ঝিনাইদহে জলাবদ্ধতায় বেড়েছে সাপের প্রাদুর্ভাব, সংকট এন্টিভেনমের

শ্রাবণের অতিবৃষ্টিতে ঝিনাইদহের ফসলি জমি ও খানা-খন্দ পানিতে ভরে যাওয়ায় সাপের কামড় নতুন এক আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জেলার ৬টি উপজেলার মধ্যে শৈলকুপা ও হরিণাকুণ্ডুতে প্রতিদিনই কয়েকজন করে সাপে কাটা রোগী আসছে হাসপাতালে। অসচেতনতার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই রোগীকে হাসপাতালে না নিয়ে ওঝাঁর কাছে নিয়ে যাচ্ছেন। এতে করে সময় মতো এন্টিভেনম প্রয়োগ করতে না পারায় রোগীর মৃত্যু ঘটছে। গত দুই সপ্তাহে শৈলকুপায় রেকর্ড সংখ্যক সাপে কাটা রোগী হাসপাতালে এসেছে। তবে সরকারিভাবে এন্টিভেনম দেওয়া বন্ধ করায় দরিদ্র রোগীরা ওঝাঁর দিকেই ঝুকছেন বলেও মনে করছেন অনেকেই।

গত বুধবার কোটচাঁদপুর উপজেলার বলুহর মাঠপাড়ার মাহতাব উদ্দিনের স্ত্রী নাসিমা বেগম (৪৫) সাপে কেটে মার গেছে। গত কাল শৈলকুপা উপজেহলার গাংকুল গ্রামের ঘুঘু বিশ্বাসের ছেলে তোয়াজ আলীকে সাপে কামড় দিলে দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে ডাক্তারের নিবিড় চিকিৎসায় এন্টিভেনমের মাধ্যমে তাকে সুস্থ করে তোলে। যদি সময় মত তা না পাওয়া যেত তাহলে রোগীর অবস্থা খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা ছিল এ ছাড়া গত ১২ জুলাই শৈলকুপা উপজেলার ব্রহ্মপুর গ্রামে অপু বিশ্বাস নামে এইচএসসি শিক্ষার্থীর সাপে কেটে মৃত্যু হয়। ওঝার কাছে নিয়ে সময় ক্ষেপন করা ও হাসপাতালে দেরিতে আসার কারণেই এ রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

জানাগেছে, জেলা সদর হাসপাতাল ও শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সামান্য পরিমাণ এন্টিভেনমের মজুদ থাকলেও বাকি গুলোতে নেই। সাপা কাটা রোগী আসলে তাদের নিজ খরচে কিনে এন্টিভেনম প্রয়োগ করতে হচ্ছে।

গত ১৯ জুলাই শৈলকুপা উপজেলার আবাইপুর ইউনিয়নের কৃপালপুর গ্রামের এক নারীকে সাপে কামড়ালে তিনি সাপ ধরে নিয়েই হাসপাতালে যান চিকিৎসা নিতে। শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ বলছেন প্রতিদিনই সাপে কাটা রোগী আসছে।

ভোক্তভোগী একজন বলেন, এন্টিভেনমের যে দাম তাতে করে দরিদ্র রোগীদের পক্ষে কেনা অনেক কষ্টসাধ্য বেপার। এমনিতেই মানুষকে সাপে কামড়ালে হাসপাতালে নিয়ে না এসে ওঝাঁর কাছে নিয়ে যাওয়া আটকানো যাচ্ছে না। তার পরে এই দামের কারণে মানুষ নিরুৎসাহিত হবে। সরকারিভাবে প্রত্যেকটা হাসপাতালে এন্টিভেনমের ব্যবস্থা রাখা উচিৎ বলে তিনি মনে করেন।

শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ রাশেদ আল মামুন জানান, শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন দুএকজন করে সাপে কাটা রোগী আসছে। অনেকেই এন্টিভেনমের খরচ বহন করতে পারে না। হাসপাতালে এটর্নি জেনারেল মোঃ আসাদুজ্জামানের নিজ উদ্যোগে দেওয়া এন্টিভেনমের এখনো ৭০ ভায়েল রয়েছে যা সাত জনের শরীরে দেওয়া যাবে। চারিদিকে পানিতে ডুবে যাওয়ার কারণে মানুষের বাসাবাড়িতে সাপ উঠে পড়ছে। যেকারণে সাপে কাটা রোগী আসছে বেশি। বাসাবাড়িতে কার্বলিক এসিড প্রয়োগের পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক।

হরিণাকুুণ্ডু উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ আলমগীর হোসেন বলেন, মাঝে মাঝেই এখানে সাপে কাটা রোগী আসছে আমরা এন্টিভেনম প্রয়োজন হলে ব্যবহার করছি এখনো ১০ভায়েল মজুত আছে এবং চাহিদা দিয়েছি শীঘ্রই কিছু পাব বলে আশা করছি। গত জুলাই মাসে ৬জনকে এন্টিভেনম দিয়েছি।

ঝিনাইদহ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সরকারিভাবে হাসপাতাল গুলোতে এন্টিভেনম দেওয়ার যে প্রজেক্ট ছিল সেটা গত অর্থবছর থেকে বন্ধ হয়ে গেছে। গত জুন মাসে আমাদের ৩০ ভায়েল এন্টিভেমন দিয়েছিল। প্রতিদিনই হাসপাতালে সাপে কাটা রোগী আসে। ৩০ ভায়েল ৩ জনকে দেওয়া যায়। আমরা হাসপাতালের নিজস্ব তহবিল থেকে ৪০ ভায়েল আরও কিনেছিলাম তা অনেক আগেই শেষ হয়েগেছে। সরকারের নির্দেশনা আছে আমরা সর্বোচ্চ ৫০ ভায়েল পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে পারবো। এন্টিভেনমের ১০ ভায়েলের দাম ১২৬০০ টাকা থেকে শুরু করে ১৫ হাজার পর্যন্ত। সরকার না দিলে আমাদের পক্ষ থেকে কিনে রোগীদের সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।

