চুয়াডাঙ্গায় যুব সবুজ উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত 

চুয়াডাঙ্গা ও জীবননগরে যুব সবুজ উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ১৯ থেকে ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গার ওয়েভ ট্রেনিং সেন্টার ও জীবননগর  টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারে এই প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করা হয়।

ওয়েভ ফাউন্ডেশনের বাস্তবায়নে ব্রিটিশ কাউন্সিলের সহযোগিতায় Youth Green Entrepreneurship Development Project চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ সদর এবং মেহেরপুর সদর উপজেলায় বাস্তবায়ন হচ্ছে এই প্রশিক্ষণটি। প্রশিক্ষণের মূল লক্ষ্য হলো ৫১০ জন যুবদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সবুজ উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলা। যাতে তারা পরিবেশবান্ধব ব্যবসায়িক উদ্যোগ গ্রহণ করে। সেই সাথে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও টেকসই উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে

জানা গেছে, ওয়েভ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে প্রশিক্ষণে সদর উপজেলার ৩০ জন যুব ২২ জন নারী ও ৮ জন পুরুষ এবং জীবননগর উপজেলায় ৩০ জন যুব ১৩ জন নারী এবং ১৭ পুরুষ  কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, যুব উদ্যোক্তা অংশগ্রহণ করেন এই প্রশিক্ষণে।

প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষনার্থীরা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও টেকসই উন্নয়নের জন্য সবুজ উদ্যোক্তা উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, প্রাণ ও প্রকৃতিকে সুরক্ষিত রেখে পরিবেশ বান্ধব উদ্যোগ বাস্তবায়ন করার কৌশল, এর গুরত্ব সম্পর্কে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ পেয়েছে এতে অংশগ্রহণকারীরা প্রত্যাশা করেন যে এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে এবং উদ্যোগ বাস্তবায়নে অবশ্যই সবুজ বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তন এর প্রভাবকে বিবেচনা, টেকসহিতা, নিরাপদ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।




মুজিবনগরে বিএনপির লিফলেট বিতরণ, মিছিল ও গণসংযোগ

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ৩১ দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে লিফলেট বিতরণ, গণসংযোগ ও মিছিল করেছে মেহেরপুর জেলা বিএনপি।

বৃহস্পতিবার বিকেলে মুজিবনগর হাসপাতাল বাজারের সামনে থেকে কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য মাসুদ অরুনের নেতৃত্বে একটি মিছিল বের হয়। মিছিলটি মুজিবনগর বাজারের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে কেদারগঞ্জ বাজারে গিয়ে শেষ হয়।

এ সময় গণসংযোগের পাশাপাশি সর্বসাধারণের মাঝে লিফলেট বিতরণ করা হয়। লিফলেট বিতরণ, মিছিল ও গণসংযোগে মুজিবনগর উপজেলা বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।

সাবেক সংসদ সদস্য মাসুদ অরুন বলেন, মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিএনপি দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে লড়াই-সংগ্রাম করে আসছে। আমাদের নেতাকর্মীরা নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়েছে। এখন এমন একটি নির্বাচন দিতে হবে, যেখানে প্রশাসন দলীয়করণমুক্ত থাকবে এবং কোনোভাবেই নির্বাচন প্রভাবিত হবে না।




মেহেরপুরের আমঝুপিতে মাইক্রোস্ট্যান্ডের উদ্বোধন

মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি ইউনিয়নে নবনির্মিত মাইক্রোস্ট্যান্ডের উদ্বোধন করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকালে এক আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্ট্যান্ডটির উদ্বোধন করেন মেহেরপুর জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আহসান হাবীব সোনা।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মেহেরপুর সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও আমঝুপি ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমান, গাংনী উপশাখার সভাপতি মনি, জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সাধারণ সম্পাদক এরশাদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সবুজ, কল্যাণ সম্পাদক রেজাউল, প্রচার সম্পাদক সেন্টু, শ্রমিক নেতা রাসেল, শরিফুল, কামাল, পলাশ, রনি প্রমুখ।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, আমঝুপি এলাকায় মাইক্রোস্ট্যান্ড চালুর ফলে যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধি পাবে এবং স্থানীয় পরিবহন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হবে। তারা আশা প্রকাশ করেন, এ উদ্যোগ স্থানীয় চালক ও শ্রমিকদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

