মেহেরপুরে জামায়াতের নির্বাচনী মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা

জামায়াতে ইসলামী মেহেরপুর জেলা শাখার উদ্যোগে বিশাল নির্বাচনী মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বুধবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে মেহেরপুর সরকারি কলেজ মাঠ প্রাঙ্গণ থেকে এ শোভাযাত্রা শুরু হয়।

শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেন মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী ও জেলা জামায়াতের আমীর  তাজউদ্দিন খান। নির্বাচনি প্রচারণার অংশ হিসেবে আয়োজিত এ মোটরসাইকেল শোভাযাত্রায় জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন মেহেরপুর জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি ইকবাল হুসাইন, জেলা নায়েবে আমীর মাওলানা মহাবুব উল আলম, জেলা রাজনৈতিক সেক্রেটারি কাজী রুহুল আমিন, জেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি আব্দুর রউফ মুকুল, সদর উপজেলা আমীর মাওলানা সোহেল রানা, মুজিবনগর উপজেলা আমীর মাওলানা খানজাহান আলী, জেলা বায়তুলমাল সম্পাদক জারজিস হোসাইন, সদর উপজেলা সেক্রেটারি মাস্টার জাব্বারুল ইসলাম ও মুজিবনগর উপজেলা সেক্রেটারি খাইরুল বাশারসহ জামায়াতের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।

শোভাযাত্রাটি সদর উপজেলা থেকে শুরু হয়ে ঐতিহাসিক মুজিবনগর এলাকা প্রদক্ষিণ করে। পরে পুনরায় শহরে ফিরে পৌর কলেজে এসে সমাপ্ত হয়।

সমাপনী বক্তব্যে মাওলানা তাজউদ্দিন খান শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করায় সাধারণ জনগণ ও নেতাকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠপর্যায়ে জনসম্পৃক্ততা আরও জোরদার করা হবে। এ সময় তিনি আসন্ন নির্বাচনে সফলতা অর্জনের লক্ষ্যে নেতাকর্মীদের সদা প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান।




ঝিনাইদহে নবাগত জেলা প্রশাসকের সাথে সাংবাদিকদের মতবিনিময়

ঝিনাইদহে নবাগত জেলা প্রশাসকের সাথে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় কর্মরত সাংবাদিকদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বুধবার (১৯ নভেম্বর) সকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সাইফুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক আব্দুল্লাহ আল মাসউদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা পিএএ, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক রথীন্দ্রনাথ রায়।

জেলা তথ্য অফিসার আব্দুর রউফ এর পরিচালনায় মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন ঝিনাইদহ জেলা ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সভাপতি আসিফ কাজল, রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি এম এ কবীর, জেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি মিজানুর রহমান, সিনিয়র সাংবাদিক আলাউদ্দিন আজাদ, মাহমুদ হাসান টিপু প্রমুখ।

সভায় জেলা প্রশাসক জেলার উন্নয়ন, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, সেবামুখী প্রশাসন এবং একটি গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণ মূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি বলেন, “গণমাধ্যম সমাজের দর্পণ। প্রশাসনের উন্নয়ন কার্যক্রমে গণমাধ্যমের সঠিক তথ্য তুলে ধরা এবং গঠনমূলক সমালোচনা আমাদের কাজকে আরও গতিময় করবে।”

এ সময় সাংবাদিকরা জেলার বিভিন্ন সমস্যা, চ্যালেঞ্জ ও অগ্রাধিকারমূলক উন্নয়ন ইস্যু তুলে ধরার পাশাপাশি প্রশাসনের সাথে গণমাধ্যমের সমন্বয়ের গুরুত্ব বিষয়ে বক্তব্য রাখেন ।

মতবিনিময় শেষে উভয়পক্ষই জেলার সার্বিক উন্নয়ন, জনসেবায় গতিশীলতা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ভবিষ্যতে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।




প্রতারণার দায়ে ঝিনাইদহে এক প্রধান শিক্ষকের সাত বছরের সশ্রম কারাদন্ড

জাল সনদে চাকরি, প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতারণার দায়ে ঝিনাইদহে এক প্রধান শিক্ষককে ৭ বছর সশ্রম কারাদন্ড ও ১০ হাজার টাকার অর্থদন্ড করেছে ঝিনাইদহের একটি বিচারিক আদালত।

আজ বুধবার (১৯ নভেম্বর) দুপুরে ঝিনাইদহ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্টেট আদালতের বিচারক মোঃ মাসুদ আলী এই রায় ঘোষণা করেন।

দন্ডিত ব্যক্তির নাম রণি আক্তার। তিনি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গোয়ালপাড়া অধ্যক্ষ মোশাররফ হোসেন-সালেহা খাতুন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক ছিলেন এবং একই উপজেলার দুর্গাপুর নারায়নপুর পুটিয়া গ্রামের নরুল ইসলামের ছেলে। ২০২৪ সালের ১৪ নভেম্বর ওই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নাসরিন আক্তার, রণি আক্তারের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও জাল সনদ দিয়ে চাকরী করার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন।