গত দুই মাসের তথ্য নিয়ে জানা যায়, শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গত জুন মাসে সাপে কাটা রোগী এসেছে ২২জন এবং জুলাইমাসে এসেছে ৩৩ জন । এছাড়া হরিণাকুণ্ডু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এই রোগীর সংখ্যা ছিল ১২ এবং জুলাই মাসে ছিল ১১জন এর মধ্যে হরিণাকুণ্ডুতে একজন আনার আগেই মৃত্যু বরণ করে।




মেহেরপুরের রাইপুর কবরস্থান পরিষ্কার ও বৃক্ষরোপণ করলেন কামরুল হাসান

মেহেরপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট কামরুল হাসান তাঁর নিজ গ্রাম রাইপুর কবরস্থানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করেছেন।

আজ শনিবার সকাল ১০টার দিকে তিনি স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে কবরস্থান এলাকায় প্রায় ২০০টি বৃক্ষরোপণ করেন। কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন প্রজাতির ফলদ ও বনজ গাছ রোপণ করা হয়। এসময় কবরস্থানের আশপাশের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন করা হয় এবং আগাছা পরিষ্কার করা হয়।

বক্তব্যে অ্যাডভোকেট কামরুল হাসান বলেন, “মর্যাদাপূর্ণ এই পবিত্র স্থানকে পরিবেশবান্ধব ও সবুজ রাখার জন্য আমাদের সকলেরই এগিয়ে আসা উচিত। ভবিষ্যতেও এ ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।”

স্থানীয় বাসিন্দারা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং কবরস্থানের পরিবেশ রক্ষায় এ ধরনের আরও উদ্যোগের আহ্বান জানান।




মেহেরপুর সদর উপজেলা হাজী সমিতির সংবর্ধনা ও বার্ষিক সম্মেলন

মেহেরপুর সদর উপজেলা হাজী সমিতির উদ্যোগে নতুন ও পুরাতন হাজীদের সংবর্ধনা ও বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার দুপুরে মেহেরপুর হোটেল বাজার জামে মসজিদে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে হাজী সমিতির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মেহেরপুর সদর উপজেলা হাজী সমিতির সভাপতি হাজী নুর হোসেন আঙ্গুর। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হাজী আক্তার হোসেন রিন্টু। সঞ্চালনা করেন হাজী আক্কাস আলী।

প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন মেহেরপুর জামিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার পরিচালক মুফতি হাফিজুর রহমান। অন্যান্য বক্তাদের মধ্যে ছিলেন ডা. আব্দুস সালাম, হাজী নুর রহমান, হাজী কুতুব উদ্দিন প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে হাজীদের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা জানিয়ে দোয়া এবং আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।




মেহেরপুর মিফতাহুল কুরআন মাদ্রাসার দুই হাফেজকে পাগড়ি প্রদান

মেহেরপুরের মিফতাহুল কুরআন মাদ্রাসায় দুই হাফেজকে আনুষ্ঠানিকভাবে পাগড়ি প্রদান করেছেন দুই মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। শনিবার সকালে মাদ্রাসা মিলনায়তনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক, ইমাম, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণ।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মাদ্রাসার পরিচালক হাফেজ মাওলানা মোঃ শাহ জালাল। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মেহেরপুর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সিদ্দিকুর রহমান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন পৌর জামে মসজিদের ইমাম শাজাহান আলী।

এছাড়াও বক্তব্য রাখেন গড় জামে মসজিদের সাবেক ইমাম মোঃ আব্দুল হান্নান, আবুল কাসেম, রুহুল আমীন, হাফেজ মোঃ আব্দুল হালিম এবং হাফেজ রাকাত খন্দকার রত্ন।

অনুষ্ঠানে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত ও গজল পরিবেশন করেন শিক্ষার্থী আরাফাত হোসেন, বায়েজিত হোসেন, আরিফ, খাদিজাতুল কোবরা, ফাইম আবরার তৈয়ব, সাদিয়া সুলতানা, ফাইম ফয়সাল ক্বারী ও কাওসার খান।

অনুষ্ঠানের দ্বার প্রান্তে, হাফেজ মোঃ আব্দুল হালিম ও হাফেজ রাকাত খন্দকার রত্নকে আনুষ্ঠানিকভাবে পাগড়ি প্রদান করা হয়। এরপর দেশ ও মুসলিম জাতির শান্তি কামনায় দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।




মা বলে ডাকো

“চুপচাপ থেকে গেলে সব শব্দ হারিয়ে যায় না, কিছু শব্দ জন্ম নেয় নীরবতায়।” মুজিবনগর উপজেলার একটি ছোট শহরের সরকারি এতিমখানা। ২০০৫ খ্রিস্টাব্দের ১১ মে মা দিবসের সপ্তাহখানেক আগের দিন। ওইদিনের তপ্ত দুপুর। রোদে পুড়ছে মাঠের মাটি, গাছের পাতাও যেন ক্লান্ত। অথচ সেই খরতাপের ভেতর, একটি ছোট্ট ছেলে রাহি মুজিবনগর আম্রকাননের ছায়ায় বসে ছিল, নিঃশব্দ, নিরুত্তাপ।
তার নাম রাহি। বয়স আট, গায়ের রঙ শ্যামলা, চোখ দুটি কেমন যেন অন্যমনস্ক, যেন বহু দূরে কোনো কিছুর প্রতীক্ষা করছে।

রাহি জন্ম থেকেই এতিম। মা-বাবার মুখ কখনো দেখেনি। তার জন্য ‘মা’ শব্দটা স্কুলের বইয়ের ছড়া মাত্র।

“মা গো মা, তুমি কোথায়?” এই লাইনটি সে খুব সাবধানে লেখে, কিন্তু মনেও কি রাখে?

