালায় তার গন্তব্যের জন্য না, চালায় যেন পাপকে পেছনে ফেলে পালাতে।

আয়নায় সে শুধু রাস্তা দেখে না, দেখে এক মুখ। যে মুখ কিছু বলেনি, তবু সব বলে গেছে। কারণ পাপ যেমন চাপা থাকে, তার একটা ওজন থাকে। আর সেই ওজন চাকার মতো ঘুরে ঘুরে একদিন থেমে যায় ঠিক সেখানেই, যেখানে ক্ষমা শেষ হয়।
মুলির বয়স এখন চল্লিশ ছুঁইছুঁই। গায়ের আকারটা আগের মতোই সাড়ে তিন ফুট, কিন্তু চোখের নিচে কালি, মুখে দাড়ির ছাঁট নেই, পিঠ বাঁকা হয়ে গেছে লরি চালাতে চালাতে।

সে এখন আর আগের মত বেপরোয়া গতিতে লরি চালায় না। রাতে কম চলে, দুপুরে থামে বেশি। হেলপাররা ভাবে, “বুড়া হয়ে গেছে।” কিন্তু আসলে, মুলির মধ্যে এখন একটা ধীরে ধীরে পুড়তে থাকা অভিযুক্ত সময় জমে আছে।

প্রতিটা বাঁকে সে এখন দেখে। “এই জায়গাটা সেই নয় তো?” প্রতিটা বৃদ্ধ রিকশায় চড়লে সে খেয়াল করে, পা কাঁপছে কিনা। একবার তো গাড়ি থামিয়ে এক বৃদ্ধকে রাস্তা পার করিয়েছে। হেলপার অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,

“কীরে ভাই, কী হলো?” সে কেবল বলে, “বৃদ্ধরা জানে না, কার গাড়ি কত পাপ নিয়ে চলে।
একদিন, হঠাৎ করেই এক ছেলেকে লরি চাপা দেয় মুলি।

নতুন হেলপার তখন স্টিয়ারিং ধরেছিল, কিন্তু মুলিই ছিল তত্ত্বাবধানে। ছেলেটি ছিল মানসিকভাবে অক্ষম। হঠাৎ করে রাস্তা পার হতে গিয়েছিল।

চারদিকে হৈ চৈ পড়ে যায়। পুলিশ আসে, গ্রামবাসী ঘিরে ধরে। এক বৃদ্ধ লোক বলে,
“এই চালক আগে এক বৃদ্ধকেও মেরেছিল, শুনছি।”

মুলির মুখ তখন পাথরের মতো। সে পালায় না। দাঁড়িয়ে থাকে। এক পুলিশ অফিসার বলে, “তুমি দায়ী না সরাসরি। কিন্তু তোমাকে আটকাব তদন্তের জন্য।” মুলিকে থানায় নেওয়া হয়। থানার একটি ছোট কক্ষে সে বসে থাকে একা। চোখ বন্ধ করলে, আরেকটা কক্ষ মনে পড়ে। লরির ভেতরের কেবিন। চোখ খুললে দেখে, সামনে দেয়ালে টাঙানো একটা আয়না।

নিজের চোখের দিকে তাকায়। মনে পড়ে সেই রাত। বৃদ্ধ’র মুখ। তারপর মনে পড়ে তার বাবার কথা। “মানুষ হবি, গায়ের আকারে না, মনে। মুলি এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে। তিনদিন থানায় থেকে যায়। চতুর্থ দিন সকালে, ছেলেটির মা থানায় আসে। বিপরীত দিক থেকে ধীর পায়ে হেঁটে এসে দাঁড়ায় মুলির সামনে। চোখে পানি নেই। ঠোঁটে শুকনো দাগ।

“শুনছি তুমি খারাপ না। এক বৃদ্ধকেও নাকি একা দাফন করছিলে একসময়। ছেলেটা আমার ছিল না ঠিক করে, আমরাই তাকে পালতাম। এখন নাই। বাকি জীবন তুমিও বোঝা বইবা।” মুলি কিছু বলে না। নারীটি চলে যায়। সেই রাত, ছাড়া পেয়ে মুলি আবার লরি চালায়। কিন্তু এবার গন্তব্য নির্দিষ্ট।

সে সোজা চলে যায় সেই জায়গায়Ñ যেখানে কোরবান বৃদ্ধ’কে পিষেছিল। বছর সাতেক আগের ঘটনা। গাছটা এখনও আছে। আগের কাপড়টা নেই। সে এবার পকেট থেকে এক নতুন কাপড় বের করে। তাতে হাত দিয়ে লেখে। “আমি বুঝি। আপনি চুপ ছিলেন, আমি আর চুপ থাকতে পারি না।”

গাছের শাখায় কাপড় বেঁধে সে দাঁড়িয়ে থাকে অনেকক্ষণ। তারপর হাঁটু গেড়ে বসে, মাটি ছুঁয়ে বলে: “আপনি যদি কোথাও থাকেন, একবার শুধু বলেন। চালাতে পারবো কিনা।” কোনো উত্তর আসে না। কিন্তু বাতাসটা হালকা হয়। গাছের পাতাগুলো হালকা নড়ে।

মুলি উঠে দাঁড়ায়। চোখের নিচে ক্লান্তির রেখা, তবু বুকটা হালকা। মুলি আজও লরি চালায়। কিন্তু লরি চালানো এখন তার কাজ না, তার ক্ষমা প্রার্থনার উপায়। প্রতিবার স্টিয়ারিং ধরার আগে সে আয়নায় দেখেÑ নিজের মুখ, নিজের দায়, নিজের পাপ।

 

তোজাম্মেল আযম
লেখক ও সাংবাদিক




২৪ এর গণ-অভুত্থ্যান ছিল অবধারিত: মনির হায়দার

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট যে গণ-অভ্যুত্থান ঘটেছিল, সেটি ছিল অবধারিত—এমন মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। তিনি বলেন, “এটার কোনো বিকল্প ছিল না। এটা ঘটবার জন্য যা যা করার, তার ষোল কলা পূর্ণ করেছিল বিগত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা।”

গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে আটটায় মেহেরপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে “গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী মেহেরপুর: আজ ও আগামী” শীর্ষক এক সুধীজন সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

সভায় সভাপতিত্ব করেন, মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক সিফাত মেহনাজ। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, মেহেরপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক তরিকুল ইসলাম, সদর উপজেলা, নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ খায়রুল ইসলাম অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামিলুর রহমান খান, মেহেরপুর জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা তাজ উদ্দিন খান, সদর উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মারুফ আহমেদ বিজন, এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক শাকিল আহমেদ, সরকারি পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মোখলেসুর রহমান খান স্বপন, মেহেরপুর জেলা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আতিফ আহমেদ, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সদস্য সচিব মুজাহিদুল ইসলাম প্রমুখ।

সভায় বক্তারা গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী পরিস্থিতি, মেহেরপুরের উন্নয়ন সম্ভাবনা, এবং আগামী দিনের করণীয় নিয়ে আলোচনা করেন।




পৌর বিএনপি’র নতুন সভাপতি মেঘলা, সম্পাদক সাইদুল

দীর্ঘ ১৬ বছর পর উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হলো মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা ও পৌর বিএনপি’র দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিল। গতকাল শুক্রবার সকাল ১১টায় গাংনী পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন ও পাইরা উড়িয়ে কাউন্সিলের উদ্বোধন করা হয়।

কাউন্সিলের প্রধান অতিথি ছিলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ সোহরাব হোসেন। উদ্বোধন ঘোষণা করেন, মেহেরপুর জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক জাভেদ মাসুদ মিল্টন।