অনুষ্ঠান শেষে অতিথিবৃন্দ ফিতা কেটে মাইক্রোস্ট্যান্ডের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।




মেহেরপুরের বারাদী মাদিনাতুল উলুম কওমিয়া মাদ্রাসায় সুধী সমাবেশ

মেহেরপুর সদর উপজেলার বারাদী মাদিনাতুল উলুম কওমিয়া মাদ্রাসায় এলাকার গণ্যমান্য ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে বারাদী মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে এ সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে মাদ্রাসায় আগামী ২৮ অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য ৪৩তম ওয়াজ মাহফিল ও সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করা হয়।

মাদ্রাসা কমিটির সহ-সভাপতি হাজী আক্কাস আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মাওলানা আমির হোসেন, মুফতি জুনায়েদ আল হাবিবি ও সিরাজুস সালেকীন।

মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা শফিকুল ইসলাম বলেন, এই প্রতিষ্ঠান আপনাদের, আপনাদের সহযোগিতায় আজ এই প্রতিষ্ঠান এ পর্যন্ত এসেছে। আমি এই প্রতিষ্ঠানের একজন খাদেম মাত্র, এর বেশি পরিচয় দিতে চাই না, নিতেও চাই না।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে এই মাদ্রাসায় ৪৫০ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছে। এখানে জামাত বিভাগ, হেফজ বিভাগ, নূরানি বিভাগ এবং নূরানি কিন্ডারগার্টেনের তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান চলছে। আমরা আগামী বছরের শুরুতে নূরানি কিন্ডারগার্টেনের চতুর্থ শ্রেণির কার্যক্রম শুরু করব। নতুন বিভাগ চালু করতে হলে আমাদের একটি নতুন ভবন প্রয়োজন। এজন্য আপনাদের সহযোগিতার হাত আরও প্রসারিত করার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।

সুধী সমাবেশে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে মাদ্রাসার পরিবেশ মুখরিত হয়ে ওঠে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন মেহেরপুর বীজ উৎপাদন খামারের উপ-পরিচালক মিনহাজ উদ্দীন আহমেদ চৌধুরী, ইউপি সদস্য কামরুজ্জামান মুকুল, বারাদী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আফারুল ইসলাম ডাবলু, মোমিনপুর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাব্বারুল ইসলাম, মোমিনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম প্রমুখ।




গাংনীর রায়পুর ইউনিয়ন পরিষদে ভাঙচুর ও লুটপাট, প্যানেল চেয়ারম্যান লাঞ্ছিত

মেহেরপুরের গাংনীর রায়পুর ইউপি কমপ্লেক্সে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) দুপুরে মহিলা ইউপি সদস্য নারগিছ আক্তারের নেতৃত্বে একদল দুর্বৃত্ত ভাঙচুর চালিয়ে ৩৬ বস্তা চাল লুট করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন প্যানেল চেয়ারম্যান সারগিদুল ইসলাম।

পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে দুটি বোমাসদৃশ বস্তু উদ্ধার করেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এ ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে তাৎক্ষণিক মানববন্ধন করেছেন প্যানেল চেয়ারম্যান সারগিদুল ইসলামের অনুসারীরা।

প্যানেল চেয়ারম্যান সারগিদুল ইসলাম জানান, তিনি ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সের গুদামে চাল রেখে ভিডব্লিউডির চাল বিতরণ করছিলেন। এসময় মহিলা সদস্য নারগিছ তার স্বামীসহ দুর্বৃত্তদের নিয়ে ইউপি কমপ্লেক্সে এসে হঠাৎ হামলা চালান। তারা আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে আসবাবপত্র ভাঙচুর করেন এবং ৩৬ বস্তা চাল লুট করেন। এছাড়াও জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন খাতা নিয়ে যান। এসময় তাদের হাতে লাঞ্ছিত হন তিনি।