এতিমখানার অন্য শিশুরা মাঝে মাঝে ‘মা’ বলে কল্পনায় ডাকে- “মা যদি থাকতো, তাহলে”- কিন্তু রাহি কখনো এই খেলা খেলেনি। সে চুপ করে থাকে, যেন ‘মা’ শব্দটা তার কানে গিয়েই হারিয়ে যায়।

মা দিবস আসছে। শহরের স্কুলগুলোয় শিশুদের মায়েদের জন্য চিঠি লেখা, ছবি আঁকা, কার্ড বানানোর প্রতিযোগিতা চলছে। এতিমখানাতেও সরকারি চিঠি এসেছে- “মা দিবস উপলক্ষে শিশুদের মধ্যে ছবি ও কবিতা পাঠানোর আয়োজন”।
শিক্ষিকা আপা বললেন,- “তোমরাও লিখবে, আঁকবে। মা না থাকলেও মা কেমন হলে ভালো লাগতো- এটা ভাবো।”
সবাই নিজ নিজ বাড়ি থেকে লিখে নিয়ে এসেছে। কেউ লিখেছে মায়ের হাতের রান্না, কেউ ি বকাবকি, কেউ মায়ের আঁচল, কেউ বা লিখেছে সৎ মায়ের যন্ত্রণার কথা…

রাহি এক কোণে বসে আছে। সে কিছুই লেখেনি। লেখার খাতাটা ফাঁকাই রেখে দেয়। লিখতে গিয়ে কলমের কালিও শুকিয়ে যায়, সে এক লাইনও লেখেনি।

পরদিন সকাল। মা দিবস।

এতিমখানার গেটে একজন মহিলা এসে দাঁড়ালেন। নাম সায়মা। পরনে হালকা সাদা শাড়ি, চোখে ক্লান্তি, হাতে একটা চিঠি। বয়স ত্রিশের কাছাকাছি।

তিনি বললেন- “আমি… একজন শিশুকে খুঁজছি। যার নাম রাহি। সবার চোখ বড় বড় হয়ে গেল।
শিক্ষিকা জিজ্ঞেস করলেন, “আপনি কে তার? ”সায়মা ধীরে বললেন- “হয়তো কিছুই না। কিন্তু আমি চাই, আজ তাকে ‘মা দিবস’ উপলক্ষে একটি কার্ড দিই। তার যদি ইচ্ছে হয়, আমাকে একবার ‘মা’ বলে ডাকতে পারে।”
কথাটা শুনে কারো মুখে কোনো শব্দ এলো না।
রাহিকে ডাকা হলো। ছেলেটা এগিয়ে আসলো চুপচাপ। সায়মা মৃদু হেসে তার হাতে একটি কার্ড দিলেন। কার্ডে লেখা:
“যদি কখনো মা ডাকতে ইচ্ছে করে, আমি দাঁড়িয়ে থাকব গেটে। আমি জানি, তুমি হয়তো আমার না, কিন্তু আমি তো তোমার হতেই পারি।”
রাহির চোখে জল এল না। সে কার্ডটা দেখে বলল না কিছু। শুধু একটু তাকিয়ে রইল মহিলার দিকে। তারপর আস্তে করে বলল এক শব্দ-
“মা”
একটি মাত্র শব্দ। এতিমখানার সেই সকাল এক মুহূর্তে যেন থমকে গেল। সায়মা ছেলেটিকে বুকে জড়িয়ে নিলেন। যেন পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় তখন রাহির জন্য সেই বুকটাই।
মা দিবস মানে শুধুই ফুল বা কার্ড নয়। মা দিবস এমন এক অনুভূতির নাম, যা জন্মসূত্রে না হলেও ভালোবাসা দিয়ে গড়া যায়। ‘মা’ এই শব্দটির কোনো সংজ্ঞা নেই। কখনো তিনি গর্ভধারিণী, কখনো আশ্রয়দাত্রী, কখনো কেবল একটি অচেনা হাত, যেটা আপন করে নেয় নিঃশর্তে।

এই গল্পটি সেইসব মায়েদের জন্য- যারা সন্তান জন্ম না দিয়েও ‘মা’ হয়ে উঠেন। আর তাদের জন্যও, যারা কখনো কাউকে ‘মা’ বলে ডাকেনি, কিন্তু একদিন ডেকেছে ভয় পেরিয়ে, বুকের গভীর থেকে।
লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক




স্ক্রীন এডিকশন বিপন্ন প্রজন্ম

আজকাল শীশুদের দিন রাতের অধিকাংশ সময়কাটে ল্যাপটপ, স্মার্টফোন, ট্যাব বা অন্যান্য ইন্টারনেট কানেকটেড আধুনিক ডিভাইসের সাথে। বর্তমান সময়কে বলা হচ্ছে ডিজিটাল সামাজিক সংকটের যুগ। এই সমস্ত ডিভাইসের কারণেই সমাজে শীশুদের নিরাপত্তার বিষয়টিও ক্রমেই ঝুকিপূর্ণ আকার ধারণ করছে। একক পরিবার, চাকুরীজিবী বাবা-মায়ের সময়ের অভাব ছাড়াও স্কুল সময়ের বাইরে সন্তানদের একাকিত্ব ঘোচানোর জন্য অভিভাবকরা অনেকটা নিরুপায় হয়েই সন্তানের হাতে স্মার্ট ডিভাইসগুলো তুলে দেন। অনেক বাবা মা বা কাজের বুয়া ছোট সময় থেকেই বা”চাদের জিদ থেকে দুরে সরানোর জন্য পশুপাখি, কার্টুন ইত্যাদি দেখিয়ে খাওয়ানো বা ঘুমাতে অভ্য¯’ করেন। এখান থেকেই শুরুহয় আসক্তি। এর পরথেকেই শীশুদের যাপিত জীবনের দৃশ্যপট দ্রুতই বদলাতে থাকে। স্কুলের অবসরে,বাবা মার সাথে বেড়ানো বা ঘোরার সময়,যানবাহনে বসেও আজকাল চোখে পড়ে দুনিয়া ভুলে শীশুরা আপনমনে স্মার্টফোনে চোখ রেখে বসে আছে। এখন বা”চাদের প্রধান অনুসঙ্গ বা সাথী হয়ে গিয়েছে আপনজন নই,তার হাতের স্মার্টফোনটা।

একটু বড় হলে এরা গেম খেলে, টিক টক সহ অনেক অনাকাঙ্খীত সাইটে ঘােরাফেরা শুরু করে। আস্তে আস্তে তারা ডুবেযায় অবাস্তব জগতের অতল গহীনে, এখান থেকে তাদের আর বাস্তব জগতে ফেরানো সম্ভব হয় না। ভার্চুয়াল জগতের মোহে এরা হয়ে ওঠে ভিনজগত-সভ্যতার কোন অজানা মানুষ। হারিয়ে ফেলে মানুষ্য সমাজের স্বভাবিক রীতিনিতী, আচার-আচরণ বা মানবিকতাবোধ। এরা অনেকটাই মূল্যবোধহীন, দায়বদ্ধহীন যন্ত্র মানবে পরিনত হয়। একাকী থাকা, কারো সাথে না মেশা। কোন সামাজকি বা পারিবারিক অনুষ্ঠানে যোগ না দেওয়া, মানুষকে এড়িয়ে চলা এদের নিয়মিত অভ্যাসে পরিনত হয়। শুধু তাই নয়, বয়সের সাথে সাথে এরা মাঠেগিয়ে লাইভ অনুষ্ঠান বা খেল-ধুলাা দেখে না, ঘরেবসে স্ক্রীনে দেখতে ভালবাসে। ঠিকমত ঘুম, খাওয়া দাওয়া না করা ,অগোছালো থাকা এদের জীবনের অন্যতম বৈশিষ্ঠ হয়ে উঠে। অল্পেতে এদের মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকে, সামান্য কারণে অতিরিক্ত প্রতিক্রীয়া দেখানো বা কখনো আপন পর নাদেখে গায়ে হাত তোলার মত অপকর্ম করতেও এরা দ্বিধা করে না।

এ ধরণের জেনারেশন নিয়ে আজকাল অভিভাবকরা যেমন দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত তেমনি সমাজও বিব্রত বটে। উদ্বেগের বিষয় হল এমন আসক্তির ফলে বেড়ে ওঠা প্রজন্মদিয়ে একটি ভবিষ্যত রাষ্ঠ্রীয় কাঠামো ঠিক রাখোর জন্য যে পরিমানে কাঙ্খিত তরুণ প্রজন্ম প্রয়োজন সেই মানের শাররীক গঠন, মেধা ও মননশীল জেনারেশন পাওয়া কি সম্ভব? এটা এক কঠিন প্রশ্ন। এমন জেনারেশন বিধংশী কর্ম কান্ডে পুরো জাতি আজ চিন্তিত।

বর্তমান সময়ে শহুরে ও শিক্ষিত পরিবারের দিকে খেয়াল করলে দেখা যায় তাদেও সন্তান সংখা তুলনামুলক কম। বড়জোর একটা সন্তানই বেশি,বড়জোর দুটো। আজকাল প্রবাসি ও মধ্যেবিত্ত পরিবারের আয় বৃদ্ধির সাথে সাথে যোগাযোগের জন্য একটা স্মার্টফোন পরিবারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হিসেবে দেখা হয়। অনেকে আবার বা”চাদের সখ মেটানোর জন্য তাদের হাতেও তুলে দেন একাধিক স্মার্ট ডিভাইস। আবসরে মায়েরাও চ্যাট করেন,মার্কেটে ঘোরেন, অনলাইনে কেনাকাটা করেন। রান্নার রেসিপি দেখেন কিছু না হলে টিকটক নিয়ে মগ্ন থাকেন। বা”চাদেও জন্য দেওয়ার মত সময় থাকে না। কারণে অকারণে বা”চাদের জন্য অনলাইনে খাবার অর্ডার করেন,যার অধিাকাংশই ফার্স্টফুড। শাররীক শ্রমছাড়া খাবার গ্রহণই সন্তানদের ওজন বাড়ার জন্য যথেষ্ঠ। বর্তমানে দেশের শীশুদের ওবিসিটি বাড়ার এটাও একটা অন্যতম কারণ। শিশুদেও মুটিয়ে যাওয়া ও কর্মে অনিহার প্রবনতা একসুত্রেগাথা। এই অব¯’ার নিরসনে অব¯’া সম্পন্ন পরিবারের বাবা-মার মধ্যে সঠিক মাত্রায় সন্তানদের শাররীক শ্রমে উৎসাহিত করারমত আগ্রহটুকুও তেমন দেখো যায় না।

