মুজিবনগরে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে সেনাবাহিনীর হানা, পিস্তল, গুলি ও গাঁজা উদ্ধার

মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার মহাজনপুরে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে অভিযান চালিয়ে ১টি ওয়ান শ্যুটার পিস্তল, ১টি লাইভ অ্যামুনিশন এবং ৫ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী।

গতকাল সোমবার রাত ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত মহাজনপুর কবরস্থানের পাশে একটি আমবাগানে সেনাবাহিনীর একটি টিম গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এ অভিযান পরিচালনা করে।

অভিযানের সময় ডাকাত দল সেনাবাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায়। পরে তল্লাশি চালিয়ে আমবাগানে অবস্থিত একটি ছাপড়ি ঘর থেকে ১টি ওয়ান শ্যুটার পিস্তল, ১টি লাইভ অ্যামুনিশন এবং ৫ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করা হয়।

উদ্ধারকৃত অবৈধ অস্ত্র, অ্যামুনিশন এবং গাঁজা পরবর্তীতে মুজিবনগর থানায় পুলিশের নিকট হস্তান্তর করা হয়।




গাংনীতে পাটজাত মোড়ক ব্যবহার না করায় দুই ব্যবসায়ীর জরিমানা

মেহেরপুরের গাংনীতে পাটজাত মোড়ক ব্যবহার না করার অপরাধে গাংনী বড় বাজারের চাউল ব্যবসায়ী কাবরান আলী ও সালাউদ্দিন নামের দুই ব্যবসায়ীকে ভ্রাম্যমান আদালতে জরিমানা করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে গাংনী বড় বাজারে অভিযান চালিয়ে এ জরিমানা আদায় করা হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন গাংনী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাবিদ হোসেন।

অভিযানে নেতৃত্বে থাকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাবিদ হোসেন জানান পাট জাত মোড়কের ব্যবহার নিশ্চিত করতে গাংনী বড় বাজার এলাকার একাধিক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে তদারকি ও অভিযান পরিচালনা করা হয়।

অভিযানে পাট জাত মোড়কের ব্যবহার না থাকায় দুই ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের মালিককে ম্যান্ডেটরি জুট প্যাকেজিং অ্যাক্ট- ২০১০ এর ৪ ও ১৪ ধারা অনুযায়ী কাবরান ট্রেডার্সে ৫ হাজার টাকা ও সরফ এন্টারপ্রাইজে ৩ হাজার টাকা সর্বমোট ৮ হাজার টাকা জরিমানা আরোপ ও আদায় করা হয়।

এ সময় মেহেরপুর জেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা আ.কা.ম হারুন অর রশিদ সহ গাংনী থানা পুলিশের একটি টিম অভিযান পরিচালনায় সহযোগিতা করেন।

জনস্বার্থে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান প্রশাসনের ওই কর্মকর্তা




ঝিনাইদহে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১ আহত ৩

ঝিনাইদহ-মাগুরা মহা সড়কের চারমাইল নামক স্থানে সড়কের পাশে বিকল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ধান বোঝায় একটি ট্রাকে বাসের ধাক্কায় ট্রাকের হেলপার আলিমুল ইসলাম (২৬) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে চালকসহ আরও ৩ জন।

মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) ভোরে ঝিনাইদহ-মাগুরা মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত আলিমুল ইসলাম নড়াইল সদর উপজেলার বাসিন্দা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ঝিনাইদহ-মাগুরা মহাসড়কের পাঁচমাইল এলাকায় একটি ধানবোঝায় ট্রাক বিকল হয়ে গেলে রাস্তাায় রেখে মেরামত করছিলো ট্রাকের হেলপার ও চালক। সেসময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে যশোরের চৌগাছাগামী মামুন পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস কুয়াশার কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকটির পেছনে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই ট্রাকের হেলপার আলিমুল মারা যান। আহত হয় গাড়ির চালক ও যাত্রীসহ ৩ জন।

ঝিনাইদহ আরাপপুর হাইওয়ে থানার এস আই ইয়াছির আরাফাত বলেন, খবর পেয়ে হাইওয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করে। আহতদের ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। কুয়াশা আর অতিরিক্ত গতির কারণে এ দুর্ঘটনা বলে প্রাথমিক ভাবে ধারনা করা হচ্ছে।




১ যুগে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১ লাখ ১৬ হাজারের বেশি

বিগত ১২ বছরে সারাদেশে ৬৭ হাজার ৮৯০টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১ লাখ ১৬ হাজার ৭২৬ জন নিহত ও ১ লাখ ৬৫ হাজার ২১ জন আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

সংগঠনটি বলেছে, দুর্নীতি, ভুলনীতি ও পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি সড়কে ‘গণহত্যার’ জন্য দায়ী।

