ডেঙ্গুর বাড়াবাড়ি রুখতেই হবে

হাসপাতালের এক কোণে ছোট্ট মেয়েটা জ্বরে কাঁপছে। মায়ের চোখে ঘুম নেই, হাতে রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট। প্লেটিলেট দ্রুত নেমে যাচ্ছে। পাশের বেডে আরও দু’জন রোগী। কারও শরীরে স্যালাইন চলছে। কেউ বমি সামলাচ্ছে। সারা দেশের হাসপাতালগুলোতে এমন দৃশ্যই এখন প্রতিদিনের বাস্তবতা। পত্রিকার পাতায় প্রতিদিন ছাপা হচ্ছে উদ্বেগজনক সংবাদ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেবেই আছে এ বছরের শুরু এই পর্যন্ত ডেঙ্গু সংক্রমনের সংখ্যা ৫১ হাজারের বেশি, এই সময়ের ভেতর মারা গেছেন ২১৭ জন। প্রতিদিনই হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার রোগি আর মৃত্যুবরণ করা রোগির সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে ১৬ থেকে ৩০ বছর বয়সি তরুণরা। যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে শিশু-কিশোর ও তরুণদের সংখ্যাই বেশি। সংগ্রহ করা তথ্য অনুযায়ী শহরাঞ্চলে আক্রান্ত ও মৃত্যুর অনুপাত তুলনামূলকভাবে বেশি হলেও এবছর গ্রাম-বিভাগেও ছড়িয়ে পড়ছে বলে সতর্কবার্তা আছে।

ডেঙ্গু জ্বর ডেঙ্গু ভাইরাসের কারণে হয়, যা এডিস মশার কামড়ে ছড়ায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিকে মারাত্মক রোগের তালিকায় রেখেছে। বর্ষা শুরু হলেই ডেঙ্গু জ্বরের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। এই সময়ে ডেঙ্গুর মশা খুব বেশি সক্রিয় হয় এবং এর কামড় থেকে ডেঙ্গু জ্বর হয়। প্রচন্ড জ্বর, অনেক বেশি দুর্বলতা, শরীর ব্যথা, গাঁটে ব্যথা হয়ে অবস্থা নাজেহাল করে তোলে। সাধারণ জ্বরের তুলনায় ডেঙ্গু অনেক বেশি বিপজ্জনক, কারণ এর মৃত্যুহার প্রায় ১.৩%। সময়মতো চিকিৎসা না নিলে শরীরে লোহিত রক্তকণিকা কমে যায়।

ডেঙ্গু একসময় “বর্ষার রোগ” বলে পরিচিত ছিল। কিন্তু এখন এটি ঋতুর সীমানা ছাড়িয়ে এক ভয়াল জনস্বাস্থ্য সংকট হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন সংবাদে যোগ হচ্ছে নতুন নাম, নতুন মৃত্যু। এমন এক বছর এটি, যখন প্রায় প্রতিটি পরিবারই কাউকে না কাউকে ডেঙ্গুর গ্রাসে হারিয়েছে বা হারানোর ভয় নিয়ে বেঁচে আছে। অথচ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে পোস্ট দেখিনি তেমন একটা। মানুষের মাঝে উদ্বেগ নেই। চেনা মানুষের বিপদের সংবাদে কিংবা যখন নিজের ঘরে হানা দিচ্ছে মৃত্যুদূত, তখন অনুভবের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে উদ্বেগ। অথচ ভেবে দেখুন, এবছর ডেঙ্গুর প্রকোপ কিন্তু গত বছরগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। কেনো এমন হলো? ডেঙ্গুর এই বাড়াবাড়ি কারণ আমাদেরকে ভাবিয়ে তুলছে।

অনেক সময় ধরে বৃষ্টি না থাকা বা হঠাৎ ভারী বৃষ্টি হওয়া মশা বংশবিস্তারের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে। বৃষ্টির পানি জমে থাকা স্থানগুলো মশার উপযুক্ত প্রজনন ক্ষেত্র হয়ে ওঠে। প্রকৃতি, শহর পরিকল্পনা, জলবায়ু এবং আমাদের অবহেলা মিলেমিশে তৈরি করেছে ডেঙ্গুবান্ধব বাস্তবতা। আবহাওয়ার পরিবর্তন নিয়েই কথা বলা উচিত প্রথমে। কিছুদিন আগে রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল এরকম — Bangladesh Sees Worst Single-day Surge in Dengue Cases and Deaths This Year. বৃষ্টি মৌসুম দীর্ঘ হচ্ছে। বর্ষার পরিপ্রেক্ষিতে পানির মুক্ত চলাচল কমে যাচ্ছে। ফলস্বরূপ গড়ে উঠছে জলাবদ্ধতা যেখানে মশার বংশবৃদ্ধি হচ্ছে অনেক বেশি।

তাপমাত্রা বাড়লে ডেঙ্গু ভাইরাস মশার দেহে দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং মশার উড়ানের সময়ও বেড়ে যায়, যা ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়িয়ে তোলে। আমেরিকার National Library of Medicine Gi AbjvBb Rvb©v‡j cÖKvwkZ Dengue Fever in Bangladesh: Rising Trends, Contributing Factors, and Public Health Implications শীর্ষক গবেষণাপত্রে বাংলাদেশে এবছরের ডেঙ্গুর প্রকোপের জন্য দায়ী করা হয়েছে তাপমাত্রার বৃদ্ধি, আর্দ্রতা বেশি হওয়ার মতো আবহাওয়াকে যা মশাদের ডিম পাড়ার সুযোগ বাড়িয়ে দেয়, অর্থাৎ ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ বাড়ে। এছাড়াও শহরায়ন ও জনসংখ্যার ঘনত্ব পরিস্থিতি জটিল করে তুলেছে।

বাংলাদেশে দ্রুত নগরায়ন হচ্ছে, শহরগুলোর অবকাঠামো সব জায়গায় প্রস্তুত নয়। শহরকে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনে প্রস্তুত করার মতো দক্ষ পরিকল্পনা এবং পরিকল্পনাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার মতো ব্যর্থতা আমাদেরই। শহরের বাসিন্দারা ব্যবহৃত প্লাস্টিকসামগ্রীর মধ্যে জমে থাকা পানি ফেলার ব্যাপারে সচেতন নয়, ড্রেনের ভেতর পলিথিন ফেলছে অবলীলায়, মশারি ব্যবহারে আলসেমি। এবছর গ্রাম এলাকাগুলোও বাদ পড়েনি ডেঙ্গুর থাবা থেকে। প্রধান শহরগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গ্রামে গ্রামে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে। অথচ স্বাস্থ্যসেবা, রোগ নির্ণয় ও দ্রুত চিকিৎসার সুযোগ এখনো শহরের তুলনায় গ্রামে অনেক কম।

এবছর ডেঙ্গুতে মৃত্যু যেমন বেশি, ডেঙ্গু থেকে সেরে ওঠার পর আবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যাও বেশি। ডেঙ্গু রোগের নকশা নাকি বদলে যাচ্ছে! এরকম ভয় ধরানো সংবাদ পড়েছিলাম দুই বছর আগে, Bangladesh Battles Record Dengue Deaths As Disease Pattern Changes শীর্ষক আলজাজিরার এক স্বাস্থ্য প্রতিবেদনে। মৃত্যুর সংখ্যা বছর বছর বাড়ছে, এর পেছনে দায়ী এই নকশাও। কেউ একবার ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে সব ধরনের ডেঙ্গু ভাইরাস থেকে রক্ষাকবচ পেয়ে যান, ব্যাপারটা তেমন নয়। ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি ভিন্ন সেরোটাইপ রয়েছে। একটি নির্দিষ্ট সেরোটাইপের বিরুদ্ধে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হলেও, অন্য সেরোটাইপ দ্বারা আক্রান্ত হলে তা মারাত্মক রূপ ধারণ করতে পারে। যারা একবার ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের দ্বিতীয়বার অন্য সেরোটাইপ দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

এই দ্বিতীয় সংক্রমণটি অনেক বেশি মারাত্মক হতে পারে, কারণ এতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় একটি “যুদ্ধংদেহী” প্রতিক্রিয়া ঘটে, যা রক্তনালীকে ছিদ্রযুক্ত করে এবং আরও নানা জটিলতা সৃষ্টি করে। সঙ্গতকারণেই যারা একবার আক্রান্ত হয়েছেন, তারা দ্বিতীয় বা তৃতীয়বার আক্রান্ত হলে রোগের জটিলতা বেশি হয়। বর্তমানে নতুন সেরোটাইপ দেখা যাচ্ছে, যার কারণে ডেঙ্গু রোগীদের অবস্থা আরও জটিল হওয়ার আশঙ্কা বেড়েছে। এর সাথে আছে আমাদের জাতীয় চরিত্রগত সমস্যা— চিকিৎসায় সময়ক্ষেপণ। অনেক রোগী জ্বর-লক্ষণ দেখার পর বাড়তি দেরি করেছেন হাসপাতাল যেতে বা চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে। আমাদের স্বাস্থ্যসেবার নানা দুরবস্থার বাস্তবতাকেও এড়ানোর উপায় নেই। হাসপাতালে রোগিরা প্রাথমিক সেবা বা ফ্লুইড থেরাপি সময়মতো পান না। আছে চিকিৎসক সংকট, নার্স সংকট, চিকিৎসাসামগ্রীর সংকট।

পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম ও মশার ওষুধ ছেটানোর বিষয়ে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ না করার অভিযোগকেও এড়ানোর উপায় নেই। ডেঙ্গু এখন শুধু একটি রোগ নয়— এটি বাংলাদেশের নগর পরিকল্পনা, জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও নাগরিক সচেতনতার পরীক্ষার ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হলে প্রয়োজন সমন্বিত, টেকসই ও তথ্যভিত্তিক উদ্যোগ। প্রথমত, নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিকে বৈজ্ঞানিকভাবে পরিকল্পিত করতে হবে।

