মেহেরপুরে ভৈরব সাহিত্য সাংস্কৃতিক চত্বরের আলোচনা সভা ও কবিতা আবৃত্তি

ভৈরব সাহিত্য সাংস্কৃতিক চত্বরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে মেহেরপুরে আলোচনা সভা ও কবিতা আবৃত্তি অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শনিবার বিকেলে মেহেরপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ভৈরব সাহিত্য সাংস্কৃতিক চত্বরের সভাপতি অ্যাডভোকেট এম. আনোয়ার হোসেন।
আলোচনা সভায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সহ-সভাপতি ডাঃ এম. এ. বাশার, নূরুল আহমেদ, রফিকুল আলম এবং উপদেষ্টা মীর রওশান আলী মনা।

আলোচনায় অংশ নেন ভৈরব সাহিত্য সাংস্কৃতিক চত্বরের অন্যতম সদস্য নিলুফার বানু, কবি বাশরী মোহন দাস, আবু লায়েছ লাবলু, মোমিনুল হক প্রমুখ।
বক্তারা ভৈরব সাহিত্য সাংস্কৃতিক চত্বরের সাহিত্যচর্চা ও সাংস্কৃতিক অগ্রযাত্রার ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে কার্যক্রম পরিচালনার আশা ব্যক্ত করেন।

আলোচনা সভা শেষে অনুষ্ঠিত হয় কবিতা আবৃত্তি পর্ব। ভৈরব সাহিত্য সাংস্কৃতিক চত্বরের সাধারণ সম্পাদক মেহের আমজাদের সঞ্চালনায় কবিতা আবৃত্তিতে অংশ নেন কবি নূর আলম, এস.এম.এ. মান্নান, শাহানা ফেরদৌস লিপি, শফিকুর রহমান সেন্টু, মোমিনুল হক, শহিদুল ইসলাম কানন ও বদরুদ্দোজা বিশ্বাস প্রমুখ।




মিডফোর্ডের সামনে ব্যবসায়ীকে হত্যার প্রতিবাদে মেহেরপুরে মানববন্ধন

রাজধানীর মিডফোর্ড হাসপাতালে ব্যবসায়ী সোহাগকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যার প্রতিবাদে এবং হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে মেহেরপুরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শনিবার (১২ জুলাই) বিকেলে মেহেরপুর প্রেসক্লাবের সামনে মেহেরপুরের সর্বস্তরের ছাত্র-জনতার ব্যানারে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
এতে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ, শিক্ষার্থী এবং সচেতন নাগরিকরা অংশ নেন।

মানববন্ধনে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মেহেরপুর জেলা সমন্বয় কমিটির যুগ্ম সমন্বয়কারী আশিক রাব্বি, সদস্য হাসনাত জামান সৈকত, জুলাই আহত হাসনাত, লাল চাঁদ, রবিন, শাহেদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের হাতে একজন সাধারণ ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এটি শুধু একটি পরিবারের জন্য শোকের ঘটনা নয়, বরং দেশের প্রতিটি ব্যবসায়ীর জন্য এক ধরনের হুমকি। অবিলম্বে দোষীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তারা।

বক্তারা আরও বলেন, সোহাগ হত্যার মাধ্যমে সন্ত্রাসীরা রাষ্ট্র এবং বিচারব্যবস্থাকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে। এ ঘটনা নিছক একটি হত্যাকাণ্ড নয়, এটি জাতীয় নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার প্রশ্ন।

সমাবেশে অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড বহন করেন।




ঝিনাইদহে উন্নত চিকিৎসা সেবা চালুর দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

ঝিনাইদহ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে আইসিইউ, সিসিইউ, কিডনি ডায়ালাইসিস, এমআরআই এবং সিটি স্ক্যান সেবা চালু ও চীনের প্রস্তাবিত বিশেষায়িত হাসপাতাল দ্রুত স্থাপনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শনিবার সকালে শহরের ফ্যামেলি জোন রেস্টুরেন্টে ঝিনাইদহ উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির ব্যানারে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির সভাপতি আশরাফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী আবুল বাশার, সমাজসেবক প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম, সহ-সভাপতি আব্দুস সবুর ও আবু সালেহ মো. মুসা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাব্বির আহম্মেদ জুয়েল, অর্থ সম্পাদক তাজনুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক ফখরুদ্দিন মুন্না, শিক্ষা সম্পাদক ফারুক হোসেন, তথ্যপ্রযুক্তি সম্পাদক তারেক মাহমুদ, আইন বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল ওহাব, দপ্তর সম্পাদক আল আমিন হোসাইন, প্রচার সম্পাদক আল মিরাজসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

সংগঠনের নেতারা বলেন, ঝিনাইদহ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল জেলার মানুষের স্বাস্থ্যসেবার প্রধান আশ্রয়স্থল হলেও এখানে প্রয়োজনীয় আধুনিক চিকিৎসা সেবা নেই। আইসিইউ, সিসিইউ, ডায়ালাইসিস ইউনিট, এমআরআই ও সিটি স্ক্যানের মতো জরুরি চিকিৎসা সুবিধা না থাকায় জেলার প্রায় ২১ লাখ মানুষ উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

তারা আরও বলেন, এসব সেবা চালুর পাশাপাশি চীনের অর্থায়নে প্রস্তাবিত বিশেষায়িত হাসপাতাল দ্রুত ঝিনাইদহে স্থাপন করা সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান নেতারা।