মঙ্গলবার সকালে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস ২০২৫ উপলক্ষে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এসব তথ্য তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, স্বাধীনতার আগে দেশের ৮০ শতাংশ মানুষ নৌ ও রেলপথে চলাচল করত এবং মাত্র ২০ শতাংশ মানুষ সড়কপথ ব্যবহার করত। ফলে সড়ক দুর্ঘটনাও সীমিত ছিল।

কিন্তু স্বাধীনতার পর দাতা সংস্থার প্রেসক্রিপশনে একের পর এক সড়ক নির্মাণ ও সংস্কারের নামে ব্যাপক লুটপাট এবং সড়কে একচেটিয়া চাপ বাড়ানোর কারণে এখন ৮০ শতাংশ মানুষ সড়কপথে চলাচল করছে, আর দুর্ঘটনাও ৮০ শতাংশ বেড়েছে।

মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে পরিবহন খাতে সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতি, পরিবহন মালিক-শ্রমিক ও দুর্নীতিবাজ পুলিশ কর্মকর্তাদের চাঁদাবাজি, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অপ্রাপ্তবয়স্ক ও মাদকাসক্ত চালক, এবং লাইসেন্সহীন গাড়ি চলাচলের কারণে সড়কে বিশৃঙ্খলা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।’

তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এই হিসাব করা হয়েছে, বাস্তব সংখ্যা আরও অনেক বেশি।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৪ সাল থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে সড়কে ১ লাখ ১৬ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।

সংগঠনটির ভাষায়, ‘একই সময়ে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধে গাজায় নিহত ৬৭ হাজার, আর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে ৪৫ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। অথচ বাংলাদেশের সড়কে নিহতের সংখ্যা সেই যুদ্ধের চেয়েও বেশি।’

তারা বলেন, ‘এ যেন দেশের সড়কে এক প্রকার গণহত্যা, যার দায় সরকারের ভুলনীতি ও দুর্নীতি।’

সংগঠনের মতে, দীর্ঘদিন সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা ওবায়দুল কাদেরের সময়েও পরিবহনে বিশৃঙ্খলা রোধে কোনো কার্যকর পরিকল্পনা দেখা যায়নি।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরকার পরিবর্তনের পরও নীতিমালায় দৃশ্যমান পরিবর্তন না আসায় দুর্ঘটনা ও যানজট বেড়েই চলছে।

সংবাদ সম্মেলনে সড়কে শৃঙ্খলা ও দুর্ঘটনা কমাতে সংগঠনটি ১২ দফা সুপারিশ উপস্থাপন করে। এর মধ্যে রয়েছে—নৌ ও রেলপথকে সড়কের সঙ্গে সমন্বয় করে একীভূত পরিবহন নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা।

# পরিবহন খাতের চাঁদাবাজি, অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধে কাঠামোগত সংস্কার।

# ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভাগীয় শহরে সরকারি উদ্যোগে পাতাল মেট্রোরেল চালু।

# প্রতিটি শহরে ডিজিটাল লেনদেনভিত্তিক অন্তত দুটি বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (BRT) লেন চালু।

# জেলা-উপজেলা পর্যন্ত শক্তিশালী বাস নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা।

# মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা আমদানি ও বিপণন বন্ধ।

# প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও দক্ষ চালক তৈরিতে সরকারি উদ্যোগ।

# ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় ডিজিটাল প্রযুক্তি প্রয়োগ ও ট্রেনিং একাডেমি প্রতিষ্ঠা।

# সড়ক দুর্ঘটনার মামলায় সরকারি উদ্যোগে ক্ষতিপূরণ প্রদান।

# যাত্রী প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করে সিদ্ধান্তগ্রহণে স্বচ্ছতা।

# সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের জবাবদিহি নিশ্চিতকরণ।

# সারাদেশে সাইক্লিস্ট ও পথচারীদের জন্য আলাদা লেন ও নিরাপদ ফুটপাত নির্মাণ।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, যাত্রী কল্যাণ সমিতির সভাপতি শরীফ রফিকুজ্জামান, বারভিটার সভাপতি আবদুল হক, ড্রাইভার্স ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান বাদল আহমেদ প্রমুখ।

সূত্র: দ্য নিউজ ২৪ ।




জীবনের জয়গানে সড়ক হোক মুখরিত

নীরব মহামারির কেন্দ্রবিন্দুতে এক প্রতিজ্ঞা: প্রতিবছর একটি নির্দিষ্ট দিনে, গোটা জাতি এক গভীর প্রতিজ্ঞার কাছে এসে দাঁড়ায়—আর তা হলো সড়ককে নিরাপদ করার প্রতিজ্ঞা। দিনটি হলো জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস। এই দিবসটি কেবল একটি ক্যালেন্ডার চিহ্নিত দিন নয়; এটি বহু ঝরে যাওয়া জীবনের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য, অসংখ্য পরিবারের দীর্ঘশ্বাসের প্রতি সংহতি এবং ভবিষ্যতের একটি নিরাপদ পথের জন্য সম্মিলিত কণ্ঠস্বর।

