মেহেরপুরে মনোনয়ন দ্বন্দ্বে নির্বাচনী ব্যয় বাড়ছে
মেহেরপুর-১ ও গাংনী আসনে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়নকে ঘিরে বিরাজ করছে অস্বস্তিকর অস্থিরতা। দুই আসনেই মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার দাবিতে মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশ, গণস্বাক্ষর সংগ্রহ ও পৃথকভাবে কর্মসুচী পালন অব্যাহত আছে।
সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে। অথচ কথা ছিল দলীয় মনোনয়ন যাকে দেয়া হবে তার পক্ষে সম্মিলিতভাবে কাজ করবেন। কিন্তু বিপরিত চিত্রের কারণে শুধু রাজনৈতিক উত্তেজনাই বাড়ছে না নির্বাচনী ব্যয়ও অস্বাভাবিক হারে বাড়তে শুরু করেছে বলে জানাচ্ছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
মেহেরপুরের দুুটি আসনে সাবেক দুই এমপি দলীয় মনোনয়ন পাবার পর এই বিরোধ তুঙ্গে উঠছে।
মেহেরপুর-১ আসনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া সাবেক এমপি মাসুদ অরুণ পক্ষ ধানের শীষের পক্ষে ভোট চেয়ে জনসংযোগ করছেন।
মনোনয়ন বঞ্চিত কামরুল হাসান পক্ষ দলীয় মনোনয়ন পুনর্বিবেচনা দাবিতে বিভিন্ন কর্মসুচী পালন করছেন। নিজ নিজ অবস্থান জানান দিতে গ্রাম গঞ্জ থেকে বাস ভরে লোকবল আনতে হচ্ছে উভয় পক্ষকে। ব্যানার-ফেস্টুন, মাইকিং, শোডাউন, প্রচারপত্র এসবের পেছনে বাড়তি খরচ পড়ছে উল্লেখযোগ্যভাবে।
অন্যদিকে মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনে সাবেক এমপি আমজাদ হোসেনের মনোনয়নকে ঘিরে আরও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।
জেলা বিএনপির সভাপতি জাভেদ মাসুদ মিল্টনের পক্ষে নেতা কর্মীরা প্রায় প্রতিদিনই সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করছেন।
দলীয় মনোনয়নের দাবিতে পোস্টার, লিফলেট, মোটরসাইকেল শোডাউনসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে ব্যয় বাড়ছে কয়েকগুণ। আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীকেও তৎপর থাকতে হচ্ছে।
মেহেরপুর পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি জাহাঙ্গীর বিশ্বাস বলেন মিল্টন-কামরুল পক্ষের চেয়ে অরুণ-আমজাদ পক্ষ জনপ্রিয়তার কারণেই দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। জাতীয় নির্বাচনে তাদের বিকল্প এখনও কোন নেতা তৈরী হয়নি।
স্থানীয় নেতাদের ভাষ্য, মনোনয়নকে কেন্দ্র করে এমন ধারাবাহিক কর্মসূচি দলের ভেতর বিভাজন বাড়ানোর পাশাপাশি অপ্রয়োজনীয় আর্থিক চাপ সৃষ্টি করছে। মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার দাবিতে যে প্রতিযোগিতা চলছে, তা শেষ পর্যন্ত সম্ভাব্য প্রার্থীদের ওপর বাড়তি ব্যয়ের বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, মনোনয়নের আগে থেকেই নির্বাচনসংশ্লিষ্ট খরচ বাড়তে শুরু করেছে- যেখানে পোস্টার, ব্যানার, লজিস্টিকস ও কর্মসূচি খরচ যোগ হয়ে প্রতিদিনই ব্যয়ের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে।
নেতাকর্মীরা বলছেন, প্রাথমিক মনোনয়নে অসন্তোষ থাকলেও ধারাবাহিক কর্মসূচি ও শক্তির প্রদর্শন করতে গিয়ে যে অর্থনৈতিক চাপ বাড়ছে, তা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের জন্য প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।
একইসঙ্গে এতে দলে বিভক্তির গভীরতা বাড়বে এবং নির্বাচন পূর্ববর্তী সময় থেকেই অপ্রয়োজনীয় ব্যয় অতিরিক্ত উচ্চতায় পৌঁছে যাবে। দলীয়দ্বন্দ্ব নির্বাচনে জয় হাতছাড়া হবার আশংকাও উড়িয়ে দেয়া যাবে না।
নির্বাচনের এখনও সময় থাকলেও মেহেরপুর জুড়ে এখন মূল আলোচনায় বিএনপির অভ্যন্তরীণ মনোনয়ন সংকট, এবং তা ঘিরে প্রতিদিন বাড়তে থাকা রাজনৈতিক উত্তাপ ও ব্যয়ের চাপ।
মেহেরপুর-১ আসনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া সাবেক এমপি মাসুদ অরুণ যুগান্তরকে বলেন নির্বাচনের আগে মনোনয়ন নিয়ে এমন পরিস্থিতি অস্বাভাবিক না। দলের জরিপে যোগ্য বিবেচনায় আমাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। তফশীল ঘোষণার পর সব এক কাতারে চলে আসবে।