দামুড়হুদায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ১০ হাজার টাকা জরিমানা

দামুড়হুদা উপজেলার জয়রামপুর শেখপাড়া এলাকায় সার ব্যবস্থাপনা আইন অমান্য করে লাইসেন্সবিহীনভাবে জৈব সার প্যাকেট করার দায়ে মো. আনোয়ারুল নামের এক ব্যক্তিকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

গতকাল বুধবার বিকেল ৫টা ২৫ মিনিটে পরিচালিত এ অভিযানে আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে দোষী সাব্যস্ত করে সার ব্যবস্থাপনা আইন ২০০৬-এর ১২(৩) ধারায় ১০,০০০ টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়।

ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট কে. এইচ. তাসফিকুর রহমান। দোষী আনোয়ারুল জীবননগর উপজেলার উথলী গ্রামের রবিউল হকের ছেলে।

অভিযানে প্রসিকিউটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি অফিসার শারমিন আক্তার। আদালত পরিচালনার সময় দামুড়হুদা মডেল থানার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত থেকে সহযোগিতা করেন।




৪৫তম বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত হলেন মেহেরপুরের ডা. রোমেল হোসেন

৪৫তম বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার কোমরপুর গ্রামের কৃতী সন্তান ডা. রোমেল হোসেন।

শান্ত-নির্মল কোমরপুর গ্রামের মাটিতে জন্ম নেওয়া ডা. রোমেল কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায় ও অদম্য মনোবলের মাধ্যমে ৪৫তম জেনারেল বিসিএস পরীক্ষায় স্বাস্থ্য ক্যাডারে স্থান করে নেন। তিনি উত্তরবঙ্গের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে চিকিৎসাশাস্ত্রে পড়াশোনা সম্পন্ন করেন।

বিপুল প্রতিযোগীর ভিড়ে মেধা ও যোগ্যতার প্রমাণ রেখে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ায় তিনি শুধু পরিবারের নয়, পুরো জেলার গর্বে পরিণত হয়েছেন। তাঁর এই সাফল্য শিক্ষক, অভিভাবক, প্রিয়জন এবং এলাকার মানুষের জন্যও এক গৌরবময় অর্জন।

মানবসেবাকে জীবনের ব্রত হিসেবে গ্রহণ করা ডা. রোমেল ভবিষ্যতে সততা, নিষ্ঠা ও পেশাগত দক্ষতার মাধ্যমে দেশের স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তাঁর পরিবার ও শুভানুধ্যায়ীরা।




আলমডাঙ্গায় খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া মাহফিল

আলমডাঙ্গা উপজেলার জামজামী গ্রামবাসীর উদ্যোগে বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি ও সুস্থতা কামনায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল বুধবার বিকেলে জামজামী গ্রামের বাসিন্দারা ঐক্যবদ্ধভাবে নিজস্ব উদ্যোগে এই দোয়া মাহফিল আয়োজন করেন। অনুষ্ঠানে দেশনেত্রীর দ্রুত আরোগ্য কামনা করে বিশেষ মোনাজাত পরিচালিত হয়।

দোয়া মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন মোহাম্মদ রফি উদ্দিন মেম্বার, মো. রবিউল ইসলাম, মো. আরিফুল ইসলাম আরিফ মেম্বার, হুমায়ুন আলী, ফজলু মেম্বার, মো. আ. আলিম, রুনজান, মানোয়ার আলী, গোলাম কিবরিয়া, আশাবুল আলী, চাদ আলী, আলমগীর মাস্টার, বিশারত আলী, রোকমান আলী, সায়েত আলী, ইদ্রিস আলী, লাল মোহাম্মদ, মিস্টার আলী, রওনক হাসান প্রমুখ।

দোয়া মাহফিলে উপস্থিত সবাই বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় দোয়া ও প্রার্থনা করেন।