প্রতিটি সিটি কর্পোরেশন ও পৌর এলাকায় মাসিকভাবে লার্ভা জরিপ চালানো বাধ্যতামূলক করতে হবে, যাতে আগেভাগে সংক্রমণ প্রবণ অঞ্চল শনাক্ত হয়। ফগিং বা স্প্রে নয়, লার্ভা ধ্বংসের স্থায়ী ব্যবস্থা —যেমন ড্রেন পরিষ্কার, জমে থাকা পানি নিষ্কাশন ও নির্মাণস্থলে নিয়মিত পর্যবেক্ষণে গুরুত্ব দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে বাস্তব পর্যায়ে। প্রতিটি ওয়ার্ডে নাগরিক স্বেচ্ছাসেবী দল গঠন করা যেতে পারে, যারা সপ্তাহে একদিন “পানি ফেলা অভিযান” পরিচালনা করবে। মিডিয়া প্রচারণায় কেবল ভয় দেখানো নয়, মানুষকে নিজের ঘর ও আশপাশ পরিষ্কার রাখার অভ্যাসে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। তৃতীয়ত, স্বাস্থ্যব্যবস্থার প্রস্তুতি ও ডেটা-শেয়ারিং ব্যবস্থা উন্নত করা জরুরি। ডেঙ্গু প্রতিরোধকে সারা বছরের জনস্বাস্থ্য অগ্রাধিকার হিসেবে দেখতে হবে।

আপাততঃ আসুন, প্রত্যেকের জায়গা থেকে ব্যক্তিগত সচেতনতার মাত্রা বাড়ানোর কাজ করি। জ্বর হলে দ্রুত রক্ত পরীক্ষা ও প্লেটিলেট মনিটরিং করতে হবে, চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে, বাড়িতে অনির্দিষ্ট ওষুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। কী লক্ষণ দেখা গেলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে, জানা থাকতে হবে সবার। হঠাৎ উচ্চ মাত্রার জ্বর, সাথে তীব্র পেট ব্যথা, বারবার বমি, মুখ-নাক বা দাঁতের পাটি দিয়ে রক্ত পড়লে, বুকের ভেতর ব্যথা বা কষ্ট অনুভব করলে, হঠাৎ চেতনা হারালে দেরি না করে হাসপাতালে যেতে হবে। সময়মতো তরল গ্রহণ এবং পর্যবেক্ষণ রোগির জীবন রক্ষা করে।

আসুন, অসুস্থ হওয়ার আগে অসুস্থ হওয়া ঠেকাতে আপ্রাণ চেষ্টা করি। বাসার আশেপাশের ছোটোবড়ো সব পাত্র ঢেকে রাখুন বা উল্টে রাখুন। স্থানীয়ভাবে নিজেদের এলাকা পরিষ্কার রাখতে পরিচ্ছন্নতা কাজে অংশগ্রহণ করুন, সহযোগিতা করুন। ডেঙ্গুর বাড়াবাড়ি রুখতেই হবে আমাদের!

লেখক: কথাসাহিত্যিক ও নাট্যকার




দামুড়হুদায় জমি নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে নিহত ১, গুরুতর আহত ৩

দামুড়হুদার গোবিন্দহুদায় জমিজমা সংক্রান্ত পূর্ব বিরোধের জেরে নুরুল হক পেশকার গ্রুপ ও মাসুম বিল্লাহ মন্টু গ্রুপের মধ্যে রক্তাক্ত সংঘর্ষে মন্টু গ্রুপের ৩ জন গুরুতর আহত ও ১ জন নিহত হয়েছেন।

আজ মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে গোবিন্দহুদা গ্রামের মাঠে বিরোধপূর্ণ জমিতে কাজ করার সময় এ মারামারির ঘটনা ঘটে।
নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দামুড়হুদা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হুমায়ুন কবির।

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার গোবিন্দহুদা গ্রামে নুরুল হক পেশকার গ্রুপ ও মাসুম বিল্লাহ মন্টু গ্রুপের মধ্যে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে নুরুল হক পেশকার গ্রুপের লোকজনের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মন্টু গ্রুপের ৩ জন গুরুতর আহত ও ১ জন নিহত হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে নিজ গ্রাম গোবিন্দহুদার মাঠে নিজ নিজ জমিতে কাজ করার সময় এ ঘটনা ঘটে।
মাসুম বিল্লাহ মন্টু গ্রুপের নিহত ব্যক্তি হলেন গোবিন্দহুদা গ্রামের মৃত জড়ু মন্ডলের ছেলে জয়নুর (৫০)। আহতরা হলেন মৃত জড়ু মন্ডলের ছেলে খাজা আহমেদ (৫৭), জাহির (৫০) এবং খাজা আহমেদের ছেলে দিপু (১৬)।

সংবাদ পেয়ে দামুড়হুদা মডেল থানার পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং সার্বিক বিষয়ে খোঁজখবর নেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৩০ বছর ধরে দুই গ্রুপের মধ্যে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ লেগে আছে। এ বিষয়ে আদালতে উভয় পক্ষের মামলা চলমান রয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে নিজ নিজ জমিতে কাজ করছিল সবাই। কাজ করার সময় বিরোধপূর্ণ জমি নিয়ে কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে দুই গ্রুপের মধ্যে তুমুল রক্তাক্ত সংঘর্ষ বাঁধে। এরই একপর্যায়ে নুরুল হক গ্রুপের লোকজনের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মন্টু গ্রুপের ৪ জন আহত হন। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে রেফার করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মন্টু গ্রুপের জয়নুর মারা যান।

এ বিষয়ে দামুড়হুদা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হুমায়ুন কবির বলেন, সকালে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে মারামারি হয়েছে। সংবাদ পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। জানতে পেরেছি, মারামারির ঘটনায় জয়নুর নামের একজন নিহত হয়েছেন। এখনো পর্যন্ত উভয় পক্ষের কারো কাছ থেকে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি।




