জীবননগরে ডাকাতি প্রতিরোধে পুলিশের সতর্কতামূলক প্রচার

চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর উপজেলায় সাম্প্রতিক সড়ক ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনার প্রেক্ষিতে পুলিশ প্রশাসন সতর্কতামূলক প্রচার চালিয়েছে।

গতকাল রোববার জীবননগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন হোসেন বিশ্বাস জীবননগর বাসস্ট্যান্ড ও হাসদাহ এলাকায় বিভিন্ন পরিবহন কাউন্টারে চালক, সুপারভাইজার ও পরিবহন শ্রমিকদের হাতে নিরাপত্তাবিষয়ক লিফলেট বিতরণ করেন।

লিফলেট বিতরণকালে ওসি রাতে চলাচলের সময় নিরাপদ রুট ব্যবহারের পরামর্শ দেন। পাশাপাশি অপরিচিত যাত্রী বা সন্দেহজনক ব্যক্তির বিষয়ে সতর্ক থাকা, চলন্ত যানবাহনে দরজা-জানালা বন্ধ রাখা, জরুরি প্রয়োজনে পুলিশকে দ্রুত অবহিত করা এবং নির্ধারিত স্টপেজ ছাড়া অন্য কোথাও বাস না থামানোর নির্দেশনা প্রদান করেন।

ওসি মামুন হোসেন বিশ্বাস বলেন, জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের পাশাপাশি সড়কে চলাচলকারী সকলকেই সতর্ক থাকতে হবে। ছোট একটি সতর্কতা বড় ধরনের অপরাধ ঠেকাতে পারে। তিনি পরিবহন সংশ্লিষ্টদের যেকোনো সন্দেহজনক তথ্য দ্রুত পুলিশকে জানানোর আহ্বান জানান।




আলমডাঙ্গা পৌর যুবদলের সদস্য সচিব সাইফুদ্দিন আলম কনক আর নেই

আলমডাঙ্গা পৌর যুবদলের সদস্য সচিব সাইফুদ্দিন আলম কনক (৪৮) হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। গতকাল রবিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে পৌর এলাকার একটি বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

পরিবার জানায়, দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে হার্টজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন কনক। ঢাকাসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েও পুরোপুরি সুস্থ হননি। রবিবার সন্ধ্যায় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত স্থানীয় একটি ক্লিনিকে নেওয়া হয়। চিকিৎসকেরা জানান, তিনি স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছেন। কিছুক্ষণ পরই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

সাইফুদ্দিন আলম কনক আলমডাঙ্গা পৌর এলাকার কোর্টপাড়ার বাসিন্দা ছিলেন। বর্তমানে তিনি স্টেশনপাড়ায় পরিবারসহ বসবাস করছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক ছেলে সন্তানসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষী রেখে গেছেন।

তার মৃত্যুতে জেলা ও উপজেলা বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী শরিফুজ্জামান শরিফ শোক প্রকাশ করে বলেন, “বাল্যকাল থেকেই তিনি বিএনপির আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন। তার মৃত্যুতে দলের অপূরণীয় ক্ষতি হলো।”

এছাড়া গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন আলমডাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি আকতার হোসেন জোয়ার্দার, সাধারণ সম্পাদক আমিনুল রহমান রোকন, পৌর বিএনপির সভাপতি আজিজুল হক পিন্টু, সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান ওলটুসহ দলীয় নেতাকর্মীরা।




আলমডাঙ্গায় শিকারীর হাত থেকে ১৮টি দেশি ঘুঘু উদ্ধার 

আলমডাঙ্গায় শিকারীদের হাত থেকে ১৮টি দেশি প্রজাতির ঘুঘু পাখি উদ্ধার করেছে আলমডাঙ্গা জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ যুব সংস্থা। গত শনিবার দুপুরে উপজেলার হাড়গাড়ি এলাকা থেকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সংস্থার সদস্যরা অভিযান চালিয়ে পাখিগুলো উদ্ধার করেন।

গতকাল রবিবার সকাল আনুমানিক ১০টায় উপজেলা পরিষদ চত্বরে ঘুঘু পাখিগুলোকে প্রকৃতিতে অবমুক্ত করা হয়। অবমুক্ত করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশীষ কুমার বসু।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন সংস্থার সদস্য সাঈদ এম হিরোন, উপদেষ্টা সাদ্দাম খান, সাংগঠনিক সম্পাদক আরাফাত রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান, দপ্তর সম্পাদক আল রাব্বি, কোষাধ্যক্ষ আতিকুজ্জামান মেরাজ, সদস্য স্বাধীন আহমেদ, নাসিম, সিয়াম, রবিন, রাব্বি, তীব্র, বাদশা ও অন্যান্য সক্রিয় সদস্যরা।

স্থানীয়দের বরাতে জানা যায়, যশোর এলাকার একটি শিকারী চক্র বাঁশের লাঠির মাথায় ঝুলন্ত খাঁচায় মা ঘুঘুকে আটক করে রাখে। মা ঘুঘুর করুণ ডাক শুনে অন্য ঘুঘু পাখি খাঁচার ভেতরে প্রবেশ করলেই আটকা পড়ে যায়। শনিবার দুপুরে তিনজন শিকারী একই কৌশলে ঘুঘু শিকার করছিল।

হাড়গাড়ি গ্রামের সচেতন নাগরিক জাহিদুল ইসলামের ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে সংস্থার সদস্যরা শিকারীদের ধরতে গেলে শিকারীরা দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। ধাওয়া দিলে দুইজন শিকারী ১৮টি ঘুঘু পাখি ও শিকারের সরঞ্জাম ফেলে পালিয়ে যায়। অপর শিকারী তার ধরা ঘুঘু ও সরঞ্জাম নিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

উদ্ধার করা ঘুঘু পাখিগুলোকে সংস্থার সদস্যরা রাতভর সুরক্ষায় রেখে পরদিন উপজেলা পরিষদ চত্বরে অবমুক্ত করেন।

সংস্থার সদস্যরা বলেন, “বন্যপ্রাণী আমাদের পরিবেশের অংশ। শিকারী চক্রকে থামাতে সমাজের প্রতিটি মানুষের এগিয়ে আসা প্রয়োজন।”




দামুড়হুদায় মহিলা দলের নির্বাচনী সমাবেশ

দামুড়হুদায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের নির্বাচনী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।গতকাল রবিবার বিকেলে উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে কয়েক হাজার নারী কর্মী অংশগ্রহণ করেন।

জাতীয়তাবাদী মহিলা দল দামুড়হুদা উপজেলা শাখার আয়োজনে সমাবেশে চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মাহমুদ হাসান খান প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন।

দামুড়হুদা উপজেলা মহিলা দলের সভানেত্রী ছালমা জাহান পারুলের সভাপতিত্বে নির্বাচনী মহিলা সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ মিল্টন, চুয়াডাঙ্গা জেলা মহিলা দলের সভানেত্রী রওফুল নাহার রীনা, সহ-সভাপতি শেফালি খাতুন, দামুড়হুদা উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. মনিরুজ্জামান মনির এবং সাধারণ সম্পাদক রফিকুল হাসান তনু।

মহিলা সমাবেশে প্রধান অতিথি বলেন, “বিএনপির রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফার মধ্যে নারীর উন্নয়ন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। দেশের মূল জনগোষ্ঠীর অর্ধেক নারীসমাজ যাতে পিছিয়ে না পড়ে, সেজন্য দেশনায়ক তারেক রহমান ৩১ দফা প্রণয়ন করেছেন। বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে নারীদের মাধ্যমে পরিবারের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা হবে।”

তিনি বলেন, “আগামী নির্বাচনে ভোট দেওয়ার মাধ্যমে বিএনপি কাউকে বেহেশতের টিকিট দিতে পারবে না; তবে জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবে। তাছাড়া চুয়াডাঙ্গার উন্নয়নে যা যা করণীয়, বিএনপি তা-ও নিশ্চিত করবে।”




জীবননগরে নারী সমাবেশ অনুষ্ঠিত

চুয়াডাঙ্গা জেলা তথ্য অফিসের আয়োজনে জীবননগর উপজেলায় নারী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ রবিবার সকাল ১১টায় উপজেলার কেডিকে ইউনিয়নের কাশিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ নারী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

আয়োজিত সমাবেশে নারীর সচেতনতা, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, মাতৃস্বাস্থ্য এবং নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা তথ্য কর্মকর্তা শিল্পী মন্ডল। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা সজীব পাল, সরকারি শিক্ষক রবিউল ইসলাম, মাধ্যমিক শিক্ষক প্রতিনিধি ফারুক হোসেনসহ অন্যান্য শিক্ষকবৃন্দ, ছাত্র-ছাত্রী এবং অভিভাবকবৃন্দ।

সমাবেশের বক্তব্যে জেলা তথ্য কর্মকর্তা শিল্পী মন্ডল বলেন, “মেয়েদের শিক্ষার হার বেড়েছে, কিন্তু বাল্যবিবাহের কারণে তাদের শিক্ষার সমাপ্তি ঘটে যায়। এ এলাকায় বাল্যবিবাহ এখনো ব্যাপক হারে প্রচলিত। নিরাপদ মাতৃস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হলে নর্মাল ডেলিভারি অবশ্যই স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতালে করানো উচিত।”

সভাপতির বক্তব্যে ইসমাইল হোসেন বলেন, “পুরুষ সমাবেশের পরিবর্তে নারী সমাবেশ আয়োজনের কারণ হলো মায়েদের সন্তান প্রতিপালনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা থাকে। সন্তান সবচেয়ে বেশি সময় তার মায়ের কাছেই থাকে। তাই দায়িত্ববান ও সচেতন মা হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নারীর ক্ষমতায়নে সরকারের নানা উদ্যোগ রয়েছে, কিন্তু এসব বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় বাধা বাল্যবিবাহ।”

তিনি বাল্যবিবাহের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে তা প্রতিরোধে সমন্বিত প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন। পাশাপাশি নারীদের স্বাবলম্বী করতে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর ও যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচির কথাও জানান।

পরিশেষে সভাপতি সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।




মেহেরপুর-১ আসনে যদি কোনো এক্সিডেন্ট হয়, সেটা এই মনোনয়নের কারণেই হবে

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. কামরুল হাসান বলেছেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে আমরা আকুল আবেদন করতে চাই মেহেরপুরে জেলা বিএনপির প্রতিটা মানুষের কাছে আপনার গোয়েন্দা টিম পাঠান। মেহেরপুরের জেলা বিএনপিকে যারা ভালোবাসে, তাদের কাছে আপনারা গোয়েন্দা টিম পাঠান কাকে দিয়ে মেহেরপুর-১ আসন বের করে নিয়ে আসা সম্ভব। মেহেরপুর-১ আসনে যদি কোনো এক্সিডেন্ট হয়, সেটা এই মনোনয়নের কারণেই হবে আমি মনে করি।

মেহেরপুর-১ আসনের দলীয় মনোনয়ন পুনঃবিবেচনার দাবিতে রবিবার বিকেলে শহীদ শামসুজ্জোহা পার্কে বিশাল গণজমায়েত অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই গণজমায়েতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, আমরা জেলা বিএনপি যে নির্দেশ দিব, সে নির্দেশ অনুযায়ী আপনারা কাজ করবেন। আমরা চাই যাকে মনোনয়ন দেওয়া হোক সমস্ত ওয়ার্ডে, সমস্ত ইউনিয়নের জেলা বিএনপি, থানা বিএনপি, পৌর বিএনপি সমস্ত জায়গায় জেলা বিএনপির অফিস আছে। সে সকল অফিস থেকে আমরা ধানের শীষের কান্ডারি নিয়ে নির্বাচন করব। ওয়ার্ড কমিটি করেছি আমরা ভোটের মাধ্যমে, ইউনিয়ন কমিটি করেছি ভোটের মাধ্যমে, পৌর কমিটি করেছি ভোটের মাধ্যমে, জেলা কমিটি করেছি ভোটের মাধ্যমে। আমরা কোনো জায়গায় কোনো কারচুপি করিনি। আমরা সমস্ত জায়গায় জনগণের মতামতের ভিত্তিতে কমিটি করেছি।

জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ইলিয়াস হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গণজমায়েতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুজিবনগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আমিরুল ইসলাম, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফয়েজ মোহাম্মদ, জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি আনসার উল হক, হাফিজুর রহমান হাফি, মীর গোলাম ফারুক, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রোমানা আহমেদ, ওমর ফারুক লিটন, সাবেক সদস্য জাকির হোসেন, সাবেক আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু সালেহ নাসিম, পৌর বিএনপির সভাপতি আব্দুল লতিফ বিশ্বাসসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আমিরুল ইসলাম বলেন, আমরা আশা করেছিলাম আমাদের কমিটির মধ্যে থেকে যোগ্য কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হবে। হঠাৎ করে সম্ভবত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। হতাশার কিছু নেই আপনাকে অপেক্ষা করতে বলেছিলাম ডিসেম্বরের ১৫ তারিখ পর্যন্ত। আপনি অপেক্ষা করেছেন। আপনারা আরও কয়েকদিন অপেক্ষা করুন। আমরা আশাবাদী আজকের শামসুজ্জোহা পার্কে উপস্থিত মানুষের ভাবনা, উপস্থিত বিএনপি মানুষের ভাবনা আপনারা যা চাচ্ছেন, আমাদের সকলের নেতা তারেক রহমান সেটা বুঝতে পারবেন। আমরা আশা করছি অচিরেই একটা ভালো খবর আপনারা পাবেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাকির হোসেন বলেন, সেই বিতর্কিত মাসুদ অরুণকে প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। মেহেরপুর জেলা কমিটি, মেহেরপুর ওয়ার্ড কমিটি, মেহেরপুর-১ আসন এই মনোনয়ন মানে না। তাই হাই কমিটিকে অনুরোধ জানাই অবিলম্বে মেহেরপুর-১ আসনের এই প্রাথমিক মনোনয়ন যাকে দিয়েছেন পুনঃবিবেচনা করুন। পুনঃবিবেচনা করতে হবে। এই শামসুজ্জোহা পার্কের সমস্ত মানুষের একটাই দাবি মেহেরপুর-১ এর মনোনয়ন পুনঃবিবেচনা করতে হবে।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী মিজান মেনন।

গণজমায়েতে নেতাকর্মীরা একবাক্যে মনোনয়ন পুনঃবিবেচনার দাবি জানান এবং আগামী নির্বাচনে দলের বিজয় নিশ্চিত করতে ঐক্যবদ্ধ থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।




চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর মহাসড়কে বাসের ধাক্কায় দুইজন নিহত

চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর মহাসড়কের আলুকদিয়া বাজার এলাকায় বাসের ধাক্কায় দুইজন নিহত হয়েছেন। রোববার দুপুর সাড়ে ১টার দিকে আলুকদিয়া বাজারের অদূরে এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন চুয়াডাঙ্গা সদরের আলুকদিয়া ইউনিয়নের মনিরামপুর গ্রামের কাছারিপাড়ার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী পারভীনা খাতুন (৪৫) এবং একই এলাকার ভ্যানচালক রমজান (২৮), তিনি আব্দুর রহমানের ছেলে।

এ ঘটনায় আহত হয়েছেন পারভীনার পুত্রবধূ আনিকা খাতুন (১৮) এবং রাজাপুর গ্রামের ইসরাত জাহান (২৬)।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চুয়াডাঙ্গা শহর থেকে একটি পাখিভ্যান তিনজন যাত্রী নিয়ে আলুকদিয়ার দিকে যাচ্ছিল। আলুকদিয়া বাজারের নিকটে পৌঁছালে চুয়াডাঙ্গা থেকে আসা মেহেরপুরগামী একটি যাত্রীবাহী বাস পেছন দিক থেকে ভ্যানটিকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান পারভীনা খাতুন। গুরুতর আহত ভ্যানচালক রমজান ও অন্যান্য যাত্রীদের স্থানীয়রা উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে যান।

সদর হাসপাতাল থেকে অবস্থার অবনতি হওয়ায় রমজানকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। তবে পরিবারের সদস্যরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে চুয়াডাঙ্গার নয়মাইল এলাকায় শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হলে পুনরায় সদর হাসপাতালে ফেরত আনেন। বিকেল ৪টায় জরুরি বিভাগে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

দুর্ঘটনার পর বাসচালক ও হেলপার পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিস স্থানীয়দের সহায়তায় উল্টে থাকা বাসের নিচ থেকে পারভীনার মরদেহ উদ্ধার করে। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খালেদুর রহমান জানান, ঘাতক বাসটি জব্দ করা হয়েছে। নিহতদের ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।




মেহেরপুরে তিন প্রতিষ্ঠানে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা

মেহেরপুরে ভোক্তা অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে তিনটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।

আজ রবিবার বিকেলে জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ মামুনুল হাসানের নেতৃত্বে এ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়।

অভিযান সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার রায়পুর বন্দর ও হোটেল বাজার এলাকায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯-এর ৫২, ৪৩ ও ৪৪ ধারায় অভিযুক্ত করা হয়। লাইসেন্স ছাড়া তেল ও গ্যাস বিক্রির অপরাধে মেসার্স শাহিন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী শাহিনুল ইসলামকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এ ছাড়া, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে বেকারি পণ্য উৎপাদনের অভিযোগে নিউ বেঙ্গল ফুডসের স্বত্বাধিকারী আলী হোসেনকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

অন্যদিকে, অবৈধ প্রক্রিয়ায় পেইন্ট উৎপাদনের অপরাধে নিভালাক পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী নাইমুর রহমানকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

অভিযানকালে জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা রিয়াজ মাহমুদ, র‌্যাব-১২ সিপিসি-৩ গাংনী ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার এস.বি. ওয়াহিদুজ্জামান এবং জেলা পুলিশের একটি টিম উপস্থিত ছিলেন।




নতুন কুঁড়িতে সেরাদের সেরা সুনামগঞ্জের শুভমিতা তালুকদার

সুর তাকে ডাকত। মঞ্চ তাকে টানত। এই টানে সাড়া দিয়েই সুনামগঞ্জের শুভমিতা তালুকদার নতুন কুঁড়ি প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। নতুন কুঁড়ির প্রতিটি ধাপেই শুভমিতা তার নিষ্ঠা, পরিশ্রম ও সংগীতের প্রতি গভীর ভালোবাসার পরিচয় দিয়েছে। নতুন কুঁড়ির আলো ঝলমলে মঞ্চে দাঁড়িয়ে সে প্রমাণ করেছে—মনোযোগ, অনুশীলন ও সৃজনশীলতা থাকলে যে-কোনো প্রতিযোগিতায় সফল হওয়া যায়।

বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) আয়োজিত শিশু-কিশোরদের প্রতিভা অন্বেষণ প্রতিযোগিতা ‘নতুন কুঁড়ি ২০২৫’-এ শুভমিতা তালুকদার ‘খ’ বিভাগে দেশসেরা হয়েছে। এই প্রতিযোগিতায় শুভমিতা রবীন্দ্রসংগীতে প্রথম, নজরুলসংগীতে দ্বিতীয় এবং দেশাত্মবোধক গানে পঞ্চম স্থান অর্জনের মাধ্যমে বহুমাত্রিক সংগীত প্রতিভার পরিচয় দিয়েছে। একই প্রতিযোগিতায় একাধিক বিষয়ে এমন সাফল্য তার সংগীতচর্চার গভীরতা ও নিষ্ঠারই বহিঃপ্রকাশ। শুভমিতার এই অসাধারণ সাফল্যে তার পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, শিক্ষক, সহপাঠী সকলেই অনেক আনন্দিত হয়েছেন।

এর আগেও জাতীয় পর্যায়ে সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে শুভমিতা তালুকদার। ২০২৩ সালে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি আয়োজিত জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতায় শুভমিতা উচ্চাঙ্গ সংগীতে তৃতীয় স্থান অর্জন করে। ২০২৪ সালের জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্রসংগীতে সে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে। ছোটবেলা থেকেই তার কণ্ঠে সংগীতের যে সাবলীলতা, মনোযোগ ও আবেগের প্রকাশ দেখা যায়, তা জাতীয় মঞ্চে তাকে পরিচিত করে তোলে।

শুভমিতা ২০১২ সালের ১৪ অক্টোবর সুনামগঞ্জ জেলার মধ্যনগর উপজেলার কলুমা গ্রামে জন্মগ্রহণ করে। বর্তমানে সে সুনামগঞ্জ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। মর্নিং শিফটের বি শাখায় শুভমিতার রোল ০১। পড়াশোনা ও সংগীত—দুটিই সমান যত্নে সামলে নেওয়ার চেষ্টা করছে দেশসেরা এই শিশুশিল্পী।

শুভমিতার বাবা দ্বীপন কুমার তালুকদার এমপিওভুক্ত একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেন। মা শান্তনা সরকারও শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত। বাবা-মায়ের সাংস্কৃতিক অনুরাগ, উৎসাহ ও সহায়তা শুভমিতার সংগীতযাত্রাকে করেছে শক্তিশালী ও গতিময়। প্লে-গ্রুপে থাকা অবস্থায় শুভমিতা সংগীতচর্চা শুরু করে। মনের ভালো লাগা থেকে সে সংগীতচর্চা চালিয়ে যাচ্ছে। তার কাছে গান শুধু প্রতিযোগিতার প্রস্তুতি নয়, এটি তার আনন্দ, আবেগ ও আত্মপ্রকাশের অন্যতম প্রিয় মাধ্যম। সংগীতচর্চায় সে কখনো ক্লান্ত হয় না; বরং নতুন সুর শেখার আগ্রহ তাকে আরও উদ্দীপনা দেয়।

বাংলাদেশে শিক্ষকের সন্তানদের সাফল্যের হার যে তুলনামূলক বেশি—শুভমিতার ক্ষেত্রে সেটি আরও একবার প্রমাণিত হয়েছে। পারিবারিক শিক্ষামূলক পরিবেশ, শৃঙ্খলার চর্চা এবং মূল্যবোধ শুভমিতাকে সংগীতে মনোযোগী ও অধ্যবসায়ী করে তুলেছে। পারিবারিক শিক্ষার এই মজবুত ভিত্তি তাকে জাতীয় পর্যায়ের সেরা হওয়ার পথে এগিয়ে যেতে সবচেয়ে বেশি সহায়তা করেছে।

শুভমিতার গানের শিক্ষক দুজন—সন্তোষ কুমার চন্দ মন্তোষ ও অনিমেষ বিজয় চৌধুরী। গুণী এই দুই শিক্ষকের আন্তরিক প্রচেষ্টা শুভমিতার সংগীতশিক্ষার মূল ভিতকে শক্ত করেছে। তাঁরা দুজনেই মনে করেন—সংগীতের প্রতি ভালোবাসা এবং অধ্যবসায়ের কারণে শুভমিতা নতুন কুঁড়ি প্রতিযোগিতায় অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে। এভাবে সংগীতচর্চা চলমান রাখলে একদিন সে দেশের স্বনামধন্য কণ্ঠশিল্পী হবে।

নতুন কুঁড়ির আঞ্চলিক বাছাই পর্বে শুভমিতা অংশ নেয় সিলেট শিল্পকলা একাডেমিতে। সেখানে তার প্রথম পরিবেশনা বিচারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। আঞ্চলিক পর্বে উত্তীর্ণ হওয়ার পর শুভমিতাকে নিয়ে তার পরিবার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। প্রতিযোগিতার প্রতিটি পর্যায়ে পরিবার ও আত্মীয়-স্বজন শুভমিতাকে উৎসাহ দিয়েছে।

নতুন কুঁড়ির মঞ্চে শুভমিতার প্রতিটি পরিবেশনা হাজারো দর্শক-শ্রোতাকে মুগ্ধ করেছে। নতুন কুঁড়ি প্রতিযোগিতায় শুভমিতার পরিবেশিত গানের মধ্যে ছিল—‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে…’, ‘দোলা লাগিল দখিনার বনে বনে…’, ‘আমারে তুমি অশেষ করেছ…’ প্রভৃতি। তার কণ্ঠ, সুর ও গায়কি বিচারকমণ্ডলীকে মুগ্ধ করেছে।

গত ১৩ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের কাছ থেকে ট্রফি ও তিন লক্ষ টাকার চেক গ্রহণ করে ‘খ’ শাখার দেশসেরা শিশুশিল্পী শুভমিতা। পুরস্কার গ্রহণের পর শুভমিতা জানায়, ‘‘আমি বড় হয়ে একজন গুণী শিল্পী হতে চাই। দেশের সংগীতকে বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে চাই। নতুন কুঁড়ি প্রতিযোগিতার সাফল্য আমার সংগীতজীবনে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।’’

বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নতুন কুঁড়ি প্রতিযোগিতার ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে। নতুন কুঁড়ির মঞ্চ শিশুদের শৈল্পিক বিকাশের পাশাপাশি তাদের দায়িত্ববোধ, শৃঙ্খলা ও আত্মবিশ্বাসও বাড়িয়ে তোলে। ১৯৭৬ সালে যাত্রা শুরু করা এই প্রতিযোগিতা ২০০৫ সালে এসে বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মোঃ মাহফুজ আলমের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দীর্ঘ ২০ বছর পর নতুন উদ্যমে শুরু হয় নতুন কুঁড়ি প্রতিযোগিতা। এ বছর নতুন কুঁড়ি প্রতিযোগিতায় প্রায় ৩৯ হাজার প্রতিযোগী অংশ নেয়। ৬৪ জেলাকে ১৯টি অঞ্চলে ভাগ করে ২৪ থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আঞ্চলিক বাছাই পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। আঞ্চলিক পর্ব থেকে ‘ক’ ও ‘খ’ উভয় শাখার সকল ক্যাটাগরিতে প্রায় ১৪ হাজার প্রতিযোগী বিভাগীয় পর্যায়ে উন্নীত হয়। দেশের আট বিভাগে একযোগে এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিযোগিতায় মোট বিষয় ছিল ১২টি। এগুলো হলো : অভিনয়, আধুনিক গান, আবৃত্তি, উচ্চাঙ্গ নৃত্য, কৌতুক, গল্পবলা, দেশাত্মবোধক গান, নজরুলসংগীত, রবীন্দ্রসংগীত, লোকসংগীত, সাধারণ নৃত্য ও হামদ-নাত। বিভাগীয় পর্যায় শেষে শুরু হয় চূড়ান্ত পর্ব। আট বিভাগ থেকে ১ হাজার ৪০ জন প্রতিযোগী চূড়ান্ত পর্বে অংশ নেয়। চূড়ান্ত পর্বে উত্তীর্ণ ২৭৯ জন প্রতিযোগী সেরা ১০ পর্বে অংশগ্রহণ করে। এই পর্ব থেকে সেরা ৫ জন বাছাই করা হয়। এরপর ফাইনালে ‘ক’ বিভাগ থেকে ৩৬ জন এবং ‘খ’ বিভাগ থেকে ৩৭ জন প্রতিযোগীকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়। দীর্ঘ এই প্রক্রিয়ায় ‘খ’ বিভাগে সেরাদের সেরা অর্থাৎ চ্যাম্পিয়ন হয় শুভমিতা তালুকদার।

সদ্য সমাপ্ত নতুন কুঁড়ি প্রতিযোগিতার বাছাই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও ন্যায্যভাবে পরিচালিত হয়েছে। এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের প্রতিভা যাচাইয়ের দায়িত্বে ছিলেন ২৯৩ জন বিজ্ঞ বিচারক, যাঁরা প্রতিটি পর্যায়ে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে মূল্যায়ন করেছেন। প্রতিযোগিতাটিকে অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে এবার ব্যাপক প্রচার কার্যক্রম চালানো হয়েছে। এর ফলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিশু-কিশোররাও এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। ধর্ম, বর্ণ-নির্বিশেষে সকল শ্রেণির শিশু-কিশোর এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। বিটিভিতে প্রচারিত নতুন কুঁড়ি প্রতিযোগিতার প্রতিটি পর্ব বিটিভির ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেলেও প্রচার করা হয়েছে। অনেকেই পরিচিত শিশু-কিশোরদের পরিবেশনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেছেন। এর ফলে নতুন কুঁড়ি প্রতিযোগিতাটি নেটিজেনদের কাছে অনলাইন বিনোদন হিসেবেও বিবেচিত হয়েছে।

ব্যতিক্রম ক্ষেত্র ছাড়া প্রতিটি শিশু বিশেষ কোনো প্রতিভা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। শিশুদের বিশেষ প্রতিভা খুঁজে বের করাই নতুন কুঁড়ি প্রতিযোগিতার মূল উদ্দেশ্য। নতুন কুঁড়ি প্রতিযোগিতা শুভমিতার মতো অসংখ্য প্রতিভা আবিষ্কার করেছে, যা দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে সমৃদ্ধ করেছে। নতুন কুঁড়ি শিশু-কিশোরদের কাছে শুধু একটি প্রতিযোগিতা নয়, বরং শিল্পজীবনের প্রথম পাঠশালা। অল্প বয়সে প্রতিযোগিতার মঞ্চে দাঁড়িয়ে অভিনয় করা, গানের সুর তোলা, গল্পবলা কিংবা আবৃত্তি শিশু-কিশোরদের সারাজীবনের আত্মবিশ্বাস গড়ে দেয় এবং তাদের ভবিষ্যতের পথকে আলোকিত করে।

প্রত্যন্ত গ্রামের সাধারণ পরিবেশ থেকে উঠে এসে জাতীয় মঞ্চে নিজের জায়গা করে নেওয়া শুভমিতার জন্য মোটেই সহজ ছিল না। শহরের মতো পর্যাপ্ত সাংস্কৃতিক অবকাঠামো বা প্রশিক্ষণের সুযোগ না থাকলেও তার দৃঢ় মনোযোগ, নিয়মিত অনুশীলন এবং অবিচল অধ্যবসায়ই তাকে সামনে এগিয়ে নিয়েছে। পরিবার ও শিক্ষকদের অকুণ্ঠ উৎসাহ এবং নিজের ইচ্ছাশক্তিকে পাথেয় করে সে ধাপে ধাপে তৈরি করেছে সাফল্যের পথ। গ্রামের সীমাবদ্ধতা পেরিয়ে জাতীয় পর্যায়ে শুভমিতার দেশসেরা হওয়া প্রমাণ করে—বাংলাদেশের যে-কোনো প্রান্তের শিশুই পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে বড় সাফল্য অর্জন করতে পারে। শুভমিতার এই সাফল্য দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের আরও অনেক শিশু-কিশোরকে স্বপ্ন দেখাতে অনুপ্রাণিত করবে।

লেখক : বিসিএস তথ্য ক্যাডারের সদস্য এবং জনসংযোগ কর্মকর্তা পদে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে কর্মরত




মেহেরপুরের গড়পুকুর এখন বিনোদন ও খাবারের কেন্দ্রস্থল

মেহেরপুর শহরের রাস্তাঘাট একসময় ছিলো নানান ধরনের রাস্তার খাবারের দোকানে ভরপুর। ফুটপাতজুড়ে চলতো জমজমাট ব্যবসা, তবে এতে সাধারণ মানুষের চলাচলে ভোগান্তিও ছিলো কম নয়। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে মেহেরপুরের তৎকালীন জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ আবদুল ছালামের সিদ্ধান্তে ফুটপাতকে পুরোপুরি পথচারীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া এবং এসব দোকানিকে গড়পুকুর এলাকায় স্থানান্তর করা।

গড়পুকুর চত্বর ব্যবসায়ীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হলে সেটি ধীরে ধীরে রূপ নেয় এক অনন্য আড্ডাখানায়। এখন গড়পুকুর শুধু পুকুর নয় এটি এক প্রকারের মেলা। প্রতিদিনই এখানে মানুষের সমাগম বেড়েই চলেছে। পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, তরুণ-তরুণী সকলের ভিড় জমে থাকে সারাদিন।

ঘুরতে আসা মোঃ সাওন হোসেন বলেন, গড়ে এখন একটা মনোরম পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছি। খাওয়া-দাওয়া করব আর সময় কাটাবো।

মাহি মুবাশ্বেরা বলেন, এখন খাবার কিনতে অনেক সুবিধা হচ্ছে। আগে রাস্তায় দাঁড়িয়ে খাবার কেনার সময় দুর্ঘটনার ঝুঁকি ছিল, কিন্তু এখন আর সে ঝুঁকি নেই। বাচ্চারাও গড়ের পাশে গিয়ে খেলতে পারে। যদিও পুকুরে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তবে একটু খেয়াল রাখলেই ঠিক থাকবে। এখন বসে খাওয়া যায়, গল্প করা যায় একটা সুন্দর পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

শুবতিপুরের মোঃ রাব্বি বলেন, রাস্তার তুলনায় গড়ের খাবার অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর। আগে ধুলাবালি, ময়লা খাবারে পড়ত, এখন আর সেই সমস্যা নেই। এছাড়া যানজটের সমস্যা থেকেও আমরা মুক্ত।

এনামুল হক বলেন, আগে রাস্তায় প্রচুর যানজট হতো। কিন্তু দোকানগুলো গড়ে স্থানান্তর হওয়ায় রাস্তা ফাঁকা হয়েছে এবং গড় এখন মেলার মতো লাগছে।

বিভিন্ন ধরনের খাবারের সমাহার ও খোলামেলা পরিবেশ সবমিলিয়ে গড়পুকুর এখন ঘুরতে যাওয়ার অন্যতম জনপ্রিয় স্থান। দোকানিরাও নতুন জায়গায় স্বস্তি নিয়ে ব্যবসা করছেন। তাদের মতে, আগে ফুটপাতে জায়গা সংকট, যানজট আর বসার স্থানের সংকটে ব্যবসা করা কঠিন ছিলো। এখন গড়পুকুরে তারা নির্ভয়ে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশে কাজ করতে পারছেন।

এ জে মোমো স্টেশনের আয়শা বলেন, আগে রাস্তায় মানুষজনকে বসানো সম্ভব ছিল না। কিন্তু এখন বসার ব্যবস্থা করায় ব্যবসা ভালো হচ্ছে।

মিস্টার স্মুদির ব্যবসায়ী সাকিব মাহমুদ বাপ্পী বলেন, রাস্তার তুলনায় এখানে অনেক ভালো ব্যবসা করছি। আগে জায়গা ছিল ছোট, অস্বাস্থ্যকর এবং নানা সমস্যায় পড়তে হতো। এখন আমরা ভালোভাবে খাবার রান্না করতে পারি, বিক্রি করতে পারি সবই সুবিধা হচ্ছে।

বার্গার ব্রাইটের রাকিবুল হাসান বলেন, এখানে খেতে আসা মানুষ আছে, কিন্তু খাবার নিয়ে যাওয়ার (টেকঅ্যাওয়ে) মানুষ কম। রাস্তায় যতটা বিক্রি হতো, এখানে তার চেয়ে কিছুটা কম বলা যায়।

গড়পুকুরের এই রূপান্তর শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে, পথচারীদের চলাচল সহজ করেছে এবং ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য সৃষ্টি করেছে নতুন সম্ভাবনা।