খাবারের অপচয় রোধ করতে হবে

পৃথিবীতে প্রতি রাতে ৮০ থেকে ৮৩ কোটির বেশি মানুষ ক্ষুধার্ত অবস্থা ঘুমাতে যায় যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার কম- বেশি ১০ শতাংশ এবং এই সংখ্যা দিন দিন বেড়েছে। পৃথিবীর জনসংখ্যা ৮.২ বিলিয়ন বা ৮২০ কোটিরও বেশি। বাংলাদেশের জনসংখ্যা কম-বেশি ১৮ কোটি। বিশ্বব্যাংকের হিসেবে দেশে চার বছর ধরে দারিদ্র্যের হার বাড়ছে। সংস্থাটির মতে বর্তমানে দেশে দারিদ্র্যের হার ২১ শতাংশের কিছু বেশি। সে হিসেবে দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কম-বেশি ৩ কোটি ৬০ লাখ। দেশের জনসংখ্যার বড়ো একটি অংশ দারিদ্র্যসীমার কিছুটা ওপরে থাকে। তারা উচ্চ মূল্যস্ফীতির মতো বিভিন্ন আঘাতের কারণে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। বিশ্বব্যাংকের হিসেবে ২০২২ সালে সংখ্যাটি ছিল ৬ কোটি ২০ লাখ। ২০২৫ সালের বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে (GHI) বাংলাদেশের অবস্থান ৮৫তম, যা ১২৩টি দেশের মধ্যে ‘মাঝারি’ (Moderate) ক্ষুধার ক্যাটাগরিতে পড়েছে এবং স্কোর ১৯.২, যা ২০২৪ সালের তুলনায় কিছুটা ভালো। তবে, জাতিসংঘের ‘গ্লোবাল রিপোর্ট অন ফুড ক্রাইসিস ২০২৫’ অনুযায়ী, তীব্র খাদ্য সংকটে থাকা শীর্ষ ৫ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ চতুর্থ অবস্থানে আছে। ভারত (১০২তম) ও পাকিস্তানের চেয়ে ভালো অবস্থানে থাকলেও নেপাল ও শ্রীলঙ্কার চেয়ে পিছিয়ে আছে।

বিশ্বে প্রতিদিন না খেয়ে থাকা মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে,যা খুবই হতাশার সংবাদ। বিশ্বে প্রতিদিন যে পরিমান খাবার মানুষ অপচয় করে তা দিয়ে কম-বেশ ১০০ কোটি মানুষকে খাওয়ানো যেতো। অর্থাৎ প্রতিদিন প্রায় ১০০ কোটি মানুষের খাবার নষ্ট হয়, যা বিশ্বব্যাপী উৎপাদিত মোট খাদ্যের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ । যেখানে কোটি কোটি মানুষ অনাহারে থাকে সেখানে এটা ভাবাও চরম বিলাসিতা। এই অপচয় পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে প্রায় ৯০ কোটি মানুষ গুরুতর খাদ্য সংকটে ছিল এবং ২০৩০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা ৬০ কোটিতে পৌঁছানোর আশঙ্কা রয়েছে। ধনী দেশগুলোর আর্থিক সাহায্য কমে যাওয়া, জলবায়ু পরিবর্তন এবং সংঘাতের কারণে এই অভুক্ত মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ২০২৪ সালে জাতিসংঘ মানবিক সাহায্যের জন্য চার হাজার ৯৬০ কোটি টাকা তুলতে চেয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা ৪৬ শতাংশ অর্থ তুলতে পেরেছিলো। অর্থের অভাবে জাতিসংঘ মানবিক সাহায্য সংস্থা প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও অভুক্ত মানুষের কাছে খাবার পৌঁছাতে পারে নি।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ ইউনিট (এফপিএমইউ) ও জাতিসংঘের তিন সংস্থা রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ দেশের ৩৬ জেলার ৯ কোটি ৬৬ লাখের বেশি মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা ও পুষ্টি অবস্থা বিশ্লেষণ করে গত ৩০ অক্টোবর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের দুর্যোগপ্রবণ জেলাগুলোর ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ বড়ো ধরনের খাদ্যসংকটে পড়তে যাচ্ছে। আর চরম অপুষ্টির সম্মুখীন হতে যাচ্ছে ১৬ লাখ শিশু। বাংলাদেশে জনসংখ্যার অর্ধেক নারী এবং কম-বেশি দুই-তৃতীয়াংশ কর্মক্ষম। এটি ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের সুফল অর্জনের একটি সুযোগ। জনসংখ্যার ৭ শতাংশ প্রায় ১.২ কোটি মানুষ ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সি, যা বয়স্ক জনগণের সংখ্যা বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিচ্ছে। জনসংখ্যার ১৯ শতাংশ কম-বেশি ৩ কেটি ৫০ লাখ কিশোর-কিশোরী এবং ১০ থেকে ২৪ বছর বয়সি তরুণের সংখ্যা প্রায় ৫ কোটি যা জনসংখ্যার ২৮ শতাংশ। চরম অপুষ্টির সম্মুখীন হতে যাচ্ছে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম।

খাদ্য অপচয়কে বুঝতে হলে ‘ফুড লস’ ও ‘ফুড ওয়েস্ট’ বুঝতে হবে। যখন শস্যদানা যেমন চাল-গম-ডাল, সবজি ও ফল, বিভিন্ন প্রাণীর মাংস, ডিম বা দুধ এসব উৎপাদনের পর বাজারজাতকরণ পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরে যেসব অপচয় হয় তাকে ‘ফুড লস’ বলে। কিন্তু যখন এসব খাবার বাড়ি বা রেস্তোরাঁ বা কমিউনিটি সেন্টারে রান্নার পর অপচয় হয় তখন সেটিকে ‘ফুড ওয়েস্ট’ বলা হয়। খাবার নষ্ট করা কোনো বিবেচনাতেই গ্রহণযোগ্য নয়। যদিও অনেক সময় ইচ্ছা না থাকলেও খাবার নষ্ট হয়। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিছু খাবার নষ্টে মানসিকতাও অনেকটা দায়ি। হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলোয় বুফে খেতে গিয়ে অনেক খাবার নষ্ট হয়। কোনো অনুষ্ঠানে প্রয়োজনের বেশি রান্না করা হয়, সেগুলোর অনেকটাই ডাস্টবিনে চলে যায়। শিল্পপ্রধান দেশগুলোতে প্রধানতঃ দোকান, বাসা ও খাওয়ার টেবিলে খাদ্যের অপচয় হয়। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ফসল সংগ্রহ করার অদক্ষ পদ্ধতি, অপর্যাপ্ত খাদ্য গুদাম ও খাদ্য হিমায়িত রাখার অপ্রতুল ব্যবস্থা অথবা ক্ষেত থেকে বাজারের খাদ্য নিয়ে যাওয়ার সমস্যার কারণে ক্ষেত থেকে বের হবার আগেই বেশিরভাগ খাদ্যের অপচয় হয়।

