নিরাপদ পৃথিবীর জন্য ওজোন স্তর রক্ষায় প্রয়োজন বিশ্বজনীন অঙ্গীকার

প্রতিবছর ১৬ সেপ্টেম্বর বিশ্বব্যাপী বিশ্ব ওজোন দিবস পালিত হয়। ১৯৮৭ সালের মন্ট্রিল প্রটোকল এ দিনটিকে বিশেষভাবে স্মরণীয় করে তুলেছে। এদিন মানবজাতি প্রথমবারের মতো একত্রিত হয়ে বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তর রক্ষায় আন্তর্জাতিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। এ বছরের প্রতিপাদ্য “From science to global action” যার বাংলা ভাবানুবাদ করা হয়েছে “বিজ্ঞানসম্মত কর্ম, ওজোন রক্ষায় বর্ম”।

প্রতিপাদ্যের মধ্যেই নিহিত রয়েছে বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফলাফলকে বাস্তব কর্মপরিকল্পনায় রূপান্তর করার অঙ্গীকার। প্রতিবারের মতো এবারও বাংলাদেশে ১৬ সেপ্টেম্বর সরকারিভাবে বিশ্ব ওজোন দিবস পালন করা হবে। এ উপলক্ষে বর্ণাঢ্য র‍্যালি, সেমিনারের আয়োজন করা হবে। এছাড়াও দিবসের প্রতিপাদ্যে গণমাধ্যমে বিশেষ কর্মসূচি প্রচারিত হবে।

বায়ুমণ্ডলে বিদ্যমান গুরুত্বপূর্ণ গ্যাসসমূহের মধ্যে ওজোন গ্যাস অন্যতম। ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৫-৩৫ কিলোমিটার উচ্চতায় স্ট্রাটোস্ফিয়ারে যে অংশে সর্বাধিক ঘনমাত্রায় ওজোন গ্যাস থাকে, সেটিই ওজোন স্তর নামে পরিচিত। সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে এ স্তর পৃথিবীর জীবজগতকে সুরক্ষা দেয়। তাই একে পৃথিবীর প্রাকৃতিক ঢালও বলা হয়ে থাকে।

ওজোন স্তর ক্ষয় হলে অতিবেগুনি রশ্মি সরাসরি পৃথিবীতে প্রবেশ করে মানুষের ত্বকে ক্যান্সার, চোখে ছানি, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাসের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। একই সঙ্গে উদ্ভিদের বৃদ্ধি কমে যায়, ফসলের উৎপাদন হ্রাস পায় এবং সামগ্রিকভাবে জীববৈচিত্র্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ে। ওজোন স্তর ক্ষয় জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত এটি বৈশ্বিক উষ্ণায়নকে আরও তীব্র করতে পারে।

বিগত শতকে মানবসৃষ্ট বিভিন্ন শিল্পজাত রাসায়নিক ওজোন স্তর ক্ষয়ের মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ক্লোরোফ্লোরোকার্বন (সিএফসি), হ্যালন, কার্বন টেট্রাক্লোরাইড, মিথাইল ক্লোরোফরম, হাইড্রোক্লোরোফ্লোরোকার্বন (এইচসিএফসি), মিথাইল ব্রোমাইডসহ বহু রাসায়নিক দ্রব্য একসময় রেফ্রিজারেন্ট, ফোম ব্লোয়িং এজেন্ট, সলভেন্ট, প্রোপেল্যান্ট ও অগ্নিনির্বাপক হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এসবকেই বলা হয় ওজোন স্তর ক্ষয়কারী দ্রব্য (ওডিএস)। এগুলো শুধু ওজোন স্তর নয়, বরং অধিকাংশই উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন গ্রিনহাউস গ্যাস হিসেবেও চিহ্নিত।

ওজোন স্তর রক্ষায় বৈশ্বিক পদক্ষেপের সূচনা হয় ১৯৮৫ সালে ভিয়েনা কনভেনশন গৃহীত হওয়ার মাধ্যমে। এরপর ১৯৮৭ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর কানাডার মন্ট্রিলে গৃহীত হয় ঐতিহাসিক মন্ট্রিল প্রটোকল যা আজ বিশ্বের অন্যতম সফল পরিবেশ চুক্তি হিসেবে স্বীকৃত। এই প্রটোকলের আওতায় ধাপে ধাপে ওডিএস-এর ব্যবহার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।

পরবর্তীতে ২০১৬ সালে রুয়ান্ডার রাজধানী কিগালিতে গৃহীত হয় কিগালি সংশোধনী। এর মাধ্যমে ১৮ ধরনের উচ্চ বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ক্ষমতাসম্পন্ন হাইড্রোফ্লোরোকার্বন (এইচএফসি)-এর ব্যবহার কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়। যদিও এইচএফসি সরাসরি ওজোন স্তর ক্ষয় করে না, তবে এগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই এ নিয়ন্ত্রণ জলবায়ু সুরক্ষার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। বাংলাদেশ সরকার ১৯৯০ সালের ২ আগস্ট মন্ট্রিল প্রটোকল অনুস্বাক্ষর করে এবং পরবর্তীকালে লন্ডন, কোপেনহেগেন, মন্ট্রিল ও বেইজিং সংশোধনীসমূহ অনুস্বাক্ষর করে। সরকার ২০২০ সালের ৮ জুন কিগালি সংশোধনী অনুস্বাক্ষর করেছে। প্রটোকল বাস্তবায়নে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে পরিবেশ অধিদপ্তর দেশে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে ওজোন স্তর ক্ষয়কারী দ্রব্যের ব্যবহার হ্রাসে কার্যকর ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৪ সালে “ওজোন স্তর ক্ষয়কারী দ্রব্য (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৪” জারি করা হয় এবং ২০১৪ সালে বিধিমালাটি সংশোধিত হয়। উক্ত বিধিমালার আওতায় দেশে ওজোন স্তর ক্ষয়কারী দ্রব্যের আমদানি-রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক লাইসেন্সিং সিস্টেম চালু করা হয়। এছাড়াও সংশ্লিষ্ট শিল্পপ্রতিষ্ঠানসমূহকে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিতে রূপান্তর এবং সংশ্লিষ্ট সার্ভিস সেক্টরের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের মাধ্যমে একাধিক পরিকল্পনা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ফলে ১ জানুয়ারি ২০১০ হতে দেশে সিএফসি, কার্বন টেট্রাক্লোরাইড ও মিথাইল ক্লোরোফরমের ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে। ২০১২ সালের ৩১ ডিসেম্বর ওষুধ শিল্প থেকে সিএফসি এবং রেফ্রিজারেটর উৎপাদনে ফোম তৈরিতে ব্লোয়িং এজেন্ট হিসেবে ব্যবহৃত এইচসিএফসি-১৪১বি-এর ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ করা হয়। এছাড়াও বাংলাদেশ ২০২০ সালের মধ্যে প্রায় ৩৫ শতাংশ এইচসিএফসি ব্যবহার বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছে। বর্তমানে পরিবেশ অধিদপ্তর বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২০২৫ সালের মধ্যে এইচসিএফসি-এর ব্যবহার ৬৭ দশমিক ৫০ শতাংশ কমিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে বর্তমানে পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন এইচপিএমপি স্টেজ-টু প্রকল্পের আওতায় ৪টি এয়ার কন্ডিশনার প্রস্তুতকারক কারখানা ও একটি চিলার প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে গৃহস্থালি এসি তৈরিতে ওজোন স্তর ক্ষয়কারী দ্রব্য আর-২২ এর পরিবর্তে আর-২৯০ এবং আর-৩২-এ রূপান্তর করা হচ্ছে। পাশাপাশি রেফ্রিজারেশন ও এয়ার কন্ডিশনিং সেক্টর সংশ্লিষ্ট টেকনিশিয়ানদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়াও দেশে রেফ্রিজারেশন ও এয়ার কন্ডিশনিং সেক্টরে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির প্রচলনের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সরকারি নীতিসমূহ হালনাগাদ করার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। প্রকল্পটি এ বছর শেষ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। মন্ট্রিল প্রটোকলের ২০৩০ সালের মধ্যে সম্পূর্ণরূপে এইচসিএফসি ফেজ-আউট টার্গেট বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নতুন প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ চলমান রয়েছে।

ওজোন স্তর ক্ষয়কারী দ্রব্য নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার কিগালি সংশোধনীর আওতায় উচ্চ বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ক্ষমতাসম্পন্ন এইচএফসিসমূহ নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেছে। সরকার ২০২০ সালের ৮ জুন কিগালি সংশোধনী অনুস্বাক্ষর করেছে। এ সংশোধনীর আওতায় বাংলাদেশকে ২০৪৫ সালের মধ্যে ৮০ শতাংশ এইচএফসি ব্যবহার হ্রাস করতে হবে। এ প্রেক্ষিতে এইচএফসিসমূহের আমদানি ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ২০২১ সালে একটি এসআরও জারির মাধ্যমে লাইসেন্সিং সিস্টেম চালু করা হয়েছে এবং এর আওতায় ২০২২ সাল থেকে সরকার এইচএফসি আমদানি নিয়ন্ত্রণ করছে। এছাড়াও মন্ট্রিল প্রটোকল মাল্টিল্যাটারাল ফান্ডের আর্থিক সহযোগিতা এবং ইউএনডিপি ও ইউএনইপি-এর কারিগরি সহায়তায় কিগালি ইমপ্লিমেন্টেশন প্ল্যান প্রণয়নে কাজ শুরু করা হয়েছে। অধিকন্তু, প্যারিস চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ কর্তৃক ২০২১ সালে প্রণীত ন্যাশনালি ডিটারমিন্ড কন্ট্রিবিউশনে এ সেক্টর থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে প্রায় ২ দশমিক ৯২ মিলিয়ন টন কার্বন ডাই-অক্সাইড সমতুল্য নিঃসরণ হ্রাস করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

সর্বোপরি, ওজোন স্তর রক্ষায় বাংলাদেশ শুরু থেকেই সফলভাবে মন্ট্রিল প্রটোকলের বাধ্যবাধকতা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। মন্ট্রিল প্রটোকলের সফল বাস্তবায়নের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি কর্তৃক একাধিকবার বিশেষভাবে প্রশংসিত ও পুরস্কৃত হয়েছে। তাছাড়া ওজোন স্তর ক্ষয়কারী দ্রব্যের চোরাচালান রোধে কার্যকর ভূমিকার জন্য ২০১৯ সালে পরিবেশ অধিদপ্তর জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি দ্বারা বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়েছে।

ওজোন স্তর আমাদের অস্তিত্বের জন্য অপরিহার্য প্রাকৃতিক ঢাল। একে রক্ষা করা শুধু পরিবেশ নয়, মানবস্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তার সঙ্গেও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মন্ট্রিল প্রটোকল প্রমাণ করেছে যে বৈজ্ঞানিক গবেষণার আলোকে বৈশ্বিক ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগ গ্রহণ করলে পরিবেশগত বিপর্যয় রোধ করা সম্ভব। এ বছরের প্রতিপাদ্য “বিজ্ঞানসম্মত কর্ম, ওজোন রক্ষায় বর্ম” তাই আমাদের প্রত্যেককে অনুপ্রাণিত করে ব্যক্তিগত, জাতীয় ও বৈশ্বিক পর্যায়ে টেকসই পদক্ষেপ গ্রহণে। ওজোন রক্ষার এ লড়াই কেবল একটি স্তর বাঁচানোর সংগ্রাম নয় এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিরাপদ পৃথিবী গড়ে তোলার অঙ্গীকার।

লেখক: উপপ্রধান তথ্য অফিসার, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়




মে‌হেরপু‌রে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাঝে চেক বিতরণ

মে‌হেরপু‌রে বি‌ভিন্ন স্বেচ্ছা‌সেবী সংগঠ‌নের মা‌ঝে অনুদা‌নের চেক বিতরণ ক‌রে‌ছে বাংলাদেশ জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ। ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের বরাদ্দ থেকে নিবন্ধিত ২০ টি সংগঠন ও ৩ জন অসহায় দুঃস্থের মা‌ঝে এই চেক বিতরণ করা হয়।

সোমবার সকাল সা‌ড়ে ১০ টার সময় জেলা প্রশাস‌কের স‌ম্মেলন ক‌ক্ষে অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান অ‌তি‌থি জেলা প্রশাসক ডঃ মোহাম্মদ আব্দুল সালাম চেক বিতরণ ক‌রেন। প্রধান অতি‌থির বক্ত‌ব্যে জেলা প্রশাসক ব‌লেন, মে‌হেরপু‌রে বাল্যবিবাহ, আত্মহত্যার প্রবনতা বে‌শি। স্বেচ্ছা‌সেবী সংগঠনকে এসকল সমস্যাগু‌লি নি‌য়ে সামা‌জিক স‌চেতনতা কর্মসু‌চি করার জন্য আহ্বান জানান । তি‌নি ব‌লেন, আমাদের কর্মকান্ডসমুহ য‌দি সমা‌জে কোন উপকা‌রে না আসে, তাহ‌লে এ‌টি ফলপ্রসু হ‌বেনা। তি‌নি সংগঠনসমুহ‌কে অনু‌রোধ ক‌রেন, সমা‌জে ভাল কাজ করার জন্য। ভাল কা‌জের জন্য আমরা তা‌দের পুরস্কৃত কর‌বো।

