মেহেরপুরে স্বেচ্ছাসেবক দলের বিক্ষোভ মিছিল

সারাদেশে প্রশাসনের নির্লিপ্ততায় ক্রমাগত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার প্রতিবাদে মেহেরপুরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপির অঙ্গসংগঠন স্বেচ্ছাসেবক দল।

মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) বিকেল ৪টার দিকে মেহেরপুর জেলা বিএনপি কার্যালয় থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে শেষে পুনরায় দলীয় কার্যালয়ে এসে শেষ হয়।

বিক্ষোভ মিছিলে নেতৃত্ব দেন কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মোমিন। এছাড়াও মিছিলে উপস্থিত ছিলেন মেহেরপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আজমুল হোসেন মিন্টু, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মাহফুজ হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক ফিরোজুর রহমান ফিরোজ, ইলিয়াস হোসেন, সজীব, ইকবাল হোসেন, রাকিবুল ইসলাম সজলসহ অঙ্গসংগঠনের অন্যান্য নেতাকর্মীরা।

বক্তারা বলেন, দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। প্রশাসন ও সরকার মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের দমন করছে। তারা অবিলম্বে এই অরাজক পরিস্থিতির অবসান এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানান।




মেহেরপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘জুলাই স্বরণ’ অনুষ্ঠান পালিত

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ‘জুলাই স্মরণ’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও যোদ্ধাদের সম্মাননা প্রদান করেছে মেহেরপুর বিশ্ববিদ্যালয়।

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১ দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপাচার্যের একান্ত সচিব ড. তারিক আজিজ।

প্রধান বক্তা ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শেখ বখতিয়ার উদ্দীন। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মেহেরপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. নজরুল কবীর, সরকারি মহিলা কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুল্লাহ আল আমিন ধুমকেতু, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব বিভাগের পরিচালক শেখ মুস্তাক আলী, সরকারি কলেজের শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক ও বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান খেজমত আলী মালিথ্যা, জেলা পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি ইন্সপেক্টর বজলুর রহমান, আহত যোদ্ধা খন্দকার মুয়িজ উদ্দীন ও নাজমুল হক।

আরো উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক ফুয়াদ খান, ইসলামের ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাউছার আলী, মুক্তিযোদ্ধা আহাম্মদ আলী টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজের সিনিয়র লেকচারার রফিকুল আলম বকুল, আহত যোদ্ধা হাসনাত জামান, আল মেহেবুব ও ইব্রাহিম হোসেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে আহত যোদ্ধাদের ফুল ও ক্রেস্ট দিয়ে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

উপাচার্য তার বক্তব্যে বলেন, জুলাই বিপ্লব ছিল বৈষম্যহীন একটি রাষ্ট্রের স্বপ্ন। আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত সকল প্রকার বৈষম্য দূর করে একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা।” তিনি শিক্ষার্থীদের সচেতন হয়ে নিজেদের অধিকার রক্ষায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান এবং জুলাই বিপ্লবের শহীদদের রুহের মাগফিরাত ও আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন।

অনুষ্ঠান শেষে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।




মুজিবনগরে যৌথবাহিনীর অভিযানে ওয়ান শুটার গান ও ৩৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামে যৌথবাহিনীর অভিযানে একটি ওয়ান শুটার গান ও ৩৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) ভোররাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শিবপুর গ্রামের জাকের গাইনের ছেলে আলম গাইনের বাড়িতে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।

অভিযানকালে যৌথবাহিনী আলম গাইনের ঘরের সামনে ধানের গোলার ভেতর থেকে অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করে।

মুজিবনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মিজানুর রহমান জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে যৌথবাহিনী এই অভিযান চালায়। অভিযানে একটি ওয়ান শুটার গান ও ৩৮ রাউন্ড গুলি জব্দ করা হয়েছে। তবে অভিযুক্ত আলম গাইন অভিযান শুরুর আগেই পালিয়ে যায়।

ওসি আরও জানান, পলাতক আসামিকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।




ঝিনাইদহে নদীতে গোসলে নেমে দুইদিন ধরে নিখোঁজ শিশু

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে পানিতে লাফ দিয়ে নাঈম (৯) নামের তৃতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থী নিখোঁজ রয়েছে। গত দুইদিন অতিক্রম হলেও তার কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। সোমবার ও মঙ্গলবার ফায়ার সার্ভিস ও এলাকাবাসি তন্ন তন্ন করে খুজেও তাকে উদ্ধার করতে পারেনি। নিখোঁজ শিশু কালীগঞ্জ উপজেলার মাসলিয়া গ্রামের সবজি বিক্রেতা মহিদুল ইসলামের ছেলে।

