কোটচাঁদপুরে সাপ্তাহিক দিগন্তবাণী’র ১৬তম বর্ষে পাঠক সমাবেশ

ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে গতকাল সাপ্তাহিক দিগন্তবাণী পত্রিকার ১৬তম বর্ষে পদার্পণ উপলক্ষে এক পাঠক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যক্ষ আলহাজ্ব মোঃ মহসীন আলী বলেন, সত্যের প্রশ্নে দিগন্তবাণী আপোষহীন। সাহসের সঙ্গে অন্যায়ের প্রতিবাদ করাই এই পত্রিকার মূল বৈশিষ্ট্য। “সত্যের সন্ধানে মানবকল্যাণে” এই স্লোগানকে ধারণ করে দিগন্তবাণী তার ১৬তম বর্ষে এগিয়ে চলেছে। এ কারণেই সত্যনিষ্ঠ ও সৎ মানুষরা এই পত্রিকাকে হৃদয় দিয়ে ভালোবাসেন।

স্থানীয় কোটচাঁদপুর প্রেসক্লাব কার্যালয়ে দিগন্তবাণী সম্পাদক আলহাজ্ব মুহা. শাহ জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আলহাজ্ব মোঃ মহসীন আলী।

অন্যান্য অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কোটচাঁদপুর পৌরসভার কাউন্সিলর আব্দুল মাজেদ, সিনিয়র সাংবাদিক বিমল ভৌমিক, কোটচাঁদপুর উপজেলা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মঈন উদ্দিন খান, জিটি কলেজের সহকারী অধ্যাপক আলতাফ হোসেন, পৌর কলেজের প্রভাষক মোফাজ্জেল হোসাইন, বারবাজার আলিম মাদ্রাসার সহকারী অধ্যাপক আব্দুল খালেক, দিগন্তবাণী’র অস্ট্রেলিয়া প্রতিনিধি নুরুল ইসলাম, প্রকৌশলী মোঃ রুহুল আমিন, শিক্ষক মোঃ আফসার উদ্দিন, সাংবাদিক মোঃ রফিকুল ইসলাম, কামাল হাওলাদার, বিএম ওয়াদুদ, সিরাজুল ইসলাম মল্লিক, পাঠক মোঃ রুহুল আমিন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শাহরিয়ার অভিক, নাবিল আব্দুল্লাহ আহমাদ, ব্যবসায়ী মনোজ শর্মা, ফারুক হোসেন, মোঃ হোসাইন ও দেলোয়ার হোসেন সাঈদীসহ অন্যান্য পাঠক ও অতিথিবৃন্দ।

অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন মোঃ আবদুল হালিম। তিনি পুরো অনুষ্ঠানটি পরিচালনাও করেন। আনন্দঘন পরিবেশে দিগন্তবাণী পত্রিকার পাঠকরা তাদের মতামত ব্যক্ত করেন।




কোটচাঁদপুরে গলায় ফাঁস দিয়ে যুবকের আত্মহত্যা

গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় রুবেল হোসেনের (৩০) লাশ উদ্ধার করেছে কোটচাঁদপুর থানা পুলিশ। তিনি কোটচাঁদপুর উপজেলার বড়বামনদহ গ্রামের আতিয়ার রহমানের ছেলে। শনিবার সকালে পুলিশ তার মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, রুবেল হোসেন দীর্ঘ ছয় মাস ধরে অসুস্থতায় ভুগছিলেন। চিকিৎসার পেছনে তিনি তার সঞ্চয়ের সবটুকু ব্যয় করেন। এরপরও অবস্থার কোনো উন্নতি না হওয়ায় শনিবার সকালে অসহ্য যন্ত্রণায় বাড়ির সবার অগোচরে নিজ ঘরের আড়ার সঙ্গে ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস দেন তিনি।

