মেহেরপুরে মাদকের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী দিবস পালিত

মেহেরপুরে মাদক দ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস ২০২৫ পালিত হয়েছে‌। দিবসটি উপলক্ষে বর্ণাঢ্য র‌্যালি, আলোচনা সভা ও পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

জেলা প্রশাসন ও জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের আয়োজনে আজ বৃহস্পতিবার (২৬ জুলাই) সকাল ১০ টার দিকে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
এর আগে জেলা শিল্পকলা একাডেমী থেকে একটি র‍্যালি বের করা হয়। র‍্যালি প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা প্রশাসন কার্যালয় প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়।

আলোচনা সভায় স্থানীয় সরকারের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক মোঃ তরিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব, শিক্ষা ও আইসিটি এবং বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট) তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ, সহকারী কমিশনার ও বিজ্ঞ এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট (নেজারত শাখা, ট্রেজারি শাখা, ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখা) সাজেদুল ইসলাম, জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক বিদ্যুৎ বিহারী নাথ, উপ-পরিদর্শক মদন মোহন সাহা, মোঃ মতিয়ার রহমান, সহকারী উপ-পরিদর্শক ইসমাইল হোসেন, জেলা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক এ জে এম সিরাজুম মুনীর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আলোচনা সভায় অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকারের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক মোঃ তরিকুল ইসলাম বলেন, মাদক সমাজ ধ্বংসের অন্যতম হাতিয়ার। তরুণ প্রজন্মকে এই অপশক্তি থেকে রক্ষা করতে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।

পরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পুরষ্কার বিতরণ করা হয়।




মেহেরপুরের রংমহল সীমান্তে ৮ বাংলাদেশিকে পুশ-ইন করেছে বিএসএফ

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার রংমহল সীমান্ত দিয়ে ৮ জন বাংলাদেশি নারী, পুরুষ ও শিশুকে পুশ-ইন করেছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)।

বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) সকাল সাড়ে ৬টার দিকে আন্তর্জাতিক সীমান্তের ১৩৬ ও ১৩৭ নম্বর পিলারের মাঝামাঝি গেট দিয়ে তাদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয় বিএসএফ।

পুশ-ইন হওয়া ব্যক্তিরা হলেন, ময়মনসিংহ জেলার টিটু শেখ (৪৫), আশরাফুল ইসলাম (৩৫), খুলনার দৌলতপুরের আমিনুল ইসলাম (২৮), নড়াইল জেলার আবেজান খাতুন (৪০), জামালপুরের ফাইমা আক্তার (২৭), নাছিমা আক্তার (৩৬), শিশু রহিম (৫) ও রোহান (৩)।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পুশ-ইনকৃত ব্যক্তিরা সীমান্তবর্তী সড়ক দিয়ে দেশের ভেতরের দিকে আসার সময় টহলরত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা তাদের গতিবিধি সন্দেহজনক মনে করে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। কথাবার্তায় অসংগতি ধরা পড়লে বিজিবি সদস্যরা তাদের আটক করে রংমহল বিজিবি ক্যাম্পে নিয়ে যান।

রংমহল বিজিবি ক্যাম্প সূত্রে জানা গেছে, পুশ-ইন হওয়া আটজনের মধ্যে দুইজন শিশু, তিনজন নারী এবং তিনজন পুরুষ রয়েছেন। তাদের বাড়ি সাতক্ষীরা, খুলনা ও জামালপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায়।

পুশ-ইন হওয়া ব্যক্তিরা জানান, তারা দীর্ঘদিন ভারতের জেলে থাকার পর গতকাল ভারতীয় পুলিশ তাদের বিএসএফ-এর কাছে হস্তান্তর করে। বিএসএফ তাদের সীমান্তের গেট দিয়ে বের করে দেয়, সেখান থেকে বের হয়ে আসার সময় আমাদের বিজিবি আটক করে।

রংমহল বিজিবি ক্যাম্পের কমান্ডার সুবেদার বাশারুল ইসলাম জানান, “ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী সকাল সাড়ে ৬টার দিকে তারকাঁটার বেড়া পার করে তাদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়। বিজিবি তাদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।”

এ ঘটনায় পতাকা বৈঠকের চিঠি দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন বিজিবির এই কর্মকর্তা।




আমাদের শিক্ষা খাতের জন্য ভয়ানক বার্তা

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একটি জাতির মেরুদণ্ড, আর সেখানে যদি দুর্নীতির বিষবাষ্প ছড়ায়, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।