খাদ্যের অপচয় রোধ করা এই মুহূর্তে মানবতার সবচেয়ে বড়ো চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি। জীবন ধারণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে খাবার। খাবার অপচয় করার অর্থ হলো ক্ষুধার্ত এবং গরিবের মুখ থেকে কেড়ে নেয়া। কোনো এক সময় প্লেটের সব খাবার শেষ করে খেতে না পারা স্বাভাবিক ব্যাপার হতে পারে । কিন্তু অনেকে আছেন যাদের খাবার অপচয় করা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে, প্রতিবারেই তারা প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার নিচ্ছে এবং অপচয় করছে যা একটা গুরুতর সমস্যা। তবে খাবার অপচয়ের বিরুদ্ধে লড়াই করা খুব সহজ বিষয় নয়। তাহলে কীভাবে খাবার অপচয় রোধ করা সম্ভব। প্রথমত সবাইকে খাবার অপচয় সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। আমরা প্রতিদিন যত খাবার কিনি বা তৈরি করি তার কম-বেশি ১৪ শতাংশ খাবারই অপচয় হয়। শুধু খাবার অপচয় হলে যে ক্ষতি হয়, তার চেয়ে আরও বেশি ক্ষতি হয় পরিবেশের পঁচে যাওয়া খাবার থেকে যে পরিমাণ গ্রীন হাউস গ্যাস (মিথেন) নির্গত হয়, তা কার্বন ডাই অক্সাইডের চেয়ে প্রায় ২৫ গুণ বেশি ক্ষতিকারক।

বিশেষজ্ঞরা খাদ্যের অপচয় রোধে কিছু টিপস দিয়েছেন। এগুলো ফলো করলে একদিকে যেমন খাদ্যের অপচয় রোধ করা সম্ভব,তেমনি আর্থিকভাবেও লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এ জন্য নিজেকে একটু স্মার্ট’ হতে হবে।বাজার করার আগেই জেনে নিতে হবে বাড়িতে কী আছে,আর কি নাই। আর প্রয়োজনইবা কতোটুকু। যা প্রয়োজন, কেবল ততটুকুই কিনতে হবে। বিশেষ করে পচনশীল খাবার কেনার সময় বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। প্রয়োজনের তালিকা করে নিয়ে বাজারে যেতে হবে। রোজ কতটা খাবার বা খাদ্য উপকরণ ফেলে দেওয়া হচ্ছে সেটিরও খেয়াল রাখতে হবে। তাহলে সহজেই বুঝা যাবে কতটা অপচয় রোধ করার সুযোগ আছে । খাওয়ার সময় প্লেটে ততটুকুই খাবার নিতে হবে, যতটা খাওয়া সম্ভব ।

খাবার সংরক্ষণে যত্নবান হতে হবে। ফ্রিজ ও ডিপফ্রিজ নিয়মমাফিক পরিষ্কার রাখতে হবে। একসঙ্গে অনেক খাবার ফ্রিজে বা ডিপফ্রিজে না রাখাই ভালো আর যদি রাখতেই হয় তবে খাবারের ধরণ অনুযায়ী সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ফ্রিজে খাবার রাখার সময় আইটেম অনুযায়ী খাবার সাজিয়ে রাখতে হবে। এতে কোনো খাবার চোখের আড়ালে থাকবে না। খাওয়ার অযোগ্য হওয়ার আগেই সেটার সদব্যবহার করতে হবে। আর ফ্রিজে বা ডিপফ্রিজে খাবার সংরক্ষণ করার সময় সেসব খাবার সামনের দিকে রাখতে হবে, যেসব সহজে পচে যেতে পারে। কোনো খাবার কত দিন ভালো থাকতে পারে, তা জানতে হবে। অনেক খাবার বা খাদ্য উপকরণেরই মেয়াদ উল্লেখ করা থাকে। এসব কেনার সময় মেয়াদের মধ্যে তা ব্যবহার করার সম্ভাবনা আছে কি না তা খেয়াল করতে হবে। অনেক সময় মূল্যহ্রাসের বিজ্ঞাপন দেখে আমরা অনেক জিনিস কিনে ফেলি। এটি ভালো অভ্যাস নয়। ব্যবহার করার সম্ভাবনা না থাকলে কোনো জিনিস কম দামেও কেনা উচিত নয়। পরিবারে সদস্য সংখ্যা বিবেচনায় কার কতটা খাবার প্রয়োজন, কার কোনো ধরনের পুষ্টি উপাদান প্রয়োজন, তা বের করে খাবারের তালিকা করতে হবে। এতে বাজার করতেও সুবিধা হবে। দামি উপকরণ মানেই যে পুষ্টিকর খাবার, তা কিন্তু নয়। তুলনামূলক কম খরচে কোনো কোনো পুষ্টিকর উপকরণ কেনা সম্ভব, তা বিবেচনায় নিতে হবে। মাছ-মাংস ছাড়াও পুষ্টিকর খাদ্যতালিকা করে ফেলা সম্ভব। তাতে পরিবেশের ওপরও চাপ কমে।

বেঁচে যাওয়া উপকরণ বিশেষ করে সবজির খোসা, কাণ্ড, পাতা—এ রকম অনেক কিছুই ফেলে দেওয়া হয়, যা আসলে খাওয়া সম্ভব। প্রয়োজন মাফিক রান্নার পরও খাওয়াদাওয়ার শেষে অল্প কিছু খাবার অবশ্য থেকে যেতে পারে। সম্ভব হলে সেটি সংরক্ষণ করে পর দিন কাজে লাগাতে হবে। সম্ভব না হলে দুস্থ মানুষকে দিয়ে দিতে হবে। খাবার আয়োজনের ক্ষেত্রে বৈচিত্র্যতা থাকা ভালো। কিন্তু সেটা যেন প্রয়োজনের অতিরিক্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।কোনো খাবার ফেলে দেওয়ার আগে একটু চিন্তা করতে হবে ,সেটা উত্পাদনে কতটা পরিশ্রম এবং সম্পদ ব্যয় হয়েছে। দুই সপ্তাহ অন্তর একবার খাতা-কলম নিয়ে হিসেব করে দেখতে হবে, এ সময়কালে কতটা খাবার নষ্ট হয়েছে এবং এতে কত টাকা অনর্থক খরচ হলো। টাকার হিসেব চোখের সামনে থাকলে খাবারের অপচয় রোধে সচেতন হওয়া সম্ভব।

