পরাজিত ফ্যাসিবাদী মাফিয়া শক্তি যেন আর মাথাচাড়া দিতে না পারে

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার বলেছেন, পরাজিত ফ্যাসিবাদী মাফিয়া শক্তি যেন আর মাথাচাড়া দিতে না পারে। মাফিয়া তন্ত্রের ফ্যাসিবাদের পদতলে কখনো যেন আমাদের অধিকার ও জীবনকে সমর্পণ করতে না হয়, সেই লক্ষ্যে সবাইকে কাজ করতে হবে।

আজ শনিবার দুপুরে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সম্মেলন কক্ষে উপজেলার সমস্যা ও সম্ভাবনা শীর্ষক আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

মেহেরপুর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনোয়ার হোসেন।

এ সময় বক্তব্য রাখেন, মেহেরপুর-২ আসনের সাবেক এমপি ও সাবেক জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন, গাংনীর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বানী ইসরাইল, গাংনী উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি রেজাউল হক, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবলু, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের আহ্বায়ক সামসুল আলম সোনা, গাংনী পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক, গাংনী পৌর জামায়াতের রাজনৈতিক সেক্রেটারি জিল্লুর রহমান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মেহেরপুর জেলা শাখার সদস্য সচিব মোজাহিদুল ইসলাম, গাংনী টেকনিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ স্বপন, গাংনী উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি জুলফিকার আলী কানন, গাংনী বাজার কমিটির সভাপতি সালাহ উদ্দীন শাওন প্রমুখ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, উপনিবেশিক পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর শাসন ও শোষণ থেকে মুক্তি পাওয়াও ছিল মুক্তিযুদ্ধের মূল লক্ষ্য। ২৪ এর জুলাইয়ের অভ্যুত্থানের চেতনাও ছিল মুক্তির চেতনা। অতএব, ৭১ এবং ২৪ এর অভ্যুত্থান নিয়ে আলাদা ভাবা, কোনটা ছোট কোনটা বড় এভাবে পার্থক্য করার কোনো সুযোগ নেই।

তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের জনগণের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ঘটনা। এটা কেউ চাইলেও ছোট করতে পারে না। মুক্তিযুদ্ধ না হলে আমরা এই স্বাধীন ভূখণ্ড পেতাম না। সেটা মুক্তিযুদ্ধের মহিমায় সমুজ্জ্বল হয়ে থাকবে। তাই বলে ২৪ এর চেতনার কথা আমরা বলতে পারব না? প্রশ্ন করেন তিনি।

তিনি বলেন, ৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং ২৪ এর জুলাই অভ্যুত্থান দুটো ঘটনাই ঘটেছে মুক্তির চেতনা নিয়ে। সুতরাং আমাদের ৭১ এবং ২৪ এর জুলাই অভ্যুত্থান দুটো ঘটনাই তুলে ধরতে হবে। মুক্তির চেতনার সাথে সংগতিপূর্ণ কাজগুলো আমাদের ধারণ করতে হবে।

মনির হায়দার বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে চার সপ্তাহের মধ্যে প্রায় ২ হাজার মানুষ জীবন দিয়েছে। তাদের হত্যা করা হয়েছে। প্রায় ৩০ হাজার মানুষ অঙ্গহানির শিকার হয়েছেন, হয়েছেন গুরুতর আহত। এগুলো কি শুধুমাত্র রাজনৈতিক আন্দোলনে ঘটে? প্রশ্ন করেন তিনি। এটা রীতিমত একটা যুদ্ধাবস্থা ছিল।

তিনি বলেন, আমরা ২০২৪ সালের যে ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে এসেছি, সেটা রীতিমত একটা যুদ্ধাবস্থা ছিল। যেখানে যুদ্ধের মধ্য দিয়ে একটি পক্ষ পরাজিত হয়েছে। যেই পক্ষকে আমরা বলি মাফিয়া তান্ত্রিক ফ্যাসিস্ট। সেই মাফিয়া তান্ত্রিক ফ্যাসিস্ট শক্তি পরাজিত হয়েছে জনগণের কাছে। তারা এই দেশের সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিজেদের কব্জায় নিয়ে জনগণের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে। সেই সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে নিরস্ত্র জনগণের প্রতিরোধ বিজয়ী হয়েছে। সেই বিজয়ের মধ্য দিয়ে আমরা আজকে এই মুক্ত পরিবেশ পেয়েছি। অধিকাংশ জনগণের জন্য যেটা মুক্ত পরিবেশ, পরাজিত শক্তির জন্য সেটা পরাধীন পরিবেশ। তাদের জন্য এটা স্বাধীন পরিবেশ নয়। জুলাই ২৪ এ তরুণ তাজা প্রাণের বিনিময়ে আমরা একটা ভয়ংকর মাফিয়া তন্ত্রের হাত থেকে এদেশকে মুক্ত করেছি।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে আমরা বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান চাই, যেখানে সোহহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে সকলে সহাবস্থান করবেন। যেখানে সকলের ন্যায্য অধিকার থাকবে, কেউ বঞ্চিত হবেন না। এই তত্ত্বে এবং এই কর্মে বিশ্বাসী।

