দামুড়হুদায় মাথাভাঙ্গা নদীর অবৈধ বাঁধ অপসারণ

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় মাথাভাঙ্গা নদীতে নির্মিত দুটি অবৈধ বাঁধ অপসারণ করেছে উপজেলা প্রশাসন।

সোমবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে সুবলপুর ও আমডাঙ্গা এলাকায় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে. এইচ. তাসফিকুর রহমানের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালিত হয়।

অভিযানকালে নদীর প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে স্থানীয়ভাবে নির্মিত দুটি বাঁধ ভেঙে দেওয়া হয়। এতে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ পুনঃস্থাপিত হয় এবং স্থানীয়রা স্বস্তি প্রকাশ করেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিল্লাল হোসেন, সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা ফারুক মহলদার, দামুড়হুদা মডেল থানার এসআই আসাদসহ পুলিশের একটি টিম।

অভিযান প্রসঙ্গে দামুড়হুদা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে. এইচ. তাসফিকুর রহমান বলেন, উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর, উপজেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশ পুলিশের দামুড়হুদা মডেল থানার সদস্যদের সমন্বয়ে আমরা মাথাভাঙ্গা নদীতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী উপাদান, অবৈধ বাঁধ বা কোমর অপসারণ করেছি। আপনারা জানেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের অভিযান পরিচালনা করে আসছি। তারই ধারাবাহিকতায় আজ মাথাভাঙ্গা নদী থেকে কিছু জাল এবং দুটি অবৈধ বাঁধ বা কোমর অপসারণ করা হয়েছে। নদী দখল ও অবৈধ বাঁধ নির্মাণের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কঠোর অবস্থান রয়েছে। কেউ নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত করতে পারবে না। এ ধরনের অভিযান নিয়মিতভাবে চলবে।

স্থানীয়রা জানান, বাঁধ অপসারণের ফলে মাছ ধরা সহজ হবে এবং পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বজায় থাকায় ফসলের ক্ষতির আশঙ্কাও কমবে।




মুজিবনগরে ভৈরব নদের রশিকপুর স্লুইস গেটে গোসল করতে নেমে দুই যুবক নিখোঁজ

মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার ভৈরব নদের রশিকপুর সুইসগেটেগোসল করতে নেমে দুই যুবক নিখোঁজ রয়েছে।

তারা হলেন, মুজিবনগর উপজেলার আমদহ গ্রামের টেংরামারী গ্রামের আব্দুল হান্নানের ছেলে নিলয় হোসেন ও সদর উপজেলার আমদহ গ্রামের মহির উদ্দীনের ছেলে কৌশিক। তারা দুজনেই কলেজ ছাত্র ও বন্ধু।

আজ সোমবার বেলা ৩ টার দিকে নিখোঁজ দুজনসহ তাদের অপর ৬ বন্ধু গোসল করতে নামে। হঠাৎ নিলয় ডুবে যায় এসময় কৌশিক তাকে বাঁচাতে গেলে দুজনেই পানির নিচে তলিয়ে যায়।

পরে খবর পেয়ে মুজিবনগর ফাাঁয়ার সাভির্সের টিম লিডার সেলিম রেজার নেতৃত্বে একটি টিম ঘটনাস্থলে এসে প্রাথমিকভাবে খোঁজখবর শুরু করেছে। তিনি জানান, আমরা এসে রেকি করেছি। এছাড়া খুলনার ডুবরি দলকে খবর দেওয়া হয়েছে। তারা ঘটনাস্থলে এসে উদ্ধার কাজ শুরু করবে।

স্থানীয়রা জানান, মুজিবনগর উপজেলার রশিকপুর ও রতনপুর গ্রামের সংযোগস্থল এই সুইসগেট। পানির সৌন্দর্য দেখতে এসে বিগত কয়েক বছরে প্রায় ৮ জন মারা গেছে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন প্রতি বছরে এখানে মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্থানটির সুরক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তারা স্থানটিকে সুরক্ষার জন্য আবেদন জানান।




ঝিনাইদহে মসজিদের জমি বিক্রির অভিযোগ সভাপতি ও ইমামের বিরুদ্ধে

ঝিনাইদহে মসজিদের জমি ইমাম ও মসজিদ কমিটির কথিত সভাপতির বিরুদ্ধে গোপনে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের প্রমাণ পেয়ে গত বুধবার বিকালে এলাকার লোকজন ও মসজিদ কমিটির লোকজন মিটিং করে ইমামকে চাকরিচ্যুত ও সভাপতিকে অপসারণ করেছে।

ঘটনাটি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সাগান্না ইউনিয়নের আমেরচারা বাজারে অবস্থিত বাইতুল মামুর জামে মসজিদের।

আমেরচারা বাজারের দোকান মালিক সদস্যরা জানিয়েছেন, আমেরচারা বাজারে অবস্থিত বাইতুল মামুর জামে মসজিদের ইমাম রবিউল ইসলাম ও মসজিদ কমিটির সভাপতি সদর আলী এই মসজিদের নামে রেজিস্ট্রি ১৬ শতক জমি সানা উল্লাহ নামে এক প্রবাসীর কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। কমিটির অন্য সদস্যদের না জানিয়ে বিক্রিত জমি ক্রেতার নামে মসজিদের পক্ষে রেজিস্ট্রিও করে দিয়েছেন সদর আলী। মোটা টাকা ঘুষের মাধ্যমে সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিস বেআইনীভাবে এই রেজিস্ট্রি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে বলেও অভিযোগ তুলছেন ভুক্তভোগীরা।

মসজিদের মৌখিক কমিটির সভাপতি সদর মন্ডল দাতা হিসেবে এই জমি সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে জমির দলিলে স্বাক্ষর করেছেন(দলিল নং-১০৯৪০/২৫)। দলিল লেখক আমিনুল ইসলাম(সনদ নং-৭২) এই দলিল প্রস্তুত করেন এবং সাবরেজিস্ট্রার মোস্তাক হোসেন এই দলিল রেজিস্ট্রি করেন।

মসজিদ কমিটির সেক্রেটারী আরজান আলী জানান, সাগান্না গ্রামের মরহুম শুকুর আলীর তিন ওয়ারিশ সুফিয়া খাতুন, আলেয়া পারভীন ও শাহীনা পারভীন ৪৩ নং সাগান্না মৌজার ২৫-১৯৫৬ খতিয়ানের ২১২২ দাগের ১৬ শতক ধানী জমি মসজিদের নামে দান পত্র করে দেন ২০২৩ সালের ৪ জুলাই। এই জমি গোপনে মসজিদ কমিটির অন্য কাউকে না জানিয়ে সভাপতি সদর আলী ও ইমাম রবিউল ইসলাম মিলে গত সেপ্টেম্বর মাসের ২৫ তারিখে প্রবাসী সানা উল্লা নামের এক ব্যক্তির নামে রেজিস্ট্রি করে দিয়ে টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তিনি বলেন, আমাদের না জানিয়ে একটি রেজুলেশন তৈরি করেছেন সদর আলী ও ইমাম রবিউল ইসলাম যা মসজিদের রেজুলেশন খাতায় অন্তুর্ভুক্ত নেই। নতুন দলিলে জমির মূল্য ধরা হয়েছে ২ লাখ ৯৪ হাজার। কিন্তু মসজিদ ফান্ডে এই টাকা জমা হয়নি।

জমি ক্রেতা সানা উল্লার পিতা আকবার আলী বলেন, ২০২০ সালে মসজিদ কমিটির তৎকালীন সভাপতি-সেক্রেটারির কাছ থেকে তিনি ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় এই জমি কিনেছেন। কিন্তু দীর্ঘদিন হয়ে গেলেও রেজিস্ট্রি করে দিচ্ছিল না।

গত সেপ্টেম্বর মাসে আমার ছেলের নামে মসজিদ কমিটির বর্তমান সভাপতি সদর আলী দাতা হিসেবে জমি রেজিস্ট্রি করে দিয়েছেন।

আকবার আলী ২০২০ সালে এই জমি কেনার কথা বললেও অনুসন্ধান করে জানাগেছে, ২০২৩ সালের ৪ জুলাই ৮৯৭০ নং দলিলে আলেয়া পারভীন, শাহীনা পারভীন ও সুফিয়া খাতুন মসজিদকে এই জমি দান করেন।

আরজান আলী জানিয়েছেন, ২০২৪ সালের ১ জুনের পরে মসজিদের আর কোন রেজুলেশন হয়নি। কমিটির সেক্রেটারী হিসাবে রেজুলেশন খাতা তার কাছে সংরক্ষিত রয়েছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আগের কমিটি ভেঙে দিয়ে মৌখিক ভাবে আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটিতে সভাপতি হন সদর আলী এবং আমি পূনরায় সেক্রেটারী নির্বাচিত হই। এর আগের কমিটিতে সভাপতি ছিলেন মিজানুর রহমান নামের আরেক ব্যক্তি। নতুন কমিটি গঠনের পরে কোন রেগুলেশন করা হয়নি। রেজুলেশন খাতা বের করে তিনি প্রমাণও দেখান।

সদর আলী বলেন, সমস্যা মিটে গেছে। বুধবার মিটিং হয়েছে। সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে জমি ক্রেতাকে টাকা ফেরত দেয়া হবে। কাউকে না জানিয়ে গোপনে কেন রেজিস্ট্রি করে দিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি অল্প কিছুদিন সভাপতির দায়িত্ব নিয়েছি। এই জমি অনেক আগের কমিটির সভাপতি-সেক্রেটারি মিলে বিক্রি করে রেখে গেছে। আমি কয়েক মাস দায়িত্ব নিয়েছি। ক্রেতা আমাদের কাছে জমি রেজিস্ট্রির দাবি তুললে কমিটির অন্য সবাই বলেছিল জমির সমস্যার সমাধান করা হবে। কিন্তু কোন রেজুলেশন করা হয়নি বলেও তিনি স্বীকার করেন।

মসজিদের ইমাম রবিউল ইসলাম অভিযোগের বিষয়ে কোন বক্তব্য দিবেন না বলে জানান। তার যা বক্তব্য তা মিটিংয়ে সবার সামনে বলবেন বলে জানান।