সম্প্রতি মেহেরপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ, সাবেক মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিনয় কুমার চাকী, স্কুল পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি গোলাম মোস্তফা শান্তি ও সহকারী লাইব্রেরিয়ান আখিতারা খাতুনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে-যা দেশের শিক্ষা খাতের নৈতিকতা ও স্বচ্ছতার ওপর এক গুরুতর আঘাত।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, আখিতারা খাতুন একটি ভুয়া ডিপ্লোমা সনদ ব্যবহার করে চাকরি নেন এবং দীর্ঘ চার বছর যাবৎ সরকারি কোষাগার থেকে প্রায় ৮.৮২ লাখ টাকা বেতন নেন। শুধু তাই নয়, এই জালিয়াতিকে বাস্তবায়নে প্রধান শিক্ষক, শিক্ষা কর্মকর্তা এবং স্কুল কমিটির সভাপতি সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করেন। এমন কর্মকাণ্ড কেবল আইনের লঙ্ঘনই নয়, বরং এটি শিক্ষার্থীদের মাঝে অনৈতিকতা, মিথ্যাচার ও প্রতারণার এক ভয়াবহ দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।

এই ঘটনার মাধ্যমে স্পষ্ট যে, কিছু ব্যক্তি তাদের অবস্থান ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে পুরো একটি প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ধ্বংস করেছে। যেখানে শিক্ষকরা আদর্শ ও নৈতিকতার প্রতীক, সেখানে এমন লজ্জাজনক ঘটনা শিক্ষক নামধারী ব্যক্তিদের প্রতি জনসাধারণের আস্থা নষ্ট করে দেয়। আরও দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, স্থানীয় প্রশাসন বা শিক্ষা দপ্তর এতদিন এ ব্যাপারে কার‌্যকর কোনো নজরদারি করতে পারেনি, যার ফলে একটি জাল সনদধারী ব্যক্তি বছরের পর বছর বেতন তুলেছেন।

আমরা ধন্যবাদ জানাই দুর্নীতি দমন কমিশনকে, যারা তদন্ত করে যথাযথ তথ্যের ভিত্তিতে মামলাটি দায়ের করেছে এবং সত্য উদঘাটনের পথে এগিয়ে গেছে। এখন প্রয়োজন আইনানুগ প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা। পাশাপাশি, শিক্ষা খাতের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ডিজিটাল যাচাই-বাছাই, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়ানো জরুরি।

অন্যদিকে, এই ঘটনায় সাধারণ জনগণ, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদেরও সচেতন হওয়া উচিত। দুর্নীতি বা অনিয়মের খবর জানলে নির্ভয়ে অভিযোগ জানানো এবং প্রশাসনকে সহযোগিতা করা সামাজিক দায়িত্ব।

শেষ কথা হলো, শিক্ষার মতো পবিত্র অঙ্গনে যারা দুর্নীতি ছড়ায়, তাদের কোনো রকম সহানুভূতির সুযোগ নেই। একজন ভুয়া ডিগ্রিধারী শিক্ষক যেমন শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ ধ্বংস করতে পারে, তেমনি তাকে সহযোগিতা করা ব্যক্তিরাও সেই অপরাধে সমান অংশীদার। এই ধরনের অনৈতিকতার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিই হোক আমাদের অঙ্গীকার।




বাদিয়াপাড়া-মহাব্বতপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ বাণিজ্যর অভিযোগ

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বাদিয়াপাড়া মহব্বতপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন ও সাবেক সভাপতি আব্দুর রশিদের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যসহ একাধিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় গ্রামবাসীরা।

এসকল অভিযোগ তুলে গ্রামবাসী গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগ পত্র দুটি মেহেরপুর প্রতিদিনেও পৌছানো হয়েছে।

অভিযোগে জানা গেছে, বর্তমান প্রধান শিক্ষক মোঃ দেলোয়ার হোসেন এবং সাবেক সভাপতি আব্দুর রশিদ যৌথভাবে ৫ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ দেন। নিয়োগের নামে প্রার্থীদের কাছ থেকে মোট ৩২ লক্ষ টাকা আদায় করা হয় উন্নয়ন ফান্ডের নামে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট কামরুন্নাহারের কাছে থেকে ১২ লাখ, নাইট গার্ড ওসমানের কাছে থেকে ১০ লাখ, মালি জাবির থেকে ১০ লাখ টাকা নিয়েছেন। এছাড়া পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদে প্রধান শিক্ষক নিজ বোনের ছেলের নিয়োগের বিনিময়ে ১৫ কাঠা জমি নিজের নামে লিখে নেন এবং সভাপতি তার নিজের ছেলেকে পিয়ন পদে নিয়োগ দিয়েছেন।

তারা আরও অভিযোগ করেন, স্কুলের নামে থাকা ১১টি দোকান থেকে নিয়মিত ভাড়া আদায় করা হলেও গত ১৫ বছরের কোনো হিসাব প্রদান করা হয়নি। এ বিষয়ে জবাবদিহি চাইলে প্রধান শিক্ষক ও সাবেক সভাপতি একে অপরকে দায় দিয়ে গড়িমসি করছেন। গ্রামবাসীরা অভিযোগের বিষয়ে দুদক ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে এসকল অনিয়মনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানিয়েছেন।

তবে প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন মুকুল মেহেরপুর প্রতিদিনকে বলেন, শুনেছি আমার বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করেছে। অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, এগুলো ভুয়া তথ্য। বর্তমান এডহক কমিটি নিয়ে দ্বন্দ হওয়ায় আমাদের বিরুদ্ধে এসকল অভিযোগ তোলা হয়েছে।




মেহেরপুরে গত ৬ মাসে সড়কে প্রাণ হারিয়েছেন ২১ জন, আহত অর্ধশত

মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কের বনবিভাগের সামনে দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে এক সরকারি প্রকৌশলী ও এক কলেজছাত্র নিহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার সকাল আনুমানিক ১০টার দিকে এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন, মেহেরপুর গাংনী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী মো. এ কে এম মাহফুজুর রহমান (৪৭) এবং মেহেরপুর সরকারি কলেজের ছাত্র মো. আকমল হোসেন (২০)। মাহফুজ গহরপুর গ্রামের বাসিন্দা এবং আকমল শেখপাড়া গ্রামের মাবু মিরের ছেলে। এনিয়ে গত ৬ মাসে মেহেরপুরে বিভিন্ন সড়ক দুর্ঘটনায় ২১ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

গতকালের ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান অফিসের উদ্দেশ্যে গাংনীর দিকে যাচ্ছিলেন। অপরদিকে কলেজ শিক্ষার্থী আকমল হোসেন গাংনীর দিক থেকে মেহেরপুরের দিকে আসছিলেন। ঘটনার সময় জেলা বনবিভাগের সামনে পৌছালে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুটি মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে দুইজনই গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে মেহেরপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত মাহফুজের মোটরসাইকেলের নম্বর ছিল ঢাকা মেট্রো-হ ৩৬-৫৪২৯ এবং আকমলের মোটরসাইকেলের নম্বর মেহেরপুর হ-১৩-৫১৯৪। তাদের দুজনের মোটরসাইকেলেই হেলমেট ছিল কিন্তু হেলমেট পরিহিত ছিল না বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
দুর্ঘটনার পর এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে এবং দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত শুরু করেছে।

এদিকে, মেহেরপুরে গত ডিসেম্বর থেকে জুন পর‌্যন্ত সময়ে সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ১৯ জন নিহত এবং অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে শিশু, শিক্ষার্থী, নারী, প্রবাসফেরত যুবক, কলেজ ছাত্র এবং বৃদ্ধও রয়েছেন। দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে রয়েছে মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, ট্রাক, ভ্যান ও বাইসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনের সংঘর্ষ ও নিয়ন্ত্রণ হারানোর ঘটনা।

