কালীগঞ্জে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে কৃষক দম্পতিকে পিটিয়ে হত্যার চেষ্টা

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার শিমলা-রোকনপুর ইউনিয়নের তিল্লা গ্রামে জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে এক কৃষক দম্পতিকে পিটিয়ে হত্যার চেষ্টা করেছে প্রতিপক্ষরা।

বর্তমানে ওই দম্পতি ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। শনিবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। আহতরা হলো-তিল্লা গ্রামের মৃত ভাটাই মন্ডলের ছেলে জামির আলী (৫০) ও তার স্ত্রী সুখজান বেগম (৪৫)।

আহতের স্বজনরা জানায়, দীর্ঘদিন ধরে পৈত্রিক সুতে পাওয়া জমি নিয়ে তার ভাই আমিরের সাথে তার বিরোধ চলে আসছিলো। এরই জের ধরে শনিবার বিকেলে আমির হোসেন, তারস্ত্রীসহ লোকজন জামিরের বাড়িতে হামলা চালায়। হামলাকারীর জামির ও সুখজান বেধড়ক মারপিট করে পালিয়ে যায়। সেখান থেকে তাদের উদ্ধার করে সন্ধ্যায় ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

কালীগঞ্জ থানার ওসি শফিকুল ইসলাম বলেন, মারপিটের ঘটনায় এখনও থানায় অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।




ঝিনাইদহে টানা বৃষ্টিতে হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমি পানির নিচে

ঝিনাইদহে কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে জেলার ছয়টি উপজেলার হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। সদর, কোটচাঁদপুর, মহেশপুর, কালীগঞ্জ, হরিণাকুন্ডু ও শৈলকূপা উপজেলায় সবজি ক্ষেত, ধানের বীজতলা ও সদ্য রোপণ করা আমন ধান ডুবে গেছে।

বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের উপযুক্ত ব্যবস্থা না থাকায় জমিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। এতে ফসল ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অনেক কৃষক এখনও জমিতে নতুন করে ধান রোপণ করতে পারছেন না।

সদর উপজেলার লাউদিয়া গ্রামের কৃষক মাহবুবুর রহমান বলেন, “আমার দুই বিঘা জমির ধান তলিয়ে গেছে। পানি কবে নামবে জানি না। পানি নেমে গেলে আবারও ধানের চারা রোপণ করতে হবে। কিন্তু এখন চারা পাব কোথায়?”

কোটচাঁদপুরের কৃষক আশাদুল ইসলাম বলেন, “টানা বৃষ্টিতে আমার এক বিঘা জমির ধানের চারা নষ্ট হয়ে গেছে। নতুন করে রোপণ করলেও ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে সময় লাগবে।”

মহেশপুরের রমজান আলী বলেন, “আমারসহ অনেক কৃষকের জমি ডুবে আছে। চিন্তার ভাজ কপালেÑএই বছর আমন ধান আদৌ ঘরে তুলতে পারব কিনা জানি না।”

ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ষষ্ঠি চন্দ্র রায় বলেন, “কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও প্রশাসনের সহায়তায় বাঁধ অপসারণের কাজ চলছে। বেশ কিছু জায়গায় সমস্যা সমাধান করা হয়েছে, বাকি অংশেও কাজ চলছে।”

কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ঝিনাইদহ জেলার ছয়টি উপজেলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৭ হাজার ৫০০ হেক্টর ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে।




গাংনীতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে কৃষক শওকত আলী নিহত

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ভাটপাড়া গ্রামে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে শওকত আলী (৫৫) নামের এক কৃষক নিহত হয়েছেন।
নিহত শওকত আলী ভাটপাড়া গ্রামের মৃত ফরাতুল্লাহ কাজীর ছেলে।

আজ রবিবার (৩ জুলাই) সকাল ১১ টার সময় নিজ জমির মটারের বিদ্যুৎ লাইনের সুইচ দিতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি।

স্থানীয়দের বরাত দিয়ে গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

স্থানীয়রা জানান, বেলা ১১ টার দিকে কৃষক শওকত আলী নিজের জমির মটার চালু করতে সুইচ দিতে যান। এসময় তিনি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে হাত ও বুকের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান।