ঝিনাইদহে বিএনপির সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ কর্মসুচির উদ্বোধন

দুই লাখেরও বেশি নতুন সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ঝিনাইদহে বিএনপির সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ কর্মসুচি শুরু হয়েছে।

শনিবার সকালে ঝিনাইদহ শহরের একটি রেষ্টুরেন্টে এ কর্মসুচির উদ্বোধন করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি শেখ আব্দুল হালিম খোকন।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুজ্জামান মনার পরিচালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বাবু জয়ন্ত কুমার কুন্ডু। অনুষ্ঠানে জেলা ছাড়াও ৬ উপজেলার কয়েক’শ নেতাকর্মী বিএনপির সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ কর্মসুচি যোগদান করেন।

ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি এ্যাড এম এ মজিদের সভাপতিত্বে সদস্য সংগ্রহ কর্মসুচির অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আমিরুজ্জামান খান শিমুল, মীর রবিউল ইসলাম লাভলু, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু সাইদ, ও তারেকুজ্জামান তারেক বক্তব্য রাখেন।

বক্তৃতায় কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বলেন, দেশ নায়ক তারেক রহমানের নির্দেশে বিএনপির সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ কর্মসুচি শুরু হয়েছে। এর মাধ্যমে তৃণমুলে দল আরো শক্তিশালী হবে। নেতৃবৃন্দ নতুন সদস্য সংগ্রহ কর্মসুচি মধ্যে ফ্যাসিষ্ট আ’লীগের নেতাকর্মীরা ঢুকে যেতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখার উপর গুরুত্বারোপ করেন।

অনুষ্ঠানে তৃণমুলের নেতারা অভিযোগ করে বলেন, দলের পরীক্ষিত নেতারা আজ মিছিল মিটিংয়ে জায়গা পান না। ৫ আগষ্টের পর যারা দলে সক্রিয় তাদেরকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। এগুলো বন্ধ করতে হবে। বক্তারা জেলা ও উপজেলার কতিপয় নেতার বিরুদ্ধে ফ্যাসিষ্ট আ’লীগের নেতাকর্মীদের আশ্রয় প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ করেন।

ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি এ্যাড এম এ মজিদ জানান, ঝিনাইদহের ৬৭ ইউনিয়নের প্রতিটিতে ১৮০০ করে নতুন সদস্য সংগ্রহ করা হবে। এ ছাড়া ৬টি পৌরসভার ৫৪টি ওয়ার্ডে ৯৭ হাজার দুই’শ সদস্য সংগ্রহ করা হবে। সব মিলিয়ে জেলায় দুই লাখ ১৭ হাজার ৮০০ নতুন সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্র রয়েছে।




চাঁদাবাজি নয়, ভাঙারি দোকানের ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্বেই মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড: পুলিশ

পুরান ঢাকার মিটফোর্ড এলাকায় ভাঙারি দোকানের নিয়ন্ত্রণ এবং আর্থিক লেনদেন নিয়ে বিরোধের জেরেই সোহাগকে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে পুলিশ।

শনিবার (১২ জুলাই) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) জসিম উদ্দিন এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ‘অপরাধীদের সঙ্গে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, মিটফোর্ড এলাকায় একটি ভাঙারি দোকানের ব্যবসায় কারা অংশ নেবে, তা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব চলছিল। সেই দ্বন্দ্ব ও লেনদেন সংক্রান্ত বিরোধ থেকেই ঘটেছে এই হত্যাকাণ্ড।’

জসিম উদ্দিন বলেন, ‘ঘটনার পর এখন পর্যন্ত র‍্যাবের হাতে দুজন এবং পুলিশের হাতে তিনজনসহ মোট পাঁচজন গ্রেফতার হয়েছে। অন্যদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’

মামলা নিতে চায়নি পুলিশ এমন অভিযোগ সত্য নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ঘটনার ১০ মিনিটের মধ্যেই পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছিল। শুরু থেকেই আমরা ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছি।’

জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমরা কোনো রাজনৈতিক বিবেচনা থেকে এই মামলার তদন্ত করছি না। আমাদের কাছে অপরাধই মুখ্য। কারও রাজনৈতিক পরিচয় আমাদের বিবেচ্য নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সোহাগের আগের কর্মকাণ্ডগুলোও খতিয়ে দেখছি। যদি তার পূর্ববর্তী কোনো বিষয়ে হত্যার কারণ থেকে থাকে, সেটিও আমলে নেয়া হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে জানান হয়, তদন্তের এ পর্যায়ে চাঁদাবাজির কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি। যতটুকু তথ্য মিলেছে, সবই পারস্পরিক ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব এবং আর্থিক লেনদেন ঘিরেই।

গত ৯ জুলাই সন্ধ্যা ৬টার দিকে মিটফোর্ড হাসপাতালের তিন নম্বর গেটসংলগ্ন রজনী ঘোষ লেনে সোহাগকে কুপিয়ে এবং মাথায় বড় পাথর দিয়ে আঘাত করে হত্যা করা হয়। ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় নেটিজেনদের মাঝে।




