মেহেরপুরে সিপিবি প্রার্থী অ্যাড. মিজানুর রহমানের মনোনয়নপত্র উত্তোলন

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) মনোনীত মেহেরপুর-১ আসনের (মেহেরপুর সদর ও মুজিবনগর) এমপি প্রার্থী অ্যাডভোকেট মোহা. মিজানুর রহমান মনোনয়নপত্র ও সিডি সংগ্রহ করেছেন।

বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) বিকেলে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে তিনি এ মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন।

এ সময় তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন সিপিবি মেহেরপুর জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড শহিদুল ইসলাম কাননসহ দলের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।




দামুড়হুদায় প্রযুক্তিনির্ভর যুবশক্তি গঠনে জনসচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ

“প্রযুক্তি নির্ভর যুবশক্তি, বহুপাক্ষিক অংশীদারিত্বে অগ্রগতি” প্রতিপাদ্যে শান্তি, শৃঙ্খলা, উন্নয়ন ও সামাজিক সচেতনতায় যুবদের ভূমিকা শীর্ষক জনসচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের আয়োজনে উপজেলা পরিষদের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এ প্রশিক্ষণে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার যুবক-যুবতীরা অংশগ্রহণ করেন।

চুয়াডাঙ্গা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপপরিচালক ফিরোজ আহমেদ-এর সভাপতিত্বে আয়োজিত এই প্রশিক্ষণে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, ঢাকা’র উপপরিচালক (বাস্তবায়ন) ফারিহা নিশাত। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শাহজাহান আলী। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন উপজেলা কৃষি অফিসার শারমিন আক্তার এবং দামুড়হুদা প্রেসক্লাবের সভাপতি শামসুজ্জোহা পলাশ।

প্রশিক্ষণে বক্তারা বলেন, বর্তমান সময়ে প্রযুক্তিনির্ভর দক্ষ যুবশক্তি গড়ে তুলতে হলে সামাজিক সচেতনতা, শান্তি ও শৃঙ্খলা রক্ষায় যুব সমাজকে আরও বেশি সম্পৃক্ত হতে হবে। যুবকরাই আগামীর নেতৃত্ব, তাই বহুপাক্ষিক অংশীদারিত্বের মাধ্যমে উন্নয়নের ধারাকে এগিয়ে নিতে তাদের সক্রিয় ভূমিকা অপরিহার্য।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন, উপজেলা সহকারী যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা রেজাউল।




জাতীয় সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় বিভাগীয় পর্যায়ে প্রথম আনিসা বুশরা

সমন্বিত সাংস্কৃতিক সংসদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত জাতীয় সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা সেরাদের সেরা সিজন ৬ এ বিভাগীয় পর্যায়ে আবৃত্তি (ক গ্রুপ) বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করেছে আনিসা বুশরা।

আনিসা বুশরা মেহেরপুর শহরের ফুলবাগান পাড়ার বাসিন্দা মোস্তাক আহমেদ খাঁনের কন্যা ও এস.এম. সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী।

আনিসা বুশরার এই সাফল্যে পরিবার, শিক্ষকবৃন্দ ও স্থানীয় শুভানুধ্যায়ীরা তার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করেছেন।




দামুড়হুদা ও দর্শনা থানার যৌথ অভিযানে ২ আসামি গ্রেপ্তার

দামুড়হুদা ও দর্শনা থানা যৌথ অভিযান চালিয়ে নাশকতা মামলার এক আসামিসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গত বৃহস্পতিবার ভোরে দর্শনা থানার অফিসার ইনচার্জ মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে দর্শনা পৌরসভার ঈশ্বরচন্দ্রপুর গ্রামে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় দর্শনা থানার এএসআই শামীম হোসেন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সঙ্গীয় ফোর্সসহ অভিযান চালিয়ে আবুল হোসেনের ছেলে ও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি মিলনকে (৪০) গ্রেপ্তার করেন।

পরে দামুড়হুদা ও দর্শনা থানা যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে নাশকতা মামলার আসামি দামুড়হুদা উপজেলার হাউলী ইউনিয়নের লোকনাথপুর গ্রামের মৃত আনোয়ার হোসেনের ছেলে জসিম উদ্দীনকে (৪৫) তার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এ বিষয়ে দর্শনা থানার অফিসার ইনচার্জ জানান, গত এক মাস আগে দর্শনা পুরাতন বাজার এলাকায় ট্র্যাকে আগুন দেওয়ার ঘটনায় তাকে আটক করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত দুইজনকে গতকাল চুয়াডাঙ্গা আদালতে হাজির করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।