তবে, একটি সূত্র জানান, কৃষক শওকত আলীর মটারের বিদ্যুতের লাইনটি দীর্ঘদিন যাবৎ ফুটো হয়ে ছিল। মাঝে মধ্যে সেখানে স্কসটেপ দিয়ে জোড়াতালি দিয়ে সেটি সচল রাখতেন। আজকেও সেই ফুটো জায়গায় স্কচটেপ মোড়াতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন তিনি।




মেহেরপুরে এসএসসি ৯১ ব্যাচের উদ্যোগে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান

মেহেরপুরে জেলা ১৯৯১ সালের এসএসসি ব্যাচের উদ্যোগে কৃতি সন্তান সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকালে মেহেরপুর সরকারী কলেজের ছাত্র শিক্ষক মিলনায়তন এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

জেলা এসএসসি ৯১ ব্যাচের জেলা সমন্বয়ক মেহেরপুর সরকারী কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাউছার আলীর সভাপতিত্বে এবং মেহেরপুর পৌর কলেজের সহকারী অধ্যাপক ড. মোঃ আলিবদ্দীন এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মেহেরপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ডঃ শেখ বখতিয়ার উদ্দীন, বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মেহেরপুর সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডঃ এ কে এম নজরুল কবীর, মেহেরপুর সরকারী কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক খেজমত আলী মালিথ্যা। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন মুক্তিযোদ্ধা আহাম্মদ আলী টেকনিক্যাল এন্ড বিএম কলেজের সহকারী অধ্যাপক রকিবুল হাসান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শিরিন সুলতানা ও কৃতি সন্তানদের পক্ষ থেকে মুবাশ্বিরা রহমান।

পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার পর ব্যাচের পক্ষ থেকে প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথি কে ফুল দিয়ে বরণ করে নেয়া হয়।

অনুষ্ঠানে জেলা এসএসসি ব্যাচের যে সকল সদস্যদের সন্তানরা যারা বিভিন্ন পরীক্ষায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন তাদেরকে ব্যাচের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।




বাঁধন চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ ইউনিটের ৮ম বর্ষপূর্তি উদযাপন

স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের সংগঠন বাঁধন চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ ইউনিট পদ্মা জোনের ৮ম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আলোচনা সভা ও বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল শনিবার সকাল দশটায় চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজে ইতিহাস বিভাগের সেমিনার কক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভার শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলওয়াত করেন বাঁধন চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ ইউনিটের তথ্য ও শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আবু হুরাইরা। অনুষ্ঠানে বাঁধন চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজে ইউনিটের সভাপতি রাসেল আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বাঁধন চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ ইউনিটের সহ-সাধারণ সম্পাদক ও ৮ম বার্ষিক উদযাপন কমিটির আহবায়ক ইয়াসিন আরাফাত। অনুষ্ঠানে সাংগঠনিক প্রতিবেদন ও আর্থিক প্রতিবেদন পেশ করেন বাঁধন চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ ইউনিটের সহ-সভাপতি হাসিবুল হাসান ও কোষাধ্যক্ষ জান্নাতুল আইরিন।

আলোচনা সভায় বাঁধন চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক রিয়াদ হাবিবের সঞ্চালনায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাঁধন চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ ইউনিটের সিনিয়র শিক্ষক উপদেষ্টা সহকারী অধ্যাপক হাফিজুর রহমান। এ সময় অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, বাঁধন সংগঠন সেচ্ছায় রক্তদাতাদের একটি সংগঠন। ২০১৭ সালে থেকে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজে এই সংগঠনটি কাজ করে যাচ্ছে। আমরা দেখে আসছি একঝাঁক তরুণ তরুণী এই সংগঠনের হয়ে বিভিন্ন মানুষের রক্তের চাহিদার প্রেক্ষিতে রক্ত জোড়াগ করা রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করা এবং রক্তদানে শিক্ষার্থী সহ সাধারণ মানুষের উদ্বুদ্ধ করার মতো সৃজনশীল কাজ তারা করে যাচ্ছে তারা। এই সংগঠনটি চুয়াডাঙ্গায় প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে তারা নিরলস ভাবে কাজ করছে সকল শ্রেণি পেশার মানুষের জন্য। মানুষের রক্তের চাহিদা অনুসারে এই সংগঠনে যে সকল শিক্ষার্থী কাজ করে করে তারা দিন রাত যেকোনো সময় এই সেচ্ছাশ্রম দিয়ে যাচ্ছে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাঁধন চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ ইউনিটের শুভাকাঙ্ক্ষী এনআরবি ওয়ার্ল্ডের সাবেক সভাপতি ও শাহিদ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক চুয়াডাঙ্গার কৃতি সন্তান মুহাম্মদ সাহিদুজ্জামান টরিক। এ সময় তিনি বলেন, মানবদেহে রক্তের বিকল্প কিছুই নেই। সড়ক দুর্ঘটনা, অপারেশন, থ্যালাসেমিয়া, ডেলিভারি কিংবা ক্যানসারের মতো জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীদের জীবন বাঁচাতে প্রয়োজন পড়ে এই রক্তের। এই প্রয়োজনীয় রক্তটিই অনেক সময় সময়মতো পাওয়া না যাওয়ায় হাজারো মানুষ অকালে প্রাণ হারায়। শরীরের এই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রক্ত নিয়ে কাজ করছে বাঁধন নামের এই সংগঠনটি।