বিজ্ঞ আদালত সাক্ষ্য প্রমান শেষে অভিযোগের সত্যতা প্রমানিত হওয়ায় এই রায় প্রদান করেন। সরকার পক্ষের আইনজীবী ছিলেন এ্যাড. এ এস এম রাকিবুল হাসান ও আসামী পক্ষে এ্যাড.তারিকুল ইসলাম মামলাটি পরিচালনা করেন।

মামলা সুত্রে জানা গেছে, আসামী রণি আক্তার গোয়ালপাড়া অধ্যক্ষ মোশাররফ হোসেন-সালেহা খাতুন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসাবে কর্মরত ছিলেন। তিনি জাল জালিয়াতী চক্রের সদস্য হওয়ায় তার শিক্ষক নিবন্ধন ও বিএড সনদ পত্র জাল জালিয়াতির মাধ্যমে সৃজন করে তাহা সঠিক বলে বিদ্যালয়ে চাকরি করে আসছিলেন। চাকরী করার সুবাদে তিনি নিয়োগ বানিজ্যসহ স্কুলের লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০২২ সালের জুলাই মাসে বিদ্যালয়টি এমপিও ভুক্ত হয়। এমপিও ভুক্ত হওয়ার পর আসামী রণি আক্তার তার সরকারী বেতন ভাতা প্রাপ্তির লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর তার শিক্ষক নিবন্ধন ও বিএড সনদ পত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র দাখিল করেন। আসামীর দাখিলকৃত শিক্ষক নিবন্ধন ও বিএড সনদসহ অন্যান্য কাগজ পত্র যাছাই বাছাই অন্তে সংশ্লিষ্ট কর্তৃকপক্ষ ভুয়া ও জাল বলে প্রমানিত হয় এবং তার সরকারী বেতন ভাতা বাতিল করে।

আসামী উক্ত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকা অবস্থায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আয়কৃত টাকা ও কাগজপত্র বুঝিয়ে না দিয়ে ২০২৪ সালের ৯ আগষ্ট বিদ্যালয় থেকে পালিয়ে আত্মগোপন করেন। রায় ঘোষণার সময় আসামী রণি আক্তার উপস্থিত ছিলেন এবং তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।




ঝিনাইদহে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে তিন দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালা

ঝিনাইদহের শৈলকুপায় বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে ৩ দিনব্যাপী সক্ষমতা বৃদ্ধি বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সেভ’র আয়োজনে উপজেলার এম.কে. মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কে.কে.পি.বি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ফুলহরি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই প্রশিক্ষণে মোট ১’শ ৫জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে।

বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কিশোরী ও নাগরিক সমাজের সদস্যদের ক্ষমতায়ন (গার্লপাওয়ার) প্রকল্পের আওতায় সার্ভিস অ্যান্ড ভিশন ফর এডিফাই (সেভ) ও বান্ধব, ডেনমার্ক’র যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এ প্রশিক্ষণে কিশোরীদের নেতৃত্ব বিকাশ, আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি, এবং বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে তাদের সক্রিয় ভূমিকা নিশ্চিত করা বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়।

আযোজকরা জানায়, প্রশিক্ষণ শেষে প্রতিটি বিদ্যালয়ে ২০ জন করে কিশোরীকে বাছাই করে Adolescent Girls Club (AGC) গঠন করা হয়। নির্বাচিত সদস্যদের মধ্য থেকে সভাপতি, সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ ও সাধারণ সদস্য নির্বাচন করা হয়। একই এলাকার ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সী স্কুলগামী অষ্টম থেকে দশম শ্রেণীর ২০ জন মেয়েকে নিয়ে ক্লাবটি গঠিত হয়।

অংশগ্রহণমূলক সভার মাধ্যমে নেতৃত্বমূলক পদগুলো নির্ধারণ করা হয়। ক্লাবের সদস্যরা নিয়মিত মাসিক সভা আয়োজন, স্কুল ও কমিউনিটি পর্যায়ে সচেতনতা কর্মসূচি পরিচালনা, এবং বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবেন বলে আশাবাদ ব্যাক্ত করেন আয়োজকরা।




দুইশো বছরে রেল: আমাদের সফলতা, বাস্তবতা ও প্রত্যাশা

“কত অজানারে জানাইলে তুমি কত ঘরে দিলে ঠাঁই/ দূরকে করিলে নিকট বন্ধু পরকে করিলে ভাই।“

কবিগুরুর এই পংক্তি আর যাই করুক রেলের অগ্রযাত্রাকে চিত্রিত করেছে দারুণ ভাবে। ১৮২৫ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর। এই দিনে ইংল্যান্ডের ছোট্ট শহর ডার্লিংটনে জর্জ স্টিফেনসনের তৈরি লোকোমোশন-১ নামক বাষ্পচালিত রেলগাড়ি স্টকটন ও ডার্লিংটনের মধ্যে কয়লাবাহী ও যাত্রীবাহী ক্যারেজ নিয়ে যাত্রা করেছিলো। সেদিনের সেই সাদামাটা প্রযুক্তি আজ বিশ্বজুড়ে অর্থনীতি, সমাজ, রাজনীতি, মানুষের জীবনযাত্রা, এক কথায় বর্তমান সভ্যতার গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তিতে পরিণত হয়েছে। রেল যোগাযোগ আজ সভ্যতার মেরুদণ্ড বললেও অত্যুক্তি হবে না বোধ করি। গত ২৭ সেপ্টেম্বর ছিলো রেলওয়ের ইতিহাসে দুইশো বছর পূর্তির মাইলফলক।

বিশ্বব্যাপী দিনটি উদ্‌যাপিত হয়েছে সাড়ম্বরে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে রেলযাত্রীদের নিকট দিনটি ছিলো আবেগঘন ও স্মরণীয় মুহূর্ত। বাংলাদেশে দিবসটি উদ্‌যাপনে কোনো আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠান চোখে পড়েনি কিন্তু লক্ষ লক্ষ রেলযাত্রী ও পঁচিশ হাজারেরও বেশি রেলকর্মীর নিকট দিনটির গুরুত্ব ছিলো অন্যরকম। ইতিহাস, ঐতিহ্য আর অনুভূতির মিশ্রণে দিনটি সবার মানসপটে যোগ করেছে ভিন্ন মাত্রা, যদিও তার বহিঃপ্রকাশ তেমন একটা ঘটেনি। সাধারণ যাত্রীদের হাজারো অভিযোগ, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলার ধারাবাহিক দুর্নাম এবং পশ্চাৎপদ প্রযুক্তি ও সীমাবদ্ধ সেবা নিয়ে রেলকর্মীরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে রেলকে সচল রাখার। পর্দার অন্তরালে তাদের সেই অক্লান্ত প্রচেষ্টার মতো রেলওয়ের দুইশো বছর পূর্তির অনুষ্ঠান উদ্‌যাপনের আকাঙ্ক্ষাও তেমনি অন্তরালেই রয়ে গেছে।

আঠারো শতকে ইউরোপে শিল্প বিপ্লবের ফলে পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি পায় ব্যাপকভাবে। এসব পণ্য পরিবহণ ও স্থানান্তরের জন্য পরিবহন ব্যবস্থায় সংকট দেখা দেয়। বিশেষ করে ঘোড়ায় টানা গাড়ি ও নৌপথ কিংবা সড়ক পথে এত বেশী পরিমাণ পণ্য পরিবহন দুষ্কর হয়ে পড়ে। তাছাড়া কাঙ্ক্ষিত স্থানে নৌপথ না থাকা, প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে স্থলপথে যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনে জটিলতা, অপ্রতুল যানবাহন ইত্যাদি কারণে এ সংকট আরো তীব্র আকার ধারণ করে। এ প্রেক্ষাপটে স্টিফেনসনের রেল প্রযুক্তি দ্রুত বাণিজ্যিক রূপ লাভ করে এবং তা দ্রুত সম্প্রসারিত ও বিস্তৃত হতে থাকে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে রেল যোগাযোগ হয়ে উঠে পণ্য ও যাত্রী পরিবহনের প্রধান মাধ্যম। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে স্থাপন করা হয় রেললাইন, লোকোমোটিভের উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধি পায় বহুগুণ। ১৮৩০ সালে লিভারপুল ও ম্যানচেষ্টারের মধ্যে স্থাপন করা হয় রেলওয়ে, ১৮৬৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র চালু করে ট্রান্স কন্টিনেন্টাল রেলওয়ে, ১৮৯১-১৯১৬ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন (বর্তমান রাশিয়া) চালু করে ৯২৮৯ কিলোমিটার দীর্ঘ ট্রান্স সাইবেরিয়ান রেলওয়ে। পর্যায়ক্রমে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের দুর্গম এলাকাসমূহে চালু হতে থাকে রেলপথ। মানুষের যোগাযোগ বৃদ্ধি পেতে থাকে। দুর্গম বলে আর কোনো এলাকা অবশিষ্ট থাকে না। স্বল্প সময়ে দূর-দূরান্ত থেকে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে রেলওয়ে সভ্যতার বিকাশকে ত্বরান্বিত করে। বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভ্রমণের সময় কমে বিশ্ব হয়ে উঠতে থাকে আজকের গ্লোবাল ভিলেজ।

ভারতীয় উপমহাদেশে রেলের যাত্রা শুরু হয় ১৮৫৩ সালে মহারাষ্ট্রের দুই শহর বোম্বে থেকে থানে পর্যন্ত রেল লাইন স্থাপনের মাধ্যম। উপমহাদেশে রেলপথ স্থাপনের উদ্দেশ্য ছিলো মূলত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের স্বার্থ রক্ষা। এ দেশে রেলের যাত্রা শুরু হয় ১৮৬২ সালে যখন কলকাতার-রানাঘাট হয়ে কুষ্টিয়া পর্যন্ত রেল চালু হয়। বর্তমান বাংলাদেশ ভূখণ্ডে এর বিস্তৃতি হয় দর্শনা থেকে জগতি পর্যন্ত। পরবর্তীতে এই রেললাইন রাজশাহী, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিস্তৃত হতে থাকে। এসব রেললাইন স্থাপনের মূল উদ্দেশ্য ছিলো এ দেশে উৎপাদিত শিল্পের কাঁচামাল বিশেষ করে পাট, চা, কয়লা, কাঠ ইত্যাদি চট্টগ্রাম ও কলকাতা বন্দরের মাধ্যমে দ্রুত ব্রিটেনে পাঠানো, বিদ্রোহ দমনের জন্য সামরিক সরঞ্জাম ও সৈন্য স্থানান্তর, সাম্রাজ্যের ভিত্তি শক্তিশালী করার জন্য রাজস্ব আয় বৃদ্ধি ইত্যাদি। উপমহাদেশে রেললাইন স্থাপনের উদ্দেশ্য ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনব্যবস্থার স্বার্থ রক্ষা হলেও এতদঞ্চলের মানুষ এর কিছু কিছু সুফল ভোগ করতে পেরেছে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের মানুষ প্রথমবারের মতো শহরে যাতায়াত করতে পেরেছে, কৃষিপণ্য দ্রুত বাজারজাত করা সম্ভব হয়েছে, নতুন ধরনের কর্মসংস্থান শুরু হয়েছে ইত্যাদি। কিন্তু রেল যোগাযোগ এতদঞ্চলে স্থানীয় উন্নয়নের পরিবর্তে শোষণের হাতিয়ার হিসেবেই ব্যবহার হয়েছে অধিক মাত্রায়।

১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের ফলে বর্তমান বাংলাদেশ অঞ্চলে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) রেল যোগাযোগ ভারত ও পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। অল্প কিছু দিনের মধ্যে সীমিত অবকাঠামো, স্বল্প জনবল, অপর্যাপ্ত কোচ ও ইঞ্জিন নিয়ে চালু হয় ইস্ট পাকিস্তান রেলওয়ে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের আগে পর্যন্ত ইস্ট পাকিস্তান রেলওয়ে পর্যাপ্ত বিনিয়োগের অভাবে পূর্ণ সক্ষমতা নিয়ে তার কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেনি। উপরন্তু, মুক্তিযুদ্ধকালে রেল অবকাঠামো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা গেরিলা আক্রমণের মাধ্যমে পাক হানাদার বাহিনীর রসদ পরিবহনে ব্যবহৃত রেল নেটওয়ার্কর বিদ্যমান বিপুল সংখ্যক সেতু ধ্বংস করে। স্টেশনে আগুন ধরিয়ে দেয়, রেললাইন উপড়ে ফেলে, মালবাহী ক্যারেজ, ওয়াগন পুড়িয়ে দেয়, এক কথায় যুদ্ধকালীন সময়ে রেল যোগাযোগ অবকাঠামো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যুদ্ধ-বিধ্বস্ত রেল অবকাঠামো পুনর্নির্মাণ, জনবল সংকট মোকাবিলা, পর্যাপ্ত কোচ, ওয়াগন ও লোকোমোটিভ সংগ্রহ সর্বোপরি পর্যাপ্ত তহবিল সঙ্কটের চ্যালেঞ্জ নিয়ে যাত্রা করে বাংলাদেশ রেলওয়ে।

চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে উত্তরোত্তর উন্নতি ও সম্প্রসারণ ঘটেছে বাংলাদেশ রেলওয়ের। ১৯৪৭ সালের পূর্বে ভারতবর্ষে রেলওয়ে পরিচালিত হতো তৎকালীন রেলওয়ে বোর্ডের মাধ্যমে। ১৯৭৩ সালে রেলওয়ে বোর্ড বিলুপ্ত করে একে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সাথে সংযুক্ত করা হয়। ১৯৮২ সালে গঠন করা হয় রেলপথ বিভাগ যার সচিব ডিজি-কাম-সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। ১৯৯৫ সালে গঠন কর হয় বাংলাদেশ রেলওয়ে অথরিটি (বিআরএ)। পরবর্তীতে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে রেলপথ বিভাগ এবং ৪ ডিসেম্বর ২০১১ সালে পৃথকভাবে রেলপথ মন্ত্রণালয় গঠন করা হয়।

স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে রেলওয়ের প্রশাসনিক সংস্কারের পাশাপাশি নতুন নতুন ট্র্যাক নির্মাণ, সেতু নির্মাণ, ট্র্যাক ও সেতু পুনর্বাসন, লোকোমোটিভ ও কোচ সংগ্রহ, মালবাহী ওয়াগন ও ক্যারেজ সংগ্রহের মাধ্যমে রেলের যাত্রী ও পণ্য পরিবহন সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুণ।

বর্তমানে সারাদেশে প্রতিদিন আড়াই লাখেরও বেশি যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা রয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ের। পুরাতন ও নিম্নগতির মিটারগেজ লাইনকে ডুয়েলগেজ এবং নতুন স্থাপিত ট্র্যাকসমূহে ব্রডগেজ লাইন নির্মাণ করা হয়েছে এবং হচ্ছে। বর্তমানে সারাদেশে সচল রেলরুটের দৈর্ঘ্য ৩৪৯৩.৫৪ কিলোমিটার। এছারা আরও ৬১.৬০ কিলোমিটার মিটারগেজ রেল লাইন অব্যবহৃত অবস্থায় রয়েছে। দেশে ১৫৬টি মিটারগেজ ও ১৩২টি ব্রডগেজ, মোট ২৮৮টি লোকোমোটিভ রয়েছে। অপরদিকে ক্যারেজ রয়েছে ১৮৩৮টি, এর মধ্যে মিটারগেজ ১২৬৭টি ও ব্রডগেজ ৫৭১টি। এছারা পণ্যবাহী ওয়াগন রয়েছে ৩৭৪১টি তন্মধ্যে ওয়াগন ৩৬১৬টি, লাগেজভ্যান ১২৫টি। আন্তঃনগর, মেইল, কমিউটার ও লোকাল সব মিলিয়ে প্রতিদিন রেলপথে যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা প্রায় ২ লাখ। সংখ্যা ও বিস্তৃতি বিবেচনায় রেলপথ সড়ক থেকে পিছিয়ে থাকলেও জনপ্রিয়তায় রেল এক নম্বরে রয়েছে।

ভবিষ্যতে সকল রেল ট্র্যাক ব্রডগেজে রূপান্তরের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা রয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ের। প্রতিবছর উত্তরোত্তর বাড়ানো হচ্ছে রেলওয়ের বরাদ্দ এবং এ খাতে বিনিয়োগ। যাত্রী পরিবহনে সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সেবার গুণগত মান বৃদ্ধি পেয়েছে অনেক। বর্তমানে ট্রেনের শতভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে মানুষ ঘরে বসেই কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যের টিকিট সংগ্রহ করতে পারছে অনায়াসে। পুরাতন স্টেশনসমূহকে সংস্কার করে আধুনিক স্টেশন ও বিশ্রামাগার নির্মাণ করা হয়েছে। স্টেশনসমূহে নাগরিক সুবিধা সম্প্রসারিত করা হয়েছে। স্টেশনসমূহে আধুনিক শৌচাগার, ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার স্থাপনের মতো নাগরিক বান্ধব সেবা চালু করা হয়েছে। স্টেশনে ও ট্রেনের ভেতর ধূমপান, তামাক ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার করা হয়েছে নিষিদ্ধ।

সকল ট্রেনের ডিজিটাল ট্র্যাকিং সিস্টেম চালু করা হয়েছে। ফলে মানুষ ঘরে বসে ইন্টারনেট ব্যবহার করে যেকোনো ট্রেনের তাৎক্ষণিক লোকেশন ও পরবর্তী গন্তব্য স্টেশন সম্পর্কে জানতে পারছে। রেল ট্র্যাক সংস্কার ও পুনর্বাসন-এর ফলে লোড ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি পেয়েছে। উচ্চ গতির আধুনিক লোকোমোটিভ সংযোজনের ফলে ট্রেনের গতি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে যাত্রীদের আরামদায়ক ভ্রমণ নিশ্চিত হয়েছে এবং যাত্রার সময় হ্রাস পেয়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে।

স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে রেলখাতে যথেষ্ট সংস্কার ও উন্নয়ন হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে উন্নয়ন ও সংস্কারের সুযোগ রয়েছে আরো অনেক। প্রতিষ্ঠার দুইশ বছরে রেল যোগাযোগ উন্নত বিশ্বে বিপ্লব সাধন করেছে। চীনের বেইজিং ও হেবেই প্রদেশের ঝ্যাংজিয়াকুককে সংযুক্তকারী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চালিত ট্রেন ঘণ্টায় ৩৫০ কিলোমিটারেরও বেশি গতিতে ছুটতে সক্ষম। চীন বর্তমানে ম্যাগনেটিক লেভিয়েশন (ম্যাগলেভ) নামক নতুন এক প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য কাজ করছে যা যাত্রীদের ঘণ্টায় ৬২০ কিলোমিটারেরও বেশি গতিতে ভ্রমণের সুযোগ করে দেবে। জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, তুরস্ক, দক্ষিণ কোরিয়াসহ পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ লোকোমোটিভ শিল্পে প্রভূত উন্নতি সাধন করেছে। কিন্তু ব্যাপক চাহিদা সত্ত্বেও রেলখাতে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে নয়। লোকোমোটিভ শিল্প এ দেশে এখনো সম্পূর্ণই আমদানি নির্ভর রয়েছে। রেলের ইঞ্জিন, কোচ ও ট্র্যাক সংশ্লিষ্ট কোনো নির্মাণ কাজই এ দেশে বিকশিত হয়নি। এক্ষেত্রে দক্ষ জনবলেরও অভাব রয়েছে। তাছাড়া পণ্য পরিবহনে বাংলাদেশ রেলওয়ে পিছিয়ে থাকায় এখনো পর্যন্ত রেল একটি লোকসানি প্রতিষ্ঠানে রয়ে গেছে।