মুজিবনগরে জামায়াত প্রার্থী তাজউদ্দিন খানের গণসংযোগ ও পথসভা

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মেহেরপুর-১ আসনে (মেহেরপুর সদর-মুজিবনগর) জামায়াতে ইসলামী মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী তাজউদ্দিন খান দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে ভোট চেয়ে গণসংযোগ করেছেন।

বুধবার (৩ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মুজিবনগর উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের সোনাপুর মাঝপাড়া গ্রামে সাধারণ খেটে-খাওয়া মানুষের মাঝে তিনি দুর্নীতি ও চাঁদাবাজমুক্ত ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের প্রত্যয়ে দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান। একইসঙ্গে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামিকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এনে আগামীর নিরাপদ বাংলাদেশ গঠনে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানান তিনি।

গণসংযোগ শেষে অনুষ্ঠিত পথসভায় বাগোয়ান ইউনিয়নের আমির ফারুক হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন জেলা জামায়াতে ইসলামী আমির তাজউদ্দিন খান। তিনি বলেন, মানুষের কল্যাণে, ন্যায় ও নীতির ভিত্তিতে একটি সুন্দর সমাজ গঠনের জন্য জামায়াতে ইসলামী কাজ করে যাচ্ছে। জনগণের দোয়া ও সহযোগিতা পেলে আমরা উন্নত ও সুশাসনভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলতে সক্ষম হবো।

গণসংযোগে আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা জামায়াতে ইসলামী বায়তুল মাল সেক্রেটারি জারজিস হোসাইন, মুজিবনগর উপজেলা আমির খানজাহান আলী, উপজেলা নায়েবে আমির ফিরাতুল ইসলাম, উপজেলা সেক্রেটারি খাইরুল বাসার, মুজিবনগর উপজেলা পেশাজীবী বিভাগের সেক্রেটারি মোশাররফ হোসেন, উপজেলা বায়তুল মাল সেক্রেটারি আমির হোসেন, উপজেলা শ্রমিক কল্যাণ সভাপতি ফজলুল হক গাজীসহ জামায়াতে ইসলামী নেতাকর্মীরা।




মেহেরপুরের রাজনগরে জলাশয়ে ডুবে তিন বছরের শিশুর মৃত্যু

মেহেরপুর সদর উপজেলার রাজনগর মল্লিকপাড়ায় জলাশয়ের পানিতে ডুবে লাবিব (৩) নামে এক শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাড়ির পার্শ্ববর্তী জলাশয়ে পড়ে গিয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। লাবিব রাজনগর মল্লিকপাড়ার জমিরুল ইসলামের একমাত্র ছেলে।

প্রতিবেশীরা জানান, লাবিবের মা ও দাদী বাড়ির পাশের ফাঁকা জায়গায় ধান উড়াচ্ছিলেন। সে সময় লাবিব পিছনে খেলছিল। হঠাৎ তাদের অগোচরে খেলতে খেলতে সে পাশের জলাশয়ে পড়ে যায়। বিষয়টি তারা টের পাননি।

পরে বেলা ১২টার দিকে পথচারীরা জলাশয়ে লাবিবের নিথর দেহ ভাসতে দেখে চিৎকার করলে পরিবারের লোকজন ছুটে আসে। দ্রুত উদ্ধার করে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে পরিবারের আহাজারিতে এলাকার মানুষও কান্না সংবরণ করতে পারেননি। খবর পেয়ে বারাদী পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ এসআই ফরহাদ ও এএসআই আরুজ আলী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

এসআই ফরহাদ বলেন, এ ঘটনায় মেহেরপুর সদর থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে। আইনগত প্রক্রিয়া শেষে বাদ মাগরিব রাজনগর গ্রাম্য কবরস্থানে লাবিবের দাফন সম্পন্ন হয়।

উল্লেখ্য, গত এক মাসে রাজনগর মল্লিকপাড়ায় পানিতে ডুবে চার কিশোরীসহ মোট পাঁচ শিশুর মৃত্যু হয়েছে।




বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় মুজিবনগরে দোয়া মাহফিল

মুজিবনগরে বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি ও দীর্ঘায়ু কামনা করে দোয়া মাহফিল আয়োজন করেছে মেহেরপুর জেলা যুবদল।

বুধবার মেহেরপুরের মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্সের ভিতরে অবস্থিত পর্যটন মোটেলে মেহেরপুর জেলা যুবদলের আয়োজনে এ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

মেহেরপুর জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল ইসলামের সভাপতিত্বে দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মেহেরপুর জেলা যুবদলের সভাপতি জাহিদুল হক বিশ্বাস জাহিদ।

উপস্থিত ছিলেন জেলা যুবদলের সহসভাপতি বাবু সাবের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রোকন, সাইদুজ্জামান সুজন, মুজিবনগর উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক আবুল হাসান, পৌর যুবদলের আহ্বায়ক সামিউল আলম লিজন, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবু হাসনাত আফরোজ, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আখতারুজ্জামান সাগর, শফিকুল ইসলাম, শাহিনুজ্জামান শাহিনসহমুজিবনগর উপজেলা যুবদলের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মী ও সমর্থকবৃন্দ।




মেহেরপুরে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস পালিত

নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে মেহেরপুরে ৩৪তম আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস এবং ২৭তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে বর্ণাঢ্য র‌্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

বুধবার জেলা প্রশাসন, জেলা সমাজসেবা কার্যালয় ও প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের যৌথ উদ্যোগে দিবসটি উদযাপিত হয়। সকালে বর্ণাঢ্য র‌্যালি শেষে জেলা প্রশাসন চত্বরে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক আশাদুল ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক ড. সৈয়দ এনামুল কবীর। তিনি বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের সাংবিধানিক ও মানবিক দায়িত্ব।

তাদের সমাজের মূলধারায় যুক্ত করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মোহাম্মদ আতিকুল হক, জেলা তথ্য অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন, জেলা প্রতিবন্ধী অফিসার তুলসী কুমার পালসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, সেবা গ্রহণকারী এবং অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন।




অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করা যাবে না

অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করা যাবে না এ কথা জোর দিয়ে বলেছেন কুষ্টিয়া সেক্টর কমান্ডার কর্নেল ইখতিয়ার। তিনি বলেন, সীমান্ত এলাকায় কোনো অপরিচিত মানুষের চলাচল দেখলে সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিজিবি ক্যাম্পে খবর দিতে হবে। ইদানিং সীমান্তে মানবপাচারের প্রবণতা বেড়েছে এবং মাঝে মাঝে সীমান্তে পুশব্যাকের ঘটনাও ঘটছে। এগুলো বন্ধ করতে স্থানীয়দের সচেতনতা ও সহযোগিতা অত্যন্ত প্রয়োজন।

তিনি আরও বলেন, সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে অবৈধ মাদক ও স্বর্ণ চোরাচালান থেকে বিরত থাকতে হবে। বাংলাদেশের কোনো নাগরিক যেন বিএসএফের হাতে প্রাণ না হারায় এটাই আমাদের লক্ষ্য। তাই কোনো অবস্থাতেই সীমান্তের ওপারে যাওয়া যাবে না। জরুরি প্রয়োজন হলে বিজিবিকে জানালে তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। সীমান্তে মাদক, নারী ও শিশু পাচার রোধে স্থানীয়দের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।

চুয়াডাঙ্গা-৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের উদ্যোগে স্থানীয় জনসাধারণকে নিয়ে আয়োজিত এক জনসচেতনতামূলক সভায় এসব কথা বলেন সেক্টর কমান্ডার কর্নেল ইখতিয়ার। আজ বুধবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা সীমান্তবর্তী ঈশ্বরচন্দ্রপুর গ্রামের বড় মসজিদ সংলগ্ন এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা-৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল নাজমুল হাসান ও সরকারি পরিচালক মোহাম্মদ হায়দার আলী।




বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় দামুড়হুদা দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত

দামুড়হুদা দলিল লেখক সমিতির আয়োজনে বিএনপির চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি ও দ্রুত শারীরিক সুস্থতা কামনায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বুধবার সকাল ১১টার দিকে দামুড়হুদা উপজেলা দলিল লেখক সমিতির কার্যালয়ে এ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দামুড়হুদা উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. বজলুর রহমান। দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া একজন আপোষহীন গণতন্ত্রের জননি। তিনি আজ অসুস্থ হয়ে ঢাকার বেসরকারি হাসপাতাল এভার কেয়ারে চিকিৎসাধীন। দেশনেত্রী এমন একজন নেত্রী, যার জন্য দল-মত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই দোয়া করছেন। আমরা সবাই তার অতিদ্রুত সুস্থতা কামনা করি, যেন তিনি দেশের এই সংকটময় সময়ে আবারও জনগণের পাশে দাঁড়াতে পারেন।

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন দামুড়হুদা উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আরিফ, দলিল লেখক সমিতির অর্থ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম, দৈনিক সকালের খোঁজ খবর ও দৈনিক আজকের বসুন্ধরা পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি মো. আসহাবুল আলম, দৈনিক সকালের সময় পত্রিকার দামুড়হুদা উপজেলা প্রতিনিধি মো. সাজিদুর রহমান, দৈনিক সকালের খোঁজ খবর পত্রিকার উপজেলা প্রতিনিধি মো. জহিরুল ইসলামসহ দামুড়হুদা উপজেলার সকল দলিল লেখক ও সহকারী সদস্যবৃন্দ।দোয়া মাহফিল পরিচালনা করেন দামুড়হুদা মডেল থানা মসজিদের ইমাম ও খতিব মো. আব্দুল হামিদ।




অপুষ্টির সমস্যা

বিশ্বব্যাপী ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা সার্বিকভাবে বেড়েছে। বিশ্বে অপুষ্টিতে আক্রান্ত মানুষের অর্ধেকের বেশিই এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের, যা সংখ্যায় প্রায় ৫০ কোটির কাছাকাছি। অপুষ্টি হলো এমন একটি স্বাস্থ্যগত সমস্যা যেখানে শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টির ঘাটতি, আধিক্য বা ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়, যা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। এর প্রধান লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে ওজন হ্রাস, ক্লান্তি, দুর্বলতা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া এবং মনোযোগের অভাব। অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের খর্বতা, কৃশকায়তা এবং বারবার অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি সব সময়ই বেশি থাকে।

পুষ্টি প্রতিটি মানুষের প্রয়োজনীয় শারীরিক বৃদ্ধি, মানসিক বিকাশ ও অটুট স্বাস্থ্যের গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। পুষ্টির অভাবে মাতৃগর্ভে শিশুর কাঙ্খিত বৃদ্ধি ঘটে না, শিশুর জন্ম-ওজন কম হয়। খর্বতা, কৃশতা, কম ওজন ও অনুপুষ্টি-কণা ঘাটতি এসব অপুষ্টিরই পরিণতি। শিশুমৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ অপুষ্টি। অপুষ্টির একটি রূপ পুষ্টিহীনতা, অন্য রূপ স্থূলতা ও পুষ্টিজনিত অসংক্রামক রোগসমূহ। পুষ্টিহীনতা শারীরিক বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশকে ব্যাহত করে। পুষ্টিহীন শিশু বহুবিধ সীমাবদ্ধতা নিয়ে বেড়ে ওঠে, ফলে পরিণত বয়সে তার পক্ষে সমাজ ও জাতির উন্নতিতে যথাযথ অবদান রাখা সম্ভব হয় না।