এ সময় তার পাশেই ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বাজতে থাকে। কল রিসিভ না হওয়ায় মোবাইলে বারবার কল আসছিল। কিছুক্ষণ পর তার ছেলে বিষয়টি টের পেয়ে ঘরে দৌড়ে গিয়ে দেখতে পায়, তার পিতা আড়ার সঙ্গে ঝুলে আছেন। তখন সে চিৎকার করে কেঁদে উঠলে প্রতিবেশীরা ছুটে এসে তার ঝুলন্ত লাশ নামান।

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য ঝিনাইদহ মর্গে পাঠায়।

রুবেল হোসেন পেশায় দিনমজুর ছিলেন। এর আগে তিনি কোটচাঁদপুরের একটি ক্লিনিকে কিছুদিন নাইট গার্ড হিসেবে কাজ করতেন। তবে অসুস্থতার কারণে ওই কাজটি বন্ধ করে দেন।

কোটচাঁদপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) খন্দকার এনায়েত হোসেন বলেন, প্রাথমিকভাবে এটি আত্মহত্যা বলে ধারণা করা হচ্ছে। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়ার পর প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে।




ঝিনাইদহ সড়কের পাশে যত্রতত্র বালুর ব্যবসা, বাড়ছে ফুসফুস জনিত রোগ

ঝিনাইদহে মহাসড়কের পাশে সরকারি জায়গায় যত্রতত্র গড়ে উঠেছে জমজমাট বালুর ব্যবসা, এমনকি পাড়া-মহল্লার মধ্যে অবস্থিত রাস্তার পাশের খালি জায়গায়ও চলছে এসব বালুর ব্যবসা।

শহরের মধ্যে ঘুরে দেখা যায়, ঝিনাইদহ শিশু একাডেমির প্রবেশ পথের ধারেই দীর্ঘদিন ধরে চলছে বালুর ব্যবসা, শহীদ মসিউর রহমান সড়কের পাশে অবস্থিত জবেদা খাতুন একাডেমির চারপাশ জুড়ে একাধিক ব্যবসায়ী বালু রেখে খুচরা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।

এতে ওই এলাকায় সব সময় বায়ুদূষণ হচ্ছে, মাস্ক ছাড়া চলাচল অসম্ভব হয়ে পড়েছে। শহীদ মশিউর রহমান সড়েকের প্রায় ১ কিলোমিটার রাস্তার দুপাশেই সরকারি জায়গা দখল করে এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে কতিপয় ব্যবসায়ী, ঝিনাইদহ সদর উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি রবিউল ইসলাম জানান, আমার বাড়ির প্রবেশের প্রধান রাস্তার পাশে সরকারি জায়গায় দীর্ঘদিন ধরে বালুর ব্যবসা করছে, এতে করে শিশু,বৃদ্ধা সহ সকল বয়সের মানুষ এ্যাজমা, হাপানি, সহ ফুসফুস জনিত জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট প্রশাসন কেন পদক্ষেপ নিচ্ছে না আমি বুঝতে পারছি না।

ঝিনাইদহ শিশু একাডেমিতে পড়ুয়া এক ছাত্রের মা জানান, এই পথ দিয়ে আসা যাওয়ার সময় প্রতিবার আমার নাক-মুখ ঢেকে রাখতে হয়। সাংবাদিক শাহিদুর রহমান জানান, যত্রতত্র বালুর ব্যবসার পাশাপাশি শহরের মধ্যে কয়েকশো ভবন নির্মাণের কাজ চলছে, এই ভবন নির্মাণকারীরা কেউ কোন নির্মাণ সামগ্রী ঢেকে রাখেনা, এতে করে শহরে ভয়ংকর বায়ুদূষণের সৃষ্টি হয়েছে, পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান করে নামমাত্র জরিমানা করছে, সামান্য শাস্তি হওয়ায় তারা কিছু মনে করছে না, পরেরদিনই আবার তারা ব্যবসা চালু করছে, এই অবৈধ ব্যবসা বন্ধ করতে হলে, বায়ুদূষণ নীতিমালার যথাযথ প্রয়োগ করে কঠিন শাস্তির আওয়ায় আনতে হবে।

