দেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করবে বিএনপি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মেহেরপুর-২ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আমজাদ হোসেন গতকাল রোববার বিকাল থেকে কাজিপুর ইউনিয়নের বেতবাড়িয়া এলাকায় গণসংযোগে অংশ নেন। এ সময় তিনি বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন, তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফা কর্মসূচির লিফলেট বিতরণ করেন এবং ধানের শীষ প্রতীকে ভোট চান।

গণসংযোগকালে সাবেক এমপি আমজাদ হোসেন বলেন, বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় এলে মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনের সার্বিক উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। তিনি নির্বাচনি এলাকায় প্রয়োজনীয় সব ধরনের উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। নারী ভোটারদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে প্রতিটি পরিবারে ফ্যামিলি কার্ড দেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফা বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করবে। বিগত সময়ে আপনারা দুঃসময়ে বিপুল ভোট দিয়ে আমাকে সংসদ সদস্য বানিয়েছিলেন। ধানের শীষকে ভালোবেসে যেভাবে ভোট দিয়েছেন, এবারও আমাকে তেমনই ভালোবেসে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন।

আমজাদ হোসেন বলেন, তারেক রহমান আমার মাধ্যমে আপনাদের হাতে ধানের শীষ তুলে দিয়েছেন। ভোটের দিনে ধানের শীষে ভোট দিয়ে বিএনপিকে জয়যুক্ত করতে হবে। তাই তারেক রহমানকে ভালোবেসে আগামী নির্বাচনে ধানের শীষে ভোট দিন।

তিনি আরও বলেন, গত ১৭ বছরে আপনাদের ওপর মামলা-মোকদ্দমা, জেল-জরিমানা ও হুলিয়া দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে এসব আর হবে না। তারেক রহমান ও খালেদা জিয়া বলেছেন, কারও ওপর প্রতিশোধ নেওয়া যাবে না।

গণসংযোগে উপস্থিত ছিলেন গাংনী উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাহারবাটি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবলু, জেলা কৃষকদলের সভাপতি মাহবুবুর রহমান, কাজিপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমান মোল্লা, গাংনী উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি সাজেদুল ইসলাম বুলবুল, কাজিপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি কামাল হোসেন বিএসসি, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন, মেহেরপুর জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি নাজমুল হোসেন, গাংনী পৌর জাসাসের সাধারণ সম্পাদক সুলেরী আলভী, বিএনপি নেতা খাইরুজ্জামান কালাম, কাজিপুর ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক বকুল হোসেন, যুবদল নেতা মাহফুজ বিশ্বাস রহিদুল, স্থানীয় বিএনপি নেতা গোলাম মর্তুজা, আব্দুল মতিন, শাহিন বিশ্বাস, ওয়ার্ড কৃষকদল নেতা মশিউর রহমানসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।

পরে বেতবাড়িয়া বাজারে আয়োজিত পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন আমজাদ হোসেন। পথসভায় এলাকার শত শত নারী-পুরুষ অংশ নেন।




মেহেরপুরে পদ্ম ফুল তুলতে গিয়ে একই পরিবারের তিনজনসহ চার শিশুর মৃত্যু

মেহেরপুর সদর উপজেলার রাজনগর গ্রামের মশুরিভাজা বিলে পদ্মফুল তুলতে গিয়ে একই পরিবারের ৩ জনসহ চার ছাত্রীর মমান্তির্ক মৃত্যু হয়েছে।

রবিবার সন্ধ্যায় স্থানীয়রা প্রথমে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করে। একজন নিখোঁজ থাকায় পরে ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম গিয়ে অপরজনের মরদেহ উদ্ধার করে।