বল্লভপুর বৃদ্ধাশ্রমে সেলিম রেজার উদ্যোগে খাবার ও তোয়ালে বিতরণ

মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার বল্লভপুর গ্রামে অবস্থিত বল্লভপুর মিশন হাসপাতালের বৃদ্ধাশ্রমের বাসিন্দাদের মাঝে খাবার ও তোয়ালে বিতরণ করেছেন মুজিবনগর উপজেলার বল্লভপুর গ্রামের মৃত নইমুদ্দিন শা (নয়ন শা) এর ছেলে সেলিম রেজা। আজ শুক্রবার দুপুরে বৃদ্ধাশ্রমে বাসিন্দাদের মাঝে খাবার ও তোয়ালে বিতরণ করা হয়।

মানবিক এ উদ্যোগে পরিবার থেকে নির্বাসিত বৃদ্ধাশ্রমে স্থান হওয়া প্রতিটি বৃদ্ধা ও বৃদ্ধের হাতে একটি করে তোয়ালে তুলে দেওয়া হয় এবং তাদের জন্য দুপুরের খাবারের বিশেষ আয়োজন করা হয়। এ সময় সেলিম রেজা ও তার বড় ভাই জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এবং সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রশিদ নিজ হাতে খাবার পরিবেশন করেন এবং উপস্থিত সকলের খোঁজ খবর নেন। এছাড়াও তারা বৃদ্ধাশ্রম এর বাসিন্দাদের সুবিধা-অসুবিধা সম্পর্কেও জানতে চান।

খাবার বিতরণ শেষে সংক্ষিপ্ত এক বক্তব্যে সেলিম রেজার বড় ভাই আব্দুর রশিদ বলেন, “সমাজের প্রবীণরা আমাদের অভিভাবক। তাদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। আমার অনুপ্রেরণায় ও আমার ছোট ভাইয়ের অর্থায়নে তাদের জন্য সামান্য কিছু করার চেষ্টা করেছি ভবিষ্যতেও এইসব বৃদ্ধাশ্রমের অসহায় বাসিন্দাদের পাশে আমি সহ আমার পরিবার সবসময় থাকবে। এ সময় তিনি উপস্থিত সবার কাছে নিজের পরিবারের জন্য দোয়া প্রার্থনা করেন।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা কৃষকদলের সভাপতি আরমান আলী, ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দ এবং কেদারগঞ্জ বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক উদ্দিন, হাসপাতালের কর্মকর্তা সহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।




আত্মহত্যাই জীবনের মূল সমাধান নয়

তীব্র কষ্ট, হতাশা ও বিভিন্ন ধরনের ক্ষতির সম্মিলিত অভিজ্ঞতা এবং জেনেটিক, মনস্তাত্তিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কারণসহ অন্যান্য নেতিবাচক উপাদানের সম্মিলিত ফল আত্মহত্যা।

যখন কোনো ব্যক্তি তার বিবেক, বুদ্ধিমত্তা বা বিচার বিবেচনা হারিয়ে ফেলে তখন সে নিজেকে হত্যা করে। নিজেকে হত্যা করাই আত্মহত্যা। আত্মহত্যা এক অর্থে আত্ম খুন-নিজেকে নিজে খুন করা। আত্মহত্যা বলতে এমন এক ধরনের মৃত্যুকে বুঝায়, যেখানে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় বা নিজের হাতে নিজের জীবন সংহার করে। এটা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ হতে পারে। কোনো ব্যক্তি স্বেচ্ছায় আত্মহত্যা করে না বরং বিভিন্ন সামাজিক ঘটনা ব্যক্তির আত্মহত্যা করার প্রবণতাকে প্রভাবিত করে।
প্রতিটি মানুষই জীবনের কোনো না কোনো সময়ে আফসোস করে আমাদের জীবন কেন এত ক্ষণস্থায়ী? এত সুন্দর পৃথিবী, এত সুন্দর জীবন আর জীবনের সাথে সম্পর্কের এত মধুর বন্ধন ছেড়ে কে এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতে চায়? এ প্রশ্নের উত্তর, ‘না’।
প্রিয়জনকে ছেড়ে কেউই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে চায় না। পৃথিবীতে এমন একজনও সুস্থ মানুষ পাওয়া যাবে না যে কি না মৃত্যুর কথা মনে করলে আঁতকে ওঠে না। তবু কিসের আশায় মানুষ নিজের জীবনকে নিজেই হত্যা করছে? এ প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলেই সামনে চলে আসে আত্মহত্যার করুণ রূপ!

বাংলাদেশের সবচেয়ে ছোট জেলা মেহেরপুর। আয়তনে ক্ষুদ্র হলেও, আত্মহত্যার মতো এক ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধিতে রুপান্তরিত হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে জেলা পরিসংখ্যান অধিদপ্তরের নেই কোনো সরকারি পরিসংখ্যান। কিন্তু মেহেরপুরের তিনটি থানা ও তিনটি সরকারি হাসপাতালে তথ্য ভয়াবহ।
সংবাদ মাধ্যমের তথ্যমতে ২০২৪ সালে জেলার তিনটি থানায় নথিভুক্ত হয়েছে ১১৯টি অপমৃত্যুর ঘটনা। এর মধ্যে ৫৯ জন গলায় ফাঁস দিয়ে এবং ২৯ জন বিষপান করে আত্মহত্যা করেন। বাকিরা ঘুমের ওষুধ, উঁচু স্থান থেকে লাফিয়ে পড়া বা অন্যান্য পদ্ধতি বেছে নিয়েছেন।চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত অপমৃত্যুর সংখ্যা পৌঁছেছে ৪৬-এ। এর মধ্যে ২২ জন আত্মহননের পথ হিসেবে বেছে নিয়েছেন ফাঁস, ১৭ জন বিষপান করেছেন, বাকিরা অন্যভাবে মৃত্যুর দিকে এগিয়েছেন।