বাংলাদেশে মোট শিশু কম-বেশি ছয় কোটি। এর মধ্যে প্রতি আটজনে একজন অপুষ্টিতে ভুগছে, যা সংখ্যায় কম-বেশি ৭৫ লাখ এবং মোট জনসংখ্যার প্রায় ১২ দশমিক ৯ শতাংশ । ২০১৯ সালে এ হার ছিল ৯ দশমিক ৮ শতাংশ। শিশুদের মধ্যেই শিশুদের জন্য মানসম্মত ও সমন্বিত স্বাস্থ্যসেবা এবং সম্পূর্ণ নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা এখনো সম্ভব হয়নি। আমাদের দেশে কম-বেশি এক-তৃতীয়াংশ শিশুমৃত্যুর কারণ মারাত্মক অপুষ্টি। ছেলে শিশুর তুলনায় মেয়ে শিশু মৃত্যু বেশি হয় অপুষ্টির কারণে। শহরাঞ্চলে প্রায় ৯০ ভাগ মা শিশুদের বোতলে দুধ খাওয়ায়। মায়েদের প্রায় ৮০ ভাগ আয়রন ও ফলিক অ্যাসিডের অভাবে রক্তশূন্যতায় ভোগে। ভিটামিনের অভাবজনিত শিশুদের রাতকানা রোগ এবং চোখের কর্ণিয়া নরম ও অস্বচ্ছ হয়ে অন্ধত্ব বাংলাদেশে খুব বেশি দেখা যায়। ভিটামিনের-এ-এর অভাবে প্রতিবছর প্রায় ৩০ হাজার শিশু অন্ধ হচ্ছে। বাংলাদেশে শিশুদেরও আয়োডিনের অভাবজনিত বৈকল্য আছে। এ ছাড়া রয়েছে ভিটামিনের-ডি-এর অভাবে রিকেটস। শিশুর খাবারে ভাগ বসানো পেটের কৃমিও অপুষ্টির আরেকটি কারণ। মূলত দারিদ্র্য ও অজ্ঞতাজনিত কুখাদ্যাভ্যাসের দরুন ভিটামিন-সমৃদ্ধ খাবার না খাওয়ায় বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের শিশুদের একটি বড়ো অংশই অপুষ্টিতে আক্রান্ত হয়ে থাকে। জাতিসংঘ ইতোমধ্যে সতর্ক করে দিয়েছে, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো যদি সব ধরনের অপুষ্টির অবসানে এবং ২০৩০ সাল নাগাদ ক্ষুধামুক্ত অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় নিজেদের আবারও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ না করে তাহলে এই অঞ্চলের মানুষ ও অর্থনীতি ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবে।

১৯৯৭ সালে জাতীয় খাদ্য ও পুষ্টিনীতি তৈরি হওয়ার পর গত দুই দশকে বাংলাদেশের পুষ্টি পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। নানা রকম চেষ্টার পরও অনেক ক্ষেত্রে পুষ্টির স্তর কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে উন্নীত হয়নি। মানবিক, সামাজিক ও জাতীয় উন্নয়নের জন্য অপুষ্টি দূর করা জরুরি। দেশব্যাপী শহর ও গ্রামে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষের ওজনাধিক্য, স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, ক্যানসার ও অস্টিওপোরোসিস (নরম হাড়) বর্তমানে পুষ্টিজনিত সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। শারীরিক সক্রিয়তার ঘাটতি, কায়িক শ্রমে অনীহা, ত্রুটিপূর্ণ খাদ্যাভ্যাস এবং অলস জীবনযাপন এর জন্য বহুলাংশে দায়ী।