তিনি বলেন, এই বাংলাদেশে গত ১৬ বছরে এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের অধিকার জিম্মি হয়ে পড়েছিল। আমরা যতটুকু অধিকার পেতাম, যতটুকু দয়া করে দেওয়া হতো। আমার যতটুকু অধিকার, সেটা আমার মতো আরেকজন নির্ধারণ করে দিতো। এই পদ্ধতিতে গোটা দেশের মানুষ জিম্মি দশায় পতিত ছিল। আমরা যেটাকে বলি ফ্যাসিবাদ ও মাফিয়া তান্ত্রিক শাসন। এমন এক শাসকগোষ্ঠী আমাদের বুকের উপর চেপে বসেছিল, যারা শুধু আমাদের অধিকারগুলোই কেড়ে নেয়নি, আমাদের নানা রকম নিপীড়ন-নির্যাতনের নিস্পেষণের দিকে ঠেলে দিয়েছিল। আমরা নিজেদের নিয়মিত নাগরিক ভাবতে ভুলে যাচ্ছিলাম। সেই মাফিয়া চক্র এমন এক পদ্ধতি প্রবর্তন করেছিল, তারা পাঁচ বছর পর পর ভুয়া নির্বাচনী খেলা দেখিয়ে জনগণকে ঘোষণা করতো আমরা নির্বাচনে জয়লাভ করেছি, আগামী পাঁচ বছর আমরা ক্ষমতায় থাকবো, আমাদের আর কেউ কিছু বলতে পারবে না। আমরাও প্রায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। চেষ্টা ছিল, আকাঙ্ক্ষাও ছিল, কিন্তু এক পর্যায়ে ভাবতাম মনে হতো বোধহয় এই অবস্থার আর পরিবর্তন হবে না। প্রচণ্ড হতাশাজনক, এক অন্ধকারময় জীবন গোটা দেশ জুড়ে সবার জন্য নেমে এসেছিল।

তিনি বলেন, প্রশাসনে যারা আছেন, তারা পেশাদারিত্ব ও নিরপেক্ষতা নিয়ে কাজ করছেন তাদের ব্যাপারে আমাদের কোনো প্রশ্ন নেই, কোনো বিতর্ক নেই। কিন্তু একটি পক্ষ এতদিন খেয়ে পরে মোটা-তাজা হয়ে মাঠে নামবে আর অপর পক্ষটি এতোদিন না খেয়ে নির্যাতিত নিপীড়িত হয়ে মাঠে নামবে তাদের মাঝে নিরপেক্ষতা দেখাবেন এই নিরপেক্ষতা এখন প্রযোজ্য হবে না।

তিনি প্রশাসনের উদ্দেশ্যে বলেন, আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যারা ২৪ এর গণহত্যার সাথে জড়িত ছিল, গণহত্যাকে নানাভাবে মদদ দিয়েছে, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করাটাই নিরপেক্ষতা। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে নিরপেক্ষতা দেখানো মানে আত্মঘাতী। এটা এক সময় আপনার জন্যও বিপদজনক হয়ে উঠতে পারে। সুতরাং যেকোনো পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের মানুষের ভবিষ্যৎ, গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রযন্ত্রকে নিরাপদ করার জন্য, প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাজের নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টির জন্য এই গুরুতর অপরাধের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যারা জড়িত ছিল, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।

তিনি বলেন, পরাজিত শক্তির অর্থনৈতিক নেটওয়ার্ক এখনো পুরোদমে সক্রিয়। অর্থনৈতিক নেটওয়ার্ক মানে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বিভিন্ন ধরণের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আছে। তাদের এখনো বিভিন্ন ধরণের ব্যবসা-বাণিজ্য, ডিলারশিপ রয়েছে। এগুলো পরাজিত ফ্যাসিবাদীদের হাতে থাকবে আর আপনি মনে করবেন সমাজে নিরপেক্ষতা থাকবে এটা হবে না। আপনি যদি মনে করেন, পরাজিত ফ্যাসিবাদ আছে, আমরা নিরপেক্ষ আচরণ করবো এটা আপনার জন্য আত্মঘাতী হবে।

তিনি বলেন, জনগণের সহায়তায় প্রশাসন এমন ব্যবস্থা নেবেন যাতে, পরাজিত অপরাধী চক্রের অর্থনৈতিক অপরাধচক্র ভেঙে পড়বে। এরপর সেখানে নিরপেক্ষতার চর্চা হবে। সেখানে স্বাভাবিক আইনের চর্চা হবে। এর আগে প্রশাসন কোনো নিরপেক্ষতা দেখাতে গেলে জনগণ এবং প্রশাসনের জন্য বুমেরাং হবে।

মুজিবনগর প্রসঙ্গে মনির হায়দার বলেন, জায়গাটার পূর্ব নাম বৈদ্যনাথতলা ভবেরপাড়া। বৈদ্যনাথতলা ভবেরপাড়া এই বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল সেখানে বিপ্লবী সরকার শপথ গ্রহণ করেন। ‘ডিক্লারেশন অফ ইন্ডিপেন্ডেন্স’ সেখান থেকেই প্রকাশিত হয়, যেটা এখন সংবিধানে যুক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক সুবিচার ছিল মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা। ‘ডিক্লারেশন অফ ইন্ডিপেন্ডেন্স’ মুজিবনগর থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ৭২ সালের সংবিধানে এই মূলনীতিগুলো যুক্ত করা হয়নি।

