ঐতিহ্যবাহী দর্শনা: নিভে আসছে আলো”

দশর্না একটি নাম। যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে ইতিহাস, সংস্কৃতি, শিল্প ও বাণিজ্যের দীর্ঘ ঐতিহ্য। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১২.৫০ বর্গ কিলোমিটারের এই ছোট্ট শহরটি এক সময় ছিল গৌরবের প্রতীক। সীমান্তবর্তী এই নগরী থেকেই ১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর বর্তমান ভারতের রানাঘাট থেকে দর্শনা হয়ে কুষ্টিয়ার জগতি পর্যন্ত রেলপথের আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রেন চলাচলের মাধ্যমে রেল পরিষেবার সূচনা ঘটে আজকের বাংলাদেশ ভূখণ্ডে।

বাংলাদেশের প্রথম রেলপথ, ‘দর্শনা’ নামে একটি নগরীর পত্তন। ইতিহাসের পাতা থেকে পাওয়া যায় দর্শনা নামটি ১৮০০ সালের কিছু আগে থেকেই প্রচলিত। ১৭৮৭ সালের ২১ মে মার্চ নদীয়া জেলা গঠিত হয়, তখনও এই স্থানটির নাম দর্শনা ছিল। রেনল্ড গেজেট থেকেও জানা যায় ১৮০০ সালের গোড়ার দিকেও এই অঞ্চলের নাম ছিল দর্শনা। সেইটা কিন্তু আমার এখন যে দর্শনার কথা বলি, সেইটা না! এখন বহুল প্রচলিত দর্শনার পাশেই ‘কোটালি দর্শনা’ নামের একটি গ্রামের নামের খন্ডাংশ থেকে পাওয়া বর্তমান ‘দর্শনা’। সবচে প্রচলিত এবং আলোচিত যা পাওয়া ইতিহাস,- কোটালি দর্শনার একজন ইঞ্জিনিয়ার রানাঘাট থেকে জগতি পর্যন্ত চলাচলের জন্য নির্মিত রেলপথের দায়িত্ব পাওয়া একজন মানুষের কৃতিত্ব। সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ‘বাংলার ইতিহাস’ বই থেকে পাওয়া যায়, ‘রামনগর থেকে ভবানীপুর (ঈশ্বরচন্দ্রপুরের পুরাতন নাম) গ্রামের বুক চিরে পদ্মা নদীর শাখা মাথাভাঙ্গা নদীর পাশ দিয়ে বাষ্পশকট চলাচলের লৌহ নির্মিত পথ নির্মাণের মহাযজ্ঞ চলিতেছে’। তখনও আমাদের এ দর্শনা পায়নি। শোনা যায় কোটালি দর্শনার শ্রদ্ধেয় সেই ইঞ্জিনিয়ার মানুষটির মেধা আর বর্তমান ভারত থেকে আসা হাজার হাজার বিহারি সম্প্রদায়ের মানুষের শ্রম-ঘামের বিনিময়ে নির্মিত হিন্দু জমিদার এস্টেটের ভূমির ওপর মাথাভাঙ্গা নদীর কাটা খালের মুখের জায়গাটা কোটালী দর্শনার মানুষটির দেয়া নামের পত্তন হলো “দর্শনা” নামের এক নগর সভ্যতার। দর্শনা তখন থেকেই  শুরু এ অঞ্চলের মানচিত্রের যোগাযোগ, সংস্কৃতি ও উন্নয়নের এক প্রাণকেন্দ্র।

১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বরের নির্মিত সেই দর্শনার কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আজ আলোর প্রদীপটি ধীরে ধীরে নিভে যাচ্ছে। শহরের প্রাণবন্ততা কমে এসেছে, পুরনো ঐতিহ্যের জায়গায় এসেছে অব্যবস্থাপনা, উদাসীনতা আর অবক্ষয়। জন কেরু নামের ব্রিটিশ সাহেবের ১৯৩৮ সালে কেরু এন্ড কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত  চিনিকলের হুইসেল বাজত, সেখানে এখন নীরবতা। রেলস্টেশনের কোলাহল ম্লান হয়ে গেছে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর ১৯৫২ সালে ১৩.৬৬ একর জমিতে তৎকালীন কাস্টমস ও এক্সাইজ কালেকটরেট খুলনার অধীনে প্রতিষ্ঠিত দর্শনা কাস্টমস কলোনি। এক এলাহি ব্যাপার! রেল-কেরু-কাস্টমস, সব মিলিয়ে ২৪ ঘন্টায় কমপক্ষে ২০ হাজার কর্মজীবী মানুষ ছুটে চলা, আনন্দ-উৎসব।

সে শহরের দোকানপাটে আগের মতো বেচাকেনা নেই। শহরের প্রান্তে দারিদ্র্য আর বেকারত্বের ছায়া ঘন হয়ে উঠেছে।

দর্শনার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যও আজ ক্ষয়ে যাচ্ছে। একসময় এখানে নাট্যচর্চা, সাহিত্যসভা, সংগীত-আড্ডা—সব ছিল প্রাণবন্ত। আজ সেসব উদ্যোগ নেই বললেই চলে। তরুণ প্রজন্মের অনেকেই শহরের ইতিহাস জানে না; তারা অন্য শহরের চাকরির টানে বা জীবিকার প্রয়োজনে চলে যাচ্ছে দূরে। ফলে দর্শনার মাটিতে যেই আলোর রেখা একদিন গর্বের সঙ্গে জ্বলেছিল, আজ তা নিভু নিভু।

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তবর্তী শহর দর্শনা ইতিহাস, ঐতিহ্য ও অর্থনৈতিক গুরুত্বে এক সময় ছিল গৌরবময় নাম। এটি কেবল একটি সীমান্তনগরী নয়, বরং বাংলাদেশের প্রথম রেলস্টেশন এবং প্রথম চিনিকল। এই শহর দেশের প্রাচীন শিল্পবাণিজ্য, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিকাশের সাক্ষী। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় দর্শনা তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। রাজনৈতিক নেতৃত্বের লালসা, অর্থনৈতিক অনিয়ম, সামাজিক অবক্ষয় ও সাংস্কৃতিক বিভাজন আজ শহরটিকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

রাজনৈতিক নেতৃত্বের লালসা-নৈতিক অবক্ষয় : 