তবে যে চিত্রটি সবচেয়ে গভীর দুশ্চিন্তা তৈরি করে, সেটি হলো আত্মহত্যার চেষ্টাকারীদের সংখ্যা। মেহেরপুরের তিনটি সরকারি হাসপাতালে ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত সময়ে মেহেরপুর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ২২৭, মুজিবনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৪৫ এবং গান্ধীর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৮৯ জন, মোট ৩৬১ জন নারী, পুরুষ ও শিশুকে পাকস্থলী পরিষ্কারের জন্য ভর্তি করা হয়েছে। যারা কেউ ঘুমের ওষুধ, কেউ বিষ বা কীটনাশক খেয়েছেন আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে।চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন অন্তত ৪০ জন। অর্থাৎ, গড়ে প্রতি ১২ ঘণ্টায় একজন মানুষ আত্মহত্যার চেষ্টা করছেন এই জেলায়।

জেলা তথ্য অফিস দাবি করছে, তারা গত পাঁচ মাসে ৩২টি সচেতনতামূলক সভা ও ১৬টি নারী সমাবেশ করেছে।

মেহেরপুর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কেন্দ্রের তথ্যমতে প্রায় তিদিনই আত্মহত্যার চেষ্টাকারী রোগী আসেন। কেউ বিষ পান করে, কেউ ঘুমের ওষুধ। বাঁচলেও তারা বাকি জীবন জটিল রোগে ভোগেন। কখনো কিডনি নষ্ট হয়, কখনো পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে যান।

আত্মহত্যা যে কত নির্মম, আত্মহত্যা যে কত নিষ্ঠুর-তা কেবল প্রিয়জন হারা মানুষগুলো বুঝতে পারে। মৃত্যুর ওপারের জীবন কেমন আমাদের জানার সুযোগ নেই। তাই হয়তো বেঁচে থাকার এপারের জীবনে মানুষ এমন কিছু ঘটনার সম্মুখীন হয় যে ঘটনায় তার জীবন হয়ে ওঠে অতি তুচ্ছ যা হননে একজন মানুষ জীবনের মহত্ত্ব একটি মুহূর্তের জন্য ভুলে যায়। এই নিষ্ঠুর ঘটনা হতে পারে একটি ঘটনা অথবা কয়েকটি ঘটনার সমন্বয় যা রূপ নেয় ভয়ংকর বিষণ্নতায় মোড়া এক অলীক পরিণতির।

আত্মহত্যা নিয়ে মানুষের মনে অনেক প্রশ্ন, অনেক ভুল ব্যাখ্যা, ভয় এবং কুসংস্কার কাজ করে। প্রতিটি আত্মহত্যার পেছনে যিনি আত্মহত্যা করেন, তার নিজস্ব কিছু কারণ থাকে। প্রতিটি মানুষ আলাদা, আবেগ-অনুভূতিও আলাদা। আমি যেভাবে পৃথিবীকে দেখি, আরেকজন সেই দৃষ্টিতে পৃথিবী দেখবে না। তাই কেউ কেন সুইসাইড করল, এটা চট করে বলা খুব কঠিন। ডাক্তাররা কারণ বের করার চেষ্টা করেন, কিন্তু একজন মানুষের মনের মধ্যে ঠিক কী ঘুরছে এটা বোঝা কঠিন। কেন সে এই সময়ে আত্মহত্যা করলো এটা জানাও প্রায় অসম্ভব।

অধিকাংশ মানুষ বুঝেই না বিভিন্ন পরিস্থিতির কারণে কেন লোকে বিষণ্ণ হয়ে পড়ে।তারা জানে না সিচুয়েশনাল অথবা ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশনের কথা।তারা এটাও জানে না বাইপোলার, সিজোফ্রেনিয়া ও বর্ডারলাইন ডিজিজ কী?আত্মহনন থেকে বেঁচে ফেরা অনেক রোগী ডাক্তারকে বলেছেন যে, তারা যখন আত্মহত্যা করবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়, তখন তারা তাদের প্রিয়জনদের কথা ভাবেনি। কারণ তখন তাদের কাছে নিজেদের ব্যথাটাই খুব বেশি ছিল। মনে হতেই পারে এটা খুব স্বার্থপরের মতো আচরণ। মানুষ আত্মহত্যা করে শুধু নিজে পালিয়ে বাঁচার জন্য, অন্য কারো জন্য মরে যাওয়াটা সুইসাইড নয়।সে আসলে নিজে বাঁচার উপায় হিসেবেই মৃত্যুকে বেছে নেয়।তবে হ্যাঁ,একেকজনের কারণটা থাকে একেক রকম।