স্থানীয়রা জানান, সোমবার (১৪ জুলাই) দুপুরে গোসল করতে বাড়ির পাশের বুড়ি ভৈরব নদীর হাসিলবাগ ব্রীজের উপর থেকে পানিতে লাফ দেয় নাঈম। এসময় তার সাথে অন্য বন্ধুরা ছিল। সবাই পানি থেকে উঠে আসলেও নিখোঁজ হয়ে যায় নাঈম। পরে ঘটনাটি জানাজানি হলে স্থানীয়রা খোঁজাখুঁজি করেও ব্যর্থ হয়।

খবর দেওয়া হয় কালীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসকে। তারাও উদ্ধার অভিযান শুরু করে। ফায়ার সার্ভিসের খুলনার ডুবুরি দলও যোগ দেয় উদ্ধার অভিযানে। প্রথম দিন তাকে না পেয়ে রাত ৮টার দিকে উদ্ধার অভিযান বন্ধ করে দেয়।

মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) সকাল থেকে আবারও উদ্ধার অভিযান শুরু করে। উদ্ধার অভিযানে তাদের সাথে যোগ দেয় স্থানীয়রা। তবে, পানিতে স্রোত ও প্রচুর কচুরিপানা থাকায় উদ্ধার অভিযানে বিঘ্ন ঘটছে বলে জানান ডুবুরি দল। তবে বিকালে এ রিপোর্ট লিখার আগ পর্যন্ত শিশুটির কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি।

কালীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের ভারপ্রাপ্ত স্টেশন অফিসার রবিউল ইসলাম জানান, উদ্ধার অভিযান অব্যহত রয়েছে। তবে নদীতে অতিরিক্ত কচুরিপানা থাকায় তাকে খুঁজে পেতে সমস্যা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে পানির স্রোতে মরদেহ সরে গিয়ে কোন কচুরিপানার মধ্যে আটকে থাকতে পারে।




দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসেছে মিলন বিশ্বাস

বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়ে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন নিয়ে প্রতিনিয়তই দেশের যুবকেরা বৈধ-অবৈধ পথে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমান। সরকার বারবার বিভিন্ন মাধ্যমে বৈধ পথে বিদেশ যেতে উৎসাহিত করলেও একশ্রেণীর দালালদের খপ্পরে পড়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে স্বপ্নের দেশে যেতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদেশ পাড়ি জমান তরুণরা।

ভাগ্য সহায় হলে বিভিন্ন দেশের কাঁটাতার ফাঁকি দিয়ে পৌঁছাতে পারেন স্বপ্নের দেশে। আর কারো ভাগ্য সহায় না হলে লাশ ফিরে আসে দেশে, কেউবা ফেরে নিঃস্ব হয়ে। এমনই এক ভুক্তভোগী মিলন বিশ্বাস। উন্নত জীবন যাপনের আশায় মানব পাচারকারী মাফিয়া গ্রুপের প্রলোভনে পড়ে নিজের শেষ সম্বল টুকু দালালের হাতে তুলে দিয়ে পথে পথে ঘুরছে মিলন বিশ্বাস (৪৫) নামের এক ভুক্তভোগী। মিলন বিশ্বাস মেহেরপুর সদরের বারাদী গ্রামের বাসিন্দা এবং চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা থানাধীন খাদিমপুর গ্রামের আলাউদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে।