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, জেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট কামরুল হাসান, সদস্য আলমগীর খান সাতু, ইলিয়াস হোসেন, আব্দুল্লাহ, হাফিজুর রহমান হাফি, হামিদুল হক, রেজাউল হকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ছিলেন, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক কাউছার আলী। সভাপতিত্ব করেন, গাংনী উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম।

উপজেলা কমিটির সভাপতি হিসেবে রায়পুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আলফাজ উদ্দিন কালু এবং সাধারণ সম্পাদক পদে বামুন্দি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়াল হোসেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এদিকে কাউন্সিলরদের গোপন ভোটে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে বিজয়ী হয়েছেন আবদাল হক (হরিন) ৪০৯ ও মনজুর হোসেন টনিক (টিউবওয়েল) ৩৬০ ভোট।
এদিকে পৌর বিএনপি’র কাউন্সিলে ছিল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন। মোট ভোটার ছিলেন ৬৩৯ জন। সভাপতি পদে মকবুল হোসেন

মেঘলা (আনারস) ৫০৩ ভোট পেয়ে সভাপতি নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আতিয়ার রহমান (চেয়ার) পান ৫৬ ভোট এবং মনিরুজ্জামান গাড্ডু (ছাতা) পান ৫৪ ভোট। এছাড়া ২৬টি ভোট বাতিল হয়।

সাধারণ সম্পাদক পদে সাইদুল ইসলাম (ফুটবল) ৩৯৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। আব্দুল্লাহ হিল মারুফ পলাশ (মোরগ) পান ২১৫ ভোট। ৩০টি ভোট বাতিল হয়। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে অ্যাডাম সুমন (টিউবওয়েল) ৪৫২ ভোট, ইমন হোসেন (হরিণ) ৩৩৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়। এখানে ১৯টি ভোট বাতিল হয়।




গাজীপুরে সাংবাদিক তুহিন হত্যার প্রতিবাদে দর্শনা প্রেসক্লাবে প্রতিবাদ সভা

দর্শনা প্রেসক্লাবে ঢাকার গাজীপুরে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যার প্রতিবাদে দর্শনা প্রেসক্লাবের উদ্যোগে এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাত ৮টায় দর্শনা প্রেসক্লাব কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় সভাপতিত্ব করেন, প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকরামুল হক পিপুল।

এ প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন, দর্শনা প্রেসক্লাবের সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আওয়াল হোসেন, সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাসুম বিল্লাহ, সহ-সভাপতি কামরুজ্জামান যুদ্ধ, প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মনিরুজ্জামান ধীরু, সাবেক সভাপতি জাহিদুল ইসলাম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব মামুন।

এছাড়া উপস্থিত ছিলেন, অর্থ-সম্পাদক ফরহাদ হোসেন, সাংবাদিক হাসমত আলী, ওয়াসিম রয়েল, আব্দুল হান্নান, রিফাত হোসেন ও শ্রী কমল বাঁধন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন, দর্শনা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান সুমন।




আলমডাঙ্গা উপজেলা বিএনপি’র কর্মিসভায় শামসুজ্জামান দুদু

আলমডাঙ্গা উপজেলা বিএনপি’র কর্মিসভায় উপস্থিত ধানের শীষের বার্তা পৌঁছাতে নেতা কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানালেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব শামসুজ্জামান দুদু।

আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণাকে বিএনপি’র বিজয় অর্জন বলে মন্তব্য করেছেন শামসুজ্জামান দুদু। শুধু নির্বাচনের ঘোষণা নয়, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় বিএনপি। সেইসাথে নির্বাচনের জন্য সবধরণের প্রস্তুতি নিতে নেতা কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপি’র এই কেন্দ্রীয় নেতা। গতকাল বিকেল ৪ টার দিকে আলমডাঙ্গা উপজেলা পরিষদ মঞ্চে উপজেলার বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দের মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব বলেন।

শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে সরকার তাদের কাজ করছে, এখন আমাদের কাজ আমাদের করতে হবে। দেশের প্রতিটি গ্রামে-গঞ্জে গিয়ে ধানের শীষের বার্তা পৌঁছে দিতে হবে। জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থান ছিল একদলীয় শাসনের বিরুদ্ধে জনগণের একটি সুস্পষ্ট বার্তা। সেই ইতিহাস আজ আমাদের নতুন প্রেরণা জোগায়—গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের চলমান লড়াইয়ে।

তিনি আরও বলেন, তারেক রহমানের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বিএনপি’র এই অবস্থান তৈরি হয়েছে। আমরা চাই একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। সে লক্ষ্যে বিএনপি প্রস্তুত। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে এবং বিজয়ী হবে।

বিএনপি’র এই শীর্ষ নেতা আরও বলেন, ‘দলের অসংখ্য নেতাকর্মী নির্ভীকভাবে জীবন উৎসর্গ করেছেন। তাদের নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগ ও দেশের প্রতি অবদানের প্রতি আমরা গভীর শ্রদ্ধা জানাই। হাজার হাজার নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে মতবিনিময় সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন, উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি জননেতা শহিদুল কাওনাইন টিলু। বিশেষ অতিথি ছিলেন, জেলা বিএনপি’র নেতা অহিদুজ্জামান বুলা, এডভোকেট ডালিম, রতন, উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আশিরুল ইসলাম সেলিম। উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ সাইফুল ইসলামের সার্বিক পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন, উপজেলা বিএনপি নেতা বোরহান উদ্দিন, আনিসুর রহমান, নাসির উদ্দিন, মাগরিবুর রহমান, সকল ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। মতবিনিময় সমাবেশে পৌর বিএনপিসহ উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।




দর্শনা পৌর বিএনপি’র বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি

“গাছ লাগান পরিবেশ বাঁচান” এ স্লোগানকে সামনে রেখে দর্শনা সরকারি কলেজ ও দর্শনা পরানপুর সড়কে বৃক্ষরোপণ করলেন দর্শনা পৌর বিএনপি’র সমন্বয় কমিটির প্রধান হাবিবুর রহমান বুলেট।

এ বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির ভিতরে ছিল দর্শনের প্রাণকেন্দ্র চটকা গাছ সহ অন্যান্য গাছ সমুহ হতে ব্যানার ফেস্টুন অপসারণ ও বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি। এ কর্মসূচিতে বিভিন্ন প্রকার বনজ ও ফলজ গাছ রোপন করা হয়।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, দর্শনা পুরাতন বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক সোহেল তরফদার, দর্শনা পৌর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও যুবদল নেতা বাবুল আক্তার, স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবু সাঈদ রতন, দর্শনা পৌর ছাত্রদলের অন্যতম সদস্য ও ৫ নং ওয়ার্ড ছাত্রদলের সভাপতি শেখার শাওন, ছাত্রদলের সদস্য আলামিন, জুয়েল, উজ্জল, প্রান্ত, জিম, তৌফিক, তিতাস, আকাশ,সিয়াম, তৌহিদ, রিফাত প্রমুখ।




বাল্যবিবাহের আসরে ইউএনও’র হানা; বর কারাগারে, ভগ্নিপতির জরিমানা

শতাধিক বরযাত্রী, মাংস-ভাতের আয়োজন আর আপ্যায়নের তোড়জোড়—সব প্রস্তুত। বাকি শুধু কাবিননামায় স্বাক্ষর। এমন মুহূর্তে উপস্থিত হয়ে সপ্তম শ্রেণির এক কিশোরীর বাল্যবিবাহ বন্ধ করে দেন মেহেরপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ খায়রুল ইসলাম।