শৈশবকালীন অপুষ্টির হার বাংলাদেশে হ্রাস পাচ্ছে, তবে হ্রাস পাওয়ার গতি কম। অপুষ্টির সবচেয়ে প্রচলিত রূপ হলো খর্বতা (stunting), যা দীর্ঘকাল অপুষ্টিতে ভোগার পরিণাম। একটি খর্বকায় শিশুর ঘন ঘন সংক্রমণের প্রবণতা দেখা যায় এবং তার মস্তিষ্কের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। বাংলাদেশে অনূর্ধ্ব ৫ বছর বয়সি প্রতি ৫ জন শিশুর মধ্যে ২ জন খর্বকায়। এই হার ধনী জনগোষ্ঠী অপেক্ষা দরিদ্রদের মধ্যে দ্বিগুণ। ২০০৪ থেকে ২০১৪ সাল, এই ১০ বছরে খর্বতা হ্রাসের হার বছরে মাত্র ১.৫ শতাংশ। খর্বতা হ্রাসের হার বছরে ২ বা ৩ শতাংশ হলে তা সন্তোষজনক হতো। কৃশতা (wastin) তীব্র অপুষ্টিরই পরিণাম। গত এক দশকে দেশে কৃশতার হার ধীরগতিতে কমেছে। বাংলাদেশে অনূর্ধ্ব ৫ বছর বয়সি শিশুদের শতকরা ১৪ ভাগ কৃশকায়। কৃশতার ভীতিকর রূপ হলো মারাত্মক তীব্র অপুষ্টি (severe acute malnutrition), যার ব্যাপকতার হার বর্তমানে ৩.১ শতাংশ। অনূর্ধ্ব ৫ বছর বয়সি প্রায় সাড়ে চার লক্ষ শিশু মারাত্মক তীব্র অপুষ্টির শিকার। পাশাপাশি এই অবস্থা নিয়ে যারা বেঁচে আছে তাদের মানসিক বৃদ্ধিও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বয়স ও লিঙ্গ অনুযায়ী স্বাভাবিকের চেয়ে কম ওজনের শারীরিক পরিস্থিতিকে কম-ওজন বলা হয়।

বাংলাদেশে শৈশবকালীন অপুষ্টির মূল কারণ যথাযথভাবে শিশুখাদ্য ও পুষ্টিবিধির চর্চা না করা। শিশুখাদ্য ও পুষ্টিবিধিতে বলা হয় যে, সদ্য নবজাতককে জন্মের ১ ঘণ্টার মধ্যে বুকের দুধ পান করানো শুরু করতে হবে, শিশু পূর্ণ ৬ মাস (১৮০ দিন) পর্যন্ত শুধু বুকের দুধ পান করাতে হবে এবং পূর্ণ ৬ মাস বয়সের পর থেকে ২ বছর বয়স পর্যন্ত বুকের দুধের পাশাপাশি ঘরে তৈরি পুষ্টিকর বাড়তি খাবার খাওয়াতে হবে। বাংলাদেশে ৬ মাসের কম বয়সি শিশুদের শুধু বুকের দুধ পান করানোর হার ৫৫ শতাংশ। ৬ মাস থেকে পূর্ণ ২৩ মাস বয়সি ২৩ শতাংশ শিশুকে ন্যূনতম গ্রহণযোগ্য খাদ্য (minimum acceptable diet) খাওয়ানো হয়। বাংলাদেশের বয়ঃসন্ধিকালীন মেয়েদের এক-চতুর্থাংশ অপুষ্টির শিকার। প্রজননক্ষম বয়সের প্রতি ৮ জন নারীর এক জন খর্বকায়। খর্বকায় নারীর সন্তান জন্মদানের সময় জটিলতার ঝুঁকি থাকে। একই কারণে তাদের গর্ভের শিশুর বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়ার ঝুঁকি অনেক গুণ বেশি থাকে, ফলে নবজাতকের কম জন্ম ওজনের আশঙ্কাও বৃদ্ধি পায়। বাল্যবিবাহ এবং অল্প বয়সে গর্ভধারণ এতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশে কম জন্ম ওজনের শিশুর হার অনেক বেশি। একজন খর্বকায় মায়ের কম জন্মওজনের শিশু জন্ম দেওয়ার আশঙ্কা সব সময় থাকে, আবার শিশুটি বয়স্ক হওয়ার পরও খর্বতা কাটিয়ে উঠতে পারে না। এভাবে খর্বতা প্রজন্ম থেকে পরবর্তী প্রজন্মে গিয়ে পৌঁছায় এবং এটি অপুষ্টির একটি দুষ্টচক্র। গ্রাম ও শহরের অপুষ্টি পরিস্থিতিতে পার্থক্য রয়েছে, বিশেষত শহরাঞ্চলের বস্তিতে বসবাসকারী নারী ও শিশুরা তুলনামূলকভাবে খারাপ অবস্থায় আছে। জনগণের বিশেষত নারীদের মধ্যে ওজনাধিক্য (overweight) এবং স্থূলতার (obesity)হার ক্রমবর্ধমান। ওজনাধিক্য ও স্থূলতার ফলে দেশে অপুষ্টিজনিত দীর্ঘমেয়াদি ব্যাধি যেমন: টাইপ-২ ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের প্রকোপ বাড়ছে। ওজনাধিক্য এখন দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে। শহরের বস্তি এলাকায় বসবাসকারী মানুষের মধ্যে এই সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

