জীবননগরে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস মনোনীত প্রার্থী মাওলানা জুবায়ের খান সাহেবকে হৃদয়গ্রাহী সংবর্ধনা জানিয়েছে দলটির জীবননগর থানা শাখা। এ উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় জীবননগর থানা শাখার অস্থায়ী কার্যালয়ে, যা তরফদার মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত।

অনুষ্ঠানে ফুলের শুভেচ্ছা ও ভালোবাসার মধ্য দিয়ে মাওলানা জুবায়ের খানকে বরণ করে নেন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের জীবননগর থানা শাখার সভাপতি মুফতি শাহজামাল সাহেব, সেক্রেটারি হাফেজ মাওলানা জুবায়ের আল মাহমুদ এবং সাংগঠনিক সম্পাদক হাফেজ মাওলানা জাহিদ বিন ইউসুফ।

এছাড়াও অনুষ্ঠানে সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের দায়িত্বশীল ও সদস্যবৃন্দের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।

বক্তারা তাঁদের বক্তব্যে বলেন, “ইসলামী আদর্শ প্রতিষ্ঠার পথে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস যে ধারা বজায় রেখেছে, তাতে মাওলানা জুবায়ের খান সাহেবের মতো প্রজ্ঞাবান ও আদর্শবান নেতৃত্ব অত্যন্ত জরুরি।” তাঁরা আরও বলেন, ইসলামী রাজনীতিকে সুসংগঠিত ও লক্ষ্যপানে এগিয়ে নিতে এই সংবর্ধনা নতুন উদ্দীপনা যোগাবে।

উক্ত অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে প্রার্থীর প্রতি আস্থা, ভালোবাসা ও সহযোগিতার বার্তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে তাকে বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান নেতৃবৃন্দ।




চ্যানেল এস এর চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি হলেন আফজালুল হক ও ক্যামেরা পারসন ফরহাদ হোসেন

বেসরকারি স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল ‘চ্যানেল এস’ এর চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রতিনিধি আফজালুল হক বাদল এবং ক্যামেরা পারসন হলেন, ফরহাদ হোসেন।

আফজালুল হক বাদল ‌দৈনিক আজকের চুয়াডাঙ্গা পত্রিকার দর্শনা স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ফরহাদ হোসেন দৈনিক ‌মেহেরপুর প্রতিদিন পত্রিকার দর্শনা প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। চ্যানেল এস এ নিয়োগ পাওয়ায় সকলের কাছে দোয়া কামনা করেছেন আফজালুল হক বাদল ও ফরহাদ হোসেন। একই সাথে পেশাগত দায়িত্ব পালনে সকলের সহযোগিতা চেয়েছেন।

এদিকে, দর্শনা প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকরামুল হক পিপুল, সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান সুমন এবং সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আওয়াল হোসেন দুইজনকে আইডি কার্ড পরিয়ে দেন এবং শুভ কামনা সহ সুন্দরভাবে সংবাদ পরিবেশনের জন্য দিকনির্দেশনা দেন।




একটি স্বপ্নের মৃত্যু; প্রবাসে হৃদরোগে মারা গেলেন মুকুল

দিনমজুর বাবা মুকুল হোসেনের স্বপ্ন ছিল দুই ছেলেকে মানুষ করবেন, লেখাপড়া শিখিয়ে গড়ে তুলবেন ভবিষ্যৎ। তাই জীবনের কষ্ট ভুলে চার-পাঁচ বছরের জন্য পাড়ি জমিয়েছিলেন মধ্যপ্রাচ্যে। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন আজ ছিন্ন-ভিন্ন।

গত ১১ মে, সৌদি আরবের দাম্মাম শহরে হঠাৎ হৃদরোগে মৃত্যু হয় গাংনী উপজেলার কাজীপুর ইউনিয়নের নওদাপাড়ার মৃত আরমান আলীর ছেলে মুকুল হোসেনের। মাত্র দুই মাস আগে, গত ১০ ফেব্রুয়ারি পাড়ি দিয়েছিলেন প্রবাস জীবনে। কিন্তু ভাগ্য দিল না স্বপ্ন পূরণের সে সময়।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে তার মরদেহ সরকারি ব্যবস্থাপনায় নিজ গ্রাম গাংনী উপজেলার কাজীপুর ইউনিয়নের নওদাপাড়ায় পৌছালে  বিকালে নিজ গ্রামের কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয় এই প্রবাসীর মরদেহ।