দেশের মোট পণ্য পরিবহনের মাত্র ৪-৫ শতাংশ পরিবহন হয় রেলপথে। অথচ এর পরিমাণ ২০-২৫ শতাংশ হলে রেলওয়ে তার লোকসান কাটিয়ে উঠে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে পারতো।

উন্নত বিশ্বে যেখানে মোট পণ্যের ৫০-৬০ শতাংশ রেলপথে পরিবহন করা হয় সেখানে বাংলাদেশে রেলপথে ৪-৫ শতাংশ পণ্য পরিবহন এ খাতে পশ্চাৎপদতারই প্রমাণ বহন করে। অথচ রেলপথে পণ্য পরিবহন খরচ সড়ক ও আকাশপথের তুলনায় অনেক কম। এ দেশে মূল্যস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির অন্যতম একটি কারণ উচ্চ পরিবহন খরচ। রেলপথে পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে পরিবহন ব্যয় কমিয়ে আনা সম্ভব যা দেশের মূল্যস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালনে সক্ষম।

এছাড়া লোকোমোটিভ শিল্পে আমদানি নির্ভরতা হ্রাস করে স্থানীয়ভাবে সংযোজন ও উৎপাদন কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা যেতে পারে। এতে উচ্চমূল্যে রেলওয়ে যন্ত্রাংশ আমদানি হ্রাসের মাধ্যমে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা সম্ভব। পার্বতীপুরের কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানা (কোলোকা) সীমিত পরিসরে রেলওয়ে যন্ত্রাংশ মেরামতের মাধ্যমে রেলকে সচল রাখতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। কেলোকার সক্ষমতা ও কার্যপরিধি বৃদ্ধি করে একে আধুনিক একটি লোকোমোটিভ কারখানায় রূপান্তর করা সম্ভব।

চট্টগ্রামের রেলওয়ে প্রশিক্ষণ একাডেমির আধুনিকায়নের মাধ্যমে রেলওয়ের জন্য দক্ষ জনবল তৈরি করা সম্ভব। সর্বোপরি রেলওয়ে যন্ত্রাংশ, লোকোমোটিভ, কোচ ও ট্র্যাক সম্পর্কিত যন্ত্রাংশের আমদানি নির্ভরতা হ্রাস করে নিজস্ব উৎপাদন ব্যবস্থা গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি। সেই সাথে ট্রেন পরিচালনা ও সিগন্যাল সিস্টেমের আধুনিকায়ন ও পরনির্ভরশীলতা হ্রাস করা অপরিহার্য।

১৮২৫ থেকে ২০২৫, দুইশো বছরে রেলওয়ের উন্নতি হয়েছে আকাশচুম্বী। কয়লাচালিত স্টিম ইঞ্জিন থেকে আজ ইলেকট্রোম্যাগনেটিক প্রযুক্তি রেলকে করেছে সমৃদ্ধ। ঘণ্টায় ১০-২০ কিলোমিটার গতি থেকে আজ ৫০০-৬০০ কিলোমিটার গতিতে চলছে ট্রেন। যাত্রীদের আরাম আয়েশের সাথে স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণের জন্য রেলওয়েতে সংযোজিত হচ্ছে নিত্যনতুন প্রযুক্তি। প্রযুক্তির উৎকর্ষের এই প্রতিযোগিতায় অংশীদার হয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। কিন্তু নিজস্ব উৎপাদন ব্যবস্থা না থাকায় আমদানি নির্ভরতা, দক্ষ জনবলের অভাবে পরনির্ভরশীলতা ও পর্যাপ্ত বিনিয়োগের অভাবে বাংলাদেশ রেলওয়ে বিশ্বের উন্নত ও অনেক উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় পিছিয়ে আছে অনেক। এই পশ্চাৎপদতা ও পরনির্ভরশীলতা অতিক্রম করে রেলওয়ে হয়ে উঠবে স্বাবলম্বী, স্বনির্ভর ও লাভজনক প্রতিষ্ঠান, রেলের দুইশো বছর পূর্তিতে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

লেখক: সিনিয়র তথ্য অফিসার, রেলপথ মন্ত্রণালয়
পিআইডি ফিচার




দর্শনায় বিএনপিকর্মীর ট্রাকে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা থানাধীন দর্শনা পুরাতন বাজার সংলগ্ন হাজী আব্দুল কাদেরের আড়তে সামনে পার্কিং করা বিএনপির কর্মী জাহিদ মিয়ার ট্রাকে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। মঙ্গলবার দিবাগত রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে এই ঘটনা ঘটে।