দর্শনার রাজনৈতিক ইতিহাস ছিল একসময় সংগ্রামী ও আদর্শনিষ্ঠ। যখন জন কেরু সাহেব চিনিকলের আখ চাষের জন্যে আশ-পাশের জমিগুলো দখল নিয়ে ফার্ম তৈরী শুরু করে তখন উপমহাদেশের প্রখ্যাত কমিউনিস্ট নেতা মুজাফফর আহমদ এসে এ অঞ্চলের চাষিদের সংগঠিত করতে জনসভা করেছিলো আজকের বাজার মসজিদ সংলগ্ন বলখেলার ফিল্ডে। ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধকালীন আন্তর্জাতিক যোগাযোগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিলো।  মুক্তিযুদ্ধ-পূর্ববতী সময়ে এখানকার নেতৃত্ব জনকল্যাণ, অবকাঠামো, শিক্ষা ও শিল্পোন্নয়নকে কেন্দ্র করে কাজ করেছিল। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী, বিশেষত ১৯৯১ সালের পর থেকে বর্তমানে সেই নেতৃত্ব পরিণত হয়েছে ক্ষমতার প্রতিযোগিতা ও ব্যক্তিস্বার্থে নিমজ্জিত এক গোষ্ঠীতে। দলীয় রাজনীতির প্রভাবে স্থানীয় প্রশাসন, শিল্প প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সাংস্কৃতিক সংগঠন পর্যন্ত—সব ক্ষেত্রেই ছড়িয়ে পড়েছে পক্ষপাতিত্ব ও দখলদারিত্ব। প্রকৃত জননেতৃত্ব আজ হারিয়ে গেছে দলীয় ‘কর্মী’ ও ব্যবসায়িক সিন্ডিকেটের হাতে। ফলে দর্শনার উন্নয়ন এখন কেবল বক্তৃতা বা ব্যানারে সীমাবদ্ধ, বাস্তবে নয়।

অর্থনৈতিক কাঠামোর ভাঙন; ঐতিহ্যের পতন : 

দর্শনার অর্থনীতি একসময় দাঁড়িয়ে ছিল তিনটি স্তম্ভের ওপর—রেলপথ, কেরু অ্যান্ড কোম্পানি এবং সীমান্ত বাণিজ্য।

রেলপথ: ব্রিটিশ আমলে দর্শনা থেকে যে রেল সংযোগ গড়ে ওঠে। এটি ছিল দেশের শিল্পবাণিজ্যের মূলধারা কিন্তু বর্তমানে সেই ঐতিহাসিক রেলপথ অবহেলা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে আর লুটপাটে প্রায় অচল। একইভাবে পাকিস্তান পর্বে নির্মিত খুলনা-দর্শনা সংযোগকারী রেলপথ ‘হল্ট ষ্টেশন’ আধুনিকীকরণ তো দূরের কথা, ন্যূনতম পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাও অনুপস্থিত।

কেরু অ্যান্ড কোম্পানি : ১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই চিনিকলটি দেশের প্রথম শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর একটি। একসময় হাজারো শ্রমিকের জীবিকার উৎস ছিল এটি কিন্তু আজ সেটি দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা, দলীয় প্রভাব ও অবকাঠামোগত দুর্বলতার কারণে টিকে থাকার লড়াই করছে। নিয়মিত উৎপাদন বন্ধ, শ্রমিক অসন্তোষ ও আর্থিক সংকট এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে।

কাস্টমস হাউস ও সীমান্ত বাণিজ্য: দর্শনা সীমান্ত বাংলাদেশের অন্যতম ব্যস্ততম স্থলবন্দর। কিন্তু বাণিজ্যের বড় অংশ এখন চলে যায় প্রভাবশালী গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে। সাধারণ ব্যবসায়ী ও স্থানীয় জনগণ বঞ্চিত হয় সুযোগ থেকে। রাজনীতি ও অর্থনীতির অদ্ভুত মিশ্রণ তৈরি করেছে এক ধরনের দখলদার অর্থনীতি, যা উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে।

সামাজিক নেতৃত্বের বিভাজন ও গোষ্ঠীবাদ :

দর্শনার সমাজ একসময় ছিল ঐক্যবদ্ধ ও সহানুভূতিশীল। এখন সেই সমাজ বিভক্ত। সমাজসেবামূলক সংগঠনগুলোতেও দলে-দলে ভাগাভাগি, নেতৃত্ব নিয়ে টানাপোড়েন। কিছু ‘ছদ্মনেতা’ নিজেদের প্রভাব বজায় রাখতে সামাজিক কাজকে ব্যক্তিগত প্রচারের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করছে। ফলে সমাজে নৈতিকতা ও দায়বদ্ধতার পরিবর্তে বেড়েছে হিংসা, বিভাজন ও অবিশ্বাস।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবনতি ও নীতিহীনতা : 

দর্শনার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেমন— ১৯১৬ সালে মেমনগর বিপ্রদাস উচ্চ বিদ্যালয়, ১৯৬২ সালে দর্শনা বালিকা বিদ্যালয়, ১৯৬৭ সালে কেরু উচ্চ বিদ্যালয়, ১৯৬২ সালে দর্শনা ডিএস মাদ্রাসা, ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত দর্শনা কলেজ ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একসময় ছিল উচ্চমানের শিক্ষা ও চরিত্র গঠনের কেন্দ্র। আজ সেই প্রতিষ্ঠানগুলো রাজনৈতিক প্রভাব, শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম, এবং ছাত্র সংগঠনের দলীয়করণের কারণে মানহীন হয়ে পড়েছে। শিক্ষা এখন আর মেধা বিকাশের মাধ্যম নয়, বরং ক্ষমতার সোপান। তরুণ প্রজন্ম তাদের নৈতিক ভিত্তি হারাচ্ছে, যা ভবিষ্যতের জন্য বিপদজনক সংকেত।

সাংস্কৃতিক সংগঠনের দলাদলি ও অবক্ষয় :

দর্শনার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য একসময় ছিল উজ্জ্বল। নাটক, সংগীত, সাহিত্যচর্চা, নাট্যদল ও পাঠচক্র—এসব ছিল শহরের প্রাণ। এখন সেই সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো দলীয় দ্বন্দ্বে ভুগছে। পাকিস্তান পর্বেও সারাবছর পালাগান-জারিগান, যাত্রা-সার্কাস, কাওয়ালী, গণসঙ্গীতের সুরে মাতোয়ারা থাকতো এ মশহুর শহর।

স্বাধীনতা পরবর্তী স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের জ্বালানি হিসেবে ১৯৮৩ সালে সৃষ্টি অনির্বাণ সাংস্কৃতিক সংগঠন, ১৯৮৬ সালে সাম্প্রতিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের গণ নাটকের মাধ্যমে সারাদেশে দর্শনাকে এক আইকনিক মাত্রায় দাঁড় করাই সেইসময়ের বিপ্লবীরা । যদিও তারও আগে ১৯৬২ সালেই যে আগুনের সূচনা করেছিলো হিন্দোল সঙ্গীত পরিষদ এবং সীমান্ত সংসদ।

আজ সেখানে সংগঠনগুলোর অন্ত:দ্বন্দ্ব, একটি সংগঠন অন্যটির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে ব্যস্ত, আর প্রকৃত শিল্পীরা হয়ে পড়ছে উপেক্ষিত। সংস্কৃতি এখন আর আত্মার প্রতিফলন নয়, বরং রাজনৈতিক পরিচয়ের প্রতীক। এখন এক পীর সাহেবের বিষ-নিশ্বাসে আর তার ভাই-ভাগ্নেদের পারিবারিক তালুকদারীতে; পীরের কতিপয় পাছা-চাটা মুরিদের সেরেস্তাদারীতে ঢাকের কাঠি নড়ে।

এর ফলে দর্শনার সৃজনশীল মনন ভেঙে পড়েছে, এবং তরুণ প্রজন্ম দূরে সরে যাচ্ছে শিল্প-সংস্কৃতি থেকে।

স্বাস্থ্যসেবা হয়েছে দানবদের কারখানা :

৫০ হাজার জনসংখ্যার এ নগরে নূন্যতম উপযুক্ত স্বাস্থ্যসেবার সুবিধা নেই। জরুরী চিকিৎসা পাওয়ার কোন অধিকার নেই দর্শনার মানুষের। প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোতে জরুরী সেবা দেবে না। রাত ৯ টার পরে ডাক্তার সাহেবকে পাবেন না। ফোনও বন্ধ। শুধু রাত ৩ টায় ডাক্তার সাহেবকে যদি বলেন, সিজার করতে হবে বা এপেন্ডিস কাটতে। পেয়ে যাবেন! কেরু হাসপাতালে সব সুবিধা পাওয়া যেতো। কিন্তু যে নেতৃত্ব ছড়ি ঘোরাতে তাদের নজর, এটা বন্ধ করে দাও! সিন্ডিকেট বানাও! জনকল্যাণমুখী প্রাইভেট হাসপাতাল বানাও। রাস্তার দু’পাশে যে ডাক্তার…. সাইনবোর্ড লাগিয়ে বসে আছে, খোঁজ নিয়ে দেখে তো কতজনের সত্যিকার ডাক্তারী সার্টিফিকেট আছে –

ভরসা ফার্মেসীগুলো।

ঐতিহ্যবাহী দর্শনার ঐতিহ্য ধ্বংসের কারিগর :

দর্শনা সব মিলিয়ে ছিল এক প্রগতিশীল নগরচেতনার প্রতীক। কিন্তু সময়ের স্রোতে আজ সেই দর্শনা এক মৃত ইতিহাসের পৃষ্ঠা মাত্র। আর এই মৃত্যুর মূল কারিগর কোনো বহিরাগত শক্তি নয়—বরং শহরের ভেতরেই জন্ম নেওয়া কেরানী শ্রেনী মানসিকতার মতলববাজ-বাকোয়াজবাজ এলিট সম্প্রদায়। এই শ্রেণিটি হলো দর্শনার সামাজিক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক পরজীবী। এরা রাষ্ট্রীয় বা প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতার নিচু স্তরে থেকে ধীরে ধীরে উপরে উঠেছে, কিন্তু চিন্তা-চেতনায় থেকে গেছে নীচেই। এদের কাছে প্রশাসন মানে সুযোগ, নেতৃত্ব মানে প্রভাব, উন্নয়ন মানে নিজের স্বার্থ রক্ষা। এই কেরানী মানসিকতাই দর্শনার ঐতিহ্যবাহী কাঠামোকে ভিতর থেকে খেয়ে ফেলেছে—যেভাবে ঘুনপোকা কাঠকে খায়, কিন্তু বাইরে থেকে সব ঠিকই দেখা যায়।

এই এলিট সম্প্রদায়,— বাকোয়াজবাজ ও বুদ্ধিজীবক, পাকা অভিনেতা । এরা সভা করে, আলোচনা করে, ব্যানার টাঙ্গায়, পত্রিকায় ছবি ছাপে কিন্তু কাজের নামে করে কেবল প্রহসন। তারা উন্নয়ন শব্দটাকে ব্যবহার করে নিজেদের অর্থনৈতিক স্বার্থের ঢাল হিসেবে আর ঐতিহ্যের কথা বলে পুরনো স্থাপনা ও জনসম্পদ বেচে দেয় ব্যক্তিগত কমিশনের বিনিময়ে। ফলে দর্শনার সাংস্কৃতিক ও প্রশাসনিক ঐতিহ্য ধীরে ধীরে পরিণত হয়েছে “নথির কবরস্থানে”।

রাজনৈতিক দিক থেকেও এই শ্রেণি ভয়ঙ্কর। তারা কোনো দল বা মত নয়—বরং ক্ষমতার প্রতি আনুগত্যই তাদের একমাত্র আদর্শ। সরকার বদলায়, রঙ বদলায় কিন্তু এদের মুখের হাসি বদলায় না। কারণ এরা জানে,- যে-ই আসুক, তাদের প্রয়োজন এই ‘অফিস-স্মার্ট’ কেরানী শ্রেণির। ফলে দর্শনার রাজনীতি বা সমাজ কিংবা সংস্কৃতি এখন আর নীতির নয়—এখন তা নেটওয়ার্ক, কমিশন, আর আত্মস্বার্থের সমীকরণ। সামাজিক দিকেও তাদের প্রভাব গভীর। এই শ্রেণি দর্শনার তরুণ প্রজন্মকে শিক্ষা দিয়েছে কীভাবে আদর্শ নয়, পরিচয়ই জীবনযাত্রার মূলধন। তারা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানকে পরিণত করেছে তোষামোদের উৎসবে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বানিয়েছে পদোন্নতির সিঁড়িতে।

কত তার বাহারি নাম- নাগরিক কমিটি, বাস্তবায়ন কমিটি, আন্দোলন, ঐক্য, জইন্ন্যে আমরা আর একটা শ্রেনী আছে!

যারা দর্শনার মানুষ বলে রাজধানীর বুকে বছর বছর মিলনমেলায় হাজির হয়ে ডায়াসে দাঁড়িয়ে কিংবা কফির কাপ হাতে এসে বলে, …. কেমুন আছো–, এখন কি করচ্ছো— আচ্ছা, আপনার তো সরকারের বড়-বড় আমলা ছিলেন। তাই না?