খাবার নষ্ট হওয়ার বিষয়টাকে ‘বৈশ্বিক ট্র্যাজেডি’ বলে অভিহিত করা হয়। আমরা যখন বিশ্বজুড়ে খাবার নষ্ট করছি, তখন বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ ক্ষুধার্ত থাকছে। বিশ্বে যে পরিমাণ খাবার নষ্ট হচ্ছে তার ৬০ শতাংশ খাবার নষ্ট হচ্ছে বাসাবাড়িতে। এ ধরনের অপচয় হওয়ার বড়ো কারণ, মানুষ তাদের প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খাবার কিনছে। এছাড়া তারা কতটুকু খেতে পারবে তার আন্দাজ করতে পারছে না। এতে খাবার উচ্ছিষ্ট থেকে যাচ্ছে। ইউএনইপি ২০২১ সালে ফুড ওয়েস্ট ইনডেক্স নামে রিপোর্ট প্রকাশ করে যাতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বছরে এক কোটি ৬ লাখ টন খাদ্য অপচয় হয়। মাথাপিছু খাদ্য অপচয়ের হারও বাংলাদেশে বেশি। ইউএনইপির ওই ইনডেক্স অনুযায়ী একজন বাংলাদেশি বছরে ৬৫ কেজি খাদ্য উপাদান কিংবা তৈরি খাদ্য নষ্ট করেন।আমাদের মতো গরিব দেশের জন্য এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাই সবাইকে সচেতন হয়ে খাবার অপচয় রোধ করতে হবে।

লেখক: জনসংযোগ কর্মকর্তা, খাদ্য মন্ত্রণালয়




মেহেরপুরে সড়কে ঝড়েছে ৪৩ প্রাণ, আহত শতাধিক

মেহেরপুরে ২০২৫ সাল পর্যন্ত সময়ে সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ৪৩ জন নিহত এবং শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে শিশু, শিক্ষার্থী, নারী, সরকারি প্রকৌশলী, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী, প্রবাসফেরত যুবক, কলেজ ছাত্র ও বৃদ্ধ রয়েছেন। দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, ট্রাক, ভ্যান ও বাইসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনের মুখোমুখি সংঘর্ষ এবং নিয়ন্ত্রণ হারানোর ঘটনা রয়েছে।

মেহেরপুর প্রতিদিনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ বিশ্লেষন করে এসকল তথ্য পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, গত ২৩ ডিসেম্বর, মেহেরপুর সদর উপজেলার আমদহ-টেংরামারি সড়কের আশরাফপুর এলাকায় ড্রামট্রাকের সঙ্গে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে লিজন হোসেন ও রকিবুল ইসলাম নামের দুই যুবক নিহত হন।

কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে গাংনী-কুথিলী সড়কে ইটবাহী ট্রলির সঙ্গে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে নিহত তুহিন হোসেনের (৩২) পর তার শিশু কন্যা তানহাও মারা যায়। গত মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত তুহিন হোসেন গাংনী উপজেলার মাইলমারী ধলা গ্রামের জামাল উদ্দিনের ছেলে।

১৪ ডিসেম্বর, মেহেরপুরের গাংনীতে দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে রাকেশ আহমেদ (১৮) নামের দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ২ জন। রবিবার সকালে উপজেলার বামন্দী বাসস্ট্যান্ডে এ ঘটনা ঘটে। নিহত রাকেশ আহমেদ উপজেলার তেরাইল গ্রামের মো. কমিরুল ইসলামের ছেলে। তিনি স্থানীয় বামন্দী নিশিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্র। আহতরা হলেন মেহেরপুরের আব্দুল বাকীর ছেলে অভিক আহমেদ (২৮) ও শয়ন আলী (১৬)।

৭ ডিসেম্বর, মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সাহেবনগর বাজার এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় শাহিন নামে এক এসএসসি পরীক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। নিহত শাহিন এবছরের এসএসসি পরীক্ষার্থী ও মালয়েশিয়া প্রবাসফেরত কাজিপুর গ্রামের ছাদিমান আলীর ছেলে।

২ ডিসেম্বর, মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার মানিকদিয়া গ্রামে ট্রাক্টরের চাকায় পিষ্ট হয়ে শিহাব হোসেন (৭) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়।

সোমবার দুপুরে নিজ বাড়ির পাশে মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত শিহাব উপজেলার মানিকদিয়া গ্রামের মাঠপাড়ার কৃষক ওসমান আলীর ছেলে।

২৯ নভেম্বর, মেহেরপুরের গাংনীতে অটোবাইকের ধাক্কায় তানিশা (৭) নামে এক কন্যাশিশুর মৃত্যু হয়। শুক্রবার দুপুরে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের গাড়াডোব কাচারি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত তানিশা খাতুন গাড়াডোব কাচারি পাড়ার তামিম ইকবালের মেয়ে।

একই দিনে, মেহেরপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় রিপোর্টার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও আনন্দ টেলিভিশনের মেহেরপুর জেলা প্রতিনিধি মিজানুর রহমান গুরুতর আহত হন। শনিবার দুপুর ২টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

২৬ নভেম্বর, মেহেরপুরের গাংনীতে কাঁঠাল গাছের সঙ্গে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় রানা আহম্মেদ (১৭) নামের এক কিশোর নিহত হয়।

বুধবার দুপুরে সাহেবনগর গ্রামের তালতলা মোড় নামক স্থানে মোটরসাইকেলযোগে বাড়ি ফেরার পথে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত রানা আহম্মেদ বামন্দী ইউনিয়নের নিশিপুর গ্রামের হামিদুল ইসলামের ছেলে।

২৫ নভেম্বর, মেহেরপুর সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের মনোহরপুর গ্রামসংলগ্ন রাস্তায় সবজি বোঝাই ট্রাক উল্টে ট্রাকচালক জাহিদুল ইসলাম (২১) আহত হন। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

২২ নভেম্বর, মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে তাসিম (২১) নামে এক যুবক নিহত হন। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে মঠমুড়া ইউনিয়নের আকুবপুর গ্রামে মোজাম্মেল হকের বাড়ির সামনে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত তাসিম কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার হিদিরামপুর গ্রামের আ. লতিফের ছেলে।

আহতরা হলেন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার হিদিরাম গ্রামের রমজান আলীর ছেলে আকাশ (২০), একই গ্রামের মিজানুর রহমানের ছেলে রাজা (২০), দৌলতপুর উপজেলার মহিশকুন্ডি মিস্ত্রিপাড়ার মোটরসাইকেলচালক খোকনের ছেলে জিসান (২২) এবং তার সঙ্গে থাকা আরও একজন অজ্ঞাত যুবক।

১৯ নভেম্বর, গাংনীর নওপাড়া বাজারে ট্রলির সঙ্গে দ্রুতগতির মোটরসাইকেলের ধাক্কায় তুহিন আলী, ইমন ও সাব্বির হোসেন নামে তিন যুবক আহত হন। আহত তিনজনের বাড়ি একই গ্রামের নওপাড়া।

১৬ নভেম্বর, মেহেরপুরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় তোফাজ্জেল বিশ্বাস নামের এক শিক্ষক নিহত হন। সদর উপজেলার পুরাতন দরবেশপুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

৯ নভেম্বর, মেহেরপুরে বিআরটিসির একটি বাসের ধাক্কায় শরিফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি নিহত হন। মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের শহরের ব্র্যাক অফিসের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত শরিফুল ইসলাম শহরের মল্লিকপাড়া এলাকার খাদেমুল ইসলামের ছেলে।