এ সময় তিনি আরও বলেন, আজকে আপনি যেই মানুষগুলোর জন্য সেচ্ছায় রক্ত দিচ্ছেন রক্ত জোগাড় করে দিচ্ছেন একদিন সেই মানুষগুলো আপনার বিপদে এগিয়ে আসবে। বাঁধন সংগঠন কে আরও কাজ করতে হবে এই জাতির পথ দেখাতে হবে মানুষের বিপদে আরও বেশি বেশি আগিয়ে যেতে হবে। এ সময় তিনি এই সংগঠনের মঙ্গল কামনা করেন এবং বাঁধন কর্মীদের এই সকল কাজের জন্য তাদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

উল্লেখ্য, বাঁধন একটি স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের সংগঠন । এটি ১৯৯৭ সালের ২৪ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডক্টর মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ হলে মোহাম্মদ শহিদুল হক রিপনের হাত ধরে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। বাঁধন আজ দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ এমনকি বিভিন্ন অঞ্চলেও বিস্তার লাভ করেছে। বাঁধনের সদস্যরা বিনামূল্যে রক্তদানে উৎসাহিত করে, নিজে রক্ত দেয়, অন্যকেও উদ্বুদ্ধ করে। বাঁধন চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ ইউনিট পদ্মা জোন ২রা অগাস্ট ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

এ সময়, শিক্ষক উপদেষ্টাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সুলতান মাহমুদ, আজিম হোসেন, সাবিনা খাতুন, জমসেদুর রহমান, বাঁধন কেন্দ্রীয় পরিষদের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মিকাইল হোসেন, ছাত্র উপদেষ্টা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাজেদুর রহমান, সজিবুল ইসলাম, সুজাউদ্দীন টুটুল, সাকিব বিশ্বাস,বাঁধন কর্মীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, শরিফুল,সাকিব হোসেন ,আশিক,অয়ন,মাহফুজ, ইব্রাহিম, মনিরুল, মুর্তজা, সোহা, মৌসুমি,চাঁদনী, হালিমা সহ বাঁধন চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ ইউনিটের শুভাকাঙ্ক্ষী বাঁধনের নেতৃবৃন্দ।




অসুস্থ হনুমানকে বাঁচাতে রিকশাচালকের মানবিকতা

মেহেরপুর শহরের খন্দকার পাড়ার রিকশাচালক জাকির হোসেন শনিবার বিকেলে এক ব্যতিক্রমী মানবিকতার নজির স্থাপন করেন।

সার্কিট হাউজের সামনে দিয়ে রিকশা চালানোর সময় তিনি দেখতে পান, একটি হনুমান অসুস্থ অবস্থায় কাঁপছে। দৃশ্যটি দেখে তিনি আর স্থির থাকতে পারেননি।

জাকির হোসেন দ্রুত হনুমানটিকে নিয়ে পৌঁছে যান মেহেরপুর জেলা পশু হাসপাতালে। তবে শনিবার হওয়ায় হাসপাতালটি বন্ধ ছিল।

তারপরেও তিনি এবং স্থানীয় কয়েকজন সচেতন নাগরিক গিয়ে হাসপাতালের মূল গেটে ধাক্কা দিতে থাকেন, আশা করছিলেন ভিতরে কেউ রয়েছেন কিনা।

