কোটচাঁদপুরে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করলেন ব্যারিস্টার কাজল

কোটচাঁদপুরে কর্মরত সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেছেন ঝিনাইদহ-৩ (কোটচাঁদপুর-মহেশপুর) আসনের বিএনপির মনোনয়নপ্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।

শনিবার সকাল ১১টায় কোটচাঁদপুর উপজেলার পৌর পাঠাগার মিলনায়তনে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলায় কর্মরত বিভিন্ন পত্রিকার সাংবাদিকদের সাথে এই সভায় অংশগ্রহণ করেন।

মতবিনিময় সভায় ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, “আমি আপনাদেরই সন্তান। ১৯৮৬ সালে মহেশপুর হাইস্কুল থেকে এসএসসি, ১৯৮৮ সালে যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে এইচএসসি এবং পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করি। আমি একজন কূটনীতিক। ২০০৩ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনে দ্বিতীয় সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি।

২০২০ সাল থেকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির পরপর তিনবার সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছি। বর্তমানে আমি বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছি। ফ্যাসিবাদী আমলে ডিবি অফিসে চারদিন রিমান্ডসহ কারাভোগ করেছি। আমি মহেশপুর উপজেলা ছাত্র দলের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম এবং ছাত্র দলের কেন্দ্রীয় কমিটির আইন বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।

বর্তমানে আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এবং বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। আমি যদি দলের মনোনয়ন পাই, তবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো। দলের বাইরে কোনো নির্বাচন করার মনোভাব নেই।

তিনি আরও বলেন, “যদি ধানের শীষ প্রতীক পেয়ে নির্বাচিত হই, তাহলে অবহেলিত ঝিনাইদহ-৩ আসনের কোটচাঁদপুর ও মহেশপুর উপজেলার জনগোষ্ঠীর মৌলিক চাহিদা পূরণে কাজ করবো। খাদ্য, বসবাস, শিক্ষা ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে উদ্যোগ নেব। কোনো দূর্নীতি, চাঁদাবাজ বা সন্ত্রাসীকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না।

আমার পিতা একজন পৌরসভার সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আমি আদর্শ পিতার সন্তান। আমার দুই কন্যা সন্তান রয়েছে, একজনের ব্যারিস্টারি পড়া শেষ পর্যায়ে। আমি দলের জন্য আইনগত সহায়তা প্রদান করেছি বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে। আমার সন্তানও পিতার আদর্শে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে দলের জন্য আইনগত সহায়তা প্রদান করবে, ইনশাআল্লাহ। এখানে অনেকেই দলের মনোনয়ন চাচ্ছেন। আমি যদি দলের মনোনয়ন না পাই, তাহলে যিনি পাবেন, তার পক্ষে কাজ করবো।”




মেহেরপুরে অ্যাড. কামরুল হাসানের উদ্যোগে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প

মেহেরপুর সদর উপজেলার বুড়িপোতা ইউনিয়নের হরিরামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুল হাসানের উদ্যোগে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও ওষুধ বিতরণের আয়োজন করা হয়।

গতকাল শনিবার সকাল ১০টায় সময় মেহেরপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুল হাসান এ ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প উদ্বোধন করেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুল হাসান বলেন, “তারেক রহমানের ৩১ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। জনগণের মৌলিক অধিকার ও সুচিকিৎসা নিশ্চিত করাই আমাদের উদ্দেশ্য। তারেক রহমানের নির্দেশেই আমরা সব কার্যক্রম পরিচালনা করছি।”

ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প অনুষ্ঠানে স্থানীয় প্রায় দুই হাজার মানুষ চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেন এবং বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় ওষুধ পান। নেতৃবৃন্দ জানান, জনগণের পাশে দাঁড়ানোই বিএনপির অন্যতম লক্ষ্য, তাই এ ধরনের মানবিক কার্যক্রম নিয়মিতভাবে অব্যাহত থাকবে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ইলিয়াস হোসেন, আলমগীর খান ছাতু, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রোমানা আহমেদ, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফয়েজ মোহাম্মদ, সাধারণ সম্পাদক সাহিদুল ইসলাম, জেলা জাসাসের সদস্য সচিব বাকা বিল্লাহ,

জেলা বিএনপির সাবেক সহ সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী মিজান মেনন, জেলা শহীদ জিয়া স্মৃতি সংসদের সভাপতি আলিফ আরাফাত খান, বুড়িপোতা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নাসির উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক ফরিদ উদ্দিন, নাহিদ হোসেনসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।




দর্শনার ঈশ্বরচন্দ্রপুরে বাড়ির বারান্দা থেকে মোটরসাইকেল চুরি

দর্শনা পৌরসভার ঈশ্বরচন্দ্রপুর বড় মসজিদপাড়া থেকে মোটরসাইকেল চুরির ঘটনা ঘটেছে। জানা গেছে, শনিবার (১৮ অক্টোবর) ভোরে বাড়ির বারান্দার গেটের তালা ভেঙে এ চুরির ঘটনা ঘটে।

ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, প্রতিদিনের মতো শুক্রবার রাত ৮টার দিকে ঈশ্বরচন্দ্রপুর গ্রামের নাসির উদ্দীনের ছেলে ইমরান জোয়াদ্দার তার ব্যবহৃত প্রায় ৪/৫ মাস আগে কেনা লাল-কালো রঙের এসপি হোন্ডা ১২৫ সিসি মোটরসাইকেলটি নিজ ঘরের বারান্দায় রাখেন।

রাত ২টার দিকেও তিনি মোটরসাইকেলটি বারান্দায় দেখতে পান। তবে ভোর ৫টার দিকে উঠে দেখেন, মোটরসাইকেলটি আর সেখানে নেই।

পরে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও মোটরসাইকেলটির কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। অবশেষে ইমরান জোয়াদ্দার দর্শনা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।




গাংনীতে শিক্ষক কর্মচারী ক্রেডিট ইউনিয়নের বার্ষিক সাধারণ সভা

“সমবায় শক্তি, সমবায় মুক্তি” এই স্লোগানকে সামনে রেখে গাংনীতে অনুষ্ঠিত হয়েছে গাংনী উপজেলা শিক্ষক কর্মচারী কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিমিটেডের ১৫তম বার্ষিক সাধারণ সভা ২০২৫। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গাংনী মহিলা ডিগ্রি কলেজে এ সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় সভাপতিত্ব করেন গাংনী উপজেলা শিক্ষক কর্মচারী কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিমিটেডের সভাপতি ও গাংনী মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ খোরশেদ আলী।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনের কোষাধ্যক্ষ ও গাংনী সরকারি ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক নাসিরুদ্দিন এবং পলাশিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আক্তারুজ্জামান বকুল।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কালবের (CALB) আঞ্চলিক পরিচালক অধ্যক্ষ শেখ সহিদুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কাজিপুর ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মোকাদ্দেছুর রহমান।

সম্মানিত অতিথিদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন গাংনী মহিলা ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, কালব এর পরিচালক ছানোয়ার হোসেন, করমদি ডিগ্রি কলেজের অধ্যাপক আবু সায়েম পল্টু, গাংনী মহিলা ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম, গাংনী মহিলা ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক হারুনুর রশিদ রবি, কালব-এর জেলা ম্যানেজার সুজয় কুমার বসু, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ও হিজলবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনিরুজ্জামান, সংগঠনের সহ-সভাপতি ও গাংনী পাইলট মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী প্রধান শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম, এবং জেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি হাফিজুর রহমান বকুল।

সভায় সংগঠনের বার্ষিক আর্থিক বিবরণী প্রকাশ করা হয়। দ্বিতীয় পর্বে লটারি আয়োজন করা হয় এবং সদস্যদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।




মেহেরপুরে তাতাসা হজ্ব ও ওমরাহ কাফেলার ট্রেনিং প্রোগ্রাম

মেহেরপুরে তাতাসা হজ্ব ও ওমরাহ কাফেলার আয়োজনে একটি ট্রেনিং প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে হজ ও ওমরার নিয়মকানুন, জরুরি অবস্থা মোকাবেলা, এবং আধ্যাত্মিক প্রস্তুতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।

আজ শনিবার সকাল ১০টায় তাতাসা হজ্ব ও ওমরাহ কাফেলার মেহেরপুর আঞ্চলিক অফিসে এ ট্রেনিং প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয়।

প্রশিক্ষণে হজ ও ওমরাহের ৭টি ধাপ ইহরাম বাঁধা, মিনা, আরাফাত ও মুজদালিফায় অবস্থান, তাওয়াফ, সায়ী, এবং পশু কোরবানি করার সঠিক পদ্ধতি বিষয়ে বিস্তারিত দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়। এছাড়াও, অংশগ্রহণকারীদের স্বাস্থ্য ও শারীরিক প্রস্তুতির গুরুত্ব সম্পর্কে অবহিত করা হয়।