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে সড়ক দুর্ঘটনা একটি নীরব মহামারি, যা প্রতিদিন কেড়ে নিচ্ছে মূল্যবান জীবন, বিকলাঙ্গ করছে অসংখ্য মানুষকে এবং দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করছে। এই দিবসটি তাই স্মরণ করিয়ে দেয় যে, সড়ক নিরাপত্তা কোনো ঐচ্ছিক বিষয় নয়, বরং তা আমাদের জাতীয় অস্তিত্বের জন্য একটি অপরিহার্য শর্ত। এই ফিচারটিতে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবসের ঐতিহাসিক পটভূমি, বর্তমান প্রেক্ষাপট, দুর্ঘটনার কারণসমূহ, এর বহুবিধ প্রভাব এবং নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতকরণে আমাদের সম্মিলিত করণীয় বিষয়গুলির ওপর আলোকপাত করা হবে। এটি কেবল তথ্য পরিবেশন নয়, বরং এটি সেই লক্ষ লক্ষ মানুষের বেদনা ও আশা নিয়ে লেখা, যারা একটি নিরাপদ পথের স্বপ্ন দেখে।

জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবসের উৎপত্তি এক মর্মন্তুদ ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি এবং সেখান থেকে জন্ম নেওয়া এক অদম্য আন্দোলনের ইতিহাস। এই আন্দোলনের মূল কারিগর হলেন অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন। ১৯৯৩ সালের ২২ অক্টোবর, সড়ক দুর্ঘটনায় তাঁর স্ত্রী জাহানারা কাঞ্চন অকাল মৃত্যুবরণ করেন। এই ব্যক্তিগত শোক তাঁকে শুধু ভেঙে দেয়নি, বরং তাঁকে এক বৃহত্তর সামাজিক দায়িত্ব পালনে উদ্বুদ্ধ করে। স্ত্রীর মৃত্যুর পর ইলিয়াস কাঞ্চন ব্যক্তিগত বেদনাকে জাতীয় কল্যাণে উৎসর্গ করে জন্ম দেন ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ (নিসচা) নামের একটি সংগঠনের। দীর্ঘ দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে নিসচা সড়ক নিরাপত্তার দাবিতে আন্দোলন করে আসছে, যার মূল স্লোগান ছিল—’পথ যেন না হয় শ্মশান’। তাঁদের নিরলস প্রচেষ্টা, সচেতনতামূলক কার্যক্রম এবং সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির ফলস্বরূপ ২০১৭ সালের ৫ জুন, মন্ত্রিসভার বৈঠকে ২২ অক্টোবরকে ‘জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

এই ঘোষণা কেবল একটি দিবসের সূচনা ছিল না, এটি ছিল সড়কে জীবন সুরক্ষার দাবিতে সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের দাবির প্রতি রাষ্ট্র কর্তৃক এক আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি। দিবসটি এখন জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকলের অংশগ্রহণে পালিত হয়, যা সড়ক নিরাপত্তার গুরুত্বকে সর্বস্তরে পৌঁছে দিয়েছে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারন করা হয়েছে, “মানসম্মত হেলমেট ও নিরাপদ গতি, কমবে জীবন ও সম্পদের ক্ষতি”। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ প্রতিপাদ্য যথেষ্ট যুক্তি যুক্ত ও তাৎপর্যপূর্ণ। ব্যয় সাশ্রয়ী ও দ্রুত বাহন হিসেবে মোটর সাইকেলের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। সম্প্রতি রাইড শেয়ারিং এর জন্য এর চাহিদা ব্যাপক। রাজধানী ঢাকাসহ ব্যস্ত শহরগুলিতে দ্রুত গন্তব্যে পৌছাতে যাত্রীরা রাইড শেয়ারিং এর মাধ্যমে মোটরসাইকেলে যাত্রা করছে। গ্রামাঞ্চলে সঙ্কীর্ণ রাস্তায় যাত্রী পরিবহনে ব্যবহৃত হচ্ছে মোটর সাইকেল। খুব দ্রুতগতির ও খুব ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় প্রায়ই এসব মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে। তাছারা এসব যানবাহণের বেশিরভাগ চালক অদক্ষ ও অপেশাদার হওয়ায় দুর্ঘটনা ঘটছে বেশি। মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে যাত্রী ও চালকের জন্য হেলমেট অপরিহার্য। হেলমেট যাত্রী ও চালকের সুরক্ষা বাড়ায়। তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই প্রতিপাদ্য যথেষ্ট যুক্তিযুক্ত।