জুলাই অভ্যুত্থানের পর বর্তমান সংস্কার কমিশন, বর্তমান রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগে এই মুক্তিযুদ্ধের তিনটি ঘোষণাকে সংবিধানে সংযুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে। তিনি বলেন, যে বৈদ্যনাথতলায় এই ঐতিহাসিক ঘটনাটি ঘটেছিল, যেখানে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছিল, সেই জায়গাটির নাম মুজিবনগর হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের মুক্তি সংগ্রামের স্বাধিকার আন্দোলনে শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান অস্বীকার বা উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ নেই।

কিন্তু যেখানে শেখ মুজিব কোনোদিন আসেননি, তার সাথে মুজিবনগরের কোনো সম্পর্ক নেই তার নামে মুজিবনগর কেন হবে? প্রশ্ন করেন তিনি। তিনি বলেন, এই জায়গাটির নাম মুক্তিনগর, মুক্তিপুর বা অন্য কোনো নাম দেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, প্রশাসন এবং আমাদের সকলের উচিত জুলাই অভ্যুত্থানের নায়কদের চেহারা মনে রাখা। তাহলে নিরপেক্ষতার মানদণ্ডটা বুঝতে সহজ হবে। জীবন হাতে নিয়ে, নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও যারা বুলেটের সামনে দাঁড়িয়েছে সেই জুলাই যোদ্ধাদের কথা মনে হলে নিরপেক্ষতার মানদণ্ড সম্পর্কে বোঝা যাবে।




মেহেরপুরে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মরণে গ্রাফিতি ও চিত্রাঙ্কন

মেহেরপুরে জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মরণে গ্রাফিতি ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শনিবার জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মেহেরপুর সরকারি মহিলা কলেজ প্রাঙ্গনে চিত্রাঙ্কন ও গ্রাফিতি অঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।

দিনব্যাপী এ আয়োজনে জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়।

জেলা শিক্ষা অফিসা মো: হযরত আলী বলেন, ঐতিহাসিক জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে দেশব্যাপী শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে এই আয়োজন চলছে। এর মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের কাছে গত বছরের গণ-অভ্যুত্থানের তাৎপর্য ও আত্মত্যাগের ইতিহাস তুলে ধরা হচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ খায়রুল ইসলাম বলেন, গত বছরের ১ জুলাই শুরু হয়ে ৫ আগস্ট চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হওয়া এই গণ-অভ্যুত্থান বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। সেই সাহসী আন্দোলনকে স্মরণীয় করে রাখতে এবং নতুন প্রজন্মের মাঝে এর চেতনা ছড়িয়ে দিতেই এই চিত্রাঙ্কন ও গ্রাফিতি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে।

এছাড়াও এসময় মেহেরপুর সরকার মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মুহা. আবদুল্লাহ আল-আমিন (ধুমকেতু), সহকারী কমিশনার ও বিজ্ঞ এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট শেখ তৌহিদুল কবীর, টিটিসি’র অধ্যক্ষ ড. শামীম হোসেন, মেহেরপুর সরকারি কলেজের প্রভাষক হাসানুল হক, সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মনিরুল ইসলাম, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের প্রতিনিধি আমিনুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

জেলা পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় ‘খ’ গ্রুপে তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে গাংনী সরকারি ডিগ্রি কলেজ, দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে মেহেরপুর সরকারি কলেজ এবং প্রথম স্থান অর্জন করেছে মেহেরপুর সরকারি মহিলা কলেজ।

অন্যদিকে, ‘ক’ গ্রুপে তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে মেহেরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে মেহেরপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং প্রথম স্থান অর্জন করেছে জিনিয়াস ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ।

জেলা পর্যায়ে প্রথম পুরস্কার হিসেবে ১০ হাজার টাকা, দ্বিতীয় পুরস্কার সাত হাজার টাকা এবং তৃতীয় পুরস্কার পাঁচ হাজার টাকা দেওয়া হবে।




খুলনা থেকে আসা ৬৬ টন পচাঁ গম ঝিনাইদহ সরকারী খাদ্য গুদামে সংরক্ষন

খুলনা সিএসডি খাদ্য গুদাম থেকে আসা ৬৬ টন পচাঁ গম ঝিনাইদহ সরকারী খাদ্য গুদামে গুদামজাত করা হয়েছে। শুক্রবার দিনব্যাপি এসব পচাঁ গম ৪টি ট্রাক থেকে আনলোডের মাধ্যমে গুদামে রাখা হয়।