 তরুণ-তরুণীদের কর্মসংস্থানে নতুন উদ্যোগ

কোনো ধরনের অভিজ্ঞতা ছাড়াই, শুধু একটি বায়োডাটা জমা দিয়েই মিলতে পারে চাকরি, এমন আশাতেই জেলার তিনটি উপজেলা থেকে হাজারো তরুণ-তরুণী ছুটে এসেছেন চাকরি মেলায়। আর চাকরি দিতে প্রথমবারের মতো চাকরি প্রত্যাশীদের দোরগোড়ায় এসেছে বিভিন্ন নামকরা প্রতিষ্ঠান।

“এই চাকরি মেলার মাধ্যমে প্রত্যন্ত এলাকার তরুণরা চাকরির সুযোগ পাচ্ছে, পাশাপাশি কর্মক্ষেত্র সম্পর্কে ব্যবহারিক ধারণাও অর্জন করছে।” চাকরির আশায় চোখে স্বপ্ন, হাতে বায়োডাটা—এমন দৃশ্যই দেখা গেছে মেহেরপুরের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (টিটিসি) ক্যাম্পাসজুড়ে।

‘তারুণ্যের উৎসব ২০২৫’ উপলক্ষে মেহেরপুরে দুই দিনব্যাপী এই চাকরি মেলায় ভিড় জমিয়েছেন জেলার হাজারো বেকার তরুণ-তরুণী। গতকাল বুধবার সকালে মেলার উদ্বোধনের পর থেকেই চাকরি প্রত্যাশীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। প্রাণ, আরএফএল, এসিআইসহ দেশের স্বনামধন্য ৯টি বেসরকারি চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশ নেয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্টলে গিয়ে তরুণরা নিজেদের বায়োডাটা জমা দেন। আয়োজকদের তথ্যমতে, মেলার প্রথম দিনেই জমা পড়েছে প্রায় হাজারেরও বেশি বায়োডাটা। এর মধ্যে তিনটি প্রতিষ্ঠান সরাসরি ৭০ জন চাকরি প্রত্যাশীর চাকরি নিশ্চিত করেছে। যাচাই-বাছাই শেষে নির্বাচিত অন্যান্য প্রার্থীদেরও সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে দক্ষতার ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হবে।

মেলার প্রথম দিনে প্রাণ-আরএফএল, এসিআইসহ তিনটি কোম্পানী থেকে ৭০ জন আবেদনকারীকে চাকুরি দিয়েছেন। আগামীকাল সকাল থেকেই অন্যান্য প্রার্থীদের ডাকা হবে বলে জানিয়েছেন কোম্পানীর প্রতিনিধিরা।

চাকুরি প্রত্যাশী জুলেখা আক্তার, শাহাজান আলী ও আব্দুর রহমান জানান, “চাকরি মেলার মাধ্যমে বেকারদের জন্য একটি ভালো কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। অনেকেই এখান থেকে চাকরি পাচ্ছেন। ভবিষ্যতে এ ধরনের মেলার সংখ্যা আরও বাড়ানো উচিত।” তারা এধরনের মেলা প্রতিবছরই করার আহবান জানিয়ে বলেন, এধরণের আয়োজন বেকার যুবক যুবতীদের মাঝে নতুন আশা জাগাবে।

মেহেরপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) জব রিপ্লেস অফিসার মেহফুজ আহমেদ বলেন, “মেহেরপুরের প্রত্যন্ত এলাকার তরুণদের জন্য এই চাকরি মেলা নতুন এক সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। শুধু চাকরির সুযোগ নয়, কর্মক্ষেত্র সম্পর্কে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনের ক্ষেত্রও তৈরি হয়েছে এমেলার মাধ্যমে।”

আতিথেয়তা, আইটি, নির্মাণ, তৈরি পোশাক, কেয়ারগিভিংসহ বিভিন্ন খাতের ৩০টির বেশি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। আয়োজকেরা বলেন, এই মেলা দক্ষ তরুণুতরুণীদের সঙ্গে নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সরাসরি যোগাযোগের সুযোগ সৃষ্টি করেছে—যা স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থানের নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।