ঘটনাটি ঘটে গতকাল শুক্রবার দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে, সদর উপজেলার মদনা ডাঙ্গা গ্রামে। মাত্র ১৪ বছর বয়সী ওই মেয়েটি স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তাকে বিয়ের জন্য পাত্র হিসেবে আনা হয়েছিল একই উপজেলার খোকসা গ্রামের রাহিদুল শেখের ছেলে রাব্বি রাসেল (১৮)-কে। অথচ বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭ অনুযায়ী, ছেলের ন্যূনতম বয়স হতে হয় ২১ বছর, আর মেয়ের ১৮ বছর না হলে বিয়ে করা অবৈধ।

গোপন সূত্রে তথ্য পেয়ে ছদ্মবেশে কনের বাড়িতে উপস্থিত হন ইউএনও খাইরুল ইসলাম। ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনি বিয়ের পূর্ণ প্রস্তুতি দেখতে পান। কিছু বরযাত্রী বাড়িতে, বাকিরা ছিলেন মসজিদে জুমা’র নামাজে। পরিকল্পনা ছিল নামাজের সময়েই হঠাৎ করেই বিয়ে সম্পন্ন করে ফেলা। তবে প্রশাসনের উপস্থিতিতে সে পরিকল্পনায় পানি পড়ে যায়।

ইউএনও ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে খবর দেন মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার প্রতিনিধি, সমাজসেবা কর্মকর্তা, পুলিশ এবং ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্যদের। পরে ঘটনাস্থলে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে বর রাব্বি রাসেলকে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের বিভিন্ন ধারা লঙ্ঘনের দায়ে সাত দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন। এছাড়া বিয়ের অন্যতম উদ্যোক্তা হিসেবে উপস্থিত রাব্বির ভগ্নিপতি সজিব আলী (আমঝুপি) কে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এসময় কনের মা-বাবাকে সতর্ক করে লিখিত মুচলেকা নেওয়া হয়েছে। মেয়েটি প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত যেন কোনোভাবেই পুনরায় বিয়ের আয়োজন না করা হয়, সে বিষয়ে একজন স্থানীয় শিক্ষককে বিশেষ নজরদারির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অভিযান শেষে স্থানীয় জনগণকে একত্র করে ইউএনও বাল্যবিবাহের কুফল ও আইনগত পরিণতি সম্পর্কে সচেতন করেন।

মেহেরপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘গোপন তথ্যের ভিত্তিতে এই অভিযান চালানো হয়েছে। কৌশলে বিয়ের আয়োজন সম্পন্ন করার চেষ্টা চলছিল। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে তা বন্ধ করেছি এবং প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। শুধু আইন প্রয়োগ নয়, সমাজে সচেতনতা তৈরি করাও জরুরি।’




কুতুবপুরে ধর্মগুরু নিগামানন্দের ১৪৬ তম জন্মোৎসব পালিত

হিন্দু ধর্মীয় গুরু নিগমানন্দ সরস্বতীর ১৪৬ তম বার্ষিক সার্বভৌম জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে তিনদিন ব্যাপি আয়োজিত নানা কর্মসূচিতে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার ভক্ত অনুরাগীদের পদচারনায় এখন মুখরিত তার জন্মতিথি মেহেরপুরের কুতুবপুরে। সকাল থেকেই বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার নারী পুরুষ ও শিশুরা আসছেন।

তন্ত্র, জ্ঞান, বেদান্ত, যোগ, ভক্তি বা প্রেম দর্শন নিয়ে শ্রীচৈতন্য ও শংকরের দর্শনের সমন্বয়ে একটি নতুন ধর্মমত প্রচার করেন। স্বামী নিগমানন্দ পরমহংস” যিনি “স্বামী নিগমানন্দ সরস্বতী পরমহংস” নামেও পরিচিত ছিলেন। আধ্যাতিক এই ধর্মগুরুর ভক্ত অনুরাগী রয়েছে ভারত, নেপাল, ভুটান, মায়ানমার, শ্রীলংকা, আস্ট্রেলিয়া আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এসেছেন হাজার হাজার নারী-পুরুষ। সাঁথে এনেছেন শিশুদেরকেও।