গাংনীতে ট্রাকের চাকায় পৃষ্ট হয়ে একজন নিহত

মেহেরপুরের গাংনী-কাথুলি সড়কে ট্রাকের চাকায় পৃষ্ট হয়ে মকলেছুর রহমান নামের এক জমি পরিমাপ আমিন নিহত হয়েছেন। নিহত মকলেছুর রহমান গাংনী উপজেলার সাহারবাটি গ্রামের আব্দুর রহমান কারিগরের ছেলে।

আজ মঙ্গলবার বেলা ২ টার সময় গাংনী-কাথুলি সড়কের এবাদতখানার সামনে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

স্থানীয়রা জানান, নিহত মকলেছুর রহমান গাংনী থেকে মোটরসাইকেলযোগে সাহারবাটি ফিরছিলেন। এবাদতখানার কাছে পৌছানো মাত্র পেছন থেকে আসা একটি ট্রাক তাকে ধাক্কা মারে। এতে তিনি ট্রাকের নিচে পড়েন। এসময় ট্রাক তাকে টেনে হিঁচড়ে বেশ কিছু দুর নিয়ে আসে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত্যু ঘোষণা করেন।
এদিকে ঘাতক ট্রাকের চালক পালিয়ে গেলেও ট্রাকটি জব্দ করা হয়েছে।

গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বানী ইসরাইল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, নিহতের মরদেহ উদ্ধারের প্রক্রিয়া চলছে।




উইন্ডোজ ১০-এর আপডেট শেষ আজ, সাইবার হামলার ঝুঁকিতে ব্যবহারকারীরা 

উইন্ডোজ ১০ অপারেটিং সিস্টেমের জন্য আর কোনো সফটওয়্যার হালনাগাদ, নিরাপত্তা সংশোধনী বা কারিগরি সহায়তা দেবে না মাইক্রোসফট। ফলে মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) থেকে উইন্ডোজ ১০ অপারেটিং সিস্টেমে চলা কম্পিউটারগুলো সাইবার হামলার ঝুঁকিতে পড়তে পারে। এই সমস্যা সমাধানে প্রতিষ্ঠানটি ব্যবহারকারীদের দ্রুত উইন্ডোজ ১১ অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে।

মাইক্রোসফট জানিয়েছে, ব্যক্তিগত ব্যবহারকারীরা চাইলে উইন্ডোজ ১০ অপারেটিং সিস্টেমে চলা কম্পিউটারে বিনা মূল্যে উইন্ডোজ ১১ ব্যবহার করতে পারবেন, তবে সব পুরোনো মডেলের কম্পিউটারে উইন্ডোজ ১১ ব্যবহার করা সম্ভব হবে না। সফটওয়্যার হালনাগাদ, নিরাপত্তা সংশোধনী বা কারিগরি সহায়তা বন্ধ হলেও উইন্ডোজ ১০ কম্পিউটার ব্যবহার করা যাবে, কিন্তু তা বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করবে।

ইউরোপে বসবাসকারী উইন্ডোজ ১০ ব্যবহারকারীরা চাইলে এক্সটেন্ডেড সিকিউরিটি আপডেট সুবিধা নিতে পারবেন। এর মাধ্যমে তারা ২০২৬ সালের অক্টোবর পর্যন্ত নিরাপত্তা পেলেও নতুন সুবিধা বা প্রযুক্তিগত কোনো সহায়তা পাবেন না। ইউরোপের বাইরে অন্য অঞ্চলের ব্যক্তিগত ব্যবহারকারীদের এ সুবিধা পেতে হলে কম্পিউটারে সর্বশেষ সংস্করণের উইন্ডোজ ১০ থাকার পাশাপাশি মাইক্রোসফট অ্যাকাউন্ট এবং ব্যাকআপ সম্পন্ন থাকতে হবে।

অন্যথায় প্রতি কম্পিউটারের জন্য ৩০ মার্কিন ডলার খরচ করতে হবে। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের জন্য এই খরচ প্রতি কম্পিউটারের জন্য ৬১ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে এবং অঞ্চলভেদে এ পরিমাণ কিছুটা ভিন্ন হতে পারে।

মাইক্রোসফটের তথ্যমতে, বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ১৪০ কোটি কম্পিউটারে উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয়, যার মধ্যে প্রায় ৪৩ শতাংশই চলে উইন্ডোজ ১০-এ। ব্রিটিশ ভোক্তা নির্দেশিকা সংস্থা উইচের তথ্যানুযায়ী, যুক্তরাজ্যে এখনো দুই কোটিরও বেশি মানুষ উইন্ডোজ ১০ ব্যবহার করছেন।

সংস্থাটির সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, ব্যবহারকারীদের প্রায় এক-চতুর্থাংশ মাইক্রোসফটের সহায়তা বন্ধ হওয়ার পরও পুরোনো সংস্করণটি ব্যবহার চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন, অন্যদিকে প্রতি সাতজনের একজন জানিয়েছেন, তারা নতুন কম্পিউটার কেনার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

ভোক্তা সংগঠনগুলো জানিয়েছে, মাইক্রোসফটের এই সিদ্ধান্তের ফলে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় ও প্রযুক্তি বর্জ্যের পরিমাণ আরও বাড়বে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ভোক্তা অধিকার সংস্থা পিআইআরজির জ্যেষ্ঠ পরিচালক নাথান প্রোক্টর বলেন, ‘উইন্ডোজ ১০–এর সহায়তা বন্ধ করা ভোক্তা ও পরিবেশ দুয়ের জন্যই একটি বিপর্যয়। আমাদের এমন প্রযুক্তি প্রয়োজন, যা টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদি।’