আত্মহত্যার কারণ যদি বিশ্লেষণ করি তবে, শিশুকালে যৌন হয়রানি, ধর্ষণ, শারীরিক নির্যাতন, সংসারের দ্বন্দ্ব এবং যুদ্ধের স্মৃতি মানুষের ওপর ভীতিজনিত চাপ তৈরি করে, যা আত্মহত্যার কারণ হতে পারে, এমনকি অনেকদিন পরে হলেও হতে পারে। মাদক ও মদ্যপান মানুষের সুইসাইডের আশংকা বাড়িয়ে তোলে। এ ছাড়া, সম্পর্ক ভেঙে গেলে, চাকরি হারালে, আয়ের পথ না পেলে, সামাজিক পজিশন হারালে,লজ্জা পেলে, বুলিং ও ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার হলে, আটক হলে মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে পারে। ক্রমাগত অসুস্থতাও আত্মহত্যার কারণ, তবে কম।বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার, বাবা-মায়ের মধ্যে সুসম্পর্কের ঘাটতি, পারিবারিক দ্বন্দ্ব, পরকীয়া, প্রেমে ব্যর্থ হওয়া, দীর্ঘদিনের দরিদ্রতা,ঋণগ্রস্ত, প্রতারণার শিকার হওয়া,শত্রুর কাছে ধরা না দেওয়া,ব্যবসায় বড় ধরনের ক্ষতি, প্রিয়জনের মৃত্যু, পরীক্ষায় আশানুরূপ ফল না পাওয়া, সন্তানের প্রতি বাবা-মায়ের অবহেলা, নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, পারিবারিক, ধর্মীয় ও সামাজিক দায়িত্ববোধের অভাব, সাইবার ক্রাইমের শিকার হওয়া, ইভটিজিং, মানসিক অসুস্থতা,হতাশা ও অসহায়ত্ব বোধ থেকে কিশোর-কিশোরীরা অনেক সময় এই পথে পা বাড়ায়।যেসব মানুষ তাদের জীবনে এ ধরনের জটিল সমন্বিত সমস্যার মুখোমুখি হন, তাদের আচরণের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটে আত্মহত্যার মধ্য দিয়ে। আত্মহত্যার উপকরণের সহজপ্রাপ্যতা ও মানসিক অসুস্থতা ইত্যাদি কারণে বেশির ভাগ আত্মহত্যার ঘটনাগুলো ঘটে থাকে।

যখন কারও জ্ঞান-বুদ্ধি, বিবেক ও উপলব্ধি-অনুধাবন শক্তি লোপ পায়, নিজেকে অসহায়-ভরসাহীন মনে হয়, তখনই ধর্ম-কর্ম ভুলে মানুষ আত্মহত্যা করে বসে। যে ব্যক্তি আত্মহত্যা করে, সে শুধু তার নিজের ওপরই জুলুম করে না বরং এতে মা-বাবা, ভাইবোনসহ আত্মীয়-পরিজন সবাই খুব কষ্ট পায় এবং অত্যন্ত বিচলিতবোধ করে।পরিবারের একজন সদস্যের মৃত্যু তার পরিবারের উপর ভয়াবহ প্রভাব রাখে। কারণ মানুষটির এই না বলে চলে যাওয়াটা, সেই মানুষটির একার বিষয় নয়। মৃত মানুষের পরিবার-পরিজন সারাজীবন একটা উত্তরবিহীন প্রশ্ন, অতৃপ্ত মন এবং গভীর শূন্যতা নিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দেয়।’

বিশ্বখ্যাত মনোবিশ্লেষক সিগমুন্ড ফ্রয়েডের মতে, মানুষের অবচেতনেই থাকে ‘মৃত্যুপ্রবৃত্তি’। পরিবেশ–পরিস্থিতির প্রভাবে এই মৃত্যুপ্রবৃত্তি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, আর তখনই হয় তার ‘মরিবার সাধ’। গবেষণায় দেখা যায়, মানবমস্তিষ্কের সেরিব্রোস্পাইনাল তরলের মধ্যে ‘৫-হাইড্রোক্সি ইনডোল অ্যাসেটিক অ্যাসিড’ নামের একটি রাসায়নিক পদার্থের পরিমাণ কমে গেলে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে যায়। প্রথমে বিক্ষিপ্তভাবে মনের মধ্যে আত্মহত্যার চিন্তা আসে। এই চিন্তাগুলো পরে বারবার আসতে থাকে। ব্যক্তি এ চিন্তা থেকে সহজে মুক্ত হতে পারে না। আত্মহত্যার চিন্তা তার স্বাভাবিক কাজকর্মের ওপর প্রভাব ফেলে। তীব্র থেকে তীব্রতর হয় তার আত্মহননের ইচ্ছা। সে ভাবে, ‘কেন আমি বেঁচে থাকব?’ সে জীবনের ইতি টানার চিন্তা করে। একসময় তার মনে হয়, তার মরে যাওয়ার এখনই উপযুক্ত সময়। কখনো আবেগতাড়িত হয়ে, আবার কখনো পরিকল্পনা করে সে মৃত্যুচেষ্টা করে। সফল না হলে আবার তার মধ্যে বিক্ষিপ্তভাবে আত্মহত্যার চিন্তা আসতে থাকে। এ চিন্তার চক্র থেকে সে বের হতে পারে না। এটি তার মধ্যে ফিরে ফিরে আসতে থাকে। তাই যে ব্যক্তি কথাচ্ছলেও মৃত্যুইচ্ছা ব্যক্ত করে, ধরে নিতে হবে তার মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা রয়েছে।আবার পরিবারে যদি আত্মহত্যা বা এর চেষ্টার ইতিহাস থাকে, তবে পরিবারের অন্য সদস্যদেরও আত্মহত্যার ঝুঁকি বেড়ে যায়। মাদক গ্রহণ, যৌন নিপীড়নের শিকার, বয়ঃসন্ধিকালে দেহ ও মনের পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পারা, আবেগ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা, ঝামেলাযুক্ত পরিবার আর নিজের যৌন–পরিচিতি নিয়ে সন্দিহান থাকা কিশোর আর তরুণদের মধ্যেও আত্মহত্যার প্রবণতা থাকে।

