মেহেরপুর রিপোর্টার্স ক্লাবের সদস্য পদ থেকে দুই সাংবাদিকের পদত্যাগ

মেহেরপুর রিপোর্টার্স ক্লাবের সদস্য পদ থেকে দুই সাংবাদিক পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগ নেওয়া সাংবাদিকরা হলেন দৈনিক মাথাভাঙা পত্রিকার মোঃ হামিদুল ইসলাম এবং মেহেরপুর প্রতিদিনের বারাদী প্রতিনিধি মোঃ সাইফুল ইসলাম বাবু।

জানা গেছে, তারা নিজেদের ব্যক্তিগত কারণ উল্লেখ করে মেহেরপুর রিপোর্টার্স ক্লাবের সদস্য পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ নিয়েছেন।
দু’জনই নিজেদের ফেসবুক আইডিতে স্ট্যাটাসের মাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশ করেন।

পাশাপাশি, তাদের পদত্যাগ পত্রের একটি অনুলিপি মেহেরপুর প্রতিদিন অফিসে জমা দিয়েছেন।




ঝিনাইদহে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কালিচরণপুর ইউনিয়নের বড় কামারকুণ্ডু গ্রামে পানিতে ডুবে আপন (৪) নামে চার বছরের এক শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। শিশুটি ওই গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেনের ছেলে।

রবিবার (২৬ অক্টোবর) সকালে এই ঘটনাটি ঘটে। নিহত শিশুর স্বজনরা জানান, রবিবার সকালের দিকে কোন এক সময়ে শিশুটি বাড়ির পাশে খেলতে যায়, পরে শিশুটির মা অনেক খোজাখুজি করেও শিশুটিকে না পেয়ে সবাইকে জানায়। এ অবস্থায় দুপুরের দিকে বাড়ির পাশে পুকুরে শিশুটির মরদেহ ভাসতে দেখে স্থানীয়রা দ্রুত তাকে পানি থেকে তুলে সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়।

ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক বলেন শিশুটি আনার অনেক আগেই মারা গেছে। ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছে।




মেহেরপুরে নবজাতকে জন্ম নিবন্ধন সনদ ও উপহার বিতরণ

মেহেরপুরে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে নরমাল ডেলিভারিতে জন্ম নেওয়া নবজাতকের মায়ের হাতে উপহার তুলে দিয়েছেন সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোঃ খায়রুল ইসলাম।

রবিবার (২৬ অক্টোবর) সকালে মেহেরপুর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে স্বাভাবিক প্রসবের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া এক কন্যা শিশুর হাতে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে উপহারসামগ্রী প্রদান করা হয়। এ সময় নবজাতকের মা ও পরিবারকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয় এবং শিশুর জন্ম নিবন্ধন সনদও হস্তান্তর করা হয়।

ইউএনও মোঃ খায়রুল ইসলাম বলেন, মেহেরপুরে স্বাভাবিক প্রসব উৎসাহিত করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মা ও নবজাতকের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আমরা সবাইকে নরমাল ডেলিভারির প্রতি আগ্রহী হতে উৎসাহ দিচ্ছি। এই সময় উপস্থিত ছিলেন মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের চিকিৎসক, নার্স, মাঠকর্মী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে স্বাভাবিক প্রসব হলে প্রতিটি নবজাতক ও তার পরিবারকে শুভেচ্ছা উপহার প্রদান অব্যাহত থাকবে। এর মাধ্যমে প্রসবপূর্ব সচেতনতা, চিকিৎসা পরামর্শ ও জনসচেতনতা আরও বাড়বে।




প্রাণঘাতী বজ্রপাত: সচেতনতা ও আগাম সতর্কতা

যেসব ঘটনা মানুষের স্বাভাবিক জীবন ধারাকে ব্যাহত করে মানুষের সম্পদ ও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে এবং যার জন্য আক্রান্ত জনগোষ্ঠীকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ব্যতিক্রমধর্মী প্রচেষ্টার মাধ্যমে মোকাবিলা করতে হয়, তাদের দুর্যোগ বলে। আর প্রাকৃতিক কারণে সৃষ্ট দুর্যোগকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলা হয়। বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলো – অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, খরা, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, নদী ভাঙন, ভূমিকম্প, বজ্রপাত, ইত্যাদি। বজ্রপাত হলো মেঘের মধ্যে বা মেঘ থেকে ভূমি পর্যন্ত সৃষ্ট বৈদ্যুতিক চার্জের এক ধরনের নির্গমন। যখন মেঘে থাকা ধনাত্মক ও ঋণাত্মক চার্জের পরিমাণ বেশি হয়ে যায়, তখন তাদের মধ্যে বা মেঘের নিচের ভূমির সাথে চার্জের সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষের ফলে আলোকরশ্মি ও শব্দের সৃষ্টি হয়, যা আমরা আলো ঝলকানি ও বিকট শব্দ হিসেবে শুনতে পাই।

বাংলাদেশে বজ্রপাতের মূল কারণ দেশটির ভৌগোলিক অবস্থান। কারণ, বাংলাদেশের একদিকে বঙ্গোপসাগর, এরপরই ভারত মহাসাগর। সেখান থেকে গরম আর আর্দ্র বাতাস আসছে। আবার উত্তরে রয়েছে পাহাড়ি এলাকা, কিছু দূরেই হিমালয় রয়েছে, যেখান থেকে ঠান্ডা বাতাস ঢুকছে। এই দুই বাতাসের সংমিশ্রণে বজ্র মেঘ তৈরি হয় এবং এসব মেঘের সাথে মেঘের ঘর্ষণে বজ্রপাত হয়। বাংলাদেশে উত্তরাঞ্চল এবং উত্তর পশ্চিমাঞ্চল বজ্রপাতপ্রবণ এলাকাগুলোর অন্যতম। গ্রীষ্মকালে এ অঞ্চলে তাপমাত্রা বেশি থাকায় এ পরিস্থিতির তৈরি হয়। আবহাওয়াবিদদের মতে, যেসব এলাকায় গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে সেসব এলাকায় যে মেঘের সৃষ্টি হয়, সেখান থেকেই বজ্রপাতের সম্ভাবনা থাকে। তাপমাত্রা এক ডিগ্রি বাড়লে বজ্রপাতের সম্ভাবনা ১০ শতাংশ বেড়ে যায়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ ঘন ঘন বজ্রপাতজনিত দুর্যোগের ঝুঁকিতে রয়েছে। লম্বা গাছ কেটে ফেলায় গ্রামীণ এলাকায় বজ্রপাতের ঝুঁকি আরও বেড়েছে। গাছ কেটে ফেলার ফলে প্রাকৃতিকভাবে বজ্রপাত থেকে সুরক্ষা হ্রাস পেয়েছে ও মানুষের জন্য ঝুঁকি বেড়েছে।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, প্রাক-বর্ষাকাল অর্থাৎ, মার্চ থেকে মে মাসে দেশে ৩৮ শতাংশ বজ্রঝড় হয়। বর্ষা অর্থাৎ, জুন থেকে সেপ্টেম্বর এই চার মাসে ৫১ শতাংশ বজ্রঝড় হয়। বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে ৮৪ লাখ বজ্রপাত হয়, যার ৭০ শতাংশই হয় এপ্রিল থেকে জুন মাসে। আবহাওয়াবিদদের পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশে উত্তর, উত্তর পূর্ব এবং উত্তর পশ্চিমাঞ্চল সবচেয়ে বেশি বজ্রপাতপ্রবণ। বজ্রপাতে হতাহতের ঘটনা বেশি ঘটে হাওর অঞ্চলে। কেননা এসব অঞ্চলে জলীয় বাষ্প বেশি থাকে। সে হিসেবে নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট এবং সেইসাথে টাঙ্গাইল, জামালপুর, ময়মনসিংহ বজ্রপাতের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া, রংপুর, পঞ্চগড়, দিনাজপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়ও বজ্রঝড় বেশি হয়। বজ্রপাতে বেশি মৃত্যু হয় কৃষকদের। কারণ, তাঁরা খোলা মাঠে কাজ করেন এবং খালি পায়ে কাজ করেন। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিবছর বজ্রপাতে ১৫০ থেকে ২০০ মানুষ মারা যায় যাদের বেশিরভাগই কৃষক। সেইসঙ্গে অনেক গবাদি পশুও মারা যায়। বার্ষিক প্রাণহানির এই সংখ্যার বিচারে সারা বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। মৃত্যুর সংখ্যা বিচার করে সরকার ২০১৬ সালে বজ্রপাতকে জাতীয় দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বনাঞ্চল বৃদ্ধিসহ সরকার বিভিন্ন কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বজ্রপাতে মৃত্যু কমাতে আগাম সতর্কতা বা পূর্বাভাস দেওয়া এবং সচেতনতা বাড়াতে নিরলসভাবে কাজ করছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম কালের কণ্ঠকে বলেন, “আমরা এখন গুরুত্ব দিচ্ছি আর্লি ওয়ার্নিংয়ে (আগাম সতর্কতায়)। এখন ১০ থেকে ১৫ মিনিট আগে বজ্রপাতের পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব। আর্লি ওয়ার্নিং যদি আমরা যথাযথ সময়ে দিতে পারি এবং এসএমএস বা ফোন কলের মাধ্যমে মানুষকে সতর্ক করে দিতে পারি, তাহলে তা কাজে দেবে বলে মনে করি। সেই নিরিখেই কাজ হচ্ছে এখন। আধঘণ্টা আগেও বজ্রপাতের পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব। আধঘণ্টা মানে অনেক সময়। আধঘণ্টা আগে যদি আমরা পূর্বাভাস দিয়ে সতর্ক করতে পারি, তাহলে অনেক জীবন বাঁচানো সম্ভব। এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর প্রথমবারের মতো বজ্রপাতের সতর্কবার্তা জারি করেছে চলতি বছরের ১৭ এপ্রিল। সেদিন প্রথম সতর্কবার্তায় দেশের ২৭ জেলার জন্য বজ্রপাত ও বজ্রবৃষ্টির সতর্কতা জারি করে অধিদপ্তর। এর পর থেকে নিয়মিত বজ্রপাতের আগাম সতর্কতা ও পূর্বাভাস দিয়ে আসছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। কিন্তু, বজ্রপাতের তথ্য বা সতর্কতা প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছানোই সবচেয়ে বড়ো চ্যালেঞ্জ। তাই, যেসব অঞ্চলে একটি নির্দিষ্ট সময়ে বজ্রপাতের আশঙ্কা রয়েছে, সেসব এলাকার মোবাইল টাওয়ার ব্যবহার করে মেসেজ বা ফোনকলের মাধ্যমে এলাকাবাসীকে সতর্ক করা যেতে পারে। বজ্রপাতে মৃত্যু ও ক্ষয়ক্ষতি রোধে আগাম সতর্কতা ও সচেতনতার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে আগাম সতর্কতা প্রদান সম্পর্কে সচেতনতা তৈরিতে গার্লস গাইড, বয়জ স্কাউট, রেড ক্রস, ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কমিটির স্বেচ্ছাসেবীসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে কাজে লাগানো যায়। তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে বজ্রপাতসহ বিভিন্ন দুর্যোগ সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার কাজে সম্পৃক্ত করা গেলে সাধারণ মানুষের কাছে দ্রুত বজ্রপাতের তথ্য পৌঁছানো সম্ভব হবে। বজ্রপাত থেকে নিরাপদ থাকতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বজ্রপাতের সময় করণীয় সম্পর্কে সুপারিশমালা তৈরি করেছে। বজ্রপাতের সময় তা অনুসরণ করলে অনেক বিপদ থেকে নিরাপদ থাকা যাবে। তাই, বজ্রপাত থেকে নিরাপদ থাকতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সুপারিশমালা মানা খুব জরুরি।

এপ্রিল-জুন মাসে বজ্রবৃষ্টি বেশি হয়; বজ্রপাতের সময়সীমা সাধারণত ৩০-৪৫ মিনিট স্থায়ী হয়। এ সময়টুকু ঘরে অবস্থান করতে হবে। ঘন কালো মেঘ দেখা দিলে ঘরের বাহিরে না যাওয়া; অতি জরুরি প্রয়োজনের ক্ষেত্রে রবারের জুতা পড়ে বাইরে বের হওয়া। বজ্রপাতের সময় খোলা জায়গা, খোলা মাঠ অথবা উঁচু স্থানে না থাকা। বজ্রপাতের সময় ধানক্ষেত বা খোলা মাঠে থাকলে তাড়াতাড়ি পায়ের আঙ্গুলের ওপর ভর দিয়ে এবং কানে আঙ্গুল দিয়ে মাথা নিচু করে বসে থাকতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব দালান বা কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিতে হবে। টিনের চালা যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। উঁচু গাছপালা ও বৈদ্যুতিক খুঁটি ও তার বা ধাতব খুঁটি, মোবাইল টাওয়ার ইত্যাদি থেকে দূরে থাকতে হবে। কালো মেঘ দেখা দিলে নদী, পুকুর, ডোবা বা জলাশয় থেকে দূরে থাকতে হবে। বজ্রপাতের সময় গাড়ির ভেতর অবস্থান করলে, গাড়ির ধাতব অংশের সাথে শরীরের সংযোগ ঘটানো যাবে না; সম্ভব হলে গাড়িটি নিয়ে কোনো কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিতে হবে। বজ্রপাতের সময় বাড়িতে থাকলে জানালার কাছাকাছি ও বারান্দায় থাকা যাবে না। জানালা বন্ধ রাখুন এবং ঘরের ভিতরে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম থেকে দূরে থাকতে হবে। বজ্রপাতের সময় মোবাইল, ল্যাপটপ, কম্পিউটার, ল্যান্ডফোন, টিভি, ফ্রিজসহ সকল বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে এবং এগুলো বন্ধ রাখতে হবে। বজ্রপাতের সময় ধাতব হাতলযুক্ত ছাতা ব্যবহার করা যাবে না। জরুরি প্রয়োজনে প্লাস্টিক বা কাঠের হাতলযুক্ত ছাতা ব্যবহার করতে হবে। বজ্রপাতের সময় শিশুদের খোলা মাঠে খেলাধুলা থেকে বিরত রাখতে হবে এবং নিজেদেরও বিরত রাখতে হবে। বজ্রপাতের সময় ছাউনি বিহীন নৌকায় মাছ ধরতে যাওয়া যাবে না, তবে এ সময় সমুদ্র বা নদীতে থাকলে মাছ ধরা বন্ধ রেখে নৌকার ছাউনির নিচে অবস্থান করতে হবে। প্রতিটি বিল্ডিং-এ বজ্র নিরোধক দন্ড স্থাপন নিশ্চিত করতে হবে। খোলাস্থানে অনেকে একত্রে থাকাকালীন বজ্রপাত শুরু হলে প্রত্যেকে ৫০ থেকে ১০০ ফুট দূরে সরে যেতে হবে। কোনো বাড়িতে যদি পর্যাপ্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা না থাকে তাহলে সবাই এক কক্ষে না থেকে আলাদা আলাদা কক্ষে যেতে হবে। বজ্রপাতে কেউ আহত হলে বৈদ্যুতিক শকে আহতদের মতো করেই চিকিৎসা করতে হবে। প্রয়োজনে দ্রুত চিকিৎসককে ডাকতে হবে বা হাসপাতালে নিতে হবে। বজ্র আহত ব্যক্তির শাস-প্রশ্বাস ও হ্রদ স্পন্দন ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

বন্যা এবং ঘূর্ণিঝড়ের মতো দুর্যোগের ক্ষেত্রে কিছু প্রস্তুতি নেবার সুযোগ থাকলেও বজ্রপাতের বিষয়টি অনেকটা ভূমিকম্পের মতোই আকস্মিক। কিন্তু আবহাওয়াবিদরা, রেডার ইমেজে মেঘের অবস্থান অনেক ওপরের দিকে দেখলে সেইসাথে বায়ুমণ্ডলে অস্থিতিশীল অবস্থা থাকলে দুই নম্বর সতর্ক সংকেত দিয়ে থাকেন। এমন অবস্থায় আকাশে কালো মেঘ ও বিদ্যুৎ চমকাতে দেখলেই সবাইকে সাথে সাথে খোলা জায়গা ছেড়ে দ্রুত নিরাপদে ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। এসব পরামর্শ মেনে চললে অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদ থেকে নিরাপদে থাকা যাবে। বাড়ি-ঘর তৈরির সময় অবশ্যই আর্থিনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। কোনো বাড়ি-ঘর বিদ্যুতায়িত হলে যাতে তা প্রাকৃতিকভাবেই নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। মৃত্যঝুঁকি কমিয়ে আনতে বজ্রপাত শেল্টারের পাশাপাশি বাড়াতে হবে লাইটনিং প্রটেস্ট সিস্টেম (এলপিএস) । বিভিন্ন স্থাপনাতে যদি এলপিএস লাগানো যায় এবং যদি এলাকাভিত্তিক সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন করা যায়, তাহলে বজ্রপাতের ঝুঁকি অনেক কমে যাবে। এছাড়া, সচেতনতা বৃদ্ধি, উন্নত পূর্বাভাস ব্যবস্থা এবং নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণও অত্যন্ত জরুরি। গাছ তার জীবন দিয়ে বজ্রপাত থেকে মানুষ ও অন্য প্রাণীর জীবন রক্ষা করে। ফলে এই মুহূর্তে আমাদের করণীয়, দ্রুত বর্ধনশীল গাছের চারা রোপণ করা। তাছাড়া, বজ্রপাত যেহেতু জলবায়ুসংক্রান্ত প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জলবায়ু দূষণ প্রতিরোধ ও বৈশ্বিক তাপমাত্রা কমানোর ক্ষেত্রেও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ, বিশ্বের সকল বিজ্ঞানীই একমত যে, জলবায়ু দূষণের ফলে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণেই প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়ে গেছে। জলবায়ু দূষণের ক্ষেত্রে পৃথিবীর শিল্পোন্নত দেশগুলোই বেশি দায়ী। বাংলাদেশসহ দরিদ্র দেশগুলোর দায় অনেক কম, কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হয় বেশি। কাজেই প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে হলে বা একে মোকাবিলা করতে হলে সারাবিশ্বকেই একযোগে উদ্যোগ নিতে হবে। বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশগুলো রক্ষার জন্য শিল্পোন্নত দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে সাহায্য দিতে হবে। ক্ষতিপূরণসহ আন্তর্জাতিক তহবিল সংগ্রহের জন্য সরকারকেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। তাছাড়া, সরকারকেও বজ্রপাতসহ সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধের জন্য জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ প্রদান করতে হবে এবং প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত এ বরাদ্দের কার্যক্রম পৌঁছে দিতে হবে। তবেই, এর সুফল সবাই পাবে।

লেখক: সহকারী তথ্য অফিসার, তথ্য অধিদপ্তর




মেহেরপুরে ট্রাকের ধাক্কায় নারী শ্রমিকের মৃত্যু

মেহেরপুরে ট্রাকের ধাক্কায় শাহিদা খাতুন (৬০) নামের এক নারী শ্রমিক নিহত হয়েছেন। আজ রবিবার (২৬ অক্টোবর) দুপুরের দিকে সদর উপজেলার ফতেপুর-শোলমারি সড়কের তেরোঘরিয়া গ্রামের রাস্তায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত শাহিদা খাতুন উজলপুর গ্রামের মৃত আব্দুল গনির স্ত্রী।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শাহিদা খাতুন তেরোঘরিয়া গ্রামে একটি মরিচ ক্ষেতে কাজ করছিলেন। পানি পানের উদ্দেশ্যে সড়কের পাশে স্থাপিত একটি টিউবওয়েলের দিকে যাচ্ছিলেন। এসময় রাস্তা পারাপারের মুহূর্তে দ্রুতগামী একটি ট্রাক তাকে ধাক্কা দিলে তিনি গুরুতর আহত হন।

পরে আশপাশের লোকজন দ্রুত তাকে উদ্ধার করে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে ঘাতক ট্রাকটি পুলিশ জব্দ করেছে। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের মরদেহ দাফনের উদ্দেশ্যে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

মেহেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মেজবাহ উদ্দিন বলেন, এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং পারিবারিক সম্মতিতে মরদেহ দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।




ঝিনাইদহে নানা দাবিতে স্মারকলিপি পেশ

ঝিনাইদহ শহরে রেল লাইন, মেডিকেল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, নদী সংস্কার ও দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া পদ্মা নদীতে সেতু নির্মাণের দাবিতে স্মারকলিপি পেশ করেছে “রেল লাইন, মেডিকেল কলেজ, বিশ্বিবিদ্যলয় বাস্তবায়ন কমিটি’র নেতৃবৃন্দ।

রবিবার সকালে ঝিনাইদহ শিশু একাডেমী প্রাঙ্গণে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ বাবুল মিঞার নিকট এই স্মারকলিপি পেশ করা হয়। স্মারকলিপি গ্রহনের সময় অতিরিক্ত সচিব মহোদয় বলেন ঝিনাইদহ বাসীর জন্য দাবী সমূহ অত্যন্ত যৌক্তিক। দ্রুত দাবিগুলো বাস্তবায়ন করার জোর প্রচেষ্ঠা চালাবো বলেও তিনি জানান।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সেলিম রেজা পিএএ, অধ্যক্ষ (অব:) মহব্বত হোসেন, জনতা ব্যাংকের এজিএম রকিবুল ইসলাম, শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা আয়ুব হোসেন, অধ্যক্ষ (অব:) সাইদুর রহমান, ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম লিটন, রেল লাইন, মেডিকেল কলেজ, বিশ^বিদ্যলয় বাস্তবায়ন কমিটি সাধারণ সম্পাদক মোঃ কামরুজ্জামান পিন্টু প্রমুখ।




ঝিনাইদহে পুত্রবধূকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ, শ্বশুর আটক

ঝিনাইদহের শৈলকূপায় শ্বশুরের ধারালো বটির আঘাতে লিমা বেগম (২৯) নামের এক পুত্রবধুর মৃত্যু হয়েছে। লিমা বেগম আব্দুর রবের স্ত্রী এবং মুকুল শেকের পুত্রবধু।

আজ রোববার ভোর ৫টার দিকে উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের পাইকপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত শ্বশুর মানসিক প্রতিবন্ধী মুকুল শেখকে আটক করেছে পুলিশ। মরদেহটি উদ্ধার করে প্রথমে শৈলকূপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, ভোর ৫টার দিকে ঘুম ভাঙ্গলে নিজ ঘর থেকে বাড়ির উঠানে যান লিমা বেগম। তখন উঠানে দাঁড়িয়ে থাকা মুকুল শেখ তার হাতে থাকা বটি দিয়ে ছেলের স্ত্রীর শরীরে আঘাত করেন। সেসময় চিৎকারে অন্যরা ছুটে এসে তাকে উদ্ধার করে শৈলকূপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

শৈলকূপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. আরিফুর রহমান জানান, ওই গৃহবধূকে আমরা মৃত অবস্থাতেই পেয়েছি। তার বুকের উপরের অংশে ধারালো অস্ত্রের আঘাত ছিল। ধারণা করা হচ্ছে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে এবং তীব্র আঘাতে অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে।

শৈলকূপা থানার উপ-পরিদর্শক আব্দুল মান্নান বলেন, এ ঘটনায় মুকুল শেখকে আটক করা হয়েছে। মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির পর মর্গে পাঠানো হয়েছে। মুকুল শেখ মানসিক ভারসাম্যহীন বলেও অনেকে জানিয়েছে।




মেহেরপুর সরকারি কলেজে বাঁধনের ২৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

নিঃস্বার্থ রক্তদানের অঙ্গীকারে মানবসেবার ব্রত নিয়ে মেহেরপুর সরকারি কলেজে উদযাপিত হয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বাঁধন এর ২৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।

রবিবার (২৬ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টায় আনন্দ র‌্যালির মধ্য দিয়ে দিনব্যাপী কর্মসূচির সূচনা হয়। পরে কেক কাটা ও কলেজ ক্যাম্পাসে বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাঁধন, মেহেরপুর সরকারি কলেজ পরিবার, পদ্মা জোনের সভাপতি মো. নাফিউল ইসলাম। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. কে. এম. নজরুল কবীর।

এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক ও বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান খেজমত আলী মালিথা, ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মো. হাসানুজ্জামান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বশির আহম্মেদ, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রভাষক তৌফিকুল ইসলাম, ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক মো. মনিরুজ্জামান, সাবেক সভাপতি সবুজ আলী ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফারুক প্রমুখ।

বাঁধনের বর্তমান ও সাবেক কর্মীরা উচ্ছ্বাস ও উৎসাহের মধ্য দিয়ে দিনব্যাপী এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। মানবতার সেবায় রক্তদানে উদ্বুদ্ধ করতে এ আয়োজনকে সকলেই সাধুবাদ জানান।




আলমডাঙ্গায় গরিবের ডাক্তার খ্যাত শাফায়েতুল ইসলাম আর নেই

আলমডাঙ্গার বিশিষ্ট চিকিৎসক গরিবের ডাক্তার খ্যাত শাফায়েতুল ইসলাম আর নেই। তিনি গতকাল রাত ১১টা ৩০ মিনিটে নিজ বাসভবনে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

জানা গেছে, আলমডাঙ্গা পৌর সভার বাবুপাড়ার মৃত বজলুর রহমানের ছেলে শাফায়েতুল ইসলাম সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে দীর্ঘদিন থেকে অসুস্থ অবস্থায় ছিলেন।

গতকাল রাত ১১টা ৩০ মিনিটে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তার এক মেয়ে নাফিসা আনজুম হিমু এ বছর এমবিবিএস এ বিসিএস এ সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছেন।

আজ বেলা ১২টায় আলমডাঙ্গা দারুসসালাম ঈদগাহ ময়দানে জানাজা শেষে দাফন কাজ সম্পন্ন হয়েছে।




তৃতীয় লিঙ্গের ৮ সদস্যসহ ১২০ বাংলাদেশিকে হস্তান্তর

মেহেরপুরের গাংনীর দুই সীমান্ত দিয়ে ভারতে আটক ৬ জন তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যসহ ৬০ জন নারী-পুরুষকে বাংলাদেশে হস্তান্তর করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)।

গতকাল শনিবার সকালে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কাজিপুর ও কাথুলী সীমান্ত দিয়ে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে তাদের হস্তান্তর করা হয়।

সকাল ১০টার দিকে কাজিপুর সীমান্তের আন্তর্জাতিক পিলার ১৪৭ মেইন পিলারের নিকটে শহীদ স্মরণী অংশে প্রথম দফায় ৩০ জনকে হস্তান্তর করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়ার ৪৭ বিজিবি ব্যাটালিয়নের সদস্যরা।

বাংলাদেশের পক্ষে কাজিপুর কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার শাহাবুদ্দিন এবং ভারতের পক্ষে ১১ গান্দিনা বিএসএফ ব্যাটালিয়নের কোম্পানি কমান্ডার এবিসন ফ্রান্সিস উপস্থিত থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই হস্তান্তর সম্পন্ন করেন।

এরপর বেলা ১২টার দিকে একই উপজেলার কাথুলী সীমান্তের আন্তর্জাতিক সীমান্ত পিলার ১৩৩/৩ এসের নিকটে দ্বিতীয় দফায় আরও ৩০ বাংলাদেশিকে হস্তান্তর করা হয়।

ভারতের তেইমপুর বিএসএফ ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার অনোজ কুমার পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে তাদের কাথুলী কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার মিজানুর রহমানের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করেন।

বিজিবি সূত্র জানায়, ফেরত আসা ব্যক্তিদের বাড়ি মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলার বিভিন্ন এলাকায়। তারা দালালের মাধ্যমে অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের মুম্বাই, দিল্লি ও আসাম রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করতেন। সম্প্রতি তারা ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে পুলিশের হাতে আটক হন এবং পরে বিএসএফের হেফাজতে দেওয়া হয়।

বিজিবি জানান, ফেরত আসা সবাইকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে সীমান্তে টহল ও নজরদারি আরও জোরদার করা হয়েছে।

গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বানী ইসরাইল বলেন, বিএসএফ ৬০ জন বাংলাদেশিকে বুঝিয়ে দিয়েছে, তাদের মধ্যে ৬ জন তৃতীয় লিঙ্গের সদস্য। তারা বিভিন্ন সময়ে অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে গিয়েছিল। পরিবারের সদস্যদের খবর দেওয়া হয়েছে এবং আইনানুগ প্রক্রিয়া চলছে।

মুজিবনগরে ২৯ বাংলাদেশিকে হস্তান্তর

মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার সীমান্ত দিয়ে কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ের পতাকা বৈঠকের পর ভারতে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশকারী নারী, পুরুষ ও শিশুসহ ২৯ জন বাংলাদেশিকে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করেছে বিএসএফ।

গতকাল শনিবার সন্ধায় তাদের হস্তান্তর করা হয়। ৬ বিজিবি ব্যাটালিয়ন এবং ভারতের ১৬১ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের কোম্পানি কমান্ডারের মধ্যে সীমান্তের ১০৫ পিলার কাছে শূন্যরেখায় আনুষ্ঠানিক পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকের পর বিভিন্ন সময়ে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশকারী ২৯ জন বাংলাদেশি নাগরিককে বিএসএফ আনুষ্ঠানিকভাবে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে।