অপুষ্টি একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা, বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ মানুষ অপুষ্টিতে ভুগছে। অপপুষ্টির কারণে কোষকলা, পেশি, দেহাঙ্গ গঠন ও কর্মক্ষমতা পালটে যায়। অপুষ্টি হলো খাদ্যের গুণগত ও পরিমাণগত ভারসাম্যহীনতার ফলে সৃষ্ট নেতিবাচক পরিস্থিতি। এই সমস্যাটি কার্যকরভাবে মোকাবিলা করার জন্য অপুষ্টির লক্ষণগুলি শনাক্ত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অপপুষ্টির কারণে সাধারণত মানুষের ওজন হ্রাস পায়, পেশি শুকিয়ে কঙ্কালসার হয়ে পড়ে। যখন শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাব হয়, তখন পেশি এবং চর্বি ভেঙে যেতে শুরু করে, যার ফলে ওজন উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। শরীর সবসময় ক্লান্তি ও দুর্বলতা অনুভূত হয়। ফলে শরীর দৈনন্দিন কাজ করতে সমস্যা করে। অপুষ্টির আরেকটি সাধারণ লক্ষণ হলো যে কোনো ক্ষত নিরাময়ে দীর্ঘ সময় লাগে। অপর্যাপ্ত পুষ্টি শরীরের ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যু মেরামত করার ক্ষমতাকে ব্যাহত করে, ফলে ক্ষত নিরাময়ে বেশি সময় লাগে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সংক্রামিতও হয়। এছাড়াও ত্বক শুষ্ক ও ঢিলে হয়ে যাওয়া, দাঁতের ক্ষয়, পেশিতে টান পড়া ও পেট ফোলার মতো উপসর্গ দেখা দেয়। শুষ্ক এবং ভঙ্গুর চুল, ফ্যাকাশে বা হলুদ ত্বকের রঙ এবং ভঙ্গুর নখ – এই সমস্ত লক্ষণগুলির মূল কারণ হলো শরীর পর্যাপ্ত পুষ্টি পায় না। তবে সবার ক্ষেত্রে সবগুলো উপসর্গ একই সঙ্গে এবং একই মাত্রায় দেখা যায় না।

অপুষ্টিকে কার্যকরভাবে মোকাবিলা করার এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য ও সুস্থতার উন্নতির জন্য প্রথমত সবাইকে সচেতন হতে হবে। কী কারণে মানুষ অপুষ্টিতে ভোগে এবং অপুষ্টির কারণে মানুষের কী কী সমস্যা হয় এসব বিষয়ে জানতে হবে। এর পরবর্তী পদক্ষেপ হলো সমাজ থেকে অপুষ্টিকে নির্মূল করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। চিকিৎসা সহায়তা নেওয়াসহ সুষম খাদ্য গ্রহণ করার মাধ্যমেও অপুষ্টিকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব । তবে এক্ষেত্রে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই।
লেখক: জনসংযোগ কর্মকর্তা, খাদ্য মন্ত্রণালয়