কেউ সচিব, কেউ মহাপরিচালক, কেউ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, কেউ চীফ কনসালটেন্ট আরো, আরো, আরো…….। আপনারা তো ইচ্ছে করলেই দর্শনা অঞ্চলের আপনার অধীনস্ত দফতরেই বা আপনার লিংকের একটা একটা সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি দিতে পারতেন এ শহরের একজনকে । ১৯৯০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত আপনারা যতজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন তারা যদি আজ প্রতিটা ঘরে একজন করে অন্তত সরকারী চাকুরীর বন্দোবস্ত করে দিতেন তাহলেও দর্শনার বর্তমান ৫০ হাজার জনসংখ্যার শহরে ৫ হাজার সরকারি চাকুরে থাকতো। টাকা নিয়েই দিতেন! এইটা তো এখন সিস্টেম। ইচ্ছে করলেই আমি বা আপনি যেতে পারবো না। কিন্ত আপনি দেননি, করেননি। আবার আপনি যে খুবই সৎ মানুষ তাও না। টাকা আপনি নিয়েছে। চাকরিও দিয়েছেন। সেইটা কই?  শশুড়বাড়ী এলাকায় কিংবা অন্য এলাকায়।

দর্শনা হারিয়েছে তার মূল্যবোধ, আত্মসম্মান ও নাগরিক ঐক্যের চেতনা। তবু আশার জায়গা আছে। যে সমাজে ধ্বংসের চোরাগোপ্তা শক্তি প্রবেশ করে, সেই সমাজের অন্তঃস্থলে একদিন প্রতিরোধের আগুনও জ্বলে ওঠে। দর্শনার ঐতিহ্য একদিন হয়তো পুনর্জন্ম নেবে—যেদিন এই কেরানী মানসিকতার মতলববাজ ও বাকোয়াজবাজ এলিট সম্প্রদায়ের মুখোশ খুলে যাবে, সেদিন দর্শনা আবার হবে প্রগতির প্রতীক, মানুষের শহর।

আর কিছু আশা করার নেই পুরোনোদের কাছ থেকে :

যারা দশকের পর দশক এই শহরকে শাসন করেছে, তারা আজও নিজেদের ভুল স্বীকার করতে পারে না।

তারা এখনো “আমি করব”, “আমরা উন্নয়ন এনেছি” বলে প্রচারণা চালায়—কিন্তু বাস্তবতায় দর্শনা প্রতিদিন আরও পেছনে পড়ে যায়। তাদের কাছ থেকে এখন আর কিছুই আশা করার নেই। কারণ তারা শহর নয়, নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়েছে; মানুষ নয়, নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করেছে।

কিছুদিন আগে এ জেলার একজন শীর্ষস্থানীয় নেতার সাথে গল্প করতে করতে তিনি দারুণ কথা বলল,’তোমরা গত ১৫/১৬ বছরে দর্শনার বাইরের মানুষদের কখনো মানুষ হিসেবেই গণ্য করোনি। এমপি তোমাদের, জেলা পরিষদ তোমাদের, উপজেলা তোমাদের, সেক্রেটারী তোমাদের, প্রেসিডেন্ট তোমাদের… সবই তোমরা। মিছিল করার, মিটিং করার, মহড়া করার সময় আমরা। আমাদের প্রয়োজন গেলে সারারাত বসিয়ে রেখে রাত ৪ টায় দেখা দিয়ে কও তাড়াতাড়ি বল…ঘুমাবো..।

এবার দেখবো তোমরা কি করো!

হয় জীবননগরে ফেলা হবে।

না হয় আন্দুলবাড়িয়া!

একদম শূন্য করে দেয়া হবে।

দর্শনার বর্তমান সংকটের সবচেয়ে ভয়াবহ দিক হলো—নেতৃত্বের প্রতি জনগণের আস্থার মৃত্যু।

পরিবর্তনের দায়িত্ব তরুণদের হাতে:

এখন যদি কিছু করার সুযোগ থেকে থাকে, তবে সেটি তরুণদের হাতে। যাদের বয়স এখন সর্বোচ্চ  সর্বোচ্চ ৪০ বছর, যাদের মনে এখনো আদর্শের আগুন, সৎ থাকার সাহস এবং নতুন করে ভাবার শক্তি আছে—তাদেরই নিতে হবে দায়িত্ব। তরুণরা যদি রাজনীতিকে ব্যবসা না বানিয়ে জনসেবার মঞ্চ বানায়, যদি সমাজের ভাঙা বন্ধন জোড়া লাগায়, যদি শিক্ষায় নৈতিকতা ফিরিয়ে আনে, আর সংস্কৃতিতে সত্য ও মানবতার চর্চা করে—তবেই দর্শনা আবার জেগে উঠতে পারে।

এই প্রজন্মের তরুণদের দরকার “আমি পারব” নয়, বরং “আমরা পরিবর্তন আনব”—এই বিশ্বাস।

দর্শনার আলো আবার জ্বলবে তখনই, যখন তরুণরা পুরোনো মুখগুলোর তোষামোদি রাজনীতি ভেঙে নিজেদের সততা ও দক্ষতার মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব গড়ে তুলবে।

পুরোনোরা হারিয়েছে, নতুনরা সেটা ফিরে পেতে পারে :

দর্শনার অতীত গৌরবকে হারিয়েছে একদল আত্মস্বার্থপর নেতৃত্ব। তাদের হাতে রাজনীতি হয়েছে নাটক, অর্থনীতি হয়েছে ব্যবসা, সংস্কৃতি হয়েছে প্রদর্শনী, শিক্ষা হয়েছে কারচুপি, আর স্বাস্থ্যসেবা হয়েছে দানবদের কারখানা।

কিন্তু আশার কথা—দর্শনার মাটি এখনও উর্বর, তরুণদের হৃদয় এখনও সৎ। যদি তারা চায়, তবে তারা পারবে—এই শহরকে আবার নতুন করে গড়ে তুলতে, সততা, সৃজনশীলতা ও সম্মিলিত নেতৃত্বের আলোয়। কারণ ইতিহাসের সব বড় পরিবর্তনই শুরু হয়েছে তরুণদের হাত ধরে। দর্শনাও তার ব্যতিক্রম নয়।

দর্শনার ভবিষ্যৎ এখন তরুণদের হাতে—যারা এখনো বিশ্বাস করে যে পরিবর্তন সম্ভব, যদি কেউ সত্যিই চায়।

দর্শনা একসময় ছিল দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আলোকবর্তিকা। আজ সেই আলো নিভে আসছে—নেতৃত্বের লোভ, অব্যবস্থাপনা ও মূল্যবোধের সংকটে। তবে পুনর্জাগরণের সম্ভাবনা এখনও রয়েছে। যদি স্থানীয় জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়, যদি তরুণ