স্থানীয় বাসিন্দা মাসুদ জানান, “একটি পশুর জন্য মানুষ কীভাবে ছুটে আসতে পারে—আজ আমরা নিজের চোখে দেখলাম। মানুষ যদি আন্তরিক হয়, তাহলে পশুও অবহেলিত থাকে না।”

ঘটনাটি গতকাল বিকেল পাঁচটার দিকে ঘটে। হনুমানটির শারীরিক অবস্থা গুরুতর হলেও, স্থানীয়দের প্রচেষ্টা ও ভালবাসায় তার জীবন বাঁচানোর চেষ্টা চলতে থাকে।

ঘটনার পর পশুপ্রেমী মহলে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও রিকশাচালক জাকির হোসেনের প্রশংসা চলছে।




মেহেরপুরের ‘মায়ের হাসি ক্লিনিকে’ প্রসূতি মৃত্যুর অভিযোগ

মেহেরপুরের শহরের মায়ের হাসি ক্লিনিকে সিজারিয়ান অপারেশন করার পর তাহেরা খাতুন (২৭) নামের এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গত বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় সিজারিয়ান অপারেশনের পর প্রসুতির অবস্থার অবনতি হলে কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। প্রসূতি তাহেরা খাতুন মেহেরপুর সদর উপজেলার চাঁদবিল গ্রামের সিঙ্গাপুর প্রবাসী একরামুল হকের স্ত্রী। তবে নবজাতক শিশু কন্যাটি সুস্থ আছে।

এর আগে তাহেরা খাতুনের ২টি পুত্র সন্তান রয়েছে। মাকে হারিয়ে তিনটি অবুঝ শিশু এতিম হয়ে গেছে। প্রসূতি তাহেরা খাতুনের মৃত্যুতে পরিবার ও এলাকার শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

চাঁদবিল গ্রামের সিঙ্গাপুর প্রবাসি একরামুল হকের ভাই একলাস আলী বলেন, “বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে তার ভাবী তাহেরা খাতুনকে শহরের কাসারিপাড়াস্থ মায়ের হাসি ক্লিনিকে ভর্তি করি। দুপুর ৩ টার দিকে ডা. জুসি (রুমানা হেলালী জুসি) সিজারিয়ান অপারেশ করান এবং কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করে। কিছুক্ষণ পরে রোগীকে বেডে দেওয়া হয়। বেডে দেওয়ার পরপরই রোগী খিঁচুনি দিয়ে ওঠে। অবস্থা খারাপ হতে থাকলে ক্লিনিকের ভাড়া করে দেওয়া এ্যাম্বুলেন্স দিয়ে সন্ধ্যার দিকে কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। কুষ্টিয়া পৌছানোর আগেই পথের মধ্যে রোগীর মৃত্যু হয়। পরে আমরা লাশ ফিরিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসি। পরদিন শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে জানাযা ও দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। ”

এ বিষয়ে মায়ের হাসি ক্লিনিকের স্বত্ত্বাধিকারী মোতাচ্ছিম বিল্লাহ মতু বলেন, “প্রসূতি মৃত্যুর কোন ঘটনা আমার ক্লিনিকে ঘটেনি। আমরা রোগী রেফার্ড করেছি কুষ্টিয়া মেডিকেলে কি হয়েছে আমরা জানি না।”

বাংলাদেশ প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক ওনার্স এসোসিয়েশনের মেহেরপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক খালিদ সাইফুল ইসলাম বলেন, “মায়ের হাসি ক্লিনিকে প্রসূতি মৃত্যুর বিষয়টি আমাদের কানে এসেছে। এ বিষয়ে কোন অভিযোগ পেলে অথবা ঘটনা সত্য হলে আমরা সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় বিষয়টি খতিয়ে দেখবো।”

তবে প্রসূতি মৃত্যুর খবর জানেন না মেহেরপুরের স্বাস্থ্য বিভাগ। কথা হলে মেহেরপুরের সিভিল সার্জন ডা. আবু সাঈদ বলেন, “ওই প্রসূতির মৃত্যুর খবর আমরা জানি না। তবে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ক্লিনিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”