অনুষ্ঠা‌নের সভাপ‌তি জেলা সমাজ‌সেবা অ‌ফিসার আশাদুল ইসলাম স্বেচ্ছা‌সেবী সংস্থাসমুহ‌কে উ‌ল্লে‌খিত কর্মসু‌চি পাল‌নের জন্য বি‌ভিন্ন দিক নি‌র্দেশনা প্রদান ক‌রেন। জেলা সমাজ‌সেবা নিবন্ধন কর্মকর্তা কাজী মনসু‌রের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠা‌নে বি‌ভিন্ন স্বেচ্ছা‌সেবী সংগঠনসমুহ তা‌দের কর্মকান্ড তু‌লে ধ‌রেন। অনুষ্ঠা‌নে আরও বক্তব্য প্রদান ক‌রেন মে‌হেরপুর শহর সমাজ‌সেবা কর্মকর্তা সো‌হেল মাহমুদ, উপ‌জেলা সমাজ‌সেবা অ‌ফিসার আনিছুর রহমান।




আলমডাঙ্গায় রোগীর পেটে গজ রেখে সেলাই, আড়াই মাস পরে অপসারণ

চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গায় রোগীর পেটে গজ রেখে সেলাই এর অভিযোগ উঠেছে। আড়াই মাস পরে তা অপসরণ করা হয়েছে। গতকাল ওটিতে গজ অপসারণের একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি সকলের নজরে আসে।

ভিডিওতে দেখা যায়, অপারেশন থিয়েটারে একটি রোগীর অস্ত্রোপচার চলছে। সেখান দুই জন ব্যাক্তির কন্ঠ শোনা যাচ্ছে। তারা রোগীর স্বজনদের কাছে রোগীর অবস্থা বর্ণনা করছেন। ওটিতে বর্তমান চুয়াডাঙ্গা জেলার সিভিল সার্জন হাদী জিয়াউদ্দিন আহমেদ কেউ দেখা যায়। তিনি সহযোগী সহ রোগীর পেটে থেকে বড় আকারের গজ বের করছেন।

ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে আসার পরেই সবার মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে ঘটনাটি টপ অফ দা সিটিতে পরিণত হয়। সবাই ঘটনার বিস্তারিত জানতে চাই।

এ ব্যাপারে অনুসন্ধান করে জানা যায়, গত তিন মাস পূর্বে আলমডাঙ্গার পপুলার ক্লিনিকে সাহেরা খাতুন (৫৫) নামের শ্রীরামপুর গ্রামের এক মহিলার জরায়ু টিউমার অপারেশন করেন কুষ্টিয়া থেকে আগত ডাঃ হোসেন ইমাম। অপারেশনের কিছুদিন পর পর ক্ষতস্থান থেকে পূজ বাহির হতে থাকে। অনেক ওষুধ সেবন করার পরেও কোন ফলাফল আসে না। এ নিয়ে রোগীর তীব্র ব্যথা শুরু হলে দীর্ঘ দুই মাস বিভিন্ন ডাক্তারের কাছে ছোটাছুটি করেও কোন সমাধান হয়নি।

গত শনিবার আলমডাঙ্গা ডক্টরস কেয়ার এন্ড স্পেসালাইজড হসপিটালে তার অপারেশন করে পেটের ভেতর থেকে গজ কাপড় বাহির করে চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডঃ হাদি জিয়া উদ্দিন আহমেদ।

এ নিয়ে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, এখানে রোগীদের পছন্দের ডাক্তার হোসেন ইমাম ছিল, পাশাপাশি এনেস্থেসিয়া হিসেবে ডাক্তার আব্দুস সালাম এবং সহকারী হিসেবে ডাঃ তুহিন ছিল। এখন ডাক্তার কিভাবে অপারেশন করবে সেটা তো ডাক্তার ভালো বলতে পারে। তবে যিনি সেলাই করেছে এখানে সম্পূর্ণ দায় তার। একজন রোগীর জীবন নিয়ে এভাবে ছিনিমিনি খেলা বরদাস্ত করা উচিত নয়। ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ হিসেবে আমরা ডাক্তার ম্যানেজ করেছি, সহকারীও  ম্যানেজ করেছি, এনেস্থেশিয়াও ম্যানেজ করেছি এখানে তো আমাদের কোন গ্যাপ ছিল না।




দামুড়হুদার ডুগডুগিতে জুয়ার আসরের সংবাদপ্রকাশের জেরে সাংবাদিক কে হুমকি

দামুড়হুদার ডুগডুগি গ্রামে জুয়ার আসরের বস্তুনিষ্ঠু সংবাদ প্রকাশের পর দৈনিক মাথাভাঙ্গার দামুড়হুদা প্রতিনিধিকে মোবাইলে হত্যার হুমকি প্রদান করেছেন জুয়া চক্রের অন্যতম হোতা মাদকাসক্ত আসাদুজ্জামান আসাদ।

অভিযুক্ত আসাদুজ্জামান আসাদ চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর গ্রামের মৃত ফকির মাহমুদের ছেলে ও জুয়া চক্রের অন্যতম হোতা।

জানা গেছে, গতকাল রোববার কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় দামুড়হুদার ডুগডুগি গ্রামে জমজমাট জুয়ার আসর বসানো হচ্ছে এমন বস্তুনিষ্ঠু সংবাদ প্রকাশ হয়। এরপরই তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে জুয়া চক্রের অন্যতম হোতা মাদকাসক্ত আসাদুজ্জামান আসাদ। এরই জের ধরে গতকাল রোববার দুপুরে ০১৯৪৬২৭৯৭৯০ নাম্বার থেকে কল করে আসাদুজ্জামান আসাদ সাংবাদিক কে হত্যার হুমকি প্রদান করে বলেন তোকে কোপানোর জন্য লোকজন ঠিক করা হ’য়েছে। দামুড়হুদা চৌরাস্তায় ফেলে তোকে কোপাবো।

এছাড়াও আজেবাজে ভাবে বিভিন্ন ভাষায় গালিগালাজ করেন। এমতাবস্থায় নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছে সাংবাদিকসহ তার পরিবার। বিষয়টি নিয়ে আইনগত পদক্ষেপ নিবেন বলেও জানিয়েছেন ভুক্তভোগী সাংবাদিক।




আলমডাঙ্গা আইলহাস গ্রামে ছাত্রী অপহরণের অভিযোগ

আলমডাঙ্গা আইলহাস গ্রামের অন্তুর বিরুদ্ধে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী কে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে। অপহৃত স্কুল ছাত্রীকে মানবতা ফাউন্ডেশনের আইনি সহায়তায় প্রদান করবে বলে জানা গেছে।

চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার আইলহাস গ্রামের মধুর ছেলে অন্তু (২০) ও তার ২/৩ জন বন্ধুর সহযোগিতায় চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার পদ্মবীলা ইউনিয়নের হায়দারপুর গ্রামের এক দরিদ্র কৃষকের ৭ম শ্রেণির স্কুল পড়ুয়া মেয়েকে অপহরণ করে গত ৭ই সেপ্টেম্বর। ঘটনাটি ঘটে সীমান্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৩ নং গেটে।

মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, মেয়েটি স্কুলে যাওয়া-আসার পথে বখাটে হোটেল বয় অন্তু প্রতিদিন উত্যক্ত করতো। অন্তু সরোজগঞ্জ বাজারে এক হোটেলে কাজ করে।মেয়েটিকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে প্রতিদিন বিরক্ত করে। মাত্র ১৩ বছরের মেয়েটি সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে অন্তু তার বন্ধুদের সহোযোগিতায় স্কুল গেট থেকে জোরপূর্বক অটোরিকশায় তুলে নিয়ে যায়।

পথচারীদের ভাস্যমতে জানতে পারা যায়, আইলহাস গ্রামের মধুর ছেলে অন্তু তার মেয়েকে তুলে নিয়ে গেছে। অন্তুর পিতার সাথে যোগাযোগ করা হলে, তিনি সুস্থ শরীরে মেয়েকে ফিরিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেয়। মধুর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় তারা পালিয়ে গেছে। মেয়ের পিতা আত্মসম্মানের ভয়ে গোপনে খোঁজাখুঁজি করেও মেয়েকে না পেয়ে চুয়াডাঙ্গা মানবতা ফাউন্ডেশনের দারস্থ হয়। চুয়াডাঙ্গা মানবতা ফাউন্ডেশনের আইনি সহায়তায় ভিকটিমের পিতা গতকাল চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় মামলা দায়ের করেছেন।

মানবতা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট মানি খন্দকার বরাবর আইনি সহায়তা চেয়ে আবেদন করেন এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন। অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করেন চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ খালিদুর রহমান। এ সময় বাদীর পাশে উপস্থিত ছিলেন, মানবতা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট মানি খন্দকার, সংস্থার মানবাধিকার সেলের প্রধান সমন্বয়কারী রউফুন নাহার রিনা, তথ্য কর্মকর্তা অ্যাড: নওশের আলী, অপারেশন অফিসার অ্যাড: জীল্লুর রহমান জালাল, লিগ্যাল এইড সেলের মুখ্য সমন্বয়ক অ্যাড: শামীমুর রহমান সবুজ, গণসংযোগ কর্মকর্তা হাফিজ উদ্দিন হাবলু, শিশু অধিকার বিষয়ক কর্মকর্তা মোঃ ইনতাজ, মোটিভেশন অফিসার জাকিয়া সুলতানা ঝুমুর।

মানবতা ফাউন্ডেশন ভিকটিম এর পিতা এজাহারকারী ও ভিকটিমকে যাবতীয় আইনি সহায়তা দেবে। দ্রুত ভিকটিম উদ্ধারের বিষয়ে চুয়াডাঙ্গার মাননীয় পুলিশ সুপারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন মানবতা ফাউন্ডেশন এর নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট মানি খন্দকার।




আলমডাঙ্গায় ৪৮ তম বিসিএস ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন ২জন

আলমডাঙ্গা উপজেলার দুই কৃতি সন্তান ৪৮ তম বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়ে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন হলেন, আলমডাঙ্গা উপজেলার চিৎলা ইউনিয়নের রুইথনপুর গ্রামের কৃতি সন্তান ডা. প্রশান্ত কুমার ধর। তিনি ৪৮তম বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।

ডা. প্রশান্ত কুমার ধর শ্রী পরিমল কুমার ধরের বড় ছেলে। ছোটবেলা থেকেই তিনি শিক্ষাজীবনে মেধার উজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখে আসছেন। ২০০৬ সালে চিৎলা রুইথনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি লাভ করেন। ২০১২ সালে সি.এইচ.আর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫  নিয়ে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ২০১৪ সালে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সফলতার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সক্ষম হন। ২০২০ সালে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি ঢাকার জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউট (NIKDU)-এ ইউরোলজি (কিডনি সার্জারি) বিষয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।

অপরদিকে আলমডাঙ্গার চিকিৎসা জগতের অন্যতম জনপ্রিয় চিকিৎসক এবং গরীবের ডাক্তার নামে খ্যাত ডা. শাফায়েত উল্লাহ ও মোছাঃ নাসিমা বানু বন্যার একমাত্র কন্যা ডাঃ নাফিসা আনজুম (হিমু) ৪৮তম বিসিএস (স্বাস্থ্য) পরীক্ষায় সহকারী সার্জন পদে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছে। ডা:নাফিসা আনজুম হিমুর পিতা আলমডাঙ্গা ও তার আশেপাশের এলাকার মানুষের কাছে অতি প্রশংসনীয় ও জনপ্রিয় চিকিৎসক সাফায়েত উল্লাহ। তিনি এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মক ভাবে আহত হয়ে অচল অবস্থায় বিছানায় কষ্টের মধ্য দিয়ে জীবন-যাপন করছেন। এলাকার মানুষ আজও তাঁকে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্বরণ করে।

ডাঃ নাফিসা আনজুম হিমুর এই সাফল্য এলাকাবাসীর মনকে আবার নাড়া দিয়েছে। পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে হয়তো তিনি আবার পিতার ছায়ায় আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন বলে এলাকাবাসীর সুধীজনেরা মনে করেন।

ডাঃ. প্রশান্ত কুমার ধর ও ডাঃ নাফিসা আনজুম হিমুর এই ধারাবাহিক সাফল্য চুয়াডাঙ্গার তরুণ প্রজন্মের জন্য এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হতে পারে বলে সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনের অনেকেই তাদের এই অর্জনে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।

 




পানাম সিটি: বাংলার ঐতিহ্যের নীরব সাক্ষী

গতকাল রোববার দিনের সিংহভাগ সময় কাটালাম নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁয়ে অবস্থিত প্রাচীন শহর পানাম সিটিতে। পানামা যেন হারিয়ে যাওয়া এক গৌরবগাথার জীবন্ত স্মৃতি। ইতিহাস, স্থাপত্য ও ঐতিহ্যের অপূর্ব সংমিশ্রণে গড়ে ওঠা এই শহরটি আজো দাঁড়িয়ে আছে শ শ বছরের পুরনো অনেক গল্প নিয়ে।

১৫শ শতকে প্রতিষ্ঠিত এই নগরী মধ্যযুগে বাংলার অন্যতম প্রশাসনিক ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছিল। সুলতানি ও মুঘল আমলে সোনারগাঁ ছিল বাংলার রাজধানী, আর পানাম ছিল সেই রাজধানীর গৌরবময় আবাসভূমি। বিশেষ করে হিন্দু জমিদার ও ব্যবসায়ীদের আধিপত্যে গড়ে ওঠা পানাম নগরীতে ইউরোপীয়, মুঘল ও বাংলা স্থাপত্যরীতির অপূর্ব মিশ্রণ দেখা যায়।