দলিল লেখক আমিনুল ইসলাম ভুয়া রেজুলেশনে জমির রেজিস্ট্রির সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমার কাছে মসজিদের ইমাম ও সভাপতি এসে যে কাগজ পত্র দিয়েছে সেই আলোকে আমি দলিল প্রস্তুত করেছি। তবে আমিও পরে বুঝতে পেরেছি রেজুলেশনটি ভুয়া।

তবে ঝিনাইদহ সদর সাব রেজিস্ট্রার মোস্তাক হোসেন বলেছেন, একটি রেজুলেশনের ভিত্তিতে জমি রেজিস্ট্রি করেছি। এই রেজুলেশন সঠিক না ভুল সেটা আদালত প্রমাণ করবে। তবে এই দলিল রেজিস্ট্রির সাথে অনৈতিক লেনদেনের অভিযোগটি সঠিক নয় বলে তিনি দাবি করেন। দলিল লেখক অনিয়ম ও অসত্য তথ্য উপস্থাপন করলে তার লাইসেন্স বাতিল করা হবে।




ঝিনাইদহে পরিসংখ্যান দিবস পালিত

‘সবার জন্য মানসম্মত পরিসংখ্যান’ এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ঝিনাইদহে বিশ্ব ও জাতীয় পরিসংখ্যান দিবস পালিত হয়েছে।

জেলা পরিসংখ্যান অফিস ও জেলা প্রশাসনের আয়োজনে সোমবার (২০অক্টোবর) সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বেলুন উড়িয়ে দিবসটির উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আওয়াল। পরে একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে শেষ হয়। র‌্যালি শেষে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সাইফুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আওয়াল। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক রথীন্দ্র নাথ রায়, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুবীর কুমার দাশ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহফুজ হোসেন, জেলা পরিসংখ্যান অফিসের উপ-পরিচালক আব্দুল আলীম।

বক্তারা বলেন, সঠিক ও নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান একটি দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই তথ্য সংগ্রহে সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে এবং মানসম্মত পরিসংখ্যান গঠনে সচেতনতা বাড়াতে হবে।




ঝিনাইদহে ৭ দফা দাবীতে সওজ কর্মচারীদের মানববন্ধন

ঝিনাইদহে ৭ দফা দাবী বাস্তবায়নে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মচারীরা। সোমবার সকালে সড়ক বিভাগের সামনে শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

এতে ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে সংগঠনের নেতাকর্মী ছাড়াও শ্রমিকরা অংশ নেয়। ঘন্টাব্যাপী চলা এই কর্মসূচীতে জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি নুরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক টোকন জোয়ার্দ্দার, সহ-সভাপতি সিবলু মিয়া, পৌর শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক ইউসুপ হোসেন কাজল, সড়ক ও জনপথ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি তাজুল ইসলাম, সহ-সভাপতি শরিফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলামসহ অন্যান্যরা বক্তব্য রাখেন।

বক্তারা, বয়স-শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করে চাকুরী রাজস্বকরণ, মাস্টাররোল শ্রমিক কর্মচারীদের সাময়িক শ্রমিক নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত বন্ধ, ২৭ ও ৭ মামলায় অন্তর্ভূক্ত শ্রমিক কর্মচারীদের ১ম যোগদানের তারিখ থেকে দ্রুত পেনশন নীতিমালা চুড়ান্তসহ ৭ দফা দ্রুত বাস্তবায়নের দাবী জানান। পরে সেখান থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।