গত ১০ জুন মেহেরপুর সদর উপজেলার বাড়াদিতে দুই মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে সৌরভ নামের এক যুবক নিহত হন, আহত হন একই পরিবারের ৪ জন সদস্যসহ মোট ৫ জন। ৫ জুন গাংনীতে সড়ক দুর্ঘটনায় আবুল কাশেম (৬২) নিহত হন। ৪ জুন মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা মহাসড়কে দুর্ঘটনায় ছাগল ব্যবসায়ী নজিম উদ্দিন (৬৪) নিহত হন, আহত হন আরও ৪ জন। ৩ জুন মুজিবনগরে ট্রলি ও ইজিবাইকের সংঘর্ষে ৪ শিশু শিক্ষার্থী আহত হয়। ১০ মে গাংনীতে রাস্তা পার হতে গিয়ে আড়াই বছরের শিশু তাছনিয়া খাতুন নিহত হয়। মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কের শুকুরকান্দিতে ট্রাক-মাইক্রোবাস সংঘর্ষে ৩ জন নিহত, ৩ নারী আহত হন। ৯ এপ্রিল গাংনীতে চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফেরার পথে বৃদ্ধ সামসুল হক (৬৫) নিহত হন। ৩১ মার্চ মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক মহাসড়কে প্রাইভেটকার, ভ্যান ও মোটরসাইকেলের ত্রি-মুখি সংঘর্ষে এক ব্যাংক কর্মকর্তা, এক শিশু ও আরও একজন নিহত হন। এ ঘটনায় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন মেহেরপুর সদর উপজেলার উজলপুর গ্রামের হাসান মোল্লার ছেলে ও এনআরবিসি ব্যাংকের রূপনগর শাখার অফিসার আক্তারুজ্জামান ওরফে শোভন, সদর উপজেলার বাড়িবাঁকা গ্রামের মোখলেসুর রহমানের ছেলে আল ইমরান এবং গাংনী উপজেলার ধানখোলা গ্রামের ভ্যানচালক আলী হাসানের শিশু পুত্র জুবায়ের হাসান। ২৭ মার্চ সদর উপজেলার আশরাফপুরে মোশাররফ হোসেন (৬০) সড়কে প্রাণ হারান। ২২ মার্চ কুঠি ভাটপাড়ায় শ্যালো ইঞ্জিন আলগামনের সাথে ধাক্কায় প্রবাস ফেরত সাগর মিয়া (২৪) নিহত হন। ৪ ফেব্রুয়ারি আমঝুপিতে ট্রাকের ধাক্কায় লাল্টু হোসেন (৩২) নিহত, মিনারুল ইসলাম গুরুতর আহত।

২৭ জানুয়ারি, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জামায়াত নেতা শেখ মোমিনুল ইসলাম (৫৫)। ৮ জানুয়ারি গাংনীতে পৃথক দুর্ঘটনায় নিহত হন স্কুল ছাত্র তাইমুজ্জামান (৯), কলেজ ছাত্র সিয়াম হোসেন (১৮) ও আব্দুল্লাহেল বাকী (১৮)। ১ ডিসেম্বর, তেঁতুলবাড়িয়ায় মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে স্কুলছাত্র সজিব হোসেন (১৬) প্রাণ হারান।

এই ছয় মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে কমপক্ষে ৭ জন শিশু ও শিক্ষার্থী রয়েছেন। স্কুলে যাওয়ার পথে, রাস্তা পার হতে গিয়ে বা ভ্যানে থাকাকালীন তাদের মৃত্যু হয়।

দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে কমপক্ষে ৪ জন প্রবাস ফেরত যুবকও রয়েছেন, যারা ছুটি কাটাতে দেশে এসে প্রাণ হারিয়েছেন।




‘ভবিষ্যতে ক্ষমতা পেলে ফিলিস্তিনের মত হবে’ হুমকি সম্বলিত চিরকুট ও বোমা সাদৃশ বস্তু উদ্ধার

মেহেরপুরে গ্রাম বিএনপির অফিসের সামনে থেকে ‘ভবিষ্যতে ক্ষমতা পেলে ফিলিস্তিনের মত হবে’ হুমকি সম্বলিত চিরকুট ও বোমা সাদৃশ বস্তু উদ্ধার করেছে পুলিশ।

বুধবার (২৬ জুন) সকাল আনুমানিক সাড়ে ৬টার দিকে মটমোড়া ইউনিয়নের নওদা মটমোড়া গ্রাম বিএনপির অফিসের সামনে থেকে এগুলো উদ্ধার করা হয়।

স্থানীয়রা জানান, বিএনপির ১ নম্বর ওয়ার্ডের (বাবলু গ্রুপের) দলীয় কার্যালয়ের সামনে সকালে দুটি সন্দেহজনক বস্তু পড়ে থাকতে দেখে তারা দ্রুত গাংনী থানা পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়ে গাংনী থানার একটি টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ককটেল সদৃশ্য বস্তু দুটি ও একটি চিরকুট উদ্ধার করে।

চিরকুটে লেখা রয়েছে ‘গ্রামের ছেলে হিসেবে এতদিন ভালোই ছিলাম, কিন্তু তোদের মত কিছু কিছু লোক আমাদের ভালো থাকতে দিচ্ছে না। (শেখ হাসিনা) পালিয়ে গিয়েছে তো কি হয়েছে।