নিহতরা হলো, আব্দুস সামাদের মেয়ে ফাতেমা (১৪) ও আফিয়া (১০)। এদের মধ্যে ফাতেমা মোমিনপুর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী এবং আফিয়া বারাদি তৃণমূল মডেল একাডেমির চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী। ইরাক প্রবাসী সাহারুল ইসলামের মেয়ে ও বারাদি তৃণমূল মডেল একাডেমির চুতর্থ শ্রেণীর ছাত্রী আলেয়া (১০), ইসাহাক আলীর মেয়ের আমঝুপি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী মিম (১৪)। নিহত সকলের বাড়ি রাজনগর গ্রামের মল্লিকপাড়ায়।

স্থানীয়রা জানান, দুপুরের দিকে চারজনই একসঙ্গে মশুরিভাজা বিলে পদ্মফুল তুলতে মশুরিভাজা বিলে যায়। দীর্ঘক্ষণ তারা ফিরে না আসায় বিকালের দিকে পরিবারের লোকজন তাদের খুঁজতে বের হয়। বিলপাড়ে তাদের স্যান্ডেল পড়ে থাকতে দেখে যে একজনের লাশ পানিতে ভাসছে। তারপর খোঁজাখুঁজির পর আরও দুটি মরদেহ দেখতে পায়। একজনের খোঁজ না পেয়ে মেহেরপুর ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিলে ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম সেখানে উদ্ধার অভিযান চালিয়ে আরও একজনের মরদেহ উদ্ধার করে। মমান্তিক এ খবর ছড়িয়ে পড়লে পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্বজনদের আহাজারিতে এলাকার পরিবেশ শোকে ভারী হয়ে উঠেছে।

মেহেরপুর ফায়ার সার্ভিস ইউনিটের টিম লিডার শামিম হোসেন জানান, পদ্মফুল তুলতে গিয়ে চারজন বিলে ডুবে যায়। স্থানীয়রা ৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করে। একজনকে খুঁজে না পেলে আমাদের খবর দিলে আমরা ঘটনাস্থলে পৌছে বিলের একটি গর্তের মধ্যে থেকে বাকি জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

বারাদি পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এস আই রেজাউল ইসলাম বলেন, দুপুর দেড়টার দিকে চারজন মশুরিভাজা বিলে পদ্মফুল তুলতে যায়। ফুল তুলতে গিয়ে তারা একটি গর্তে পড়ে নিখোঁজ হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। পরে বিকাল ৫টা ২০ মিনিটে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়।

মেহেরপুর সদর থানার ওসি মেছবাহ উদ্দিন বলেন, নিহত চারজনের কেউ সাঁতার জানতো না। বিলে একেক যায়গায় একেক রকম গভিরতা। যেকারণে তারা বুঝতে না পেলে বিলে তলিয়ে গেছে। পরে তাদের খোঁজাখুজি করার পর স্থানীয়রা ও ফায়ার সার্ভিস তাদের মরদেহ উদ্ধার করে।

মেহেরপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো: তরিকুল ইসলামের নেতৃত্বে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নিবার্হী কর্মকতার্ সুমাইয়া জাহান ঝুকার্সহ প্রশাসের একটি টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহত পরিবারের খোজ খবর নিয়েছেন।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো: তরিকুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিকভাবে নিহতদের দাফনের জন্য মরদেহ প্রতি ১০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে।




মেহেরপুরে ব্র্যাকের কার্যক্রম পরিদর্শন করলেন জেলা প্রশাসক

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিদর্শন করেছেন মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ আবদুল ছালাম।

রবিবার (৯ নভেম্বর) সকালে তিনি ব্র্যাক সিড ফার্ম, চাঁদবিল, আমঝুপিতে যান। সেখানে তিনি ব্র্যাকের বীজ উৎপাদন প্রক্রিয়া সরেজমিনে পরিদর্শন করেন, শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেন এবং ফার্ম ব্যবস্থাপকের কাছ থেকে বীজের গুণগত মান, সংরক্ষণ ও বিপণন প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান।

এরপর জেলা প্রশাসক ব্র্যাক সদর এরিয়া অফিস পরিদর্শন করেন। সেখানে তিনি ব্র্যাকের যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির স্বাস্থ্যসেবিকাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং যক্ষ্মা থেকে আরোগ্য লাভ করা কয়েকজন রোগীর খোঁজখবর নেন।

উল্লেখ্য, ব্র্যাক বাংলাদেশে যক্ষ্মা (টিবি) নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। সংস্থাটি যক্ষ্মা রোগীদের শনাক্তকরণ, চিকিৎসা এবং প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে। এর মধ্যে রয়েছে কমিউনিটি ভিত্তিক যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি, যেখানে মাঠকর্মীরা রোগীদের শনাক্ত করে চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করে। এছাড়াও ব্র্যাক বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ ও রোগীদের চিকিৎসার ফলোআপ নিশ্চিত করে থাকে।

এ সময় জেলা প্রশাসক ব্র্যাকের ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি, কৃত্রিম প্রজননসহ অন্যান্য উন্নয়নমূলক কার্যক্রম সম্পর্কেও ধারণা নেন।

পরিদর্শনকালে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও বিজ্ঞ এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট শেখ তৌহিদুল কবীর।

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাক ডিস্ট্রিক্ট কো-অর্ডিনেটর শেখ মনিরুল হুদা, আরএম (এমএফ দাবি) জি. এম. নাজমুল হুসাইন, এআরএম (এমএফ প্রগতি) মোঃ রবিউল ইসলাম, এএম (এমএফ দাবি) নুরুন্নাহার পান্না, ইউএএম সমীর কুমার বিশ্বাস, এএম (এমএফ প্রগতি) মোঃ আইয়ুব আলী, ডিএম (টিবি কন্ট্রোল প্রোগ্রাম) অচিন্ত কুমার বোস এবং ব্র্যাক সিড ফার্ম ম্যানেজার মোঃ আজাদ আলীসহ অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ।




মেহেরপুরে এক চালের দোকানে ৬০ হাজার টাকা চুরি

মেহেরপুরের হোটেল বাজারে নাঈম এন্টারপ্রাইজ নামের একটি চালের দোকান থেকে প্রায় ৬০ হাজার টাকা চুরির ঘটনা ঘটেছে।

আজ রবিবার (৯ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে হোটেল বাজারের নিউ মার্কেটে এ ঘটনা ঘটে।

নাঈম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আরিফুজ্জামান (লাল মিয়া) জানান, সকাল থেকে একটি ছেলে দোকানের আশপাশে ঘোরাফেরা করছিল। পরে সে দোকানে এসে একটি ডিম চায়। ডিম দেওয়ার পর সে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর আবার এসে ধান মাপার কথা বলে। আমি ধান মাপতে গেলে কাজ শেষে আবার সে চাল দেখাতে বলে। আমি চাল দেখাতে গেলে অন্য একজন এসে দোকানে রাখা প্রায় ৬০ হাজার টাকা নিয়ে যায়।

তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় এখনো থানায় কোনো অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।




১০০০ কর্মী নেবে দারাজ, লাগবে না অভিজ্ঞতা

অনলাইন শপিং মার্কেট প্লেস দারাজ বাংলাদেশ লিমিটেডে ‘ডেলিভারি ম্যান’ পদে এক হাজার কর্মী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। আগ্রহীরা আগামী ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত আবেদন করতে পারবেন। প্রার্থীর নিজ জেলায় কাজের সুযোগ পাবেন।

প্রতিষ্ঠানের নাম: দারাজ বাংলাদেশ লিমিটেড

পদের নাম: ডেলিভারি ম্যান

পদসংখ্যা: ১০০০ জন

শিক্ষাগত যোগ্যতা: এসএসসি অথবা সমমান

অভিজ্ঞতা: প্রযোজ্য নয়

বেতন: ১৫,০০০ থেকে ৪০,০০০ টাকা পর্যন্ত আয়ের সুযোগ

অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা: পার্সেল প্রতি কমিশন ১৮ থেকে ৩০ টাকা, হাজিরা বোনাস ৪,০০০ টাকা, উৎসব ভাতা, কাস্টমারদের ফোন করার জন্য অফিস থেকে সিম দেওয়া হয়, দুর্ঘটনা জনিত চিকিৎসা সুবিধা ও জীবন বীমা সুবিধা।