মেহেরপুরে কামরুল হাসানের গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ

মেহেরপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট কামরুল হাসান আজ শনিবার বিকেল পাঁচটায় সদর উপজেলার বুড়িপোতা ইউনিয়নের শালিকা-বাড়িবাকা গ্রামে গণসংযোগ করেন। এ সময় তিনি বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে লিফলেট বিতরণ করেন এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

গণসংযোগকালে জেলা বিএনপির সদস্য ওমর ফারুক লিটন, বাঁকা বিল্লাহ, জহির হোসেন চঞ্চল, শাহিদুল ইসলাম, ফিরোজুর রহমান, সৌরভ, নাহিদসহ স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় অ্যাড. কামরুল হাসান বলেন, “দেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে ৩১ দফা বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। এই কর্মসূচির প্রতিটি দফা জনগণের মুক্তির সনদ।”




মহেশপুরে রানার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অসত্য; জুলাই আন্দোলনকারীদের চরিত্র হননের চেষ্টা

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক আহবায়ক একজন মসজিদের ইমাম ও সমাজসেবক , নাম হামিদুর রহমান রানা। ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার বলিভদ্রপুর গ্রামে বাড়ি। পরিবারে অর্থনৈতিক সংকট, মাথার গুজার ঠায় হিসেবে আছে শুধু একটি ভিটে বাড়ি। তবুও তাকে অপরাধী বানাতে চায় একটি বিশেষ মহল।

গত মাসের ২৯ জুলাই দুইকটি পত্রিকায় এই রানার বিরুদ্ধে পৌরসভায় চাাঁদাবাজি, এলাকায় দুর্নীতি ও সীমান্ত অপরাধের অভিযোগ তুলে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। অথচ এসব অভিযোগের পক্ষে কোনো তথ্য-প্রমাণ, স্বাক্ষ্য বা ভুক্তভোগীর কোন বক্তব্য তুলে ধরা হয়নি। প্রতিবেদনে এমন সব দাবি করা হয়েছে যা সরেজমিন অনুসন্ধানে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন প্রমাণিত হয়েছে।একটি বিশেষ মহল সারাদেশে জুলাই আন্দোলন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের বিতর্কিত করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এটা তারই ধারাবাহিকতা।

জানা গেছে, রানা প্রায় ১২ বছর ধরে মহেশপুর উপজেলার স্থানীয় রামচন্দ্রপুর পশ্চিমপাড়া জামে মসজিদে মাসিক কিছু টাকার বিনিময়ে ইমামতির দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর বাবা একজন দিনমজুর ও রাতের বেলা পুকুর পাহারার কাজ করেন। ভাইয়েরা কেউ রাজমিস্ত্রি, কেউ দর্জি কাজ করেন। সংসার চলে অভাব-অনটনের মধ্যেই।

বেশ কিছু দিন পূর্বে তিনি তার বাড়িতে পোষা গরু এবং ছাগল আর পূর্বের পুরাতন একটি মোটরসাইকেল বিক্রি করে কিছু টাকা খালিশপুর এক মোটরসাইকেল শোরুমে দিয়ে বাকিতে একটা মোটরসাইকেল কিনে। যা সেই শোরুম এখনো তার কাছে ৮২ হাজার টাকা পাবে। তার হাতে ভাঙা মোবাইল ফোন যার দাম হয়তো ১২/১৪ হাজার টাকা হবে।

এদিকে স্থানীয় বাসিন্দা হাশেম,শাকিল এরা বলেন, রানা খুবই ভালো ছেলে। মসজিদে নামাজ পড়ায়, এলাকায় কারও ক্ষতি করে না। ওর নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে চরিত্রহননের চেষ্টা চলছে।

মসজিদের সভাপতি নজরুল ইসলাম ও সেক্রেটারি ইনতাজ আলী জানান, রানা অত্যন্ত ধর্মভীরু, সৎ ও সাদাসিধে জীবনযাপন করেন। তাঁর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। তার পিতা দিনে পরের জমিতে কাজ করে আর রাতে পরের এক পুকুর পাহারা দেয়। তাদের ভিটে বাড়ি ছাড়া মাঠে কোন জমি নেই।

এবিষয়ে মহেশপুর উপজেলার বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক আহবায়ক হামিদুর রহমান রানা বলেন,আমাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হেয় করা হচ্ছে। কিছু প্রভাবশালী মহল আমার সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা মেনে নিতে পারছে না। আমি আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছি।