আমরা জায়গার মাল জাগাতেই বসে আছি, ২০১৮ সালে হালকা দিয়েছি। ভবিষ্যতে ক্ষমতা পেলে ফিলিস্তিনের মত হবে’

গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বানী ইসরায়েল বলেন, “স্থানীয়দের তথ্যের ভিত্তিতে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে দুইটি বিস্ফোরক সদৃশ্য বস্তু ও একটি চিরকুট উদ্ধার করেছি। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে এবং আইনগত প্রক্রিয়া চলমান।”

তিনি আরও জানান, উদ্ধারকৃত বস্তু পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠানো হবে। পাশাপাশি কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তা খুঁজে বের করতে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি গাংনীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলীয় কোন্দল ও হামলার ঘটনার পর এমন ঘটনায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।




গাংনীতে বোমা ফাটিয়ে গণডাকাতি, আতঙ্কে এলাকাবাসী

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় ধানখোলা রাস্তায় বোমা ফাটিয়ে সংঘবদ্ধ ডাকাত দল গণডাকাতি চালিয়েছে। এ সময় তারা তিনটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পথচারীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ অর্থ, মোবাইল ফোন এবং মোটরসাইকেল লুট করে নেয়। বুধবার (২৫ জুন) দিবাগত রাত ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শী ভুক্তভোগীরা জানান, গাংনী উপজেলার গোহাটপাড়া এলাকার আরিফুল ইসলাম ও কাষ্টদহ গ্রামের মো. শিশির ধানখোলা গ্রামে যাচ্ছিলেন। পথে একটি ইটভাটার কাছে পৌঁছালে কালো কাপড়ে মুখঢাকা দুইজন ডাকাত পিস্তল হাতে লেজার লাইট দেখিয়ে তাদের মোটরসাইকেলের গতি রোধ করে। এরপর অস্ত্রের মুখে নগদ টাকা, মোবাইল ও মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নেয়।

তারা জানান, এসময় আশপাশে থাকা ৮/১০ জন পথচারীকেও পাশের একটি মেহগনি বাগানে নিয়ে গিয়ে ডাকাত দল সবার টাকা-পয়সা কেড়ে নেয়। তাদের সঙ্গে থাকা আরও ৫-৬ জন ডাকাত দেশীয় অস্ত্র ও ওয়াকিটকি নিয়ে দূর থেকে পাহারা দিচ্ছিল। ডাকাতি শেষে তারা তিনটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মোটরসাইকেলটি ফেলে রেখে দ্রুত এলাকা ত্যাগ করে।

ঘটনার খবর পেয়ে গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বনি ইসরাইল পুলিশের একটি টিম নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তবে তিনি সাংবাদিকদের সামনে কথা বলতে রাজি হননি। তিনি বলেন, “ডাকাতদের ধরতে অভিযান শুরু হয়েছে।”

এই ঘটনায় এলাকায় চরম আতঙ্ক ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।




দামুড়হুদায় ফল উৎসব মেলা ও কৃষি উপকরণের উদ্বোধন

দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি দপ্তরের উদ্যোগে ফল উৎসব মেলা ও কৃষি উপকরণের শুভ উদ্বোধন করেন দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার তিথি মিত্র। আজ বুধবার বেলা ১২ টার দিকে কৃষি অফিসের আয়োজনে ফল উৎসব মেলা ও কৃষি উপকরণের শুভ উদ্বোধন করা হয়।

এ সময় দেশীয় বিভিন্ন জাতের ফল দিয়ে সাজানো ইনস্টলটি ঘুরে দেখেন ও কৃষি উপকরণ ধানের বীজ ও নারিকেলের, তালের চারা কৃষকদের হাতে তুলে দেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার তিথি মিত্র।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে এইচ তাসফিকুর রহমান, দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি অফিসার শারমিন আক্তার, সমাজ সেবা কর্মকর্তা তোফাজ্জল হক, প্রকৌশলী কর্মকর্তা আব্দুর রশিদ, দামুড়হুদা প্রেসক্লাব সভাপতি শামসুজোহা পলাশ, মৎস্য কর্মকর্তা বিল্লাল হোসেন, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আল সাবাহ, একাডেমি মাধ্যমিক স্কুল সুপার ভাইজার রাফিজুল ইসলাম, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার অভিজিৎ কুমার বিশ্বাসসহ উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ ও আমন্ত্রণিত অতিথিবৃন্দ।




চুয়াডাঙ্গায় বিসিক শিল্প নগরীর প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত উদ্বুদ্ধকরণ সভা