হস্তান্তরিতদের মধ্যে ১১ জন পুরুষ, ১৭ জন নারী,১ জন শিশু রয়েছেন।

তারা জেলা- যশোর বেনাপোলের ঢালিপাদা গ্রামে একামুল গাইন এর ছেলে মিরাজ একরামুল গাইন(১৯), যশোর নাভারণের নাভারণ গ্রামের ওসমান আলী মন্ডলের স্ত্রী আমিনা খাতুন (৩৩), যশোর নাভারণের নাভারণ গ্রামের ইউনুস মোড়লের মেয়ে নার্গিস খাতুন, (৩০) যশোর শার্শা এর সেটাই গ্রামের লালন শেখের স্ত্রী রুনা খাতুন (৩০), যশোর কালিহাতীর হিদিয়া গ্রামের রহমত মোল্লার মেয়ে সালমা খাতুন (৩৩),ৎঝিনাইদা সদর উপজেলার উলাকল গ্রামের জাহারুল গাজীর মেয়ে সুপ্রিয়া খাতুন (২৮), ঝিনাইদহ মহেশপুরের গোয়াগারি গ্রামের আব্দুল বারেকের মেয়ে জমিলা খাতুন (৩৭), যশোর বাঘারপাড়ার দুরাঝাপ গ্রামের আকরাম সুখের মেয়ে জ্যোৎস্না (৩৫), নড়াই কালিয়ার জামিরডাঙ্গা গ্রামের ইসমাইল শেখের ছেলে আকরাম (২২), যশোর ঝীগরগাছা গ্রামের মশিয়ার রহমান এর ছেলে তুহিন (৩৯), যশোর কালিহাতীর হিদিয়া গ্রামের লিয়াকত খানের ছেলে সুলতান (২০), যশোর শার্শা এর অগ্রভুলাট গ্রামের শাহজাহান এর মেয়ে পায়েল (৩৩), কুমিল্লা বারুয়ার কাকের তলা গ্রামের আব্দুল শেখের ছেলে বিল্লাল হোসেন (৪৩), নড়াইল কালিয়ার বাঁধানল গ্রামের মসিব শেখের স্ত্রী রোকসানা (৪৫), যশোর শার্শা এর দাওয়াতখালি গ্রামের মুসলিম সরদারের মেয়ে মমতাজ (৪৫), যশোর শার্শা এর দাওয়াতখালি গ্রামের রফিক মন্ডলের মেয়ে রেহেনা (২৪), যশোর শার্শা এর দাওয়াতখালি গ্রামের রফিক মন্ডলের ছেলে উজ্জল (৪৫), নড়াইল সদরের তারাপুর গ্রামের সবুর মোল্লার ছেলে জসিম (৩৪), জসিমের স্ত্রী মোরশেদা খাতুন (২৩) নড়াইল সদরের তারাপুর গ্রামের আবুল মোল্লার ছেলে রানা মোল্লা (৩১), নড়াইল কালিয়ার জামিরডাঙ্গা গ্রামের আকাশ গাজীর ছেলে শেকু গাজী (৪০), নড়াইল কালিয়ার জামিরডাঙ্গা গ্রামের আব্দুল গাজীর স্ত্রী আসমা খাতুন (৫১), যশোর অভয়নগরের রানাগাতী গ্রামের ইমান আলীর ছেলে বাকি বিল্লাহ (২৪), মৌলভীবাজার সদরের দক্ষিণ সাগর গ্রামের সোনা মিয়ার সুমাইয়া খাতুন (২৫), ঢাকা কেরানীগঞ্জ কদমতলীর নুসরাত জাহান (২৫), চট্টগ্রাম আটহাজারী আব্দুল করিম সওদাগরের ছেলে নুরুল আলম (৩৬), নড়াইল কালিয়ার পেরুলী গ্রামের কাউসার শেখের মেয়ে নাজমা খাতুন (৩৬), ঢাকা মোহাম্মদপুর সিদ্দিকুর রহমানের মেয়ে জান্নাতুল(৪১)।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, তারা বিভিন্ন সময়ে সীমান্তের বিভিন্ন স্থান দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করে ছিলেন। সব প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর তাদের মুজিবনগর থানায় সোপর্দ করা হয়।

মুজিবনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মিজানুর রহমান জানান, ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশ সীমন্ত রক্ষী বাহিনী বিজিবির কাছে হস্তান্তর করা বাংলাদেশী ২৯ জনকে মুজিবনগর থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। তাদের পরিচয় সনাক্ত করে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

দর্শনায় ৩১ বাংলাদেশিকে হস্তান্তর

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা আন্তর্জাতিক চেকপোস্টে কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ের পতাকা বৈঠকের পর ভারতে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশকারী নারী, পুরুষ ও শিশুসহ ৩১ জন বাংলাদেশিকে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করেছে বিএসএফ। গতকাল শনিবার দুপুরের পর তাদের হস্তান্তর করা হয়।

চুয়াডাঙ্গা-৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল নাজমুল হাসান জানান, চুয়াডাঙ্গা-৬ বিজিবি ব্যাটালিয়ন এবং ভারতের ৩২ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের কোম্পানি কমান্ডারের মধ্যে সীমান্তের প্রধান খুঁটি ৭৬ এর কাছে শূন্যরেখায় আনুষ্ঠানিক পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের পর বিভিন্ন সময়ে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশকারী ৩১ জন বাংলাদেশি নাগরিককে বিএসএফ আনুষ্ঠানিকভাবে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে।

হস্তান্তরিতদের মধ্যে ১৬ জন পুরুষ, ১০ জন নারী, ৩ জন শিশু ও ২ জন তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তি রয়েছেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, তারা বিভিন্ন সময়ে সীমান্তের বিভিন্ন স্থান দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন। সব প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর তাদের দর্শনা থানায় সোপর্দ করা হবে বলে জানিয়েছেন লে. কর্নেল নাজমুল হাসান।