এবিষয়ে মহেশপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী সোহেল রানা বলেন, আমি কালের কণ্ঠে কোনো বক্তব্য দিইনি। তারা যা ছেপেছে, তা তাদের মনগড়া ও মিথ্যা বক্তব্য।
এদিকে সুশীল সমাজ বলছে,সংগঠনের রাজনীতিতে যুক্ত থাকলেই কেউ অপরাধী হয় না। সুনির্দিষ্ট প্রমাণ ছাড়া কাউকে এভাবে হেয় করা অনৈতিক ও সাংবাদিকতার নীতিমালার পরিপন্থী।

তারা আরও বলছেন কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি একটি অসহায়, ধর্মপ্রাণ, সাধারণ পরিবারের সন্তানের বিরুদ্ধে একপাক্ষিক, প্রমাণহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচারণা। রানার মতো একজন ইমামকে অপরাধী বানানোর চেষ্টা, শুধু ব্যক্তি নয়, সমাজ ও সাংবাদিকতা নীতির বিরুদ্ধেও এক ভয়াবহ আঘাত। এদিকে একটি মহলের ইশারায় জুলাই আন্দোলন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের বিতর্কিত করার অপচেষ্টা চলছে, যা উদ্বেগজনক। আমরা এই ষড়যন্ত্রের তীব্র নিন্দা জানাই। এবিষয়ে প্রশাসনকে সঠিক ভাবে তদন্ত করার দাবি রাখেন রানা।




মেহেরপুরে ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়েছে মৌসুমি জ্বর’ আক্রান্ত হচ্ছেন পরিবারের সবাই

মেহেরপুরে ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়ছে মৌসুমী জ্বরের প্রকোপ। আক্রান্তদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধই বেশি। মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রোগীর ভীড়ে হিমশীম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। হাসপাতালগুলোতে দেখা দিয়েছে ওষধ সংকট।

মেহেরপুরে ঘর ঘর এখন মৌসুমি জ¦রের প্রকোপ। জ¦রের প্রভাবে বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক, শ্বাসকষ্টজনিত রোগী এবং যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। মেহেরপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালসহ গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্ের দেখা গেছে, রোগীর ভীড়। অনেকেই শয্যাই জায়গা না পেয়ে বাধ্য হয়ে মেঝেতে শুয়েই চিকিৎসা নিচ্ছেন। রোগীরা জানান, জ্বরের সঙ্গে শরীরে প্রচন্ড ব্যথাসহ নানা উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। এক সপ্তাহ থেকে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত ভুগতে হচ্ছে। জ্বর ভালো হওয়ার পরও শারীরিক ক্লান্তি থাকছে দীর্ঘদিন। যার ছাপ পড়ছে দৈনন্দিন কাজে। ঠিকমতো খেতে পারছে না অনেকেই। চিকিৎসকরা বলছেন, সাত থেকে ১০ দিনের চিকিৎসায় জ¦র থেকে রেহায় পেলেও শারীরীক দুর্বলতা কাটতে অন্তত একমাস সময় লাগবে।

হাসপাতাল সূত্র বলছে গত এক সপ্তাহে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল, মুজিবনগর ও গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্ের ভর্তি হয়েছেন প্রায় তিন হাজার রোগী। এদের মধ্যে অধিকাংশই জ¦রে আক্রান্ত শিশু ও বয়স্ক। জ¦রের রোগী হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়ায় হাসপাতালগুলোতে দেখা দিয়েছে ওষধ সংকট।

আক্রান্ত রোগীরা জানান,প্রথমে মাথা ও শরীর ব্যাথা হচ্ছে তার পর কাপুনি দিয়ে প্রচন্ড জ¦র সাথে কাশি। পরিবারের একজন আক্রান্ত হলে সেই পরিবারের সকলেই আক্রান্ত হচ্ছে। অনেকেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন এবং মুমুর্ষ হয়ে পড়ছেন।

গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পণা কর্মকর্তা ডাক্তার আব্দুল আল আজিজ বলেন, জুলাইয়ের শুরু থেকে এই জ¦রের প্রকোপ বেড়েছে। এটি আমরা ইনফ্লুয়েন্জা বলে মনে করছি। তবে অন্তত সাত থেকে ১০ দিন চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। তবে জ¦র অনুভুব হলে দ্রত হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়ার পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক।