মেহেরপুর প্রতিদিনের ইতিবৃত্ত…

দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের জনপ্রিয় একটি পত্রিকার নাম মেহেরপুর প্রতিদিন। জন্ম ২০১৮ সালের ঐতিহাসিক ২৬ মার্চ। সাত বছর পেরিয়ে অষ্টম বর্ষে পা রাখলো। পত্রিকাটি চলচিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের (ডিএফপি) তালিকাভুক্ত এবং তথ্য মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধিত একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল।

সভ্যতার বিকাশে সংবাদপত্রের ভূমিকা অপরিসীম। সংবাদপত্রের মূল উদ্দেশ্য হলো জনসাধারণকে সমাজের বিভিন্ন বিষয় অবহিত করা। স্থানীয় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ঘটনাবলীর সংবাদ প্রকাশ করা অন্যতম বিষয়। এছাড়া বিনোদন খেলাধুলা শিক্ষা শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি নিয়েও প্রতিদিনের বিশেষ আয়োজন থাকে সংবাদপত্রে।

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তবর্তী একটি ছোট্ট জেলার নাম মেহেরপুর। অবিভক্ত ভারতবর্ষের মহকুমা শহর এটি। এই জনপদে গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতার ইতিহাস নিয়ে আছে মিশ্র জনশ্রুতি। শিল্প সাহিত্য নিয়ে কাজ করেছেন স্বনামধন্য লেখক, কবি-সাহিত্যিক ও সাংবাদিকগণ। কৃষিভিত্তিক এই জনপদে শিল্প কলকারখানা তৈরি হয়নি । পত্রিকা ছাপার জন্য একটি প্রিন্টং মেশিন (ছাপাখানা) এখনো পর্যন্ত নেই। বিজ্ঞাপন নামক যে খাদ্যের মাধ্যমে গণমাধ্যম বেঁচে থাকে সেটা জোগান দেয়ার মতো কোনো প্রতিষ্ঠান মেহেরপুরে গড়ে ওঠেনি। সেকারণে নিকট অতীতের বেশ কিছু পত্রিকা বন্ধ হয়ে গেছে। সাপ্তাহিক পরিচয় দৈনিক আজম, পাক্ষিক পশ্চিমাঞ্চল, সাপ্তাহিক মুজিবনগর, দৈনিক মেহেরপুর এর মত পত্রিকাগুলো বেশিদিন টিকে থাকতে পারিনি। এরই মধ্যে মেহেরপুর প্রতিদিন পত্রিকার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা দেখলাম খুবই সচেতনভাবে। যদিও বেড়ে ওঠা দুই ধরনের, একটি কাঠামোগত অপরটি যোগ্য হয়ে। সাত বছরের মধ্যে তেমন কোন দুর্যোগ দুর্বিপাক ছাড়া নিরবচ্ছিন্নভাবে পাঠকদের হাতে পত্রিকাটি তুলে দিতে সক্ষম হয়েছে কর্তৃপক্ষ। অপরদিকে সংবাদ পরিবেশনে সত্যনিষ্ঠ, নিরপেক্ষ, তথ্য নির্ভর এবং বিশ্বাসযোগ্যতার কতটা প্রমাণ দিতে পেরেছে সেটা পাঠকদের বিচার্য বিষয়।

এতগুলো প্রতিকূল বাস্তবতা থাকা সত্ত্বেও মেহেরপুর প্রতিদিনের প্রকাশক এম. এ. এস ইমন এর পত্রিকা প্রকাশের সিদ্ধান্ত গ্রহণ সত্যিই একটা বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি ও সাহসিকতার পরিচয় বহন করে।

পত্রিকার নামকরণের ক্ষেত্রে কিছুটা সীমাবদ্ধতা লক্ষ্য করা যায়। কারণ মেহেরপুর প্রতিদিন ইতোমধ্যেই একটি বৃহত্তর অঞ্চলে পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করেছে। অনুসন্ধানী সংবাদ পরিবেশন পত্রিকাটিকে একটি বিশেষ উচ্চতায় নিয়ে গেছে। এখানে উল্লেখ করতেই হয়, বছর দুয়েক আগে পত্রিকার অনুসন্ধানী প্রতিবেদন দেখে মেহেরপুর আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে স্যুয়োমটো জারি করেছে কয়েকটি। যেগুলো পরবর্তীতে নিয়মিত মামলায় পরিনত হয়। আদালতের নজরে আসার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা উপকার পেয়েছেন অনেকেই।
মেহেরপুর প্রতিদিনের অনলাইন পোর্টালটিও তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধিত। এটি ছাড়া মেহেরপুরে একটি অনলাইন পোর্টালও নিবন্ধিত নয়। তাৎক্ষণিক সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে মেহেরপুরসহ কুষ্টিয়া ঝিনাইদহ এবং চুয়াডাঙ্গায় একঝাঁক তরুণ সংবাদকর্মী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সংবাদের গুরুত্ব বিবেচনায় লাইভ প্রচার হয়ে থাকে। বিভিন্ন ধরনের ভিডিও কনটেন্টেকেও ইদানীং গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।

টক-শো মেহেরপুর প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য কর্মসূচির একটি। ‘মুক্ত কথা’, ‘সংবাদ বিশ্লেষণ’ অনুষ্ঠান দুটির বয়স প্রায় ছয় বছর। সাম্প্রতিক সময়ে ‘প্রগতি’ ও ‘সাতকাহন’ নামে আরো দুটি অনুষ্ঠান সংযোজিত হয়েছে। প্রগতি’র সঞ্চালক আইটি বিশেষজ্ঞ মুন্সী জাহাঙ্গীর জিন্নাত এবং সাতকাহন সঞ্চালনা করেন শিক্ষক কবি হাসান রুদ্র। পত্রিকা কার্যালয়ে একটি সাউন্ড প্রুফ স্টুডিও আছে। সেখান থেকে অতিথিদের উপস্থিতিতে লাইভ এবং জুমের মাধ্যমেও অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হয়ে থাকে। সমসাময়িক বিষয়, রাজনীতি, শিক্ষা, কৃষি, শিল্প সংস্কৃতি, ক্রিড়া,ব্যবসা-বানিজ্য উদ্যোক্তা, স্বাস্থ্য, গণমাধ্যম, অ্যাডভেঞ্চার সহ নানা বিষয় নিয়ে অতিথিরা আলোচনা করে থাকেন। এ পর্যন্ত প্রায় এক হাজার অতিথির সাথে এই আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে। রাজনীতিবিদ, লেখক, কৃষক, চিকিৎসক, সাংবাদিকসহ নানা পেশার মানুষ যেমন অতিথি হিসেবে কথা বলেছেন তমনি অ্যাডভেঞ্চারের অভিজ্ঞতা নিয়ে স্টুডিওতে সশরীরে উপস্থিত হয়ে অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়েছেন বাংলাদেশের একমাত্র দুইবারের এভারেস্ট বিজয়ী মাউন্টেনার এম এ মুহিত।

মেহেরপুর প্রতিদিন এর সম্পাদকীয় নীতি নিয়ে কিছু কথা বলতেই হয়। রাষ্ট্র কাঠামোতে যদি স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাব থেকে থাকে তাহলে সংবাদপত্রের যথাযথ ভূমিকা পালন করা খুবই কঠিন। শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয় প্রতিনিয়ত। এমপি-মন্ত্রী মেয়র-চেয়ারম্যান ডিসি-পুলিশ প্রশাসন সরকারি দলের নেতাদের লাল চোখ দেখতে হয়। বিগত দশ বছরে মেহেরপুরের মন্ত্রী দদুলের নির্লজ্জ প্রভাবকে উপেক্ষা করে মেহেরপুর প্রতিদিন যে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে তা পত্রিকার পাঠক ও সাধারণ মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে। সম্পাদক ইয়াদুল মোমিনের নেতৃত্বে গঠিত সম্পাদকীয় বোর্ড সকল প্রকার অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছে। সক্ষমতার আরেকটি অন্যতম কারণ পত্রিকার প্রকাশক এম.এ.এস ইমন যিনি স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রশ্নে সম্পাদকীয় নীতিতে কোনপ্রকার হস্তক্ষেপ করেননি। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে প্রতিষ্ঠান যেমন মামলার আসামী হয়েছে ঠিক তেমনি সেই মামলায় বিজয়ী হয়ে মেহেরপুর আদালতে বাদীর বিরুদ্ধে মানহানীর মানিস্যুট মামলা করেছে কর্তৃপক্ষ। যা এখনো চলমান আছে। আরেকটি সংবাদকে কেন্দ্র করে বাদী হিসেবে খুলনা সাইবার সিকিউরিটি ট্রাইব্যুনালে সাতজনকে আসামী করে মামলা চলমান। ঢাকা সিএমএম আদালত গতবছর আরেকটি মামলা ডিসচার্জ করে দিলে মেহেরপুর প্রতিদিনের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ঐ মামলার বাদীর বিরুদ্ধে ভুয়া মামলা ও হয়রানি করার জন্য মেহেরপুর আদালতে মানহানী মানিসুটের আরেকটি মামলা দায়ের করেন। সেটিও চলমান আছে। এভাবেই মামলা, হুমকি-ধামকি মোকাবিলা করে দিন-মাস-বছর পাড়ি দিয়ে মেহেরপুর প্রতিদিনের অষ্টম বর্ষে পদার্পণ।

মেহেরপুর প্রতিদিনে কিছু উল্লেখযোগ্য আলোচিত সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। তারমধ্যে অনলাইন জুয়া, মাদক, প্রতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তির দুর্নীতি, হোটেল আটলান্টিকা কাণ্ড অন্যতম। এছাড়া করোনা মহামারীর সময় বিশেষ বুলেটিন অনলাইন ও প্রিন্ট পত্রিকায় নিয়মিত প্রকাশিত হয়েছে। জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে নিয়মিত ডাক্তারদের নিয়ে টক-শো করাসহ পত্রিকার পক্ষ থেকে পিপিই, হ্যান্ড গ্লাভস, সেনিটাইজার এবং মাস্ক সরবরাহ করা হয়েছে সাধারণ মানুষের মাঝে।

মেহেরপুর প্রতিদিন ফুটবল টুর্নামেন্ট-২০২৩ আয়োজনটি ছিল বেশ জমজমাট। সামাজিক দায়বদ্ধতার কথা চিন্তা করে যুবকদেও খেলার মাঠে ফিরে আসার আহবান জানানোই ছিল মূল উদ্দেশ্য। টুর্নামেন্ট শেষ হওয়ার সাথে সাথেই উদ্দেশ্য পূরণ হলো। গাংনী মুজিবনগর এবং সদরে বিভিন্ন ইউনিয়ন ভিত্তিক টুর্নামেন্ট শুরু হয়ে গেল। কোনো উদ্যোগ যখন সফল হয় সেখানে ভাললাগাও থাকে অনেক। একটি কথা এখানে বলতেই হয়, মেহেরপুর প্রতিদিন ফুটবল টুর্নামেন্টটি আয়োজনে বড় বাধা ছিলো মন্ত্রী দোদুল। তৎকালীন ডিসি আজিজুল ইসলামকে খেলার অনুমতি নিতে নিষেধ করেছিলেন তিনি। কিন্ত তার কথা উপেক্ষা করে অনুমতি দিয়েছিলেন ডিসি আজিজুল ইসলাম। এছাড়াও পত্রিকার নানা উদ্যোগের বিপরীতে অবস্থান ছিলো দোদুলের। ছায়া’কেও ভয় পাওয়ার মতো সবকিছুতে না বলা স্বভাব ছিল তার। ৭১ এর মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের তীর্থভূমি খ্যাত মুজিবনগরকে উপলক্ষ করে এই জনপদে যে উন্নয়ন হওয়া উচিত ছিল তার কিছুই না করে অবৈধভাবে নিজের এবং পরিবারের অর্থনৈনিক উন্নতি নিয়েই ব্যস্ত ছিল। (বিষয়টি এই লেখার সাথে অপ্রাসঙ্গিক হওয়া সত্বেও লিখতে বাধ্য হলাম,,, দুঃখ প্রকাশ করছি)

মেহেরপুর প্রতিদিনের নিজস্ব একটি কার্যালয় আছে, শহরের মল্লিকপাড়ায় অবস্থিত। প্রায় দুই হাজার স্কয়ার ফিটের অফিসটিতে আছে সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা সম্পাদকের দুটি কক্ষ, সাউণ্ড প্রুফ ডিজিটাল স্টুডিও, সার্কুলেশন ও নিউজ ডেস্কসহ অতিথিদের বসবার জায়গা।
পত্রিকাটির সাথে বর্তমানে যারা কাজ করছেন – অফিসে ডেস্ক ইনচার্জ সাকিব হাসান রুদ্র, নিউজ ডেস্ক পলাশ আহমেদ, তুহিন খান, ডিজাইনার লিমন হোসেন ও রাফি হাসান, অফিস সহকারী আহসান। সাংবাদিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন – গাংনী উপজেলায় আকতারুজ্জামান আকতার, জুলফিকার আলি কানন, কামরুল ইসলাম। মুজিবনগরে মুস্তাফিজুর রহমান শের খান ও সানোয়ার হোসেন ডালিম। আমঝুপিতে শহিদুল ইসলাম, বারাদিতে সাইফুল ইসলাম বাবু, ঝিনাইদহে- শাহানুর আলম, তাপস কুন্ড এবং অরিত্র কুন্ড। চুয়াডাঙ্গায়- সাকিব দর্শনায় মামুন ও ফরহাদ হোসেন দামুড়হুদায় রকিবুল হাসান কোটচাঁদপুরে মঈন। জীবননগরে এটিএম মাজেদুল ইসলাম মিল্টন, দামুড়হুদায় রাকিবুল হোসেন তোতা, কুষ্টিয়ায় জামাল উদ্দিন। বিগত বছরগুলোতে আরও ৩০/৩৫ জন সাংবাদিক বিভিন্ন সময়ে পত্রিকার সাথে যুক্ত ছিলেন।

আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সংবাদপত্রকে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয়ে থাকে। সামাজিক ন্যায়বিচার, মানবিক অধিকার অর্জন ও জনসচেতনতা সৃষ্টিতে সংবাদপত্রের ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট টমাস জেফারসন এক সাংবাদিককে বলেছিলেন, তাকে যদি ‘সংবাদপত্রবিহীন সরকার’ এবং ‘সরাকারবিহীন সংবাদপত্র’ এ দুটোর মধ্যে একটা বেছে নিতে বলা হয়, তাহলে তিনি সরকারবিহীন সংবাদপত্রকেই বেছে নেবেন।”

সংবাদপত্র নিয়ে এমন ভাবনার বিপরীতে আমাদের দেশে অনেক মালিককে দেখা যায় কালো টাকাকে সাদা করার জন্য পত্রিকাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। আবার অনেক সৃজনশীল সৎ মানুষ আছেন যারা একটি পত্রিকা বের করতে ভয় পান। কালোটাকার দৌরাত্ম্যের অসম যুদ্ধে তারা হেরে যাবেন এই ভেবে এক পা আগালেও দশ পা পিছিয়ে আসেন। সংবাদপত্রের সাথে ক্ষমতাবানদের স্বার্থের দন্দ মোকাবিলা করতে হলে দরকার প্রতিনিয়ত সাধারণ মানুষের পক্ষে থাকা। সাধারণ জনমতের কাছে যেকোনো অপশক্তি পরাস্ত হতে বাধ্য। মেহেরপুর প্রতিদিন এই শক্তিকেই ধারণ এবং সকল প্রতিকুলতাকে জয় করে জনগণের স্বার্থে চলতে থাক অবিরাম অবিরত, এটাই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর প্রত্যাশা।

লেখক: ব্যবস্থাপনা সম্পাদক, মেহেরপুর প্রতিদিন




মুজিবনগরে বৃদ্ধাসহ তিন নারীকে পিটিয়ে জখমের অভিযোগ

মুজিবনগরের মহাজনপুর গ্রামে পারিবারিক কলহের জেরে বৃদ্ধাসহ তিন নারীকে পিটিয়ে জখম করার অভিযোগ উঠেছে।

আহতদের মধ্যে রয়েছেন রাহিদুল ইসলামের দুই বোন জহুরা ও ফাহিমা এবং তাদের বৃদ্ধা মা সাবিরুন নেছা। রাহিদুল ইসলাম একজন ঘোড়ার গাড়ি চালক। তিনি বিয়ে করেছেন একই গ্রামের ওমর আলীর মেয়েকে। পারিবারিক কলহের জেরে চার দিন আগে তার স্ত্রী বাপের বাড়িতে চলে যান এবং সঙ্গে করে ছাগল, আসবাবপত্রসহ গৃহস্থালির অন্যান্য জিনিসপত্র নিয়ে যান।

রাহিদুল জানান, পারিবারিক এই জটিলতা মীমাংসার উদ্দেশ্যে তার দুই বোন জহুরা ও ফাহিমা তার বাড়িতে আসেন। একপর্যায়ে শ্বশুর ওমর আলীর সঙ্গে কথাবার্তার সময় জহুরা তার ভ্যানগাড়িতে আঘাত পান। এরপর পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে পড়ে।

অভিযোগ উঠেছে, মহাজনপুর গ্রামের ফতুর ছেলে খোকা ও তার সহযোগীরা এই আক্রমণ চালায়। এ সময় জহুরা, ফাহিমা এবং তাদের বৃদ্ধা মা সাবিরুন কেউই রেহাই পাননি। জহুরার অভিযোগ, রড, লাঠি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাদের আঘাত করা হয়েছে।

ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার বিকেল ৪টার দিকে, তবে আহতরা চিকিৎসার জন্য মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পৌঁছান সন্ধ্যা ৭টায়। দেরির কারণ জানতে চাইলে তারা জানান, খোকা ও তার লোকজন দিনের আলোতে তাদের বাইরে যেতে বাধা দেন।

রাহিদুল জানান, খোকা তার ফুফাতো ভাই এবং তাদের বসবাসের জমি রাহিদুলের বাবার দানকৃত। তাকে সেই জমি থেকে উচ্ছেদ করতেই এই হামলার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে বলে তার দাবি।

সাবিরুন নেছাকে অক্সিজেন দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক।

এ বিষয়ে মুজিবনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, এখন পর্যন্ত থানায় কেউ অভিযোগ দায়ের করেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।




মেহেরপুরের সাহিত্য ও সাংবাদিকতা পথিকৃৎ রামগোপাল -তারিক-উল ইসলাম

মেহেরপুরের সাহিত্য ও সাংবাদিকতার প্রসঙ্গ আসলে অবধারিতভাবে আসে দীনেন্দ্রকুমার রায় (১৮৬৯-১৯৪৩) ও যতীন্দ্রমোহন বাগচী ( ১৮৭৮-১৯৪৮)-এর নাম। সমসাময়িকদের নিয়ে আলোচনায় অলক্ষে থেকে যায় আরও কয়েকটি নাম। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রামগোপাল সান্যাল ( ১৮৫০ – ১৯২১)। তিনি একাধারে লেখক, সাংবাদিক ও শিক্ষক ছিলেন। শহর মেহেরপুর তাঁর জন্মস্থান, কৃষ্ণনগর ও কলকাতা ছিল তাঁর কর্মকেন্দ্র। মেহেরপুরের গদ্য সাহিত্য ও সাংবাদিকতার ইতিহাসে তাঁকে বলা যায় পথিকৃৎ।

দীনেন্দ্রকুমার ও যতীন্দ্রমোহনের পাশাপাশি মেহেরপুর শহরে জন্মগ্রহণকারী লেখক ও বৈষ্ণব সাহিত্যের বিশেষজ্ঞ জগদীশ্বর গুপ্ত (১৮৪৬-১৮৯২), পদাবলী সংগ্রাহক, লেখক ও মাসিক ‘জ্যোৎস্না’ পত্রিকার সম্পাদক রমণীমোহন মল্লিক (১৮৬৬-১৯০৫), রাধাকা›তপুর গ্রামে জন্মগ্রহণকারী নলীনীকান্ত চট্টোপাধ্যয়-স্বামী নিগমানন্দ (১৮৮০-১৯৩৫), গাঁড়াডোবে জন্মগ্রহণকারী মুন্সী শেখ জমিরুদ্দিন (১৮৭০- ১৯৩৭), এমনকি মেহেরপুর শহরের জমিদার, লেখক দীননাথ মুখোপাধ্যায় নাম উচ্চারিত হলেও রামগোপাল থেকে গেছেন আলোচনার বাইরে। মেহেরপুরের বাড়িবাঁকায় জন্মগ্রহণকারী কবি কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী ( ১৭৯১- ১৮৪৫)-কে নিয়ে আলোচনা হয়। মেহেরপুর শহরে বসবাসকারী কবি কৃষ্ণহরি দাস ( আঠারো শতক)-কেও আনা যায় আলোচনার পাদপিঠে। দীননাথ মুখোপাধ্যায় ( উনিশ শতক)-এর বই বই ‘জমীদারী বিজ্ঞান’-এর দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয় ১৮৬৬ সালে হুগলীর বুধোদয় প্রেস থেকে। কিন্তু তিনিই যে মেহেরপুরের লেখক ও প্রভাবশালী জমিদার দীননাথ মুখোপাধ্যায়, সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায় না। মেহেরপুর শহরে জন্মগ্রহণকারী লেখক-সাংবাদিক দীনেন্দ্রকুমার রায় ছিলেন বসুমতি পত্রিকার সম্পাদক এবং করিমপুরের জামশেদপুরে জন্মগ্রহণকারী কবি-সাংবাদিক যতীন্দ্রমোহন বাগচী ছিলেন মানসী পত্রিকার সম্পাদক। মেহেরপুর শহরের বলরাম হাড়ি ( ১৮২৫-১৮৯০) সম্প্রদায়ের গানও থাকে আলোচনায়।

লেখক- সাংবাদিক রামগোপাল সান্যালের বিষয়ে জানা যায় অলক রায় সম্পাদিত রামগোপাল সান্যালের দুই খণ্ডে সম্পূর্ণ ‘রেমিনিসেন্স অ্যান্ড অ্যানিকডট অব আ গ্রেট ম্যান অব ইন্ডিয়া’ (১৮৯৪, ১৮৯৫)-এর সম্পাদকীয় ভ’মিকা থেকে। এতে রামগোপালের লেখক জীবনী তুলে ধরা দেয়া হয়েছে। গৌরাঙ্গগোপাল সেনগুপ্তের ‘সাংবাদিক- কেশরী হরিশচন্দ্র’ (১৯৬০) গ্রন্থে সেই তথ্য দিয়ে বলা হয়েছে, রামগোপাল সান্যালের জন্ম মেহেরপুর। ১৮৫০ সালের কয়েক বছর আগে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ঈশ্বরচন্দ্র সান্যাল। তাঁরা বাস করতেন নদীয়ার জেলা সদর কৃষ্ণনগরের গোয়াড়ি অঞ্চলে। কৃষ্ণনগরেই তাঁর লেখাপড়া। সেখান থেকেই এন্ট্রান্স ও এফ এ পাশ করেন। বিয়েও করেন কৃষ্ণনগরে। প্রখ্যাত রামতনু লাহিড়ীর ভাই শ্রীপদ লাহিড়ীর কন্যা মনমোহিনী দেবী তাঁর প্রথম স্ত্রী। মনমোহিনীর অকাল মৃত্যু হয়। এরপর রামগোপাল রাজুবালা দেবীকে বিয়ে করেন। তিনিও কিছুদিন পর মারা যান।

এরপর আর বিয়ে করেননি। সম্ভবত তাঁদের কোনো সন্তানও ছিল না। লেখাপড়া শেষে রামগোপাল স্কুলের শিক্ষকতা দিয়ে পেশাজীবন শুরু করেন। সেই সাথে মফস্বল সাংবাদিকতা দিয়ে সাংবাদিকতা শুরু করেন। তিনি কৃষ্ণনগরের এ ভি হাই ইংলিশ স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা শুরু করেন। বিখ্যাত কবি ও নাট্যকার দিজেন্দ্রলাল রায় তাঁর ছাত্র ছিলেন। এ ভি হাই ইংলিশ স্কুলের পর তিনি চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া ও মোমজোয়ানি স্কুলে প্রধান শিক্ষক ছিলেন। শেষে উড়িষ্যার সম্বলপুর হাই স্কুলে যোগ দিয়ে শিক্ষকতাজীবন শেষ করেন। যৌবনে কৃষ্ণনগরে অবস্থানকালে তিনি কলকাতা থেকে প্রকাশিত কয়েকটি সংবাদপত্রে মফস্বল সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। ১৮৮৩ সালের ৪মে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওপর অবিচারের প্রতিবাদে কৃষ্ণনগর শহরে তিনিই প্রথম প্রকাশ্য জনসভার আয়োজন করেছিলেন। বৃত্তি পরিবর্তনের অল্প দিনের মধ্যেই ১৮৯০ সাল বা তার কিছু আগে কলকাতার তালতলা অঞ্চলে একটি বাড়ি কিনে স্থায়ীভাবে কলকাতায় বসবাস এবং সেই সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে সাংবাদিকতার বৃত্তি অবলম্বন করেন। প্রথম কয়েকবছর তিনি বেঙ্গলি পত্রিকার কর্মাধ্যক্ষ হিসেবে কাজ করেন। তারপর ‘ইন্ডিয়ান মিরর’ পত্রিকার সহকারী সম্পাদক পদে যোগদান করেন। এই পত্রিকার সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল এক দশক বা তারও বেশি। ১৯২১ সালে রামগোপাল সান্যাল মারা যান।

বাংলা ও ইংরেজিতে লেখা রামগোপাল সান্যালের ছয়টি বইয়ের বিষয়ে খোঁজ পাওয়া যায়। এগুলো হলো- বাংলায় : ১. হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের জীবনী ( ১৮৮৭), ২. বাবু কৃষ্ণদাস পালের জীবনী ( ১৮৯০)। ইংরেজিতে:১. দ্য লাইফ অব দ্য অনারেবল ক্রিস্টোদাস পাল বাহাদুর সি.আই.ই (১৮৮৬), ২. হিস্টোরি অব দ্য সেলিব্রেটেড ক্রিমিনাল কেসেস অ্যান্ড রিজল্যুশন্স রেকর্ডেড দেয়ার অন বাই বোথ প্রভিন্সিয়াল সুপ্রিম গভর্নমেন্টস (১৮৮৮), ৩. আ জেনারেল বায়োগ্রাফি অব বেঙ্গল সেলিব্রেটিস বোথ লিভিং অ্যান্ড ডেড (১৮৮৮) ও ৪. রেমিনিসেন্স অ্যান্ড অ্যানিকডট অব আ গ্রেট ম্যান অব ইন্ডিয়া ( দুই খণ্ড Ñ ১৮৯৪, ১৮৯৫)। এসবই প্রধানত জীবনীগ্রন্থ।

এর মধ্যে হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের জীবনী নিয়ে বাংলায় প্রথম লেখা কোনো বই। হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় (১৮২৪-১৮৬১) ছিলেন ‘হিন্দু প্যাটিয়ট’ পত্রিকার সম্পাদক। এই পত্রিকার মাধ্যমে তিনি নীলকরদের অত্যাচারের কথা তুলে ধরেন। হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়কে বলা হয় ভারতীয় সাংবাদিকতার জনক।

লেখক: কবি ও সিনিয়র সাংবাদিক, ঢাকা।




তারুণ্যের ভাবনায় নতুন বাংলাদেশ -ড. গাজী রহমান

পৃথিবীর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচী কোনদিনই সুন্দরভাবে প্রবাহিত হয়নি। জিউসের অত্যচার থেকে মানব জাতিকে বাঁচাতে এবং আলোর পথে নিয়ে যেতে আবির্ভাব হয়েছে প্রমিথিউসের। সুদীর্ঘ কাল ভারতবর্ষের মানুষকে অত্যচার, শোষণ ও বৈষম্যের শিকার হতে হয়েছে। সুদীর্ঘ সময়ের ত্যাগ-সংযম ও সংগ্রাম কষ্টের মধ্য দিয়েই ব্রিটিশদের নিকট হতে মুক্ত হয়ে ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তানের জন্ম হয়েছে। পাকিস্তানের মানুষ ব্রিটিশ মুক্ত হয়ে স্বপ্ন দেখেছিল মুক্ত-স্বাধীন জীবনের স্বপ্নে। কিন্তু পাকিস্তানিদের অত্যাচার, শাসন-শোষণ ও বৈষম্যের শিকার হতে হয়েছে তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তানিদের এবং এই বৈষম্যের দীর্ঘ ২৩ বছরের অত্যাচার-বৈষম্য থেকে মুক্ত হতেই সংগ্রাম এবং ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ প্রাণের জীবন দানের বিনিময়ে কেনা স্বাধীনতা। মানুষের যথার্থ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তি এনে দিতে পারেনি। দীর্ঘ ৫৩ বছরের বিভিন্ন গোষ্ঠি ও রাজনৈতিক দলের ইস্তেহারে মানুষের মুক্তি বৃত্তাবদ্ধ হয়ে থেকেছে। মুক্তি সংগ্রামের প্রতীক ও দল হিসাবে আওয়ামীলীগ শেষের ১৫ টি বছর এই দেশের মানুষ শোষণ, শাসন ও ত্রাশসন বৈষম্যের মধ্যে ঘুরপাক খাইয়েছে। ঘুষ, গুম, খুন, দুর্নীতি, গণতন্ত্রের নামে এক দলীয় শাসন কায়েম করেছে। মানুষের বাক স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে। বিদেশে অর্থ পাচার করে দেশকে কপদর্কহীন করেছে। ভোটবিহীন রাজনীতি ও কালচার সৃষ্টি করে মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। সৃষ্টি করেছে এক অসম বৈষম্য। বৈষম্যের স্বীকার এদেশের সাধারণ মানুষ ও প্রলাতারিয়েত মানুষ।

বৈষম্য আসলে কি?
বৈষম্যের অর্থ ব্যাপক-সূদুর বিস্তৃত। জাতীয় জীবনের সমস্ত ক্ষেত্রেই বৈষম্য হতে পারে। বিগত দিনগুলিতে- ভোট বিহীন রাজনৈতিক দলগুলির যে অনাচার, অত্যাচারসর্বত্র সর্বক্ষেত্রে যে বৈষম্য-তা সামাজিক জীবন ব্যবস্থাপকে বিপর্যস্ত ও বিষিয়ে তুলেছে। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক-সাহিত্য-সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য, কারিগরী ও প্রযুক্তির সর্বক্ষেত্রেই বৈষম্য ও শোষণের পরাকাষ্ঠা তৈরি করেছে। এই বৈষম্যের হাত হতে বাঁচানোর জন্যই ছাত্রদের জুলাই বিপ্লব ২০২৪। বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন-অসমতার বিরুদ্ধে আন্দোলন, সংগ্রাম, শত শত হাজার হাজার মানুষের জীবন বিসর্জন বলিদান। নির্ভীক অকুতোভয় আন্দোলন, বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন। এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে রূপায়িত হয়। ৩৬ জুলাই (১৬ জুলাই) রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শহীদ আবু সাঈদের মর্মান্তিক ও বর্বরোচিত মৃত্যু এদেশের ছাত্র-জনতা আবাল বৃদ্ধ বণিতার হৃদয়ে কাঁপন ধরাতে সক্ষম হয়। প্রতিটি মানুষ এর প্রতিবাদ করে এবং ছাত্র-জনতার আন্দোলন আরো বেগবান হয়। মানুষ একই ঐক্যে একই ঐক্যতানে সমর্থন জোগায়। আন্দোলনের গতির মাত্রা আরো বহুগুন বেড়ে যায়। মুক্তির স্বপ্নে লাখো লাখো মানুষ একসাথে রাস্তায় নেমে এসেছে। নতুন এক দুর্ণিবার তৃষ্ণায় রাজপথে তারা লিখেছিল কবিতা স্বপ্নের আবেগ দিয়ে বিপ্লবী অক্ষরে।

পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর পনেরো বছরের বেশী শাসন আমলে শুধু কঠোর অত্যাচারীই হয়ে উঠেননি, হয়ে উঠেছিলেন নিমর্ম এক নিপীড়ক। সীমাহীন নিষ্ঠুরতার সংগে তিনি দমন করেছিলেন সব রাজনৈতিক দলকে। রাষ্ট্রের প্রতিটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠানকে পদানত করেছিলেন। নিবর্তনমূলক আইনে ও আইন বহির্ভূত পথে গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করেছিলেন। শেখ হাসিনার নিষ্ঠুরতম রূপটি দেখা গিয়েছিল এই আন্দোলনের সময়েই। তার রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠী এবং কয়েকটি বাহিনীকে দিয়ে এই রাষ্ট্রের নাগরিকের বিরুদ্ধে ব্যাপক এক হত্যাকান্ডে তিনি লিপ্ত করেন। এই হত্যাকান্ডের প্রয়োজন ছিল অকল্পনীয়। ঠিক যেন শত্রু গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে এক রাষ্ট্রের যুদ্ধ। রাষ্ট্র আর সরকারকে শেখ হাসিনা তার দলের পকেটে রুমালের মতো গুজে দিয়েছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশের ছাত্র-ছাত্রীরা অসম্ভব সাহস দেখিয়ে বেঁকে বসল। তারা শুরু করেছিল সরকারি চাকরিতে অযৌক্তিক কোঠা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে। কিন্তু শেখ হাসিনার হঠকারিতায় ছোট একটি গোষ্ঠীর দাবীকে জনতার আন্দোলনে রূপান্তর হওয়ার পেক্ষাপট তৈরি করে। ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের বুদ্ধিদীপ্ত, কুশলী কর্মসূচি দিয়ে নানা শ্রেণী পেশার গোষ্ঠী বয়সের জনতাকে তাদের সঙ্গে একাত্মা করতে সক্ষম হয়। সবাই নির্ভয়ে বুক পেতে দাঁড়ায় সরকারের বিরুদ্ধে হত্যাযজ্ঞের সামনে। জনতা যখন একটি একাট্টা রাজনৈতিক সত্বা হয়ে সরকারকে প্রত্যাখ্যান করে, কার সাধ্য তাকে ঠেকাই, বাকীটাতো ইতিহাস।

১৯৫২, ১৯৬৯, ১৯৭১, ১৯৯০ এবং সবশেষে ২০২৪ সালেই এখানে দ্রষ্টব্য। এসব ইতিহাস মুহুর্তে ব্যক্তির বদলে জনতাই কর্তা শক্তি বাংলাদেশের প্রতিটি উজ্জলতম ইতিহাস পর্বে জনতা জেগে উঠেছে। তার চেয়েও বড় কথা, জনতার আন্দোলন রাষ্ট্র, সমাজ বা বৃহত্তর ব্যবস্থাকে আমুল পাল্টে দিয়েছে। আর এসব প্রথম স্ফুরণ হয় সব সময় ছাত্রদের মধ্যে আমরা দেখতে পাই। তারা হয়ে উঠেছে আন্দোলনগুলোর প্রথম চালক। ছাত্রদের হাত ধরে জনতা জেগে উঠেছে। আর তাতে পাল্টে গেছে ইতিহাস। অথচ সেসব ঘটনা নিয়ে আমরা নিছক স্মৃতি কথা ও সাধারণ ইতিহাসই লিখেছি। বাংলাদেশের সামাজিক ইতিহাস এবং পাল্টে যাওয়া বর্তমানের সঙ্গে মিলিয়ে সেসব ইতিহাস পর্বে ভাববস্তুর পর্যালোচনা বলতে গেলে কখনোই করিনি। আমাদের ইতিহাসের ভাববস্তু তাই বারবার হয়েছে।

প্রশ্ন হলো ছাত্ররাই কেন রাষ্ট্রের প্রবল মুহুর্তে ঘটনার কেন্দ্র হয়ে উঠে?
পৃথিবী চলিষ্ণু। প্রবীণেরা যে পৃথিবীতে বেড়ে ওঠেন, পৃথিবীর তার থেকেও এগিয়ে যেতে থাকে। জীবনের যে নতুন সম্পর্ক আর চাহিদা জেগে উঠতে থাকে, তরুণেরাই সে স্পন্দন অনুভব করে সবার আগে, পুরোনো ব্যবস্থাকে না ভেঙ্গে ফেললে সেই নতুনকে পাওয়া অসম্ভব। প্রবীণেরা পৃথিবীতে অভ্যস্ত; স্থির জীবনের প্রত্যাশী। তরুণেরা পিছুটানহীন, বেপরোয়া নিজেদের জন্য নতুন পৃথিবীকে পাওয়ার তৃষ্ণায় দুঃসাহসী। পদে পদে নিষেধের বাধা, তার উদ্দেশ্যে বলতে পারে ‘নিষেধাজ্ঞায় এখন নিষিদ্ধ’। যে আবেগে ছাত্ররা এমন কথা বলেছিল প্যারিসের আন্দোলনে।

ছাত্র-জনতার সম্পর্কও চমকপ্রদ। যে কোন ছাত্রই মা বাবার ভবিষ্যত প্রত্যাশার মূর্ত প্রতীক। মা-বাবা ও তার সন্তানের সম্পর্ক বিশুদ্ধ আবেগ আর স্বপ্নের। ছাত্র ও জনতার সম্পর্ক তারই এক বিশুদ্ধ আবেগ আর স্বপ্নের। ছাত্র আর জনতার সম্পর্ক তারই এক প্রসারিত চিত্র মাত্র। কোনো ন্যায্য দাবীতে তরুণ ছাত্ররা ঝাঁপিয়ে পড়লে তার প্রতি জনতার সস্নেহ সমর্থন দেখা যায়। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে আমরা যেমনটি দেখেছি।

স্বাধীনতার আগে পরে এই ছাত্রদের ভাবাদর্শ ও বিন্যাসের পরিবর্তনও দেখার মতো। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে সাধারণভাবে সব ধরণের ছাত্র-ছাত্রীরাই অংশ নিয়েছিল। তবে বাম সমাজতান্ত্রিক ধারার ছাত্ররাই প্রত্যক্ষ-প্রচ্ছন্ন নেতৃত্বের ভূমিকায় ছিল। স্বাধীনতার আগ পর্যন্ত ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন বা ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানে আন্দোলনের পতাকা হাতে তুলে নিয়েছিল বাম গণতান্ত্রিক ধারার ছাত্ররাই। তারা সম্পৃক্তও করতে পেরেছিল জনতাকে। ১৯৯০ সালে জেনারেল এরশাদের সামরিক স্বৈরশাসকের পতনের আন্দোলনে সরাসরি দেখা গেলো মূল ধারার রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনগুলোকে।

এবারের চিত্র একেবারেই আলাদা। এবারে মূলধারার ছাত্র সংগঠন সেখানে কোন ভূমিকা রাখতে পারেনি। আন্দোলন ছিল স্বতঃস্ফুর্ত। সংস্কৃতি যজ্ঞেলিপ্ত রাজনীতির অভিলাষী একদল ছাত্র এ আন্দোলনে নেপথ্যে থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাদের সফলতার পেছনে নানা কারণ ছিল। তাদের ভাষা তরুণদের আকর্ষণ করেছে। বয়ান নানা স্তর ও গোষ্ঠীর মানুষকে যুক্ত করেছে। কৌশল রাষ্ট্রের শক্তির ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আন্দোলনকে বাঁচিয়ে রেখেছে।

যে কোন অভ্যুত্থানে দুটি পর্ব থাকে। একটি পতনের, আরেকটি পত্তনের। প্রথমটি পুরোনোর বিদায়, পরেরটি নতুনের অভ্যুদয়। প্রথমটাই অসম্ভব কঠিন। দ্বিতীয়টি আরও কঠিন। নতুনের অভ্যুদয় কিভাবে কতটা হবে কিংবা আদৌ হবে কিনা, সেটা নির্ভর করবে রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী হিসাবে যে জনতার আবির্ভাব ঘটল, ভবিষ্যতে তা কেমন পরিপক্কতা দেখায় তার ওপর। তবে পত্তন বা গড়ে তোলার পর্বটি যে দিকেই গড়িয়ে যাক না কেন, ২০২৪ সালের এই আন্দোলন পত্তনের পর্বটি যেভাবে সফল হলো তা নিঃসন্দেহে ইতিহাসের অংশ হয়ে পড়েছে।

এরই মধ্যে অন্তবর্তী সরকার গঠিত হয়েছে এবং সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। গভীর আনন্দের কথা নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুস অন্তবর্তী সরকারের প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। ড. ইউনুস আজ বিশ্বব্যাপি নন্দিত। নোবেল কমিটি তাকে শান্তি পুরস্কার প্রদানের মধ্য দিয়ে বিশ্বব্যাপি শান্তি, সংহতি ও উন্নয়নের ধারায় তার অবদানের প্রতি শ্রদ্ধাবনত সম্মান দেখিয়েছে। এজন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে দেশের একজন নাগরিক হিসাবে অহংকার বোধ করি।

একটি স্থিতিশীল শৃংখলাপূর্ণ সরকার ব্যবস্থা এ মুহুর্তে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। বিলুপ্ত গণতান্ত্রিক কাঠামো ফিরিয়ে আনা সময় সাপেক্ষ হলেও অভ্যন্তরীন শান্তি শৃংখলাকে এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে পরিচালনা করতে হবে। স্বৈরাচার পতনের অব্যাবহিত পরই এমন কিছু অনভিপ্রেত ঘটনা দেখেছি, যা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তাই আশা করি সরকারের স্বাভাবিক প্রশাসনিক তৎপরতা নিয়মতান্ত্রিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে।
অনতি বিলম্বে আইন শৃংখলা পুনঃ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জাতীয় জীবনের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। জুলাই-আগস্টে সংঘঠিত সব হত্যাকান্ডের বিচার করতে হবে। আধিপত্যবাদী শক্তি এই ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে হীন চক্রান্তে মেতে উঠেছে। সম্প্রসারণবাদ বারবার আমাদের মাতৃভূমিকে গ্রাস করতে চাচ্ছে। সম্মিলিতভাবে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। এই হীন চক্রান্তকে নস্যাৎ করতে হবে। এর জন্য যা যা প্রয়োজন তাই করতে হবে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং প্রক্রিয়াকে পুনঃ প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

গণতন্ত্রহীনতার অথর্ব উলঙ্গ চর্চা ঘটেছে সমাজে ও রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের সুস্থ বিকাশ না ঘটলে এই গণ-বিপ্লবের সাফল্য অর্জিত হবে না। সংস্কার কাজ সম্পন্ন করে গণতন্ত্রের পথে যাত্রা করতে হবে। বর্ণিত দায়িত্বগুলো সম্পাদনের জন্য প্রয়োজন স্বদিচ্ছা, পরিকল্পনা ও আন্তরিকতা।

জুলাই বিপ্লব ২০২৪ এর মাধ্যমে বাংলাদেশে যে নব ধারার রাজনৈতিক মেরুকরণ শুরু হয়েছে তাকে বাস্তবায়ন করতে হবে। মানুষের মূল্যায়ন করতে হবে। যে আশা ও ত্যাগ নিয়ে মানুষ স্বপ্ন দেখেছিল তার বাস্তবায়ন হলেই নতুন বাংলাদেশের মানুষের সম্মান বাড়বে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে পুনঃ জাগরণ ঘটবে। ত্যাগ, স্থিতি, শান্তি, সাম্য ও সমতার ভিত্তিতে নতুন বাংলাদেশের জন্ম হবে। নতুন প্রজন্মের ইচ্ছাও সেটাই। দেশ জাতি সেই মহান ব্রত-মহান বাংলাদেশ সোনার বাংলাদেশ দেখার প্রত্যাশা নিয়ে তাকিয়ে আছে।

নতুন প্রজন্মকে অভিবাদন জানিয়ে বক্তব্য শেষ করছি। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের ভাষায়

“আয়রে নতুন আয় – সংগে করে নিয়ে আয়
তোর সুখ তোর হাসি গান
ফোটা নব ফুলচয় – ওঠা নব কিশলয়
নবীন বসন্ত আয় নিয়ে।”

জেগে থাকো নবীন – জেগে থাকো তরুণ
তোমাদের হাতেই হবে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ।

লেখক: প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ, মেহেরপুর সরকারি মহিলা কলেজ, কবি, গবেষক ও প্রাবন্ধিক




ঝিনাইদহে করনীয় শীর্ষক মতবিনিময় সভা

ঝিনাইদহে বিশেষ বিদ্যালয়সমূহের স্বীকৃতি ও এমপিওভুক্তির দাবিতে করনীয় শীর্ষক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার সকালে শহরের তামান্না পার্কের মিলনায়তনে এ সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় সমন্বয় পরিষদ।

সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মহিউদ্দিন বাবুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় সভাপতি ইলিয়াস রাজ। প্রধান বক্তা ছিলেন মুখ্য সমন্বয়ক গাউছুল আজম। বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রিমা খাতুন, সাংগঠনিক সম্পাদক আকুল শেখ।

সভায় বক্তারা বলেন, “দেশের হাজারো প্রতিবন্ধী শিশু-কিশোরকে শিক্ষার মূলধারায় সম্পৃক্ত করতে হলে বিশেষ বিদ্যালয়গুলোর সরকারিভাবে স্বীকৃতি এবং এমপিওভুক্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন।”

তারা আরও বলেন, শিক্ষকদের ন্যায্য সম্মানী, অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় এসব বিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালনায় নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হচ্ছে। আগামী ২০ এপ্রিলের মধ্যে তাদের দাবী মানা না হলে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারি দেন তারা।

সভায় ঝিনাইদহ ও চুয়াডাঙ্গা জেলার বিভিন্ন প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।




স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতিতে রয়েছে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ও সাংবাদিক মনির হায়দার বলেছেন, “স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতির পেছনে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে, যার ফলে এ দুর্নীতি ব্যাপক আকার ধারণ করেছে।”
তিনি বলেন, “দেশে দীর্ঘদিন ধরে গণতন্ত্র না থাকায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ঘাটতির কারণে দুর্নীতি বেড়েছে।”

আজ শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে মেহেরপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, “খুব বেশি দুর্নীতি ও অনিয়ম রয়েছে এমন কয়েকটি খাতের মধ্যে স্বাস্থ্যখাত অন্যতম। শুধু স্বাস্থ্যখাতের ব্যবস্থাপনার দোষ নয়, বরং রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার কারণেই বিষয়টি অনেক দূর গড়িয়েছে।”

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “আপনারা সরকারি পদে দায়িত্ব পালন করছেন যাকে বলে পাবলিক অফিস। এই পাবলিক অফিসে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করাই গণতন্ত্রের মূল উদ্দেশ্য।”

তিনি আরও বলেন, “দীর্ঘদিন দেশে গণতন্ত্র ছিল না। গণতন্ত্র না থাকার ফলে সমাজে সবচেয়ে বেশি ঘাটতি দেখা দিয়েছে দুটি জিনিসে, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা। এটা হয়তো রাজনৈতিক বক্তব্য মনে হতে পারে, কিন্তু এটি আসলে রাজনৈতিক নয়।”

“আমরা গণতন্ত্র বলতে বুঝি কেবল একটি নির্বাচন, কিন্তু সভ্য সমাজে গণতন্ত্র মানে শুধু নির্বাচন নয়। নির্বাচন হচ্ছে গণতন্ত্রে প্রবেশের দরজা। প্রকৃত গণতন্ত্রের ভিত্তি হলো স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা। এই দুটি ছাড়া কোনো আধুনিক সমাজ টিকে থাকতে পারে না,” যোগ করেন মনির হায়দার।

সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক সিফাত মেহনাজ। বিশেষ অতিথি ছিলেন মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সাহারিয়া শায়লা জাহান।
এতে মেহেরপুর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশগ্রহণ করেন।

“নিরবিচ্ছিন্ন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি ও নিরাপদ কর্মস্থল তৈরিতে করণীয়” বিষয়ক এই মতবিনিময় সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।

উল্লেখ্য, ১ দিনের সরকারি সফরে সড়ক পথে আজ সকালে তিনি নিজ জেলা মেহেরপুরে আসেন।




দর্শনা ইমিগ্রেশন পুলিশের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

চুয়াডাঙ্গার দর্শনা জয়নগর চেকপোস্টে ইমিগ্রেশন বিভাগে কর্মরত পুলিশ কনস্টবল শামীম ইসলাম সাজু (৩২) সিলিং ফ্যানের লাল দড়ি দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।

আজ শুক্রবার সকাল ৮ টার দিকে সহকর্মীরা চেকেপোষ্টের নতুন ভবনের দ্বীতীয় তলার শয়নকক্ষের জানালা দিয়ে তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান ।

নিহত শামীম কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলার ঝুটিয়াডাঙ্গা গ্রামের হাশেম আলীর ছেলে। তার কনস্টবল নং ৫৩২।

সহকর্মীরা জানান, শামীম হোসেন যোগদানের পর থেকেই গত ৬ মাস ধরে নতুন ইমিগ্রেশন ভবনের ২য় তলার একটি কক্ষে বাস করে আসছিলেন। আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টায় কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় এ এস আই তারেক তাকে নাস্তা করার জন্য খোঁজ নিতে গেলে শামীম ইসলাম সাজুর ঝুলন্ত লাশ দেখতে পান।

চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। এবং নিহত কনস্টেবল শামীম ইসলাম সাজুর ধুলন্ত লাশ বেলা ১১টায় তিনি ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা মর্গে পাঠিয়েছে।

এ ঘটনায় চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা সাংবাদিকদের জানায় কি কারণে আত্মহত্যা করেছে এখনো জানা যায়নি, তবে পরিবারের লোকজন বলতে পারবে।




চুয়াডাঙ্গায় বাস-পাখিভ্যানের সংঘর্ষে পাখিভ্যান চালকসহ নিহত-২

চুয়াডাঙ্গায় অজ্ঞাত বাস-পাখিভ্যানের সংঘর্ষে পাখিভ্যান চালকসহ দুজন নিহত হয়েছেন। আজ শুক্রবার ভোরে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার নয় মাইল নামক স্থানে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- সদর উপজেলা কুতুবপুর গ্রামের পাখিভ্যান চালক আব্দুর রাজ্জাক (৬০), ও পাখিভ্যানের যাত্রী চাল ব্যবসায়ী মাহম্মদজমা গ্রামের খন্দারপাড়ার সারোয়ার হোসেন (৭০)।

স্থানীয়রা জানান, দুই জন ব্যক্তি সিন্দুরিয়া থেকে চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদাহ মহাসড়ক দিয়ে সরোজগঞ্জ বাজারে দিকে যাচ্ছিলেন।

তারা চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার নয় মাইল বাজারের নিকট পৌঁছলে চুয়াডাঙ্গা থেকে ছেড়ে আসা অজ্ঞাত একটি গাড়ির ধাক্কা লাগে। এ সময় তারা উভয় সড়কের ওপর ছিটকে পড়লে তাদেরকে পিষ্ট করে অজ্ঞাত গাড়িটি দ্রুত সটকে পড়ে। অন্ধকার থাকায় গাড়িটি সনাক্ত সম্ভব হয়নি। পরে স্থানীয়রা ও চুয়াডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করেন।

চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি খালেদুর রহমান জানান, দুর্ঘটনায় দুজন নিহতের খবর পাওয়ার পর ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় আইনগত বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।




মেহেরপুরে হার পাওয়ার প্রকল্পের ল্যাপটপ বিতরণ

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পরিচালিত ‘হার পাওয়ার’ প্রকল্পের আওতায় মহিলা কল সেন্টার এজেন্ট ব্যাচের প্রশিক্ষণার্থীদের মাঝে ল্যাপটপ বিতরণ করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে মেহেরপুর দারুল উলুম আহমদিয়া কামিল মাদ্রাসা মিলনায়তনে এ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মেহেরপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: খায়রুল ইসলাম। সভাপতিত্ব করেন সদর উপজেলা সহকারী প্রোগ্রামার সুব্রত কুমার বিশ্বাস।

ল্যাপটপ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রশিক্ষণার্থীদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন জান্নাতুল ফেরদৌস ও সোনিয়া আক্তার।

উল্লেখ্য, ছয় মাসব্যাপী এ প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে মোট ২৫ জন নারী অংশগ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ শেষে তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি ও প্রযুক্তি ব্যবহারে সক্ষম করে তোলার লক্ষ্যেই এই ল্যাপটপ বিতরণ করা হয়।




মেহেরপুরে পিস ফ্যাসিলিটেটর গ্রুপের পরিকল্পনা প্রণয়ন সভা

মেহেরপুর পিস ফ্যাসিলিটেটর গ্রুপ (পিএফজি)-এর সম্মিলিত কার্যক্রমের অগ্রগতি পর্যালোচনা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রণয়ন সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার মেহেরপুর প্রেসক্লাবের হলরুমে দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশ-এর সহযোগিতায় এবং এফসিডিও’র অর্থায়নে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

পিএফজি সমন্বয়কারী মুজাহিদ আল মুন্নার সঞ্চালনায় সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের মেহেরপুর জেলা শাখার সভাপতি ও পিস অ্যাম্বাসেডর সায়্যেদাতুন্নেসা নয়ন।

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদ্য নির্বাচিত আহ্বায়ক ও পিস অ্যাম্বাসেডর আজমল হোসেন মিন্টু, জেলা ইমাম সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সিরাজ উদ্দীন, সাবেক কাউন্সিলর রোকসানা কামাল রুনু, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. আল মাসুম, এডভোকেট আমানুল্লাহ আমান, বিএনপি নেতা আব্দুস সাত্তার মুক্তা, জাতীয় পার্টির মামলত হোসেন, পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সঞ্জিত পাল বাপ্পিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সাংবাদিক, ধর্মীয় ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিগণ।

দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং পিএফজি’র গঠনতন্ত্র নিয়ে আলোচনা করেন আঞ্চলিক সমন্বয়কারী মো. খোরশেদ আলম। এমআইপিএস প্রকল্পের বিস্তারিত পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন কৌশল উপস্থাপন করেন এলাকা সমন্বয়কারী এস.এম. রাজু জবেদ।

এ সময় পিএফজি’র সমন্বয়কারী ও মাঠ সমন্বয়কারী মো. আশরাফুজ্জামান বিভিন্ন রেজ্যুলেশন ও সামষ্টিক কর্মসূচি উপস্থাপন করেন। পাশাপাশি ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়। সভায় আন্তঃধর্মীয় সংলাপ, পৌরসভা কেন্দ্রিক পিস ইভেন্ট এবং পিএফবিটি প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের জন্য পৃথক কমিটি গঠন করা হয়, যারা আগামী দিনে পরিকল্পনা অনুযায়ী কর্মসূচি বাস্তবায়নে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।