এ ব্যাপারে জানার জন্য ঝিনাইদহ পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক মোঃ মুস্তাছির রহমানের নিকট জানতে চাইলে তিনি জানান, আমরা ইতিমধ্যে ৫টি অভিযান পরিচালনা করেছি, কয়েকজন কে শাস্তির আওয়াত এনেছি, আমাদের অভিযান চলমান থাকবে।

‘বায়ুুদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০২২’ অনুযায়ী বায়ুদূষণ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদন্ড বা দুই লাখ টাকা জরিমানা বা উভয়দন্ড হবার বিধিমালা রয়েছে।

নির্মাণ কার্যক্রম থেকে দূষণ রোধে আইনে বলা হয়েছে, রাস্তা, ড্রেন, ভবন ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ, পুননির্মাণ, মেরামত বা সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনার সময় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে ছয়টি ব্যবস্থা নিতে হবে। নির্মাণস্থলে যথাযথ অস্থায়ী ছাউনি বা বেষ্টনী স্থাপনসহ নির্মাণাধীন ভবন আচ্ছাদিত রাখতে হবে। সব ধরনের নির্মাণসামগ্রী (মাটি, বালি, রড, সিমেন্ট, ইত্যাদি) আবৃত বা ঢেকে রাখতে হবে। নির্মাণসামগ্রী (মাটি, বালি, সিমেন্ট, ইট, ময়লা-আবর্জনা) পরিবহনে ব্যবহৃত ট্রাক, ভ্যান বা লরি আবৃত বা সম্পূর্ণভাবে ঢেকে পরিবহনের ব্যবস্থা করতে হবে।

এছাড়া মাটি, বালি, সিমেন্ট, ইট, ময়লা-আবর্জনা, ইত্যাদি পরিবহন ও নির্মাণকাজে ব্যবহৃত ট্রাক, ভ্যান বা লরির চাকার কাদা-মাটি বা ময়লা-আবর্জনা সম্পূর্ণভাবে পরিষ্কার করে রাস্তায় চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে।

নির্মাণসামগ্রী (মাটি, বালি, সিমেন্ট, ইত্যাদি) রাস্তায়, ফুটপাতে বা যত্রতত্র ফেলে রাখা যাবে না এবং নির্মাণকাজে সৃষ্ট বর্জ্য খোলা অবস্থায় সংরক্ষণ বা পোড়ানো যাবে না। এছাড়া নির্মাণ, পুননির্মাণ বা মেরামত স্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি বা ধুলাবালি নিয়ন্ত্রণকারী কেমিক্যাল ছিটাতে হবে।

এসব নিয়ম না মানলে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদন্ড বা সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দন্ড হতে পারে বলে বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে,

এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডাঃ রাজিব চক্রবর্তী জানান, বায়ুদুষণের কারণে ফুসফুস জনিত রোগের সংখ্যা বেড়েছে, এ্যাজমা, হাপানি, এলার্জি সহ জটিল ও কঠিন রুগীর সংখ্যা বাড়ছে।




মেহেরপুরে ইজিবাইক ও অটো চালকদের সাথে পুলিশ সুপারের মতবিনিময়

সড়ক দুর্ঘটনা রোধ ও যানজট নিরসনে ইজিবাইক, অটো রিক্সা এবং ভ্যান চালক সমিতির নেতৃবৃন্দদের সাথে মতবিনিময় করেছেন পুলিশ সুপার উজ্জ্বল কুমার রায়।

আজ শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ সুপারের কনফারেন্স রুমে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলার পুলিশ সুপার উজ্জ্বল কুমার রায়।

পুলিশ সুপার বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে চালকদের সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। সাধারণ মানুষের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে এবং প্রাণহানি কমাতে পুলিশ ও চালক সমিতিকে একযোগে কাজ করতে হবে।

সভায় জেলার ইজিবাইক, অটো রিক্সা ও ভ্যান চালক সমিতির শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।