জানা যায়, খুলনা সিএসডির চলতি দায়িত্বে থাকা সহকারী ব্যবস্থাপক পূর্নিমা মন্ডল স্বাক্ষরিত ১৬জুলাই ৪টি ভি-ইনভয়েসের মাধ্যমে এসব পচাঁ গম ঝিনাইদহ সদর উপজেলা খাদ্য গুদামে (সদর এলএসডি তে পাঠায়। বৃহস্পতিবার ভোরে ঝিনাইদহ সদর সরকারী খাদ্য গুদামের (সদর ওসিএলএসডি) গেটে ৪টি ট্রাকে ৬৬টন পঁচা গম নিয়ে প্রবেশ করে। প্রথম জেটি-১১-১৮২৪ নম্বর ট্রাকে ২৯৫ বস্তা যার নীট ওজন ১৬.৮৭০ টন, দ্বিতীয় জেটি-১১-১২৯৬ নম্বর ট্রাকে ২৯৬ বস্তা যার নীট ওজন ১৬.৭৭৯ টন,তৃতীয় ডিএমটি-২৪-৩৭৭৯ নস্বর ট্রাকে ২৮৮ বস্তা যার নীট ওজন ১৬.৫৯০টন, চতুর্থ আরজেএমটি-১১-০৩৮১ ট্রাক নম্বরে ৩০০ বস্তা যার নীট ওজন ১৬.৬৮৬টন। প্রতিটি ভি-ইনভয়েসে লেখা ছিলো পন্যের নাম লাল গম এবং গুনগত মান ডিএসডি-থ্রি। প্রতিটি ভি-ইনভয়েসে খুলনা সিএসডির তল্লাসি ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার স্বাক্ষর ছিলো। কিন্তু গমের ভি-ইনভয়েস দেখে উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক জাহাঙ্গীর হোসেন মালের মান বুঝে নিতে গিয়ে দেখেন তা অত্যন্ত নিম্নমানের পচাঁ গম। তখন ট্রাক গুলা আনলোড না করে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করে। অফিসের মাধ্যমে খবর পেয়ে খুলনার বিভাগীয় খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যলয় থেকে একটি পরিদর্শক টিম এসে এই নিম্ন মানের পচাঁ গম ঝিনাইদহ খাদ্য গুদামে রাখার চাপ দিলে ঝিনাইদহ সদরের খাদ্য পরিদর্শক ও ভারপ্রাপ্ত গুদাম রক্ষক কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন তা গুদামজাত করতে বাধ্য হন। এই নিম্ন মানের ৬৬ টন গম ফেরত না দিলে ঝিনাইদহের উপকার ভোগী ভোক্তা বা গ্রাহকগণ চরম ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে এবং আগামীতে আরো দুইশ টন গম আসার কথা সেটাও নিম্ন মানের মাল পাঠাবে বলে ধারণা করা যায়।

গাড়ীর চালক ও হেলপাররা জানায়, খুলনার বৈকালী থেকে গম লোড করার সময় তারা দেখতে পান গম পঁচা, নিন্মমানের ও ধুলায় পরিপুর্ন। যেগুলা আটা করে খাওয়ার অনুপোযী। সাধারণ মানুষকে এগুলা খাওয়ালে তার রোগাক্রান্ত হয়ে মারা যাবে। যেহেতু আমরা পরিবহনের দায়িত্বে তাই কিছু বলতে পারিনি। আমার জেলা গুদামে আসারপর আপনাদেরকে জানাতে পারলাম।

এদিকে দুইদন ট্রাক আটকিয়ে রাখায় তখন ট্রাকের চালক এবং ট্রাক মালিকদের সাথে খাদ্য পরিদর্শক জাহাঙ্গীর হোসেন বাক-বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে। শুক্রবার পর্যন্ত দুদিন ট্রাক আটকিয়ে রাখার দায়ে হরিণাকুণ্ডুু ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান লিটন তার ট্রাকের ক্ষতিপূরণ দাবি করলে উভয় পক্ষের মধ্যে বাক-বিতান্ডার সৃষ্টি হয়। তখন ঝিনাইদহ চেম্বার অফ কর্মাস এন্ড ইন্ডাট্রিজ এর সভাপতি ও জেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন ঘটনাস্থলে পৌছে উভয় পক্ষের মধ্যস্ততায় ক্ষতিপূরণের বিষয়টি মিমাংশা করেণ এবং ট্রাক থেকে মাল আনলোড করে ট্রাকগুলো ছেড়েদেন।

এবিষয়ে সদর উপজেলা খাদ্য পরদর্শক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন নিম্ন মানের গম হওয়ায় আমি ট্রাক আটকিয়ে দিয়েছিলাম, ট্রাকগুলো ফেরত দেওয়ার চেষ্টা করছিলাম কিন্তু বিশেষ কারণে এই গম আমার রাখতে হয়েছে।

ঝিনাইদহ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত ) প্রিয় কমল চাকমা’র বলেন আমি ছুটিতে বাড়ী থাকায় বিষয়টি সম্পর্কে কিছু জানিনা। রবিবার এসে বিস্তারিত জানাতে পারবো।




মেহেরপুর লাইফ কেয়ার হাসপাতালের ওটিতে রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ

মেহেরপুরে লাইফ কেয়ার হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটারে রাশিয়া খাতুন (৪৫) নামে এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। নিহত রাশিয়া খাতুন মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি মীর পাড়ার কাবাদুল ইসলামের স্ত্রী।

শুক্রবার (১৮ জুলাই) সকালে মেহেরপুর শহরে অবস্থিত লাইফ কেয়ার হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। এদিকে, মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে রোগীর স্বজনরা হাসপাতালে ভিড় করেন এবং বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। তারা হাসপাতাল বন্ধের দাবিতে হাসপাতালের সামনে ঘণ্টাব্যাপী অবস্থান নেন এবং হাসপাতালে কর্মী সুমন নামের একজনের উপর হামলা চালায়। পরে পুলিশ ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের আশ্বাসে বিক্ষোভকারীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, দুই বছর আগে রাশিয়া খাতুনের এক হাত ভেঙে যায়। সে সময় অপারেশনের মাধ্যমে হাতে রড (ফরেন পার্টিকেল) সেট করা হয়। দীর্ঘ চিকিৎসার পর হাতটি স্বাভাবিক হয়ে উঠলে চিকিৎসকের পরামর্শে রডটি অপসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এজন্য রাশিয়া খাতুন শুক্রবার সকালে লাইফ কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসক মনজুর উল আলামের কাছে অপারেশনের জন্য যান। অপারেশনের জন্য প্রায় ৪০ হাজার টাকায় চুক্তি হয়।

রোগীকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়ার পর তাকে অ্যানেসথেসিয়া দেওয়া হয় এবং অজ্ঞান করা হয় বলে অভিযোগ করেন রোগীর স্বজনরা। এরপর রাশিয়া খাতুনের আর জ্ঞান ফিরে পাননি। অপারেশনের জন্য নির্ধারিত চিকিৎসক অপারেশন থিয়েটারে প্রবেশের আগেই রোগীর অবস্থা খারাপ দেখে তাকে কুষ্টিয়া রেফার্ড করা হয়েছে বলে একটি বিশ^স্ত সূত্রে জানা গেছে।

রাশিয়া খাতুনের ছেলে রাসেল অভিযোগ করে বলেন, “আমার মাকে প্রথমে অ্যানেসথেসিয়া দেওয়া হয়, পরে আবার অজ্ঞান করা হয়। এরপর তার জ্ঞান ফেরেনি। এক পর্যায়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাকে বলে, কুষ্টিয়ায় নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু আমার মা তখনই মারা গিয়েছিলেন। আমি নিজ গাড়িতে অক্সিজেনসহ দ্রুত কুষ্টিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিই। শহরের ওয়াপদা মোড় পেরোনোর আগেই বুঝতে পারি মা আর নেই। পরে গাংনী উপজেলা হাসপাতালে ইসিজি করালে দেখা যায়, ঘণ্টাখানেক আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। অর্থাৎ মৃত অবস্থায়ই আমাদের মাকে হাসপাতাল থেকে পাঠানো হয়েছিল।

ঘটনার পর থেকে পরিস্থিতি শান্ত রাখতে লাইফ কেয়ার ডি ল্যাব অ্যান্ড হাসপাতালটি বন্ধ রয়েছে। এদিকে, এ বিষয়ে হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) খালিদ সাইফুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

মেহেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মেসবাহ উদ্দিন বলেন, “রোগীর মৃত্যুর খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। যেন কেউ আইন নিজের হাতে তুলে না নেয়। অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঘটনার সময় মৃতের স্বজনদের সঙ্গে জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আহসান হাবিব সোনা, সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমানসহ স্থানীয় কয়েকজন রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন এবং পরিবারকে শান্ত করেন।




মেহেরপুরের ছাত্র শিবিরের নতুন সভাপতি সালাম, সেক্রেটারি সাইদুর

ইসলামী ছাত্র শিবির সারাদেশে ষান্মাসিক সেশনের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন স্থানে নতুন কমিটি ঘোষণা করছে।

সেই ধারাবাহিকতায় আজ শুক্রবার বেলা ১১টায় মেহেরপুর জেলা কার্যালয়ে এক জরুরি সদস্য সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন সদ্য বিদায়ী জেলা সভাপতি মু. সাখাওয়াত হোসেন।

২০২৫ সালের চলমান (ষান্মাসিক) সাংগঠনিক সেশনের বাকি সময়ের জন্য মেহেরপুর জেলা শাখার নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পান আব্দুস সালাম (সাবেক সেক্রেটারি) এবং সেক্রেটারি হিসেবে মনোনীত হন মু. সাইদুর ইসলাম (সাবেক অফিস সম্পাদক)।

কেন্দ্রীয় সভাপতির প্রতিনিধি হিসেবে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ইসলামী ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের সদস্য ও কেন্দ্রীয় ব্যবসায় শিক্ষা সম্পাদক মু. গোলাম জাকারিয়া। তিনি কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের আলোকে আব্দুস সালামকে সভাপতি হিসেবে নাম ঘোষণা করেন এবং তাঁকে সাংবিধানিক শপথ পাঠ করান। পরে নবনির্বাচিত সভাপতির পরামর্শক্রমে মো. সাইদুর ইসলামকে সেক্রেটারি হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়।

সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন, সাবেক জেলা সভাপতি সোহেল রানা ডলার, ইকবাল হোসাইনসহ অন্যান্য জেলা নেতৃবৃন্দ। অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী ও জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা তাজ উদ্দিন খান।

অনুষ্ঠান শেষে অতিথির বক্তব্য, দোয়া ও মুনাজাতের মাধ্যমে সমাবেশের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।




গাংনীর তেরাইলে সড়ক দুর্ঘটনায় পথচারি নিহত

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার তেরাইল গ্রামে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় সড়ক দুর্ঘটনায় মোহাম্মদ মন্টু নামের এক পথচারি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন মোটরসাইকেলের দুই আরোহী।

আজ শুক্রবার বিকাল ৩ টার দিকে তেরাইল ব্রিজ সংলগ্ন অলিনগর নামক স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত মোহাম্মদ মন্টু তেরাইল গ্রামের কাতল আলীর ছেলে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কের বামুন্দির দিক থেকে আসা একটি দ্রুতগতির মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পথচারী মন্টুকে ধাক্কা দিলে তিনি গুরতর জখম হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন এবং কিছুক্ষণ পরই তাঁর মৃত্যু হয়। মোটরসাইকেলের দুই আরোহীও আহত হন। তাদের উদ্ধার করে বামুন্দি বাজারের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।

খবর পেয়ে বামন্দি ফায়ার সার্ভিস ও গাংনী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে লাশ উদ্ধার করেছে।




মেহেরপুরে ছাত্র-জনতার শহীদদের স্মরণে বিএনপি’র মৌন মিছিল

২০২৪ সালের ২৪ জুলাই ও আগস্টে ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে নিহত শহীদদের স্মরণে মেহেরপুর জেলা বিএনপি’র উদ্যোগে এক মৌন মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ শুক্রবার সকাল ১০টায় মেহেরপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে মৌন মিছিলটি শুরু হয়। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা বিএনপি’র কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়।

মিছিলে নেতৃত্ব দেন মেহেরপুর জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক আলহাজ্ব জাভেদ মাসুদ মিল্টন, সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট কামরুল হাসান, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আমিরুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক ফয়েজ মোহাম্মদ, সদস্য ইলিয়াস হোসেন, আনসারুল হক, আলমগীর খান ছাতু, ওমর ফারুক লিটন, আখেরুজ্জামান, মকবুল হোসেন মেঘলা, রেজাউল হকসহ জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।

বক্তারা বলেন, ২০২৪ সালের আন্দোলনে যারা প্রাণ দিয়েছিলেন, তারা ছিলেন গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার রক্ষার সাহসী যোদ্ধা। শহীদদের স্মরণ করেই বর্তমান প্রজন্মকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করা এবং রাষ্ট্রব্যবস্থার সংস্কারের আন্দোলনকে জোরদার করার আহ্বান জানানো হয়।




গাংনী চিৎলা পাট বীজ খামারের অনিয়মের সংবাদ করায় সাংবাদিকের নামে মিথ্যা মামলা

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার চিৎলা পাটবীজ খামারে ‘নাজিম বাহিনীর’ দখলদারি, সরকারি সম্পদ লুট ও দুর্নীতির বিষয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের জেরে সাংবাদিক মাহাবুল ইসলামের বিরুদ্ধে মিথ্যা মানহানির মামলা দায়ের করা হয়েছে। তিনি দৈনিক দেশতথ্য ও দৈনিক সময়ের সমীকরণ পত্রিকার প্রতিনিধি এবং গাংনী উপজেলা প্রেসক্লাবের সদস্য।

গত সোমবার “সময়ের সমীকরণ” পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে চিৎলা সরকারি পাটবীজ খামারে চলমান অনিয়ম, সম্পদ লুট, শ্রমিক হয়রানি ও একটি প্রভাবশালী চক্রের কর্তৃত্বের বিষয়টি প্রকাশিত হয়। এর দুই দিন পর নাজিম, বকুল ও এক অজ্ঞাত ব্যক্তি মিলে, খামারের যুগ্ম পরিচালক (জেডি) মোর্শেদুল ইসলামের ইন্ধনে, সাংবাদিক মাহাবুল ইসলামের বিরুদ্ধে মেহেরপুর আমলী আদালতে (গাংনী) একটি মানহানির মামলা করেন।

ঘটনাটি জানাজানি হলে স্থানীয় সাংবাদিক মহল, মানবাধিকারকর্মী এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদের সৃষ্টি হয়।

গাংনী উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সিনিয়র সাংবাদিক জুলফিকার আলী কানন বলেন, “যে সাংবাদিক সাহসের সঙ্গে দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরেছেন, তাকে মামলা দিয়ে হয়রানি করে দুর্নীতিবাজদের রক্ষা করা হচ্ছে। এটি স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর সরাসরি হামলা।”
অভিযোগ উঠেছে, চিৎলা পাটবীজ খামারের অনিয়ম নিয়ে লিখলেই সেই সাংবাদিককে হুমকি ধামকি দেয়া হয়।

সাংবাদিক মাহাবুল ইসলাম জানান, “চিৎলা পাটবীজ খামারে বর্তমান জেডি মোর্শেদুল যোগদানের পর তার দেহরক্ষী নাজিম উদ্দিন, তার সহযোগী বাঁশবাড়িয়া গ্রামের বকুল, জাব্বার আলী, আঃ সালাম, মো. মুছা, জুগিন্দা গ্রামের শফিকুল ইসলাম ও তার ভাই আমজাদসহ কয়েকজন মিলে সরকারী এই বীজ খামারটিকে পৈতৃক সম্পতি মনে করে গড়ে তুলেছেন এক নয়া রাজত্ব।

তিনি জানান, এই চক্রের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের আগের দিন মামলার ২ নম্বর বাদী বকুল তাকে নিউজটি না করার জন্য অনুরোধ করেন এবং সন্ধ্যায় কফি হাউজে দাওয়াত দেন। কিন্তু তিনি দাওয়াত গ্রহণ না করে সংবাদটি প্রকাশ করেন। এর ফলেই ওই চক্রটি প্রতিশোধমূলক এই মামলা করে।

মাহাবুল আরও জানান, প্রতিবেদন প্রকাশের পরের দিন শ্রমিক শফিকুল ইসলাম তার গ্রামের বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে হুমকি দিয়েছেন।
এদিকে, চিৎলা পাটবীজ খামারে চলমান লুটপাট ও অনিয়মের বিষয়টি তদন্ত করে দুর্নীতিবাজদের শাস্তির আওতায় আনার দাবিও জানিয়েছে স্থানীয় এলাকাবাসী। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কেউ কেউ বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন।