পুলিশও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, বুধবার গভীর রাতে দর্শনা হতে মুজিবনগর মহাসড়কের পাশে দর্শনা পুরাতন বাজার সংলগ্ন হাজী আব্দুল কাদের ভূসিমালের আড়তে সামনে পার্কিং করা ট্রাক যার নম্বর (চুয়াডাঙ্গা- ট-১১-০৫৯৮) আগুন লাগিয়ে দুরবিত্তরা পালিয়ে যায়।

খবর পেয়ে দর্শনা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ফায়ার সার্ভিসে খবর দেয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুইটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

ট্রাক মালিক ও বিএনপির কর্মী জাহিদ মিয়া জানান, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তার ট্রাকচালক আব্দুল হাকিম ট্রাকটি দর্শনা পুরাতন বাজার সংলগ্ন আব্দুল কাদেরের আড়তে সামনে পার্কিং করে রেখে বাড়ি চলে যায়। এরপর গভীর রাতে কে বা কাহারা ট্রাকটিতে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখি তৎক্ষণিক ট্রাকটি অধিকাংশ পুড়ে গেছে।

দর্শনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) সুলতান মাহমুদ ঘটনা সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ট্রাকমালিক জাহিদ মিয়া বাদী হয়ে দর্শন থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। আসামিদের ধরতে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। দুষ্কৃতিকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে বলেও তিনি জানান।




মেহেরপুরে স্বর্ণালঙ্কার ও নগদসহ প্রায় ১১ লাখ টাকার মালামাল চুরি

মেহেরপুর পৌরসভার নতুনপাড়ায় বসতবাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটেছে। চোরেরা তালা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করে স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকা সহ প্রায় ১১ লাখ টাকার মালামাল চুরি করে নিয়ে গেছে। এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

ভুক্তভোগী বেগম দিলরুবা বেলী (৬০) ৪নং ওয়ার্ডের নতুনপাড়ার মৃত আবু বক্করের স্ত্রী। তিনি জানান, তিনি অসুস্থ থাকায় ১৪ নভেম্বর থেকে ছোট মেয়ের বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। এ সুযোগে অজ্ঞাত চোরেরা তার বাড়ির সীমানা প্রাচীর টপকে ভেতরে প্রবেশ করে।

পরবর্তীতে ১৮ নভেম্বর ছোট মেয়ে ও জামাই বাড়িতে গিয়ে দেখেন দক্ষিণ দিকের ছোট গেটের তালা ভাঙা এবং ঘরের আলমারি ভেঙে তছনছ করা অবস্থায় পড়ে আছে। চোরেরা আলমারি থেকে ৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার এবং নগদ ১ লাখ টাকা নিয়ে গেছে। বর্তমানে বাজারমূল্য অনুযায়ী চুরি হওয়া ৫ ভরি স্বর্ণের দাম প্রায় ১০ লাখ টাকা।

এ ঘটনায় বেগম দিলরুবা বেলী মেহেরপুর সদর থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন।




রাতভর আটকে রেখে সাংবাদিক সোহেলকে বাসায় দিয়ে এলো ডিবি

অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের সেক্রেটারি ও দৈনিক ভোরের কাগজের অনলাইন প্রধান মিজানুর রহমান সোহেলকে রাতভর জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তার স্ত্রী সুমাইয়া সীমার জিম্মায় ছেড়ে দিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

এর আগে, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে রাজধানীর নতুন বাড্ডার বাসা থেকে সোহেলকে নিয়ে যাওয়া হয়। ডিবির পোশাক পরিহিত পাঁচ ব্যক্তি আটক করে নিয়ে যান বলে অভিযোগ করেন সুমাইয়া সীমা।

মধ্যরাতে এভাবে বাসা থেকে মিজানুর রহমান সোহেলকে ডিবি পরিচয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ জানান বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন বিদেশে অবস্থানরত অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়েরও।

বুধবার (১৯ নভেম্বর) রাত ২টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ নিয়ে একটি স্ট্যাটাসে তিনি জানান, বাংলাদেশ সময় বুধবার (১৯ নভেম্বর) রাত ১২টার পর, দৈনিক ভোরের কাগজের অনলাইন এডিটর মিজানুর রহমান সোহেলকে, ডিবি পরিচয়ে তার নতুন বাড্ডার বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ঘটনার সত্যতা জানতে কিছুক্ষণ আগে আমি ডিবি প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার শফিকুল ইসলামের সাথে কথা বলেছি। তিনি সত্যতা স্বীকার করে জানালেন তাদের এখানেই আনা হয়েছে তাকে।

সূত্র: আর টিভি




মধ্যরাতে বাসা থেকে সাংবাদিককে তুলে নিল ডিবি

মধ্যরাতে ডিবি পরিচয়ে ভোরের কাগজের অনলাইন সম্পাদক মিজানুর রহমান সোহেলকে বাসা থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে। এক ফেসবুক পোস্টে এ তথ্য জানিয়েছেন অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের।