সূত্র: ইত্তেফাক




হজযাত্রীদের জন্য যে ৪ টিকা বাধ্যতামূলক করল সৌদি আরব

২০২৬ সালের হজযাত্রী ও হজসংশ্লিষ্ট কর্মীদের জন্য চিকিৎসা নির্দেশনা প্রকাশ করেছে সৌদি আরবের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। জনস্বাস্থ্য রক্ষায় এ বছর টিকা গ্রহণ ও শারীরিক যোগ্যতা যাচাই আরও কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হবে।

নতুন নির্দেশনা বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস, মেনিনজাইটিস, পোলিও ও ইয়েলো ফিভার, এই চারটি টিকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এই টিকাগুলো না নিলে কোনো হাজি দেশটিতে প্রবেশ করতে পারবেন না বলে জানানো হয়েছে।

নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ টিকা অবশ্যই সৌদি অনুমোদিত প্রস্তুতকারকের হতে হবে। সর্বশেষ ডোজ ২০২১ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে নেওয়া থাকতে হবে এবং যাত্রার অন্তত দুই সপ্তাহ আগে তা সম্পন্ন করতে হবে।

মেনিনজাইটিসের টিকা পাঁচ বছর পর্যন্ত বৈধ থাকবে, তবে সৌদিতে প্রবেশের কমপক্ষে ১০ দিন আগে নিতে হবে।

পোলিও নজরদারিতে থাকা দেশগুলোর হাজিদের টিকা হজযাত্রার অন্তত চার সপ্তাহ আগে নিতে হবে এবং আন্তর্জাতিক টিকা সনদে তা উল্লেখ থাকতে হবে।

ইয়েলো ফিভারের টিকা সব দেশের হজযাত্রীদের ৯ মাস বয়সের ঊর্ধ্বে সব যাত্রীর জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।সৌদি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছে, যেসব ব্যক্তি গুরুতর শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন তারা হজে অংশ নিতে পারবেন না। প্রধান অঙ্গ বিকল হওয়া রোগী, জটিল দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতা, মানসিক বা স্নায়বিক সমস্যা, উচ্চঝুঁকিপূর্ণ গর্ভাবস্থা, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি, ক্যানসারের চলমান চিকিৎসায় থাকা রোগীকে গুরুতর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

হজের মতো শারীরিকভাবে পরিশ্রমসাপেক্ষ ইবাদতের সময় যাত্রীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। হজ করতে ইচ্ছুকরা নির্ধারিত টিকা ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পন্ন না করলে তাদের সৌদি প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হবে। প্রয়োজনে কোয়ারেন্টিনে রাখা বা অতিরিক্ত স্বাস্থ্য মূল্যায়নও করা হবে।

সৌদি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিগত কয়েক বছরের হজ আয়োজন এবং বৈশ্বিক মহামারির অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এই নতুন নির্দেশিকা তৈরি করা হয়েছে। বৃহৎ জনসমাগমে সংক্রমণ ও চিকিৎসাজনিত ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ করাই এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য। সৌদি মন্ত্রণালয় বলেছে, প্রত্যেক হাজি নিরাপদ, সুস্থ ও নির্বিঘ্নে হজ পালন করুন এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

সূত্র: দ্য ইসলামিক ইনফরমেশন




মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে দুর্নীতি অবহেলার প্রতিবাদে জনতার মানববন্ধন

মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে সীমাহীন চিকিৎসা অবহেলা, তত্ত্বাবধায়কের লাগামহীন দুর্নীতি এবং বেসরকারি ক্লিনিকের সঙ্গে যোগসাজশে টেস্ট বাণিজ্যের প্রতিবাদে এক বিশাল মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ সোমবার দুপুরে মেহেরপুরের সর্বস্তরের জনতা ও সচেতন নাগরিকদের উদ্যোগে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল প্রাঙ্গণে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করেন, সরকারি এই হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার মান ভয়াবহভাবে নেমে গেছে। সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে রোগী ও স্বজনরা প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছেন। অনেক সময় চিকিৎসকরা দায়িত্বে অনুপস্থিত থাকেন, আর উপস্থিত কিছু কর্মচারী রোগীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন।

অভিযোগ করা হয়, হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও কিছু অসাধু কর্মচারী ক্লিনিক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগসাজশে দালাল চক্র পরিচালনা করছেন। এই দালাল চক্র রোগীদের সরকারি টেস্ট না করিয়ে নির্দিষ্ট বেসরকারি ক্লিনিকে পাঠিয়ে মোটা অঙ্কের কমিশন নিচ্ছে। এতে সাধারণ রোগীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এবং সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে।

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, ক্রীড়া সংগঠক এ এস লিটন, আহত জুলাই যোদ্ধা খন্দকার মুইজ উদ্দিন, মাদ্রাসা শিক্ষক আব্দুস সালাম, কলেজ ছাত্র মারুফ ইসলাম, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মিন্টু মোল্লা, জিয়া মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম, মল্লিকপাড়া যুব সংঘের সভাপতি মো. হাসনাত জামান সৈকত, এবং ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টির (এনসিপি) জেলা কমিটির সদস্য শাওন শেখ প্রমুখ।

বক্তারা অবিলম্বে হাসপাতালের অনিয়ম–দুর্নীতির তদন্ত, তত্ত্বাবধায়কের অপসারণ, দালাল চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা ও হাসপাতালের সেবা মান উন্নয়নের দাবি জানান।

মানববন্ধনে উপস্থিত সাধারণ মানুষ বলেন, “সরকারি হাসপাতাল আমাদের একমাত্র আশ্রয়স্থল। এখানে দুর্নীতি আর দালালি চললে গরিব মানুষের চিকিৎসা পাওয়ার অধিকারটাই শেষ হয়ে যাবে।”

তারা দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান, যাতে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল সত্যিকারের রোগীবান্ধব ও দুর্নীতিমুক্ত প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়।




হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর চ্যালেঞ্জ মিরাজদের

শারজায় তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে আফগানদের হোয়াইটওয়াশ করা বাংলাদেশ আবুধাবিতে ওয়ানডে সিরিজে দেখছে মুদ্রার উলটো পিঠ।

আজ তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সামনে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা এড়ানোর চ্যালেঞ্জ। প্রথম দুই ওয়ানডেতে বাজে ব্যাটিংয়ে হেরেছে বাংলাদেশ। সিরিজ এরই মধ্যে হাতছাড়া।

আজ সম্মান রক্ষার লড়াই। ব্যাটিংয়ে দায়িত্বশীলতা, উইকেটের মূল্য বোঝা এবং কৌশলী ইনিংস গড়তে না পারলে ওয়ানডেতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ প্রথম হোয়াইটওয়াশ হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

দুদলের কেউই এর আগে একে অপরকে ওয়ানডে ফরম্যাটে হোয়াইটওয়াশ করতে পারেনি। টানা তিনটি সিরিজ হারের পর বাংলাদেশের সামনে তাই আরেকটি লজ্জা এড়ানোর লড়াই। সিরিজ হারলেও শেষ ম্যাচে ঘুরে দাঁড়িয়ে জয় নিয়ে দেশে ফিরতে মরিয়া মেহেদী হাসান মিরাজরা। দেশে ফিরেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামতে হবে বাংলাদেশকে।

বাংলাদেশের মূল লক্ষ্য আজ জিতে রেটিং পয়েন্ট বাড়ানো। ২০২৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপে সরাসরি জায়গা করে নিতে বাংলাদেশের সামনে ২৪টি ম্যাচ রয়েছে। আজ জিতলে এবং ঘরের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারাতে পারলে র‌্যাংকিংয়ে নয়ে উঠে আসবে দল। দলের মনোবল ফেরানোই এখন মূল চ্যালেঞ্জ।

প্রথম ম্যাচে ২২১ রান করে পাঁচ উইকেটে হারে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচে ব্যাটিং বিপর্যয়ে অলআউট হয় মাত্র ১০৯ রানে। আফগানদের করা ১৯০ রান ছিল আবুধাবির জায়েদ স্টেডিয়ামে গত ৫৫ ম্যাচে প্রথম ইনিংসে সর্বনিম্ন সংগ্রহ। সেই রান তাড়া করতেই ব্যর্থ মিরাজরা। বাংলাদেশের ব্যাটিং ব্যর্থতাই সিরিজের সবচেয়ে বড় হতাশা। আগ্রাসী ব্যাটিং করতে গিয়ে উইকেট বিলিয়েছেন তানজিদ হাসান, সাইফ হাসানরা।

মিডলঅর্ডারে তাওহিদ হৃদয়, নুরুল হাসান, জাকের আলীরা একের পর এক বাজে শটে রশিদ খান ও খারোতের শিকারে পরিণত হন। দ্বিতীয় ম্যাচে হারের পর স্পিন বোলিং কোচ মুশতাক আহমেদ বলেন, ‘আমাদের বোলার দেখে নয়, বল দেখে খেলতে শিখতে হবে।’

এদিকে দলের প্রয়োজনে আফগানিস্তানের কেউ না কেউ এগিয়ে আসছেন। দৃঢ় মানসিকতারও পরিচয় দিচ্ছেন। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ইব্রাহিম জাদরান একপ্রান্ত আগলে রেখে দলকে লড়াইয়ের মতো সংগ্রহ এনে দিয়েছেন। বাংলাদেশ অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজের ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে সমস্যা নেই; কিন্তু দলকে টেনে তোলার জায়গায় এখনো পিছিয়ে তিনি। বাংলাদেশ শেষ ১২ ওয়ানডের ১০টিতেই হেরেছে। আবুধাবির উইকেট মন্থর, যেখানে মাঝের ওভারগুলোতে রান তোলা কঠিন। গরম আবহাওয়া খেলোয়াড়দের ধৈর্য ও ফিটনেসের পরীক্ষা নিচ্ছে।

আজ ব্যাটিং লাইনআপে পরিবর্তন দেখা যেতে পারে। তানজিদ হাসানের জায়গায় নাঈম শেখকে দেখা যেতে পারে। এছাড়া ফর্মহীন জাকের আলীর জায়গায় শামীম হোসেন একাদশে ফিরতে পারেন।




গাংনীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক

মেহেরপুরের গাংনীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছে একটি প্রভাবশালী মহল। উপজেলার গোপালনগর গ্রামের লুৎফুন্নেছা মাধ্যমিক বিদ্যালয় সড়কের পাশে সাবেক কাস্টম অফিসার আতাউল হকের পুকুর থেকে দিনে এবং রাতে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করে একটি ফসলি জমিতে জমা করে রাখা হয়েছে। সেখান থেকে ভারী ড্রাম ট্রাকে বালি বহন করে নিয়ে যাওয়ার ফলে সড়কটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে উঠেছে।

স্থানীয় প্রশাসনের নীরব ভূমিকায় অপরাধীরা শক্ত সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।স্থানীয় নুরুল ইসলামের সহোযোগিতায় গাড়াডোব গ্রামের প্রভাবশালী রহিম সেখানে কিছু পেটোয়া বাহিনী দিয়ে অবৈধভাবে এ কার্যক্রম চালাচ্ছে।

এলাকাবাসীরা জানায়, ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে জমা করে রাখা হয়েছে। এখন সেগুলো ভারী গাড়িতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে যার ফলে সড়কটি মারাত্মকভাবে ভেঙে গেছে।  উপজেলা নির্বাহী অফিসার কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দিলেও তারা নীরব রয়েছেন। প্রশাসন থেকেও কোন ধরণের প্রতিকার পাচ্ছে না তারা।

নওশাদ আলী নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, বালু উত্তোলনের ফলে আশপাশের ফসলি জমি ও বসত বাড়ি হুমকির মুখে পড়েছে। উত্তোলনকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ কিছু বলছে না।

আসাদুল ইসলাম নামের আরেকজন কৃষক জানান, আমার জমির কিছুটা দূরেই এই বালু তোলার কাজ হয়েছে এখন আমার জমিটাও ভাঙ্গনের মুখে। যারা বালু তুলছে তারা ক্ষমতাবান হওয়ায় আমরা প্রতিবাদ করতে পারিনি। সেজন্য প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি তবে এখনো কোনো কাজ হয়নি।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত বালু উত্তোলনকারীরা কথা বলতে রাজি হননি।

গাংনীর এলজিইডি প্রকৌশলী রোকনুজ্জামান বলেন, শুনেছি সড়কটি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলবো কি ব্যবস্থা নেওয়া যায় সে বিষয়ে।

গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আনোয়ার হোসেন বলেন, স্থানীয়দের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি ভূমিকর্মকর্তাকে সেখানে পাঠানো হবে।




গাংনী প্রাণী সম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন বিক্রয়ের অভিযোগ

মেহেরপুর গাংনী উপজেলা প্রাণীসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ডা. আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে সরকারি বরাদ্দকৃত লাম্পি স্কিন (এলএসডি) ভ্যাকসিন বিক্রয়ের অভিযোগ উঠেছে।

ডা. আলাউদ্দিন গাংনী উপজেলা প্রাণীসম্পদ ভেটেরিনারি হাসপাতালে যোগদানের পর থেকে গোপনে সরকারি বরাদ্দকৃত ঔষধ ও বিভিন্ন ভ্যাকসিন খামারিদের নিকট থেকে ৩ হাজার ৭০০ টাকা করে নিয়ে এই ভ্যাকসিন সরবরাহ করেছেন বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।

গাংনী উপজেলা প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর ভেটেরিনারি হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গাংনী উপজেলার বিভিন্ন খামারে গরুর সংখ্যা ৫৮ হাজার ৩৬৫টি, খাসি ছাগলের সংখ্যা ১ লাখ ৩ হাজার ৮৬৯টি, ছোট ছাগলের সংখ্যা ১৪ হাজার ৭৭০টি, ভেড়ার সংখ্যা ২ হাজার ৯১৭টি এবং মহিষের সংখ্যা ৬৫২টি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা প্রাণীসম্পদ হাসপাতালে সরকারিভাবে লাম্পি স্কিন (এলএসডি) রোগে আক্রান্ত হয়ে হাজার হাজার গরুর মৃত্যু হচ্ছে।

ভাইরাসজনিত এই রোগে আক্রান্তের মধ্যে ছোট বাছুরের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। রোগটি দ্রুত ছড়িয়ে যাওয়ায় গরু-বাছুর নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন খামারিসহ এলাকার হাজার হাজার কৃষক।

সরকারি বরাদ্দকৃত ভ্যাকসিন না পেয়ে অনেক খামারী অতিরিক্ত দামে বাইরে থেকে ভ্যাকসিন ক্রয় করে গরুকে দিচ্ছেন। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন ডা. আলাউদ্দিন এমন অভিযোগ খামারিদের। অভিযোগ রয়েছে, তিনি বিভিন্ন ফার্মেসিতে বিশেষ সুবিধা নিয়ে গোপনে ওই ঔষধ সরবরাহ করে থাকেন।

প্রতিষেধক হিসেবে সরকারিভাবে প্রাণীসম্পদ হাসপাতালে (এলএসডি) ভ্যাকসিন বরাদ্দ দিলেও, বিভিন্ন অজুহাতে লাম্পি স্কিন ডিজিজের জন্য সরকারি কোনো ভ্যাকসিন নেই বলে খামারিদের বিদায় করছেন প্রাণীসম্পদ অফিসের ওই কর্মকর্তা।

গাংনী উপজেলায় পৌরসভাসহ ৯টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার খামারী ও কৃষকের ঘরে প্রায় ২ লাখ গরু-বাছুর রয়েছে। বর্তমানে সেখানে লাম্পি স্কিন রোগের প্রাদুর্ভাব দিন দিন বাড়ছে।

এর মধ্যে কাজিপুর ইউনিয়নের কাজিপুর, হাড়াভাঙ্গা, সাহারনগর, ষোলটাকা ইউনিয়নের কাষ্টদহ, জুগিরঘোফা, ষোলটাকা, মিনাপাড়া, সাহারবাটি ইউনিয়নের ধর্মচাকী, ভোমরদহ, হিজলবাড়ি, ধানখোলা ইউনিয়নের কসবা, যুগিন্দা, ভাটপাড়া গ্রাম এলাকায় রোগটির প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি।

এদিকে স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানিয়েছেন, লাম্পি স্কিন রোগ (এলএসডি) ছড়িয়ে পড়ায় খামারিসহ এলাকার হাজারো কৃষক চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। সরকারি হাসপাতালে ভ্যাকসিন না পেয়ে তাদের অনেকের মনে এখন ‘লাম্পি আতঙ্ক’ বিরাজ করছে। অনেক খামারী বাইরে থেকে ৩ হাজার ৭০০ টাকা দরে ক্রয় করছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন গরু খামারী জানান, উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তার যোগসাজশে প্রাণীসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আলাউদ্দিন সরকারি ঔষধ গোপনে বিভিন্ন ফার্মেসির কাছে দিয়ে সরকারি ভ্যাকসিন ও ঔষধ বিক্রি করে আসছেন।

এছাড়াও সরকারি বেতনভুক্ত প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা চিকিৎসাপত্রে নামমাত্র কোম্পানির ঔষধ এবং ভিটামিন পণ্য লিখে খামারিদের সঙ্গে প্রতারণা করছেন।

ভুক্তভোগী খামারিরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণীসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ডা. আলাউদ্দিন বাইরে ঔষধ ও ভ্যাকসিন বিক্রয়ের কথা অস্বীকার করে বলেন, “আমি কোনো ভ্যাকসিন বাইরে বিক্রয় করিনি। যদি কেউ বলে থাকে, সেটা মিথ্যা বলেছে। সরকারি বরাদ্দকৃত ভ্যাকসিন বিনামূল্যে খামারিদের দেওয়া হচ্ছে। টাকা নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।”

সরকারি ভ্যাকসিন বাইরে বিক্রয়ের ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোত্তালেব আলী বলেন, “চলতি বছর এই প্রথম লাম্পি স্কিন (এলএসডি) ভ্যাকসিন সরকারিভাবে বরাদ্দ পেয়েছি। ৫ হাজার ৪০০ ডোজের মধ্যে ৪ হাজার ৪৯৬ ডোজ গরুকে দেওয়া হয়েছে। বাকি ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজ চলমান রয়েছে। বিনামূল্যে গরু খামারিদের এই ডোজ দেওয়া হয়েছে।”

সরকারি ভ্যাকসিন বরাদ্দ পাওয়ার আগে জরুরি প্রয়োজনে কেউ কেউ ৩ হাজার টাকা বা তার বেশি দামে ভ্যাকসিন ক্রয় করে থাকতে পারেন, যা আমার জানা নেই। গাংনী পশু হাসপাতালে টাকা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

তিনি আরও বলেন, “প্রকল্পভুক্ত খামারির সংখ্যা ৮৪০ জন, এর মধ্যে রেজিস্টার্ড ভুক্ত খামারিদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পভুক্ত খামারির বাইরেও এই সুবিধা দেওয়া হয়েছে। সরকারি ঔষধ বাইরে বিক্রয়ের কোনো সুযোগ নেই। যে সকল গরুকে দেওয়া হয়েছে, সেই সকল খামারির তালিকা আমাদের কাছে আছে। আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখুন, যদি কোনো কর্মকর্তা ভ্যাকসিন বাইরে বিক্রি করে টাকা নেয়। আর যদি কেউ প্রমাণ দিতে পারে, তাহলে তার বিরুদ্ধে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”




সিপিবি’র জাতীয় সমাবেশ উপলক্ষে মেহেরপুরে কর্মীসভা 

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র জাতীয় সমাবেশকে সামনে রেখে মেহেরপুরে কর্মীসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ কর্মীসভার আয়োজন করা হয়।

সিপিবি’র মেহেরপুর জেলা শাখার সভাপতি মোশারফ হোসেনের সভাপতিত্বে কর্মীসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সিপিবি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পরেশ কর। সভা পরিচালনা করেন, জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম কানন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে সিপিবি’র সাবেক সভাপতি প্রয়াত কমরেড জালালউদ্দিনের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে তাঁর রাজনৈতিক জীবন ও অবদানের উপর আলোচনা করেন বক্তারা।

কর্মীসভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, জেলা শাখার সহ-সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান, কমরেড রহমতুল্লাহ, কমরেড রফিকুল ইসলাম, কমরেড আব্দুল হাকিম, কমরেড পাভেল, কমরেড বিপ্লব ও কমরেড ঊষা প্রমুখ।

সভায় বক্তারা আগামী ১৪ নভেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে নেতাকর্মীদের আহ্বান জানান।