ভক্তরা জানান, এহকালের সব কিছুই বিলিয়ে দিয়েছি গুরুর চরনে। ভালমন্দ সবই তার কৃপা। এখানে আসতে পেরে নিজেকে পাপ মুক্ত হয়েছেন বলে মনে করছেন ভক্তরা।

রাজশাহী থেকে এসেছেন ডাক্তার সুকর্ণ ঘোষ,তিনি বলেন অনেক ছোট বেলা থেকে তিনি কুতুবপুর আশ্রমে আসেন পরিবারের সাথে। মনের অজান্তে সেই থেকেই গুরুর পায়ে নিজেকে সোপর্দ করেছি। সারা জীবন প্রতি বছরেই এখানে এসে গুরুকৃপা নিতে চাই।

যশোরের কলেজ শিক্ষার্থী পুষ্পিতা ঘোষ জানান, আধ্যাত্মিক ও মনস্তাত্ত্বিক ইশ্বরের নৈকট্য প্রাপ্ত ছিলেন শ্রী নিগামানন্দ। মেহেরপুরের কুতুবপুর ছিল তার বসতভিটা। এখানে আসতে পেরে নিজেকে আত্নশুদ্ধির সুযোগ হয়েছে। তবে নিগামানন্দের বসতভিটার জমিজমা এখন বেদখল। সেই সমস্ত জমিজমায় অনেক ইতিহাস ও গুরুর স্মৃতি জড়িয়ে আছে। সরকারের কাছে সেগুলি উদ্ধারের দাবী জানান এই অনুসারী।

আশ্রমের ট্রাস্টি সদস্য নব কুমার জানান, প্রতি বছর এখানে দেশের ৬৪ জেলা থেকে অনুসারীরা আসেন। বিদেশ থেকেও আসেন অনেকে। প্রায় বিশ হাজার অনুসারীরা এখানে জমায়েত হয়ে প্রার্থনায় মিলিত হন। অনেক সময় নিরাপত্তা নিয়ে শংকা থাকে। অনুসারীদের নিরাপত্তা খাদ্য সরবারাহে সরকারের উদ্যোগ নেয়ার দাবী করেন তিনি।

তিনদিন ব্যাপি এই আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়েছেন, সমগ্র ভারত বর্ষের নিগামনন্দ ট্রাস্টের সভাপতি ভারতের আসাম রাজ্যের সভাপতি স্বামী দিগানন্দ স্বরসতি। তিনি বলেন, ধর্মের লক্ষ এক, মানুষের প্রেম এক, ইশ্বর এক, আল্লাহ এক। শুধুমাত্র পাওয়া ও চাওয়ার রাস্তা ভিন্ন। আমরা সবাই একই পথের যাত্রী।




চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি’র সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মজিবুল হক মালিক (মজু) আর নেই

চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি’র সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক এবং প্রবীণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মজিবুল হক মালিক মজু (৬৩) আর নেই। আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

মজিবুল হক মালিক (মজু) ছিলেন, চুয়াডাঙ্গা শহরের পুরাতন ঝিনাইদহ বাসস্ট্যান্ড এলাকার বাসিন্দা। তিনি মরহুম এহসানুল হক মালিকের জ্যেষ্ঠ পুত্র। রাজনীতির মাঠে দীর্ঘদিন সক্রিয় থেকে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র রাজনীতিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। বিশেষ করে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে তিনি সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ১ ছেলে ও ২ মেয়ে রেখে গেছেন।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. আব্দুল কাদের জানান, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মজিবুল হক মালিক মজু নামের একজনকে অজ্ঞান অবস্থায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়। আমরা তাকে মৃত্ অবস্থায় পেয়েছি।

তার মৃত্যুতে চুয়াডাঙ্গার রাজনৈতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি’র সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু ও সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান শরীফসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, হঠাৎ অসুস্থতাবোধ করলে তাঁকে তাৎক্ষণিকভাবে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

তার জানাজার নামাজের সময় ও স্থান পরে জানানো হবে বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।