চালক সড়ক দুর্ঘটনার বর্তমান চিত্র কেবল উদ্বেগজনক নয়, রীতিমতো আতঙ্কজনক। যদিও প্রতিবছর সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলো দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান প্রকাশ করে, কিন্তু প্রকৃত সংখ্যাটি প্রায়শই প্রকাশিত সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি হয় বলে ধারণা করা হয়। দুর্ঘটনার সবচেয়ে বড়ো মূল্য দিতে হয় মানুষ ও পরিবারকে। একটি দুর্ঘটনা একজন উপার্জনকারীকে কেড়ে নেয়, একটি পরিবারকে পথে বসিয়ে দেয়। দুর্ঘটনায় আহতদের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের খরচ পরিবারটিকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দেয়। অন্যদিকে, তরুণ কর্মক্ষম মানুষের মৃত্যু দেশের মানবসম্পদকে দুর্বল করে দেয়। হাসপাতালে ট্রমা সেন্টারগুলোতে আহতদের ভিড় এবং নিহতের স্বজনদের কান্না যেন সড়ক দুর্ঘটনার মানবিক মূল্যকে প্রতিনিয়ত স্মরণ করিয়ে দেয়।

সড়ক দুর্ঘটনা শুধু মানবিক ক্ষতি নয়, এটি দেশের অর্থনীতির ওপরও মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার হিসেব মতে, সড়ক দুর্ঘটনায় দেশের মোট দেশজ উৎপাদন (GDP)-এর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ (অনেক গবেষণায় যা ১.৫ শতাংশ থেকে ২ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত উল্লেখ করা হয়) ক্ষতি হয়। এই ক্ষতির মধ্যে রয়েছে চিকিৎসা খরচ, সম্পত্তির ক্ষতি, উৎপাদনশীলতা হ্রাস এবং আইন প্রয়োগ ও উদ্ধারকার্যের খরচ। নিরাপদ সড়কের অনুপস্থিতি দেশের পর্যটন এবং বিদেশি বিনিয়োগকেও নিরুৎসাহিত করে। সড়ক দুর্ঘটনাকে কোনো একক কারণের ফল হিসেবে দেখা ভুল। এটি মূলত একাধিক জটিল সমস্যার আন্তঃসম্পর্কের ফল। এই কারণগুলোকে প্রধানত চারটি ভাগে ভাগ করা যায়। তা হলো অনেক চালক যথাযথ প্রশিক্ষণ ছাড়াই লাইসেন্স পান। ড্রাইভিং টেস্ট ও প্রশিক্ষণের মান আন্তর্জাতিক মানের নয়। বিশ্রামের অভাব ও ক্লান্তি: বিশেষ করে দূরপাল্লার বাস ও ট্রাক চালকরা অতিরিক্ত ট্রিপের লোভে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেন না, ফলে ঘুমের ঘোরে বা ক্লান্তিতে দুর্ঘটনা ঘটে। বেপরোয়া গতি ও প্রতিযোগিতা: এক রুটে একাধিক গাড়ির মধ্যে প্রতিযোগিতা এবং সময় বাঁচানোর প্রবণতা বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাতে উৎসাহিত করে। মাদকাসক্তি: কিছু চালকের মধ্যে নেশা করে গাড়ি চালানোর প্রবণতা থাকে, যা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতাকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে। অনেক পুরনো ও ত্রুটিপূর্ণ গাড়ি, যাদের ‘রোড ফিটনেস’ নেই, সেগুলো জোর করে সড়কে নামানো হয়। ব্রেক ফেইলর, টায়ার বিস্ফোরণ, লাইটের সমস্যার কারণে দুর্ঘটনা ঘটে। যানবাহনের ফিটনেস যাচাইয়ের ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও দুর্বল আইন প্রয়োগ ব্যবস্থার কারণে ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন বহাল থাকে। পণ্যবাহী যানবাহনগুলোতে প্রায়শই অতিরিক্ত মাল বোঝাই করা হয়, যা গাড়ির নিয়ন্ত্রণকে কঠিন করে তোলে এবং দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ায়। দেশের অনেক সড়কই ভুল নকশায় তৈরি। অপরিকল্পিত বাঁক, অপ্রয়োজনীয় স্পিড ব্রেকার, ডিভাইডার না থাকা বা ত্রুটিপূর্ণ ডিভাইডার দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। বর্ষাকালে সড়কে জলাবদ্ধতা বা রাস্তার পিচ্ছিল ভাব দুর্ঘটনার কারণ হয়। ফুটপাত এবং সড়কের অংশ অবৈধভাবে হকার বা দোকানপাট দ্বারা দখল হয়ে গেলে পথচারী ও যানবাহন চলাচলের স্থান কমে যায়, যা দুর্ঘটনা ঘটায়। ঝুঁকিপূর্ণ মোড় বা স্থানে প্রয়োজনীয় ট্রাফিক সাইন ও সতর্কতামূলক চিহ্নের অভাব দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ায়।