২৬ অক্টোবর, মেহেরপুরে ট্রাকের ধাক্কায় শাহিদা খাতুন (৬০) নামের এক নারী শ্রমিক নিহত হন। রবিবার দুপুরে সদর উপজেলার ফতেপুর-শোলমারি সড়কের তেরোঘরিয়া গ্রামের রাস্তায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত শাহিদা খাতুন উজলপুর গ্রামের মৃত আব্দুল গনির স্ত্রী।

২২ অক্টোবর, মেহেরপুরের গাংনীতে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কমিউনিটি ক্লিনিকের সঙ্গে ধাক্কায় সুজন নামের এক মালয়েশিয়া প্রবাসফেরত যুবকের মৃত্যু হয়।

২১ অক্টোবর, মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কের গাংনী উপজেলার শুকুরকান্দী নামক স্থানে ট্রাক ও সিএনজির মুখোমুখি সংঘর্ষে একজন নিহত ও তিনজন আহত হন। শুকুরকান্দীর গ্যাসপাম্পের অদূরে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত হলেন উপজেলার বাদিয়াপাড়া গ্রামের উত্তরপাড়ার আরিফুল ইসলামের স্ত্রী সুমি খাতুন (৩৫)। আহতরা হলেন বাদিয়াপাড়া গ্রামের মফিজুল হকের স্ত্রী নোজিয়ারা খাতুন (৪০), একই গ্রামের আরিফুল ইসলামের ছেলে নিরব (১২) ও মহাব্বতপুর গ্রামের আনারুল ইসলামের ছেলে সিএনজিচালক হযরত আলী (৩২)।

১৫ অক্টোবর, মেহেরপুর সদর উপজেলার ফতেপুর উত্তরপাড়া মসজিদের সামনে ট্রাকের ধাক্কায় ফারহানা ওয়াহিদা অমি (২৬) নামে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের এক ছাত্রী নিহত হন।

বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ফারহানা ওয়াহিদা অমি মেহেরপুর শহরের কাসারিপাড়ার আব্দুল ওয়াহিদ চঞ্চলের মেয়ে এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

১৪ অক্টোবর, মেহেরপুরের গাংনী-কাথুলি সড়কে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে মকলেছুর রহমান নামের এক জমি পরিমাপ আমিন নিহত হন। নিহত মকলেছুর রহমান গাংনী উপজেলার সাহারবাটি গ্রামের আব্দুর রহমান কারিগরের ছেলে। মঙ্গলবার বেলা ২টার দিকে গাংনী-কাথুলি সড়কের এবাদতখানার সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

১ অক্টোবর, মেহেরপুরের গাংনীতে আলমসাধুর ধাক্কায় সাইফুল রেজা ওরফে মহাজন (৩৫) নামে এক ব্যবসায়ী নিহত হন। রাত সাড়ে ৭ টার দিকে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া মহাসড়কের পোড়াপাড়া গ্রামের হঠাৎপাড়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

১৯ আগস্ট, মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের আমঝুপি বাজার এলাকায় প্রাইভেটকার দুর্ঘটনায় দুইজন আহত হন। রাত আড়াইটার দিকে দ্রুতগতির দুই প্রাইভেটকার রেসিং করতে গিয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে দুটি দোকান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রাইভেটকারটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়।

আহতরা হলেন চুয়াডাঙ্গা জেলার সিনেমা হলপাড়ার হাফিজের ছেলে ফেরদৌস (১৯) ও পলাশপাড়ার ওহি (১৯)।

১০ আগস্ট, মেহেরপুর সদর উপজেলার মদনা বাজারে দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে আকাশ নামের এক যুবক নিহত ও আরও দুইজন গুরুতর আহত হন।

১৮ জুলাই, মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার তেরাইল গ্রামে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় মোহাম্মদ মন্টু নামের এক পথচারী নিহত হন। আহত হন মোটরসাইকেলের দুই আরোহী।

১৬ জুলাই, মেহেরপুর শহরের হোটেল বাজার এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় সরফরাজ খান সোনা (৫৫) নামের এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হন।

২৫ জুন, মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কের বনবিভাগের সামনে দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে এক সরকারি প্রকৌশলী ও এক কলেজছাত্র নিহত হন। নিহতরা হলেন মেহেরপুর গাংনী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী মো. এ কে এম মাহফুজুর রহমান (৪৭) এবং মেহেরপুর সরকারি কলেজের ছাত্র মো. আকমল হোসেন (২০)।

এছাড়াও চলতি বছরে বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত সড়ক দুর্ঘটনায় শিশু, শিক্ষার্থী ও প্রবাসফেরত যুবকসহ আরও অনেকে নিহত ও আহত হয়েছেন।

এই এক বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে কমপক্ষে ৭ জন শিশু ও শিক্ষার্থী এবং অন্তত ৪ জন প্রবাসফেরত যুবক রয়েছেন।

গত ১০ জুন মেহেরপুর সদর উপজেলার বাড়াদিতে দুই মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে সৌরভ নামের এক যুবক নিহত হন। এ ঘটনায় একই পরিবারের ৪ জন সদস্যসহ মোট ৫ জন আহত হন।

৫ জুন গাংনীতে সড়ক দুর্ঘটনায় আবুল কাশেম (৬২) নিহত হন।

৪ জুন মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা মহাসড়কে দুর্ঘটনায় ছাগল ব্যবসায়ী নজিম উদ্দিন (৬৪) নিহত হন এবং আরও ৪ জন আহত হন।

৩ জুন মুজিবনগরে ট্রলি ও ইজিবাইকের সংঘর্ষে ৪ শিশু শিক্ষার্থী আহত হয়।

১০ মে গাংনীতে রাস্তা পার হতে গিয়ে আড়াই বছরের শিশু তাছনিয়া খাতুন নিহত হয়।

মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কের শুকুরকান্দিতে ট্রাক-মাইক্রোবাস সংঘর্ষে ৩ জন নিহত ও ৩ নারী আহত হন।

৯ এপ্রিল গাংনীতে চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফেরার পথে বৃদ্ধ সামসুল হক (৬৫) নিহত হন।

৩১ মার্চ মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক মহাসড়কে প্রাইভেটকার, ভ্যান ও মোটরসাইকেলের ত্রিমুখী সংঘর্ষে এক ব্যাংক কর্মকর্তা, এক শিশু ও আরও একজন নিহত হন। এ ঘটনায় অন্তত ১০ জন আহত হন। নিহতরা হলেন মেহেরপুর সদর উপজেলার উজলপুর গ্রামের হাসান মোল্লার ছেলে ও এনআরবিসি ব্যাংকের রূপনগর শাখার কর্মকর্তা আক্তারুজ্জামান ওরফে শোভন, সদর উপজেলার বাড়িবাঁকা গ্রামের মোখলেসুর রহমানের ছেলে আল ইমরান এবং গাংনী উপজেলার ধানখোলা গ্রামের ভ্যানচালক আলী হাসানের শিশু পুত্র জুবায়ের হাসান।