প্রজন্ম ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতি সচেতন হয়, এবং যদি সত্যিকারের নৈতিক নেতৃত্ব সামনে আসে—তবে দর্শনা আবারও জেগে উঠতে পারে নতুন আলোয়।

ঐতিহ্য হারিয়ে গেলে একটি শহর কেবল ভূগোল হয়ে থাকে; কিন্তু ঐতিহ্য ফিরে এলে সেটি হয়ে ওঠে ইতিহাসের প্রতিধ্বনি।

লেখক: আব্দুস সামাদ আজাদ বিপু

নিউজ এজেন্সি




আলমডাঙ্গা বাদেমাজু বাদল স্মৃতি একাডেমির ১৬ জন শিক্ষককের বিদায় সংবর্ধনা

আলমডাঙ্গা বাদেমাজু বাদল স্মৃতি একাডেমির অবসরপ্রাপ্ত ১৬ জন শিক্ষকের বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আলমডাঙ্গা বাদেমাজু বাদল স্মৃতি একাডেমির ১৯৯৭ সালের এসএসসি ব্যাচের আয়োজনে অবসরপ্রাপ্ত ১৬ জন শিক্ষককে বিদায় সম্মাননা দেয়া হয়েছে। গতকাল বেলা এগারোটার দিকে বাদল স্মৃতি একাডেমির মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সংবর্ধনা সভায় সভাপতিত্ব করেন, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শেখ নূর মোহাম্মদ টিপু।

প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, আলমডাঙ্গা রূপালী ব্যাংকের ম্যানেজার মোঃ আব্দুল খালেক। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, আলমডাঙ্গা মহিলা ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক শফিউল আলম বকুল, বাদেমাজু বাদল স্মৃতি একাডেমি প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম দিপু, এম এস জোহা ডিগ্রী কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডঃ আব্দুর রহমান, ডাউকি ইউনিয়ন জামায়াতের আমির সজিবুর রহমান। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন, সহকারী শিক্ষক রোকনুজ্জামান।

অনুষ্ঠান শেষে বিদ্যালয় এসএসসি ৯৭ ব্যাচের পক্ষ থেকে বিদায়ী ১৬ শিক্ষকদের হাতে সংবর্ধনা ক্রেস্ট এবং বিভিন্ন উপহার সামগ্রী তুলে দেয়া হয়।




মুজিবনগরে ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত এতিম শিশুকে জেলা ছাত্রদলের অনুদান প্রদান

মুজিবনগরে ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত এতিম শিশুর চিকিৎসার জন্য অনুদান প্রদান করলো মেহেরপুর জেলা ছাত্রদল।

মুজিবনগর উপজেলার, বাগোয়ান গ্রামের  মৃতঃ আব্দুল কাদের এর ১৫ বছর বয়সী ছেলে বিপ্লব মীর দীর্ঘদিন ব্রেন টিউমার আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। টাকার অভাবে ঠিকমতো চিকিৎসা করতে পারছেনা তার পরিবার। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন সহ প্রশাসনের তরফ থেকেও করা হয়েছে সহযোগিতা তাতেও সংকুলান হয়নি অপারেশনের টাকার। খবর পয়ে তার অপারেশনের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন  মেহেরপুর জেলা ছাত্রদল।

গতকাল শনিবার সকালে বিপ্লব মীর এর বাড়িতে যেয়ে জেলা ছাত্রদলের পক্ষ থেকে রোগীর চাচা মুংলা মীর এর হাতে চিকিৎসার জন্য নগত ১লক্ষ টাকা তুলে দেন জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আকিব জাভেদ সেনজির।

এসময় মেহেরপুর জেলা ছাত্রদল এর সাবেক যুগ্ম সম্পাদক তোফিকুল ইসলাম মিঠন, মেহেরপুর জেলা সাইবার দল এর সাধারণ সম্পাদক ও বাগোয়ান ইউনিয়ন ছাত্রদল এর সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক মোঃ রিয়াজ সেখ সেখানে ‍উপস্থিত ছিলেন।




মেহেরপুরে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধে আহত ৩, থানায় অভিযোগ

মেহেরপুরের শ্যামপুর ইউনিয়নের ঢুসারপাড়া গ্রামে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে মৃত আজাহার আলীর ছেলে মোঃ বানাত আলী (৬৫), তার ছেলে রফিকুল ইসলাম (৪৫) ও রফিকুল ইসলামের স্ত্রী মোছাঃ আলতাফন (৩৬) কে এলোপাতাড়ি মারধরের অভিযোগ উঠেছে।

আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শ্যামপুর ইউনিয়নের ঢুসারপাড়া গ্রামের বর্গীপাড়া মাঠে এ ঘটনা ঘটে। আহত মোঃ বানাত আলী ও তার ছেলে রফিকুল ইসলামকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মোঃ বানাত আলী ও তার ছেলে রফিকুল ইসলাম বর্গীপাড়া মাঠের পশ্চিম পাশে নিজেদের ধানক্ষেতের ধানের বিচালি বাঁধার কাজ করছিলেন। এ সময় একই এলাকার মৃত আবু তালেবের ছেলে মোঃ মজিবার আলী (৪৫), মোঃ আমির আলীর ছেলে মোঃ ইব্রাহিম (২২), মৃত আবুল কাসেমের ছেলে মোঃ আশিকুর রহমান, মোছাঃ চম্পা খাতুন (৩৫), মোঃ আইয়ুব আলীর ছেলে মোঃ ঝন্টু (২৮) সহ অজ্ঞাত একজন ব্যক্তি পূর্ব শত্রুতার জেরে বাঁশের লাঠি, লোহার রড, কাঠের বাটাম, জিআই পাইপ ও ধারালো হাসুয়া নিয়ে ধানক্ষেতের জমিতে অনধিকার প্রবেশ করে।

আসামিরা মোঃ রফিকুল ইসলামের মাথায় ধারালো হাসুয়া দিয়ে কোপ দেয় এবং বাম হাত দিয়ে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করলে কোপ তার বাম হাতের কব্জিতে লেগে গুরুতর জখম করে। এরপর তিনি মাটিতে পড়লে আসামিরা আরও এলোপাতাড়ি মারধর করে।