আয়োজকদের আশা, এই চাকরি মেলার মাধ্যমে অন্তত সাড়ে ছয় হাজার তরুণ-তরুণী তাদের কাঙ্ক্ষিত কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে বলে আশা ব্যক্ত করে মেহেরপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) অধ্যক্ষ ড. প্রকৌশলী মো. শামীম হোসেন বলেন, “চাকরি মেলার মাধ্যমে চাকরি প্রত্যাশীরা তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবেন। এই মেলা চাকরির পাশাপাশি দক্ষতা ও সুযোগের মধ্যে একটি কার্যকর সেতুবন্ধন তৈরি করেছে। বিশেষ করে নারীদের কর্মসংস্থ’ান বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এটি একটি ইতিবাচক উদ্যোগ। এছাড়া আমাদের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন—দক্ষতাকে টেকসই জীবিকায় রূপান্তরিত করার পথে এটি এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আমাদের লক্ষ্য মেহেরপুরের তরুণসমাজকে কর্মমুখী ও উদ্যোক্তায় পরিণত করা।’




চুয়ান্নটা বিজয় দিবস পেরোলেও বদলায়নি স্বামী সন্তানহীনা মনোয়ারার কষ্টের জীবন

আলমডাঙ্গা উপজেলার বেলগাছি গ্রামের এক কোণে নীরবে বেঁচে আছেন মনোরা। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তিনি আজ সম্পূর্ণ একা। নেই স্বামী, নেই কোনো সন্তান— আপন বলতে কেউ না থাকায় বোনের বাড়িতে মাথাগোজার ঠাঁই হলেও পাইনি ক্ষুধার জ্বালা নিবারন করার দিশা। মানুষের দয়ার ওপর ভর করেই কাটছে তার প্রতিটি দিন। ভিক্ষাই হয়ে উঠেছে জীবনের একমাত্র অবলম্বন।

বার্ধক্যের ভারে নুয়ে পড়া ক্লান্ত শরীর নিয়ে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পথে পথে ঘুরে বেড়ান দু’মুঠো খাবারের খোঁজে। কারও দরজায় দু’মুঠো চাল, কারও কাছে সামান্য টাকা —এই সামান্য নিয়েই কোনোরকমে চলে তার দিন। ক্ষুধা, অসুস্থতা আর অনিশ্চয়তা যেন তার নিত্যসঙ্গী। অসুখে পড়লে পাশে দাঁড়ানোর কেউ নেই, রাত নামলেই মাথা গোঁজার মতো নির্ভরতার আশ্রয় বলতে বাঁশ ঝাড়ের নিচে অন্যের জমিতে একটি কুঁড়ি ঘর।

চোখে জমে থাকা অব্যক্ত কষ্ট আর মুখের নীরব দীর্ঘশ্বাস যেন বলে দেয়—এই জীবনে কত না পাওয়া আর বঞ্চনার গল্প লুকিয়ে আছে। সমাজের আলো–ঝলমলে উন্নয়নের আড়ালে হারিয়ে যাওয়া এমন অসহায় মানুষগুলোর বাস্তব চিত্রই মনোরার জীবনগাথা।

জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও হয়নি বিধবা ভাতা বা বয়স্ক ভাতা।

মনোরার মতো আরও কত অসহায় স্বামী সন্তানহীন নারী আজও আমাদের চারপাশে নীরবে কষ্ট বয়ে চলেছেন। যাদের জীবনের শেষ সম্বল শুধু মানুষের করুণা আর মানবিকতার অপেক্ষা। প্রশ্ন থেকেই যায়—এই মানুষগুলোর দায় কি শুধুই তাদের নিজের? নাকি সমাজ ও রাষ্ট্রেরও কিছু দায়িত্ব আছে?

এ বিষয়ে আলমডাঙ্গা উপজেলা সমাজসেবা অফিসার সাজ্জাদ হোসেন বলেন, এই নামে কোনো বয়স্ক ভাতা বা বিধবা ভাতার কোন আবেদন আমার দপ্তরে জমা পড়েনি, আবেদন জমা পড়লে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহন করবো।

এ বিষয়ে মানবাধিকার কর্মী শরাফত হোসেন রাসেল বলেন, সমাজে এমন অসংখ্য অসহায় মানুষ আছে প্রায় প্রায় অনাহারে থাকে। এই অসহায় মানুষের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। এছাড়াও সমাজের যারা ধনাত্নক ব্যাক্তি আছে তারাও এর দায় এড়িয়ে যেতে পারে না। প্রতিবেশী অনাহারে থেকেও, যদি আমরা নিজের পেট ভরে শান্তিতে ঘুমাতে পারি—তবে সেটা আসলে ঘুম নয়, ওটা বিবেকের গভীর অচেতনতা। কারণ মানুষের ক্ষুধা শুধু পেটের নয়, মানুষের ক্ষুধা ভালোবাসা, সহমর্মিতা আর মানবিকতারও। পাশের ঘরে কেউ না খেয়ে কাঁদছে, আর আমরা চোখ বন্ধ করে নিশ্চিন্তে ঘুমাই—এই নীরবতাই সবচেয়ে ভয়ংকর।