২৭ মার্চ সদর উপজেলার আশরাফপুরে মোশাররফ হোসেন (৬০) সড়কে প্রাণ হারান।

২২ মার্চ কুঠি ভাটপাড়ায় শ্যালো ইঞ্জিনচালিত আলগামনের সঙ্গে ধাক্কায় প্রবাসফেরত সাগর মিয়া (২৪) নিহত হন।

৪ ফেব্রুয়ারি আমঝুপিতে ট্রাকের ধাক্কায় লাল্টু হোসেন (৩২) নিহত হন এবং মিনারুল ইসলাম গুরুতর আহত হন।

২৭ জানুয়ারি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জামায়াত নেতা শেখ মোমিনুল ইসলাম (৫৫) মারা যান।

৮ জানুয়ারি গাংনীতে পৃথক দুর্ঘটনায় স্কুলছাত্র তাইমুজ্জামান (৯), কলেজছাত্র সিয়াম হোসেন (১৮) ও আব্দুল্লাহেল বাকী (১৮) নিহত হন।
এছাড়াও জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাসপর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত সড়ক দুর্ঘটনায় শিশু, শিক্ষার্থী, প্রবাসফেরত যুবকসহ আরও বহু মানুষ নিহত ও আহত হয়েছেন।

এই এক বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে কমপক্ষে ৭ জন শিশু ও শিক্ষার্থী এবং অন্তত ৪ জন প্রবাসফেরত যুবক রয়েছেন।




দর্শনা সীমান্তে ১৪ ভারতীয় নাগরিকের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ

একই পরিবারের নারী-পুরুষ, বৃদ্ধা ও শিশুসহ মোট ১৪ জন ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশী আখ্যা দিয়ে ভারতীয় বিএসএফ জোরপূর্বক বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করিয়েছে বলে অভিযোগ করছে ভুক্তভোগীরা। গতকাল শুক্রবার সকালের দিকে দর্শনা সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করে তারা।

জানা গেছে, অবৈধভাবে অনুপ্রবেশকারীরা ভারতের উরিষ্যা প্রদেশের জগেশ্বরপুরের বাসিন্দা। তারা মুসলিম পরিবারের হওয়ার কারণে তাদেরকে জোরপূর্বক বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ভারতীয় এই নাগরিরা।

তবে শুক্রবার সকালে বাংলাদেশর চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনা সীমান্তে প্রবেশের পর আশে পাশে বিভিন্ন স্থানে ঘোরাফেরা করে পরে দর্শনা বাসস্ট্যান্ডে অবস্থান নিলে স্হানীয়রা তাদের কথা শুনে সাময়িক ভাবে খোলা স্থানে তাবু করে থাকার ব্যবস্থা করেন এবং খাবার ও শীতের বস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করেন। পরে বিষয়টি সন্ধ্যার পর জানাজানি হলে স্থানীয় সাংবাদিকরা ঘটনা স্থলে পৌঁছে তথ্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করেন। এরপর প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুলিশ, বিজিবি ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং অনুপ্রবেশকারী ১৪ জন ভারতীয় নাগরিকের তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।

ভুক্তভোগীরা বলেন, আমরা জন্মসূত্রে ভারতের উরিষ্যা প্রদেশের জগশ্বরপুরের বাসিন্দা। কিন্তু আমার বাবা ছোট বেলায় আমার দাদার সাথে ভারতে চলে আসে। এরপর তিনি ভারতেই বড় হয়েছেন এবং আমাদের জন্মস্থান ভারতেই, আমরা ভারতীয় নাগরিক, আমাদের আধার কার্ড, রেশন কার্ড আছে কিন্তু ভারতীয় পুলিশ জোরপূর্বক সেগুলো কেড়ে নিয়েছে। আমরা সকলেই মুসলিম মোট ১৪ জন সদস্য একই পরিবারের পুরুষ ৫ জন, মহিলা ৫ জন, বাচ্চা ৪ জন।

ভারতীয় ১৪ জন নাগরিক হলো, ভারতের উরিষ্যা প্রদেশের জগশ্বরপুরের একই পরিবারের বাসিন্দা মৃত খাদিম খা’র মেয়ে গুলশান বিবি (৯০), মৃত শেখ হারুনের ছেলে শেখ জব্বার (৭০), মৃত শেখ হোসেনের মেয়ে আলকুম বিবি (৬৫), শেখ জব্বারের ছেলে শেখ উকিল (৪০), মৃত শফিক খানের মেয়ে সাবেরা বিবি (৩৫), শেখ উকিলের মেয়ে শাকিলা খাতুন (১১), শেখ জব্বারের ছেলে শেখ হাকিম (৪৫), মৃত শেখ ইসরাফিলের মেয়ে সামসেরি বিবি (৪০), শেখ জব্বারের ছেলে শেখ রাজা (৩০), মৃত শেখ আলিমের মেয়ে মেহেরুন বিবি (২৫), শেখ রাজার মেয়ে নাসরিন পারভিন (১২) এবং দুই ছেলে শেখ তৌহিদ (১১) ও শেখ রহিদ (০২) এবং শেখ জব্বারের ছেলে শেখ বান্টি (২৮)।




আলমডাঙ্গায় টেন্ডার ছাড়াই ওয়াপদার গাছ কেটে সাবার -এলাকাবাসীর ক্ষোভ

আলমডাঙ্গায় বিনা টেন্ডারে ওয়াপদার গাছ কেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কর্তৃপক্ষের নজর নেই। এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।

আলমডাঙ্গা উপজেলার খাসকররা ইউনিয়নের নওলামারী গ্রামে বিনা টেন্ডারে ওয়াপদা বিভাগের গাছ কেটে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার কর্মসূচির আওতায় মাটির রাস্তা পাকা করার অজুহাতে রাস্তার ধারে থাকা সরকারি গাছ কেটে নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক এলাকাবাসী জানান, রাস্তা উন্নয়নের কাজের কথা বলে কিছু জমির মালিক ও দুর্বৃত্তচক্র রাস্তার পাশে থাকা মূল্যবান গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে। অথচ এসব গাছ কাটার বিষয়ে কোনো ধরনের টেন্ডার প্রক্রিয়া বা সরকারি অনুমোদনের কথা জানা যায়নি।

অভিযোগের বিষয়ে ওয়াপদা বিভাগের কর্মচারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, গাছ কাটার বিষয়ে তারা তেমন কিছু জানেন না। বিষয়টি তাদের নজরে নেই বলেও দাবি করেন সংশ্লিষ্টরা। তবে ওয়াপদার কয়েকজন অসৎ কর্মকর্তা, কর্মচারী জড়িত আছে বলে সংবাদ চাউর হয়েছে।

এদিকে, এভাবে সরকারি গাছ কেটে নেওয়ায় পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। পাশাপাশি সরকারি সম্পদ লুটপাটের আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

এলাকাবাসী দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তারা বলেন, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে আরও সরকারি সম্পদ এভাবে নষ্ট হয়ে যাবে।




বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন আলমডাঙ্গা শাখার মাসিক সভা অনুষ্ঠিত

বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন (BHRC) আলমডাঙ্গা উপজেলা শাখার উদ্যোগে মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গ্তকাল শুক্রবার বিকাল ৪টায় আলমডাঙ্গা শাখা কার্যালয়ে এই সভা সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় বিগত সময়ে শাখার পক্ষ থেকে সফলভাবে পরিচালিত কম্বল বিতরণ কর্মসূচি, শীতবস্ত্র বিতরণ কার্যক্রম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। পাশাপাশি আসন্ন দিনগুলোতে উপজেলা ব্যাপী অসহায় ও দুস্থ মানুষের তালিকা প্রণয়ন এবং মানবাধিকার কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করতে একটি বার্ষিক পঞ্জিকা তৈরির বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন আলমডাঙ্গা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শরাফত রাসেলের মাতার রুহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় উপস্থিত ছিলেন, শাখার সভাপতি আল আমিন হোসেন, সহ-সভাপতি মানোয়ার হোসেন, সেক্রেটারি খাইরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শরাফত রাসেল, শিক্ষা সম্পাদক আহসান কবির বকুল, দপ্তর সম্পাদক সাইদুল ইসলাম, সহ দপ্তর সম্পাদক জাহিদ হাসান, সদস্য আলী আব্বাস ডন ও ইমরানসহ শাখার অন্যান্য সদস্যবৃন্দ।




আলমডাঙ্গায় আফিয়া নূর ফাউন্ডেশনের বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত

আলমডাঙ্গায় আফিয়া নূর ফাউন্ডেশনের বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত আলমডাঙ্গা সরকারি কলেজ কেন্দ্রে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

এবারের পরীক্ষায় আলমডাঙ্গা উপজেলা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার ৬৬ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রথম শ্রেণী থেকে নবম শ্রেণীর ৯৩১ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে বলে কতৃপক্ষ জানান।

আফিয়া নূর ফাউন্ডেশনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক শেখ নূর মোহাম্মদ টিপু র তত্বাবধানে পরীক্ষার সার্বিক ব্যাবস্হাপনায় ছিলেন, ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব ডাঃ মো আব্দুল্লাহ আল মামুন। কেন্দ্র সচিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন, সহকারী অধ্যাপক ডঃ আব্দুর রহমান। পরীক্ষায় স্হানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান এর প্রতিনিধি সহ স্হানীয় গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন।

স্হানীয় গন্যমান্য ব্যাক্তির মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আমেরিকা প্রবাসী বিজ্ঞানী মো মাসুদ পারভেজ, আলমডাঙ্গা, প্রবীণ সাংবাদিক শাহ আলম মন্টু, সিনিয়র সাংবাদিক হামিদুল ইসলাম আজম, সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমুহের প্রধান শিক্ষকগণ

আরো উপস্থিত ছিলেন, আলমডাঙ্গা ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি রহমান মুকুল, আলমডাঙ্গা বনিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো আব্দুল্লাহ আল মামুন, আলমডাঙ্গা নাগরিক উন্নয়ন কমিটির সভাপতি মো সিরাজুল ইসলাম, আলমডাঙ্গা উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মো নাহিদ হাসান, সাধারণ সম্পাদক এন এইচ শাওন, আলমডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি বশিরুল আলম, বাংলাদেশ মানবিকার কমিশন এর সভাপতি মো আল আমিন, সাধারণ সম্পাদক মো খাইরুল ইসলাম।

রাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চুয়াডাঙ্গার সহকারী সেক্রেটারি এ্যাড মাসুদ পারভেজ রাসেল,জেলা আইন সম্পাদক দারুস সালাম, আলমডাঙ্গা উপজেলা শাখার আমির মো শফিউল ইসলাম বকুল, সেক্রেটারি আব্দুল্লাহ আল মামুন, পৌর জামায়াতের আমির মাহের আলী।




ঝিনাইদহ-৪ আসনে রাশেদকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে, কাফনের কাপড় পরে বিএনপির বিক্ষোভ

ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ ও সদরের আংশিক) আসনে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে বিক্ষোভ মিছিল করেছে উপজেলা বিএনপি।

আজ শুক্রবার বিকালে বিএনপি’র হাজার হাজার নেতাকর্মীরা কাফনের কাপড় পরে এ বিক্ষোভ মিছিল করেন। এসময় তারা রাশেদের চামড়া তুলে নেব আমরা, ঝিনাইদহে-২ ছিলি ২এ যা, নইলে চামড়া থাকবে না ও বহিরাগতদের আস্থানা এই আসনে হবে না বলে শ্লোগান দিতে থাকেন।

এতে নেতৃত্ব দেন, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ ও প্রয়াত সাবেক সংসদ সদস্য শহিদুজ্জামান বেল্টুর সহধর্মীনি জেলা বিএনপির উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য মুর্শিদা জামান বেল্টু। তারা দুইজনই এ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। তাদের বঞ্চিত করে এ আসনে বিএনপি শরীক দল গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানকে মনোনয়ন দেন বিএনপি। গত বুধবার দুপুরে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আনুষ্ঠানিকভাবে এ ঘোষণা দেন। এরপর থেকে ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠেন স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা।

তাদের দাবি এ আসন থেকে রাশেদ খানকে প্রত্যাহার করতে হবে। এখানে সাইফুল ইসলাম ফিরোজ অথবা মুর্শিদা জামানের মধ্যে একজনকে দলীয় মনোনয়ন দিতে হবে। যারা এ আসনে ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী লীগের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে দলের সাংগঠনিক কাজ করেছেন তাদের মূল্যয়ন করতে হবে। তা না হলে বিএনপি মনোনিত প্রার্থী গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদকে এখানে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না বলে হুশিয়ারি দেন। এসময় অনেক বিএনপি কর্মীকে কাফনের কাপড় পরে অংশ নিতে দেখা যায়।

জেলা বিএনপি’র উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য মুর্শিদা জামান বেল্টু বলেন, আমরা কোন বহিরাগতকে এখানে চাই না। আমরা দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের দু:শাসন উপেক্ষা করে দল করেছি, রাজপথে লড়াই সংগ্রাম করেছি। এখন অন্য কাউকে এখানে মনোনয়ন দিলে আমরা মানতে পারি না। আমরা চাই এখানে দলীয় নেতার হাতে ধানের শীষ তুলে দেওয়া হোক।

স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ বলেন, গণ অধিকারের ও রাশেদ খান ঝিনাইদহ-২ আসনে নির্বাচন করবেন বলে দল থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। আমরা ধরে নিয়েছিলাম আমাদের নেতা, বাংলাদেশের নেতা দেশ নায়ক তারেক রহমান দেশে এসে ঝিনাইদহ-৪ আসনের প্রার্থী ঘোষণা করবেন কিন্তু সেই সময়ে এই বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক ষড়যন্ত্র করে অর্থের বিনিময়ে একজন বহিরাগতকে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রিয় কালীগঞ্জবাসি আপনারা ভোটের মালিক। আপনারা যদি বলেন আমি রাজনীতি করবো না। আপনারা যদি বলেন আমি নির্বাচন করবো। এসময় উপস্থিত জনতা সাইফুল ইসলাম ফিরোজকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনের জন্য আহবান জানান।