বর্তমানে পানাম নগরীতে প্রায় ৫২টি ঐতিহাসিক ভবন রয়েছে, যেগুলোর প্রতিটিই একেকটি স্থাপত্য শিল্পের নিদর্শন। সড়কের দু’পাশে সারি সারি দালান যেগুলোর দেয়ালে আজও জেগে আছে পুরোনো দিনের কারুকাজ, রঙিন কাচের জানালা, কাঠের ফ্রেম আর চুন-সুরকির প্রাচীন প্রযুক্তির ছাপ। জমিদারের ৫ শ মিটার পুকুর। পুকুরে অনেকগুলো গোসলের জন্য সানবাঁধানো সিঁড়ি। সেই সময়ের সুপেয় পানির বেশ কটি পাকা কুয়া। কালের সাক্ষি হয়ে পড়ে আছে পাকা পায়খানা।

সংস্কারহীনতায় হারাতে বসেছে সেসব ঐতিহ্য।

যদিও ২০০৬ সালে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর পানাম সিটিকে “সংরক্ষিত প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান” হিসেবে ঘোষণা করেছে, বাস্তবতা হলো অনেক ভবন আজ ধ্বংসপ্রায়। অবহেলা, যথাযথ সংরক্ষণের অভাব এবং পর্যটন চাপে এই ঐতিহ্যবাহী স্থানটি হুমকির মুখে পড়েছে।
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন সংস্কারের উদ্যোগ না নেওয়ায় অনেক ভবন ধসে পড়েছে। বৃষ্টির মৌসুমে পানিতে ভিজে কাঠ ও চুন-সুরকির দেয়াল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অপরিকল্পিত পর্যটন ও স্থানীয় দখলদারদের কারণে ঐতিহাসিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।

পানাম নগরী বর্তমানে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী এখানে ভিড় করেন ইতিহাস ছুঁয়ে দেখতে। কিন্তু পর্যাপ্ত গাইড, তথ্যচিত্র, পর্যটক ব্যবস্থাপনা এবং পরিবেশ সংরক্ষণের ঘাটতি দেখলাম।

পর্যটন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যদি সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া হয়, তবে পানাম সিটি হতে পারে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সফল হেরিটেজ ট্যুরিজম স্পট।

কেয়ার টেকার রফিকুল ইসলাম জানালেন-পানাম সিটি শুধু একটি পুরনো শহর নয়, এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অমূল্য দলিল। এই নগরীর দেয়ালে লেগে আছে বাঙালি জাতির শিল্প, সংস্কৃতি ও সংগ্রামের ছাপ। প্রয়োজন এখন শুধু সময়োচিত উদ্যোগ, সচেতন সংরক্ষণ এবং সম্মিলিত দায়িত্ববোধ।

পানামকে যদি সময়মতো বাঁচানো যায়, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এই গৌরবময় ইতিহাসের সাক্ষী হতে পারবে-নয়তো এটি হারিয়ে যাবে কালের অতলে, আর আমরা হারাবো এক অপূর্ব ঐতিহ্য।




বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে মেহেরপুরের ১১ চিকিৎসক সুপারিশপ্রাপ্ত

৪৮তম বিশেষ বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফলে মেহেরপুর জেলা থেকে বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে সহকারী সার্জন পদে ১১ জন সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।

গত বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) থেকে ফলাফল ঘোষণা করা হয়। মেহেরপুর জেলার সুপারিশপ্রাপ্ত ১১ জনের মধ্যে গাংনী উপজেলায় রয়েছেন ৯ জন এবং সদর উপজেলায় রয়েছেন ২ জন।

সুপারিশপ্রাপ্তরা হলেন, সিরাজগঞ্জ মেডিক্যাল কলেজের ডা. সামিয়া সুলতানা, রংপুর মেডিক্যাল কলেজের ডা. আবু জার গিফারী, বরিশাল মেডিক্যাল কলেজের রুবিয়া খাতুন, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের ডা. আসিফ হাসান, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজর ডা. নাহিদ হাসান, ডা. ইশতিয়াক হোসেন, খুলনা মেডিক্যাল কলেজর ডা. মো. মাহবুবুর রহমান নয়ন, খাজা ইউনুস আলী মেডিক্যাল কলেজর ডা. ওমর ফারুক, ডা. ফারিহা, ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের ডা. সরোয়ার রাব্বি ও ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজের ডা. রাসেল রানা।

গত ২০ জুলাই লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এতে মোট ৫ হাজার ২০৬ জন সাময়িকভাবে উত্তীর্ণ হন। এর মধ্যে সহকারী সার্জন পদে ৪ হাজার ৬৯৫ এবং সহকারী ডেন্টাল সার্জন পদে ৫১১ জন প্রার্থী সাময়িকভাবে উত্তীর্ণ হন। পরে সহকারী সার্জন পদে ২ হাজার ৮২০ জন এবং সহকারী ডেন্টাল সার্জন পদে ৩০০ জনকে চূড়ান্তভাবে সুপারিশ করা হয়।




দর্শনায় সড়ক দুর্ঘটনার শিকার ব্যাংকের টাকা বহনকারী মাইক্রোবাস, আহত ৩

চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় দুই দফায় সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে সোনালী ব্যাংকের টাকা বহনকারী একটি মাইক্রোবাস। এতে দুই পুলিশ সদস্যসহ তিনজন গুরুতর আহত হয়েছেন। তবে বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছে মাইক্রোবাসটি। দুর্ঘটনার পর চালক পালিয়ে যায়।

গতকাল শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১টার দিকে দর্শনা হঠাৎপাড়া রেলগেট এবং মা ও শিশু হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা আহত ভ্যানচালককে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রথমে হঠাৎপাড়া রেলগেট এলাকায় বাসের সাইড দিতে গিয়ে ব্যাটারিচালিত পাখিভ্যানকে ধাক্কা দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায় সোনালী ব্যাংকের টাকা বহনকারী মাইক্রোবাসটি। এতে গুরুতর আহত হন ভ্যানচালক। তবে মাইক্রোবাস চালক পেছনে ফিরে তাকাননি।

পরে দর্শনা মা ও শিশু হাসপাতালের কাছে মাটি কাটা এক্সকাভেটরকে সাইড দিতে গিয়ে দ্বিতীয়বার দুর্ঘটনার শিকার হয় মাইক্রোবাসটি। এতে সোনালী ব্যাংকের সহকারী অফিসার (অর্থ) আশিকুজ্জামান, দুই পুলিশ সদস্য ও মাইক্রোবাস চালক আহত হন। দুর্ঘটনার পর চালক শাহিন পালিয়ে যান।

সোনালী ব্যাংকের সহকারী অফিসার (অর্থ) আশিকুজ্জামান বলেন, আমি বারবার ড্রাইভারকে বলছিলাম গাড়ি আস্তে চালাতে, কিন্তু তিনি কর্ণপাত করেননি। আমরা চুয়াডাঙ্গা সোনালী ব্যাংক থেকে ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা মাইক্রোবাসযোগে দর্শনা সোনালী ব্যাংকে নিয়ে যাচ্ছিলাম। আল্লাহর রহমতে বড় দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে গেছি।