অধীকাংশ আভিভাবক বলে থাকেন যে, বা”চাদের হাটাচলা, খাওয়া ঘুমানো, এমন কি পড়ার সময়েও এক প্রকার বাধ্য হয়েই মোবাইল দিতে হয়। নিষেধ করলেও কাজ হয়না। বরং জিদের বসে খাওয়া বন্ধ করে বা জিনিষপত্র ভাংচুর করে। এ নিয়ে আত্মহননের মত ঘটনাও রিরল না। একটু বড়দের আচরণীক দিকটা হয় ভিন্ন। চুপচাপ ভাল মানুষের অন্তরালে নির্জন ¯’ান বা কক্ষেই এদের একমাত্র ভ’বণ। এরা ফেসবুক,ইউটিউব,টিকটকের গন্ডিপেরিয়ে চলে যায় গেম সাইেটে, নিষিদ্ধ পেজে। টাকার বিনিময়ে খেলে জুয়া, সারারাত ধরে চলে নিষিদ্ধ চ্যাট। আস্তে আস্তে শুরু হয় অসামাজিক সম্পর্ক ¯’াপন, মেয়েদেও প্রলুব্ধ করা,সমপ্রেমাসক্তি বা ভাগিয়ে নেওয়া, প্রতারণা সহ এক সময় সব ধরণের নোংরামিতে জড়িয়ে পড়ে। কেউ হয়ে ওঠে গ্যাং লিডার। যাকে আর কখনোই স্বাভাবিক জগতে ফেরানো সম্ভব হয় না।

মার্কিন ক্লিনিক্যাল সাইকোলিস্টরা এই উপসর্গকে ডিজিটাল মাদক হিসেবে আক্ষায়ীত করে ’২০ এর দশকেই সরকারকে সতর্ক করে ছিলেন। এর পর থেকেই উন্নত বিশে^ মোটামুঠি বিষয় গুলো বা”চাদের নিয়ন্ত্রনে রাখার জন্য স্কুলের নিয়ম ও কারিকুলামে অনে ব্যাপক পরির্বতন। যার সাথে অভিভাবক বৃন্দও জড়িত থাকেন বাধ্যতামুলক ভাবে। কিš‘ দুঃজনক হলেও আমাদের দেশে বিষয়গুলো একদম ল্যাজে গোবরে অব¯’া। এর ক্ষতিকর দিকগুলো আমরা দেখছি, এবং ভয়াবহতা উপলব্ধি করছি কিš‘ এখনও কোন করণীয় নির্দ্ধারণ করতে পারছি না এটাই বাস্তবতা। এটা নিয়ে ব্যাপক কোন গবেষণার বা কারো কোন মাথাব্যাথার কথাও কখনো শোনা যায় না।

ভারতের চার্টার বিশ^বিদ্যালয়ের এক গবেষণা থেকে জানা যায়, স্ক্রীন আসক্তির জন্য বড়দের চোখের রেটিনা, কার্নিয়া সহ অন্যান্য অংশের যেমন ব্যাপক ক্ষতি হয়। শীশুদের ক্ষেত্রেও একই সমস্যার পাশাপশি ক্ষুধামন্দা,অতিরিক্তক্ষুধা,অনিদ্রা, বান্ধব হীনতা,আগ্রাসি মনোভাব ও আত্মবিশ^াসহীনতা প্রকট আকার ধারণ করে। এই বিষয়ের উপরে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল ফর ডিজিস কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেন্সসনের পক্ষ থেকে ১৯২২ সনে আমাদের দেশে একটি জরিপ পরিচালিত হয়েছিল। রিপোর্টে দেখা যায় বাংলাদেশের ৪-১৭ বয়সি ৬০ লক্ষ শীশু কিশোর শুধুমাত্র ডিজিটাল ডিভাইস আসক্তির কারণে শাররীক সমস্যা ছাড়াও নানাবিধ মানসিক জটিলতায় আেক্রান্ত। বর্তমানে এই সংখ্যা কোটি ছাড়িয়েছে বলে বিশেষজ্ঞগন মনে করেন। এই অব¯’াথেকে বেরিয়ে আসার সহজ কোন পথ দেশে এখনও পরিলক্ষিত হয় না। এদেশে এখনো মানুষের শিক্ষা, আর্থসামাজিক অব¯’া ও মানুষের জীবনজাপন প্রকৃয়ার মধ্যে রয়েছে বিরাট অসমঞ্জস্যতা ও অস”ছতা। এমন অসম সমাজে র্দূবৃত্যায়ন থাকে সহজাত। সরকারী সদি”ছা,সমাজ সচেতনা,কিছু কিছু ক্ষেত্রে কঠোর নিয়ন্ত্রন ও বিকল্প বের করতে পারলে এই অসহায় অব¯’া থেকে পরিত্রান পাওয়া অসম্ভব কিছু না। উন্নত বিশে^র দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই তাদের কঠোর নিয়ন্ত্রনের জন্য সমস্যাগুলো আমাদের মত এত প্রকট না।