দর্শনায় যুবসমাজের উদ্যোগে রাস্তা সংস্কার 

দর্শনায় আজমপুর যুব সমাজ ওয়াজ পরিচালনা কমিটির উদ্যোগে ২ টি রাস্তা সংস্কার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার সকালে আজমপুর ৩ নং ওয়ার্ডের ২ টি রাস্তা সংস্কার করা হয়।

আজমপুর যুব সমাজ ওয়াজ পরিচালনা কমিটির সেক্রেটারি মোঃ মাহাবুব আলাম বলেন, আজমপুর ৩ নং ওয়ার্ড অনেক অবহেলিত। দীর্ঘদিন ধরে এ ওয়ার্ডের ২ টি রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। সাধারণ মানুষের চলাচলে চরম ভোগান্তি হচ্ছে। এজন্য আমাদের উদ্যোগে ২ টি রাস্তা সংস্কার করেছি আমাদের সাধ্য মতো। আমরা দর্শনা পৌরসভার পৌর প্রশাসকের সাথে এ ব্যাপারে কথা বলেছি দ্রুত রাস্তা সংস্কার করার জন্য অনুরোধ করেছি।

সাধারণ মানুষেরা বলছেন, আমাদের ওয়ার্ডের রাস্তা ২ টি চলাচলের উপযোগী ছিল না। অনেক দিন ধরে এ সমস্যার কোনো সমাধান হয়নি। আজ যুবসমাজের উদ্যোগে ২ টি রাস্তা সংস্কার করা হয়েছে। আমরা সাধারণ মানুষ চাই আমাদের এলাকার রাস্তাগুলো উন্নত হোক।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, আজমপুর যুব সমাজ ওয়াজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোঃ মনিরুজ্জামান মনির, আবু বক্কর, আবু সালেহ, হাসিবুল ইসলাম মন্টু, আব্দুল কাইযুম, আবুল কালাম, ফারুক হোসেন, সোহাগ, রাজু, রানা সহ কমিটির সদস্যবৃন্দ।




মেহেরপুর-২ আসনে বিএনপি প্রার্থী আমজাদ হোসেনের পক্ষে মনোনয়নপত্র উত্তোলন

মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) মনোনীত প্রার্থী ও সাবেক সংসদ সদস্য আমজাদ হোসেনের পক্ষে মনোনয়নপত্র উত্তোলন করা হয়েছে।

বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় গাংনী ইউনিয়ন পরিষদে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেনের কাছ থেকে তাঁর প্রতিনিধি দল এ মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে।

মনোনয়নপত্র উত্তোলন করেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বাবু।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক মাহবুবুর রহমান, তেতুলবাড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি এ এস এম সায়েম, রায়পুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি মো. নাসির উদ্দিন এবং উপজেলা কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক মো. মোখলেছুর রহমান মুকুল।




ভূমিকম্প সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি

দিনটি ছিল শুক্রবার। সাপ্তাহিক ছুটির দিন। দেশবাসী নাশতা সেরে ছুটির দিনের কাজগুলো যেমন, বাজার করা, রান্না-বান্নার বিশেষ আয়োজন, আয়েশ করে বিশ্রাম, বেড়াতে যাওয়ার প্রস্তুতি, এসব নিয়ে ব্যস্ত। সকাল ১০টা ৩৬ মিনিটে হঠাৎ করে রাজধানীসহ পুরো দেশ একটা ঝাঁকুনি অনুভব করলো। ঝাঁকুনির তীব্রটা ক্রমে বাড়তে থাকলো।

সেই সাথে বেশ খানিকটা সময় নিয়ে পুরো দেশ যেন দুলছিলো। নিকট অতীতে এত বড়ো ঝাঁকুনি বা ভূমিকম্প দেশবাসী উপলব্ধি করেনি। কিছুক্ষণের মধ্যে গণমাধ্যম আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে জনসাধারণ বিষয়টা বিষদ জানতে পারলো। সেই সাথে তারা তাদের প্রতিক্রিয়াটাও প্রকাশ করলো।