সারগিদুল ইসলাম আরও বলেন, আমার ইউনিয়নের গোপালনগরে বালু উত্তোলন হচ্ছিল। ইউএনও সাহেবের নির্দেশে আমি সেখানে গিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধ করতে বলি। এজন্যই এই সন্ত্রাসীরা আমার ওপর চড়াও হয়ে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ করেছে।

সংবাদ পেয়ে প্যানেল চেয়ারম্যানের পক্ষের লোকজন উপস্থিত হয়ে মহিলা সদস্যের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেন। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন প্যানেল চেয়ারম্যান সারগিদুল ইসলাম, বাথানপাড়া গ্রামের রকিবুল ও হাড়িয়াদহ গ্রামের সাহাবুল। বক্তারা জানান, নারগিছ সদস্য ও তার লোকজন অনৈতিক সুবিধা নেওয়া এবং ইউপির ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করছেন। তিনি তার লোকজনসহ আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে চাল লুট ও ভাঙচুর করেছেন। এর সুষ্ঠু বিচার না হলে পরবর্তীতে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলেও জানান বক্তারা।

এদিকে ঘটনাটি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন মহিলা ইউপি সদস্য নারগিছ আক্তার। তিনি জানান, তার ওয়ার্ডের কয়েকজনের চালের কার্ড থাকা সত্ত্বেও তাদের চাল দেওয়া হয়নি। এ বিষয়টি জানতে সেখানে যান তারা। এসময় সারগিদুল ও তার লোকজন তাদের ওপর হামলার প্রস্তুতি নেয়। প্রাণ বাঁচাতে ইউপি কমপ্লেক্স থেকে পালিয়ে আসেন তারা।

গাংনী থানার ওসি বাণী ইসরাইল জানান, ইউপি কমপ্লেক্সে ভাঙচুরের সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে তদন্ত করা হয়েছে। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে বোমাসদৃশ বস্তু উদ্ধারের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।

গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, ঘটনাটি দুঃখজনক। আমি বিস্তারিত শুনেছি। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্যানেল চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে।




দামুড়হুদায় হাউলী ইউনিয়নে মহিলা দলের কর্মীসভা

দামুড়হুদা উপজেলার হাউলী ইউনিয়নে ৩নং ওয়ার্ড জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের কর্মীসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ৪টার সময় জয়রামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে হাউলী ইউনিয়ন বিএনপির উদ্যোগে ৩নং ওয়ার্ড মহিলা দলের এই কর্মীসভা অনুষ্ঠিত হয়।

জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের নেত্রী ও হাউলী ইউপি সদস্য রওশনারা রাণী’রসভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন দামুড়হুদা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল হাসান তনু।

অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন হাউলী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ইউসুফ আলী। মহিলা দলের কর্মী সভায় প্রধান অতিথি রফিকুল হাসান তনু বলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সভাপতি ও বিজিএমইএ’র সভাপতি মাহমুদ হাসান খাঁন বাবু আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গা-২ আসন থেকে বিএনপির হয়ে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ভোটযুদ্ধে অংশগ্রহণ করবেন। আমাদের সবাইকে এখনই সংগঠিত হতে হবে এবং বাবু ভাইয়ের পাশে থেকে ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করতে হবে। এই সংগ্রাম শুধু একজন প্রার্থীর নয়, এটি গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকারের লড়াই।

অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ইউসুফ আলী বলেন, আজকের এই কর্মীসভা আমাদের দলকে নতুন করে ঐক্যবদ্ধ ও সংগঠিত হওয়ার বার্তা দিচ্ছে। সামনে জাতীয় নির্বাচন—এই নির্বাচন হবে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াই। আমরা নেতা-কর্মীরা যদি একসাথে কাজ করি, তাহলে অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে জনগণের জয় নিশ্চিত হবে। নারী কর্মীরাই মাঠে থেকে বিএনপির শক্তি হিসেবে কাজ করছে, তাই প্রত্যেক মহিলাকর্মীকেই এখন আরও সাহসী ভূমিকা নিতে হবে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ, যুগ্ম সম্পাদক মন্টু মিয়া, উপজেলা বিএনপির অন্যতম নেতা রোকনুজ্জামান তোতাম, শামসুল হক, হাউলী ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাফিজ আক্তার সিদ্দিকী।