জানা যায়, গত ২০২৩ সালে সদর উপজেলার বলিয়ারপুর গ্রামের চান্দালীর ছেলে উজ্জ্বল নামের এক দালালের সাথে কথা হয় মিলন বিশ্বাসের। পানি পথে লিবিয়া থেকে ইতালি নিয়ে যাবে এবং মোটা অংকের বেতনের স্বপ্ন দেখায়। দালালের কথাতে মন গলে তার, উন্নত ভবিষ্যৎ কে না চাই? এক পর্যায়ে দালালের কথায় রাজি হয়ে চুক্তিবদ্ধ হয় দুজনে। ১৫ দিনের মধ্যে লিবিয়া থেকেই ইতালি নিয়ে যাবে এই মর্মে ১০ লাখ টাকায় চুক্তি হয়। পরবর্তী সময়ে মাফিয়াদের সহযোগিতায় বাংলাদেশ থেকে দিল্লি হয়ে দুবাই যান মিলন বিশ্বাস, সেখান থেকে পৌঁছায় লিবিয়ার তব্রুক শহরের এক গেম ঘরে। ওখানে পৌঁছানোর পরেই ১০ লাখ টাকা শোধ করে নেয় উজ্জ্বল । আর এভাবেই সেখানে গিয়ে দেখা মেলে মেহেরপুর সদরের কলাডাঙ্গা গ্রামের আনারুল ইসলামের ছেলে রুবেল, হান্নানের ছেলে সোহাগ, হাকিমের ছেলে হাসিব, রুহুলের ছেলে হোসাইন সহ বাংলাদেশ থেকে যাওয়া প্রায় ২০০ জনের সাথে। সকলে একই পথের যাত্রী। সকলেই পানিপথে ইতালি যাবে সেই আশায় সহায় সম্বল বিক্রি করে টাকা দেয় দালালদের হাতে। লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর শুরু হয় দালালদের তালবাহানা। ১৫ দিনের কথা বলে সেখানে নিয়ে গেলেও মাসের পর মাস সাহারা মরুভূমির সেই গেম ঘরে তাদেরকে আটকিয়ে রাখা হয় ।

সেখান থেকে অস্তিঃসারশুন্য দেহ নিয়ে কোনরকম প্রাণে ফিরে অবর্ণনীয় নির্যাতনের কাহিনী বলেন মিলন বিশ্বাস।

তিনি বলেন, গেম ঘরের অন্ধকার ছোট্ট কামরায় গাদাগাদি করে থাকতে হতো আমাদের। প্রতিটি কক্ষে ১০-১৫ জন ফ্লোরিং করে থাকতাম। তিন বেলা খাবার জুটতো না, অনাহারে অর্ধহারে কতদিন কাটিয়েছি তার হিসেব নাই। সেখান থেকে মাফিয়াদের হাতে তুলে দিয়ে বাড়ি থেকে টাকা আনতে বলে। নয়তো প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিত। কারণে-অকারণে মারধর ও শারীরিক নির্যাতন চালাতো। প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে আবারও বাড়ি থেকে কয়েক দফায় ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা দেয়া হয় মাফিয়াদের হাতে। পরবর্তীতে তারা গেমে পাঠানোর নাম করে নিয়ে গিয়ে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেয়। পুলিশ সবাইকে নিয়ে গিয়ে জেলে ভরে দেয়। লিবিয়ার বেনগাজী গানফুদা জেলে দুই মাস ছিলাম। সেখানে চলে অবর্ণনীয় নির্যাতন। সারাদিনে একবার খুবই অল্প পরিমাণে ভাত খেতে দিত, দুইবার দিত দুই রুটি, ছিল খাবার পানির সংকট । সেখানে নিয়মিত চলতো পুলিশের মাইর, বিদ্যুতের শক ও বুটের লাথি। সেখানকার নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে অনেকেই বেছে নেয় আত্মহত্যার পথ। ছোট্র কামরায় শোয়ার কোন ব্যবস্থা নাই, নেই গোসলের স্থান। ১৫ দিনেও একবার গোসল হতো না। গরমে অনেকেই চর্মরোগ সহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়।

পরবর্তীতে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম) এর সহযোগিতায় সকল বন্দীদের মুক্ত করে দেশে পাঠিয়ে দেয়। আমি এক বছর ১০ মাস পর গত ২৮শে মে ২০২৫ কোন রকম প্রাণ নিয়ে রোগাক্রান্ত হয়ে দেশে ফিরি। আমি এই সকল দালাল ও মানব পাচারকারী মাফিয়াদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও আমার ক্ষতিপূরণ সহ সঠিক বিচার চাই।

আর এভাবেই দালাল চক্রের মিথ্যা প্রলোভনে পড়ে হাজারো তরুণের স্বপ্ন ভঙ্গ হচ্ছে। অনেকেই নিঃস্ব হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন পরিবারের বোঝা হয়ে।

প্রসঙ্গতঃ মানব পাচারকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে আইনের পথে হাঁটছেন মিলন বিশ্বাস।




গুপ্ত সংগঠনের অপচেষ্টার প্রতিবাদে মেহেরপুরে ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে মেহেরপুর জেলা ছাত্রদল বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করে। দীর্ঘদিন ধরে গোপন তৎপরতায় অভ্যস্ত একটি গুপ্ত সংগঠন কর্তৃক জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সুষ্ঠু পরিবেশ বিনষ্ট এবং সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রতিবাদে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।

জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বিপ্লবের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিলে অংশগ্রহণ করেন জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি জুয়েল রানা, মেহেরপুর পৌর ছাত্রদলের সদস্য সচিব জারজীস ইউসুফ রমিক, মেহেরপুর সরকারি কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক ফাহিম আহনাফ লিংকন, গাংনী উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব রিপন হোসেন, গাংনী পৌর ছাত্রদলের সদস্য সচিব শিশির আহমেদ শাকিলসহ বিভিন্ন ইউনিটের নেতৃবৃন্দ।

ছাত্রদলের নেতারা অভিযোগ করেন, একটি স্বার্থান্বেষী মহল শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা সৃষ্টির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ ধ্বংসের পাঁয়তারা চালাচ্ছে। তারা এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।




পরিবার পরিকল্পনায় বিশেষ অবদানে শ্রেষ্ঠ উপজেলা নির্বাহী অফিসার হলেন খায়রুল ইসলাম

পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমে বিশেষ অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ মেহেরপুর সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার মো. খায়রুল ইসলামকে জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে।

সোমবার (১৪ জুলাই) বিকেলে মেহেরপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়।

এর আগেও ২০২৫ সালের জুন মাসে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যক্রমে বিশেষ ভূমিকার জন্য তাঁকে শ্রেষ্ঠ ইউএনও হিসেবে সম্মাননা দেওয়া হয়েছিল। এবার পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় দ্বিতীয়বারের মতো তিনি এই গৌরব অর্জন করলেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক সিফাত মেহনাজ। তিনি ইউএনও মো. খায়রুল ইসলামের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন।

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন সিভিল সার্জন ডা. একেএম আবু সাঈদ, জেলা শিক্ষা অফিসার হযরত আলী, জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক রাশেদুল বশির খানসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ।




মেহেরপুরে এরশাদের ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী পালন

হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মেহেরপুরে স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সোমবার (১৪ জুলাই) বিকাল ৪টায় মেহেরপুর শহরের বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাদীসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আব্দুল হামিদ।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা জাতীয় পার্টির সিনিয়র সহ-সভাপতি কেতাব আলী, সদর উপজেলা সভাপতি কুতুব উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, গাংনী উপজেলা সভাপতি বাবলু হোসেন, সাধারণ সম্পাদক জান মোহাম্মদ মিন্টু, পৌর সভাপতি আক্তার হোসেন, মটমুড়া ইউনিয়ন সভাপতি আব্দুস সালাম, সার্বিক সহযোগিতা জাতীয় পার্টির নেতা সেলিম রেজাসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা।

অনুষ্ঠানে এরশাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।




গাংনীতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যু

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার চৌগাছা গ্রামে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে স্বামী-স্ত্রীর করুণ মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন ওই গ্রামের মৃত আজিজুল হকের ছেলে রাজমিস্ত্রি গোলাম কিবরিয়া (৫৫) ও তার স্ত্রী রিনা খাতুন।

সোমবার (১৪ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে নিজ বাড়িতে এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। তারা রেখে গেছেন তিনটি ছোট মেয়ে সন্তান।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পাশের বাড়ি থেকে আসা একটি ছেঁড়া বৈদ্যুতিক তার অসাবধানতাবশত একটি বাইসাইকেলের সঙ্গে জড়িয়ে ছিল। সেই বাইসাইকেলটি আনতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন রাজমিস্ত্রি গোলাম কিবরিয়া। চিৎকার শুনে স্ত্রী রিনা খাতুন ছুটে এসে তাকে বাঁচাতে গেলে তিনিও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন।

দুজনই অচেতন হয়ে পড়লে স্থানীয়রা দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে তাদের উদ্ধার করে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। কর্তব্যরত চিকিৎসক তখনই তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

গোলাম কিবরিয়া পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি ছিলেন। দিনমজুরির টাকায় চলত তাদের সংসার। তিন মেয়েকে নিয়ে তাদের ছোট্ট কিন্তু স্বপ্নভরা একটি জীবন ছিল। বাবা-মায়ের হঠাৎ এমন মৃত্যুর খবরে একরত্তি তিন শিশু মেয়ে বোবা কান্নায় ভেঙে পড়ে। আশপাশের মানুষ কেউ চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি।

স্থানীয় বাসিন্দা আবুল কাশেম বলেন, “ওরা খুব গরিব পরিবার। লোকটা রাজমিস্ত্রির কাজ করত, কষ্ট করে মেয়েগুলারে বড় করত। এখন তিনটা ছোট মেয়ে এতিম হয়ে গেল। কী হবে ওদের?”

গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বানী ইসরাইল বলেন, এটা অত্যন্ত মর্মান্তিক ঘটনা। প্রাথমিকভাবে অপমৃত্যুর মামলা রুজু করা হচ্ছে। ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।




মহেশপুর আদালত চত্বরে জাল কোর্ট ফি’র রমরমা বাণিজ্য

ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলা সিনিয়র সহকারী জজ আদালত চত্বরে জাল কোর্ট ফি’র রমরমা বাণিজ্য চলছে দীর্ঘদিন ধরে। স্ট্যাম্প ভেন্ডার ও ফটোকপির দোকানগুলোর মাধ্যমে প্রতিনিয়তই ছড়িয়ে পড়ছে জাল কোর্ট ফি। এতে সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব, আর লাভবান হচ্ছে একটি প্রভাবশালী অসাধু সিন্ডিকেট।

জানা গেছে, সম্প্রতি জমিজমা সংক্রান্ত একটি দেওয়ানি মামলার আবেদনপত্রে (আর্জিতে) লাগানো কোর্ট ফি নিয়ে সন্দেহ হলে আদালতের সিনিয়র সহকারী জজ বিচারক মেশিনের মাধ্যমে কোর্ট ফি যাচাইয়ের নির্দেশ দেন। গত ৮ জুলাই পরীক্ষা করে দেখা যায়, আর্জিতে লাগানো বেশির ভাগ কোর্ট ফি জাল। এসব কোর্ট ফিতে কোনো সরকারি জলছাপ, সিরিয়াল নম্বর কিংবা বৈধতা নিশ্চিতকরণ চিহ্ন মেলেনি।

এই ঘটনায় আদালতের সেরেস্তাদার আবু সাঈদ বাদী হয়ে ১০ জুলাই মহেশপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা একাধিক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, আদালত প্রাঙ্গণের আশপাশে থাকা কিছু স্ট্যাম্প ভেন্ডার ও ফটোকপির দোকান থেকেই মূলত এই জাল কোর্ট ফি বাজারজাত হচ্ছে। এসব দোকানে পাঁচ, দশ ও বিশ টাকার কোর্ট ফি পাওয়া যায়। তবে বিশ টাকার কোর্ট ফিতেই বেশি পরিমাণে জাল কাগজ শনাক্ত হচ্ছে।

আইনজীবীদের সহকারীরা জানিয়েছেন, আমরা স্ট্যাম্প ভেন্ডারদের দোকান থেকেই কোর্ট ফি সংগ্রহ করি। তবে হাতে কোনো যাচাইকরণ মেশিন না থাকায় কাগজটি জাল কি না তা যাচাই সম্ভব হয় না।

এ বিষয়ে স্ট্যাম্প ভেন্ডার বাবর আলী বলেন, আমার দোকানের কোনো কোর্ট ফি এখনও পর্যন্ত জাল প্রমাণিত হয়নি। তবে এটা ঠিক, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অতিরিক্ত লাভের আশায় নকল কোর্ট ফি বিক্রি করে থাকেন। অনেকেই জানে না যে তারা জাল কোর্ট ফি কিনছেন।
সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের সেরেস্তাদার আবু সাঈদ বলেন, জাল কোর্ট ফি শনাক্ত হওয়ার পরপরই আমরা বিচারকের নির্দেশে পরীক্ষা করেছি। বেশিরভাগই জাল প্রমাণিত হয়েছে। বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়ে নিয়েছি এবং থানায় মামলা করেছি। তদন্তের জন্য পুলিশের সহায়তা চাওয়া হয়েছে।

মহেশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তদন্ত সাজ্জাদুর রহমান বলেন, আমরা ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু করেছি। আদালতের দেওয়া নমুনা কোর্ট ফি ও দোকানগুলোর কার্যক্রম খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্থানীয়রা মনে করছেন, এই সিন্ডিকেট অনেকদিন ধরেই গোপনে এই জালিয়াতি করে আসছে। প্রশাসনের নজরদারি এবং কার্যকর অভিযানের অভাবেই তারা পার পেয়ে যাচ্ছে।

এদিকে আদালত সংশ্লিষ্টরা কোর্ট ফি বিক্রির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট লাইসেন্স, যাচাইযোগ্য উৎস এবং মেশিনে পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি তুলেছেন।

সরকারি রাজস্ব ফাঁকি এবং বিচার ব্যবস্থার মতো একটি সংবেদনশীল জায়গায় এমন জালিয়াতির ঘটনায় সাধারণ মানুষ উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে।