সিলেটে বৃষ্টি, অপেক্ষায় বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে

প্রথম ইনিংসে জিম্বাবুয়ে লিড নিয়েছিল ৮২ রানের। দ্বিতীয় ইনিংসে এখনও ২৫ রানে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। এমন পরিস্থিতিতে বৃষ্টি হানা দিয়েছে সিলেটে। যার কারণে তৃতীয় দিনের খেলা শুরু হয়নি এখনও।

সিলেটে গত রাতে ভারি বৃষ্টি হয়েছে। আজ সকালেও ঝিরঝিরে বৃষ্টি হচ্ছে, থামার কোনো লক্ষ্মণই দেখা যাচ্ছে না। যার ফলে তৃতীয় দিন সকালের খেলা প্রায় আধঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও শুরু হয়নি এখনও।

রাত থেকে বৃষ্টি চলছে। যার ফলে খেলা যে শুরু হতে দেরি হবে, তা অনুমিতই ছিল। যে কারণে দুই দলও অনেক দেরি করে এসেছে মাঠে। ৯টা ৪৫ মিনিটে খেলা শুরুর কথা থাকলেও দুই দল স্টেডিয়ামে এসেছেই ১০টা বাজে।

মাঠের পিচ ঢাকা আছে কভারে। তবে বাকি মাঠে কভার নেই। সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বেশ ভালো। তাই সে নিয়ে খুব একটা চিন্তা নেই।

চিন্তা যা নিয়ে আছে, তা হলো বাংলাদেশের ব্যাটিং। প্রথম দিনে মোটামুটি ভালো শুরুর পরও শেষ দেড় সেশনে ৮ উইকেট খুইয়ে বিপাকে পড়ে যায় স্বাগতিকরা। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের শুরুটা অতটা ভালো না হলেও নেহায়েত মন্দ হয়নি। তবে দলের হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ার ‘রেওয়াজ’ এমন শুরুর পরও স্বস্তি দিচ্ছে না আদৌ।

সূত্র: যুগান্তর




মেহেরপুরের কুতুবপুরে জামায়াতে ইসলামীর গণসংযোগ ও পথসভা

মেহেরপুর সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের তেরঘরিয়া ও রুদ্রনগরে জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে গণসংযোগ ও পথসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (২১ এপ্রিল) বিকেল পাঁচটার দিকে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

পথসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মেহেরপুর জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা তাজউদ্দিন খান। তিনি বলেন, “জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় গেলে দেশের মানুষ শান্তি পাবে। গত ১৬ বছর আমরা নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আমাদের কোনো শান্তি ছিল না। স্বৈরাচার হাসিনার আমলে আমাদের অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। কোর্টের বারান্দায় যেতে যেতে আমাদের পায়ে আঘাত লেগেছে। আমার ভাইদের ওপর বিনা কারণে হামলা-মামলা হয়েছে। জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের চেষ্টা করবে জামায়াতে ইসলামী। আমরা যদি নির্বাচিত হই, দেশে শান্তি ও শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।”

পথসভায় সভাপতিত্ব করেন কুতুবপুর ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর সভাপতি ইমদাদুল হক। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মেহেরপুর সদর উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির সোহেল রানা। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন কুতুবপুর ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর সাধারণ সম্পাদক পারভেজ হোসাইন।

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মেহেরপুর শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি আব্দুর রউফ মুকুল, সদর উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর সাধারণ সম্পাদক জাব্বারুল ইসলাম মাস্টার, ১ নম্বর ওয়ার্ড রুদ্রনগরের সভাপতি শেরেগুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল রকিব, যুব বিভাগের সভাপতি সাহিরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক রকিব আলী, কোষাধ্যক্ষ তোফাজ্জল, সদস্য খলিলুর রহমান, আজিজুল, জুলফিকারসহ স্থানীয় নেতাকর্মীরা।




গাংনীর কাজিপুর ইউনিয়ন বিএনপি’র দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে নিজ দলীয় নেতা নির্বাচন করলেন গাংনী উপজেলার কাজিপুর ইউনিয়ন বিএনপি’র নেতাকর্মী। ভোটারদের সরাসরি ভোটে কাজিপুর ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সাহাবুদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন স্কুল শিক্ষক মাসুদ রানা।

আজ সোমবার দুপুরে হাড়াভাঙ্গা এইচ বি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আড়ম্বরপূর্ণ পরিবেশে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে কাজিপুর ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ড কমিটির সদস্যদের সরাসরি ভোটে তারা নির্বাচিত হন। দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনের পূর্বে আয়োজিত বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, মেহেরপুর জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক শিল্পপতি জাভেদ মাসুদ মিল্টন।

কাজিপুর ইউনিয়ন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সভাপতি রেজাউল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভায় বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, আব্দুল আওয়াল, আলফাজ উদ্দীন কালু।

এছাড়াও জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক কাউসার আলীসহ বিভিন্ন ইউনিটের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি আব্দাল হকের সঞ্চালনায় সম্মেলনে কাজিপুর ইউনিয়নের ৯ টি ওয়ার্ড কমিটির মোট ৪শ ৫৯ ভোটরের মধ্যে ৪শ ৩২ জন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।

ভোট গ্রহণ শেষে সভাপতি পদে কাজিপুর গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সাহাবুদ্দিন ২৬৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি নেতা বেতবাড়িয়া গ্রামের মঞ্জুরুল হক টকি পেয়েছেন ১৬৬ ভোট। অপরদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে কাজিপুর গ্রামের মাসুদ রানা ২৭০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কাজিপুর গ্রামের শহিদুল ইসলাম পিন্টু পেয়েছেন ১৫৮ ভোট।




ঝিনাইদহের শৈলকুপায় মহাসড়ক অবরোধ

ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলায় শেখপাড়া দুঃখী মাহমুদ (ডিএম) ডিগ্রি কলেজের মাঠে বসতি স্থাপনা নির্মাণের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ জানিয়েছে।

আজ সোমবার সকাল ১১টায় ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া মহাসড়কের শেখপাড়া এলাকায় তারা ঘণ্টাব্যাপী এ অবরোধ কর্মসূচি পালন করে।
এ সময় শিক্ষার্থীরা মহাসড়কের উপরে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শণ করে।

অবরোধ চলাকালে শিক্ষার্থীরা, ‘কলেজ মাঠে স্থাপনা মানি না মানব না’, ‘অবৈধ স্থাপনা মানি না মানব না’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকে। পরে বেলা সাড়ে ১২টায় যৌক্তিক সমাধানের প্রতিশ্রুতিতে মহাসড়ক ছেড়ে দেয় শিক্ষার্থীরা। তবে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে স্থাপনা না সরালে আবারও রাস্তায় নামবে বলে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে।

জানা গেছে, কলেজ মাঠের ২৭ শতাংশ জমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে। কয়েকদিন আগে জমির প্রকৃত মালিক কলেজ মাঠে স্থাপনা নির্মাণ করলে শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদে সরব হয়। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, কলেজ মাঠে স্থাপনা নির্মাণের ফলে আমরা খেলাধুলা করতে পারছি না। কলেজের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। কলেজ মাঠে স্থাপনা নির্মাণ আমরা মানব না, আমরা সুষ্ঠু সমাধান চাই। তা না হলে আমরা আরও কঠোর আন্দোলনে যাব।

শেখপাড়া দুঃখী মাহমুদ (ডিএম) ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. আসাদুর রহমান জানান, জমিটি এওয়াজ করা হয়েছিল, রেজিষ্ট্রি না থাকায় সেখানে স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে, একারণে শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করেছে। আশা করি দ্রুতই এর সুন্দর সমাধান হয়ে যাবে। স্থাপনা নির্মাণকারীদের কাউকে পাওয়া যায়নি তাই এ বিষয়ে তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।




মেহেরপুর কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজে শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা ও পুরস্কার বিতরণ

কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা ও বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ২০২৫ উপলক্ষে মেহেরপুর কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজে পুরস্কার বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। আজ সোমবার সকাল ১১টার দিকে মেহেরপুর কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

মেহেরপুর কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ রেহানা ইয়াসমিন এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক সিফাত মেহনাজ। বিশেষ অতিথি ছিলেন, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার খায়রুল ইসলাম।

অনুষ্ঠানে প্লে শ্রেণীর মেহেরিমা আফরিন (আইরা), আবরার শাহরিয়ার রাফাত, নার্সারী শ্রেণীর আবরার খন্দকার (বিত্ত), সাইনা খাতুন, প্রথম শ্রেণীর এস এম সমন্বয়, সঞ্চিতা পাত্র, দ্বিতীয় শ্রেণীর শাহরিয়ার আলম, সারা মেহজাবিন, তৃতীয় শ্রেণীর জিয়ানা আফরিন, জান্নাত বিনতে আনিস, চতুর্থ শ্রেণীর কাজী ইয়াসির, ফারিহা সুলতানা সহ কৃতি শিক্ষার্থীদের মাঝে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।

সহকারী শিক্ষক খন্দকার বদরুদ্দোজা এর সঞ্চালনায় এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন, সহকারী শিক্ষিকা সেলিনা আফরোজা, নাজমা আক্তার, বিথী খাতুন, শাহানা আক্তার, রওশন আরা, ফাতেমা খাতুন, শাহিনা আফরোজ সহ অভিভাবক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ।




কুষ্টিয়ায় ছাত্রদলের অনন্য উদ্যোগ

কুষ্টিয়ার মিরপুরে চলমান এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের জন্য খাবার সালাইন ও পানিসহ ছায়া যুক্ত বসার স্থানের ব্যবস্থা করেছে ছাত্রদল।

আজ সোমবার সকালে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা ও পৌর ছাত্রদলের আয়োজনে মিরপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ও মিরপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রে খাবার সালাইন, পানি ও ফাস্ট এইড বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব খন্দকার তসলিম উদ্দিন নিশাত।

এ সময় কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীদের প্রবেশের সময় পানির বোতল ও খাবার স্যালাইন প্রদানসহ শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের বিশ্রাম এর জন্য অস্থায়ী শেড নির্মাণ করে তাদের জন্য খাবার স্যালাইন ও পানির ব্যবস্থা করা হয়।

এব্যাপারে কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব খন্দকার তসলিম উদ্দিন নিশাত বলেন, বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ছাত্রদলের সাংগঠনিক অভিভাবক তারেক রহমানের নির্দেশনায় এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের জন্য মিরপুর উপজেলা ও পৌর ছাত্রদলের আয়োজনে আমরা সেবা কেন্দ্র চালু করেছি। উক্ত সেবা কেন্দ্রে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকগণ বিশ্রাম গ্রহণ করতে পারবেন এবং সেখানে তারা বিনামূল্যে খাবার স্যালাইন ও পানি খেতে পারবেন। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের জন্যও আমরা খাবার স্যালাইন ও পানির ব্যবস্থা করেছি।

উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, মিরপুর উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আতিকুর রহমান তুষার, সদস্য সচিব সাব্বির আহমেদ, পৌর ছাত্রদলের সদস্য সচিব মনিরুজ্জামান, যুগ্ম আহ্বায়ক রানা আহমেদ প্রমুখ।




পারভেজ হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে দর্শনায় ছাত্রদলের মানববন্ধন

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শাখা ছাত্রদলের ১২৩ ব্যাচের টেক্সটাইল বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজকে নৃশংস হত্যার প্রতিবাদে দর্শনা সরকারি কলেজ ছাত্রদলের মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ রবিবার বেলা ১১ টার দিকে দর্শনা সরকারী কলেজ শহীদ মিনার চত্তরে মোফাজ্জল হোসেন মোফা’র সভাপতিত্বে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এ মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন কলেজ ছাত্রদলের সদস্য সচিব পলাশ আহমেদ, যুগ্ন আহ্বায়ক সাফায়েত জামিল পাপ্পু, আসিফ হাসান, রাজু আহমেদ, রাকিবুল হাসান রিফাত, আমিন হাসান, মুশফিকুর রহমান, সাইফ, আব্দুল হাই, নাফিস ইকবাল, নিশান, এছাড়া জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মোরশেদুর রহমান লিংকন, যুগ্ন সম্পাদক আলতাফ হোসেন, পৌর ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল মুকিত ও হাসিবুল হাসান শান্ত এবং দর্শনা থানা ছাত্রদলের যুগ্ন আহ্বায়ক সামাউল হাসান, সাহেদ ইসলাম সুজন ও দর্শনা ডি এস মাদ্রাসা ছাত্রদলের সভাপতি শাহাব আহম্মেদ প্রমুখ।

এ সময় বক্তরা ছাত্রলীগ ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের হত্যার দায়ী করেন। এবং পারভেজ হত্যা কারি ও সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবি করেন। বক্তরা আরও বলেন পারভেজ কলেজ চত্তরের পাশে বসে ছিল, পাশ থেকে দুইটা মেয়েকে দেখে হাসে। পরে সে মেয়েটি তার বয় ফ্রেন্ডকে খবর দিলে তারা ৭-৮ জন এসে বুকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে নৃশংস ভাবে খুন করে। এমন জঘন্যতম খুনের ঘটনায় তাদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি করেন এ মানববন্ধনে।




মেহেরপুরে রিনিউয়েবল এনার্জি ফেস্ট উপলক্ষে সচেতনতামূলক র‍্যালি

রিনিউয়েবল এনার্জি ফেস্ট ২০২৫ উপলক্ষে মেহেরপুরে এক সচেতনতামূলক র‍্যালি অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সোমবার (২১ এপ্রিল) সকাল ১০টায় মেহেরপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বর থেকে র‍্যালিটি শুরু হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে গিয়ে শেষ হয়।

সুবাহ সামাজিক উন্নয়ন সংস্থার আয়োজনে এবং একশনএইড বাংলাদেশ, বুয়েট ও জাস্ট এনার্জি ট্রানজিশন নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ (জেটনেট-বিডি)-এর সহযোগিতায় এই র‍্যালির আয়োজন করা হয়।

র‍্যালিতে উপস্থিত ছিলেন মেহেরপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ক্যাব মেহেরপুর জেলা শাখার সভাপতি রফিক-উল-আলম, ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক ও আরটিভির জেলা প্রতিনিধি মাজেদুল হক মানিক, সোসাইটি ফর দি প্রোমোশন অব হিউম্যান রাইটস (এসপিএইচআর)-এর নির্বাহী পরিচালক আবু আবিদ, পল্লী জন উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক গোলাম কিবরিয়া, ব্র্যাকের জেলা প্রতিনিধি মনিরুল ইসলাম, হেলফ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক দিলারা জাহান এবং অপাজিতা মেহেরপুর-এর নির্বাহী পরিচালক রেহেনা খাতুন।

র‍্যালিতে শতাধিক নাগরিক, নারী ও যুবা নেতৃবৃন্দ, পরিবেশকর্মী এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। তারা “সৌর-বায়ু শক্তিই ভবিষ্যৎ”, “জ্বালানি রূপান্তরে নারী-যুবার অংশগ্রহণ চাই” এবং “রিনিউয়েবল এনার্জি ফেস্ট ২০২৫ সফল হোক” এই ধরনের নানা স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার বহন করেন।

র‍্যালি শেষে জেলা প্রশাসক কার্যালয় চত্বরে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বক্তারা নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রযুক্তিগত সম্ভাবনা, নীতিগত সংস্কার এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব তুলে ধরেন।

সুবাহ সামাজিক উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মঈন-উল-আলম বলেন, “জ্বালানি খাতের টেকসই রূপান্তর শুধু সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়; এর জন্য সমাজের প্রতিটি স্তরের সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রয়োজন। এই র‍্যালি সেই প্রয়াসেরই সূচনা।”




কন্টক পথ পাড়ি দিয়ে যেতে চাই বহুদুর -ইয়াদুল মোমিন

সীমান্তবর্তী ছোট একটি জেলা মেহেরপুর। স্বাধীনতার সূতিকাগার খ্যাত ঐতিহাসিক জেলা মেহেরপুর। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পেরিয়ে নতুন বাংলাদেশে এখনও বৈষম্য এ জেলার উন্নয়নে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, কলকারখানা, শিক্ষা ব্যবস্থাতেও এখনও বৈষম্যর শিকার হতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এমন একটি জেলাতে অনেক নেই এর মধ্যে আছে আমাদের গৌরব করার মত একটি দৈনিক। আমি মেহেরপুর প্রতিদিনের কথা বলছি। পত্রিকাটির সম্পাদক হিসেবে কথা বলছি। একজন সংবাদকর্মী হিসেবে কথা বলছি। কথা বলছি মেহেরপুরের একজন নাগরিক হিসেবে। আমি এখন অবশ্যই গর্ব করি আমার জেলাতে একটি দৈনিক পত্রিকা আছে। যেখানে আছে অনেক অসঙ্গতি, কিন্তু অনেক অসঙ্গতির মধ্যেও প্রতিদিন একটি দৈনিক পাঠকের হাতে পৌছাচ্ছে পত্রিকা কতৃপক্ষ। ২০১৮ খ্রি. থেকে ২০২৫ খি.। সাত বছর পেরিয়ে ৮ম বছরে আমাদের প্রিয় পত্রিকা মেহেরপুর প্রতিদিন। অন্ধকারে আলো জ্বালিয়ে একটি বৈষম্যহীন, উন্নয়নশীল, অসঙ্গতিমুক্ত একটি জেলাকে আলোকিত করার চেষ্টা আমাদের প্রতিনিয়িত। কতটুকু পারবো, কতটুকু পেরেছি এ বিচারের ভার মেহেরপুরের আপামর জনগণের, আমাদের সকল স্তরের পাঠকের। তবে আমরা এ কন্টাকাকীর্ণ পথ অতিক্রম করে বহু দুরে যেতে চাই।

আমরা গর্বিত আমরা একটি ইতিহাস গড়তে চলেছি। আমরা পেরেছি, আমাদের পারতেই হচ্ছে। আমাদের একটি মাত্র পথ খোলা রয়েছে, তা হলো সব অসঙ্গতিকে দুরে সরিয়ে আমাদের আলোকিত করতেই হবে। এ ধরণের একটি চ্যালেঞ্জ নিতে পেরে মেহেরপুর প্রতিদিনের পরিবারের সদস্য হিসেবে আমি অহংকার করি।

অহংকারের এ যাত্রায় আমাদের সঙ্গে আছেন অগণিত পাঠক আর শুভানুধ্যায়ী। মে‌হেরপুরসহ দ‌ক্ষিণ-প‌শ্চিমাঞ্চ‌লের সর্বস্তরের মানুষের ভালোবাসা আমাদের প্রধান শক্তি। পাঠকসাধারণের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা রেখে পত্রিকাটি আমরা প্রতিনিয়ত প্রকাশ করে যাচ্ছি। আমরা বিশ্বাস করি, পাঠকই আমা‌দের সবচাইতে বড় শক্তি, বড় শ্রদ্ধার জায়গা। তাদের হাতে প্রতিদিন একটি গ্রহণযোগ্য পত্রিকা তুলে দেওয়ার চেষ্টা ৭ বছর ধরে আমরা নিষ্ঠার সঙ্গে করে গেছি। আগামী দিনেও এই নিষ্ঠা দৃঢ়ভাবে বজায় রাখব।

‘জনগ‌ণের মুখপত্র’ এই স্লোগা‌নের স্বাক্ষর রে‌খে যা কিছু জনগ‌ণের জন‌্য কল্যাণ ব‌য়ে আ‌নে সে ধর‌ণের সংবাদ প‌রি‌বেশ‌নের ক্ষে‌ত্রে আমা‌দের সহকর্মীরা নিরলস কাজ কর‌ছে।

সংবাদের ভিতরকার সকল স‌ত‌্য প্রকাশ করার চেষ্টা করেছি। অসততা আমাদের স্পর্শ করতে পারেনি। তবে আমরা নিরপেক্ষ নই। আমরা মানুষের পক্ষে। প্রতিটি সাধারণ মানুষ, প্রতিটি সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পক্ষে আমা‌দের কলম চলবে।

শুধু পত্রিকা প্রকাশ করেই আমরা আমাদের দায়িত্ব শেষ করিনি। মেহেরপুরের খেলাধুলার প্রাণ ফিরিয়ে নিতে আমরা ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করেছি।পত্রিকার পাশাপাশি জাতীয় মানের টকশো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সমাজের নানা অসঙ্গতি দুর করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি।

মেহেরপুর প্রতিদিনের ৮ম বর্ষে পদার্পণ উপলক্ষে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সফল হোক।




প্রসঙ্গ ‘কেয়া পাতার নৌকা’: দাঙ্গা বিধধ্বস্ত বাংলাদেশের চিত্র -ড. শামস্ আল্দীন

মানব সভ্যতার ইতিহাস আসলে সংগ্রামেরই ইতিহাস। ইতিহাসের ছোট বড় দাঙ্গা যুদ্ধ সবই এই সংগ্রামের অন্তর্ভুক্ত। আর কথাসাহিত্যের কারবার যেহেতু মানুষ এবং মানুষের ছোট বড় সূক্ষ্ম ও অতি সূক্ষ্ম নানান বিষয় নিয়ে সেহেতু মানুষের জীবনে ঘটে যাওয়া এবং ঘটে চলা সংগ্রামের ইতিহাস ও কথাসাহিত্যে স্থান করে নেয় অনায়াসেই। বিশে^র সমস্ত দেশের কথাসাহিত্য সম্পর্কেই একথা সত্যি। বাংলা কথাসাহিত্য এর ব্যতিক্রম নয়। বাংলা কথাসাহিত্যের আদি থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত কথাসাহিত্যের দিকে চোখ রাখলে দেখা যায় বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত বিভিন্ন দাঙ্গা ও আন্দোলন বারেবারে বাংলা কথাসাহিত্যের বিষয় হিসেবে উঠে এসেছে। তবে এখনো পর্যন্ত যে দাঙ্গাটি বাংলা কথাসাহিত্যকে সব থেকে বেশি প্রভাবিত করেছে সেটি হল ভারতবর্ষের স্বাধীনতা প্রাপ্তির মুহূর্তে দেশভাগকে কেন্দ্র করে হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। এই দাঙ্গা এতটাই ভয়াবহ ও রক্তক্ষয়ী ছিল যে লক্ষ লক্ষ বাঙালিকে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়েছে কোনরকম প্রস্তুতি ছাড়াই। এই দাঙ্গা এতটাই শক্তিশালী ছিল যে খুব অল্প সময়েই তা ব্যক্তি মানুষের মনকে ভেঙে খান খান করে দিয়েছে। এই দাঙ্গার অভিঘাত এতটাই সুদূরপ্রসারী ছিল যে দাঙ্গা শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও ব্যক্তি মানুষ তার অভিশাপ থেকে মুক্তি পায়নি। এই দাঙ্গা নারী, পুরুষ, শিশুসহ কেওই বাদ পড়েনি। ‘কেয়া পাতার নৌকা’ উপন্যাসে প্রফুল্ল রায় দাঙ্গা বিধ্বস্ত বাংলাদেশের সময়ের এই চালচিত্রকে অত্যন্ত বাস্তবসম্মতভাবে তুলে ধরেছেন। সেই বিষাক্ত সময় একটি নারীর জীবনকেও কীভাবে বিষিয়ে দিয়েছিল তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দিয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয় কীভাবে এই দাঙ্গা ব্যক্তি নারীর জীবনে ট্রাজিক পরিণতি নিয়ে এসেছে  ‘ কেয়া পাতার নৌকা’ উপন্যাসে প্রফুল্ল রায় তা অত্যন্ত সহানুভূতির সঙ্গে অঙ্কন করেছেন।
দেশভাগ এবং দেশভাগের অভিঘাত প্রফুল্ল রায়কে যে জীবন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন করেছিল তা এতটাই গভীর ছিল যে সমগ্র জীবন তার প্রভাব থেকে তিনি বেরিয়ে আসতে পারেননি। মানুষের জীবনের সবথেকে সুন্দর সময় শৈশবের প্রায় পুরোটাই, ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি কাটিয়েছেন পূর্ববঙ্গে। এরপর দেশভাগের ফলে উদ্বাস্ত হয়ে তাঁকে চলে আসতে হয় কলকাতায়। সে অভিজ্ঞতা মোটেই ভাল ছিল না। একবস্ত্রে পূর্ববঙ্গ থেকে পালিয়ে চলে এসেছিলেন কলকাতায়। প্রতিমুহূর্তে ছিল খুন হয়ে যাওয়ার ভয়। পূর্ববঙ্গের একশ্রেণির মুসলমান তখন খুনের খেলায় মেতে উঠেছে। রাম দা নিয়ে তারা ঘুরে বেড়াচ্ছে। অনেক মুসলমান প্রতিবেশী হিন্দুদের এই দুর্দিনে তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। এদের সহযোগিতায় অতি কষ্টে প্রথমে জাহাজে এবং পরে রিফুজি স্পেশাল ট্রেনে উদ্বাস্ত হিসেবে কলকাতায় প্রবেশ করেন তিনি। এরপর জীবিকার সন্ধানে ঘুরে বেড়িয়েছেন ভারতবর্ষের নানা প্রান্তে। খুব কাছ থেকে দেখেছেন দাঙ্গার কারণে উদ্বাস্ত মানুষের জীবন যন্ত্রণা। এই গভীর জীবন অভিজ্ঞতা সাহিত্যিক প্রফুল্ল রায়কে বরাবরই চালিত করেছে।  ‘কেয়া পাতার নৌকা’ উপন্যাসটি লেখকের গভীর জীবন অভিজ্ঞতার ফসল।
 ‘কেয়া পাতার নৌকা’ উপন্যাসে লেখক অনেকগুলি চরিত্র অঙ্কন করেছেন। এই চরিত্রগুলি দাঙ্গা বিধ্বস্ত বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের ভয়াবহ পরিণতিকে পাঠকের সামনে তুলে ধরে। ‘কেয়া পাতার নৌকা’ উপন্যাসে বিনু, ঝিনুক, যুগল, লারমোর প্রভৃতি চরিত্র, তাদের ক্রিয়াকলাপ এব তাদের পরিণতি তো দাঙ্গা বিধ্বস্ত বাংলাদেশের মানুষের চরম পরিণতিকেই মনে করিয়ে দেয়। যে বিনু পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে গিয়ে পূর্ববঙ্গের মাটিকে অন্তর দিয়ে ভালো ভেসে ফেলেছিল সেই বিনুকেই বিনা দোষে কেবলমাত্র সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কাণে রাতের অন্ধকারে ব্যথাহত হৃদয়ে পালিয়ে চলে যেতে হল কলকাতায়। সত্যিই এই চিত্র মর্মান্তিক।