জেলায় দাখিলে পাশের হার ৩২.৮৯ শতাংশ, জিপিএ মাত্র একজন

মেহেরপুর জেলায় মাদ্রাসা শিক্ষা মান বেহাল অবস্থায় পরিণত হচ্ছে। দাখিল পরীক্ষায় গত বছরের তুলনায় এ বছর পাশের হার কমেছে ৪২ শতাংশ। ৩৩ পেয়ে পাশ করার মত ফলাফলও হয়নি ২০২৫ সালের দাখিল পরীক্ষায়। জেলায় ২৫টি মাদ্রাসা থেকে ৬৯০ জন পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছে ২২৭ জন। পাশের হার মাত্র ৩২.৮৯ শতাংশ। যেখানে পাশ মার্ক নির্ধারণ হয় ৩৩ এ।

এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১১টি মাদ্রাসা থেকে ৩২৬ জন পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছে ১০৫ জন। জিপিএ ৫ পায়নি কেউ। এ উপজেলায় পাশের হার ৩২ শতাংশ। গাংনী উপজেলার ১০ টি মাদ্রাসা থেকে ২৮০ জন পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছে ৮৮ জন। এ উপজেলায় জিপিএ ৫ পেয়েছে ১ জন। পাশের হার আর কম ৩১.৪২ শতাংশ। এ উপজেলায় শতভাগ ফেল করেছে এমন মাদ্রাসাও আছে একটি। তুলনামূলক ভালো অবস্থানে মুজিবনগর উপজেলা। এ উপজেলায় ৪টি মাদ্রাসা থেকে ৮৪ জন পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছে ৩৪ জন। জিপিএ ৫ না পেলে পাশের হার ৪০.৪৭ শতাংশ।

গত বছর ২০২৪ সালের দাখিল পরীক্ষায় জেলা থেকে পরীক্ষা দিয়েছিলো ৬৫৩ জন। পাশ করেছিলো ৪৮৫ জন। পাশের হার ছিলো ৭৪.২৩ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছিলো ১১ জন।

মেহেরপুর জেলার ২০২৪ ও ২০২৫ সালের দাখিল পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করে এ চিত্র পাওয়া গেছে। ফলাফল বিপর্যয় ঠেকাতে শিক্ষার অনুকুল পরিবেশ, অভিভাবকদের সচেতনতা ও শিক্ষকদের আরও দায়িত্বশীল হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

মাদ্রাসা ভিত্তিক ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০২৫ সালে সদর উপজেলার মেহেরপুর দারুল উলুম আহম্মদিয়া কালিম মাদ্রাসায় ৪৩ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১৯ জন পাশ করেছে। পাশ এর হার ৪৪ শতাংশ। আমঝুপি ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসায় ৪৫ জন পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছে ২৭ জন। পাশের হার ৬০ শতাংশ। গোভীপুর দাখিল মাদ্রাসা থেকে ২৮ জন পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছে ৮ জন। পাশের হার মাত্র ২৯ শতাংশ। নতুন দরবেশপুর দাখিল মাদ্রাসায় ৩৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছে ৫ জন। পাশের হার মাত্র ১৩ শতাংশ। রাজনগর দাখিল মাদ্রাসা থেকে ৩৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছে ৬ জন। পাশের হার ১৭ শতাংশ। তাঁতীপাড়া মহিলা দাখিল মাদ্রাসা থেকে ২৪ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৩ জন। পাশের হার ১৩ শতাংশ। ইসলামনগর হোসাইনিয়া দাখিল মাদ্রাসা ২০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ১৩ জন। পাশের হার ৬৫ শতাংশ। কুলবাড়িয়া দাখিল মাদ্রাসায় ২১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছে ৩ জন। পাশের হার ১৪.২৯ শতাংশ। কোলা দাখিল মাদ্রাসা থেকে ১৮ জনের মধ্যে পাস করেছে ২ জন। পাশের হার ১১ শতাংশ। পিরোজপুর দাখিল মাদ্রাসা থেকে ৩৩ জনের মধ্যে পাস করছে ১৪ জন। পাশের হার ৪২ শতাংশ। আশরাফপুর দারুল সুন্নাহ দাখিল মাদ্রাসা থেকে ২১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছে ৫ জন। পাশের হার ২৪ শতাংশ।

মুজিবনগরের মানিকনগর ডিএসএ আলিম মাদ্রাসা থেকে ২৯ জন পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছে ১৩ জন। পাশের হার ৪৪.৮২ শতাংশ। দারিয়াপুর গাওছিয়া দাখিল মাদ্রাসা থেকে ২৭ জন পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছে ১৪ জন। পাশের হার ৫১.৮৫ শতাংশ। শিবপুর দারুল কুরআন দাখিল মাদ্রাসা থেকে ৯ জনের মধ্যে পাশ করেছে ৩ জন। পাশের হার ৩৩.৩৩ শতাংশ। আয়েশা নগর দাখিল মাদ্রাসা থেকে ১৯ জন পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছে ৪ জন। পাশের হার ২১.০৫ শতাংশ।