২১ নভেম্বরের এ ভূ-কম্পনটির উৎপত্তি স্থল ছিল ঢাকার অদূরে নরসিংদীতে। তীব্রতা ছিল রিখটার স্কেলে ৫.৭ মাত্রার। কাছাকাছি উৎপত্তিস্থল এবং তীব্রতার কারণে রাজধানীবাসীসহ দেশবাসী উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়েছিল। এদিনের ভূমিকম্পে ১১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। আহত হন আরও অনেকে।

২১ নভেম্বরের পরদিন সকালে এবং সন্ধ্যায় আরও দুবার কম্পন অনুভূত হয়। তবে এর মাত্রা ছিল কম। শুক্রবারের ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পের পর শনিবার ফের দুবার মৃদু ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এদিন সকালে ৩.৩ মাত্রা এবং সন্ধ্যায় ৪.৩ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। এই কম্পনগুলোকে ‘আফটার শক’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের (বিএমডি) পরিচালক ভূমিকম্প বলতে সাধারণভাবে ভূ-পৃষ্ঠে সৃষ্ট কম্পনকে বোঝায়। অর্থাৎ ভূ-অভ্যন্তরে হঠাৎ সৃষ্ট কোনো কম্পন যখন ভূত্বককে আকস্মিক আন্দোলিত করে, সাধারণত তাকে ভূমিকম্প বলে। ভূমিকম্পের ফলে ভূ-পৃষ্ঠে পরিবর্তন সূচিত হয়। মৃদু ভূমিকম্প আমরা অনুভব করতে পারি না। কিন্তু অপেক্ষাকৃত প্রবল ভূমিকম্প আমরা সহজে অনুভব করতে পারি। সাধারণত ভূমিকম্প কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী হয় এবং পর্যায়ক্রমে একাধিকবার ঘটতে পারে। ভূমিকম্পনের মাত্রা তীব্র হলে ঘরবাড়ি, রাস্তা-ঘাট, গাছপালা প্রভৃতি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।

পৃথিবীর অভ্যন্তরে কোন একটি স্থানে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়। ভূঅভ্যন্তরের যে স্থানে ভূমিকম্পনের উৎপত্তি হয় তাকে কেন্দ্র (Centre) বলা হয়। কেন্দ্রের সোজা উপরে ভূপৃষ্ঠস্থ বিন্দুকে উপকেন্দ্র (Epicentre) বলে। ভূমিকম্পের কেন্দ্র ভূ-অভ্যন্তরের প্রায় ১৬ থেকে ২০ কিলোমিটার এর মধ্যে অবস্থিত থাকে। ভূমিকম্প-প্রবণ এলাকাগুলো উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা: বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলকে ভূমিকম্পন-প্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। সিলেট, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান। মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা: ঢাকা, কুমিল্লা, ফরিদপুর। কম ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা: খুলনা, বরিশাল। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রামে ৭.৫ বা তার বেশি মাত্রার ভূমিকম্প হলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

বাংলাদেশে ভূমিকম্পের ঘটনা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মাত্রায় রেকর্ড করা হয়েছে। ২০০১ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ১৭ বছরে মোট ৫৯০টি ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে, যা বছরে গড়ে প্রায় ৩৫টি ভূমিকম্পের সমান। এই গড় অনুসারে, গত ৮ বছরে (২০১৭ থেকে ২০২৫) ২৮০টি ভূমিকম্প হয়েছে। তবে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান পেতে আবহাওয়া অধিদপ্তর বা ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের সর্বশেষ তথ্য পর্যালোচনা করা উচিত। বাংলাদেশে বছরে গড়ে ৩৫টি মৃদু ভূমিকম্প (সাধারণত ৪.০ বা তার কম মাত্রার) বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ভূতাত্ত্বিক এবং ভূমিকম্প সংক্রান্ত ইঙ্গিত বহন করে। ভূমিকম্প হলে ঢাকার কী ভয়াবহ অবস্থা হতে পারে এ নিয়ে যারা চিন্তিত, উদ্বিগ্ন এবং ঐ সময়ের করণীয় ও এর পূর্বের করণীয় বিষয়ে নির্দেশ করছেন, এর প্রায় সবটার সাথে আমরাও একমত। বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘তীব্র ভূমিকম্প হলে রাজধানী ঢাকা অগ্নিকুণ্ডে পরিণত হবে।’ তিনি জাপানের কোবে নগরীর উদাহরণ টেনে বলেন, ভূমিকম্পে ঐ বাণিজ্যিক নগরী শিল্পে ব্যবহৃত গ্যাসে প্রায় সাত দিন জ্বলেছিল।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক বলেছিলেন, ‘পৃথিবীর ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম ঢাকা। সেই সঙ্গে ঢাকায় রয়েছে অপরিকল্পিত নগরায়ণ। শক্তিশালী ভূমিকম্পে রাজধানীতে ধসে যেতে পারে ১০ শতাংশ ভবন। এতে কমপক্ষে দুই লাখ মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। ধসে যাওয়া ভবনে অবরুদ্ধ হবে পাঁচ থেকে ১০ লাখ মানুষ। নগরবাসীদের উদ্ধারে যথাযোগ্য প্রস্তুতি না থাকায় গ্যাসলাইন ফেটে, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ও অনাহারে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