চুয়াডাঙ্গায় বিসিক শিল্প নগরীর প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত উদ্বুদ্ধকরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আজ বুধবার বিকাল তিনটার সময় বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) জেলা কার্যালয় চুয়াডাঙ্গার উদ্যোগে এবং জেলা প্রশাসন চুয়াডাঙ্গার সার্বিক সহযোগিতায় বিসিক শিল্পনগরীর প্লট বরাদ্দ প্রদান সংক্রান্ত একটি উদ্বুদ্ধকরণ সভার আয়োজন করা হয়।

আলোচনা সভায় চুয়াডাঙ্গা জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মূল্যবান বক্তব্য প্রদান করেন স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) শারমিন আক্তার। সভায় বিসিক শিল্পনগরীতে প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত নীতিমালা, প্রক্রিয়া এবং উদ্যোক্তাদের জন্য বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।

এ সভার মূল লক্ষ্য ছিল চুয়াডাঙ্গা জেলার সম্ভাবনাময় ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদেরকে বিসিক শিল্পনগরীতে বিনিয়োগে উৎসাহিত করা এবং শিল্প বিকাশের মাধ্যমে কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বিসিক চুয়াডাঙ্গার উপব্যবস্থাপক এ বি এম আনিসুজ্জামান।

এছাড়াও সভায় জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন ব্যাংকের প্রতিনিধিগণ, স্থানীয় ব্যবসায়ীবৃন্দ, মাঝারি ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।

সভায় অংশগ্রহণকারীগণ বিসিক শিল্পনগরীর ভূমি ব্যবস্থাপনা, অবকাঠামোগত সুবিধা, অর্থায়নের সুযোগ এবং উদ্যোক্তাদের জন্য সম্ভাব্য করণীয় বিষয়ে আলোচনা করেন। অংশগ্রহণকারীরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানান এবং জেলা পর্যায়ে শিল্পোন্নয়নে বিসিকের কার্যক্রম আরও গতিশীল করার আহ্বান জানান।




চুয়াডাঙ্গায় ধর্ষণ মামলায় দুইজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা ও জীবননগর উপজেলার পৃথক দুটি ধর্ষণ মামলায় নাজমুল হক ও আব্দুল খালেক নামের দুজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। একইসাথে তাদের এক লাখ টাকা করে জরিমানার আদেশ দেয়া হয়েছে।

আজ বুধবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) সৈয়দ হাবিবুল ইসলাম এ রায় ঘোষণা করেন।

দণ্ডিতরা হলেন– জীবননগর উপজেলার মিনাজপুর বানপুর গ্রামের আব্দুল খালেক (৫৫) এবং আলমডাঙ্গা উপজেলার বাড়াদী গ্রামের নাজমুল হক (৩৩)।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ৮ জুন মিনাজপুর বানপুর গ্রামের ৬ বছর বয়সী এক শিশু মেয়েকে ধর্ষণ করেন আব্দুল খালেক। ওই ঘটনায় শিশুর বাবা বাদী হয়ে ৯ জুন জীবননগর থানায় ধর্ষণের মামলা দায়ের করেন। জীবননগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আকরাম হোসেন তদন্ত শেষে ওই বছর ৩০ জুলাই আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। মামলার স্বাক্ষীদের স্বাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আসামি আব্দুল খালেককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ডাদেশ দেয়া হয়।

অপরদিকে, ২০২১ সালের ৮ সেপ্টেম্বর আলমডাঙ্গার বাড়াদী গ্রামের মীরপাড়ার এক বাড়িতে ঢুকে এক কিশোরীকে ধর্ষণ করেন আসামি নাজমুল হক। এতে কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে কিশোরীর বাবা বাদী হয়ে ওই বছরের ১৯ ডিসেম্বর আলমডাঙ্গা থানায় ধর্ষণের মামলা করেন। পরে ২০২২ সালের ২৬ অক্টোবর আলমডাঙ্গা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) খসরু আলম তদন্ত শেষে আসামি নাজমুলের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। মামলার স্বাক্ষীদের স্বাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আসামি নাজমুল হককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ডাদেশ দেয়া হয়।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) শাহজাহান মুকুল জানান, পৃথক দুটি রায়ে ভুক্তভোগীর পরিবার সন্তুষ্ট। ধর্ষণের ঘটনায় দুটি রায়ে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হয়েছে। সমাজের অপরাধ প্রবণতা এই রায়ের পর কমবে বলে রাষ্ট্রপক্ষ মনে করে।