জলবায়ু উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন

ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে বেড়িবাঁধ ভেঙে সাতক্ষীরার শ্যামনগরের বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের গ্রামগুলি প্লাবিত হয়ে ঘরবাড়ি ও ফসলের ব্যাপক  ক্ষতি হয়, যার কারণে অনেকে নিঃস্ব হয়ে বাঁধের উপর আশ্রয় নিতে বাধ্য হন।
ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সময়ও দ্রুত বাঁধ মেরামত না হওয়ায় এই পরিস্থিতি আরও খারাপ হয় এবং স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের ভিটেমাটি হারিয়ে জীবিকা সংকটে পড়েন। অনেকেই তাদের বসতভিটা হারিয়ে স্থায়ীভাবে বাঁধের উপর খুপরি ঘর তৈরি করে বসবাস করতে বাধ্য হন। বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের পানখালী গ্রামের আমিরন বিবি তার স্বামী এবং চার সন্তান নিয়ে খুলনা শহরে আশ্রয় নেন। সুন্দরবনের কারণে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় রিমালের হাত থেকে বড়ো ধরনের ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহত হওয়া থেকে উপকূলবাসী রক্ষা পেলেও টানা দুই দিনের ঝড়-বৃষ্টিতে আমিরন বিবি তার খুপরি ঘরসহ সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েন। কয়েক দিন বাঁধের উপর খোলা আকাশের নিচে থেকে জমানো সামান্য কিছু টাকা নিয়ে পরিবারের সবাইকে নিয়ে  চলে আসেন খুলনা শহরে।
দশ বছর আগে ১৪-১৫ বছরের কিশোরী আমিরন বিবি’র সাথে বিয়ে হয় একই গ্রমের ২১ বছরের নজরুলের সাথে। বিয়ের পর থেকেই আমিরন বিবি’র শাশুড়ি ও স্বামী কারণে অকারণে নানারকম অপবাদ দিতো। তখন আমিরন বিবি’র মনে হতো সব সমস্যার জন্য সে নিজেই দায়ি। শাশুড়ি গত হয়েছে। অল্প বয়সে বিয়ে, পরপর চার সন্তানের জন্ম,আর্থিক দুরবস্থা সব মিলিয়ে তাদের বস্তির জীবন খুবই কষ্টে কাটে। তারপরও ভুলতে পারে না পানখালী গ্রামের কথা।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে বিশ্বের ১০৯টি দেশের ৬৩০ কোটি মানুষের মধ্যে ১১০ কোটি মানুষ চরম বহুমাত্রিক দারিদ্র্যে ভুগছে। সরাসরি জলবায়ু ঝুঁকিতে রয়েছে বিশ্বের প্রায় ৯০ কোটি মানুষ যা মোট দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ৮০ শতাংশ। খরা, বন্যা, তাপপ্রবাহ বা বায়ুদূষণের মতো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে কেউই এখন পুরোপুরি নিরাপদ নয়। কিন্তু সবচেয়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীই এর সবচেয়ে কঠিন প্রভাবের শিকার। সাহারার দক্ষিণাঞ্চলীয় আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ায় মানুষ দারিদ্র্যের পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং হচ্ছে। চরম তাপমাত্রা, খরা, বন্যা ও বায়ুদূষণ-এই চারটি জলবায়ু ঝুঁকির কারণে এই অঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠী বিশেষভাবে ঝুঁকিতে রয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তন ও এর ফলে সৃষ্ট অভ্যন্তরীণ অভিবাসন একটি আলোচিত কিন্তু জটিল বিষয়। বিশেষ করে আমাদের দেশের জন্য এটা আরও বেশি সমস্য। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিবাসন সারা বিশ্বের জন্যই একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয়। জলবায়ু উদ্বাস্তুদের প্রধান সমস্যাগুলো হলো নিজ ভূমি ত্যাগে বাধ্য হওয়া, উন্নত আবাসন ও কর্মসংস্থানের অভাব, সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা, আধুনিক দাসত্বে জড়িয়ে পড়া এবং আইনি স্বীকৃতির অভাব। এশিয়ার অতিদ্রুত ও অপরিকল্পিত নগরায়ণজনিত সবচেয়ে সমস্যাপূর্ণ দেশ হলো বাংলাদেশ। বর্তমানে দেশের মোট জনসংখ্যার কম-বেশি ৪২ শতাংশ লোকের বাস শহরাঞ্চলে। অথচ ১৫ বছর আগেও এ হার ছিল কম-বেশি ২৫ শতাংশের মতো। শহরের মোট জনসংখ্যার কম-বেশি ৫৪ শতাংশ মানুষ আবার বস্তিবাসী। তাঁদের প্রতি চারজনের তিনজন জলবায়ু উদ্বাস্তু। শহরের অন্যান্য এলাকার তুলনায় বস্তি এলাকায় জনসংখ্যার ঘনত্ব কম-বেশি ৭ গুণ বেশি। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, বন্যা, খরা, মরুকরণ ইত্যাদি কারণে এসব মানুষ ঘরবাড়ি ও জীবিকা হারায় এবং জীবনধারণের জন্য নিরাপদ আশ্রয় ও কর্মসংস্থান খুঁজতে গিয়ে শহরে ভিড় করে, যা শহরগুলোকে ঘনবসতিপূর্ণ করে তোলে ও নতুন নতুন সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি করে।
প্রতিদিন ঢাকা শহরেই নতুন করে কম-বেশি ২ হাজার জলবায়ু উদ্বাস্তু যুক্ত হচ্ছে, বছরে এই সংখ্যা সাত লক্ষাধিক। শুধু ২০২৪ সালেই বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাংলাদেশের ২৪ লক্ষাধিক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এদের একটা বিরাট অংশ দক্ষিণ অঞ্চল থেকে আসে। গ্রাম থেকে শহরে আসা মানুষেরা সাধারণত কাজের কিছু সুযোগ পেলেও বসবাস, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পানি ও স্যানিটেশনসহ মৌলিক সেবা থেকে বঞ্চিত হন। অধিকাংশ সময়েই  এসব বাস্তুচ্যুত মানুষকে সরকারের বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতার আনতে নানারকম সমস্যা দেখা দেয়। সবচেয়ে বড়ো সমস্যা হলো  জাতীয় পরিচয়পত্রে স্থায়ী ঠিকানা নিবন্ধিত থাকায় তারা সাধারণত সেটি পরিবর্তন করতে চায় না। অন্যদিকে অস্থায়ী বস্তিবাসী হিসেবে ঠিকানা পরিবর্তন করাও একটি চ্যালেঞ্জ হওয়ায় তারা অধিকাংশ সময়েই সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতার বাইরে থেকে যায়।
জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের ১৯টি শহরের বস্তিতে বসবাসকারী কম-বেশি ৫২ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনো জলবায়ুজনিত দুর্যোগের কারণে শহরে এসেছে। এর মধ্যে বন্যা, নদীভাঙন এবং ঘূর্ণিঝড় প্রধান কারণ। এই জনগোষ্ঠীর কম-বেশি ৮০ শতাংশ মধ্যম দারিদ্র্যসীমার নিচে এবং ৫০ শতাংশ চরম দারিদ্র্যের শিকার। এদের মাত্র ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতাভুক্ত। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নারী ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাসস্থান হারানো, সেবা থেকে বঞ্চিত হওয়া এবং সহিংসতার ঝুঁকি এসবের মধ্যে অন্যতম। বিশেষ করে স্থানান্তরের ফলে শিশুরা স্কুলছুট হয় আর মেয়েশিশুরা পড়ে বাল্যবিবাহের ঝুঁকিতে। ১৪-১৫ বছরের মেয়েশিশুদের বিয়ে হচ্ছে, যা একদিকে স্বাস্থ্যগত সংকট, অন্যদিকে একটি প্রজন্মের সম্ভাবনাকে গ্রাস করছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কৃষি ও মৎস্যখাতে ক্ষতি হয় সবচেয়ে বেশি। গবেষণায় দেখা গেছে ৫২ শতাংশ পরিবারে লবণাক্ততা, অতিবৃষ্টি ও বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কম-বেশি ৬৬ শতাংশ পরিবারের লবণাক্ততা, পানির উষ্ণতার কারণে খাদ্য নিরাপত্তা ও উর্পাজন বাধাগ্রস্ত হয়। ৪২ শতাংশ পরিবার ফসলের হানি, ৪৮ শতাংশ পরিবার গবাদিপশুর ক্ষতিসহ বিভিন্ন ক্ষতির সম্মুখীন হন । জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রজনন ও যৌনস্বাস্থ্যেও প্রভাব পড়ে।
জলবায়ু উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের জন্য বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব অর্থায়নে কক্সবাজারে বড়ো একটি আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। জলবায়ু শরণার্থীদের জন্য এ ধরনের পুনর্বাসন প্রকল্প বিশ্বে এই প্রথম। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী উন্নত ও দ্রুত উন্নয়নশীল দেশগুলোর কোনো আর্থিক সহায়তা ছাড়াই এ ধরনের প্রকল্প পৃথিবীতে বিরল। । অথচ বারবার আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলনে দাবি সত্ত্বেও কার্বন দূষণকারী দেশগুলো জলবায়ু শরণার্থীদের পুনর্বাসনে কোনো দায়িত্বই নেয়নি। বাঁকখালী নদীর পূর্ব-উত্তর পাড়ের খুরুশকুল এলাকায় ২৫৩ একর জায়গাজুড়ে নির্মাণ করা হয়েছে ১৩৭টি পাঁচতলা ভবন। ২০১৭ সালে খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ২০২০ সালে প্রাথমিকভাবে ৬০০ পরিবারকে নামমাত্র মূল্যে ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেওয়া হয়। আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় থাকা পরিবারগুলো মূলত কক্সবাজার পৌরসভার কুতুবদিয়াপাড়া, সমিতিপাড়া ও নাজিরারটেক এলাকার বাসিন্দা।
বর্তমানে ঢাকায় বসবাসকারীদের মধ্যে ১০-১৫ লাখ মানুষ বিভিন্নভাবে বাস্তুচ্যুত হয়ে ঢাকা শহরেরে এসে বসবাস করছে। এসব বাস্তুচ্যতু মানুষ ঢাকা মহানগরির ভঙ্গুর অবকাঠামো, আবাসন, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর ওপর আরও বেশি চাপ সৃষ্টি করছে। আবার যারা গ্রামে আছে, তাদের অবস্থাও আরও শোচনীয়। মৌলিক নাগরিক সেবার ব্যবস্থা নেই বললেই চলে।পরিবেশগত পরিবর্তনের কারণে নিজেদের ঘরবাড়ি ও ভিটেমাটি হারাতে হয়েছে, যার ফলে তারা আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। কৃষি, মৎস্যচাষ বা অন্যান্য পেশা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ব্যাহত হওয়ায় তারা পেশা পরিবর্তন করতে বা নতুন কাজ খুঁজতে বাধ্য হচ্ছে। নিজ এলাকা থেকে উচ্ছেদ হয়ে তারা কর্মসংস্থান ও আশ্রয়ের আশায় শহরে ভিড় করছে, যার ফলে শহরগুলো অতিরিক্ত ঘনবসতিপূর্ণ ও বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে। নিরাপদ আশ্রয় না থাকায় এবং দুর্বল অবস্থানের কারণে তারা আধুনিক দাসত্ব বা অন্যান্য শোষণের শিকার হচ্ছে। জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য এখনও কোনো স্পষ্ট আন্তর্জাতিক বা জাতীয় আইনি কাঠামো নেই, যা তাদের স্বীকৃতি ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে প্রভাবশালী ও বিত্তশালী ব্যক্তিরা উদ্বাস্তুদের দুর্বলতার সুযোগে তাদের জমিসহ অন্যান্য সুবিধা দখল করে নেয় । নিরাপদ আশ্রয় ও নিয়মিত জীবনধারণের অভাবে তারা স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়।
প্রযুক্তির সহায়তায় জলবায়ু উদ্বাস্তুদের ট্র্যাকিং এর মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে তাদের জন্য টেকসই পুনবাসন নিশ্চত করার উদ্যোগ নিলে সুফল পাওয়া যাবে।তাদের কর্মসংস্থান , খাদ্যনিরাপত্তা এবং বাসস্থনের ব্যবস্থা করতে হবে। শহর ও গ্রামে উভয় জায়গায় জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য গুরুত্বসহকারে  সমানভাবে কাজ করতে হবে। জলবায়ু উদ্বাস্তুদের মধ্যে নারী, শিশু, প্রবীণ ও প্রতিবন্ধীদের মতো ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী রয়েছে। সবার জন্য এক রকম সমাধান কার্যকর হবে না,প্রত্যেককে তার প্রয়োজন অনুযায়ী সমস্যার সমাধান দিতে হবে। সমস্যাগুলো কম-বেশি আমরা সবাই জানি,সমাধানের পথও আমাদের জানা আছে, দরকার শুধু আন্তরিকতা, প্রস্তুতি এবং সদিচ্ছা।
লেখক: সিনিয়র তথ্য অফিসার, তথ্য অধিদপ্তর।