সমাজ বিজ্ঞানিদের মতে দেশ ও জাতির সার্থেই সমস্যার মধ্যেথেকেই আমাদের যথার্ত সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। শীশুরা স্বভাবগত ভাবেই প্রকৃতি প্রেমিক হয়ে থাকে। প্রকৃতির মধ্যে বেড়াতে খেলেতে তারা পছন্দ করে। ফলে স্কুল কম্পউন্ডে প্রাকৃতিক পরিবেশ বজায় রাখা সহ শহর ও গ্রাম পর্যায়েও শিশুতোষ র্পাক ¯’াপন জরুরী। প্রতিদিন অন্তত ঘন্টাদুই শীশুদের নিয়ে ঘোরাঘুরি,খেলাধুলা করলে বা প্রকৃতির উপাদানের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলে ওরা মানসিক দিক থেকে পজেটিভ চিন্তা করতে শেখে। এক ঘেয়েমি দূর করতে তাদের নিয়ে গ্রামেরবাড়ি,যাওয়া বোনভোজন,সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিলেও বা”চারা প্রচুর উৎফুল্ল হওয়ার সাথে সাথে সামাজিক হয়ে ওঠে। সম্ভব ও সমর্থ অনুযায়ী একটু দূরে কোন পর্যটন ¯’ান বা ভ্রমন কেন্দ্রে ঘুরেআসা যায়। আবার পাঠ অভ্যাস বাড়ালে নিজেদের মোবাইল আসক্তি অনেকটাই কমে আসে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। শিশুদের মানসিক বিকামের জন্য বাবা মাকেই র্সবাগ্রে এগিয়ে আসতে হবে হতে হবে সচেতন। বাবা মাকেও পাঠ অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। দেশবিদেশের গল্প- ছড়া শোনাতে হবে এবং ধীরে হলেও বই এর প্রতি আগ্রহী করে তুলতে হবে। শীশুরা সব সময় রঙিন জগৎ ও প্রকৃতির সব উপকরণকেই নিজের মতকরে দেখে,কল্পনাকরে তাই চেস্টা করতে হবে ঘরের একটা কর্ণার শিশুতোষ সো-পিস, বই ও আসবাবদিয়ে যেন সাজানো থাকে সেদিকটা খেয়াল রাখেেত হবে। আমরা হয়ত আমাদের সময়ের সাদাকালো যুগের মা,দাদি নানির আচঁলের তলায় শুয়ে ঠাকুমার ঝুলি বা শিব্রাম চক্রবর্তী বা”চাদের শোনাতে পারব না বা পারব না পুতুল খেলতে, বাতাবি লেবুর বল দিয়ে ঝুম বৃস্টির মধ্যে বল খেলতে অথবা নদীরপাড়ে কাদা মাটিতে ওয়াটার ডাইভ দিতে। কিš‘ সামর্থের মধ্যে বা”চাদের উপরে রাগ বা বিরক্ত না হয়ে তাদেও ই”ছাকে প্রধান্য দিয়ে কিছুটা সময়তো দিতে পারি? সন্তানদের সাথে ধর্মীয়, নৈতিক ও সামাজিক আচরণ, অভিবাদন, আপ্যায়ন সব সময় ঠিক রাখতে হবে এবং বিষয়গুলো তাদের মেনে চলায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে। ছোট থেকে শীশুদের যেমন ধর্মীয় কাজে যুক্ত করতে হবে তেমনি সামাজকি ও সে”ছাসেবি সংগঠনের সাথে তাদের যুক্ত হওয়ার সুযোগ করেদিতে হবে। লেখাপড়ার পাশাপাশি স্কুলের পরিবেশ ও আচরণ হতে হবে শীশুবান্ধব ও সামাজিক পরিবেশমন্ডিত এমনটাই সবার প্রত্যাশা। এভাবেই একদিন শীশুদের মাঝে পরপকার ও আত্মমর্যাদাবোধ ফিরে আসবে।

সমজবিজ্ঞানিরা মনে করেন র্স্মাটডিভাইস বন্ধ করা সম্ভব না। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, খেলার মাঠে, পড়া ও বেড়ানোর সময় র্স্মাট ডিভাইস নিয়ন্ত্রনে সরকার,শিক্ষক,অভিভাবক ও সচেতনদের আন্তরিকতা ও সদি”ছাই আমাদের আগামী প্রজন্মকে সঠিক পথে চলতে অনেকটাই সহায়ক ভ’মিকা রাখবে।

লেখক: অবঃ শিক্ষক গাংনী ডিগ্রি কলেজ।




আলমডাঙ্গায় মাদকাসক্ত চোরচক্রের উৎপাতে জনজীবনে অস্বস্তি, বেড়েছে চুরি

আলমডাঙ্গায় সপ্তাহজুড়ে বেড়েছে চোরচক্রের তৎপরতা, একাধিক দোকান-বসতবাড়িতে চুরি হয়েছে। আলমডাঙ্গা থানা সংলগ্ন হাইরোড এলাকার সিদ্দিকের মুদি দোকানে রাতের আঁধারে চুরির ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার দিবাগত গভীর রাতে দোকানের পেছনের দরজার তালা ভেঙে চোরেরা ভেতরে প্রবেশ করে নগদ অর্থসহ বিভিন্ন মূল্যবান মালামাল চুরি করে নিয়ে যায়।

জানা গেছে, দোকানের ক্যাশবাক্সে থাকা নগদ ১০ হাজার টাকা, দামি ব্র্যান্ডের সিগারেট, মোবাইল ফোন ও নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু মুদি পণ্য চুরি হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ওই দোকানটি পরিচালনা করে আসছিলেন মৃত ইচাহক আলির ছেলে সিদ্দিক, যিনি রাতভর দোকান খোলা রাখায় স্থানীয়দের কাছে পরিচিত মুখ।

একই রাতে পৌর শহরের মাদ্রাসা পাড়ার বাসিন্দা রমেশ কর্মকারের বাড়িতেও চুরি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি, সিদ্দিকের দোকানের পাশেই থাকা ‘মিডিয়া ওয়াল্ড’ মোবাইল ফোনের দোকানে টিন কেটে প্রবেশের চেষ্টার আলামত পাওয়া গেছে, তবে সেখানে চুরি সফল হয়নি।

এদিকে, সম্প্রতি পৌর এলাকার গোবিন্দপুর গ্রামের সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি সফিকুল ইসলাম ও তার ভাই এনামুল হকের বসতবাড়িতেও চুরির ঘটনা ঘটে। প্রায় দুই মাস আগে একই এলাকায় কাজলের দোকান থেকেও দেড় লাখ টাকার মালামাল চুরি হয়েছিল।
স্থানীয় সচেতন মহলের মতে, শহর ও গ্রামাঞ্চলে মাদকদ্রব্যের ভয়াবহ বিস্তার এবং মাদকাসক্ত যুবকদের দৌরাত্ম্যে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে যাচ্ছে। তারা বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

চোর শনাক্ত ও গ্রেফতারে এখনো পর‌্যন্ত কোনো অগ্রগতি হয়নি বলেও জানা গেছে। ঘটনাগুলোকে ঘিরে এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।




চুয়াডাঙ্গায় সাপ্তাহিক সাহিত্য আসর ‘পদধ্বনি’ অনুষ্ঠিত

চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদের নিয়মিত সাপ্তাহিক সাহিত্য আসর ‘পদধ্বনি’-এর ১৫৮১তম পর্ব অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকেল চারটায় চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদের শহীদ আলাউল হলে এর আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন পরিষদের সভাপতি ইকবাল আতাহার তাজ। আসরের শুরুতে সাহিত্য পরিষদের তরুন লেখক নুরুজ্জামান নুরুর আকর্ষিক মৃত্যুতে তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয়। একই সাথে পরিষদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হামিদুল হক মুন্সির সুস্থতা কামনা করে দোয়া করা হয়।

সাহিত্য পরিষদের অর্থ সম্পাদক মিম্মা সুলতানা মিতার সঞ্চালনায় স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন আব্বাস উদ্দীন, লতিফা রহমান বনলতা, শহিদুল ইসলাম, হারুন-অর-রশিদ, চিশতী এম এ হামিদ, গুরু কাজল মল্লিক, মর্জিনা খাতুন, হুমায়ুন কবীর, আবু নাসিফ খলিল, গোলাম কবীর মুকুল ও আসমানী খাতুন। নাটক পাঠ করেন মো. আলাউদ্দীন। রবীন্দ্রনাথের বর্ষা কবিতা আবৃত্তি করেন সরদার আলী হোসেন।

পঠিত লেখাগুলো নিয়ে আলোচনা করেন ইকবাল আতাহার তাজ, হুমায়ুন কবীর, আবু নাসিফ খলিল ও কাজল মাহমুদ। আসরে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান এমপি। সভাপতির সমাপনী বক্তব্যের মধ্যদিয়ে ‘পদধ্বনি’ আসরের ১৫৮১তম পর্বের সমাপ্তি ঘটে।




মেহেরপুর কলেজ মোড়ের জমি নিয়ে উত্তেজনা

মেহেরপুর সরকারি কলেজ মোড়ে একটি জমি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে প্রশাসনিক মহল পর্যন্ত চলছে উত্তেজনা । জমিটি একক ব্যক্তি মালিকের পৈতৃক সম্পত্তি, নাকি এটি পৌরসভার -এই প্রশ্নে বিভক্ত হয়ে পড়েছে শহরের সাধারণ মানুষ, রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও প্রশাসন। এ ইস্যুকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাল্টাপাল্টি স্ট্যাটাস, খোলা চিঠি, এবং শেষ পর্যন্ত অনশনের ঘোষণায় পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে উঠেছে।

গত ২১ জুলাই ২০২৫, মেহেরপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র মোতাচ্ছিম বিল্লাহ মতু তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাস দেন, যার শিরোনাম ছিল-“পৌর সম্পত্তি রক্ষায় পৌরবাসীর প্রতি খোলা চিঠি”। সেখানে তিনি দাবি করেন, কলেজ মোড়ের পোস্ট অফিস ও তুলা ভবনের সামনের জায়গায় রাতারাতি বেআইনিভাবে কিছু দোকানঘর নির্মাণ করা হয়েছে, যা পৌরসভার মালিকানাধীন সম্পত্তি। তিনি অভিযোগ করেন, ০১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. মহাব্বত আলী জমিটি নিজের বলে দাবি করে আদালতে মামলা করলেও, তৎকালীন জেলা জজ জমিটি পৌরসভার বলে রায় দিয়েছিলেন। মামলার আপিল এখনো বিচারাধীন।

সাবেক মেয়র অভিযোগ করেন, “আদালতের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কোনো ব্যক্তি সেখানে নির্মাণ করতে পারে না। পৌরসম্পত্তি আত্মসাৎ করতে মহাব্বত আলী মিথ্যা দাবি করছেন এবং তার ঘনিষ্ঠতা কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় বেআইনিভাবে ঘর নির্মাণ করছেন।”

তিনি আরও লেখেন, “দশ দিনের মধ্যে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে আমরা পৌরবাসীকে সাথে নিয়ে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করবো। বর্তমান পৌর প্রশাসকের কাছে আমাদের প্রত্যাশা, তিনি যেন জনগণের স্বার্থে, পৌরসভার সম্মান রক্ষায় সাহসী ভূমিকা রাখেন।”

এদিকে, সাবেক মেয়রের স্ট্যাটাসের পরদিনই, জমির বর্তমান মালিক দাবিদার মো. মহাব্বত আলীর ছেলে ইয়াসিন আলী মারুফ তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ‘মারুফ উদয়’ থেকে একটি পাল্টা স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি সাবেক মেয়রের উদ্দেশে লিখেছেন, “আপনার মত একজন নামাজী, শিক্ষিত মানুষ থেকে এ ধরনের আচরণ আশানুরূপ নয়। আপনি যদি প্রমাণ দিতে চান, তা ফেসবুকে না দিয়ে আদালতেই দিন।”

তিনি আরও লেখেন, “জমিটি আমাদের পৈতৃক, যার সব দলিল, খতিয়ান, রেকর্ড ও খাজনার প্রমাণ আমাদের কাছে আছে। আপনি নিজেও জানেন, গনপূর্ত, পোষ্ট অফিস ও তুলা উন্নয়ন বোর্ডের জমি অধিগ্রহণ হয়েছে মূল জমির ভেতর থেকে, সামনের অংশটি কখনোই অধিগ্রহণ হয়নি।”

মারুফ তার পোস্টে সাবেক মেয়রের উদ্দেশে আরও অভিযোগ করেন, “আপনি আমাদের বিরুদ্ধে মব সৃষ্টি করতে চাচ্ছেন। এমনকি শোনা যাচ্ছে, আপনি বা আপনার অনুসারীরা আমাদের দোকান ভাঙতে পারেন। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।”

মহাব্বত আলী দাবি করে মেহেরপুর প্রতিদিনকে বলেন, তার দাদা আজহার শেখ ও পিতা আসাদুর রহমানের কাছ থেকে ১৯৬০ ও ৮০-র দশকে পর‌্যায়ক্রমে গণপূর্ত বিভাগ, পোস্ট অফিস ও তুলা উন্নয়ন বোর্ড জমি অধিগ্রহণ করে। তাতে রাস্তার সামনের অংশ বাদ যায়, যা তাদের নামে থেকে যায়। ২০০২ সালে আদালত তাদের পক্ষে রায় দেন। এছাড়া আমরা নিয়মিতভাবে জমির খাজনা পরিশোধ করে আসছি এবং জমিটি আমাদের দখলে রয়েছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, তৎকালীন সময়ে সাবেক মেয়র মোতাচ্ছিম বিল্লাহ মতু আমার কাছে ৫ শতক জমি চেয়েছিলেন। আমি বলেছিলাম এটা আমাদের মালিকানা জমি। জমি দেওয়ার প্রশ্নই আসেনা। পরবর্তীতে আমি ২০২২ সালে আমার ছেলে মারুফকে জমি দলিল করে দিই, যার দলিল নম্বর ২০৩৫/২২ এবং খতিয়ান ১৩২০৬।

মহাব্বত আলী আরও বলেন, তৎকালীন সময়ে সাবেক মেয়র জমিটি দখলে চেষ্টা করলে তাঁর বড় ভাই মো.শাফায়েত হোসেন ২০০৬ সালে মেহেরপুরের যুগ্ম জেলা জজ ১ম আদালতে মেহেরপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান ও সচিব বিবাদী করে জমিটি তাদের দাবী করে একটি মামলা দায়ের করেন। সেই মামলাটি এখনো বিচারাধীন রয়েছে। গত ৩১ জুলাই সংগ্রহ করা আদালতের একটি আদেশ স্লিপ থেকে জানা গেছে, মামলাটি বিচারাধীন এবং মেহেরপুর পৌরসভার বিপক্ষে নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রয়েছে।

এ বিষয়ে সহকারী ভূমি কর্মকর্তা ওহিদুর রহমান জানান, “মহাব্বত আলী বর্তমানে নিয়মিত খাজনা দিচ্ছেন এবং জমিটি তাদের নামে রয়েছে।”

মেহেরপুর পৌরসভার প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, “যেহেতু জমিটি নিয়ে আদালতে মামলা বিচারাধীন, বাদির পক্ষে আদালতের নিষেধাজ্ঞা আছে, সেহেতু আদালতের আদেশ অমান্য করার সুযোগ নেই।”




মেহেরপুরে ডিএনসির অভিযানে স্বামী-স্ত্রীসহ তিন মাদক ব্যবসায়ী আটক

মেহেরপুর সদর উপজেলার দক্ষিণ শালিকা গ্রামে অভিযান চালিয়ে ১৪০ বোতল ফেনসিডিলসহ স্বামী-স্ত্রীসহ তিন মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করেছে জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)।

আজ শুক্রবার দুপুরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পরিচালিত অভিযানে ওই তিনজনকে আটক করা হয়।

আটককৃতরা হলেন—সদর উপজেলার দক্ষিণ শালিকা গ্রামের গোলাম শেখের ছেলে হাফিজুর রহমান (৫০), তার স্ত্রী চায়না খাতুন (৪৫) এবং একই এলাকার ওজুদুল ঘটকের ছেলে চাঁদ আলী (৩৮)।

জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক বিদ্যুৎ বিহারী নাথ বলেন, ‘গোপন তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, হাফিজুর রহমান ও তার স্ত্রী চায়না খাতুন নিজ বাড়িতে বিপুল পরিমাণ ফেনসিডিল মজুত করে রেখেছেন। পাশাপাশি চাঁদ আলী কোমরে লুঙ্গির ভেতরে ফেনসিডিল লুকিয়ে বহন করছিলেন।’

পরে ডিএনসির একটি বিশেষ দল চায়না খাতুনের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে হাফিজুর ও তার স্ত্রীর কাছ থেকে ১৩০ বোতল এবং চাঁদ আলীর কাছ থেকে আরও ১০ বোতল—মোট ১৪০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করে।

তাদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। মামলার পর তাদের আদালতের মাধ্যমে মেহেরপুর জেলা কারাগারে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন ডিএনসির এই কর্মকর্তা।

জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, মাদকবিরোধী অভিযান আরও জোরদার ও ধারাবাহিকভাবে চলবে।