রাস্তা পারাপারের সময় পথচারীদের অসতর্কতা, ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করা, মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হওয়া—এগুলোও দুর্ঘটনার কারণ। হেলমেট ব্যবহার না করা, সিটবেল্ট না বাঁধা, ভুল পথে গাড়ি চালানো—এগুলো সামাজিক অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। ট্রাফিক আইন ভঙ্গের ক্ষেত্রে কঠোরতা না দেখিয়ে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে ছাড় দেওয়া বা লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে অনিয়ম আইন প্রয়োগকে দুর্বল করে দেয়। নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে হলে সরকারি, বেসরকারি এবং জনগণ—সকলকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। একটি সমন্বিত এবং দীর্ঘমেয়াদি মহাপরিকল্পনা ছাড়া এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত ‘4-E’ (Education, Engineering, Enforcement, Emergency Response) মডেলের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন আবশ্যক। স্কুল পর্যায়ের পাঠ্যক্রমে সড়ক নিরাপত্তা বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা, গণমাধ্যমে নিয়মিত সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো, চালক প্রশিক্ষণে নৈতিকতা ও মানবিকতার বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা Education এর অন্তরভুক্ত। সড়ক নকশায় বৈশ্বিক মানদণ্ড (Global Standards) অনুসরণ করা বিশেষ করে দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থান বা ‘ব্ল্যাক স্পট’ চিহ্নিত করে দ্রুত নকশার পরিবর্তন করা, যানবাহন ও পথচারীদের জন্য পৃথক লেন বা করিডোর তৈরি, আধুনিক ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থা, সিসিটিভি মনিটরিং এবং ডিভাইডার স্থাপন করার মাধ্যমে Modern Engineering এর প্রয়োগ দুর্ঘটনা রোধে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।

ডিজিটাল পদ্ধতিতে ট্রাফিক আইন প্রয়োগ, চালকের লাইসেন্স প্রদানের প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণভাবে দুর্নীতিমুক্ত ও কঠোর করা, আইন অমান্যকারীদের ক্ষেত্রে জরিমানা ও শাস্তির পরিমাণ কঠোর ও অবিচলভাবে কার্যকর করা, ফিটনেসবিহীন যানবাহন যেন কোনোভাবেই সড়কে নামতে না পারে, তা কঠোরভাবে নিশ্চিত করতে হবে। দুর্ঘটনার পর দ্রুত আহতদের হাসপাতালে নেওয়ার জন্য ‘গোল্ডেন আওয়ার’ (Golden Hour)-কে গুরুত্ব দিতে হবে, জাতীয় পর্যায়ে একটি সমন্বিত ট্রমা কেয়ার ও অ্যাম্বুলেন্স নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে হবে। দুর্ঘটনার স্থানে দ্রুত পৌঁছানোর জন্য জরুরি হটলাইন নম্বরগুলোকে (যেমন: 999) আরও কার্যকর করতে হবে। আধুনিক প্রযুক্তি সড়ক নিরাপত্তায় এক বিশাল ভূমিকা রাখতে পারে। জিপিএস ট্র্যাকিং, ভেহিক্যাল ট্র্যাকিং সিস্টেম (VTS) এবং অটোমেটিক স্পিড ডিটেকশন ক্যামেরা ব্যবহার করে চালকদের গতিবিধি ও আইনভঙ্গের রেকর্ড রাখা সম্ভব। এসব প্রযুক্তির ব্যবহার আইন প্রয়োগকে আরও স্বচ্ছ এবং শক্তিশালী করবে। পরিবহণে মালিকদের মুনাফার চেয়ে জীবনকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। চালকদের কাজের সময়সীমা নির্ধারণ করা এবং তাদের পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিশ্চিত করা মালিকদের দায়িত্ব। শ্রমিক ইউনিয়নগুলোকেও চালকদের মধ্যে আইন মানার সংস্কৃতি তৈরি এবং মাদকমুক্ত রাখার জন্য সচেতনতা তৈরি করতে হবে।

জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস তাই কেবল একটি শোক বা স্মরণ দিবস নয়, এটি একটি নবজাগরণের আহ্বান। এই দিনে প্রতিটি নাগরিককে ব্যক্তিগতভাবে প্রতিজ্ঞা করতে হবে যে, তিনি নিজে আইন মানবেন, পথচারী হিসেবে সচেতন থাকবেন এবং চালক হিসেবে দায়িত্বশীল হবেন। নিরাপদ সড়ক কেবল সরকারের একার দায়িত্ব নয়। যখন একজন সচেতন নাগরিক ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করে, একজন চালক গতিসীমা মেনে চলে, একজন ট্রাফিক পুলিশ পক্ষপাতহীনভাবে আইন প্রয়োগ করে—তখনই নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত হয়। সড়ক দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুহারকে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার বৈশ্বিক দর্শন ‘ভিশন জিরো’ (Vision Zero) আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত। সড়ককে যদি জীবনের জয়গানের পথ হিসেবে দেখতে চাই, তবে এই প্রতিজ্ঞা ও সম্মিলিত উদ্যোগের কোনো বিকল্প নেই। জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস সেই পথে হাঁটার জন্য প্রতিবছর আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়—পথ যেন না হয় শ্মশান, জীবনের জয়গানে হোক সড়ক মুখরিত। এই অঙ্গীকারেই আমাদের ভবিষ্যতের নিরাপত্তা নিহিত।