সাম্প্রতিক এই কম্পনগুলো বাংলাদেশকে পুনরায় ভূমিকম্পের ঝুঁকির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ভবিষ্যৎ বিপর্যয় এড়াতে তাঁরা বলেন, ‘আমাদের এই অঞ্চল ভূমিকম্পের অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। এ জন্য আমাদের ভবন নির্মাণে অধিক সচেতন ও বিল্ডিং কোড মেনে চলতে হবে। আমাদের খোলা মাঠ, পার্ক সংরক্ষণ করতে হবে। একই সঙ্গে ভবনসংলগ্ন রাস্তাগুলোকে সুপ্রশস্ত করতে হবে।’

বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিকভাবে ভূমিকম্প-প্রবণ অঞ্চলে অবস্থিত। দেশটি তিনটি প্রধান টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে রয়েছে: ইউরেশিয়ান প্লেট, ইন্ডিয়ান প্লেট ও বার্মা মাইক্রোপ্লেট। এ প্লেটগুলোর সংঘর্ষ ও সঞ্চিত ভূতাত্ত্বিক চাপের কারণে বাংলাদেশে মাঝারি থেকে বড়ো মাত্রার ভূমিকম্পের আশঙ্কা রয়েছে। ২০২৪ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত ৬০টির বেশি ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়েছে এ অঞ্চলে।

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় যদি ৬.৯ মাত্রার ভূমিকম্প হয়, তাহলে আট লাখ ৬৪ হাজার ভবন ধসে পড়বে। যা শতকরা হিসেবে মোট বিল্ডিংয়ের ৪০শতাংশ। এ ভূমিকম্প যদি দিনের বেলায় হয়, তাহলে দুই লাখ ১০ হাজার মানুষের মৃত্যু হবে। ভূমিকম্পটি যদি রাতের বেলায় হয়, তাহলে তিন লাখ ২০ হাজার মানুষের মৃত্যু হবে। এ তথ্য উঠে এসেছে ২০২৩ সালে রাজউকের গবেষণায়। বর্তমানে বিশেষজ্ঞদের মতে ভূমিকম্পের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ৭.৫ হতে ৮ মাত্রার ভূমিকম্পের আশঙ্কা রয়েছে।

বিজ্ঞানীরা মনে করেন, একাধিক ছোটো ভূমিকম্প একটি বড়ো ভূমিকম্পের আগাম সংকেত হতে পারে। বিশেষ করে যদি এটি একই অঞ্চলে বারবার ঘটে এবং কম্পনের মাত্রা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। ভূমিকম্পের ঝুঁকি নিয়ে বিভিন্ন ভূতাত্ত্বিক গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থেকে সতর্কবার্তা আসতে পারে যে, বাংলাদেশ বড়ো ভূমিকম্পের জন্য প্রস্তুত কি না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরের ভবন ও অবকাঠামো বড়ো ভূমিকম্প সহ্য করার মতো উপযুক্ত নয়, তাই যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করা জরুরি। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, ছোটো ভূমিকম্পগুলো যদি নির্দিষ্ট একটি অঞ্চলে ঘনঘন হয়, তবে এটি সেখানে বড়ো ভূমিকম্পের প্রস্তুতির ইঙ্গিত দিতে পারে। বিশেষত, ঢাকার মতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় নিয়মিত ভূমিকম্প হলে, এটি বড়ো বিপর্যয়ের সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে পারে।