তিনি বলেন, বুধবার মধ্যরাতে গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্য পরিচয় দিয়ে একদল ব্যক্তি দৈনিক ভোরের কাগজ-এর অনলাইন সম্পাদক মিজানুর রহমান সোহেলকে বাড্ডার বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। ঘটনার সত্যতা জানতে কিছুক্ষণ আগে আমি ডিবি প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার শফিকুল ইসলামের সাথে কথা বলেছি।

তিনি সত্যতা স্বীকার করে জানালেন, তাঁদের এখানেই আনা হয়েছে। কেন রাত ১২টার পর একজন গণমাধ্যমকর্মীকে বাসা থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে সেটা জানতে চাইলে তিনি বললেন— সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে মিজানুর রহমান সোহেলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে ডিবি কার্যালয় আনা হয়েছে।

জুলকারনাইন সায়ের জানান, মিজানুর রহমানকে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় আশরাফুল নামের জনৈক পুলিশ সদস্য সোহেলের স্ত্রীকে জানান ‘ডিবি প্রধান তার সাথে কথা বলতে চান, কথা শেষ হলে তাকে বাসায় পৌঁছে দেওয়া হবে’। তবে রাত ১২টার পর কেন ডিবি প্রধান একজন সাংবাদিককে তাঁর বাসা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে কথা বলতে আগ্রহী সে বিষয়ে কিছুটা ধারণা পাওয়া গেছে।

বিশেষ একটি সিন্ডিকেটের প্ররোচনায় সাধারণ স্মার্টফোন বিক্রয়কারীদের সাথে কোনরূপ আলোচনা না করে, তাদের ব্যবসা হারানোর আশঙ্কাকে আমলে না নিয়ে এনইআইআর শুরু করতে যাচ্ছিল নেদারল্যান্ডের নাগরিক এবং বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়ব।

ফেসবুক পোস্টে তিনি আরো লিখেছেন, সাধারণ ব্যবসায়ীরা তাদের দাবি দাওয়াতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ এবং জনমত গঠনে আগামীকাল বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজনে একজন গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে পরামর্শ দিচ্ছিলেন দৈনিক ভোরের কাগজের অনলাইন এডিটর মিজানুর রহমান সোহেল। এই সংবাদ সম্মেলন বানচাল করতে এবং ব্যবসায়ীদের ভয় দেখাতে, ফয়েজ তৈয়ব এর ইশারায় এমনটা করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন আয়োজকরা।

সায়ের লিখেছেন, পুলিশকে ব্যবহার করে এভাবে মধ‍্যরাতে একজন সাংবাদিককে হেনস্থার নিন্দা জানাই। ফয়েজ যদি আসলেও এই ঘটনার পেছনে কলকাঠি নেড়ে থাকে তাহলে সকল গণমাধ‍্যমকর্মীর বিবেচনা করা উচিত, তারা এই বিদেশী বিশেষ সহকারীর কার্যক্রম তার বাকী দিনগুলোতে কভার করবে কিনা।

এদিকে, মিজানুর রহমান সোহেলকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তার স্ত্রী সুমাইয়া সীমার জিম্মায় ছেড়ে দিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। বুধবার (১৯ নভেম্বর) সকাল সোয়া ১০টার দিকে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর ডিবির প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার শফিকুল ইসলাম।

সূত্র: কালের কন্ঠ।




দর্শনায় দারুস সালাম ক্যাডেট মাদরাসায় অভিভাবক সমাবেশ ও প্রদর্শনী

চুয়াডাঙ্গার দারুস সালাম ক্যাডেট মাদরাসায় অভিভাবক সমাবেশ ও প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে দর্শনা সরকারি ফুড গুদামের পাশে মাদরাসা প্রাঙ্গণে অভিভাবক সমাবেশ, হাতের লেখা, গজল, হাদিস, সূরা ও জানাজা নামাজ প্রদর্শনী এবং ২য় পর্বে রাতে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

১ম পর্বের অভিভাবক সমাবেশ ও প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হাফেজ মাওলানা ফরহাদের সভাপতিত্বে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে আলোচনা করেন দর্শনা পৌর ইমাম কমিটির সাবেক সভাপতি ও পুরাতন বাজার জামে মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মো. নুরুল ইসলাম এবং দর্শনা ডি.এস. ফাজিল ডিগ্রি মাদরাসার শিক্ষক মো. আবু জাফর।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের হাতের লেখা প্রতিযোগিতা ও প্রদর্শনী দেখানো হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে ৫ থেকে ৮ বছরের বাচ্চাদের ইংরেজিতে কথোপকথন, আরবিতে হাদিস শরিফের তরজমা, বিভিন্ন মাসলা-মাসায়েল প্রতিযোগিতা, আরবি-বাংলায় লেখা এবং জানাজা নামাজ প্রদর্শন করা হয়। এ সময় অতিথি, প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকবৃন্দ, শিক্ষার্থী-অভিভাবকসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।