রফিকুল ইসলামের স্ত্রী মোছাঃ আলতাফন খাতুন ঘটনাস্থলে গেলে, আসামিরা তার পথ অবরোধ করে, গালাগালি করে, চুল টেনে ধরে এবং শ্লীলতা হানি করে মারধর করে। পরে স্থানীয়রা তাকে ভ্যানযোগে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসে এবং ভর্তি করে।
বর্তমানে মোঃ রফিকুল ইসলাম ও তার স্ত্রী মোছাঃ আলতাফন খাতুন মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন।

এ বিষয়ে অভিযুক্তদের কারো সাথে যোগাযোগ করা যায়নি।

এ বিষয়ে মেহেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওচি) শেখ মেজবাহ উদ্দিন বলেন, এ বিষয়ে ভুক্তভোগী থানায় অভিযোগ করেছেন এবং খুব শীঘ্রই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।




জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে মেহেরপুরে বিএনপির সমাবেশ

৭ই নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে মেহেরপুরে বিএনপি এক বিশাল সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে।
আজ শনিবার বিকেলে শহীদ ড. শামসুজ্জোহা পার্কে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশের সভাপতিত্ব করেন পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি জাহাঙ্গীর বিশ্বাস। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য, সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মাসুদ অরুণ।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মারুফ আহমেদ বিজন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, জেলা যুবদলের সভাপতি জাহিদুল হক জাহিদ, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আকিব জাভেদ সেঞ্জির, জেলা মহিলা দলের সভাপতি সাইয়েদাতুন নেসা নয়নসহ বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ। সমাবেশ শুরু হয় জাতীয় সংগীত ও দলীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাসুদ অরুণ বলেন, দলের নাম ভাঙিয়ে কেউ চাঁদাবাজি করলে তাকে ছাড়া হবে না। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে ধানের শীষের পক্ষে কাজ করতে হবে। ধানের শীষ নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া হবে না। দেশে ষড়যন্ত্র চলছে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। নির্বাচন নিয়ে কোনো ছিনিমিনি খেলা খেলতে দেব না। কেউ কেউ মুক্তিযোদ্ধার চেতনা নিয়ে ব্যবসা করছে, আবার কেউ ধর্মের নাম ভাঙিয়ে চলছে এদের থেকে সাবধান থাকতে হবে। মা-বোনদেরও সতর্ক থাকতে হবে।




গাংনীতে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বিএনপির র‍্যালি ও জনসভা

মেহেরপুরের গাংনীতে মহান জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে উপজেলা ও পৌর বিএনপির উদ্যোগে জনসভা ও বর্ণাঢ্য র‍্যালি অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ শনিবার বিকেলে বাঁশবাড়িয়া ফুটবল মাঠ থেকে গাংনী বাজার পর্যন্ত র‍্যালিটি অনুষ্ঠিত হয়।

র‍্যালি পরবর্তী আলোচনা সভায় উপজেলা বিএনপির সভাপতি আলফাজউদ্দীন কালুর সভাপতিত্বে এবং উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদান আহমেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির সভাপতি জাভেদ মাসুদ মিল্টন।

অন্তর্ভুক্ত প্রধান বক্তাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি রেজাউল ইসলাম মাস্টার, উপজেলা সাধারণ সম্পাদক আবদুল আওয়াল, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আখেরুজ্জামান, পৌর বিএনপির সভাপতি মকবুল হোসেন মেঘলা, পৌর সাধারণ সম্পাদক সাহিদুল ইসলাম, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক কাউছার আলী এবং জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বিপ্লব।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাভেদ মাসুদ মিল্টন বলেন, জনগণের আশা, আকাঙ্ক্ষা ও চাওয়া বুঝে কেন্দ্র ধানের শীষের মনোনয়ন পরিবর্তন করবে। তিনি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে উদ্দেশ্য করে বলেন, গাংনীর মাটি আজ ধানের শীষের ঘাটি। এর প্রমাণ আজকের জনগণের উপস্থিতি।
র‍্যালিতে নেতৃত্ব দেন জেলা বিএনপির সভাপতি জাভেদ মাসুদ মিল্টন।




মেহেরপুরে প্রাক্তন বিডিআর সদস্যের আত্মহত্যা

মেহেরপুরে হাবিবুর রহমান খোকন (৫০) নামের এক সাবেক বিডিআর সদস্য বিষপান করে আত্মহত্যা করেছেন।

গত বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) দুপুর ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত হাবিবুর রহমান খোকন মেহেরপুর সদর উপজেলার বারাদি ইউনিয়নের বর্ষিবাড়িয়া গ্রামের খলিলুর রহমানের (৭০) বড় ছেলে। তিনি পেশায় প্রাক্তন বিডিআর সদস্য ছিলেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে বিষপান করার পর বিষয়টি টের পেয়ে স্থানীয়রা দ্রুত তাকে মেহেরপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকরা তাকে ঢাকায় রেফার করেন। কিন্তু ঢাকায় নেওয়ার পথে শুক্রবার রাত ১টার দিকে গাড়ির ভেতরেই তার মৃত্যু হয়।

স্থানীয়রা জানান, হাবিবুর রহমান খোকন ছিলেন সামাজিক স্বভাবের মানুষ। সম্প্রতি অতিরিক্ত ঋণের চাপে তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, ঋণ পরিশোধে অক্ষম হয়ে হতাশা থেকেই তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন।




আড়ত থেকে খুচরা বাজার; সবজির দাম দ্বিগুণ

মেহেরপুরে সাম্প্রতিক সময়ে সবজির দামে অস্বাভাবিক উর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা গেছে। আড়ত থেকে খুচরা বাজারে পৌঁছাতে সবজির দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে। এতে সাধারণ ক্রেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, অন্যদিকে বিক্রেতারা বলছেন, খরচ ও পরিবহন ভাড়াই দাম বৃদ্ধির মূল কারণ।

মেহেরপুর প্রতিদিনের সাপ্তাহিক অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে গতকাল শুক্রবার সরেজমিনে মেহেরপুর পাইকারি ও খুচরা বাজার পরিদর্শন করে জানা যায়, পাইকারি বাজার থেকে খুচরা বাজারে সবজি আসতে দাম কেজিপ্রতি প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, তারও বেশি বেড়ে যায়।
আলু পাইকারি বাজারে ১৬ টাকা থেকে খুচরা বাজারে ২০ টাকা, পেয়াজ পাইকারি বাজারে ৯০-৯৫ টাকা থাকলেও তা খুচরা বাজারে হয়ে যায় ১১০ টাকা, রসুন পাইকারি বাজারে ৬০ টাকা থেকে খুচরা বাজারে ২০ টাকা বেড়ে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কাঁচামরিচ পাইকারী বাজারে ৬০-৬৫ টাকা থাকলেও খুচরা বাজারে এসে হয়ে যায় ৯৫-১০০ টাকা, যা প্রায় দ্বিগুণের কাছাকাছি। আদা পাইকারি বাজারে ১৬০ টা থাকলেও তা খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকায়।