সভায় বক্তারা আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে মহিলা দলের অগ্রণী ভূমিকার কথা তুলে ধরেন। এসময় কর্মীসভায় আরও উপস্থিত ছিলেন হাউলী ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি মহিউদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক মালেক রুস্তম, ৩নং ওয়ার্ড বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবু হাসান, সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সম্পাদক হাফিজুর রহমান, দামুড়হুদা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক রকিবুল হাসান তোতা। উপস্থিত ছিলেন উপজেলা মহিলা দলের সদস্য সালেহা বেগম, মহিলা নেত্রী রাবেয়া বেগম, বিথী সিদ্দিকী সহ ওয়ার্ড বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।

শেষে উপস্থিত নেতা-কর্মীদের অংশগ্রহণে দলের শক্তিশালী সংগঠন গড়ে তোলার অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে কর্মীসভা সমাপ্ত হয়। অনুষ্ঠানটির সার্বিক সঞ্চালনা করেন হাউলী ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক কামরুজ্জামান।




দামুড়হুদায় অটোমেটেড ভূমি সেবা সংক্রান্ত ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন

দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা ও পারকেষ্টপুর-মদনা ইউনিয়নে পৃথকভাবে অটোমেটেড ভূমি সেবা সিস্টেমে তথ্য সন্নিবেশ ও সংশোধন সংক্রান্ত দুই দিনব্যাপী ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কে. এইচ. তাসফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে কার্পাসডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এবং দুপুর ১২টার দিকে ছয়ঘরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন করেন তিনি।
উদ্বোধন শেষে সরাসরি এসিল্যান্ডের কাছ থেকে হাতে-কলমে পরামর্শ ও সেবা পেয়ে খুশি হন একাধিক জমির মালিকসহ সেবা গ্রহীতারা।
জমি সংক্রান্ত বিষয়ে জনগণের ভোগান্তির কথা উল্লেখ করে সহকারী কমিশনার (ভূমি) বলেন, ভূমি সংক্রান্ত দুর্নীতি দূরীকরণে ভূমি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকলেই আন্তরিকতার সঙ্গে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের দেশের অধিকাংশ বিরোধের মূল কারণই ভূমিকে কেন্দ্র করে। ভূমি ব্যবস্থাপনাকে ডিজিটালাইজ করার মাধ্যমে এই সমস্যাগুলো হ্রাস করা সম্ভব হবে। অটোমেটেড ভূমি সেবা সিস্টেম শতভাগ চালু হলে জমির মালিকরা সহজেই ভূমি সেবা পাবেন।
তিনি আরও বলেন, ভূমি সেবার আধুনিকায়ন, জমির মালিকদের তথ্যের সঠিক সংরক্ষণ এবং ডিজিটাল পদ্ধতিতে দ্রুত সেবা প্রদানের লক্ষ্যে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ ভূমি ব্যবস্থাপনা অটোমেশন প্রকল্প ও দামুড়হুদা উপজেলা ভূমি কার্যালয়, ইউএনডিপি বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে কার্পাসডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও পারকেষ্টপুর-মদনা ইউনিয়নের ছয়ঘরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ২৩ ও ২৪ অক্টোবর এই দুই দিনব্যাপী ক্যাম্পেইনের আয়োজন করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল করিম বিশ্বাস, কার্পাসডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা জেসমিন আক্তার, কার্পাসডাঙ্গা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মনিরুজ্জামান, কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আব্দুর রশিদ, দর্শনা ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা সাদ আহমেদ, দামুড়হুদা সহকারী ভূমি কার্যালয়ের প্রধান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক সোহেল রানা, সার্ভেয়ার সুজন মোল্লা, প্রকল্প সমন্বয়ক জামাল উদ্দিন, ইউএনডিপি প্রতিনিধি, ইউপি সদস্য, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গসহ শতাধিক সেবা গ্রহীতা ও সাংবাদিকবৃন্দ।
ক্যাম্পেইনে কর্মকর্তারা জানান, এই উদ্যোগের মাধ্যমে উপজেলার ভূমি মালিকরা বিনামূল্যে অনলাইন রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে পারবেন, নিজ নামে প্রোফাইল তৈরি করতে পারবেন এবং জাতীয় পরিচয়পত্র ও নিজস্ব মোবাইল নম্বর সংযুক্ত করতে পারবেন।
সেবা গ্রহণের জন্য ভূমি মালিকদের অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্র, নিজ ব্যবহৃত সচল মোবাইল নম্বর ও নামজারি পর্চা সঙ্গে আনতে হবে।
উপজেলার বাকি ইউনিয়নগুলোতে পরবর্তী সময়ে ক্যাম্পেইনের তারিখ জানিয়ে দেওয়া হবে বলেও কর্মকর্তারা জানান।
সেবা গ্রহীতারা জানান, এখানে এসে সরাসরি ভূমি কর্মকর্তার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ পেয়ে তারা আনন্দিত। অনেক জমির মালিক এই উদ্যোগ থেকে উপকৃত হবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তারা।
উপস্থিত অতিথিবৃন্দ বলেন, এ ধরনের উদ্যোগ ভূমি সেবা ব্যবস্থাপনার স্বচ্ছতা, দক্ষতা ও জনসেবার মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।




মুজিবনগরে ৩৬ জুলাই স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধন

মুজিবনগরে ৩৬ জুলাই স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্টের শুভ উদ্বোধন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে জুলাই যুব উন্নয়ন ক্লাব আয়োজিত টুর্নামেন্টের উদ্বোধন করা হয় মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স মাঠে।

উদ্বোধন করেন মুজিবনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু শ্যামা ও মুজিবনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মিজানুর রহমান।উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা রকিব উদ্দিনের সভাপতিত্বে শান্তির প্রতীক কবুতর উড়িয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে টুর্নামেন্টের উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়।

নকআউট ভিত্তিক এই টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করেছে ১৬টি দল। উদ্বোধনী খেলায় মুখোমুখি হয় বলিয়ারপুর স্পোর্টিং ক্লাব ও নাজিরাকোনা নবীন ক্লাব। খেলাটি পরিচালনা করেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) অনুমোদিত রেফারিরা।

টুর্নামেন্টে বিজয়ীদের জন্য পুরস্কার হিসেবে রয়েছে, ১ম পুরস্কার: ৩ মন ওজনের একটি ষাঁড় গরু, ২য় পুরস্কার: ২.৫ মন ওজনের একটি ষাঁড় গরু এবং ৩য় পুরস্কার: একটি খাসি ছাগল।

হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর উদ্বোধনী ম্যাচে বলিয়ারপুর স্পোর্টিং ক্লাব ১-০ গোলে নাজিরাকোনা নবীন ক্লাবকে পরাজিত করে বিজয় অর্জন করে।




ঝিনাইদহে নারীদের নিরাপত্তার দাবিতে মানববন্ধন

ঢাকা স্ট্রিম এর মিডিয়া কর্মী স্বর্ণময়ীর আত্মহত্যা প্ররোচনায় দায়ীদের শাস্তি ও কর্মস্থলে নারীদের নিরাপত্তার দাবিতে ঝিনাইদহে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) সকালে ঝিনাইদহ পোস্ট অফিস মোড়ে বিক্ষুব্ধ সামাজিক ও সংস্কৃতি কর্মীদের উদ্যোগে এ মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

প্রফেসর সুষেন্দু কুমার ভৌমিকের সভাপতিত্বে মানববন্ধন কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি কর্মী শাহিনুর আলম লিটন, উপাধ্যক্ষ(অব:) আব্দুস সালাম, এ্যাড. আসাদুজ্জামান, সমাজকর্মী গাউস গোর্কি, বিএম আনোয়ার, রওশন আরা লিনা, শামীম আহমেদ, রেল আব্দুল্লাহসহ মানবাধিকার কর্মী, নারী নেত্রী, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ প্রমুখ।

উল্লেখ্য যে,গত ১৮ আক্টোবর ঢাকা স্ট্রিম অনলাইন মিডিয়া হাউজের নারী কর্মী ঝিনাইদহের মেয়ে স্বর্ণময়ী বিশ্বাস একই প্রতিষ্ঠানের বাংলা বিভাগের প্রধান আলতাফ শাহনেওয়াজ নয়ন ওরফে নির্লিপ্ত নয়ন এর যৌণ নিপিড়নের শিকার হয়ে শেরেবাংলা নগর নিজ বাসায় আত্মহত্যা করে। এ আত্মহত্যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠে। এই নয়নও ঝিনাইদহ শহরের হামদহ এলাকার লিয়াকত হোসেন ছেলে। মানববন্ধনে বক্তারা এই আত্মহত্যার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক হত্যার প্ররোচনাকারীদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান এবং কর্মস্থলে নারী সহকর্মীদের প্রতি পুরুষ সহকর্মীদের দুর ব্যবহার ও যৌনাকাঙ্খার প্রতি তীব্র নিন্দা জানান এবং নারী কর্মীদের কর্মস্থলে নিরাপত্তার দাবি জানান।




ভালো মেয়ে; সমাজের তৈরি মুখোশ নাকি নারীর পরিচয় হারানোর গল্প?

ছোটবেলা থেকেই মেয়েদের শেখানো হয় “ওখানে যাবে না, ওটা সেইফ না”, “ওটা করবে না, সেইফ না”। “চুপ করে থাকো, তবেই সবাই তোমায় ভালো বলবে।” “বেশি কথা বলো না, বেশি হাসো না, বেশি মিশো না।” তুমি মেয়ে এখানে চলবে না, তুমি মেয়ে ওভাবে বলবেনা,মাথা নামিয়ে, চলো, নিচু স্বরে কথা বলো, তা না হলে লোকে খারাপ বলবে। প্রথমে মা, চাচী, দাদী বলে পরে পাড়া পড়শী মহিলারা।

যেন একটা শব্দহীন শিকল নারীর পায়ে বেড়ি দিয়েছে। যেন শব্দহীন লোহার বেড়ি নারীর গলাটাকে আটকে ধরেছে। ভালো মেয়ে হতে যেয়ে “না” শব্দের দৃশ্যহীন মালা গলায় পরে নিতে হয়েছে। এই “না” শব্দটার মাঝে অসহায়ত্বকে ফুটিয়ে তুলে বার বার স্মরণ করিয়ে দেয় তোমাকে ভালো মেয়ে হতে হবে। ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকেই নারীর পায়ে ভালো মেয়ের শব্দহীন শিকল বেঁধে রেখেছে। আসলে আমরা নারীরা ছোটবেলা থেকেই নিজেদের কন্ডিশন করে ফেলি, কোনটা ভালো, কোনটা মন্দ, কোনটা সেইফ, বা কোনটা সেইফ না। কন্যা শিশু জন্মানোর সঙ্গে সঙ্গেই এই কন্ডিশনিংটা ভূতের মতো বাবা-মা-পরিবারের সবার ঘাড়ের ওপরেই চেপে বসে।

সমাজে “ভালো মেয়ে” বলতেই আমরা এক ধরনের নির্দিষ্ট ছাঁচে গড়া নারীর চিত্র কল্পনা করি — যে ভদ্র, শান্ত, পর্দানশীল, সংসারী, বাধ্য, পুরুষের কথা নিঃশর্তে মেনে চলে। ছোটবেলা থেকেই মেয়েদের শেখানো হয় — “এভাবে বসো না”, “জোরে কথা বলো না”, “রাতে বাইরে যেও না”, “ছেলেদের সঙ্গে বেশি মিশো না”, “ভালো মেয়ে এমন হয় না। ”ভালো মেয়ে সে–ই, যে চুপচাপ থাকে, প্রতিবাদ করে না, সবার কথা মেনে চলে, নিজের চাওয়া-পাওয়ার কথা প্রকাশ করে না। সমাজের চোখে যে মেয়ে বিনয়ী, বাধ্য, নিরব, আজ্ঞাবহ — তাকেই ভালো বলা হয়। কিন্তু এই ধারণা মেয়েদের নিজের চিন্তা, মতামত ও স্বপ্নকে চাপা দেয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো — এই “ভালো মেয়ে” ধারণা কি সত্যিই নারীর গুণ, নাকি সমাজের এক অদৃশ্য শিকল?