দর্শনা শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাজিম বলেন, আমি মোটরসাইকেলে চুয়াডাঙ্গার দিকে যাচ্ছিলাম। আমার সামনেই এ দুর্ঘটনা ঘটে। মাইক্রোবাসটি অল্পের জন্য গর্তের ভেতর পড়ে যাওয়া থেকে বেঁচে যায়। পড়ে গেলে কেউই বাঁচতে পারত না। পরে আমি তাদের উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে পাঠাই এবং টাকাগুলো দর্শনা সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তার কাছে বুঝিয়ে দিই।




বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও মেহেরপুর নগরীয় সংকট

নগরের অন্যতম বৈশিষ্ঠ হলো অকৃষি ভিত্তিক আর্থসামাজিক ব্যবস্থাপনা। শিল্প, বানিজ্য, শিক্ষা সহ যত ধরণের অকৃষি ভিত্তিক পেশা ও পেশাভিত্তি সংগঠন বা স্থাপনা আছে সবগুলো পরস্পর নির্ভরশীল হয়ে ক্রমান্বয়ে একটা নগরকে বেষ্ঠন করে সুষমভাবে বিকাশ করতে সহায়তা করে। নগর যত বিস্তৃত হতে থাকে নগরের আদিরূপ ও প্রাকৃতিক পরিবেশ দ্রুতই পরিবর্তিত হতে থাকে।মানুষের জীবনযাপন, চলাচল, বানিজ্যকেন্দ্র, শিক্ষা, চিকিৎসা বিনোদন সহ হাজার রকম সেবাখাত সমুহ প্রতিনিয়িত নাগরীক প্রয়োজনেই গড়ে ওঠে। আবার নাগিরক প্রয়োজনের দিক বিবেচনা করে নগর কতৃপক্ষের দায়িত্বও বেড়ে যায় বহুগুনে।

ফলে সমস্থ স্থাপনা সমুহের সঠিক স্থানসংকুলানের জন্য পরিকল্পনা মাফিক ভূমি অধিগ্রহন সহ নানাবিধ ভাঙ্গাগড়ার মাধ্যমে একটা নগরকে নান্দনিক ও আধুনিক রূপ দেয়া হয়। নগর বৈশিষ্ঠের অন্যতম অনুসংগ হল স্বল্পস্থানে অধিক মানুষের বসবাস সহ আনুসঙ্গিক স্থাপনা সমুহের নান্দনিক, বাস্তব ও পরিবেশ সম্মত সন্নিবেশ ঘটানো। ফলে জনগোষ্ঠির নিত্যপন্যের যোগান ঠিক রাখা, পানি, বিদ্যুত, জ্বালানি সরবরাহ,শিক্ষা ও জনস্বস্থের ব্যবস্থাপনা,কেলা ও বিনোদনের ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয় যেগুলো নগরের অন্যতম নাগরিকসেবা খাত হিসেবেও পরিগনিত হয়ে থাকে। নগর সহজাত হিসেবেই সূচনালগ্ন থেকেই নগরবর্জ্য উৎপাদন অব্যহত রাখে। ফলে বর্জ্যঅপসারণ নগর কতৃপক্ষের প্রাত্যাহিক ও অন্যতম কাজ হিসেবে বিবেচিত হয়। নগরকে পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য পঃয়নিস্ক্ষাণ ব্যবস্থা সহ ড্রেনেজ ব্যাবস্থার উন্নয়নও রাস্তা পথের সাথে সাথে চলতে থাকে। এগুলো নগরবাসির জন্য কতৃপক্ষের পক্ষ থেকে দেওয়া নাগরিক সুবিধা হিসেবে বিবেচিত হয়। মোট কথা একটা নগর, বর্জ্যব্যাবস্থাপনা সহ কতটুকু নাগরিক সুযোগ সুবিধা নগরবাসিকে দিতে পারছে তার পরিমান ও বিস্তৃতিই নগরকে আধুনিক মানে উন্নতি করার অন্যতম মাপকাঠি।

বর্জ্য বলতে মানুষের দৈনন্দিন জীবনে যাবতীয় অপ্রয়োজনীয়, ফেলনাযোগ্য ও ত্যাগকৃত উপাদান সমুহকেই বুঝান হয়। তবে গ্রাম,নগর ও পরিবেশ ভেদে উপাদান গুলোর ধরণ, মাত্রা ও পরিমানগত উৎপাদন কমবেশি হয়ে থাকে। গ্রামীন পরিবেশে যে ধরণের বর্জ উৎপন্ন হয়, দেখা য্য়া শহরে একই বর্জের সাথে একাধিক অন্যন্য বর্জ তৈরি হয়। যেভাবেই তৈরি হোক না কেন সমস্ত বর্জসমুহকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করাহয়। রাবিস ও গার্বেজ। রাবিস গুলো সাধারণত শক্ত, আংশিক রিসাকেলযুক্ত এবং অপচনশীল। নগরে এই প্রকার বর্জের আধিক্য দেখা যায়। পূর্বে এগুলো শুধুমাত্র ভবন ভাঙ্গাগড়ার বা মেরামতের সময় উৎপাদিত হত। এর মধ্যে ইট,শুরকি, সিমেন্ট,বালু কাঠ লোহার টুকররোর আধিক্য থাকত এবং এগুলোর কিছুঅংশ পুঃনব্যবহার যোগ্য, কিছুটা রিসাইকেল যুক্ত ছিল। বর্তমান সময়ে একই বর্জের সাথে যুক্ত হয়েছে কাচঁ, টাইলস, প্লাস্টিক, চিনামাটি, পলিথিন, টিন, পারটেক্স, ফোম কর্কশিট, এলুমিনিয়াম সহ অনেক ধরনের ক্লিনিং এজেন্টে, রং বার্নিশের মত কিছুটা কেমিক্যাল দ্রব্য, ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিকস দ্রব্যের অংশ সমুহ ও হাসপাতাল বর্জ্য।

অন্যদিকে গার্বেজ গুলো সাধারণত শক্ত ও তরল উভয় প্রকারেই হয়ে থাকে। তবে এগুলো পচনশীল,পচনের এক পর্যায়ে প্রচুর পরিমানে দূর্গন্ধ নির্গত করে। এর মধ্যে মানুষ ও পশু পাখির মলমুত্র,মৃতদেহ, গৃহস্থলি, হোটেল ও বাজারের বর্জ্য ও পরিত্যাক্ত পানি, কসায়খানা ও হাসপাতাল বর্জ্য, অন্যদিকে কারখানা, ডাইং, ব্যটারি রি ফুয়েলিং, কৃষিক্ষেত্রে ব্যাবহূত সার কিট নাশক প্রভৃতি এই প্রকার বর্জের মধ্যে পরিগনিত হয়ে থাকে। জরীপে দেখা যায় দেশে রাসায়নিক বর্জ্য উৎপাদনে কৃষি ও শিল্প খাত কেউ কারো থেকে পিছিয়ে নেই। এবং এগুলো ব্যাবস্থাপনার উন্নত কোন কৌশলও আমাদের হাতে নেই। ফলে এই সমস্ত বর্জ্যের প্রভাবে ক্রমাগত মাটি, বায়ু পানি দুষিত হয়ে মানুষ সহ আমাদের জীব বৈচিত্রকে প্রতিনিয়ত ব্যাপক হুমকির মধ্যে ফেলছে।