‘কেয়া পাতার নৌকা’ উপন্যাসে বহু চরিত্রের মধ্যেও আলাদা করে নজরে পড়ে ঝিনুক। বিনুর পাশাপাশি ঝিনুককে অত্যন্ত মমতা দিয়ে গড়ে তুলেছেন লেখক প্রথম থেকেই। ঝিনুক অভাগী। উপন্যাসের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত প্রায় সবটা জুড়েই তার উপস্থিতি। উপন্যাস শেষ হয়েছে তার পালিয়ে যাওয়ার দৃশ্যের মাধ্যমে। মানব সংসারে এরকম কিছু চরিত্র থাকে, যারা জন্ম থেকেই অভাগী। বিত্তের কারণে নয় সম্পূর্ণ ভাগ্যের দোষে ঝিনুক সেরকমই একটি চরিত্র। হিন্দু মুসলিম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা কীভাবে তার জীবনকে তিলে তিলে শেষ করে দিয়েছে তারই এক অনবদ্য ছবি অঙ্কিত হয়েছে উপন্যাসটিতে। উপন্যাসের শুরুতে হেমনাথের সঙ্গে স্টিমার ঘাটে যখন ঝিনুককে প্রথম দেখা যায় তখন তার বয়স মাত্র আট।
“ছোট মেয়েটির চুল কোঁকড়া। নাকটি একটু বোঁচাই হবে। ফুলো
ফুলো নরম লালচে গাল। রূপোর কাজল লতার মতো চোখের কালো
মণি দু’টো টলটল করেছে। একটু নাড়া দিলেই টুপ করে ঝরে পড়বে। নীল
ফ্রক লাল জুতোয়, মনে হয়, মোমের পুতুলটি”১
এই নিষ্পাপ কোমল পবিত্র ছোট্ট মেয়েটি তখনও জানে না যে কি ভীষণ দুঃখের ইতিহাস রচিত হতে চলেছে তার জীবনে। বাবা-মায়ের দাম্পত্য জীবনের মিলহীনতার খেসারত দিতে হয়েছে এই ছোট্ট মেয়েটিকে। ঝিনুকের মা অন্য কিছুর প্রতি প্রবল আকর্ষণে শুধু স্বামী ভবতোষকে ছেড়ে যায়নি, ছেড়ে চলে গেছে দুধের শিশু ঝিনুককেও। অভিব্যক্তি শুধু চোখে জল এনে দেয় না, হৃদয়কেও ভারাক্রান্ত করে তোলে। এরপর যখন ভবতোষ ও স্নেহলতার কথোপকথন আড়াল থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে শুনে নিয়েছে তখন ঝিনুক সত্যিই জেনে গেছে যে তার মা আর ফিরবে না। তখন ছোট্ট ঝিনুকের কান্না পাঠককেও কান্নায় ভাসিয়ে দেয়।
ঝিনুকের জীবনের দুঃখের অধ্যায় এখানেই শেষ হয়ে যায়নি। ঝিনুক তখনো জানতো না যে কি ভয়ানক দুঃখ তার জন্য অপেক্ষা করে আছ্।ে দেশভাগের পর সারা পূর্ব বাংলা জুড়ে শুরু হওয়া সাম্প্রাদিয়ক দাঙ্গার সময় অসুস্থ মাকে দেখতে ঝিনুক বাবা ভবতোষের সঙ্গে ঢাকায় রওনা দিয়েছে। সেখানে গিয়ে তারা ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক
দাঙ্গার মধ্যে পড়েছে। ভবতোষকে সেখানে খুন হতে হয়েছে। আর তাকে হতে হয়েছে ধর্ষিতা। ধর্ষিতা ঝিনুককে উদ্ধার করে নিয়ে বাড়ী ফিরে এসে হেমনাথ সেই ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা বর্ণনা করেছে স্নেহলতাকে:
“…. এখান থেকে ঢাকা পৌঁছবার পর ভবতোষ দাঙ্গার ভেতর পড়ছিলেন। ঘাতকের দল ভবতোষকে মেরে ফেলেছে। তারপর ঝিনুককে নিয়ে চলে গিয়েছিল। হেমনাথ ঢাকায় গিয়ে পুলিশ দিয়ে ঝিনুককে উদ্ধার করেছেন। কিন্তু ভবতোষের মৃতদেহের সন্ধান পাওয়া যায়নি।
শ^াপদেরা ষোল সতের দিন একটা বাড়িতে ঝিনুককে আটকে রেখেছিল। যে অবস্থার তাকে উদ্ধার করা হয়েছে, তার চাইতে সে যদি মরে যেত!”২
এরপর ঝিনুক প্রায় অপ্রকৃতিস্থ হয়ে যায়। অপ্রকৃতিস্থ ঝিনুককে নিয়ে বিনু পাড়ি দেয় কলকাতায়। বিনুর বিশ^াস ছিল ঘনিষ্ঠজনেরা দুহাত বাড়িয়ে ঝিনুককে বুকে জড়িয়ে নেবে। জীবনের দগদগে ক্ষত স্নিগ্ধ প্রলেপ লাগিয়ে জুড়িয়ে দেবে। যাবতীয় যন্ত্রণা, ভুলিয়ে দেবে সেদিনের যত মর্মান্তিক স্মৃতি। কিন্তু ঝিনুকের অদৃষ্ট তেমন নয়। সেখানে হেমনলিনী মানে তার জামাই বাবু আনন্দের মা তাকে মুখের ওপর স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছে:
“দেখ মা, তোমাকে আমি এমন একটা কথা বলব যাতে দুঃখ পাবে, কিন্তু না বলেও পারছি না। শুনেছি ঢাকায় গিয়ে তুমি রায়টের মধ্যে পড়েছিলে। গুন্ডারা ক’দিন তোমাকে আটকে রেখেছিল। খবরটা শোনার পর খুব কষ্ট হয়েছিল। জানি তোমার কোন অপরাধ নেই, তুমি নির্দোষ। কিন্তু আমি পুরনো দিনের মানুষ। নানা সংস্কারে আটকে আছি। এই বয়েসে সেসব কাটানো সম্ভব নয়। একটু থেমে বললেন, ‘যে ক’দিন আছ, এক তলাতেই থাকবে। দোতলায় আমাদের ঠাকুর ঘর। তুমি ওপরে না উঠলেই ভাল হয়।”৩
এখানেও ধর্ষিত হতে হয়েছে ঝিনুককে। শারীরিকভাবে নয়, মানসিকভাবে। তবু এই জগত সংসারে তার একমাত্র আশ্রয়স্থল ছিল বিনু। বিনুই তাকে শত ঝড় জল আঘাত থেকে রক্ষা করেছে। ঝিনুকের হয়তো ভরসা ছিল বিনুর পিতা অবনীমোহনের প্রতিও। কাশী থেকে ফিরে এসে বিনু ও তাঁর পিতা অবনীমোহনের কথোপকথন জীবনের সবচাইতে কঠিন বাস্তবের সামনে তাকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে:
“তোমার সঙ্গে আমার একটা দরকারী কথা আছে। সেটা তোমাকেই শুধু
বলতে চাই। ঝিনুক, তুমি পাশের ঘরে যাও।
ওখানে খাট বিছানা চেয়ার টেয়ার সবই আছে।
নত মুখে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল ঝিনুক। অবনীমোহন সোজাসুজি ছেলের চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন- ‘ঝিনুকের খবরটা অনেক আগেই আমি পেয়েছি। ভীষণ দুঃখজনক ঘটনা। শুনে খুব কষ্ট হয়েছিল। কিন্তু–’৪ক
অবনীমোহন বলে যেতে লাগলেন: “ঝিনুককে যে পাকিস্তান থেকে আনলে, ওকে নিয়ে কি করবে ভেবেছ? ঠিক এই ধরণের প্রশ্ন সেদিন ঝুমাও করেছিল। বিনুর বুকের ভেতরটা আমূল কেঁপে যায়। সে উত্তর দেয় না।” ৪খ
অবনীমোহন বলে যান: “ কোনও আত্মীয়-স্বজন এমন মেয়েকে শেল্টার দেবে কিনা সন্দেহ। তুমি যদি আলাদা বাড়ি ভাড়া করে ওকে নিজের কাছে রাখতে চাও, হাজারটা প্রশ্ন উঠবে। লোকে জানতে চাইবে মেয়েটা কে। তোমার সঙ্গে তার কি সম্পর্ক। কী জবাব দেবে তখন? শুধু একটা পথ খোলা আছে–’
আবছা গলায় বিনু জিজ্ঞেস করল, ‘কি?’
‘যদি তুমি ওকে বিয়ে কর, সমস্যাটা মিটতে পারে। কিন্তু আত্মীয়রা তোমাদের ত্যাগ করবে। তা ছাড়া, এমন একটা মেয়েকে বিয়ে করার সাহস কি তোমার আছে?”৪গ
পিতার মুখ থেকে এই কথা শুনে মন খারাপ হয়ে গেল বিনুর। অনেক কথাই তখন মনে হল তার। বিষবাষ্পে-ভরা পূর্ব বাংলা থেকে কী নিদারুণ আতঙ্কের মধ্যে ঝিনুককে সীমান্তের এপারে নিয়ে এসেছে, তা শুধু সে-ই জানে। কিন্তু অবনীমোহন তাকে জীবনের সবচেয়ে কঠিন, সবচেয়ে দুরূহ সংকটের সামনে দাঁড় করিয় দিয়েছেন। বিপন্ন, দ্বিধাগ্রস্থ, শ^াসরুদ্ধ বিনু কী জবাব দেবে, ভেবে পেল না। অবনীমোহন বললেন:
“একটা কথা ভেবে দেখতে পার। এ জাতীয় মেয়েদের জন্য গভর্নমেন্টের হোম আছে।
সেখানে আপাতত ঝিনুককে রাখা যেতে পারে।’
বিনু তখন কথা বলার অবস্থায় ছিল না। অবনীমোহন বলে যেতে থাকেন:
‘তুমি ঝিনুকের কাছে যাও।’ এক্ষুনি নয়, সময় নিয়ে বুঝিয়ে-সুজিয়ে ‘হোম’-এর
ব্যাপারটা বোলো।’
শরীর এবং মন কঠিন আঘাতে অসাড় হয়ে গেছে। নিজেকে ধীরে ধীরে টেনে তুলল বিনু। পাশের ঘরে এসে দেখল, সেটা একেবারে ফাঁকা। সে ডাকতে লাগল, ‘ঝিনুক–ঝিনুক–’ সাড়া নেই।
তেতলার অন্য ঘরগুলো আতিপাতি করে খুঁজল বিনু। কোথাও ঝিনুককে পাওয়া গেল না। সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে দোতলায়, তারপর একতলায় নেমে এলো সে। ঝিনুক কোথাও নেই।” ৪ঘ
ঝিনুকের জীবনের এই পরিণতি মেনে নিতে কষ্ট হয়। তার এই পরিণতি কোনমতেই প্রত্যাশিত ছিল না। ঝিনুকের তো কোন দোষ ছিল না। সে তো দাঙ্গাবিধ্বস্ত বাংলাদেশের অস্থির সময়ের শিকার। কোনভাবেই যেন এর থেকে তার নিস্তার নেই। শুধু ঝিনুকই নয় তার মতো হাজার হাজার নারীকে বাংলাদেশের দাঙ্গা বিধ্বস্ত সেই উত্তাল সময়ে এই নারকীয় যন্ত্রণার শিকার হতে হয়েছে। ইতিহাস বইয়ের পাতায় দু একটি শব্দের খোঁচায় হয়তো বা তার ইতিহাস তুলে রাখা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের নারীর জীবনে ঘটে যাওয়া সেই যন্ত্রণাময় ইতিহাস জীবন্ত হয়ে আছে সাহিত্যের পাতায়। যে সমস্ত সাহিত্যিক এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন প্রফুল্ল রায়। তাঁর ‘কেয়া পাতার নৌকা’ উপন্যাসের ঝিনুক দাঙ্গা বিধ্বস্ত বাংলাদেশের হাজার হাজার ত্রস্ত নারীর প্রতিনিধি।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, সাউথইস্ট বিশ^বিদ্যালয়