বাংলাদেশে বড়ো ভূমিকম্পের ঝুঁকি রয়েছে, তবে তা মোকাবিলার সক্ষমতা এখনো অনেক সীমিত। ভূমিকম্প-সহনীয় অবকাঠামো নির্মাণ, সচেতনতা বৃদ্ধি ও জরুরি ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন জরুরি, না হলে বড়ো ভূমিকম্প হলে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। বাংলাদেশে বছরে ৩৫টি মৃদু ভূমিকম্প একটি স্বাভাবিক ঘটনা মনে হলেও এটি ভবিষ্যতে বড়ো ভূমিকম্পের জন্য একটি সতর্কবার্তা হতে পারে। তাই এখন থেকেই ভূমিকম্পের ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। সুতরাং বাংলাদেশের ঘনঘন ছোটো ভূমিকম্প ভবিষ্যতে বড়ো ভূমিকম্পের আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলতে পারে। তাই এখন থেকেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

ভূমিকম্প সহনীয় ভবন নির্মাণ বাধ্যতামূলক করা। ফল্টলাইন গুলোর পর্যবেক্ষণ বৃদ্ধি করা। জনগণকে ভূমিকম্প মোকাবিলার প্রশিক্ষণ দেওয়া। জরুরি উদ্ধার ও ত্রাণ ব্যবস্থার উন্নতি করা। সচেতনতা বৃদ্ধি করা ও মহড়া চালানো। জরুরি উদ্ধার ও ত্রাণব্যবস্থার উন্নতি করা।

ফায়ার সার্ভিস ও উদ্ধার বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। হাসপাতাল ও চিকিৎসা ব্যবস্থাকে ভূমিকম্প পরবর্তী পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত করা। সেনাবাহিনী ও অন্যান্য বাহিনী ভূমিকম্প পরবর্তী পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত করা। স্কুল, কলেজ, অফিসে ভূমিকম্প মহড়া বাধ্যতামূলক করা। জনগণকে ভূমিকম্প কালীন করণীয় সম্পর্কে সচেতন করা। উন্নত ভূকম্পন পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা। আন্তর্জাতিক গবেষণা ও সহযোগিতা বৃদ্ধি করা।

পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগই হঠাৎ করে আসে। আর এই দুর্যোগকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা মানুষের নেই। তাই এর হাত থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় সচেতন থাকা এবং বাড়ি ও অন্যান্য স্থাপনা তৈরির সময় নিয়ম মেনে চলা। বাড়ি তৈরির সময় খরচ বাঁচানোর চেষ্টা করলে তা আমাদের বাড়িটিকে দুর্বল করবে। বলা যায় না, এই ফাঁকি হয়তো আমাদের জীবনের বিনিময়ে শুধতে হবে। তাই সকলের এ বিষয়ে সতর্ক ও সচেতন থাকা উচিত।

ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়ার মুহূর্তে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন ও সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়াই প্রাণরক্ষার প্রধান উপায়। ভূমিকম্প শুরু হলে যারা ঘরের ভেতরে অবস্থান করছেন, তাঁদের উচিত দ্রুত মজবুত টেবিল, খাট বা কাঠামোর নিচে আশ্রয় নেওয়া এবং মাথা ও ঘাড় দুই হাত দিয়ে ঢেকে রাখা। জানালা, কাচ, আলমারি, ঝুলন্ত ফ্যান ও ভারী আসবাবপত্র থেকে দূরে থাকতে হবে। লিফট ব্যবহার না করে নিরাপদ স্থানে অবস্থান করতে হবে এবং কম্পন চলাকালে বাইরে দৌড়ানোর চেষ্টা না করাই শ্রেয়। রান্নাঘরে থাকলে গ্যাসের চুলা বন্ধ করার চেষ্টা করতে হবে, তবে নিজের নিরাপত্তাকে সর্বাগ্রে গুরুত্ব দিতে হবে। বিদ্যুৎ ও গ্যাস লাইনের সম্ভাব্য ঝুঁকি মাথায় রেখে সতর্ক থাকতে হবে।

অন্যদিকে যারা বাইরে অবস্থান করছেন, তাঁদের উচিত খোলা জায়গায় চলে যাওয়া এবং বিদ্যুৎ খুঁটি, বিলবোর্ড, গাছ ও উঁচু ভবন থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা। যানবাহনে থাকলে নিরাপদ স্থানে থামিয়ে গাড়ির ভেতরেই অবস্থান করা উত্তম। ভূমিকম্প থেমে যাওয়ার পর ভবনে পুনরায় প্রবেশের আগে ফাটল বা ক্ষয়ক্ষতি রয়েছে কি না তা যাচাই করা জরুরি। একই সঙ্গে পরবর্তী আফটার শকের আশঙ্কা মাথায় রেখে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া, শিশু, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীদের সহায়তা করা এবং গুজবে কান না দিয়ে দায়িত্বশীল উৎস থেকে নির্দেশনা অনুসরণ করাই হবে ভূমিকম্প পরবর্তী সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ করণীয়।