গাংনী উপজেলার কাজীপুর দাখিল মাদ্রাসায় ৩০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছে ৬ জন। পাশের হার ২০ শতাংশ । সাহারবাটি কলোনিপাড়া আল মারকাজুল মাদ্রাসায় ৩৭ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছে ২১ জন। পাশের হার ৫৬.৭৫ শতাংশ । গাংনী সিনিয়র আলিম মাদ্রাসায় ৪০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছে ১৫ জন। পাশের হার ৩৭.৫ শতাংশ । হাড়াভাংগা দারুল হাদি ফাজিল মাদ্রাসায় ৩১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৬ জন। এ প্লাস প্রাপ্ত শিক্ষার্থী ১ জন। পাসের হার ১৯.৩৫ শতাংশ। করমদি দারুস সুন্নাত নেছারিয়া দাখিল মাদ্রাসায় ২১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছে ১০ জন। পাশের হার ৪৭.৬১ শতাংশ। বাদিয়াপাড়া মহসিনা দাখিল মাদ্রাসায় ২১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৬ জন। পাশের হার ২৮.৫৭ শতাংশ। মানিকদিয়া আগারপাড়া আলিম মাদ্রাসায় ৩২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ১৫ জন। পাশের হার ৪৬.৮৭ শতাংশ । পীরতলা দাখিল মাদ্রাসায় ১৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে কেউ পাশ করে নি। আইদা কলিম দাখিল মাদ্রাসায় ৩০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৮ জন। পাশের হার ২৬.৬৬ শতাংশ। বামুন্দী দাখিল মাদ্রাসায় ২০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ১ জন। পাশের হার ৫ শতাংশ।

শতভাগ ফেল করা গাংনীর পীরতলা দাখিল মাদ্রাসার সহকারী মৌলভী শরিফুল ইসলাম বলেন, “কেন যে কেউ পাশ করলো না বুঝতে পারছি না। গতবছর ১৮ জন পরীক্ষা দিয়ে ৭ জন পাশ করেছিলো। আমাদের আশা ছিলো এবারও ৬/৭ জন পাশ করবে। ”
সদর উপজেলা মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও আমঝুপি দাখিল মাদ্রাসার সহকারী মৌলভী মোহাম্মদ আলী লাল্টু বলেন, “সমাজের সবচেয়ে অবহেলিত, দুর্বল সন্তানকে অভিভবাবকরা মাদ্রাসায় ভর্তি করেন। মাদ্রাসা শিক্ষার বিষয়ে অভিভাবকরা অসচেতন। এছাড়া সাধারণ শিক্ষার থেকে মাদ্রাসার শিক্ষার সিলেবাস বেশি। ফলে একেতো দুর্বল শিক্ষার্থী তার উপরে সিলেবাসের চাপ যে কারণেই মাদ্রাসার দাখিল পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “এর মধ্যে থেকেও শিক্ষকরা দুর্বল শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিয়ে চেষ্টা করছেন তাদের লেখাপড়ার মান উন্নয়ন করার। তবে কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর রেজাল্ট বেশি খারাপ বলেও তিনি স্বীকার করেন।”

মেহেরপুর সরকারি মহিলা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল আমিন বলেন, “ যশোর বোর্ডে সবনিম্ম পাশের হার মেহেরপুরে। মাদ্রাসার অবস্থা আরও খারাপ। যা দেখে মেহেরপুর জেলার সার্বিক শিক্ষার মানের অবস্থা প্রতিফলিত হচ্ছে। শুধু শিক্ষকদের দায়ই নয়, অভিভাবক এবং শিক্ষার অনুকুল পরিবেশ তৈরিতে আমাদের সমাজকেও এর দায় নিতে হবে। না হলে শিক্ষার এ বিপর্যয় থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পারবো না। পাশের জেলাগুলোতে ভাল ফলাফল হচ্ছে অথচ মেহেরপুরে কেন হচ্ছে না, তা অবশ্যই খতিয়ে দেখে সেই পরিবেশ তৈরি করতে হবে, তবেই মাদ্রাসাসহ সবক্ষেত্রে শিক্ষার মান উন্নয়ন সম্ভব হবে।”

মেহেরপুর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো: হযরত আলী বলেন,“শুধু মাদ্রাসা না জেলাতেই এবার এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হয়েছে। আমি সকল মাদ্রাসা ও স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সুপারদের ডাকবো। কিভাবে আগামী বছর থেকে ভালো ফলাফল করা যায় সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।”




মেহেরপুরে জেলা যুবদলের বিক্ষোভ মিছিল

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্লিপ্ততায় সারা দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে মেহেরপুর জেলা যুবদল।

বৃহস্পতিবার(১৭ জুলাই) বিকালে মেহেরপুর পাথর গেটের সামনে থেকে জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক কাওসার আলীর নেতৃত্বে একটি মিছিল বের হয়। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে কলেজ মোড়ে এসে শেষ হয়।

এ সময় বিক্ষোভ মিছিলে জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি মোশাররফ তপু, এস এ খান শিল্টু, জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল ইসলাম, সদর থানা যুবদলের আহ্বায়ক লেয়াকত আলী, সদর থানা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাহিদুল ইসলাম, যুবদল সদস্য মেহেদী হাসান রোলেক্স সহ গাংনী উপজেলা, মুজিবনগর উপজেলার সকল ইউনিটের যুবদলের নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।

এ সময় বিক্ষোভ মিছিল শেষে জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক কাউসার আলী তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্লিপ্ততায় সারা দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে দুঃখ প্রকাশ করেন সেই সাথে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে কটুক্তি করায় তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদ করেন, এবং অতিদ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবী জানান।