নগরের তরল বর্জ্য অপসারণের জন্য উন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ পলুশন ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপন করা হয়। কঠিন বর্জ্য সমুহ নগর পরিচ্ছন্নতা কর্মী, সেবাদানকারী সংস্থা, এনজিও ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সংগ্রহ করে নির্দিষ্ঠ ডাম্পিং স্টেশনে জমাকরা হয়। এবং শর্টিং এর মাধ্যমে পচনশীল বর্জ্য থেকে রিসাইক্লিন যোগ্য গার্বেজ গুলোকে আলাদা করা হয়। এই সমস্ত কাজে নগরের নিজস্ব জনবল ছাড়াও অর্থেল বিনিমিয়ে বেসরকারীভাবেও অনেক প্রতিষ্ঠান কাজ করে থাকে। যথাযত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পচনশীল বর্জ্য সমুহ থেকে উন্নতদেশ সমুহে লাভ জনক জৈবসার, জ্বালানী ও বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।

১৩ই জুন ২০২৫ মেহেরপুর পৌরসভা প্রদত্ত তথ্যসূত্রে জানা যায় পৌর এলাকার আয়তন ১৭.৬০ ব.কিমি। এবং শহরে বসবাসকারী লোকসংখ্যা ৭০ হাজারের বেশি। চলাচলের সুবিধার জন্য শহরে ৫৯.৮০ কিমি এইচবি, ৩৯.৭০ কিমি আরসিসি, এবং৩৬.৩০কিমি কাঁচা সড়ক আছে। মোট ড্রেন আছে ৫৩.০৪কিমি। এর মধ্যে প্রাইমারী ১০.৫০,সেকেন্ডরিী ২৫.৮২, টার্সিয়ারী ১৬.৭২ কিমি। ড্রেন নির্গত সমুদয় দুষিত পানি কোন রকম পলুউশন ট্রিটমেন্ট ছাড়াই ভৈরব নদিতে ডিসচার্জ হয়ে থাকে। ৩টা বড়পরিসরের আন্ডার গ্রাউন্ড কনক্রিট পাইপ লাইনের মাধ্যমে গোহাট থেকে রাজাপুর ব্রীজমুখ, হসপিটাল মোড় থেকে থানাঘাট এবং বেনাগাড়ি থেকে কালাচাঁদপুর খাল দিয়ে পানি বেরকরে ভৈরবে ফেলা হয়। মোটা মুটি বড় ড্রেন গুলো সুপরিসর হলেও পাড়া মহল্লা বা ওয়ার্ড সমুহের সংযোগ ড্রেনের সাথে এগুলোর সংযুক্তি কম। কোথাও কোথাও সংযোগহেীন। এর অন্যতন কারণ মেহেরপুরের পরিসর বৃদ্ধি পেলেও এর নাগরিক সুবিধা সে তুলনায় বাড়ে নি। রাস্তাপথ যেমন সুপরিসর নয়,তেমনি ফুটপাত বা উন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থা বা ম্যনহোল গড়ে ওঠেনি। সংযোগ ড্রেনগুলো অপরিকল্পিত, ড্রেনেজ সিস্টেম এখনো অগভীর, বাঁকসর্বস্ব, অপরিসর ও অধিকাংশ স্থানে ড্রেনের মধ্যে বিদ্যুতের খুটির অবস্থানের জন্য অপসৃত বর্জ্য জমাটবেধে ড্রেন উপচে ময়লা বেরহয়ে আসে, ড্রেনগুলো জরুরী সার্ভিসের জন্য কোন ছোট আকৃতির যন্ত্রকৌশলও পরিলক্ষিত হয় না।

পৌরতথ্য মতে মেহেরপুর শহরে প্রতিদিন কঠিন পৌরবর্জ্য উৎপাদিত হয় ১৪ টন,** এবং অপসারিত হয় ১২ টন। শহররে সেপটিক ট্যাংকের ব্যাবহার ৭০% বাড়িতে, এখনও পিট ট্যাংকের ব্যবহার ২৫% এবং অন্যান্য ল্যট্রিন আছে ৫%, এবং প্রতিদিন তরল বর্জ্য উৎপাদিত হয় ৪০০০ লিটার। পৌরসভার তিনটি ভ্যাকু ট্যাং থাকলেও অপরিসর গলি, সংকীর্ন রাস্তা এবং দূরত্তের কারণে এই আধুনিক সুযোগ সুবিধা পৌরবাসি যথাযত ভাবে নিতে পারে না। ফলে এখনও সনাতনি পদ্ধতিতেই ব্যক্তি পর্যায়ে পয়ঃবর্জ্য নিষ্কাশিত হয়। পৌর সভার পরিচ্ছন্নতা কর্মীর সংখা ১০৯ জন। এই অপ্রতুল জনবল দিয়ে প্রধান সড়ক ও অফিস আদালত পাড়া কিছুটা পরিচ্ছন্ন রাখা গেলেও পাড়া মহল্লাগুলো থাকে আপরিচ্ছন্ন।

শহর যেমনই হোক বর্জ্য ব্যাবস্থাপনা অবশ্যই ভালো হতে হবে। মেহেরপুর শহরের রাস্তাগুলো অপ্রসস্থ হওয়ার জন্য যেমন কোন ফুটপাত নেই তেমনি স্থায়ী বিন ব্যবস্থাও নেই। সুনির্দিষ্ঠ ডাম্পিং ব্যবস্থা না থাকা এবং মাঝেমধ্যে অস্থায়ী ব্যাবস্থা গ্রহনের জন্য শহরপ্রান্তে বা পথপার্শে, হাটবাজারে প্রতিনিয়ত আবর্জনা জমা হয়ে ভয়াবহভাবে পরিবেশ দূষন হয়। ইতোপূর্বে মেহেরপুর গোহাট প্রান্তে বৈদেশিক সহায়তায় ছোট আকারে একটা গার্বেজ শর্টিং স্টেশন করা হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল পৌরবর্জ্য থেকে রিসাইকেল যোগ্য ও পচনশীল পদার্থ সমুহ আলাদা করে ব্যবহার উপযোগী করা। জানা যায় পচনশীলদ্রব্য থেকে এখানে জৈবসার উৎপাদনের পরিকল্পনাও ছিল। কিন্তু এই স্টেশটির সঠিক কার্যক্রম সম্পর্কে কেউ তেমন অবগত আছে বলে মনে হয় না।উন্নত নগর সমুহে এই ধরণের কার্যকলাপ পৌর সভার আয়ের একটা বড় উৎস। এছাড়াও উন্নত বিশে^র আদলে দেশে বর্জ্যথেকে জৈবজ¦লানী ও বিদ্যুত উৎপাদনের বিষয়টিও সরকার চিন্তা ভাবনা করছে বলে শুনাযায়।