সবজির মধ্যে, বেগুন পাইকারি বাজারে ৫০ টাকা খুচরা বাজারে ৬০ টাকা, পটল পাইকারি বাজারে ১৫ খুচরা বাজারে ৩০ টাকা, ঢ়েড়স পাইকারি বাজারে ৩০ টাকা খুচরা বাজারে ৪০ টাকা, শাক পাইকারি বাজারে ২৫ টাকা খুচরা বাজারে ৪০ টাকা, করলা পাইকারি বাজারে ১৫-২০ টাকা থাকলেও খুচরা বাজারে ৩০টাকা, শশা পাইকারি বাজারে ৫০-৭০ টাকা খুচরা বাজারে ৭০ -৯০ টাকা, পেপে পাইকারি বাজারে ১৫ টাকা খুচরা বাজারে ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

শীতকালীন সবজির মধ্যে শিম পাইকারি বাজারে ৫০ টাকা খুচরা বাজারে ৬০ টাকা, ফুলকপি পাইকারি বাজারে খুচরা বাজারে ৪০-৪৫ টাকা, বাঁধাকপি পাইকারি বাজারে ৩০-৩৫ টাকা খুচরা বাজারে ৫০ টাকা, মূলা পাইকারি বাজারে ১৫-২০ টাকা খুচরা বাজারে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। টমেটো পাইকারি বাজারে ১০০টাকা খুচরা বাজারে ১৪০ টাকা, গাজর পাইকারি বাজারে ১৪০ খুচরা বাজারে ১৬০ টাকা।

সবজি বিক্রেতারা বলেন, আমরা আড়ত থেকে যে দামে পাই তার সাথে পরিবহন খরচ, দোকান ভাড়া, শ্রমিক মজুরি সঙ্গে বাজারে প্রতিযোগিতা সব মিলিয়ে খুচরায় না বাড়ালে টিকে থাকা মুশকিল।

মুরগীর বাজরে ব্রয়লার মুরগী ১৮০ টাকা, সোনালী মুরগী ২৮০ এবং লেয়ার মুরগি ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মাছের বাজারে রুই ৩০০, তেলাপিয়া ১৬০, পাঙাস ১৬০, সিলভার ২০০, চিংড়ি ৮০০-৯০০, জিওল ২৩০, কৈই ২০০, ইলিশ ৪৫০-১০০০ টাকা।

ছাগলের মাংস ১১০০ টাকায় এবং গরুর মাংস সর্বদা ৭৫০ টাকায় অপরিবর্তিত।

তহ বাজারের সভাপতি হাফিজুর রহমান হাফি বলেন, আমরা সব সময় চেষ্টা করি কাচাঁবাজার আমাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং ন্যায্য মূল্যে ক্রেতার কাছে কাচামাল পৌঁছা দিতে। প্রতিটা সবজি ব্যবসায়িকে বলা আছে সর্বোচ্চ ২০ টাকা পর্যন্ত লাভ করে বিক্রি করতে।

কাঁচামরিচের দাম হাতবদলে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায় কেন? এমন প্রশ্ন করাই উত্তরে তিনি বলেন, কাঁচামরিচ আজ সাকালে ৬০-৬৫ টাকা ছিলো আড়তে। এই দামে কিনে তারা সর্বোচ্চ ৯০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করতে পারে। কারণ সারাদিনে কাঁচা মরিচ বিক্রি খুব কম হয়।

তিনি আরও বলেন, আমি বাজার পরিদর্শন করে দেখবো কারা কেমন দামে কেনা-বেচা করছে।




মেহেরপুরে বিএনপিতে মনোনয়ন নিয়ে কোন্দল প্রকাশ্যে

মেহেরপুরের দুই সংসদীয় আসন মেহেরপুর-১ ও মেহেরপুর-২ তে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল এখন প্রকাশ্যে। দলীয় প্রার্থী ঘোষণার পর থেকে দুই আসনেই বিরোধ তীব্র আকার ধারণ করেছে, যার প্রভাব এখন প্রান্তিক পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যেও পড়েছে।

মেহেরপুর-১ আসনে সাবেক সংসদ-সদস্য মাসুদ অরুণ এবং মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনে সাবেক সংসদ-সদস্য আমজাদ হোসেনকে প্রাথমিক মনোনয়ন দেওয়ার পর থেকেই দুই আসনে ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এর আগে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন বৈঠকে স্থানীয় নেতারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন-যিনিই দলীয় মনোনয়ন পাবেন, সবাই ধানের শীষের পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন। কিন্তু দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার পরই সেই অঙ্গীকার বাস্তবে রূপ নেয়নি।

গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয়ভাবে মেহেরপুর জেলা বিএনপিতে জাভেদ মাসুদ মিল্টনকে আহ্বায়ক ও অ্যাড. কামরুল হাসানকে সদস্য সচিব করে কমিটি গঠনের পর থেকে বিরোধ শুরু হয়। মেহেরপুর সদর আসনে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. কামরুল হাসান পক্ষ বুধবার রাতে বিক্ষোভ মিছিল ও পথসভা করে এবং গত বৃহস্পতিবার রাতে মহিলা দলের বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।

বিক্ষোভে কামরুল হাসানসহ বক্তৃতা করেন সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফয়েজ মোহাম্মদ, পৌর বিএনপির সভাপতি লতিব বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক এহান উদ্দীন।

বিক্ষোভে দাবি করা হয়, মনোনয়ন পুনর্বিবেচনা না করলে মেহেরপুর আসনে বিএনপির পরাজয় নিশ্চিত। তারা প্রকাশ্যে দলের মনোনীত প্রার্থী মাসুদ অরুণের বিরুদ্ধাচরণ করেন। মনোনয়ন পাওয়া মাসুদ অরুণ ইতোমধ্যেই ধানের শীষের পক্ষে গণসংযোগ শুরু করেছেন। তার নেতৃত্বে কর্মীরা গ্রাম-গঞ্জে প্রচার চালাচ্ছেন। মাসুদ আরুণ বলেন, দলীয় মনোনয়ন না পাওয়াতে ক্ষোভ থাকতেই পারে। তবে ঠিক হয়ে যাবে। একই আসনে জামায়াতের প্রার্থী মাওলানা মুহা. তাজউদ্দিন নেতাকর্মীদের নিয়ে দলীয় প্রতীকের পক্ষে আগে থেকেই সক্রিয়। শহর ও উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রতীক সংবলিত তার পোস্টার ও ব্যানারে দেওয়ালজুড়ে ছড়িয়েছে নির্বাচনি আমেজ।

মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনে মনোনয়ন পাওয়া সাবেক এমপি আমজাদ হোসেন পক্ষের সঙ্গে জেলা বিএনপির সভাপতি জাভেদ মাসদ মিল্টন পক্ষের বিরোধ চরম আকার ধারণ করেছে। মঙ্গলবার দুপক্ষের সংঘর্ষ, ধাওয়া-পালটাধাওয়া, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে। এই দ্বন্দ্বে শুধু শীর্ষপর্যায় নয়, তৃণমূল নেতাকর্মীরাও বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। অনেকে মাঠে কাজ বন্ধ রেখেছেন, কেউ কেউ নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় মেহেরপুর জেলা বিএনপির সভাপতি জাভেদ মাসুদ মিল্টনের গাংনী কার্যালয়ে এক যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়।

গাংনী উপজেলা বিএনপির সভাপতি আলফাজ উদ্দীন কালুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত যৌথ সভায় বক্তৃতা করেন, উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি রেজাউল হক, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আওয়াল, জেলা বিএনপির সাংগাঠনিক সম্পাদক আখেরুজ্জামান, গাংনী উপজেলা বিএনপির সাংগাঠনিক সম্পাদক আব্দাল হক, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক কাওছার আলী, জেলা মহিলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক লাইলা আরজুমান বানু প্রমুখ। সভায় আমজাদ হোসেনকে দেওয়া দলীয় মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে আগামী ২০ দিন শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়।

গাংনী আসনে জামায়াতের প্রার্থী নাজমুল হুদাও প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ফলে আসনটিতে বিএনপি ও জামায়াতের দুই হেভিওয়েট প্রার্থীর প্রচারণা প্রতিদ্বন্দ্বিতার নতুন মাত্রা যোগ করেছে।




নির্বাচনের মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যেতে চায়

জীবননগর উপজেলার সীমান্ত ইউনিয়ন ৯ নং ওয়ার্ড জামায়াতের উদ্যোগে যাদবপুর গ্রামে অফিস উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত পথসভায় জেলা আমীর রুহুল আমিন বলেছেন, আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যেতে চাই। জামায়াত ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে আমরা মানবতার কল্যাণে আত্মনিয়োগ করবো।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মনোনিত চূয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী জেলা আমীর রুহুল আমিন পথসভায় আরো বলেন, আমরা মানুষের পাশে থাকতে চাই। জামায়াতে ইসলামী নেতারা দলকানা জনপ্রতিনিধি হতে চাইনা। আমরা জনপ্রতিনিধিদের কে জনগণের নিকট জবাবদিহিতার কালচার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। জামায়াতে ইসলামী করতে কলিজা লাগে। মুরগীর কলিজা নিয়ে জামায়াতে ইসলামী করা যায়না। আওয়ামী ফ্যাসিবাদের হাজারো আঘাতেও জামায়াতে ইসলামীর কর্মিরা রাজপথে দাড়িয়ে আছে। জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের ফাসিঁ, দিয়েও থামানো যায়নি এ দলের জানবাজ কর্মীদের। জুলুম, নিযাতন সহ্য করেই জামায়াত আজ এই অবস্থানে এসেছে।

গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৬ টার সময় উপজেলার সীমান্ত ইউনিয়নের যাদবপুর গ্রামে আয়োজিত পথ সভায় তিনি আরো বলেন, চালক ভাইয়েরা ২৪ এর গণঅভুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তারা দাড়িপাল্লার পক্ষে ভোট করবেন।

জামায়াতে ইসলামী দেশের শ্রমিক সমাজসহ সাধারণ প্রান্তিক জনগোষ্ঠি চাওয়া পাওয়া কে মাথায় নিয়ে দেশ পরিচালনা কররে। দাড়িপাল্লা সাধারণ মানুষের প্রিয় প্রতিক। তিনি বলেন, যারা শ্রমিকদের বন্ধু হবেনা তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করুন। আমরা শ্রমিকদের উত্তম বন্ধু হতে চাই।

জামায়াতে ইসলামী সরকার গঠন করলে এ দেশে শ্রমিকদের কাজের পরিবেশ উন্নত করা হবে। শমিকদের ন্যায্য ন্যুন্যতম মুজুরি ধায করে দেয়া হবে। আমরা রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে উন্নতি দূর্নীতি একসাথে চলবে না। সব রকম দূর্নীতিকে জাদুঘরে পাঠানো হবে। টাকা ছাড়াই আপনার সন্তানকে চাকুরির ব্যবস্থা করতে চাই। জামায়াত মানুষের হক তার দোর গোড়ায় পৌছে দিতে চাই। আমরা শাসক নই বরং জনগণের সেবক হতে চাই। জীবননগর হাসপাতালকে আধুনিকায়ন করে স্বাস্থ্য সেবার মান আরো উন্নত করা হবে।

তিনি আরো বলেন, বৈচিত্রময় কৃষি প্রধান জীবননগর এলাকায় একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হবে। সীমান্ত ইউনিয়ন আমীর মাওলানা আব্দুল ওয়াহেদের সভাপতিত্বে পথসভায় আরো উপস্থিত ছিলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা সেক্রেটারি আসাদুজ্জামান, জেলা পেশাজীবি পরিষদের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক খলিলুর রহমান, জেলা তালিমুল কুরআন বিভাগের সভাপতি মাওলানা মহিউদ্দীন, জেলা প্রশিক্ষণ সম্পাদক জিয়াউল হক, জেলা উলামা বিভাগের সভাপতি মাওলানা’ ইসরাইল হোসেন, জেলা মাজলিসুল মুফাসসিরিন পরিষদের সভাপতি মাওলানা হাফিজুর রহমান, জীবননগর উপজেলা আমীর মাওলানা সাজেদুর রহমান, নায়েবে আমীর সাখাওয়াত হোসেন, সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, জেলা শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি এমদাদুল্লাহ মহসিন জামেন, উপজেলা যুব বিভাগের সভাপতি মাজেদুর রহমান লিটন, সেক্রেটারি জাহিদুল ইসলাম, সিমান্ত ইউনিয়ন যুব বিভাগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহামান, জামায়াত নেতা শফিকুল ইসলাম, হায়দার আলী, মিজানুুর রহমান, সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন, উপজেলা জামায়াতের সহকারি সেক্রেটারি আবু বকর সিদ্দিক।