ভূমিকম্প মোকাবিলায় সবচেয়ে বড় শক্তি হলো সচেতনতা ও প্রস্তুতি। ব্যক্তি, পরিবার, প্রতিষ্ঠান এবং রাষ্ট্র সবার সম্মিলিত উদ্যোগই পারে সম্ভাব্য বিপর্যয়ের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে। নিয়মিত মহড়া, প্রশিক্ষণ এবং জনসচেতনতা কার্যক্রমের মাধ্যমে ভূমিকম্পকালীন করণীয় সম্পর্কে জনগণকে প্রস্তুত করা গেলে অনেক প্রাণ রক্ষা করা সম্ভব।
লেখক: মহাপরিচালক, বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ, ঢাকা।




ঝিনাইদহে মাদকমুক্ত ও আলোকিত সমাজ বিনির্মাণে ক্রিকেট টুর্নামেন্টে’র উদ্বোধন

মাদকমুক্ত ও আলোকিত সমাজ বিনির্মাণে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সাধুহাটী ইউনিয়নে ক্রিকেট টুর্নামেন্ট শুরু হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) বিকালে বদরগঞ্জ কলেজ মাঠে এই ক্রিকেট খেলার উদ্বোধন করেন ঝিনাইদহ সরকারী নরুন্নেহার মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক সুষেন্দু ভৌমিক।

সাধুহাটী তারুণ্যের অগ্রযাত্রার প্রধান উপদেষ্টা সাকিব মোহাম্মদ আল হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সভাপতি আসিফ কাজল ও বদরগঞ্জ বাকী বিল্লাহ (রহঃ) কামেল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা রুহুল আমীন অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় সাবেক অধ্যক্ষ সুষেন্দু ভৌমিক বলেন, এখানে শুধুমাত্র একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের উদ্বোধন করতে সমবেত হইনি। আমরা একত্রিত হয়েছি একটি মহান অঙ্গীকার বাস্তবায়নের প্রথম ধাপ হিসেবে। এই টুর্নামেন্টের মূল লক্ষ্য হলো: মাদক মুক্ত ও আলোকিত সমাজ বিনির্মাণ।

মাদকাসক্তি আমাদের সমাজের, বিশেষ করে আমাদের তরুণ প্রজন্মের জন্য এক মারাত্মক অভিশাপ। এটি কেবল একটি ব্যক্তিকে নয়, একটি পরিবারকে, একটি জাতিকে ধ্বংস করে দেয়। মাদক আমাদের সম্ভাবনাময় তরুণদের স্বপ্নগুলোকে কেড়ে নেয়।

কিন্তু, আমরা জানি, খেলাধুলার শক্তি মাদকের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। খেলাধুলা তরুণদের মনে সাহস, শৃঙ্খলা এবং ইতিবাচকতা সৃষ্টি করে। যখন একটি ছেলে বা মেয়ে খেলার মাঠে ঘাম ঝরায়, তখন তার মনে মাদকের অন্ধকার বাসা বাঁধতে পারে না।

ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সভাপতি আসিফ কাজল বলেন, ক্রিকেট শুধু একটি খেলা নয়; এটি দলগত ঐক্যের, শৃঙ্খলাবোধের এবং প্রতিপক্ষের প্রতি শ্রদ্ধার এক অনন্য পাঠশালা। এই টুর্নামেন্টের প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি বল ও প্রতিটি রান আমাদের তরুণদের নিয়মানুবর্তিতা ও সময়জ্ঞান যা তাদের জীবনকে সুশৃঙ্খল করতে শেখাবে।

বদরগঞ্জ বাকী বিল্লাহ (রহঃ) কামেল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা রুহুল আমীন বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, খেলাধুলার এই আলোকরশ্মি তরুণদের মন থেকে মাদকের অন্ধকারকে দূর করবে এবং তাদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করবে। উদ্বোধনী খেলায় রাঙ্গিয়ারপোতা ও এনায়েতপুর ক্রিকেট টিম অংশ গ্রহন করে।