রাশেদকে মনোনয়ন দেওয়ার সংবাদে কানে ধরে বিএনপি’র রাজনীতি করবেন না বলে ঘোষণা দেন ফরহাদ হোসেন ও শাকিল আহম্মেদ নামের দুই যুবক। যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তারা দুইজনই উপজেলা যুবদলের কর্মী বলে জানা গেছে।
এ আসন থেকে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ বলেন, উপজেলা

বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক হামিদুল ইসলাম হামিদ ও জেলা বিএনপি’র উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য সাবেক সংসদ সদস্য শহিদুজ্জামান বেল্টুর সহধর্মীনি মুর্শিদা জামান দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। তারা সবাই স্থানীয় রাজনীতিতে আলাদা আলাদা গ্রুপ নিয়ে কর্মসূচী পালন করতেন।




“স্বাধীন নারী, আলোকিত সমাজ”

আজকের পৃথিবীতে “নারীর স্বাধীনতা” কেবল একটি শব্দ নয়—এটি একটি সমাজকে বদলে দেওয়ার শক্তি। স্বাধীনতা মানে শুধু বাইরে কাজ করার সুযোগ নয়; স্বাধীনতা মানে নিজের মতো করে বাঁচার অধিকার। দুঃখজনক হলেও সত্য, আমরা এখনো এমন এক সমাজে বাস করি যেখানে মেয়েদের ইচ্ছা–অধিকার–স্বপ্নকে অনেক সময়ই তুচ্ছ করে দেখা হয়। অথচ সমাজ যত আধুনিকই হোক, নারীর স্বাধীনতা ছাড়া কোনো উন্নয়নই সম্পূর্ণ হতে পারে না।

একবিংশ শতাব্দীতে পৃথিবী সামনে এগোয়, প্রযুক্তি বদলায়, সভ্যতা উন্নত হয়—কিন্তু নারীর স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্নগুলো এখনো একই জায়গায় ঘুরপাক খায়। নারী স্বাধীনতা আসলে কী? “নারীর স্বাধীনতা” আজও একটি আলোচিত, বিতর্কিত এবং একই সঙ্গে জরুরি বিষয়। শব্দটি যতটা সহজ, বাস্তবে তার প্রয়োগ ততটা কঠিন। কারণ স্বাধীনতা মানে শুধু বাইরে কাজ করার অনুমতি নয়; স্বাধীনতা মানে নিজের মতো করে বাঁচার অধিকার। আর এই অধিকার অর্জনের পথেই সবচেয়ে বড় বাধা—সমাজের চোখে আজও নারীর প্রতি অদৃশ্য বৈষম্য।

শিক্ষার অধিকার, কাজের সুযোগ, মত প্রকাশের স্বাধীনতা—এসব ক্ষেত্রে অগ্রগতি থাকলেও বাস্তবতার চিত্র পুরোপুরি উজ্জ্বল নয়। শহরের নারী হয়তো কিছুটা এগোতে পেরেছে, কিন্তু গ্রাম থেকে শহরতলি—এখনও অসংখ্য নারী বাল্যবিয়ে, যৌতুক, সহিংসতা, কর্মসংস্থানের অভাব আর সামাজিক নজরদারির মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। তাদের স্বাধীনতা এখনও “সমাজ কি বলবে”—এই চার শব্দের কাছে বন্দি।

একজন নারীর জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে গভীর দৃষ্টিতে চিন্তা করলে পরিষ্কারভাবে ওঠে আসবে নারীর জীবন কতটা ভয়াবহ। এই ভয়াবহতার পেছনে যে কেবল পুরুষ সমাজ দায়ী তা নয়, বরং নারী ও পুরুষ সমানভাবে দায়ী।আমরা কথায় কথায় পুরুষের দোষ খুঁজে বেড়াই, কিন্তু নিজেদের দুর্বলতাগুলো নিয়ে কখনোই মুখ খুলি না। নারীবাদী হতে গিয়ে, আমরা অনেকটাই পুরুষ বিদ্বেষী হয়ে উঠেছি, যা আসলে আমাদের অস্তিত্বকেই অস্বীকার করতে শেখায়। কিন্তু নারীরা যদি নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে শেখে, নিজের জায়গাটা নিজে চিনে নিতে শেখে, পুরুষের সাধ্য নেই নারীকে আটকানোর।

নারীর স্বাধীনতার সবচেয়ে বড় বাধা হলো সমাজের সেই অদৃশ্য দেয়াল, যা চোখে দেখা যায় না—কিন্তু প্রতিটি পদক্ষেপে তাকে আটকে ধরে। স্কুলে পড়াশোনা করতে গেলে “মেয়ে হয়ে এত দূর যাবে?”, চাকরি করতে চাইলে “বাড়ির কাজ আগে শেখো, সিদ্ধান্ত নিতে চাইলে “এইসব বিষয়ে মেয়েদের মাথা ঘামানোর দরকার নেই—এই সব কথাই যেন তার চারপাশে অদৃশ্য শৃঙ্খল হয়ে থাকে।এক শ্রেণির জনগোষ্ঠী আছে যারা উগ্রতার দোহাই দিয়ে নারী স্বাধীনতাকে কৌশলে ধ্বংস করার চেষ্টায় মত্ত। আরেক ধরনের জনগোষ্ঠী নারী স্বাধীনতার আড়ালে উগ্রতাকে প্রতিষ্ঠিত করতে ব্যস্ত। নারী স্বাধীনতা মানে উগ্রতা নয়। তাই নারী স্বাধীনতায় বিশ্বাসী হোন, উগ্রতায় নয়।স্বাধীনতার আসল অর্থ হলো—নিজের সিদ্ধান্ত নিজের হাতে থাকা, নিজের জীবনের দিশা নিজে বেছে নেওয়া, এবং নিজের সম্ভাবনাকে পূর্ণতা দিতে পারা।

নারী যদি নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত নিতে না পারে, তাহলে সে শুধু ব্যক্তিগতভাবে পিছিয়ে পড়ে না; পুরো সমাজই পিছিয়ে যায়। কারণ পরিবার, অর্থনীতি, সংস্কৃতি—সব ক্ষেত্রেই নারীর অবদান অপরিসীম। একজন নারী যখন শিক্ষিত হয়, কর্মক্ষম হয়, নিজের অধিকারের বিষয়ে সচেতন হয়—তখন শুধু সে নয়, তার পরিবার থেকেও শুরু হয় বদল। একজন শিক্ষিত মা পুরো প্রজন্মকে বদলে দিতে পারে। তাই নারীর স্বাধীনতা মানে ভবিষ্যৎকে নিরাপদ করা।