মিরপুরে আগুনে নিহত ১৬ জনের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর

রাজধানীর মিরপুরের রূপনগর এলাকায় কেমিক্যাল গুদামে লাগা ভয়াবহ আগুনে নিহত ১৬ জনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। গতকাল রবিবার (১৯ অক্টোবর) রাতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গ থেকে তাদের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

লাশ হস্তান্তর করা ১৬ জন হলেন- নুর আলম, রবিউল ইসলাম, মৌসুমী খাতুন, আল মামুন, সানোয়ার হোসেন, ফারজানা আক্তার, মুনা আক্তার, জয় মিয়া, মুক্তা বেগম, নাজমুল ইসলাম, তোফায়েল আহামেদ, খালিদ হাসান, আব্দুল আলিম, আসমা, নার্গিস আক্তার ও মাহিরা।

রূপনগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোখলেছুর রহমান এ তথ্য দেন।

লাশ হস্তান্তরের সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন এই থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মুখলেছুর রহমান।
পুলিশ বলছে, ১৬ জনের পরিচয় ডিএনএ’র মাধ্যমে শনাক্ত হয়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গ থেকে রাতে পর্যায়ক্রমে নিহতদের লাশ তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ১৪ জনের পরিবার মর্গে এসেছেন।

তিনি বলেন, পর্যায়ক্রমে সবার লাশ হস্তান্তর করা হবে।

এদিকে দুর্যোগ ব্যাপস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে জেলা প্রশাসনে পক্ষ থেকে নিহদের পরিবারকে দাফন-কাফন যাতায়াত বাবদ ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন প্রকৌশলী মো. জাকির হোসাইন (তেজগাঁও উন্নয়ন সার্কেল)।

সূত্র: কালের কন্ঠ।




‘বিষ’ চাষের প্রস্তুতি মহাসমারোহে

নিল রঙের নেট দিয়ে একটি জমিকে ঘিরে তার মধ্যে ছোট ছোট বীজতলা, বীজতলার পাশে বিভিন্ন ধরণের সবজি ও ফুলের গাছ ।

সামনের দিকে প্রবেশের জন্য সুন্দর একটি ফটক। দুর থেকে একটি সুন্দর আয়োজন মনে হলেও ভয়ঙ্কর অসুন্দর আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে বিষ চাষ অর্থাৎ তামাকের চারা উৎপাদনের জন্য। পুরো জেলা জুড়ে এ চিত্র প্রায় শতাধিক।

মেহেরপুর শহর ছেড়ে কাথুলী সড়কের বিভিন্ন স্থানসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে এমন ভয়ঙ্কর প্রস্তুতি মহাসমারোহে চলছে তামাকের চারা উৎপাদন প্রক্রিয়ায়। এ সড়কের মোনাহারপুর কবরস্থান থেকে কুলবাড়িয়া ইটভাটা মাত্র আধা কিলোমিটারের মধ্যেই এ ধরণের বীজতলা তৈরি করা হয়েছে ৬টি। এর মধ্যে বৃটিশ আমেরিকান টোব্যকোর (বিএটি) ৩টি, আবুল খায়ের গ্রুপের ২টি এবং জাপান টোব্যকো ইন্ডাস্ট্রিজের ১টি। তামাক কোম্পানীগুলোর লোভনীয় ফাঁদে পড়ে সাধারণ কৃষকরাই ঝুঁকছেন এ বিষ চাষে। এক মাস ১০ দিনের এ বীজতলা থেকে চারা উৎপাদনের পর সেগুলো হাজার হাজার বিঘা জমিতে চাষ করা হবে। চোখের সামনে ভয়ঙ্কর এ আয়োজন যেন চলছে বছরের পর বছর।

মেহেরপুর জেলায় গত বছর ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তামাক চাষ হয়েছে ৯৭৫ হেক্টর অর্থাৎ ৭ হাজার ৩১২ বিঘা জমিতে। তামাকের আবাদ এবছর আরও সম্প্রসারণ করতে ইতিমধ্যে তামাকের চারা উৎপাদনের জন্য এ বীজতলাগুলো তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।
তামাকের এ আগ্রাসনের ফলে সবজি উৎপাদনের জেলায় প্রতিনিয়ত সবজি উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে। তামাক চাষের ফলে আবাদি জমির উর্বরতা শক্তি হারিয়ে যাচ্ছে। তামাক উৎপাদনের সাথে জড়িত নারী-শিশুসহ বয়স্ক মানুষজন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এ জেলার ঘরে ঘরে ফুসফুস, শ্বাসকষ্টসহ ক্যান্সারের মত মরণব্যাধি দেখা দেবে। এত কিছু জানার পরও তামাক কোম্পানীর গুলোর লোভনীয় ফাঁদে পড়ে কিছু অর্থনৈতিক সুবিধা পেতে সাধারণ কৃষকরা তামাক আবাদে ঝুঁকে সবজি উৎপাদনের জমিগুলোর উর্বরতা নষ্ট করছেন।

জেলায় কয়েকটি তামাক ক্রয়ের কোম্পানি আছে। এগুলোর মধ্যে বৃটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো, জাপান টোব্যাকো, আবুল খায়ের টোব্যাকো কৃষকদের বিভিন্নভাবে প্রণোদনা দিয়ে থাকে। এই কোম্পানিগুলোর এলাকাভিত্তিক নিজস্ব তামাক চাষীদের তালিকা আছে। এক্ষেত্রে প্রতিটি কোম্পানির আলাদাভাবে তালিকা থাকে। সেই তালিকা ধরে প্রণোদনা হিসেবে বিনামূল্যে বীজ, ঋণ হিসেবে বাজারদরে সার, কীটনাশক (যা তামাক ক্রয়ের পরে মূল্যের সঙ্গে পরবর্তীতে সমন্বয় করা হয়) এবং নগদ টাকাও ঋণ দেয়। এগুলো দিয়েই শেষ না বীজতলা থেকে যাতে কাঙ্খিত চারা উৎপাদন হয় এবং চাষ করা হয় সে পর্যন্ত তদারকি করে থাকের কোম্পানীর প্রতিনিধিরা।

গতকাল রবিবার সকালে মেহেরপুর-কাথুলী সড়কের মোনাহারপুর মাঠে বিএটির তত্ত্বাবধানে একটি বীজতলার তৈরির কাজ করছিলেন কয়েকজন কৃষক। তাাঁদের সাথে কথা বলা জানা গেছে, ৮ থেকে ১০ জন কৃষক মিলে এক বিঘার একটি বীজতলা তৈরি করেছেন। যা থেকে যে চারা উৎপাদন হবে তা প্রায় দেড়শ বিঘা জমির তামাক আবাদ করা যাবে।

বীজতলার মালিক মো: হিরো বলেন, তাঁদের এ বীজতলাটি তৈরি করতে প্রায় এক লাখ টাকা খরচ হয়েছে। নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে তারপর অন্য কৃষকদের কাছে চারা বিক্রি করবেন। বীজতলা তৈরির জন্য বিএটি থেকে নেট, বীজ ও কীটনাশক দিয়েছেন ঋণ হিসেবে পরে তামাক বিক্রয়ের সময়ে সেখান থেকে টাকা কেটে নেই।

হিরো আরও বলেন, তামাক চাষ করে খুব বেশি লাভ হয় না। তবু তামাক কোম্পানীগুলোর পিড়াপিড়াতে করতে হয়।

কথা হয় তামাক চাষী উজুলপুর গ্রামের আবু হানিফের সাথে। তিনি বলেন, আমার সাড়ে তিন একর জমির চাষ করার কার্ড রয়েছে। গত বছর ১০ বিঘা জমিতে চাষ করেছি। ভালো লাভ হয়নি। চাষিদের লজ্জা নেই, তাই লস হলেও করি। এবার কতবিঘা চাষ করবো এখনো বলা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, কোম্পানীর কার্ড থাকায় তামাক বিক্রি করে টাকা পেতে সমস্যা হয়না বলে আবু হানিফ জানান।

একই গ্রামের মঈনদ্দিন নামের আরেক কৃষক বলেন, তামাক চাষ করলে ক্ষতি হয়। তামাক জ্বালানোর সময় শরীর জ্বরে, চুলকায় এবং শ্বাষকষ্ট হয়। গত বছর দুই বিঘা তামাকের চাষ করলেও এ বছর না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এচাষে শরীরের ক্ষতি ছাড়াও জমিরও অনেক ক্ষতি হয়।

মিনারুল ইসলাম নামের আরেক কৃষক বলেন, এক বিঘা তামাক চাষ করতে ৭/৮ বস্তা সার লাগে। বেশি লাগে ড্যাপ (ডিএপি) সার। তামাক কোম্পানী থেকে শুধু এসওপি সার দেয় বাকি সার বাজার থেকেই কিনতে হয়।

বীজতলা পরিচর্যার দেখভাল করছিলেন বৃটিশ আমেরিকান টোব্যকো বিএটির লিফ ম্যানেজার তানভির হোসেন, মেহেরপুরে মোট কতটি বীজতলা করা হয়েছে এবং কি পরিমাণ জমিতে তামাক চাষ করার লক্ষ্যমাত্রা আছে তা তিনি জানাতে অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, জার্মিনেশনের উপর ভিত্তি করে তামাক চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। বীজগুলো যাতে ভালোভাবে জার্মিনেশন হয়

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্র মতে, মেহেরপুর জেলায় ৯৭৫ হেক্টর জমিতে গত বছর তামাকের চাষ হয়েছে। জেলায় মোট আবাদি জমি রয়েছে ৫৮ হাজার ৫০৭ হেক্টর।

কৃষি অফিসের তথ্য মতে প্রতি বিঘা জমিতে জমিতে তামাক চাষ করতে ৪০ কেজি ইউরিয়া, ৫০ কেজি ডিএপি, ৫০ কেজি এসওপি, ১ কেজি দস্তা ও আধা কেজি বোরণ প্রয়োজন হয়।

কিন্তু কৃষকদের তথ্যমতে প্রতিবিঘা জমিতে ৭/৮ বস্তা সার লাগে। বেশি লাগে ডিএপি সার। তামাক চাষ করার জন্য তামাক কোম্পানীগুলো শুধুমাত্র এসওপি সার সরবরাহ করে। বাকি সারগুলো সাধারণ খুচরা সার ডিলার ও সার ব্যবসায়ীদের কাছে থেকে সংগ্রহ করেন চাষীরা। কৃষি বিভাগ থেকে তামাকের জন্য কোন সার বরাদ্দ না থাকলেও কৃষকরা বিভিন্ন ফসলের নাম করে তামাকের সার সংগ্রহ করেন। যার ফলে প্রতিবছর তামাক মৌসুম শুরু হওয়ার আগে সারের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি হয়।

মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক জেসমিন ফেরদৌস বলেন, তামাকচাষে নিরুৎসাহীত করতে কৃষকদের নিয়ে প্রশিক্ষণ, উঠান বৈঠক ও লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। তামাকে বিপরীতে পেঁপের চাষ করতে উদ্ধুদ্ধ করা হয়েছে। আশা করছি গতবছরের তুলনায় এবছর কিছু হলেও তামাকের চাষ কমবে।

সার সঙ্কটের বিষয়ে তিনি বলেন, চাষীরা প্রয়োজনের তুলনায় জমিতে অধিক সার ব্যবহার করেন। তাঁরা মনে করেন বেশি সার ব্যবহার করলে ফলন ভালো হয়। তবে আমরা এবছর অতিরিক্ত সারের চাহিদা পাঠিয়েছি।




মেহেরপুরের কুতুবপুরে অ্যাড. কামরুল হাসানের গণসংযোগ

মেহেরপুর সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের সুবিদপুর গ্রামে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুল হাসানের নেতৃত্বে এক গণসংযোগ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল রোববার বিকেলে এ গণসংযোগে তিনি স্থানীয় জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফা দাবি সম্বলিত লিফলেট বিতরণ করেন।

গণসংযোগে আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি আলমগীর খান ছাতু, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ওমর ফারুক লিটন, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক ফায়েজ মোহাম্মদ, সাধারণ সম্পাদক সাহিদুল ইসলাম, সুবিদপুর ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি কেনেডি, জেলা শহীদ জিয়া স্মৃতি সংসদের সভাপতি আলিফ আরাফাত, সদর উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক লিয়াকত আলি, জেলা যুবদলের সদস্য মেহেদী হাসান রোলেক্স, বিএনপি নেতা নাহিদসহ ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডের নেতাকর্মী ও সহযোগী অঙ্গসংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ।




মেহেরপুরের পাটকেলপোতায় জামায়াতের গণসংযোগ

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মেহেরপুর জেলা শাখার উদ্যোগে সদর উপজেলার বারাদি ইউনিয়নের পাটকেল পোতা গ্রামে গণসংযোগ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল রবিবার বিকাল ৫টার দিকে পাটকেল পোতা গ্রামের প্রধান সড়ক ও দোকানপাটে এ গণসংযোগ অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে নেতৃত্ব দেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জেলা আমির ও মেহেরপুর-১ আসনের প্রার্থী মাওলানা তাজউদ্দিন খান। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, মেহেরপুর জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি ইকবাল হুসাইন, মেহেরপুর সদর উপজেলা আমির সোহেল রানা, উপজেলার সেক্রেটারী ও আমঝুপি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী জাব্বারুল ইসলাম মাষ্টার, মেহেরপুর শ্রমিক ফেডারেশনের সদরের সভাপতি আবুল হোসেন, বারাদি ইউনিয়নের আমির মাওলানা আছাদুল ইসলাম,  সেক্রেটারি আব্দুর রাজ্জাক, পাটকেল পোতা ওয়ার্ড সভাপতি মাওলানা ফরিদউদ্দিন সহ বারাদি ইউনিয়নের  নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

গণসংযোগ কর্মসূচিতে আসন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানো এবং দলীয় প্রার্থীর পক্ষে সর্বাত্মক সমর্থন প্রদানের আহ্বান জানানো হয়।