লেখকঃ জনসংযোগ কর্মকর্তা
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়।




গাংনীতে বাড়িভাড়া ও ভাতা সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবিতে শিক্ষকদের সমাবেশ

এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ২০% ও চিকিৎসা ভাতা ১,৫০০ টাকা এবং কর্মচারীদের ৭৫% উৎসব ভাতার প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবিতে গাংনীতে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গাংনী উপজেলা কলেজ শিক্ষক ও কর্মচারী সমিতির উদ্যোগে আজ মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে গাংনী উপজেলা পরিষদের সামনে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশের সভাপতিত্ব করেন উপজেলা কলেজ শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও গাংনী মহিলা ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক বেদারুল ইসলাম। সঞ্চালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক আবু সায়েম পল্টু।

সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন গাংনী উপজেলা শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের আহ্বায়ক ও গাংনী টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজের অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ স্বপন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ স্বপন বলেন, আমরা শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে থাকতে চাই। আগের শিক্ষা উপদেষ্টার সুপারিশ অনুযায়ী ২০% বাড়িভাড়া, ১,৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা এবং কর্মচারীদের ৭৫% উৎসব ভাতার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দাবি জানাই।

তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা কেউ না কেউ শিক্ষকের ছাত্র, অথচ শিক্ষকদের দাবির বিষয়ে ইতিবাচক কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। বরং অনেক সময় শিক্ষকদের প্রাপ্য সুবিধা আদায়ে বাঁধা সৃষ্টি করছেন যা শিক্ষক সমাজের জন্য লজ্জাজনক।

তিনি অনতিবিলম্বে শিক্ষকদের ন্যায্য দাবির পক্ষে প্রজ্ঞাপন জারির আহ্বান জানান এবং হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, শিক্ষকদের দাবির প্রতি উপযুক্ত সাড়া না পেলে ঢাকা কেন্দ্রীক বৃহত্তর আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করা হবে। শিক্ষকরা ক্লাসে ফিরতে চান, কিন্তু তাদের ন্যায্য দাবি মানা না হলে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের বিকল্প থাকবে না।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে অনেক শিক্ষক মাত্র ১২,৫০০ টাকা বেতন পান, যা অপ্রতুল ও অমানবিক। তাই ৫০০ টাকার বাড়িভাড়ার প্রজ্ঞাপন বাতিল করে ২০% বাড়িভাড়া, ১,৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা এবং কর্মচারীদের ৭৫% উৎসব ভাতার প্রজ্ঞাপন দ্রুত জারি করতে হবে।

প্রধান উপদেষ্টা শিক্ষক, শিক্ষা উপদেষ্টা শিক্ষক, পরিকল্পনা উপদেষ্টা শিক্ষক অথচ শিক্ষকদের ন্যায্য দাবিগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে না, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।

অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন তেরাইল ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জিনারুল ইসলাম, বামুন্দী নিশিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ সাজ্জাদুল ইসলাম স্বপন, গাংনী সিদ্দিকীয়া সিনিয়র আলিম মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মাওলানা শফিকুল ইসলাম, কলেজ শিক্ষক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মকলেচুর রহমান, সদস্য আমিরুল ইসলাম, কাজিপুর ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মিজানুর রহমান, গাংনী টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজের সহকারী অধ্যাপক কামরুজ্জামান, করমদি ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক আমজাদ হোসেন, তেরাইল ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক জাবলুন নবী, গাংনী মহিলা ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক দিলরুবা খাতুন, তেরাইল জোড়পুকুরিয়া ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মাহবুবুল হক এবং গাংনী পাইলট মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাষক হাতেম আলী।

এছাড়াও গাংনী মহিলা ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, কাজিপুর কলেজের সহকারী অধ্যাপক গোলাম কিবরিয়াসহ উপজেলার বিভিন্ন কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।




মেহেরপুরে নির্বাচনি দায়িত্বে দক্ষতা বৃদ্ধিতে পুলিশের প্রশিক্ষণ কর্মশালা

মেহেরপুরে নির্বাচনি দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে পুলিশের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য তিন দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধন করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) সকালে মেহেরপুর পুলিশ লাইন্সে আয়োজিত প্রশিক্ষণ কর্মশালার ৫ম ব্যাচের উদ্বোধন করেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনজুর আহমেদ সিদ্দিকী।