ঝিনাইদহে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন

ঝিনাইদহ শহরে ‘বন্ড ক্লথিং হাউস’ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যুবলীগ নেতার মালিকানা রয়েছে দাবি করে হামলার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শুক্রবার এ হামলার ঘটনা ঘটার পরে প্রতিষ্ঠানটির মালিকানা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে শহরজুড়ে।

বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার আক্রোশের শিকার ওই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে যুবলীগ নেতা আশফাক মাহমুদ জনের মালিকানা বা ন্যূনতম কোনো শেয়ার নেই বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা। এ নিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন শহরের ব্যবসায়ীরা।

আজ শনিবার (২০ ডিসেম্বর) বেলা ১২টার দিকে ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিবাদ জানান ব্যবসায়ী ও ক্ষতিগ্রস্থরা।

পোশাক প্রস্তুতকারী ও বিপণন প্রতিষ্ঠান ‘বন্ড’ ক্লথিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান সংবাদ সম্মেলনে জানান, ‘বন্ড’ একটি দেশীয় পোশাক তৈরি ও বিপণন ব্র্যান্ড। দেশের বড় বড় শহরগুলোতে বন্ড তাদের আউটলেট পরিচালনা করছে। ঝিনাইদহ শহরের এইচএসএস সড়কের ‘সাবদার বিশ্বাস মার্কেট’র দুটি ফ্লোর ভাড়া নিয়ে ‘বন্ড’ তাদের আউটলেট চালু করেছে। তিন বছর যাবত একই মার্কেটে (ভাড়াকৃত) ‘বন্ড ক্লথিং হাউস’ ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। ওই ভবনের একক মালিকানা নেই যুবলীগ নেতা আশফাক মাহমুদ জনের। পৈত্রিক সূত্রে ওই ভবনের মালিক চারজন। তাদের মধ্যে আশফাক মাহমুদ জন একজন। তবে তিনি ‘বন্ড ক্লথিং হাউস’ এর কোনো মালিক বা শেয়ার হোল্ডার না।

সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, যুবলীগ নেতা আশফাক মাহমুদ জন ভবনের যৌথ মালিকদের একজন। কিন্তু তিনি ‘বন্ড ক্লথিং হাউস’র সঙ্গে কোনো ভাবেই সম্পৃক্ত নেই। কিন্তু একটি মহল বারবার ‘বন্ড ক্লথিং হাউস’ এ যুবলীগ নেতা আশফাক মাহমুদ জনের মালিকানা রয়েছে, এমন গুজব ছড়িয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটিতে হামলা চালিয়েছে। অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এতে প্রতিষ্ঠানটির প্রায় আড়াই কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে জেলা দোকান মালিক সমিতির সমিতির সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম বাদশা, শহিদুল ইসলাম মিঠু, ‘বন্ড’ ক্লথিং হাউসের জিএম এএমএম মনিরুজ্জামান, রবিউল ইসলাম, ভবন মালিক জাহিদ হোসেন বিপ্লব, রবিউল ইসলাম রবি। এসময় ক্ষতিগ্রস্থ দেশীয় পোশাক প্রস্তুতকারী ও বিপণন প্রতিষ্ঠান ‘বন্ড’ ক্লথিং হাউস সহ শহরের অন্যান্য ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) বেলা ৩টার দিকে শহরের এইচএসএস সড়কের ‘বন্ড ক্লথিং হাউস’ এ হামলা চালায় বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতা। এসময় প্রতিষ্ঠানটিতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। পরে ফায়ার সার্ভিজের একটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।




কোন পেশীশক্তি নির্বাচন বিঘ্নিত করতে পারবে না

খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মোঃ মোখতার আহমেদ বলেছেন, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পেশীশক্তি মোকাবেলা ও কোন অপশক্তি যাতে নির্বাচন বিঘ্নিত না করতে পারে সে ব্যাপারে খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হবে।

আজ শনিবার (২০ ডিসেম্বর) সকালে ঝিনাইদহ শহরের চাকলাপাড়াস্থ সার্কিট হাউস এলাকায় পরিবেশ বান্ধব ফলের বাগান ও সৌন্দর্য্যবর্ধন প্রকল্প উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