আত্মহত্যার জন্য মিডিয়াও কোন অংশে কম দামী নয়।যে ভাষায় মিডিয়ায় আত্মহত্যার খবর দেই, কিংবা যে ভাষায় আত্মহত্যা নিয়ে আলোচনা করে, আত্মহত্যাকে আমাদের সাহিত্যে, শিল্পে, সিনেমায় যেভাবে দেখানোর চেষ্টা করে, সেটার দিকে কি আমরা কখনও ন্যূনতম মনোযোগ দিয়েছি? আমরা হয়তো খেয়ালই করি না মিডিয়ার প্রতিটা সংবাদে, কিংবা ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় আত্মহত্যাকে এক ধরনের যৌক্তিকতা অজান্তেই দিয়ে দেই।

আত্মহত্যার সংবাদ মিডিয়ায় যত বেশি আসে এবং সেটা যদি অসংবেদনশীল ভাষায় লিখা হয় এবং আমরা যদি সেটাকে ভুলভাবে আলোচনা করি, তাহলে সেটা আরও বহু মানুষকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করে। বিশেষ করে একই রকম পরিস্থিতিতে পড়া একই মানুষ এক‌ইভাবে আত্মহত্যা (কপিক্যাট সুইসাইড) করার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।

একটা বদ্ধ জায়গায় চারকোল পুড়িয়ে তারপর সেখানে কার্বন মনোক্সাইড পয়জনিংয়ের মাধ্যমে আত্মহত্যার একটা চর্চা শুরু হয়েছিল তাইওয়ানে। এই আত্মহত্যার খবরগুলো যখন পত্রিকায় বিস্তারিত আসতে শুরু করলো তখন দেখা গেলো সে দেশে আত্মহত্যার সংখ্যা তো বেড়েছেই, সঙ্গে বহু আত্মহত্যাকারী ব্যবহার করছিলেন চারকোলের ওই পদ্ধতি। পরে একই প্রবণতা ছড়িয়ে পড়ে হংকং, চীন ও জাপানেও।

সাম্প্রতিককালে আমরা দেখবো একই রকম ঘটনার প্রবণতা আমাদের দেশেও দেখা যাচ্ছে। কোনও কাঙ্ক্ষিত মানুষকে ফোনে অথবা ভিডিও কলে রেখে আত্মহত্যার খবর আমরা খুব বিস্তারিত (অনেক ক্ষেত্রে ছবিসহ) প্রকাশ করছি। এ ধরনের ঘটনা এখন বাড়ার প্রবণতা দেখা

সমাজবিজ্ঞানী ও নৃতত্ত্ববিদরা মনে করেন আত্মহত্যা একটি সামাজিক বিষয় বা ফেনোমেনা। প্রতিটি আত্মহত্যার ঘটনা সেদেশেরই সমাজ, অর্থনীতি, সংস্কৃতি এবং মানুষের মনো-সামাজিক অবস্থার প্রতিচ্ছবি। রাজশাহীর আত্মহত্যার তালিকায় যারা আছেন, তাদের মধ্যে সবচাইতে আলোচিত হচ্ছে পয়লা বৈশাখের দিন নন্দনগাছি স্টেশনে ষাটোর্ধ্ব রুহুল আমিনের আত্মহত্যার ঘটনা। তিনি খুব ঠান্ডা মাথায় ট্রেনের নিচে শুয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন। সেই ভিডিও ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।প্রথমে ভিন্ন কারণের কথা জানা গেলেও পরে পরিবার থেকে জানানো হয়, ঋণের বোঝা বইতে না পেরে তার এমন সিদ্ধান্ত। পিঁয়াজ চাষের জন্য তিনি ঋণ নিয়েছিলেন। দেশের বিভিন্ন এনজিও, মহাজন ও কিছু ব্যাংক এভাবেই কায়দা করে মানুষকে ঋণ দেয়। এবং একসময় ঋণভারে জর্জরিত করে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করে।

সম্প্রতি আলোচিত ঘটনা মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করেছেন র‌্যাব কর্মকর্তা এ এস পি পলাশ সাহা। মরদেহের পাশেই পড়ে ছিল একটি চিরকুট। সেখানে লিখে তিনি নিজের মৃত্যুর দায় নিয়েছেন। সামাজিক মাধ্যমে বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ার পর অনেকেই বলছেন পলাশ সাহা আসলে জীবন থেকে পালিয়ে বাঁচতে চেয়েছেন। সংক্ষিপ্ত চিরকুটটিতে পরিবারের সদস্যদের উদ্দেশ্যে যা লিখেছেন, তাতে বোঝা যাচ্ছে তিনি মূলত পারিবারিক দ্বন্দ্বের জেরে এই কাজ করেছেন।

এই কষ্ট বয়ে বেড়াতে বেড়াতে ব্যক্তি এতোটাই ক্লান্ত হয়ে পড়েন যে, একসময় নিজেই সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এটা নিজেকে একধরনের শাস্তি দেয়া। সেই সাথে মৃত ব্যক্তি হয়তো মনেকরেন দ্বন্দ্বের সাথে জড়িত চরিত্রগুলো যদি একটুও শিক্ষা পায়। এই আত্মহত্যার মাধ্যমে পলাশ সাহা পরিবারের প্রতি তার ক্রোধ প্রকাশ করেছেন।

একজন মানুষ ঠিক কী কারণে জীবন থেকে পালিয়ে যেতে চান, এটা নিয়ে নির্দিষ্ট কোনো উপসংহারে পৌঁছানো কঠিন। বিশিষ্ট রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী সাদি মহম্মদ তকিউল্লাহ ৬৬ বছর বয়সে যখন স্বেচ্ছামৃত্যুকে বেছে নিয়েছিলেন, সমাজের কাছে তা এক দারুণ বিষাদময় ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আত্মহত্যা নিয়ে মানুষের মনে অনেক প্রশ্ন, ভুল ব্যাখ্যা, ভয় এবং কুসংস্কার কাজ করে। সাদি মহম্মদের আত্মহনন নিয়েও বিভিন্ন আলোচনা হয়েছে।এই বয়সে তিনি কেন চলে গেলেন? এরজন্য দায়ী কি তাঁর একাকিত্ব, অতীতের ট্রমা, মায়ের উপর নির্ভরতা, বন্ধু-স্বজনদের পাশে না থাকা ইত্যাদি।

মেহেরপুর সদরের পুতুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পারিবারিক চাপ, সমাজের প্রত্যাশা, কর্মজীবনের অনিশ্চয়তা ও ব্যক্তিগত সম্পর্কের জটিলতা শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থা বিপর্যস্ত হতাশাগ্রস্ত হয়ে আত্মহত্যা করেছেন।

পুতুলের মানসিক চাপের একটি বড় অংশ আসে পারিবারিক ও সামাজিক প্রত্যাশা থেকে। বিশেষ করে বাংলাদেশে পরিবার ও সমাজ শিক্ষার্থীদের ওপর উচ্চ প্রত্যাশা আরোপ করে। তাঁদের অনেক সময় এই চাপ সামলানো কঠিন হয়ে পড়ে, বিশেষত যদি তাঁরা একাধিক ক্ষেত্রে ব্যর্থতার সম্মুখীন হন। এ ধরনের চাপ শিক্ষার্থীদের মানসিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করে এবং তাঁরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন।

পরিশেষে, সময় বদলে গেছে। তার সাথে পাল্টে গেছে আমাদের জীবন ধারা। তাই আমাদের আরও ভাবতে হবে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে। ইন্টারনেট আসক্তি, সমাজের অরাজকতা, রাজনৈতিক অস্থিরতা, চাকরিজীবী অভিভাবকের সন্তানের জন্য সময় কম দেওয়া, প্রিয়জনের সাথে দূরত্ব বেড়ে যাওয়া, ফেসবুকের বিমূর্ত বন্ধুর মাঝে বুদ হয়ে থেকে সামনের বন্ধুকে ভুলে যাওয়া, ভিডিও গেমসের জগতে গিয়ে বিকেলে মাঠের ফুটবলের চল হারিয়ে যাওয়ার মতো কারণগুলোকে নিয়ে ভাবতে হবে আমাদের।জীবনে আঘাত, দুঃখ, বেদনা, কষ্ট আসে জীবনকে শক্ত করার জন্য; মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার জন্য নয়। মনে রাখতে হবে, মৃত্যু আমাদের জীবনের লক্ষ্য নয়, বেঁচে থাকাটাই আমাদের জীবনের লক্ষ্য। আমরা চাই, মানুষ নিজেকে ভালবেসে বেঁচে থাকুক, আত্মহত্যার এই দুঃখগাঁথার ইতি ঘটুক।




মেহেরপুরে এক সপ্তাহের ব্যবধানে মরিচের মূল্য বৃদ্ধি

মেহেরপুরের বাজারগুলোয় আবারও কাঁচা মরিচের দাম বেড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে কাঁচা মরিচের দাম প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা করে বেড়ে ২০০ থেকে ২২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ গত বছরের এই সময়ে কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল বলে চাষি ও ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।

খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, চাহিদার চেয়ে বাজারে কাঁচা মরিচের সরবরাহ কম। কৃষকদের কাছ থেকেই বেশি দামে কাঁচা মরিচ কিনতে হচ্ছে। এতে প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও।

আর মরিচ চাষিরা বলছেন, এবার বৃষ্টিতে গাছের পাতা কুঁকড়ে যাওয়ায় কাঁচা মরিচের ফলন আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। বেশি দামে কাঁচা মরিচ বিক্রি করলেও ফলন কম হওয়ায় লোকসানে পড়েছেন তাঁরা।

আজ শুক্রবার সকালে গাংনী উপজেলা কাঁচামাল আড়তের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে মরিচের সরবরাহ কম। এ কারণে খুচরা বাজারেও কাঁচা মরিচ কম। পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ১৯০ থেকে ২২৫ টাকায় বিক্রি করা হয়। আর খুচরা বাজারে তা ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মৌসুমে মরিচের এমন দামে অস্বস্তির মধ্যে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতারা। এক সপ্তাহ আগেও প্রতি কেজি মরিচ ৩০ থেকে ৪০ টাকায় কিনেছেন তাঁরা।

গাংনী উপজেলার ভাটপাড়া গ্রামের ব্যবসায়ী শাহাবুল ইসলাম আজ সকালে কাচা মরিচ ১৯০ টাকা থেকে ২৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গত বছর এই সময়ে মরিচ প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকায় কিনছি।

তিনি আরও বলেন, আড়তেই মরিচের সরবরাহ কমেছে। এ কারণে খুচরা বাজারেও কাঁচা মরিচ কম। তিনি বলেন, ‘পাইকারি বাজার থেকেই ১৯০ থেকে ২৪৫ টাকায় মরিচ কিনছি। গাড়িভাড়া দিতে হয়; এর পাশাপাশি কিছু মরিচ নষ্টও হয়। আমরা এই মরিচ বরিশাল মোকামে পাঠিয়ে থাকি। আগামীকাল লাভের কথা বলা যাবে।