দিনমজুর মুকুল হোসেনের (৪২) স্বপ্ন ছিল ছেলেদের লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করবেন। তাই অর্থের টানে পাড়ি জমিয়েছিলেন সৌদি আরব। গত ১০ ফেব্রুয়ারি তিনি পাড়ি দেন দাম্মামে। সেখানে একটি ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে গাড়ি ধোয়ার শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। পরিবার জানায়, কঠোর পরিশ্রম করলেও আশাবাদী ছিলেন একটু টাকা-পয়সা জমিয়ে দেশে ফিরে একটি ছোট ব্যবসা করবেন। কিন্তু ভাগ্য যেন তার সেই স্বপ্ন পূরণ করতে দিল না।

সৌদি যাবার মাত্র দুই মাস পর, গত ১১ মে হঠাৎ হৃদরোগে মৃত্যুবরণ করেন মুকুল হোসেন। কিন্তু এই মৃত্যু শুধু মুকুল হোসেনের না, ভেঙে পড়া এক পরিবারেরও।

মুকুলের মরদেহ দেশে পৌঁছায় মৃত্যুর প্রায় ৪০ দিন পর। গতকাল মঙ্গলবার সকালে যখন গ্রামের বাড়িতে যখন লাশ পৌঁছে, তখন কান্নায় ভেঙে পড়ে গোটা পরিবার ও প্রতিবেশীরা।

স্ত্রী কাজল রেখা কাঁদতে কাঁদতে বললেন, “ছেলে দুইটার জন্যই উনি গেছেন। কিছুদিন কামাই করে ফিরে আসবেন বলছিলেন। আজ লাশ হয়ে ফিরলেন আমার মানুষটা”।

মৃত্যুর প্রায় ৪০ দিন পর মুকুল হোসেনের মরদেহ দেশে পৌঁছে। স্বজনদের চোখে তখন শুধু কান্না আর অনন্ত অপেক্ষার পরিসমাপ্তি।
মুকুল হোসেনের বড় ভাই আরিফুল ইসলাম বলেন, “প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রথমবার আমরাই দ্রুত মরদেহ হাতে পেয়েছি। সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। তবে, এত দীর্ঘ সময় লাগলো, এই কষ্ট কোনো পরিবারের কাম্য নয়।”

প্রবাসে কর্মরত হাজারো শ্রমিকের মতোই মুকুল হোসেনও ছিলেন একজন স্বপ্নবাজ বাবা। তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন থেমে গেছে এক পরিবারের ভরসা, তেমনি প্রশ্ন উঠেছে প্রবাসে কর্মজীবী শ্রমিকদের সুরক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও দ্রুত মরদেহ ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা আরও দ্রুততর করা যায় কিনা।

তামিম আর হামিম এখনো জানে না, তাদের বাবা আর কোনোদিন ফিরে আসবেন না। রেখে গেলেন শুধু এক বুক স্বপ্ন, ভাঙা একটি ভবিষ্যৎ আর স্ত্রীর চোখের শুকিয়ে না যাওয়া জল।




মেহেরপুরে গরু-সবজি ব্যবসায়ীদের ওপর ডাকাতি, বোমা বিস্ফোরণ

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার পোড়াপাড়া-যুগিন্দা রোডে গরু ও সবজি ব্যবসায়ীদের ওপর হামলা চালিয়ে ডাকাতি করেছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় দুটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে প্রায় ৫০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় তারা। ব্যবসায়ীদের কয়েকজনকে মারধরও করা হয়েছে।

ঘটনাটি ঘটে আজ মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাত দশটার সময়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গাংনী বাজার থেকে ব্যবসা শেষে বাড়ি ফিরছিলেন কয়েকজন গরু ও সবজি ব্যবসায়ী। পথে পোড়াপাড়া-যুগিন্দা সড়কের নির্জন এলাকায় ওৎ পেতে থাকা ডাকাত দল তাদের গতিরোধ করে। প্রথমে দুটি বিস্ফোরণের মাধ্যমে আতঙ্ক সৃষ্টি করে, পরে ব্যবসায়ীদের মারধর ও লুটপাট চালায়।

খবর পেয়ে গাংনী থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানান, “ঘটনার তদন্ত চলছে। দোষীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু হয়েছে।”




দামুড়হুদায় কৃত্রিম প্রজননে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ

দামুড়হুদা উপজেলার জয়রামপুরে গরুর কৃত্রিম প্রজনন (সিমেন) দিয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগে আলমগীর হোসেন নামে এ আই কর্মীর ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার বিকালে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের সামনে সহকারী কমিশনার (ভুমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কে এইচ তাসফিকুর রহমান ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে এই জরিমানা করেন। এ আই কর্মী আলমগীরর হোসেন দামুড়হুদা উপজেলা সদরের মাদ্রাসা পাড়ার মৃত জালাল উদ্দীনের ছেলে।

আদালত সুত্রে জানাগেছে, দামুড়হুদা উপজেলার জয়রামপুর বারুইপাড়া গ্রামের আব্দুর রহিমের স্ত্রী নাজমা খাতুনের গরুর খামার রয়েছে। তার খামারে ৪টি গরু রয়েছে। গত ১৫ ই জুন তার একটি গরুর ডাক আসলে তিনি এ আই কর্মী আলমগীর হোসেরে সরণাপন্ন হয়। এ সময় এ আই কর্মী তার নিকট খেকে ২১০টাকার সিমেন ১হাজার ৫০০টাকা নেয়। এরপর তার ঐ সিমেনে ডাক না দাড়ালে পরবর্তীতে আবারো ঐ একই এ আই কর্মির সরণাপন্ন হয়। এবার তিনি ঐ গরুর ভালো জাতের সিমেন দেওয়ার কথা বলে ২ হাজার ৫০০টাকা নেই তাতেও কাজ না হলে তিনি ৫ হাজার একশত টাকা দাবী করেন। পরবর্তীতে ভুক্তভোগী নাজমা খাতুন গত সোমবার অতিরিক্ত অর্থ চাওয়ায় উপজেলা প্রণীসম্পদ অফিসার নিলিমা আক্তার হ্যাপি বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন।

গতকাল বিকাল সাড়ে ৫ টার দিকে ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে সাক্ষ্য প্রমাণ শেষে অভিযুক্ত এআই কর্মী আলমগীর হোসেন কে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী যথাযত সেবা প্রদান করতে না পারায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন আইন ২০০৯ এর ৪৫ ধারায় তাকে অভিযুক্ত করে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।

এসময় উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসার ডাঃ নিলিমা আক্তার হ্যাপি বলেন, কৃত্রিম প্রজনন (সিমেন) এর সরকার নিধারিত মৃল্য ২১০ টাকা এর সাথে কিছু বাড়তি টাকা নেওয়ার সুযোগ নেই। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) ও নির্বাহী ম্যাজিট্রেট কে এইচ তাসফিকুর রহমান বলেন, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী যতাযত সেবা দিতে না পারায় তাকে জরিমানা করা হয়েছে। এসময় উপস্থিত ছিলেন, ভুমি অফিসের আরিফুল ইসলাম, আনিছুর রহমান সহ প্রাণী সম্পদ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ।




দর্শনায় আধুনিক কলাকৌশল প্রয়োগ শীর্ষক মাঠ দিবস

একর প্রতি আখের ফলন বৃদ্ধি ও গুণগত মানসম্পন্ন আখ উৎপাদনের লক্ষ্যে ‘আধুনিক কলাকৌশল প্রয়োগ’ শীর্ষক মাঠ দিবস ২০২৫ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে কেরু অ্যান্ড কোম্পানির আকন্দবাড়িয়া পরীক্ষামূলক কৃষিখামারে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কেরু চিনিকলের মহাব্যবস্থাপক (কৃষি) আশরাফুল আলম ভূঁইয়া। উপব্যবস্থাপক (সম্প্রসারণ) মাহবুবুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই মাঠ দিবসে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঐতিহ্যবাহী কেরু অ্যান্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাব্বিক হাসান এফসিএমএ।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেরু চিনিকলের মহাব্যবস্থাপক (কারখানা) সুমন কুমার সাহা, উপব্যবস্থাপক (সম্প্রসারণ, বীজ) দেলোয়ার হোসেন, ব্যবস্থাপক (জৈব সার) জাকির হোসেন, বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএসআরআই) চুয়াডাঙ্গা উপকেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ওবায়দুল্লাহ শেখ, কেরুজ কৃষি খামার ইনচার্জ সুমন কুমার সাহা, ডিহি খামারের ইনচার্জ ইমদাদুল হক এবং আখচাষী মোরশেদুর রহমান লিংকন, সিরাজুল ইসলাম মনি, শামিম হোসেন, আফজালুর রহমান ধীরু, আদিল হক ডাবলু, আব্দুল আওয়াল, সোহেল রানা, শেখ ফরিদ আহম্মেদ প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে কেরু চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাব্বিক হাসান বলেন, “আখের অধিক ফলন পেতে হলে আগামীতে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে আখ চাষের কোনো বিকল্প নেই। আখের মূল্য বৃদ্ধির দাবির প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী রোপণ মৌসুমের আগেই আখের মূল্য বৃদ্ধির ঘোষণা আসবে।”