তবে আশার বিষয়, ”নগরপরিচালন ও অবকাঠামো উন্নতিকরণ প্রকল্পের” অধীনে শহর উপকন্ঠে নির্জনস্থানে ৩ একর যায়গার উপরে প্রায় তিনকোটি টাকা ব্যায়ে একটা এফ এস টি পি (ফিকেল স্লজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট ) স্থাপন করা হয়েছে। ১০ই আগস্ট ২০২১ থেকে এইপ্লানেটর কার্যক্রম শুরু হয়। ভবিষ্যৎ চিন্তা করে এর পরিসর আরো বাড়ানো বাঞ্ছনীয় বলে নগরবাসি মনে করে। বর্তমান স্টেশনে ৭০ সে.মি উচ্চতা বিশিষ্ঠ ৩টা ড্রায়িং বেড আছে। ভ্যকুট্রাকের মাধ্যমে সংগ্রহকৃত মানুষ্য পয়ঃবর্জ্য সপ্তাহে ১-৩ দিন এই বেডেফেলে শুকানো হয়। এগুলো জৈবসার উযোগী।

পৌর তথ্য মতে মেহেরপুর শহরে পানির গ্রাহক ৪৩৭০ জন এবং পানির চাহিদা ১২০০০ ঘন মিটার। ৬টি পাম্প ও ১টি ওভারহেড ট্যঙ্কের মাধ্যমে প্রতিদিন ৩৫০০ ঘনমিটার পানি সরবরাহ করা হয়, যা প্রয়েজনের তুলনায় অপ্রতুল। কিন্তু নগর প্রসারণের সাথে সাথে পানির চাহিদাও ক্রমেই বেড়েই চলেছে। জানা যায় মেহেরপুরের পানিতে সাদা আয়রন ও কোথাও আর্সেনিকের উপস্থিতি লক্ষনীয়। যে পরিমান পানি সরবরাহ করা হয় তার পরিমান ও চাপ এত কম থাকে যে পানি ব্যাবহারের সুবিধা অপেক্ষা অসুবিধা ভোগ করতে হয় আরো বেশি।

অধিকাংশ নগরবাসিকে নিজ উদ্যেগে নলক’প স্থাপন করে পানির ব্যবস্থা করতে হয়। এখানেও সমস্যা প্রচুর। প্রথমত আয়রন, আর্সেনিক মুক্ত পানি পাওয়ার অনিশ্চয়তা, তাপরেও শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর নেমে যাওয়ায় অধিকিাংশ নলকুপ পানিশুন্য হয়ে পড়া। শহরের একমাত্র ওভারহেড ট্যাংকের পানি গ্রাভেল ওয়াস করে তোলা হলেও এখান থেকে প্রচুর পরিমান অপদ্রব্য কোন প্রকার শোধন ছাড়াই সরাসরি ড্রেনের মাধ্যমে ভৈরবে নিস্কাশন করা হয়, প্রত্যক্ষভাবে নদী দূষণ করে।

মেহেরপুর, দেশের অন্যতম কৃষি নির্ভর শহর। এখানে উল্লেখযোগ্য কোন শিল্প নেই ফলে রাসায়নিক দূষণ তুলনামুলক কম। স্বল্পমাত্রার ব্যাটরি রিসাইকেল,জুয়েলারি, ও তেল নিঃসরণ ছাড়া শহরে তেমন রাসায়নিক দূষণ নেই বললেই চলে। তারপরেও নগরকে নগরীয় বৈশিষ্ঠে ফেরাতে হলে সর্বপ্রকার দূষণ মুক্ত রাখা বাঞ্ছনীয়। বর্তমানে শহরে আবাসিক এলাকা বাড়ার পাশাপাশি সেবাদান প্রতিষ্ঠান সমুহও বাড়ছে। বাড়ছে দোকান পাট, মার্কেট, ক্লিনিক হাসপাতাল, খাবার দোকান সহ ক্ষুদ্রাকারের শিল্প। ভবিষ্যতে বিশ^বিদ্যালয় সহ আরো সরক্রী বেসরকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার অপেক্ষায়। এখন থেকেই পরিকল্পিতভাবে বর্জ্য ও সুয়ারেজ ব্যবস্থাপনার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা না করলে ভবিষ্যত প্রজন্ম তার প্রিয় শহরকে একটা পুতিগন্ধময় আবর্জনার ভাগাড় ছাড়া আর কিছুই পাবে না। ফলে এখন থেকেই ঋঝঞচ সংখ্যা ও আয়তন বৃদ্ধি, পরিকল্পিত বিন নির্মাণ, একাধিক শর্টিং স্টেশন স্থাপন, রাস্তা,গলিপথের এবং ড্রেনের বাঁক অপসারণ,ড্রেনের মাঝখানথেকে বৈদ্যুতিক খুটি সরানো, ইটিপির মাধ্যমে দূষিত পানি পরিশোধন করে নদিতে ফেলা সহ সময়মত নগর,হাসপাতাল, গৃহস্থলি বর্জ অপসারণ ও ধংশের ব্যাবস্থা করা সময়ের দাবি। বিষয়টা আগামী প্রজন্মের সার্থে অত্যান্ত জরুরী বলেই নগরবাসি মনে করেন।

বর্জ্যব্যবস্থাপনা নিয়ে দেশ আজ অত্যান্ত আশাবাদি। খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশবিদ্যালয়ের অধ্যাপক প্রফেসর ডা.খালেকুজ্জামান সম্পূর্ন নিজস্ব প্রযুক্তি ও অনুঘটক ব্যবহার করে নগর বর্জ্য ও মানুস্যবর্জ্যনিয়ে দীর্ঘদি ধওে কাজ করছেন এবং সফল হয়েছেন। নগরবর্জ্য থেকে স্বল্পমুল্যে জ্বালানিতেল, গ্যাস ও উন্নত মানের জৈবসার উদ্ভাবন করে বিশ্বব্যাপি সাড়া জাগিয়েছেন, তাঁর এই যুগান্তকারী গবেষণা বেশ কয়েকটি আন্তর্জতিক মানের বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নালে প্রকাশিত হওয়ার পরে বিষটি নিয়ে অনেক দেশই আজ আমাদের দিকে দৃষ্টি ফিরিয়েছে। আশা করি, আমাদের দেশও এর সুফল অচিরেই ভোগ করবে এবং সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভা সমূহ নিজ উদ্যোগে এই আবিষ্কারকে কাজে লাগানোর জন্য এগিয়ে আসবে।