এই “ভালো মেয়ে” হওয়ার শিক্ষা ছোটবেলা থেকেই মেয়েদের মনে গেঁথে দেওয়া হয়। ফলে মেয়েরা বড় হয় এক ধরনের অন্তর্নিহিত ভয়, বাধ্যতা আর অপরাধবোধ নিয়ে। অর্থাৎ, সমাজ মেয়েদের ভদ্রতা শেখায়, কিন্তু আত্মবিশ্বাস শেখায় না। ফলে তারা বড় হয়ে ভাবে, নিজের ইচ্ছা প্রকাশ করা মানেই অন্যায় করা। একজন ছেলেকে যখন বলা হয় “তুমি পারবে”, তখন একজন মেয়েকে বলা হয় “তুমি সাবধান থাকো।” ছেলেদের শেখানো হয় “সাহসী হও”, “বলো”, “লড়ো”, কিন্তু মেয়েদের বলা হয় “চুপ থাকো”, “সহ্য করো”, “ভদ্র থাকো”। ফলে একটা সময় পরে মেয়েরা বুঝে ফেলে, সমাজের ভালোবাসা পেতে হলে তাকে নিজের ব্যক্তিত্ব গোপন রাখতে হবে।

সে নিজের ভাবনা লুকিয়ে রাখে, কারণ সমাজ তার চিন্তা, রাগ, বা প্রতিবাদকে গ্রহণ করতে জানে না। এই এক কথার পার্থক্যই তৈরি করে দুই ধরনের জীবনদর্শন।

“ভালো মেয়ে” শব্দটা কখনোই মেয়েদের জন্য নয়। এটা সমাজের সুবিধার জন্য তৈরি করা একটি নিয়মের ছাঁচ। যাতে নারীকে সহজে নিয়ন্ত্রণ, বিচার ও সীমাবদ্ধ করা যায়। “ভালো মেয়ে” ধারণা সমাজের এক ধরনের নিয়ন্ত্রণের অস্ত্র। এর মাধ্যমে মেয়েদের স্বাধীন চিন্তা, পছন্দ-অপছন্দ, এমনকি জীবনযাপনের ধরনও নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এই ধারণা ধীরে ধীরে নারীদের আত্মবিশ্বাস, আত্মসম্মান, এমনকি তাদের সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতাকেও দুর্বল করে দেয়। এটা একরকম মানসিক শৃঙ্খল — যা নারীর ভেতরের শক্তিকে চুপ করিয়ে রাখে “ভদ্রতার” নামে।

যখন কোনো মেয়ে নিজের মতো করে বাঁচতে চায়। নিজের পছন্দের পোশাক পরে, ক্যারিয়ার গড়ে, বা সম্পর্ক নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। তখন সমাজ বলে, “ও খুব বেপরোয়া!”। যে মেয়েটি নিজের মতামত প্রকাশ করে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়, সে অনেক সময় সমাজের চোখে “খারাপ মেয়ে” হয়ে যায়। যে মেয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে মুখ খোলে, সে সমাজে “অভদ্র”, “বেশি কথা বলে”, “অবাধ্য” বলে চিহ্নিত হয়।

অর্থাৎ, সমাজ চায় ভদ্র মেয়ে, কিন্তু চায় না সচেতন নারী।

অর্থাৎ সমাজ চায় না নারী স্বাধীনভাবে ভাবুক বা সিদ্ধান্ত নিক, বরং সমাজ চায় সে সম্মত হোক, বাধ্য থাকুক, নিরব থাকুক। সমাজের মতো করে বাঁচতে যেয়ে, সমাজে ভালো মেয়ে হতে যেয়ে মেয়েরা আত্নবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। লোকে কিভাবে ভালো বলবে-এই মানসিকতা নারীর মানসিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে। সে নিজের স্বাধীন চিন্তাকে অপরাধ মনে করতে শুরু করে। ফলে মেয়েরা দুটি জীবনে বাস করে। একটি সমাজের সামনে “ভালো মেয়ে” সেজে থাকা, আর অন্যটি নিজের মধ্যে অবদমিত, ক্লান্ত, স্বপ্নহীন এক সত্তা।