তিনি আরও বলেন, আখ চাষ বাড়ান, এতে অধিক লাভবান হবেন। কেরু অ্যান্ড কোম্পানির পক্ষ থেকে চাষিদের সবধরনের সহায়তা প্রদান করা হবে।
তিনি জানান, এই মাঠ দিবসে আখ চাষে আধুনিক প্রযুক্তি এবং সাথী ফসল চাষাবাদের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

মাঠ দিবসে কেরু অ্যান্ড কোম্পানির কর্মকর্তারা এবং এলাকার বিভিন্ন আখচাষী উপস্থিত ছিলেন। আধুনিক পদ্ধতিতে আখ চাষ এবং এর সঙ্গে অন্যান্য ফসল (যেমন: ডাল, তেলবীজ ইত্যাদি) চাষ করে লাভবান হওয়ার উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।

এছাড়া, আখ চাষে বিদ্যমান বিভিন্ন সমস্যা ও তার সমাধান নিয়েও মতবিনিময় হয়। বিশেষভাবে, রোগমুক্ত আখ বীজ উৎপাদন ও তার বিস্তারের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।

কেরু অ্যান্ড কোম্পানির পক্ষ থেকে আখচাষীদের উন্নত মানের বীজ সরবরাহ এবং কারিগরি সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
এই ধরনের মাঠ দিবস আখচাষীদের আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে সচেতন করতে এবং তাদের উৎপাদিত পণ্যের মান উন্নয়নে সহায়ক হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।




মেহেরপুরে কৃষি প্রণোদনার বীজ, সার ও গাছের চারা বিতরণ

মেহেরপুর সদর উপজেলা প্রশাসন ও সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের খরিফ-২ মৌসুমে কৃষি প্রণোদনার আওতায় বিনামূল্যে গ্রীষ্মকালীন সবজির বীজ, রাসায়নিক সার এবং চারা বিতরণের উদ্বোধন করা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার সকাল ১১ টায় সদর উপজেলা পরিষদ হল রুমে এই অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

উপজেলা কৃষি অফিসার মনিরুজ্জামানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মেহেরপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ খায়রুল ইসলাম।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম, প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফারুক উদ্দিন, সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা ফাতেমা কামরুন্নাহার আঁখি, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাইদুর রহমান, পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা রাকিব উদ্দিন এবং উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জাকারিয়া পারভেজ প্রমুখ।

উপজেলা কৃষি অফিস থেকে জানা গেছে, মেহেরপুর সদর উপজেলায় মোট ১ হাজার ৬৮০ জনকে ৫ কেজি করে বীজ, ১০ কেজি করে ডিএফপি সার, ১০ কেজি করে এম ও পি সার, ১ হাজার ৫০ টি নারকেলের চারা, ২৫০ জনকে আমের চারা, ২ হাজার ৫শ জনকে নিম, বেল, জাম, কাঁঠালের চারা, ১ হাজার কলাচাষীর মধ্যে ১০ কেজি ইউরিয়া সার, ২০ কেজি করে ডিএপি, ১০ কেজি করে এম ও পি, ১০ কেজি জিং সালফেট, ১ কেজি করে, ১ কেজি করে বোরন সার, ১২ কেজি বালাই নাশক এবং ৫শ জনকে সারসহ তালের চারা বিতরন করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।




মেহেরপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র রিটন ঢাকা থেকে গ্রেফতার

মেহেরপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র ও জেলা যুবলীগের আহবায়ক মাহফুজুর রহমান রিটনকে ঢাকার দিয়াবাড়ি এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তবে তাকে কোন মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