বিভাগীয় কমিশনার আরো বলেন, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন গ্রহনযোগ্য, সুষ্ঠ, অবাধ ও শান্তিপুর্ণ করতে সম্ভব সব কিছু সম্পন্ন করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের আইনকানুন ও প্রণীত নীতিমালা কঠোরভাবে অনুসরণ করা হবে।

এ সময় অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার আবু সায়েদ মোঃ মনজুর আলম, ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক আব্দুল্লাহ আল মাসউদ, পুলিশ সুপার মোঃ মাহফুজ আফজাল, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক রথীন্দ্র নাথ রায়, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূর-এ নবীসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বিভাগীয় কমিশনার মোঃ মোখতার আহমেদ বলেন, ঝিনাইদহের মানুষ বেশি আবেগপ্রবণ। তবে তারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তিনি আশা করেন আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সফল করতে জেলার মানুষ শতস্ফুর্তভাবে এগিয়ে আসবেন।




মুক্তিযুদ্ধের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ এ কে খন্দকার আর নেই

মহান মুক্তিযুদ্ধের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ, সাবেক বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকার, বীর উত্তম আজ শনিবার  সকাল ১০ টা ৩৫ মিনিটে বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেছেন। ইন্না-লিল্লাহ ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।

এ কে খন্দকারের জন্ম ১৯৩০ সালের ১ জানুয়ারি।

পিতার তৎকালীন কর্মস্থল রংপুর শহরে। তার বাড়ি পাবনা জেলার বেড়া উপজেলার ভারেঙ্গা গ্রামে। তার পিতা খন্দকার আব্দুল লতিফ ব্রিটিশ আমলে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন এবং মাতা আরেফা খাতুন ছিলেন একজন আদর্শ গৃহিণী। চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে এ কে খন্দকার ছিলেন তৃতীয়।

পিতার চাকুরির সুবাদে তার শিক্ষা জীবনের শুরু হয় বগুড়া শহরে। তিনি সেখানে বগুড়া করোনেশন স্কুলে কিছুদিন পড়াশোনা করেন।
ভারত বিভাগের সময় এ কে খন্দকার ১৯৪৭ সালে মালদা জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন।

১৯৫২ সালের সেপ্টেম্বরে পিএএফ (পাকিস্তান বিমান বাহিনী) থেকে তিনি তার কমিশন (পাইলট অফিসার পদ) লাভ করেন।

১৯৫৫ সাল পর্যন্ত তিনি ফাইটার পাইলট হিসেবে কাজ করেন ও পরে ফ্লাইং ইন্সট্রাক্টর হয়ে ওঠেন। তিনি পাকিস্তান এয়ার ফোর্স একাডেমিতে ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত ছিলেন। ফ্লাইং ইন্সট্রাক্টর স্কুলে তিনি ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত ফ্লাইট কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

পরে জেট ফাইটার কনভারশন স্কোয়াড্রনে তিনি ফ্লাইট কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ১৯৬০ সাল পর্যন্ত। ১৯৬১ সাল পর্যন্ত তিনি স্কোয়াড্রন কমান্ডার হিসেবে কাজ করেন পিএএফ একাডেমি।

পরে জেট ফাইটার কনভারশন স্কোয়াড্রনে তিনি স্কোয়াড্রন কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত। ট্রেনিং উইং-এর অফিসার কমান্ডিং হিসেবে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত তিনি পিএএফ একাডেমিতে দায়িত্ব পালন করেন। পিএএফ প্ল্যানিং বোর্ডের প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি ১৯৬৯ সালের আগ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। পরে তিনি সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে পিএএফ বেইসের দায়িত্ব পান ঢাকায় ১৯৬৯ সালে।