এই প্রশিক্ষণে জেলার বিভিন্ন ইউনিট থেকে কনস্টেবল থেকে পুলিশ পরিদর্শক পদমর্যাদার মোট ৫০ জন পুলিশ সদস্য অংশগ্রহণ করছেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মোহাম্মদ আতিকুল হকসহ প্রশিক্ষণ কর্মশালার প্রশিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী সদস্যদের নির্বাচনকালীন দায়িত্ব পালনের সময় পেশাগত দক্ষতা, দায়িত্ববোধ ও আচরণগত সক্ষমতা বৃদ্ধির উপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে জানানো হয়।




মেহেরপুরে সাপের কামড়ে শিশুর মৃত্যু

মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি ইউনিয়নের উত্তরপাড়া খোকসা গ্রামে সাপের কামড়ে আলিফ (৯) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। নিহত আলিফ স্থানীয় মানিকের ছেলে ও খোকসা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সোমবার (২০ অক্টোবর) দিবাগত রাত আনুমানিক ১২টার দিকে দাদার বাড়িতে অবস্থানকালে আলিফকে বিষাক্ত সাপ কামড় দেয়। বিষয়টি টের পেয়ে পরিবারের সদস্যরা প্রথমে স্থানীয় ওঝার মাধ্যমে ঝাড়ফুঁক করান। পরবর্তীতে অবস্থার অবনতি হলে দ্রুত তাকে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়।

সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। তবে রাজশাহী নেয়ার পথে আলিফের মৃত্যু হয়।

আলিফের অকাল মৃত্যুতে পরিবার ও এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।




এক দিনে ভৈরব কেড়ে নিল এক শিশু ও দুই যুবকের প্রাণ

এক দিনে মেহেরপুরের ভৈরব নদ কেড়ে নিল এক শিশু ও দুই যুবকের প্রাণ। মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার ভৈরব নদের রশিকপুর স্লুইসগেটে গোসল করতে নেমে পানিতে নিখোঁজ হওয়া দুই শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করেছে খুলনা থেকে আসা ডুবুরি দল।

গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে নদীর তলদেশ থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

উদ্ধার হওয়া দুই শিক্ষার্থী হলেন, সদর উপজেলার টেংরামারী গ্রামের আব্দুল হান্নানের ছেলে নিলয় হোসেন এবং সদর উপজেলার আমদহ গ্রামের মহির উদ্দীনের ছেলে কৌশিক। তাদের একজন কলেজ শিক্ষার্থী ও অপরজন মাদ্রাসা শিক্ষার্থী।

মুজিবনগর ফায়ার সার্ভিসের টিম লিডার সেলিম রেজা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এবং একই নদের পিরোজপুর এলাকা থেকে মাহবুব নামের ১০ বছর বয়সী আরেকজনের মরদেহ উদ্ধার করে স্থানীয়রা।

জানা গেছে, গতকাল সোমবার বেলা তিনটার দিকে নিখোঁজ দু’জনসহ তাদের আরও ছয় বন্ধু গোসল করতে নামে। হঠাৎ নিলয় ডুবে গেলে কৌশিক তাকে বাঁচাতে যায়, কিন্তু দুজনেই পানির নিচে তলিয়ে যায়।

পরে স্থানীয়দের দেওয়া খবর পেয়ে মুজিবনগর ফায়ার সার্ভিসের টিম লিডার সেলিম রেজার নেতৃত্বে একটি টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রাথমিকভাবে উদ্ধার অভিযান শুরু করে। তবে পর্যাপ্ত উদ্ধার সরঞ্জাম না থাকায় ফায়ার সার্ভিসের দল ব্যর্থ হয়।

পরে খুলনা ডুবুরি দলকে খবর দেওয়া হয়। তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে রাত নয়টার দিকে উদ্ধার কাজ শুরু করে। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে অভিযান চালিয়ে কৌশিক ও নিলয়ের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আইনি প্রক্রিয়া শেষে নিহত দুজনের মরদেহ নিজ নিজ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

মুজিবনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, সন্ধ্যার পর খুলনা ফায়ার সার্ভিসের বিশেষ রিসকিউ (ডুবুরি) দল উদ্ধার কাজ শুরু করে। প্রায় দেড় ঘন্টা পর প্রথমে তানভির ও পরে কৌশিকের মরদেহ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।

স্থানীয়রা জানান, মুজিবনগর উপজেলার রশিকপুর ও রতনপুর গ্রামের সংযোগস্থল এই স্লুইসগেটে পানির সৌন্দর্য দেখতে এসে গত কয়েক বছরে প্রায় আটজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

তাদের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অপরিকল্পিত গেট নির্মাণের কারণেই বারবার প্রাণহানি ঘটছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত টনক নড়েনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।

স্থানীয়রা আরও বলেন, নদীর ওপর পানি প্রবাহের স্লুইসগেট তৈরি করা হলেও মানুষের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।