রিটনের পারিবারিক সূত্র গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মাহফুজুর রহমানের রিচনের শ্যালক আরিফুর রহমান জানান, সাবেক মেয়রকে রাতে ঢাকার ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তবে কোন মামলায় গ্রেফতার করেছে আমরা জানিনা। আজ দুপুর পর্যন্ত তাঁকে আদালতে চালান দেওয়া হয়েছে কিনাও পরিবার জানেনা।

এদিকে, মেহেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো: জামিনুর রহমান খান বলেন, আমাদের কাছে সাবেক মেয়রের গ্রেফতার কোন কাগজপত্র আসেনি।




মাছ শুধু পাতে নয়, উঠে আসে সাহিত্যে, কবিতায়, উপকথায়

নদীর দেশ, জল-জঙ্গলের কোল ঘেঁষা এক সবুজ ভূখণ্ড তারই নাম বাংলা। আর এই বাংলার হৃদয়জুড়ে যে দুটি শব্দ যুগ যুগ ধরে স্পন্দিত হয়েছে, তা হলো মাছ ও ভাত। “মাছে ভাতে বাঙালি” শুধু একটি প্রবাদ নয়; এটি এক কালের স্বাদ, মাটির গন্ধ, মায়ের হাতের রান্না, আর চিরন্তন বাঙালিয়ানার প্রতিচ্ছবি। বাংলা ভাষায় বহুল প্রচলিত একটি প্রবাদ- “মাছে ভাতে বাঙালি”। এই প্রবাদটি যেন বাঙালির দৈনন্দিন জীবনযাপন, খাদ্যাভ্যাস এবং সাংস্কৃতিক পরিচয়ের এক সহজ অথচ গভীর প্রতিচ্ছবি। বাঙালির কাছে মাছ ও ভাত শুধু খাদ্য নয়, বরং তা এক আবেগ, এক ঐতিহ্য, এক জীবনের দর্শন। একসময় ছিল নদী, খাল, বিল, পুকুরে পরিপূর্ণ।

সেখানে মাছের প্রাচুর্য ছিল স্বাভাবিক বিষয়। ফলে ঐতিহ্যগতভাবেই মাছ হয়ে উঠেছে বাংলার মানুষের প্রিয় খাদ্য। অন্যদিকে ধানচাষ প্রধান অর্থনীতি হওয়ায় ভাত বাঙালির প্রধান আহার। এই দুইয়ের সমন্বয়েই গড়ে উঠেছে এক অনন্য খাদ্যসংস্কৃতি, যা অন্য কোনো অঞ্চলের মানুষের মধ্যে এতটা গভীরভাবে দেখা যায় না।

এই মাটি ভিজে থাকে শ্রাবণের জলে, আর নদীর বুকে খেলে বেড়ায় রূপালি ইলিশ। ঢেঁকিতে ভাঙা চালের গন্ধে মিশে যায় মেঘলা আকাশের আহ্বান। গৃহিণীর কড়াইতে যখন সরষে ফোঁড়ন পড়ে, তখন মনে হয় এ এক অলৌকিক সঙ্গীত। শিশুর প্রথম দুধভাত থেকে বৃদ্ধের শেষ আহার- সবকিছুতেই থাকে ভাত আর মাছের ছোঁয়া।

বাংলার পদ্মা, মেঘনা, যমুনা এই নদীগুলি শুধু জল নয়, প্রাণ। তারা বয়ে আনে মাছের ভাণ্ডার, বাঙালির জীবনের চিরন্তন উপহার। কখনও তা ইলিশের রাজারি, কখনও রুই-কাতলার রাজনীতি। কখনও ঝোলে ডোবা পুঁটি, কখনও ভাজা চিংড়ির সুবাস। ইলিশ, রুই, কাতলা, পুঁটি, শোল, পাবদা, ট্যাংরা, এমন কত রকমের মাছ যে বাঙালির রসনাকে মোহিত করেছে! ইলিশের সরষে বাটা, রুই মাছের কষা, ট্যাংরার ঝোল, পাবদা মাছের দই-পোস্ত বা চচ্চড়ি, এসব শুধু পদের নাম নয়, প্রতিটিই একটি করে আবেগ, একেকটি পরিবারের স্মৃতি, ভালোবাসার মুহূর্ত। প্রতিটি রন্ধনে মিশে থাকে ভালবাসা, স্মৃতি আর ইতিহাস।