আমাদের সমাজে এখনো অনেক মেয়ে নিজের স্বপ্ন চাপা রেখে বাঁচে। কারও পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায় বিয়ের চাপে; কারও চাকরির স্বপ্ন অন্ধকারে হারিয়ে যায় পরিবার–সমাজের ভুল ধারণায়। অথচ অধিকার চাওয়াটা কোনো অপরাধ নয়—এটা মানুষের জন্মগত অধিকার। নারীকে সম্মান দেওয়া মানে সমাজকে সম্মান দেওয়া। কারণ সমাজ চলে নারী–পুরুষ—দুজনের সমান অবদানে।

নারীর স্বাধীনতা রুখে দেওয়া মানে শুধু পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নয়—অনেক সময় নারীরাই নারীর পথ আটকে দেয়। “মানুষ কি বলবে”—এই ভয়ের বাঁধন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বয়ে যাচ্ছে।পরিবর্তন শুরু করতে হবে ঘর থেকে। মেয়ে-ছেলে উভয়কে শৈশব থেকেই শেখাতে হবে—সমতা মানে প্রতিযোগিতা নয়, সম্মান।

আজ দরকার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। নারীকে বন্ধন নয়—সমর্থন দিতে হবে; সন্দেহ নয়—বিশ্বাস দিতে হবে। মেয়েরা যখন নিজের মতো করে বাঁচতে পারবে, তখন তারা শুধু নিজের জীবনই আলোকিত করে না; পুরো সমাজকে আলোকিত নারীর স্বাধীনতা তাই কোনো দাবি নয়—এটা প্রয়োজন, এটা ভবিষ্যতের ভিত্তি।

সময় এসেছে—নারীকে তার প্রাপ্য স্বাধীনতাকে সত্যিকারের সম্মান দেওয়ার।নারীর স্বাধীনতা কোনো উপকার নয়, কোনো দয়া নয়—এটি তার জন্মগত অধিকার।যেদিন সমাজ এই সত্যকে স্বীকার করবে, সেদিনই আমরা সত্যিকারের অর্থে আধুনিক হব।




মুজিবনগরে ঐতিহ্যবাহি খ্রিস্টীয় আনন্দ মেলার উদ্বোধন 

মেহেরপুরের মুজিবনগরে খ্রিস্টান সম্প্রদায় ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আনন্দঘন পরিবেশে তাদের সবচেয়ে বড় উৎসব বড়দিন উদযাপন করেছে।

বড়দিন উপলক্ষে গত বুধবার বল্লভপুর ইমানুয়েল চার্চ প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, আলোচনা সভা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সপ্তাহ ব্যাপি ঐতিহ্যবাহী খ্রিস্টীয় আনন্দমেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হয়।

আনন্দমেলা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বল্লভপুর ডিনারের দিন রেভা: দীপক উজ্জ্বল বিশ্বাসের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, চার্চ অফ বাংলাদেশ কুষ্টিয়া ডায়াসিসের বিশপ রেভা: হেমেন হালদার।

আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে মশাল প্রজ্জ্বলন মাধ্যমে দিনব্যাপী খ্রিস্টীয় আনন্দমেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হয়।

সন্ধ্যায় মুজিবনগরের বল্লভপুর ইমানুয়েল চার্চ প্রাঙ্গনে শিশুদের সঙ্গে কেক কেটে বড়দিনের উৎসবের উদ্বোধন এবং যিশুখ্রিস্টের জন্মদিন উদযাপন করেন, জেলা প্রশাসক ড. সৈয়দ এনামুল কবীর ও জেলা পুলিশ সুপার উজ্জ্বল কুমার রায়।

‘শুভ বড়দিন’ উপলক্ষে পুরো বল্লভপুর এলাকায় উৎসবের আমেজ বিরাজ করে। গির্জা ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বসতবাড়িগুলো আলোকসজ্জায় ঝলমল করতে দেখা যায়। নানা রঙের সাজ, আল্পনা ও নান্দনিক সাজসজ্জায় গির্জা প্রাঙ্গণ ও বাড়ির আঙিনা হয়ে ওঠে বর্ণিল।

বড়দিনের আনন্দ ভাগাভাগি করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কর্মজীবী স্বজনরা নাড়ির টানে নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন। অতিথিদের আপ্যায়নে বাড়ির গৃহিণীরা পিঠাপুলি ও বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী খাবারের আয়োজন করেন।

২৫ সে ডিসেম্বর বড়দিন উপলক্ষে ১ শত বছরের ঐতিহ্য খ্রিস্টীয় আনন্দমেলা জাতীয় পতাকা উত্তোলন, মশাল প্রজ্জ্বলন, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। পরে শিশুদের সঙ্গে কেক কেটে বড়দিনের আনন্দ ভাগাভাগি করা হয়।

অনুষ্ঠানে বল্লভপুর ডিনারীর ডীন রেভা. দীপক উজ্জ্বল বিশ্বাসের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, রাইট রেভা. হেমেন হালদার, বিশপ, কুষ্টিয়া ডায়োসিস।

এ সময় সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, জেলা প্রশাসক ড. সৈয়দ এনামুল কবীর, পুলিশ সুপার উজ্জ্বল কুমার রায়, মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহি অফিসার সাইফুল হুদা, মুজিবনগর থানার অফিসার ইনচার্জ জাহিদুল ইসলামসহ স্থানীয় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

অনুষ্ঠানে বক্তারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে শান্তি, সৌহার্দ্য ও ঐক্যের মাধ্যমে দেশ ও সমাজের উন্নয়নে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।




আলমডাঙ্গায় বিভিন্ন মামলায় ৬ আসামি গ্রেফতার

আলমডাঙ্গা থানা পুলিশের বিশেষ অভিযানে চুরি মামলাসহ বিভিন্ন মামলার গ্রেফতারী পরোয়ানা ৬ আসামীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত বুধবার রাতে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃত চুরি মামলার আসামী হলো- আলমডাঙ্গার ক্যানেলপাড়ার অশোক ঘোষের ছেলে অন্তিম ঘোষ (২৫),

এছাড়াও অন্য মামলার আসামীরা হলো- উপজেলার ওসমানপুর গ্রামের নুর উদ্দিনের ছেলে সাগর ওরফে হ্যাবল (২১), দুর্গাপুর গ্রামের মৃত নবাব মন্ডলের ছেলে মো. হানিফ (৩৭), পূর্ব কমলাপুর মাধবী তলার নুরুল ইসলামের ছেলে

মো. আল মামুন (৪০), নওদাপাড়ার মৃত সিরাজ মালিতার ছেলে মো. খলিল মালিতা (৬০), প্রাগপুর গ্রামের মৃত আজিম উদ্দিনর ছেলে মো. স্বপন (২৬) ফরিদপুর গ্রামের আজিজুল হকের স্ত্রী মোছা. সিপালী বেগম।

পুলিশ জানিয়েছে, গত বুধবার রাতে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে পুলিশের বিশেষ অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে গ্রেফতারকৃতরা সবাই বিভিন্ন মামলার পরোয়ানাভুক্ত আসামি।

আলমডাঙ্গা থানার কর্মকর্তারা জানান, গ্রেফতারকৃত সাতজনকে বৃহস্পতিবার আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের এ ধরনের বিশেষ অভিযান অব্যাহত থাকবে।