এভাবেই “ভালো মেয়ে” হওয়ার চাপ নারীর আত্মপরিচয়কে ক্ষয় করে ফেলে। অর্থাৎ, সমাজের চোখে ভালো মেয়ে সেই, যে সমাজের নিয়মে বাঁচে, নিজের নিয়মে নয়।

অন্যদিকে, কেউ কেউ বলেন — “ভালো মেয়ে” ধারণা সংস্কৃতির অংশ, যা শালীনতা, সহনশীলতা, সৌজন্য, পারিবারিক মূল্যবোধকে টিকিয়ে রাখে। “ভালো মেয়ে” ধারণা সংস্কৃতির অংশ, যা শালীনতা, পারিবারিক বন্ধন ও সামাজিক মূল্যবোধকে রক্ষা করে। তাদের মতে, সমাজে সৌহার্দ্য বজায় রাখতে কিছু নিয়ম থাকা দরকার — যেমন বয়োজ্যেষ্ঠদের সম্মান, দায়িত্বশীলতা, সহমর্মিতা ইত্যাদি। কিন্তু সমস্যা হয় যখন এই মূল্যবোধগুলো কেবল মেয়েদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয় এবং মেয়েদের চরিত্র বিচার হয় তাদের পোশাক, সময় ব্যবস্থাপনা বা সামাজিক আচরণের ওপর; অথচ ছেলেদের জন্য এমন কোনো কঠোর মানদণ্ড নেই।

সংস্কৃতি তখন ন্যায্য থাকে না, বরং হয়ে ওঠে পক্ষপাতদুষ্ট। এইভাবে “ভালো মেয়ে” ধারণা নারীদের উপর নৈতিক পুলিশিংয়ের হাতিয়ার হয়ে দাঁড়ায়। অনেকে বলেন — “ভালো মেয়ে” ধারণা সংস্কৃতির অংশ, যা শালীনতা, পারিবারিক বন্ধন ও সামাজিক মূল্যবোধকে রক্ষা করে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, যদি সেই সংস্কৃতি নারীর স্বাধীনতা কেড়ে নেয়, তবে সেটা সংস্কৃতি নয় বরং যুগ যুগ ধরে চলা সামাজিক শাসনের রূপ। সংস্কৃতি কখনোই একপাক্ষিক হতে পারে না। যেখানে ছেলেদের স্বাধীনতা প্রশংসিত, আর মেয়েদের স্বাধীনতা প্রশ্নবিদ্ধ। সেই জায়গায় সংস্কৃতি নয়, দ্বিচারিতা কাজ করছে।

অনেকে বলে, এটি আমাদের সংস্কৃতির অংশ।মেয়েরা নম্র, ভদ্র, লাজুক হবে — এটাই তো আমাদের ঐতিহ্য। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সংস্কৃতি কাকে বলে?

সংস্কৃতি তো জীবনের সৌন্দর্য ও সমতার প্রতিফলন,যে চিন্তা নারীর কণ্ঠরোধ করে, তাকে কষ্ট দেয়, তাকে ছোট করে, তা কোনো সংস্কৃতি নয়, তা সমাজের তৈরি শিকল। যদি সংস্কৃতি নারীর স্বাধীনতা কেড়ে নেয়, তবে সেটা সংস্কৃতি নয় বরং যুগ যুগ ধরে চলা সামাজিক শাসনের রূপ।

আজকের পৃথিবীতে মেয়েরা আর সেই পুরনো মানদণ্ডে আটকে নেই। তারা জানে — ভালো মেয়ে হওয়া মানে কারো সামনে নত হওয়া নয়,বরং নিজের প্রতি সত্য থাকা। ভালো মেয়ে সে-ই, যে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, কিন্তু নিজের সম্মান নিয়েও সচেতন।

তারা ভালোবাসে, কিন্তু ভালোবাসার নামে নিজের স্বপ্ন বিসর্জন দেয় না। তারা ডাক্তার, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, সৈনিক, উদ্যোক্তা, তারা মা-ও, কর্মীও, আর নিজের পৃথিবীর অধিনায়কও।

তারা প্রমাণ করছে — “ভালো মেয়ে”র সংজ্ঞা এখন নতুন করে লিখতে হবে। যেখানে স্বাধীনতা অপরাধ নয়, আর স্বপ্ন বিলাসিতা নয়।