মাছ শুধু পাতে নয়, উঠে আসে সাহিত্যে, কবিতায়, উপকথায়। রবীন্দ্রনাথের “মাছের ঝোল” আর বিভূতিভূষণের গ্রামীণ গল্পে ভাতের সঙ্গে টাটকা শোল মাছ যেন জীবনের প্রতিচ্ছবি। কবি-সাহিত্যিকদের লেখায় মাছ ও ভাতের প্রসঙ্গ এসেছে বহুবার। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, তারাশঙ্কর, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে আজকের লেখকরাও বাঙালির খাদ্যসংস্কৃতির কথা তুলে ধরেছেন।

গ্রামবাংলার সন্ধ্যায় পুকুরঘাটে জাল টেনে ওঠে শুধু মাছ নয়, ওঠে পারিবারিক গল্প, ভালবাসা আর গ্রামীণ জীবনের নিঃশব্দ ছন্দ। তবে “মাছে ভাতে বাঙালি” শুধু খাদ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাঙালির সংস্কৃতি, সামাজিকতা ও সাহিত্য। বাঙালির বিয়ে-শাদিতে, উৎসব-অনুষ্ঠানে মাছের উপস্থিতি যেন বাধ্যতামূলক। নববধূর বাড়িতে মাছ পাঠানো, অতিথি আপ্যায়নে মাছের কদর, এমনকি পূজার ভোগেও মাছের উল্লেখ, এসবই এই সংস্কৃতির অংশ।

উৎসব-অনুষ্ঠান মানেই বাঙালির রান্নাঘরে মাছের উল্লাস। বিয়ের পদে বড় রুই মাছ যেন নবদম্পতির সুসম্পর্কের প্রতীক। পয়লা বৈশাখে ইলিশ ভাত যেন নতুন বছরের প্রতিশ্রুতি। এমনকি “মাছে-ভাতে মেয়ে” বলেই প্রশংসা করা হয় সহজ সরল, গৃহস্থালি জীবন ভালোবাসা মেয়ের।

বিদেশ বিভুঁইয়ে থাকা বাঙালিও স্বপ্ন দেখে- এক প্লেট গরম ভাত, তার পাশে ঝালঝোল মাছের গন্ধ। যেন বিদেশের ধোঁয়াটে ব্যস্ত জীবনে একটু ‘বাংলা’র স্পর্শ।

আজকের জগত বদলেছে। চিপস, পিজ্জা, বার্গার এসেছে বাজারে। কিন্তু বাঙালির আত্মা আজও খুঁজে ফেরে সেই কাঁশবনের পাশে মাটির বাড়ি, ধানখেতের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদী, আর দুপুরবেলার সেই গরম ভাতের ধোঁয়া।

যদিও আধুনিক জীবনযাত্রা ও নগরায়ণের ফলে বাঙালির খাদ্যাভ্যাসে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে, তবুও মনের গভীরে মাছ-ভাতের প্রতি টান আজও অমলিন। প্রবাসে থাকা বাঙালিরাও মাছে ভাতে ফিরে যেতে চায়, খোঁজে একটুকরো ‘বাংলা’র স্বাদ।

সবশেষে বলা যায়, “মাছে ভাতে বাঙালি” শুধু একটি প্রবাদ নয়, এটি একটি জাতির আত্মপরিচয়, সংস্কৃতি, ও ভালোবাসার প্রতীক। যতই সময় এগিয়ে যাক, মাছ আর ভাত থাকবে চিরকাল বাঙালির হৃদয়ে, রসনায় ও ইতিহাসে। কারণ “মাছে ভাতে বাঙালি” এই একটি বাক্য যেন এক কবিতা, এক ছবি, এক জীবন। এতে আছে বাংলার আবহমান সংস্কৃতি, স্মৃতি, সুগন্ধ আর হৃদয়ছোঁয়া সহজতা। যতদিন বাংলা থাকবে, ততদিন বাঙালি তার ভাত-মাছকে ভালোবেসে যাবে- মা যেমন তার সন্তানের মুখে প্রথম গ্রাস তুলে দেন, তেমনি। এ এক প্রেম, যা কেবল পেটে নয়, প্রাণে বাজে।