গাংনী কাঁচাবাজারের আড়ৎ মালিক হাফিজুর রহমান ভিজা বলেন, এখন কাঁচা মরিচের সরবরাহ কম, তাই দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। মাঠের অধিকাংশ মরিচ ক্ষেত শুকিয়ে গেছে। এখন যে দু এক জায়গায় মরিচ ক্ষেত অবশিষ্ট আছে সেগুলোর দাম বেশী।

দেশের মরিচ উৎপাদনের জেলাগুলোর মধ্যে মেহেরপুর জেলা অন্যতম। জেলার তিনটি উপজেলার সবখানেই ব্যাপকভাবে মরিচের আবাদ হয়। তবে এবার গেলো কয়েকদিনের অবিরাম বৃষ্টিতে মরিচের ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে দাম বেশি হলেও ফলন কম হওয়ায় চাষিরা লাভবান হতে পারছেন না।

গাংনী উপজেলার সবজি গ্রাম সাহারবাটির ময়নাল হোসেন বলেন,গ্রামের চাষি ইব্রাহিম মিয়া বলেন, এ বছর তিনি তিন বিঘা জমিতে মরিচের চাষ করেছেন। অতিরিক্ত খরায় এবং সবশেষ টানা বৃষ্টিপাতের কারণে অনেক মরিচ গাছের পাতা কুঁকড়ে গেছে। এতে গাছের ফুল ঝরে যাচ্ছে। ফলে মরিচও কম ধরছে। এবার দাম কিছু বেশি হলে ফলন কম হওয়ায় লাভ খুব একটা হচ্ছে না।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সামসুল আলম বলেন, অতিরিক্ত খরা ও ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণের কারণে মরিচগাছের পাতা কুঁকড়ে যেতে পারে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে জমিতে সেচের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এছাড়া ব্যাকটেরিয়ানাশক ওষুধ ছিটানোর মাধ্যমে মরিচগাছের এ রোগ দূর করা সম্ভব।




মেহেরপুরে চারটি সরকারি স্কুলে এসএসসির ফল বিপর্যয়, এগিয়ে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান

মেহেরপুরে চলতি এসএসসি পরীক্ষায় জেলার চারটি সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফল বিপর্যয় ঘটেছে। তবে ফলাফলে এগিয়ে রয়েছে প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো।

ফলাফল বিশ্লেষণে জানা গেছে, মেহেরপুর সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে ২৬১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ২০৮ জন, ফেল করেছে ৫৩ জন, জিপিএ ৫ পেয়েছে মাত্র ৩৯ জন। পাসের হার ৭৯.৬৯ শতাংশ। মেহেরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ২৭০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ২২৮ জন, জিপিএ ৫ পেয়েছে ৬০ জন, পাসের হার ৮১.৮৩ শতাংশ। গাংনী সরকারি পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে ৬১ জন পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছে মাত্র ৩৩ জন, জিপিএ ৫ পেয়েছে ২ জন। পাসের হার ৫৫ শতাংশ। মুজিবনগর সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৮৭ জন পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছে ৭৩ জন। জিপিএ ৫ পেয়েছে ৭ জন। পাসের হার ৮৩ শতাংশ।

এদিকে, মেহেরপুরের প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান জিনিয়াস ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজে ১২০ জন পরীক্ষা দিয়ে শতভাগ পাস করেছে। জিপিএ ৫ পেয়েছে ৫০ জন। গাংনীর সন্ধানী স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ১৩৮ জন পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছে ১৩৬ জন। জিপিএ ৫ পেয়েছে ৬২ জন।

তিনটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকের কেউ ফোন রিসিভ করেননি। তবে গাংনী সরকারি পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামান লালু বলেন, এ বছর এসএসসির রেজাল্ট একটু খারাপ হয়েছে। এছাড়া অন্য কোনো কথা বলেননি।

চলতি বছর মেহেরপুরের ১৩টি কেন্দ্রে ৬ হাজার ৭১৫ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে ৪ হাজার ২১০ জন পাস করেছে। জেলায় পাসের হার ৬২.৭০ শতাংশ।




ঝিনাইদহে খালের দুই ধারের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, ঝিনাইদহ জেলার উদ্যোগে হরিণাকুন্ডু উপজেলার ৫নং কাঁপাশহাটিয়া ইউনিয়নের দৌলতপুর মান্দারতলা থেকে শাখারীদহ বাজার পর্যন্ত খালের দুই পাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করছে।

জানা যায়, খালের দুই ধারে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছিল, যা খালের স্বাভাবিক পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছিল।

এ নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড গতকাল এলাকায় মাইকিং করে অবৈধ দখলদারদের নিজ উদ্যোগে স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশনা দেয়।

তবে আজ উচ্ছেদ অভিযান চলাকালে কতিপয় স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করে উচ্ছেদ কার্যক্রম বন্ধের চেষ্টা করেন। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের চাপ ও হুমকির কাছে নতি স্বীকার না করে দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখেন। অভিযানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও উপস্থিত থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, খালের স্বাভাবিক গতিপথ বজায় রাখতে এবং এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসন ও জনগণের স্বার্থে এই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযান আরও চলবে বলে জানানো হয়েছে।