এ কে খন্দকার উইং কমান্ডার হিসেবে দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয় হলে তিনি মুক্তিবাহিনীর ডেপুটি চিফ অফ স্টাফ হন। ২১শে নভেম্বর ১৯৭১ সালে তিনি পদোন্নতি পান গ্রুপ ক্যাপ্টেন হিসেবে বাংলাদেশের তৎকালীন অন্তর্বতী সরকার থেকে এবং জেনারেল এম এ জি. ওসমানী’র ব্যক্তিগত ডেপুটি ইন চার্জ বা উপ-প্রধান সেনাপতি হিসেবেও নিয়োগ পান।




মুজিবনগরে যৌথ অভিযানে অস্ত্র ও গুলিসহ একজন আটক

মেহেরপুরে অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ কুখ্যাত সন্ত্রাসী মোঃ আরিফুল হক (৪১) ওরফে মিঠুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি মহাজনপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক।

গত বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৮টা থেকে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে মেহেরপুর আর্মি ক্যাম্প ও গাংনী র‍্যাবের যৌথ অভিযানে মুজিবনগর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারের পর মিঠুর বসতবাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে একটি ৭.৬৫ মিমি পিস্তল (মেড ইন ইউএসএ), একটি ম্যাগাজিন এবং দুই রাউন্ড তাজা গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্র জানায়, গ্রেপ্তারকৃত মিঠু চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, বিস্ফোরক সংক্রান্ত অপরাধসহ বিভিন্ন নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে স্থানীয় জনগণ এর আগে ২০২৩ সালে তার গ্রেপ্তারের দাবিতে সমাবেশ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে।

গ্রেপ্তারের পর উদ্ধারকৃত অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ মিঠুকে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মুজিবনগর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় অস্ত্র আইনে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।




গাংনীতে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে বাবার জানাজায় অংশ নিলেন ছেলে

মাত্র তিন ঘণ্টার প্যারোলে মুক্তি পেয়ে বাবার জানাজায় অংশ নিয়েছেন আপন চাচাকে হত্যার দায়ে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি মশিউর রহমান ওরফে মশা।

গতকাল শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে পুলিশের কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তাকে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার জুগিন্দা গ্রামে নিয়ে আসা হয়। এ সময় গ্রামবাসীর কৌতূহল ও উত্তেজনা ছিল চোখে পড়ার মতো। শত-শত নারী-পুরুষ রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে এই সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে এক নজর দেখার চেষ্টা করেন।

জানাজা ও দাফন কার্যক্রম শেষে বিকাল ৫টার দিকে আবারও তাকে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে মেহেরপুর জেলা কারাগারে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। পুরো কার্যক্রমে গাংনী থানার তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন উপস্থিত ছিলেন।

জানা গেছে, বাড়ির চলাচলের পথ নিয়ে মাত্র দেড় ফুট জমির বিরোধের জেরে ২০০৩ সালে প্রকাশ্যে দিবালোকে নিজ চাচা আমিরুল ইসলামকে ধারালো হাসুয়া দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন মশিউর রহমান। এ ঘটনায় নিহতের ছেলে সামিকুল ইসলাম বাদী হয়ে গাংনী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঘটনার পরপরই পুলিশ আসামিকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়।

মামলার রায়ে মেহেরপুর জজকোর্ট প্রথমে মশিউর রহমানকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন। পরে আসামিপক্ষ হাইকোর্টে আপিল করলে মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। গত ২২ বছর ধরে তিনি কারাবন্দি রয়েছেন—প্রথমে যশোর এবং বর্তমানে মেহেরপুর জেলা কারাগারে।

গতকাল শুক্রবার সকালে মশিউর রহমানের পিতা মনিরুল ইসলাম বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করলে পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে প্যারোলে মুক্তির আবেদন জানানো হয়। আদালতের নির্দেশে বাবার জানাজায় অংশগ্রহণের জন্য তিন ঘণ্টার প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয় তাকে। এরপর পুলিশ পাহারায় আদালত থেকে নিজ গ্রাম জুগিন্দায় আনা হয়।

