সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকমুক্ত সচিবালয় : পরিবেশবান্ধব প্রশাসনের নতুন দিগন্ত

সরকারের স্বায়ত্তশাসিত একটি সংস্থার মহাপরিচালক শওকত হায়দার(ছদ্মনাম)। অন্যদিনের মতো আজও তিনি ভোরে উঠে ফ্রেশ হয়ে মর্নিং ওয়াক-গোসল ও সকালের নাস্তা সেরে পরিচ্ছন্ন পোশাকে অফিসের উদ্দেশ্যে বের হয়েছেন। চাকরি জীবনের শুরু থেকেই দক্ষ মানুষ হিসেবে যেমন তাঁর পরিচিতি, অনুরূপভাবে পোশাক-পরিচ্ছদেও টিপটপ ব্যক্তি হিসেবে তার নামডাক বেশ। সকাল নয়টার আগেই রাজধানীর দিলকুশা এলাকায় অফিসের সামনে পৌঁছায় তাকে বহনকারী জিপ গাড়িটি। তবে বিপত্তি ঘটেছে এখানেই, গতকাল সন্ধ্যায় যে অল্প একটু বৃষ্টি হয়েছে, সেই পানি রাস্তা ও অফিস চত্বরে এখনও পর্যন্ত জমে রয়েছে।

অফিসে ঢুকতে হলে ড্রেন ও সুয়ারেজের ময়লায় একাকার এই কালো পানিতে পা ভেজানো ছাড়া অন্য উপায় নেই। ইচ্ছে না থাকলেও অফিস জুতো খুলে স্যান্ডেল পরে সে পথেই হাঁটতে হলো তাকে। পানি আর ময়লার পঁচা দুর্গন্ধে গা ঘিনঘিন করা অবস্থা হলো তখন। একটু পরে অবশ্য সিটি কর্পোরেশনের লোক এসে পানি অপসারণের ড্রেনের মুখ থেকে জমে থাকা কিছু পলিথিন সরিয়ে দিতেই সমস্ত পানি নিমিষেই নেমে গেল। জলাবদ্ধতার কারণটি ছোট্ট হলেও অফিসের সবার ভোগান্তি ছিল অনেক বড়ো।

ফেলে দেওয়া পলিথিন বা প্লাস্টিকগুলো নাগরিক জীবনে এরকম ছোটো-বড়ো বিপত্তির কারণ হয়ে উঠছে প্রতিনিয়তই। একসময়ে বিজ্ঞানের উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার পলিথিন বা প্লাস্টিক এখন পরিবেশ দূষণের উৎস ও জনজীবনে এক দুঃস্বপ্নের নাম। ব্যবহার শেষে প্লাস্টিক বর্জ্যের বড়ো একটি অংশ জমা হয় ভাগাড়ে, যেগুলো পচতে সময় লেগে যায় বছরের পর বছর। পরিবেশে প্লাস্টিকের প্রভাব সুদূরপ্রসারী এবং বিধ্বংসী। একবার ব্যবহারযোগ্য পলিব্যাগ থেকে শুরু করে বহুবার ব্যবহার উপযোগী প্লাস্টিকপণ্য সবই পরিবেশের ক্ষয়ে ভূমিকা রাখে। এসইউপি বা একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যবহার এখন সর্বব্যাপী, বিশেষ করে একবার ব্যবহার করে ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক বা পলিথিন ব্যাগ, স্ট্র এবং বোতলের মতো দ্রব্যাদি। এর অপব্যবহার এবং ব্যবহৃত পলিথিনের ব্যবস্থাপনাগত ঘাটতির ফলে বিশ্বব্যাপী বাস্তুতন্ত্রের ওপরও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এছাড়া একটি মোটামুটি পরিমাণে প্লাস্টিক বর্জ্যের গন্তব্য হচ্ছে জলাশয়গুলো, যার জের ধরেই ক্রমবর্ধমান সমুদ্র দূষণের সমস্যাটি আরও প্রকট হয়েছে। সমুদ্র যেন প্লাস্টিক বর্জ্যের এক বিশাল মজুদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এতে করে বিপর্যস্ত হচ্ছে সামুদ্রিক জীবন। জাতিসংঘের পরিবেশ প্রোগ্রামের (ইউএনইপি) পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, আট মিলিয়নেরও বেশি মেট্রিক টন প্লাস্টিক বর্জ্য প্রতিবছর সমুদ্রে গিয়ে পড়ে। যা সামুদ্রিক প্রাণীদের জন্য বিশাল হুমকিতে রূপ নেয়, কেননা তারা প্রায়ই ভুল করে প্লাস্টিককে খাবার ভেবে খেয়ে ফেলে অথবা বিভিন্নভাবে তাদের শরীর প্লাস্টিকের সঙ্গে জড়িয়ে যায়, যা তাদের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

প্লাস্টিক বর্জ্যে মাটি দূষিত হয় এবং এতে থাকা ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের কারণে জীবজগৎ ও উদ্ভিদকূল উভয়েই ক্ষতির মুখে পড়ে। প্লাস্টিক দূষণের কারণে মাটির উর্বরতা ব্যাহত হয়, কৃষির উৎপাদনশীলতা কমে এবং বাস্তুতন্ত্রের সুস্থতা বাধাগ্রস্ত হয়। এ ধরনের বর্জ্য পুড়িয়ে নষ্টের চেষ্টা করলে তা পরিবেশে বিভিন্ন বিষাক্ত পদার্থ হয়ে মিশে যায়, যার ফলে বায়ু দূষণ ঘটে এবং পরবর্তীতে মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগব্যাধির মাত্রা বৃদ্ধি পায়। প্লাস্টিক দূষণের সবচেয়ে ভয়ের দিকটি হচ্ছে এর দীর্ঘস্থায়িত্ব। এর পচনে বহু বহু বছর লেগে যায় এবং বহু বছর পরও এটি ভেঙে গিয়ে মাইক্রোপ্লাস্টিক নামের ক্ষুদ্রাংশে পরিণত হয়। মাইক্রোপ্লাস্টিকের আকার পাঁচ মিলিমিটারের চেয়েও কম এবং সমুদ্রের তলদেশ থেকে শুরু করে যে বাতাসে আমরা শ্বাস নিই-তার সবখানেই এখন মাইক্রোপ্লাস্টিক ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। এই ছোটো ছোটো কণাগুলো খাদ্যশৃঙ্খলের মাধ্যমে আমাদের দেহে প্রবেশ করে এবং বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকির জন্ম দেয়।

প্লাস্টিকের জীবনচক্রের প্রথম ধাপ শুরু জীবাশ্ম জ্বালানি, অপরিশোধিত তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস নিষ্কাশনের মধ্য দিয়ে। এই অনবায়নযোগ্য শক্তির উৎসগুলোকে প্লাস্টিক উৎপাদনের কাঁচামাল, যেমন-ইথিলিন ও প্রোপিলিন পেতে ব্যবহার করা হয়। এই নিষ্কাশন প্রক্রিয়ার ফলে বায়ু ও পানি দূষণ হয় এবং এর ফলে নির্গত গ্রিনহাউজ গ্যাসের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বড়োসড়ো ঘটনা ঘটে। সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল বা আন্তর্জাতিক পরিবেশ আইন কেন্দ্রের তথ্যানুযায়ী, প্রায় ৯৯ শতাংশ প্লাস্টিকই আসে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে। শুধু ২০২০ সালেই বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক শিল্প থেকে ১.৮ বিলিয়ন টন কার্বন-ডাই-অক্সাইডের সমপরিমাণ গ্যাস বের হয়েছে, যা কি না ৩৮০টি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের কার্বন দূষণের সমান।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় প্লাস্টিকজাত পণ্যের ব্যবহার সীমিত করার জন্য নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। শুরুতে ছিলো শপিংমলগুলোতে পলিব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধকরণ। এ ব্যাপারে আইনের প্রয়োগসহ জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়, যা এখনও চলমান আছে। এর পাশাপাশি ঘোষণা দিয়ে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র বাংলাদেশ সচিবালয়ে গত ৫ অক্টোবর থেকে শুরু হয়েছে একবার ব্যবহার উপযোগী প্লাস্টিক বর্জন।এর আওতায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের ফাইল-ফোল্ডারের পরিবর্তে কাগজ বা পরিবেশবান্ধব অন্যান্য সামগ্রীর তৈরি ফাইল ও ফোল্ডার ব্যবহার করতে পরামর্শ দিয়েছে। এছাড়া প্লাস্টিক ব‍্যাগের পরিবর্তে কটন বা জুট ফেব্রিকের ব্যাগ ব্যবহার করা, প্লাস্টিকের পানির বোতলের পরিবর্তে কাঁচের বোতল ও কাঁচের গ্লাস ব্যবহার, প্লাস্টিকের ব্যানারের পরিবর্তে কটন ফেব্রিক, জুট ফেব্রিক বা বায়োডিগ্রেডেবল উপাদানে তৈরি ব্যানার ব্যবহার, দাওয়াতপত্র, ভিজিটিং কার্ড ও বিভিন্ন ধরনের প্রচারপত্রে প্লাস্টিকের লেমিনেটিং পরিহার করার পরামর্শও রয়েছে। উপরন্তু বিভিন্ন সভা-সেমিনারে সরবরাহকৃত খাবারের প্যাকেট যেন কাগজের তৈরি হয় বা পরিবেশ বান্ধব হয় সেটি নিশ্চিত করা। একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিকের প্লেট, গ্লাস, কাপ, স্ট্র, কাটলারিসহ সকল ধরনের পণ্য পরিহার, প্লাস্টিকের কলমের পরিবর্তে পেনসিল বা কাগজের কলম ব্যবহার, বার্ষিক প্রতিবেদনসহ সকল ধরনের প্রকাশনায় লেমিনেটেড মোড়ক ও প্লাস্টিকের ব্যবহার পরিহার এবং ফুলের তোড়াতে প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করার বিষয়গুলোও অন্তর্ভুক্ত আছে।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক সভায় সব মন্ত্রণালয়কে প্লাস্টিকজাত পণ্যের ব্যবহার সীমিত করা-সংক্রান্ত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী, দর্শনার্থীদের কেউ যাতে এসইউপি নিয়ে সচিবালয়ে প্রবেশ করতে না পারে, সে জন্য প্রবেশপথে তল্লাশি করা এবং দর্শনার্থীদের কাছে প্লাস্টিকের ব্যাগ পাওয়া গেলে এর পরিবর্তে তাদের কাগজের বা কাপড়ের ব্যাগ দেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে সচিবালয়ের প্রবেশপথসহ বিভিন্ন জায়গায় সচেতনতামূলক বোর্ড বসানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, প্লাস্টিকের থলের পরিবর্তে পাটজাত, কাপড় বা পুনর্ব্যবহারযোগ্য থলে ব্যবহার করতে হবে। সরকারি কেনাকাটায়ও প্লাস্টিকের বিকল্প পণ্য অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। একইসঙ্গে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এসইউপি ব্যবহার বন্ধে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিসে ব্যবহারের জন্য বিকল্প সামগ্রী সরবরাহ করা এবং সভা-সেমিনারে কাগজ বা পরিবেশবান্ধব খাবারের প্যাকেট দেওয়া হবে। সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নে প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে একজন ফোকাল পারসন নিয়োগ ও মনিটরিং কমিটি গঠন করারও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি তৈরি করা এসব প্লাস্টিকপণ্য বন্ধে অনুসরণীয় উদাহরণ সৃষ্টি করতে সরকার এ পদক্ষেপ নিয়েছে বলে ধারণা করা যায়।

একবার ব্যবহার উপযোগী প্লাস্টিক বর্জনের উদ্যোগে সবার আগে এগিয়ে এসেছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় ও তার অন্যতম প্রতিষ্ঠান তথ্য অধিদফতর। তথ্য অধিদফতরের অবস্থান সচিবালয়ের ভেতরেই। বাংলাদেশ সচিবালয়কে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক (এসইউপি) মুক্ত ঘোষণা করার ধারাবাহিকতায় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং তথ্য অধিদফতর (পিআইডি)-কে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।এর আওতায় পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণকল্পে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক-এর ব্যবহার বন্ধ করার লক্ষ্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক সামগ্রীর পরিবর্তে নিম্নোক্ত প্রস্তাবিত বিকল্প পণ্যসামগ্রী ব্যবহারের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে তার বাস্তবায়নও শুরু হয়েছে।

বাংলাদেশই বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে প্লাস্টিক ব্যাগ নিষিদ্ধ করে। প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার বন্ধে ২০০২ সালে আইন করা হলেও গত ২২ বছরে তার সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকার সেই কাজে হাত দিয়েছে। এতদিন পরে এসে যখন বলা হয় পলিব্যাগের বিকল্প এখনো বাজারে নেই, তা কোনোভাবেই শতভাগ গ্রহণযোগ্য নয়। প্রকৃত কথা হলো, ২২ বছরেও আইনের প্রয়োগ না হওয়ায় প্লাস্টিকের বিকল্পও গড়ে ওঠেনি। স্বভাবতই আমরা প্লাস্টিকের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছি। আইনের যথাযথ প্রয়োগহলে বাস্তবতার নিরিখেই প্লাস্টিকের বিকল্প গড়ে উঠবে। তখন সবাই প্লাস্টিকের বিকল্প পণ্য ব্যবহার করার সুযোগ পাবে ও সেক্ষেত্রে নৈতিক বাধ্যবাধকতা পালনও সহজ হবে। একটু ভেবে দেখা দরকার, আজ আমরা যেসব প্লাস্টিকগুলো বর্জ্য হিসেবে প্রকৃতিতে ফেলে দিচ্ছি, তার কোনো কোনোটি হয়তো আগামী ৪০০ বছরেও ধ্বংস হবে না।

জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক কর্মসূচি (ইউএনইপি) তাদের বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক উৎপাদন ও ব্যবহার বিষয়ক ২০২৪ সালের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বাংলাদেশের পদ্মা, যমুনা ও মেঘনা নদী দিয়ে প্রতিদিন ৭৩ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য সাগরে মিশছে। এর ফলে সমুদ্রের তলদেশে যে হারে পলিথিন-প্লাস্টিকের স্তর বাড়ছে, তাতে আগামী ৫০ বছর পর সমুদ্রে মাছের চেয়ে পলিথিনের পরিমাণই হয়তো বেশি হবে। বাংলাদেশে প্লাস্টিক ও পলিথিনের ব্যবহার কী পরিমাণ বেড়েছে তার বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস), আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) এবং বিশ্বব্যাংক। তাদের দেয়া তথ্যানুযায়ী, ২০০৫ সালে দেশের শহরাঞ্চলে বছরে মাথাপিছু প্লাস্টিকের ব্যবহার ছিল মাত্র তিন কেজি, যেটি ২০২০ সালে বৃদ্ধি পেয়ে নয় কেজিতে উন্নীত হয়েছে।

বর্তমানে শুধু রাজধানীতেই একজন মানুষের বছরে প্লাস্টিকের ব্যবহার ছাড়িয়েছে ২৪ কেজি। পুরো বাংলাদেশের হিসেব বিবেচনায় নিলে প্রতিবছর প্রায় এক কোটি টন পলিথিন ও প্লাস্টিকের ব্যবহার হচ্ছে। যদি ও এ সব প্লাস্টিক-পলিথিনের মাত্র ৩৭শতাংশ রিসাইক্লিং করা সম্ভব হচ্ছে। পলিথিন এনভায়রনমেন্টাল পারফরম্যান্স ইনডেক্স (ইপিআই) সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৭তম। বৈশ্বিক প্লাস্টিক-পলিথিন দূষণের প্রায় আড়াই শতাংশ সৃষ্টি হচ্ছে বাংলাদেশেই। এ পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সচিবালয়ের মত গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক কেন্দ্রকে প্লাস্টিক-পলিথিন মুক্ত করার যে শুভ উদ্যোগের শুরু হয়েছে, তার গুরুত্ব অশেষ। উদ্যোগটির বাস্তবায়ন সফল হলে পুরো দেশকে পলিথিন মুক্ত করার পথে আমরা আর ও একধাপ এগিয়ে যাব। বাংলাদেশ মুক্ত হবে এক পরিবেশগত মহা-হুমকি থেকে। তাই, উদ্যোগটির সফলতার প্রত্যাশা এখন সবার।

লেখক: সিনিয়র উপপ্রধান তথ্য অফিসার, তথ্য অধিদফতর, ঢাকা




মেহেরপুরে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস পালন

আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস ২০২৫ উপলক্ষে মেহেরপুরে বর্ণাঢ্য র‍্যালি, আলোচনা ও মহড়ার আয়োজন করা হয়েছে।

সোমবার সকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ আবদুল ছালামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক তরিকুল ইসলাম, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. খায়রুল ইসলাম, মেহেরপুর সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডা. ইনজামুল হক, সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাইদুর রহমান, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক সাকরিয়া হায়দার, এবং ব্র্যাকের জেলা প্রতিনিধি মনিরুল হায়দার প্রমুখ।

আলোচনা সভার আগে দিবসটি উপলক্ষে একটি বর্ণাঢ্য র‍্যালি বের করা হয়। জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ আবদুল ছালামের নেতৃত্বে র‍্যালিটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বর প্রদক্ষিণ করে।

পরে, আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস উপলক্ষে মেহেরপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উদ্যোগে মহড়ার আয়োজন করা হয়।




ঝিনাইদহে তালাবদ্ধ দোকানঘর থেকে স্ত্রীর মৃতদেহ উদ্ধার, স্বামী পলাতক

ঝিনাইদহে স্বামীর তালাবদ্ধ দোকানঘর থেকে স্ত্রী তাসলিমা খাতুন (৩৮) নামে এক গৃহবধুর মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল রবিবার রাতে ঝিনাইদহ শহরতলীর গোপীনাথপুর এলাকার ওই কাঠের দোকানের ভিতর থেকে মৃতদেহটি উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনার পর থেকে তাসলিমা খাতুনের স্বামী লাল মিয়া পলাতক রয়েছে।

ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ঝিনাইদহ শহরতলীর গোপিনাথপুর গ্রামের কাঠমিস্ত্রী লাল মিয়া ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা মহাসড়কের পাশে একটি দোকান করে ফার্নিচার তৈরির কাজ করেন।

সকালে লালমিয়া দোকানে এলে বাড়ি থেকে তার স্ত্রী তাসলিমা খাতুনও দোকানে আসে। বিকেলে তার ছেলে বাড়িতে এসে বাবা-মা কাউকেই খুজে পায়না। অনেক খোঁজাখুজি পরে তাদের কাঠের দোকানে গেলে ঘরের ভিতর তার মা তাসলিমার মৃতদেহ দেখতে পায়। তখন সে পুলিশে খবর দেয়। পরে পুলিশ এসে তার মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। এটি হত্যাকান্ড বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে।




আলমডাঙ্গায় টাইফয়েড প্রতিরোধে টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন

আলমডাঙ্গায় টাইফয়েড প্রতিরোধে টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়েছে। টাইফয়েড প্রতিরোধ ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় আলমডাঙ্গায় শুরু হয়েছে টিকাদান কর্মসূচি। গতকাল রোববার সকাল ১০টায় আলমডাঙ্গা গার্লস স্কুল প্রাঙ্গণে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শারমিন আক্তার।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অশীষ কুমার বসু, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন, তদন্ত ওসি লিয়াকত আলীসহ স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মী ও শিক্ষার্থীরা।

উদ্বোধন শেষে ডা. শারমিন আক্তার বলেন, “টাইফয়েড একটি সংক্রামক রোগ, যা মূলত দূষিত খাবার ও পানির মাধ্যমে ছড়ায়। টিকা গ্রহণের মাধ্যমে শিশু ও কিশোরদের মধ্যে এই রোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যাবে। সরকারের এই মহতী উদ্যোগ সফল করতে সবাইকে সচেতন হতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “টিকা গ্রহণের জন্য অনলাইনে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক। তাই এ বিষয়ে অভিভাবকদের আরও সচেতন হতে হবে এবং সবাইকে অংশ নিতে উৎসাহিত করতে হবে।” সরকারের এই কর্মসূচির মাধ্যমে ধীরে ধীরে উপজেলার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ইউনিয়নে টাইফয়েড টিকা প্রদান কার্যক্রম সম্প্রসারিত করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

স্থানীয় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানান, সরকারের এমন স্বাস্থ্যসেবা উদ্যোগে তারা সন্তুষ্ট এবং আশা করছেন, এর ফলে এলাকাজুড়ে শিশু-কিশোরদের স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেকটাই কমে আসবে।




আলমডাঙ্গায় প্রাণীসম্পদ উন্নয়নমূলক সভা অনুষ্ঠিত

আলমডাঙ্গায় প্রানীসম্পদ উন্নয়নমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে ও পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে প্রাণীসম্পদ খাতের উন্নয়ন—এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আলমডাঙ্গায় উন্নয়নমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল রবিবার বিকেল ৪টার দিকে উপজেলা প্রাণীসম্পদ অফিস প্রাঙ্গণে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে আলমডাঙ্গা উপজেলা প্রাণীসম্পদ দপ্তর।

সভায় সভাপতিত্ব করেন, উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এস. এম. মাহমুদুল হক। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. শাহাবুদ্দিন বলেন, “চুয়াডাঙ্গা জেলার মধ্যে আলমডাঙ্গা উপজেলা সবচেয়ে বড়। এখানে খুলনা বিভাগের সবচেয়ে বড় পশুর হাট রয়েছে, আছে ভেটেরিনারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউটও। আলমডাঙ্গায় বিপুল সংখ্যক খামারি রয়েছেন, যাদের অংশগ্রহণে প্রাণীসম্পদ খাত দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা চাই পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে এই সম্ভাবনাকে আরও এগিয়ে নিতে।”

তিনি আরও জানান, প্রতি কোরবানির ঈদে শুধু আলমডাঙ্গা উপজেলা থেকেই চার থেকে পাঁচ হাজার গরু দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হয়। উপজেলা প্রাণীসম্পদ দপ্তর বর্তমানে ২৩টি সমিতির মাধ্যমে প্রান্তিক খামারিদের সেবা দিচ্ছে।

সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন, আলমডাঙ্গা পৌর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান ওল্টু, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোস্তাফিজুর রহমান, এনসিপি জেলা কমিটির সদস্য হাসানুজ্জামান, উপজেলা প্রাণীসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ডা. এ. এন. এম. মোস্তাকিম মুকুট।

এছাড়া প্রাণীসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তাদের উপস্থাপনায় বক্তব্য দেন, সিনিয়র সাংবাদিক হামিদুল ইসলাম, ইউনিয়ন ভেটেরিনারি সুপারভাইজার কামাল হোসেন এবং খামারি কোকিলা খাতুন।

বক্তারা বলেন, মাঠপর্যায়ে প্রাণীসম্পদ বিভাগের সেবার মান আরও বাড়াতে তথ্য-উপাত্তের সঠিক ব্যবহার ও কর্মকর্তা-খামারিদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে হবে। সভা শেষে উপস্থিত কর্মকর্তারা উপজেলা পর্যায়ে খামারিদের জন্য প্রশিক্ষণ, রোগ প্রতিরোধ কার্যক্রম জোরদার ও দপ্তরের সেবা আরও সহজলভ্য করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।




দামুড়হুদায় টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন 

দামুড়হুদায় টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচির শুভ উদ্বোধন করা হয়েছে। গতকাল রবিবার সকাল ১০ টার সময় দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আয়োজনে উপজেলার গোবিন্দহুদা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের হলরুমে এই টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়।

দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য ও প. প. কর্মকর্তা ডাঃ মশিউর রহমানের সভাপতিত্বে এসময় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে এইচ তাসফিকুর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবুহাসান, মাধ্যমিক একাডেমিক সুপার ভাইজার রাফিজুল ইসলাম, দামুড়হুদা প্রেসক্লাবের সভাপতি শামসুজোহা পলাশ, গোবিন্দহুদা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি ইকবাল হোসেন, স্যানিটারী ইন্সপেক্টর নিয়ামত আলী, স্বাস্থ্য পরিদর্শক মহবুল ইসলাম।

অনুষ্ঠানটির সার্বিক ব্যবস্থায় ছিলেন, এমটিআই ফারুক আহমেদ। উপজেলায় ৬৬ হাজার ৭ শত ৭০ জনকে টাইফয়েড টিকাদান করা হবে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। এর মধ্যে স্কুল পর্যায়ে ৪৪ হাজার ২ শত ৩ জন এবং কমিউনিটি পর্যায়ে ২২ হাজার ৫ শত ৬৭ জন।




চুয়াডাঙ্গায় স্পিরিট পানে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার শংকরচন্দ্র ইউনিয়নে গত দু’দিনে বিষাক্ত স্পিরিট পানে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় আরো তিনজন দিনমজুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। নিহতদের সবাই নিম্নআয়ের পেশাজীবী কেউ ভ্যানচালক, কেউ মিল শ্রমিক, আবার কেউ মাছ ব্যবসায়ী।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার রাতে ওই ইউনিয়নের ডিঙ্গেদহ বাজার এলাকায় কয়েকজন মিলে স্পিরিট পান করে। এরপর একে একে ছয়জন মারা যান। গতকাল রবিবার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজনের মৃত্যুর পর বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।

মৃত ব্যক্তিরা হলেন- চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার নফরকান্তি গ্রামের পূর্বপাড়ার ভ্যানচালক খেদের আলী (৪০), খেজুরা গ্রামের হাসপাতালপাড়ার মাছ ব্যবসায়ী মোহাম্মদ সেলিম (৪০), পিরোজখালি গ্রামের স্কুলপাড়ার ভ্যানচালক মোহাম্মদ লালটু ওরফে রিপু (৩০), শংকরচন্দ্র গ্রামের মাঝেরপাড়ার শ্রমিক মোহাম্মদ শহীদ (৪৫), ডিঙ্গেদহ গ্রামের টাওয়ারপাড়ার মিল শ্রমিক মোহাম্মদ সামির (৫৫) এবং ডিঙ্গেদহ এশিয়া বিস্কুট ফ্যাক্টরি পাড়ার শ্রমিক সরদার মোহাম্মদ লালটু (৫২)।

এ ছাড়া একই এলাকার দিনমজুর আলিম উদ্দিন বর্তমানে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানা গেছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে ওই বাজারে অবৈধভাবে দেশি মদ বিক্রি চলছে। প্রশাসনের নজরদারির অভাবেই এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেছেন তারা।

চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামাল আল নাসের বলেন, অ্যালকোহলিক পয়জনিংয়ে তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। পুলিশি তদন্ত চলছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আফরিনা ইসলাম বলেন, রবিবার ৫টার দিকে পরিবারের সদস্যরা লান্টু মিয়া নামের এক ব্যক্তিকে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন। তারা জানান, তিনি দুদিন আগে স্পিরিট পান করেছিলেন। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। সন্ধ্যা ৭টা ৩২ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।




গাংনীতে রড সিমেন্টের দোকানের বিপুল পরিমাণ সারের মজুদ রহস্য!

মেহেরপুরের গাংনীতে প্রায় দেড় কোটি টাকা মূল্যের এসওপি সার জব্দ নিয়ে শুরু হয়েছে ধুঁয়াশা। অবশেষে স্থানীয়দের জোর তৎপরতায় গাংনী উপজেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী ও পুলিশের উপস্থিতিতে ৩৩৬০ বস্তা সার প্রাথমিকভাবে জব্দ করে গাংনী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাহিদুল ইসলামের জিম্মায় রেখেছেন।

এ সময় গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনোয়ার হোসেন, উপজেলা কৃষি অফিসার ইমরান হোসেন, গাংনী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল গাফ্ফার উপস্থিত ছিলেন।

স্থানীয়রা জানান, গতরাতে কয়েকটি সারের ট্রাক ৩৩৬০ বস্তা সার মেহেরপুর-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক সড়কের গাংনী বসুন্ধরাপাড়া এলাকায় আর এ এন্টারপ্রাইজ (যার প্রোপাইটার গাংনী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাহিদুল ইসলাম এবং পরিচালনায় বাপ্পি ও আব্দুল হালিম) গোডাউনে আনলোড করা হয়। রহস্যজনকভাবে একই গোডাউন থেকে রবিবার সন্ধার দিকে আবারও ওই সার ট্রাকে লোড শুরু করে কয়েকজন। এতে স্থানীয়দের মধ্যে সন্দেহ সৃষ্টি হলে উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগসহ পুলিশসহ আইনশৃংখলাবাহিনীর সদস্যদের খবর দেন। এক পর্যায়ে মেহেরপুর জেলা প্রশাসককেও খবরটি দেন। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনোয়ার হোসেন, কৃষি অফিসার ইমরান হোসেন ঘটনাস্থলে পৌছান।

এক পর্যায়ে সারগুলো নিয়ে সৃষ্টি হয় ধু¤্রজাল। পরে গাংনী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাহিদুল ইসলামসহ শ্রমিক ইউনিয়নের কয়েকজন এসে জানান, এসওপি সারগুলো ঝিনাইদহ জেলার জন্য একটি তামাক কোম্পানী নিয়ে এসেছে। ওখানে সমস্যার কারনে এই গোডাউনে রাখা হয়েছে।

সারগুলো চিটাগাঙের নাফকো কোম্পানী থেকে ক্রয় করেছে একটি টোব্যাকো কোম্পানী। তবে, টোবাক্য কোম্পানীর কোনো লোক সারগুলোর কাছে আসেনি।

আর এ এন্টারপ্রাইজ একজন পরিচালক বাপ্পি জানান, আমাদের এটা রড সিমেন্টের দোকান। শ্রমিকলীগ নেতা মনিরুজ্জামান ফোন করে বলেছে সারগুলো নামবে পরে এসে কোম্পানীর লোকজন নিয়ে যাবে। তারা ভাড়া দেবে। আমার ঘর ফাঁকা ছিল। আমার ঘরে সার নামিয়েছি। আজকে তারা নিয়ে যাচ্ছে। তবে, গাড়ির চালকরা জানান, সার বোঝায় থাকলে ট্রাকের চাকা নষ্ট হয়ে যাবে এজন্য আমরা সারগুলো এখানে নামিয়ে রেখেছি। এব্যাপারে থানায় জিডি করতেও গেছি। কিন্তু থানার স্যার না থাকায় জিডি করা হয়নি।

শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা ও ট্রান্সপোর্টের এজেন্ট আক্তারুজ্জামান বলেন, এই মাল চুয়াডাঙ্গার জীবনগরে  আনলোড হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কি কারণে সেখানে সার আনলোড করা হয়নি। আমাদের ফোন করে বললো গাংনীতে মাল আনলোড করে নেন। আমরা এখনো জানিনা কি কারণে মালগুলো এখানে আনলোড করেছে।

এ ব্যাপারে গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার ইমরান হোসেন বলেন, এই সারটা বৃটিশ আমেরিকান কোম্পানী এখানে নিয়ে এসেছে। আমাদের গাংনী থানার ওসি জানানোর পর ঘটনাস্থলে এসে সারটা আপাতত জব্দ করে এবং তাদের চালানের কাগজপত্র নিয়েছি। আগামীকাল সারের প্রকৃত মালিকদের আসতে বলেছি। তাদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে পরবর্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনোয়ার হোসনে বলেন, বর্তমানে সার নিয়ে একটি সংকট সৃষ্টি হয়েছে। সারটি সংশ্লিষ্ট যারা কিনেছেন তাদের সাথে কৃষি অফিসারের কথা হয়েছে। তারা আসলে উপযুক্ত প্রতিনিধির মাধ্যমে বিষয়টি সূরাহা করা হবে।




মেহেরপুরে বিএনপি থেকে ৭০ নেতাকর্মীর জামায়াতে যোগদান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মেহেরপুর জেলা শাখার উদ্যোগে সদর উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ৭০ জন বিএনপি নেতাকর্মী জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করেন। গতকাল রবিবার এশার নামাজের পর গোপালপুর ৩ নম্বর ওয়ার্ডে এ যোগদান অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মেহেরপুর জেলা আমির ও মেহেরপুর-১ আসনের প্রার্থী তাজউদ্দিন খান। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, মেহেরপুর জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি ইকবাল হুসাইন, মেহেরপুর শ্রমিক ফেডারেশনের জেলা সভাপতি আব্দুর রউফ মুকুল, রাজনৈতিক সেক্রেটারি কাজি রুহুল আমিন, মেহেরপুর সদর উপজেলা আমির সোহেল রানা, মেহেরপুর পৌর শাখার আমির সোহেল রানা ডলার, উপজেলা সেক্রেটারি ও আমঝুপি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী জাব্বারুল ইসলাম মাস্টার, শ্যামপুর ইউনিয়ন আমির মফিদুল ইসলাম, সেক্রেটারি মকলেছুর রহমান, গোপালপুর ওয়ার্ড সভাপতি ইমাদুল হকসহ শ্যামপুর ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ। নতুন যোগদানকারীদের হাতে ফুল তুলে দিয়ে ও দোয়া-মোনাজাতের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে জামায়াতে ইসলামীতে স্বাগত জানানো হয়।

অনুষ্ঠানে মাওলানা তাজউদ্দিন খান বলেন, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের আন্দোলনে জামায়াত সবসময় জনগণের পাশে আছে। এই যোগদান আমাদের সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করবে।

স্থানীয় নেতৃবৃন্দ জানান, নির্বাচনের আগে বিএনপি নেতাকর্মীদের জামায়াতে যোগদান রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন সমীকরণ তৈরি করেছে।




মেহেরপুরে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার নির্দেশ বিএনপি মহাসচিবের 

মেহেরপুর-১ আসনে বিএনপির জয় নিশ্চিত করতে এবং দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনা মানতে দলের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় বিএনপির গুলশান কাযর্যালয়ে মেহেরপুর-১ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী তিন নেতাকে এ নির্দেশনা দিয়েছেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে জানা গেছে।

বিএনপির মহসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ডাকে দলীয় কার্যালয়ে আসন ভিত্তিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মেহেরপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাসুদ অরুন, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. কামরুল হাসান এবং শিক্ষক নেতা জাকির হোসেন।

উপস্থিত তিনজেনর মধ্যে অ্যাড. কামরুল হাসান ও জাকির হোসেন মেহেরপুর প্রতিদিনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তাঁরা দুজনই বলেন, দলীয় বিভেদ কোন্দল ভুলে গিয়ে ঐক্যদ্ধভাবে দলীয় সকল কর্মসূচী পালন করতে  মহাসচিব নির্দেশনা দিয়েছেন। মহাসচিব বলেছেন, কেউ কারো বিরুদ্ধে যেন বিষেদামূলক কোন কথা না বলেন । দল যাকে মনোনয়ন দেবে সকলেই যাতে তাঁর হয়ে নির্বাচনী মাঠে কাজ করতে পারে এবং দলীয় বিজয় নিশ্চিত করতে পারেন।

তবে, গতকাল রাতের এ বৈঠক শুরু হওয়ার আগে থেকে সোশ্যাল মিডিয়া মেহেরপুরের  বিএনপির নেতা-কর্মী সমর্থকরা বিভিন্ন জনের পক্ষ নিয়ে আলহামদুলিল্লাহসহ বিভিন্ন স্ট্যাটাসের ঝড় তোলে সরব করে রাখেন।