মেহেরপুরের মুনজুর আলম ‘দ্য হান্টার’ এর বিজয়গাঁথা

বাংলাদেশের প্রত্যন্ত সীমান্তবর্তী জেলা মেহেরপুরের গাড়াবাড়িয়া গ্রামের এক তরুণ আজ আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশের পতাকা উঁচু করে ধরেছেন। জীবন শুরু করেছিলেন মাঠের ধুলো, নদীর জলের মধ্যে; আজ তার গায়ে বয়ে যায় চ্যাম্পিয়নের ঘাম। তিনি মুনজুর আলম, যিনি ‘দ্য হান্টার’ নামে পরিচিত একজন মার্শাল আর্ট যোদ্ধা।

মাত্র ২৪ বছর বয়সেই তিনি নিজেকে দক্ষিণ এশিয়ার মিক্সড মার্শাল আর্টস (এম এম এ) অঙ্গনের একজন উদীয়মান ফাইটার হিসেবে তুলে ধরেছেন। তার লড়াইয়ের দক্ষতা, মানসিক দৃঢ়তা ও দেশের প্রতি ভালোবাসা আজ অনেক তরুণের জন্য এক প্রেরণার নাম।

২০১৪ সালে ইউটিউবে কনর ম্যাকগ্রেগর, খাবিব নুরমাগোমেদভদের লড়াই দেখে মুগ্ধ হয়ে নিজেই শুরু করেন অনুশীলন। তখন কোনো প্রশিক্ষক ছিলেন না, বন্ধুরাই ছিল সঙ্গী। খেলার মাঠ, নদীর পাড়, বাড়ির উঠান, যেখানে সুযোগ পেতেন সেখানেই চলত ছায়া অনুশীলন।

স্কুল থেকে ফিরে বসে যেতেন ইউটিউবে প্রতিটি ঘুষি, প্রতিটি কৌশল তার ভেতরে আগুন জ্বালিয়ে দিত। বিকেলে বেরিয়ে পড়তেন বন্ধুদের নিয়ে প্র্যাকটিসে। তখনই বুঝেছিলেন এটাই তার ভবিষ্যৎ।

মুনজুরের পরিবার তখনও জানতো না, তাদের ছেলেটা আস্তে আস্তে হয়ে উঠছে একজন লড়াকু যোদ্ধা। বন্ধুদের পেলেই শুরু করতেন ছায়াযুদ্ধ। নদীতে গোসল, মাঠে খেলা, বাড়ির উঠানে অনুশীলন সবই ছিল তার রুটিনের অংশ।

পরবর্তীতে তার এই প্যাশনকে রূপ দিতে পাশে দাঁড়ান প্রশিক্ষক রাজন হালদার লিটন। এরপর শুরু হয় প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ। প্রথম ক্লাব ছিল ‘কেজ রিউ এম এম এ’, বর্তমানে তিনি যুক্ত আছেন ঢাকার ‘হাবিব’স এম এম এ একাডেমি’ তে।

মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই মুনজুর অংশ নিয়েছেন দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মার্শাল আর্ট প্রতিযোগিতায়। আর জিতেছেন একের পর এক পদক ও স্বীকৃতি তার মধ্যে অন্যতম নকআউট নাইট আন্তর্জাতিক এম এম এ চ্যাম্পিয়নশিপ (২০১৮) স্বর্ণপদক, বুম আইপিএফএল ফাইট নাইট ১০ ও ১১ স্বর্ণপদক ,লাস্ট ম্যান স্ট্যান্ডিং ফাইট নাইট ২ স্বর্ণপদক, ওপেন এশিয়া চ্যাম্পিয়নশিপ রৌপ্যপদক, ডাবল হর্স নকআউট ০০১ ডব্লিউ এম সি টাইটেল ফাইট বিজয়ী।

সবচেয়ে সাম্প্রতিকভাবে, ‘ডাবল হর্স নকআউট ০০১’ এ ভারতের অভিজ্ঞ যোদ্ধা আজহারউদ্দীন সুধীরকে পরাজিত করে জাজদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে শিরোপা জিতেছেন তিনি।

মুনজুর বলেন, “আমার এই পথচলায় সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে আমার পরিবার। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সাহস আর সমর্থন দিয়েছেন আমার ফুফু মোছাঃ নারগিস খাতুন। কেউ যখন বলতো ‘তুই কী করবি এসব দিয়ে’, তখন তিনি বলতেন তুই মন থেকে কর, আমরা আছি তোর পাশে।”

তিনি আরও বলেন, “আমার বন্ধুদের কথাও না বললেই নয়। তারাই ছিল আমার প্রথম ফাইটিং পার্টনার। মাঠে, নদীতে, বাড়ির উঠানে, এমনকি স্কুল শেষে এক পাশে দাঁড়িয়ে আমরা প্র্যাকটিস করতাম। তারা যদি না থাকত, আমি হয়তো আজ এতদূর আসতে পারতাম না।”

মুনজুরের অনুপ্রেরণা এসেছিল কনর ম্যাকগ্রেগর, খাবিব নুরমাগোমেদভ এবং মোহাম্মদ আলীর মতো কিংবদন্তিদের কাছ থেকে। তবে এখন তার চোখ আন্তর্জাতিক র‌্যাঙ্কিংয়ে।

“আমি চাই, একদিন বাংলাদেশের পতাকা আন্তর্জাতিক মঞ্চে উড়ুক। এটা সহজ নয়, কিন্তু অসম্ভবও নয়। একজন তরুণের ইচ্ছা যদি দৃঢ় হয়, সে পাহাড়ও সরাতে পারে।” বলেন মুনজুর।

মুনজুর আলমের স্বপ্ন একটাই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়া। শুধু নিজের জন্য নয়, দেশের জন্য, মেহেরপুরের জন্য। তার চোখে ভাসে একটাই লক্ষ্য বাংলাদেশকে মার্শাল আর্ট দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠিত করা।

মেহেরপুরের একটি অজপাড়া গ্রাম গাড়াবাড়িয়া থেকে উঠে এসে আন্তর্জাতিক রিংয়ে লড়ছেন একজন তরুণ এটাই প্রমাণ করে, স্বপ্ন কখনও সীমাবদ্ধতার মধ্যে আটকে থাকে না।

মুনজুর আলম এখন শুধুই একজন ফাইটার নন তিনি একজন যুব অনুপ্রেরণা। তার লড়াই, তার সাহস, তার অদম্য মনোবল প্রতিটি তরুণকে শেখায় “তুমিও পারো!”

প্রথম কোচ রাজন হালদার লিটনের স্মৃতিতে এখনো ভাসে সেই শুরুর দিনগুলো। তিনি বলেন, “আমি যখন মুনজুরকে প্রথম দেখি, তখনই বুঝেছিলাম এই ছেলেটা একদিন কিছু করে দেখাবে। আমি শুরু থেকে এখনো পর্যন্ত তার ওপর গর্ব করি।”

বর্তমান কোচ হাবিব পারভেজ বলেন, “কোনো সন্দেহ ছাড়াই মুনজুর আলম বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ফাইটার। বাংলাদেশ এখন তাকে নিয়েই স্বপ্ন দেখতে পারে। আমরা আশা করি, তাকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হিসেবে দেখতে পাব।”

মুনজুরের মা বলেন, “আমি অনেক খুশি আমার ছেলের এমন অর্জনের জন্য। তবে কখনো ভাবিনি, আমার ছেলেটা একদিন দেশের নাম উঁচু করবে। ছোটবেলায় পড়ালেখা না করে সারাদিন শুধু ঝাঁপাঝাঁপি করত। তখন বুঝিনি, ওর ভেতরে লুকিয়ে আছে এত বড় প্রতিভা। সকলে আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন, যেন আরও বড় হতে পারে।”

বন্ধু ও সহযোদ্ধা হুসাইন কবির বলেন, “সে এখন বাংলাদেশের সেরা ফাইটার, এবং আমি বিশ্বাস করি, সে-ই হবে প্রথম বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আমাদের দেশ থেকে। সে শুধু আমার বন্ধু নয়, সে আমার অনুপ্রেরণা।”

ফুফু নারগিস আক্তার বলেন, “ছোটবেলা থেকেই মার্শাল আর্টে ভীষণ আগ্রহী ছিল মুনজুর। আমি বুঝেছিলাম, এই ছেলে একদিন অনেক দূর যাবে। আজ সে দেশের প্রতিনিধিত্ব করছে এটা ভাবলেই চোখে পানি চলে আসে।”

দুই প্রজন্মের দুই কোচ, মা, ফুফু ও বন্ধুর মুখে উচ্চারিত একটিই নাম মুনজুর আলম। দেশের গর্ব হয়ে ওঠা এই তরুণের গল্প শুধু ক্রীড়ার নয়, এটা স্বপ্ন দেখা এবং তা অর্জনের এক অনন্য উদাহরণ।