নিহত আমিরুল ইসলামের ছেলে সামিকুল ইসলাম জানান, “মাত্র দেড় ফুট জমির জন্য আমার বাবাকে প্রকাশ্যে ধারালো হাসুয়া দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে আমার চাচাতো ভাই মশিউর রহমান। ঘটনার সময় বাবাকে বাঁচাতে অনেক চেষ্টা করা হলেও তিনি পুকুরে নেমে পড়ার পরও ঘাতক তাকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করে। আদালতের রায়ে সে দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে রয়েছে। আজ তার বাবার মৃত্যুতে আদালতের নির্দেশে তিন ঘণ্টার জন্য প্যারোলে মুক্তি পেয়েছে—এতে আমাদের পক্ষ থেকে কোনো আপত্তি জানানো হয়নি।”

স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, হত্যাকাণ্ডটি ছিল অত্যন্ত নৃশংস ও হৃদয়বিদারক। প্রকাশ্যে দিবালোকে বহু মানুষের সামনে সংঘটিত এ হত্যাকাণ্ড এখনো এলাকাবাসীর মনে আতঙ্ক হিসেবে রয়ে গেছে। বিকেলে পুলিশ পাহারায় আসামিকে গ্রামে আনা হলে সেই স্মৃতিই যেন আবার ফিরে আসে গ্রামবাসীর সামনে।




৩৭ বছর ধরে কৃষি যন্ত্রপাতি তৈরি করছেন দর্শনার পংকজ কর্মকার

দীর্ঘ ৩৭ বছর ধরে লোহা পিটিয়ে কৃষি উপকরণ তৈরি করে আসছেন পংকজ কর্মকার। ডুগডুগি হাটের গোরস্থানের বিপরীত পাশে একটি কামারশালায় দা, নিড়ানি, হাসুয়া, কাঁচি, কোদাল ও কুড়ালসহ নানা ধরনের কৃষি সরঞ্জাম তৈরি করেন তিনি। তবে আধুনিক যন্ত্রপাতির প্রভাবে লাঙ্গলের ফলার ব্যবহার এখন অনেক কমে গেছে।

পংকজ কর্মকার জানান, মাত্র ১৭ বছর বয়সে বাবা ও দাদার কাছ থেকে এই কাজের হাতেখড়ি নেন তিনি। বংশপরম্পরায় তাঁদের চৌদ্দ পুরুষ এই পেশার সাথে যুক্ত। দীর্ঘ ৩৭ বছরের এই কর্মজীবনে তিনি প্রতিদিন কোনো দিন ৪ হাজার টাকা, আবার কোনো দিন ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করেন।

ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ৩ ছেলে ও ১ মেয়ের জনক। তাঁর দুই ছেলে স্বর্ণের দোকানে কাজ করলেও ছোট ছেলে বাবার সাথে কামারশালায় সহযোগিতা করছেন। লোকনাথপুর, পরানপুর, জয়রামপুর, ছোট দুধপাতিলা ও কাদিপুরসহ প্রায় ১০টি গ্রামের কৃষকরা নিয়মিত তাঁর কাছে কৃষি সরঞ্জাম তৈরি করতে আসেন।

পংকজ কর্মকার আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, “আমি চারবার স্ট্রোক করার পরেও এই লোহা পেটানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। এ অঞ্চলের কৃষকরা আমার কাজ পছন্দ করেন বলেই দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন। বয়স হয়ে যাওয়ায় এখন আর আগের মতো শক্তি পাই না, তবে ছেলেটা সহযোগিতা করে বলে এখনো টিকে আছি। বাড়িতে বসে থাকতে ভালো লাগে না, কাজের ফাঁকে কৃষকদের সাথে গল্প করেই সময় কেটে যায়।”

তিনি আরও জানান, বর্তমানে আধুনিক চাষাবাদের যুগেও সারা বছরই তাঁর কাজের চাহিদা থাকে। বিশেষ করে ধান ও পাট কাটার মৌসুমে কাজের চাপ বেড়ে যায়। এই পেশার মাধ্যমেই তিনি স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে সুখে দিনাতিপাত করছেন।