ফলে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই সরু স্লুইসগেটের ওপর দিয়ে চলাচল করেন কয়েকটি গ্রামের মানুষ। অনেকেই পানির প্রবাহ দেখতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। বিগত কয়েক বছরে অন্তত আটজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানান তারা।

প্রতি বছরই এখানে মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্থানটির সুরক্ষায় কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ স্থানীয়দের।

এ বিষয়ে মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পলাশ মণ্ডল বলেন, ঘটনার পরপরই আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বিষয়টি জানিয়েছি। অচিরেই সুইসগেটের দুই পাশে সতর্কতামূলক বড় বড় সাইনবোর্ড স্থাপন করা হবে এবং কাউকে সেখানে গোসল করতে দেওয়া হবে না।

তিনি আরও বলেন, নিহত দুই শিক্ষার্থীর পরিবারকে এখন পর্যন্ত কোনো আর্থিক সহায়তা দেওয়ার পরিকল্পনা নেই, তবে ভবিষ্যতে সহায়তার বিষয়টি বিবেচনা করা হতে পারে।

অপরদিকে, মেহেরপুর সদর উপজেলার পিরোজপুরে ভৈরব নদের পানিতে ডুবে মাহাবুবুর রহমান (১০) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

গতকাল সোমবার বিকেলে ঘটনাটি ঘটে। নিহত মাহবুবুর রহমান পিরোজপুর গ্রামের জল্লাদের ছেলে। স্থানীয়রা জানান, বিকেলে মাহবুব তার কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে ভৈরব নদীর পানিতে নেমে তলিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা খোঁজাখুঁজির মাধ্যমে কিছুক্ষণ পর তার মরদেহ উদ্ধার করে।




ঝিনাইদহে সরিষার তেলে পোড়া মবিল মেশানোর ঘটনায় একজনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড

ঝিনাইদহে প্রসিদ্ধ সততা অয়েল মিলের সরিষার তেলে শত্রুতাবশত পোড়া মবিল মেশানোর ঘটনায় শহরের খন্দকার পাড়ার বাসিন্দা মৃত তোজাম বিশ্বাসের ছেলে ও নতুন হাটখোলার সোনালী তোতা অয়েল মিলের কর্মচারী আশরাফুল ইসলাম ওরফে আশরাফ মিস্ত্রিকে আজ যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছে ঝিনাইদহের একটি আদালত।

মামলার সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালের ১৬ ডিসেম্বর মধ্য রাতে ঝিনাইদহের হামদস্থ শেরে বাংলা অয়েল এন্ড রাইস মিলের মালিক আঃ মালেক ও কালীচরণপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমানের পরিকল্পনা ও প্রত্যক্ষ মদদে ব্যবসায়ী নওশের আলীকে ক্ষতিগ্রস্থ করার জন্য তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সততা অয়েল মিলসের ১২ ড্রাম সরিষার তেলের মধ্যে পোড়া মবিল মিশিয়ে দেই এই আসামী আশরাফ সহ আরো পাঁচজন। ঐ সময় ঘটনাটি সারা শহরে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। এ ঘটনায় বাদী হয়ে নওশের আলী ঝিনাইদহ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। যা পরবর্তীতে এজাহার হিসেবে (মামলা নম্বর এসটিসি-৮৩/১১) রেকর্ড হলে, মামলার আইও এসআই আজিজুর রহমান তদন্ত করে ৭জনকে আসামী করে অভিযোগ পত্র দেন। মামলা চলাকালীন সময়ে ২০২১ সালে হাফিজ চেয়ারম্যান মারা যান। ১৪ বছরের দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে আজ মামলার রায় প্রদান করেছেন ঝিনাইদহ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-১ এর বিচারক মোঃ মাহবুব আলম। রায়ে তিনি স্পেশাল পাওয়ার এ্যাক্ট-১৯৭৪ এর ২৫(গ) ১(ক) ধারায় দোষী সাবস্ত করে আসামী আশরাফ কে যাবজ্জীবন (১৪ বছর) কারাদন্ড দিয়েছেন।

মামলার বাদী মরহুম নওশের আলীর পুত্র সততা অয়েল মিলসের বর্তমান সত্বাধিকারী মিরাজ জামান রাজ জানান, রায়ে তিনি আংশিক সন্তুষ্ট। তবে মূল পরিকল্পনাকারী অর্থদাতা শেরে বাংলা অয়েল এন্ড রাইস মিলের মালিক আব্দুল মালেক সহ সহযোগী আসামীরা খালাস পেয়েছেন বলে তিনি হতাশা ব্যক্ত করেছেন। তিনি আরও জানিয়েছেন অন্যান্য আসামীদেরও ছাড় দেয়া হবেনা, তাদেরও শাস্তি নিশ্চিতের জন্য তিনি উচ্চ আদালতে আপীল করবেন।