ট্রেনিং প্রোগ্রামের সভাপতিত্ব করেন তাতাসা হজ্ব ও ওমরাহ কাফেলার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনিরুল ইসলাম। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আমঝুপি ফাজিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা মাহাবুব উল আলম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মেহেরপুর অগ্রণী ব্যাংক পিএসসি এর এজিএম রমজান আলী, তাতাসা হজ ও ওমরাহ কাফেলার উপদেষ্টা আবুল হাশেম, এবং পৌর আমির সোহেল রানা ডলার। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন ভেড়ামারা ল্যাব এইচ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সাংবাদিক শাহ জামাল।

প্রশিক্ষণে বক্তারা বলেন, হজ ও ওমরাহ মুসলমানদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। যথাযথ নিয়ম মেনে, শুদ্ধ নিয়তে এবং ইসলামী বিধান অনুসারে পালন করতে হবে এ ইবাদত। এজন্য আগেভাগে প্রশিক্ষণ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি, যাতে আরবি ভাষা, রীতিনীতি, কাফেলার শৃঙ্খলা ও হজের বিধান সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা অর্জন করা যায়।

বক্তারা আরও বলেন, তাতাসা হজ্ব ও ওমরাহ কাফেলা দীর্ঘদিন ধরে সুনামের সঙ্গে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের হজ ও ওমরাহ পালনে সহায়তা করে আসছে। প্রতিষ্ঠানটি সবসময় হজযাত্রীদের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে।




গাংনীর কাথুলী সীমান্তে নারী-শিশুসহ ১৪ বাংলাদেশিকে পুশব্যাক

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কাথুলী সীমান্ত দিয়ে নারী-পুরুষ ও শিশুসহ ১৪ জনকে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ।

শনিবার (১৮ অক্টোবর) সকালে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কাথুলী বিওপির সীমান্ত এলাকার আনুমানিক ১০০ গজ ভেতরে সীমানারেখার ১৩৩/৩ এস পিলারের অভ্যন্তর দিয়ে ১৪ জনকে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ।

বিজিবির প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, পুশ ইন হওয়া ব্যক্তিদের বাড়ি ঠাকুরগাঁও জেলায়। তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে দালালের মাধ্যমে ভারতে প্রবেশ করেছিল। আটক পূর্বে আসাম রাজ্যের তেইমপুর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার অনোজ কুমার তাদের পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে বাংলাদেশে হস্তান্তর করেন। এদের মধ্যে ৬ জন পুরুষ, ৪ জন নারী ও ৪ জন শিশু রয়েছে।

বিজিবির কাছে হস্তান্তরকৃত বাংলাদেশিরা হলেন ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী থানার জেলেল বস্তির গ্রামের মৃত আলাউদ্দিনের ছেলে হানিফুর রহমান (৩৮), তার স্ত্রী লুৎফা খাতুন (২৮), মেয়ে হাবিবা খাতুন (১২), আলিয়া খাতুন (১.৫), ছেলে হাবিবুল্লাহ (০৫); একই এলাকার খাদেমগঞ্জ গ্রামের মৃত কলিম উদ্দিনের ছেলে বাবুল (৫০), তার স্ত্রী আফরোজা খাতুন (৪৩), মেয়ে লাভলী খাতুন (২৫), শবনম খাতুন (১৯), ছেলে সাদ্দাম হোসেন (২৪); বেউরঝাকী গ্রামের আজগর আলীর ছেলে তারিকুল ইসলাম (২৮); রত্নাই গ্রামের ধুনিবুলা মোহাম্মদের ছেলে আজিজুল হক (৪৫) এবং লক্ষহাট গ্রামের আব্দুল লতিবের ছেলে হাতেম (৫২)।

হানিফুর রহমান জানান, তিন বছর আগে জীবিকার তাগিদে পানিপথ দিয়ে দালালের মাধ্যমে ভারতে গিয়েছিলাম। আসাম রাজ্যের হরিয়ানাতে পাপোস তৈরির কারখানায় কাজ করতাম। গত মাসের ২১ তারিখে ভারতের পুলিশ আমাদের আটক করে। এরপর পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে বিএসএফ আমাদের বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে।

গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বনি ইসরাইল জানান, আইনি প্রক্রিয়া শেষে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।




মুজিবনগরে গোপালনগর কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়নের বার্ষিক সভা

মেহেরপুরের মুজিবনগরে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান গোপালনগর কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিমিটেডের ২৯তম বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শনিবার সকাল ৯টায় গোপালনগর কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিমিটেডের অফিস প্রাঙ্গণে এ সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় গোপালনগর কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিমিটেডের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার পলাশ মণ্ডল।

প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মেহেরপুর জেলার ভারপ্রাপ্ত সমবায় কর্মকর্তা এনামুল হক।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুজিবনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান, মুজিবনগর উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মাহবুবুল হক এবং দি কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লীগ অব বাংলাদেশ (কাল্ব) এর চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলার ব্যবস্থাপক সুজয় কুমার বসু।

এছাড়াও সভায় উপস্থিত ছিলেন গোপালনগর কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিমিটেডের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ প্রতিষ্ঠানের ৫,৬০০ জন সদস্য ও সদস্যা।

গ্রামের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে সহযোগিতার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে স্বাবলম্বী করার প্রত্যয়ে গড়ে ওঠা এই ক্রেডিট ইউনিয়ন স্বচ্ছতার সঙ্গে বিভিন্ন স্কিমের আওতায় ৩,৭৭০ জন সদস্যকে সেবা প্রদান করে যাচ্ছে।




শাহজালাল বিমানবন্দরে ভয়াবহ আগুন, নিয়ন্ত্রণে ২৬ ইউনিট

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো এলাকায় ভয়াবহ আগুনের ঘটনা ঘটেছে। এই আগুন নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে ফায়ার সার্ভিসের ২৬টি ইউনিট।

শনিবার (১৮ অক্টোবর) দুপুর সোয়া ২টার দিকে আকস্মিকভাবে এ আগুনের সূত্রপাত ঘটে।

ঘটনার পরপরই বিমানবন্দরের ফায়ার সেকশন, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ফায়ার ইউনিট এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে সম্মিলিতভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার কার্যক্রম শুরু করে।

এ অবস্থায় বিমানবন্দরের সব ফ্লাইট অপারেশন বর্তমানে স্বাভাবিক রয়েছে উল্লেখ করে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সবাইকে নিরাপদ এবং সচেতন থাকার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে।

এদিকে ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার লিমা খানম জানান, আগুনের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের মোট ২৬টি ইউনিট ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। তবে সবকটি ইউনিট এখন পৌঁছায়নি, ৯টি ইউনিট কাজ শুরু করেছে।

প্রাথমিকভাবে অগ্নিকাণ্ডের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানাতে পারেননি ফায়ার সার্ভিসের এ কর্মকর্তা।

সূত্র: যুগান্তর।




লালনের অনুষ্ঠানে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় গাংনীর মোমিনুল নিহত

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার রাধাগোবিন্দপুর ধলা গ্রামের মোমিনুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি কুষ্টিয়ায় লালন শাহের অনুষ্ঠানে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় নিহত হয়েছেন।

গতকাল শুক্রবার দিবাগত মধ্যরাতে কুষ্টিয়ায় লালন শাহের মাজারের সন্নিকটে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত মোমিনুল ইসলাম রাধাগোবিন্দপুর ধলা গ্রামের লিয়াকত আলির ছেলে।

মোমিনুল ইসলামের স্ত্রী রূপা খাতুন জানান, গতকাল শুক্রবার বিকেলে গ্রামের বেশ কয়েকজন সঙ্গীকে নিয়ে লালনের তিরোধান অনুষ্ঠানে যায় মোমিনুল। অনেক ঘোরাঘুরি করে তারা ক্লান্ত হয়ে পড়লে ট্রেনলাইনের পাশে অবস্থান নেয়। এ সময় একটি ট্রেন চলে আসলে মোমিনুল ও তার বন্ধুরা দ্রুত সরে আসতে গিয়ে ট্রেনের সাথে ধাক্কা লেগে মোমিনুলের মাথায় আঘাত লাগে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় মোমিনুলের।

কুষ্টিয়া থানা পুলিশ মোমিনুলের মরদেহ উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। সেখান থেকে আইনগত প্রক্রিয়া শেষে স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয় এবং তা গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়।

মোমিনুলের মৃত্যুর খবর জানার পর থেকে পরিবারে চলছে শোকের মাতম।

মোমিনুলের মা মেমিনা খাতুন জানান, আমার ছেলে মোমিনুল কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে লালনের মাজারে অনুষ্ঠানে যাবার কথা বলে শুক্রবার বিকেল তিনটার দিকে বাড়ি থেকে বের হয়। মধ্যরাতে মোবাইলে জানতে পারি, আমার ছেলে ট্রেনের ধাক্কায় মারা গেছে।

মোমিনুল এক সন্তানের জনক। তার খালা নূরনিহার জানান, খুবই দারিদ্র্যের মধ্য দিয়ে সংসার চালাতো। তার একটি শিশু সন্তান রয়েছে।

মোমিনুলের মরদেহ বাড়িতে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে লাশ দেখতে ভিড় করেন শত শত মানুষ।




অ্যানথ্রাক্স সংক্রমণ থেকে বাঁচতে করণীয়

গ্রিক শব্দ অ্যানথ্রাক্স (Antharx) এর বাংলা তড়কা রোগ এবং আভিধানিক অর্থ কয়লা। এটি ব্যাসিলাস অ্যানথ্রাসিস বা ব্যাসিলাস সেরিয়াাস বায়োভার অ্যানথ্রাসিস ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট একটি সংক্রমণ। ১৮৭৫ সালে জার্মান বিজ্ঞানী রোবের্ট কচ প্রথম অ্যানথ্রাক্স এর অস্তিত্ব সম্পর্কে জানান দেন। তবে তারও পূর্বে ১৭৫২ সালে বিজ্ঞানী মারেট এবং ১৭৬৯ সালে বিজ্ঞানী ফোর্নিয়ার ত্বকের অ্যানথ্রাক্সের প্রথম ক্লিনিকাল বর্ণনা দিয়েছিলেন। এর পূর্বে এটি ছিলো কেবলই ঐতিহাসিক বিবরণ। এ বিরল রোগটি মানুষের ক্ষেত্রে আফ্রিকা এবং মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ায় সব চেয়ে বেশি দেখা যায়। এটি মহাদেশের অন্যান্য স্থানের তুলনায় দক্ষিণ ইউরোপে বেশি দেখা যায়। উত্তর ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকায় এ সংক্রমণ অস্বাভাবিক। বিশ্বব্যাপী বছরে কমপক্ষে দুই হাজার টি সংক্রমণের ঘটনা ঘটে। এ সংক্রমণ সাধারণত ত্বকের সংস্পর্শ, শ্বাস- প্রশ্বাস বা অন্ত্রের শোষণের মাধ্যমে ঘটে। এ রোগে সংক্রমিত হওয়াার একদিন থেকে দুই মাসেরও বেশি সময় পরে লক্ষণগুলি পরিলক্ষিত হয়। ত্বকে একটি ছোটো ফোস্কা দেখা যায় যার চারপাশে ফোলাভাব থাকে; যা প্রায়শই কালো কেন্দ্রবিন্দুসহ ব্যথাহীন আলসারে পরিণত হয়। জ্বর, বুকে ব্যথা এবং শ্বাসকষ্ট এর অন্যতম উপসর্গ। এছাড়াও, এ সংক্রমণে ডায়রিয়া (যার মধ্যে রক্ত থাকতে পারে), পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব এবং বমিও হতে পারে।

প্রাথমিকভাবে, অ্যানথ্রাক্স মূলত ব্যাকটেরিয়া জনিত গবাদি পশুর একটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ। এ রোগে আক্রান্ত পশু হঠাৎ করে মারা যায়। এরোগটি গরুর ডাকমিনা, ধাস ও ধড়াস নামেও পরিচিত। সাধারণত ক্ষুরাযুক্তপ্রাণী যেমন- গরু, ছাগল, ভেড়া ও মহিষে এ রোগ ব্যাপকভাবে দেখা যায়। গবাদিপশুতে এ রোগের মৃত্যুর হার শতভাগ। আক্রান্ত বা মৃতপশুর সংস্পর্শে আসা মানুষেরও অ্যানথ্রাক্স হওয়ার সম্ভাবনা সর্বোচ্চ। আতঙ্কের বিষয় হচ্ছে এ রোগের জীবাণু মাটিতে প্রতিকূল পরিবেশে সুপ্ত অবস্থায় ‘স্পোর’ নামক একপ্রকার প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থায় ৪০-৫০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে এবং অনুকূল পরিবেশে সক্রিয় হয়ে গবাদি পশুকে আক্রান্ত করতে পারে। তাই একবার কোথাও দেখা দিলে পরবর্তীতে বারবার সে এলাকায় এ রোগ দেখা দিতে পারে। নিম্ন জলাভূমি, নদীর পাড় ও উপকূলীয় অঞ্চলে এর প্রকট প্রাদূর্ভাব দেখা যায়। সে হিসেবে আমাদের দেশে সাধারণত সিরাজগঞ্জ,মেহেরপুর, পাবনা,রাজবাড়ি, রাজশাহী ও টাঙ্গাইল জেলায় এ রোগটির প্রাদুর্ভাব বেশি। তবে চলতি বছরে সংক্রমণ দেখা দেয় রংপুরের বিভিন্ন উপজেলায় এবং উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুও ঘটে। গণমাধ্যমের বদৌলতে জানা যায় ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর সময়ে এ সংক্রমণে ৪৩১ জন আক্রান্ত হয়।

গ্রীষ্মের শুরূ থেকে বর্ষাকাল (মার্চ-সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত, খরা মৌসুমের পরে হঠাৎ বৃষ্টিপাত হলে এবং বন্যার পরের সময়ই সাধারণত সংক্রমণের ঝুঁকিপূর্ণ সময়কাল। সংক্রমিত পশু-খাদ্য যেমন- ঘাস, কচুরিপানা ইত্যাদি;অ্যানথ্রাক্স রোগে আক্রান্ত মৃত পশুকে খোলা স্থানে ফেলে রাখলে শকুন, কুকুর, শেয়াল ইত্যাদি শবাহারী প্রাণি; কখনো কখনো মাছি এবং অ্যানথাক্স আক্রান্ত মৃত পশু পঁচে-গলে মাটিতে মিশে গেলে হাড় থেকেও পশুতে এ রোগ ছড়াতে পারে। আক্রান্ত বা মৃত পশুর শ্লেষ্মা, লালা, রক্ত, মাংস, হাড়, চামড়া, পশম বা নাড়ি-ভুঁড়ির সংস্পর্শ, আক্রান্ত পশুর মাংস খাওয়া, পশুর চামড়া এবং অন্যান্য উপজাত (হাড়, দাঁত, শিং ইত্যাদি) প্রক্রিয়াজাতকরণ কাজে যুক্ত থাকার মাধ্যমে সাধারণত মানুষে এটি ছড়ায়। মূলত অ্যনথ্রাক্স আক্রান্ত পশুর মাংস কাটার সময় মানুষের মধ্যে অ্যানথ্রাক্স ছড়ানোর সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। পশু জবাই করা , সেটির মাংশ কাটাকাটি করা এবং মাংস ধোয়া বা রান্নার সময় অনেকক্ষণ মাংস, রক্ত ও হান্ডির সংস্পর্কে থাকতে হয়। সে সময় আক্রান্ত পশুর রক্তের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে অ্যানথ্রাক্স। মাংস কাটাকাটির সময় মানুষের শরীরের চামড়ায় কোনো রকম ক্ষত থাকলে তার দেহে অ্যানথ্রাক্সের জীবানু প্রবেশ করার সম্ভাবনা বেশি থাকে। আমাদের দেশে পশুর অ্যানথ্রাক্স হলেও অনেক সময় তা জবাই করে মাংস কম দামে বিক্রি করে ফেলা হয়। ঐ মাংস কাটাকাটি করার সময় অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হওয়া সম্ভাবনা থাকে। তবে পশু থেকে মানুষের মধ্যে অ্যানথ্রাক্স সংক্রমণ হলেও মানুষ থেকে অন্য মানুষের মধ্যে অ্যানথ্রাক্স সংক্রমণ হয় না।

পশুতে অ্যানথ্রাক্সের লক্ষণগুলো হচ্ছে- আক্রান্ত পশু হঠাৎ করে মারা যাওয়া,নাক, মুখ ও পায়ুসহ শরীরের বিভিন্ন ছিদ্র দিয়ে রক্তক্ষরণ এবং বের হওয়া রক্ত জমাট না বাঁধা,প্রচন্ড জ্বর (প্রায় ৪০-৪২০ সে./১০৪-১০৭০ ফা:),শরীরের লোম খাড়া হয়ে যাওয়া, জাবর কাটা বন্ধ হয়ে যাওয়া, মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকা, মাংস পেশীর কম্পন, প্রাথমিকভাবে অস্তিরতা বা উত্তেজনা কাজ করলেও পরবর্তীতে নিস্তেজ হয়ে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট ও দাঁত কটকট করা, খিঁচুনি ও কাঁপুনি, সাধারণত ২-২৪ ঘন্টার ভেতর মারা যাওয়া এবং এক দিনের বেশি বেঁচে থাকলে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় (জিহ্বা, গলা, বুক, নাভি) পানি জমে যাওয়া। পশুর দেহে মৃত্যুর পরবর্তী লক্ষণগুলোর মধ্যে মৃত পশুর পেট অস্বাভাবিকভাবে ফুলে উঠে, নাক, মুখ, প্রসাব ও মলদ্বার দিয়ে আলকাতরার মত কালো রক্ত বের হওয়া, মৃতদেহ শক্ত না হওয়া এবং অতি তাড়াতাড়ি পচন শুরু হওয়া অন্যতম। আর মানুষে অ্যানথ্রাক্স রোগটি সাধারণত তিনটি রূপে দেখা যায়। যথা-ত্বকের অ্যানথ্রাক্স, পরিপাকতন্ত্রের অ্যানথ্রাক্স ও শ্বাসতন্ত্রেও অ্যানথ্রাক্স। এর মধ্যে ত্বকের অ্যানথ্রাক্সই বেশি দেখা যায়। সাধারণত আক্রান্ত পশুর সংস্পর্শে আসার ৩-১০ দিনের মধ্যে এ রোগের উপসর্গ দেখা দেয়। ত্বকের অ্যানথ্রাক্সের সাধারণ লক্ষণগুলো হচ্ছে-প্রথমে চামড়ায় লালচে দাগ হয়, আক্রান্ত স্থান চুলকায় ও ফুলে উঠে, পরবর্তীতে আক্রান্ত স্থানে ১.৫-২ ইঞ্চি আকারের ফোসকা উঠে, ফোসকার মাঝখানে পচনের মত কালচে দাগ হয়ে ব্যথাহীন ঘা এর সৃষ্টি হয়; তবে সাধারণত জ্বর থাকে না।

পশুর ক্ষেত্রে অ্যানথ্রাক্স রোগের চিকিৎসায় প্রাথমিক অবস্থায় দ্বিগুণ মাত্রার পেনিসিলিন জাতীয় এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করে উপকার পাওয়া যায়। অতিতীব্র সংক্রমণের ক্ষেত্রে সাধারণত চিকিৎসার সুযোগ থাকে না। মানুষ থেকে মানুষে অ্যানথ্রাক্স ছড়ায়না, কিন্তু মানুষের শরীর এবং পোশাক অ্যানথ্রাক্স জীবাণু বহন করতে পারে। শরীর থেকে জীবাণু দূর করার জন্য ব্যাকটেরিয়া নিরোধক সাবান দিয়ে গোসল এবং গোসলের পানি ব্লিচিং বা কোনও ব্যাকটেরিয়া নিরোধক দ্বারা শোধিত করা এবং জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত জিনিসপত্র ৩০ মিনিটের অধিক সময় ধরে ফুটাতে হবে। কোনো কোনো জায়াগা থেকে জীবাণু ধ্বংসে ক্লোরিন ব্লিচিং কার্যকরী নয়; বরং এক্ষেত্রে ফরমালডিহাইড ব্যবহার করা উচিত। আক্রান্ত বাক্তির কাপড় পুড়িয়ে ফেলা জীবাণু ধ্বংসের একটি কার্যকর পদ্ধতি। মানুষ আক্রান্ত হবার পর যত দ্রুত সম্ভব অ্যানথ্রাক্স জীবাণুনাশক দিতে হবে; যত দেরি হবে জীবনের ঝুঁকি তত বাড়বে। মানুষের জন্য অ্যানথ্রাক্স টিকা প্রথম ১৯৫৪ সালে বাজারে আসে। ত্বকের অ্যানথ্রাক্স সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য অসুখ। তবে সময়মত চিকিৎসা না করালে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। সকল সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে এ রোগের চিকিৎসা করার সুযোগ রয়েছে।

গবাদিপশুকে এ মারাত্মক সংক্রমণ হতে রক্ষা করতে হলে পশু-খাদ্য ভালো করে ধুয়ে খাওয়াতে হবে। রোগ নিয়ন্ত্রণে বর্ষার শুরুতেই সকল পশুকে নিয়মিত টিকা প্রদান করতে হবে। রোগ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে অসুস্থ পশু হতে আলাদা করা, নিকটস্থ প্রাণিসম্পদ অফিসে যোগাযোগ,চিকিৎসকের পরামর্শ মত ব্যবস্থা গ্রহণ, কোনো ক্রমেই অসুস্থ পশু জবাই ও কাটাকাটি না করার প্রতি অবশ্যই জোর দিতে হবে। অসুস্থ পশুর মাংস খাওয়া, বিতরণ ও ফ্রিজে সংরক্ষণ না করা,অসুস্থ পশুর সংস্পর্শে আসা সুস্থ পশুগুলোকে টিকা প্রদান অথবা ৪/৫ দিন কার্যকরী এন্টিবায়োটিক দ্বারা চিকিৎসা করে ১০/১২ দিন পর টিকা দেওয়া,আক্রান্ত এলাকাসহ পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের সকল সুস্থ গবাদি পশুকে তড়কা রোগের টিকা দেওয়া অত্যাবশ্যক।

চিকিৎসকের পরামর্শ মতে, কোনো পশু মারা গেলে কোনো অবস্থাতেই মৃত পশুকে যেখানে- সেখানে ফেলে কিংবা নদীতে ভাসিয়ে বা মুচিকে চামড়া ছাড়াতে দেয়া যাবে না। মৃত পশুকে মাটিতে কমপক্ষে ৬ ফুট গভীর গর্ত করে চুন ছিটিয়ে পুঁতে অথবা পুড়িয়ে ফেলতে হবে। মৃতদেহ সম্ভব হলে মৃত্যুবরণের জায়গাতেই সৎকার করা উচিত; তা না হলে মৃত পশুর দেহের সব স্বাভাবিক ছিদ্রপথ(মুখ, নাক, পায়ু ও যোনিদ্বার) তুলা, কাপড় বা অন্য কিছুদিয়ে বন্ধ করার পর সানান্তর করতে হবে। পাথর ও কাটাযুক্ত জিনিস ব্যবহার করে জায়গাটিঢেকে দিতে হবে যাতে শেয়াল বা কুকুর তা খুজে বের করতে না পারে। অসুস্থ পশুর সকল মলমূত্র, রক্ত ও বিছানাপত্র একইগর্তে ফেলতে হবে বা পুড়িয়ে দিতে হবে। আক্রান্ত স্থানে ব্লিচিং পাউডার বা অন্য কোন জীবাণুনাশক ঔষধ দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে এবং সঠিকভাবে মৃত পশুর দেহ পুঁতে ফেলার নির্দেশনার জন্যপ্রয়োজনে নিকটস্থ প্রাণিসম্পদ অফিসে যোগাযোগ করা উচিত।

অ্যানথ্রাক্স রোগের সংক্রমণ রোধে প্রথমেই পশুতে সংক্রমণ রোধ করতে হবে। কারণ পশু থেকেই বিভিন্নভাবে এ সংক্রমণকারী ব্যাকটেরিয়া মানুষে ছড়ায়। গবাদি পশু খামারিদের জন্য চলমান বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে এ সংক্রান্ত সেশনের ব্যবস্থা রাখা, প্রয়োজনে বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা অত্যাবশ্যক। অসুস্থ পশু জবাই এবং জবাইকৃত গরুর মাংস যাতে কোনোভাবেই বাজারজাত করতে না পারে সে জন্য সারাদেশে কসাইখানায় নির্দেশিত চলমান পরিদর্শন কার্যক্রম বেগমান এবং আইনের প্রয়োগের বিকল্প নেই। এ সংক্রমণের ভয়াবহতা অনুসারে সর্বস্তরের অংশীজনদের সমন্বিত প্রস্তুতি বরাবরই অপ্রতুল। সর্বোপরি এ মহামারি আকার ধারণ করার পূর্বেই এ মারাত্মক সংক্রমণ ও মৃত্যু ফাঁদ হতে রক্ষা পেতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, গবাদিপশু খামারি, কসাই, ভোক্তাদের সমন্বয়ে জনসচেতনতা গড়ে তোলা উচিত।

লেখক: তথ্য অফিসার, জেলা তথ্য অফিস খাগড়াছড়ি