চাকরির ধরন: চুক্তিভিত্তিক

প্রার্থীর ধরন: পুরুষ

বয়স: সর্বনিম্ন ১৮ বছর

কর্মস্থল: যে কোনো স্থান

আবেদনের নিয়ম: আগ্রহীরা এখানে ক্লিক করে আবেদন করতে পারবেন।

সূত্র: যুগান্তর ।




গাংনীতে সেনাবাহিনীর অভিযানে অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সাহারবাটী ইউনিয়নের ভাটপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে একটি ওয়ান শুটারগান (পিস্তল), তিন রাউন্ড গুলি ও তিনটি দেশীয় ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী।

শনিবার (৮ নভেম্বর) দিবাগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।

গাংনীস্থ সেনাবাহিনী ক্যাম্প সূত্রে জানা গেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ভাটপাড়া এলাকায় সেনাবাহিনীর একটি দল অভিযানে নামে। সেনাবাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে অপরাধচক্রটি পালিয়ে যায়। এ সময় তাদের ফেলে যাওয়া অস্ত্র ও গুলি ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়।

উদ্ধারকৃত অস্ত্র ও গুলি পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থার জন্য গাংনী থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।




মেহেরপুরে বাসের ধাক্কায় প্রাণ গেল পথচারীর

মেহেরপুরে বিআরটিসির একটি বাসের ধাক্কায় শরিফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছে। আজ রবিবার সকাল ৭টার দিকে মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের শহরের ব্রাক অফিসের সামনে এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত শরিফুল ইসলাম শহরের মল্লিকপাড়া এলাকার খাদেমুল ইসলামের ছেলে।

প্রত্যক্ষদর্শিরা জানান, সকালে শরিফুল ইসলাম মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়ক পার হওয়ার সময় মেহেরপুর থেকে ছেড়ে যাওয়া বিআরটিসির একটি বাস তাকে ধাক্কা দেয়। এসময় তিনি সড়ক ছিটকে পড়েন এবং ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম ঘটনাস্থলে পৌছে মরদেহটি উদ্ধার করেন।

মেহেরপুর ফায়ার সার্ভিস ইউনিটের টিম লিডার শামীম হোসেন জানান, স্থানীয়দের দেওয়া খবরের ভিত্তিতে এসে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

মেহেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেছবাহ উদ্দিন বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতলের মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।




দর্শনার নেহালপুর ইউনিয়নে ধানের শীষ প্রতিকের নির্বাচনী পথসভা

চুয়াডাঙ্গা-২ নির্বাচনী এলাকার দর্শনা থানাধীন নেহালপুর ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডে ধানের শীষ প্রতিকে ভোট চেয়ে নির্বাচনী পথসভা করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সংগ্রামী সভাপতি ও বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির উপ-কোষাধ্যক্ষ চুয়াডাঙ্গা ২ আসনের বিএনপি মনোনীত এমপি প্রার্থী মাহমুদ হাসান খান বাবু।

গতকাল শনিবার বেলা ৩ টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ইউনিয়নের ৯ টি ওয়ার্ডের কোটালি, কেষ্টপুর বটতলা বাজার, ডিহি, হিজলগাড়ী, নেহালপুর, নেহালপুর পশ্চিমপাড়া, বোয়ালিয়া, কুন্দিপুর ও দোস্তে গ্রামে এসব নির্বাচনী পথসভা করেন।

স্ব-স্ব ওয়ার্ড কমিটির সভাপতির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পথসভা প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, বিগত দিনে চুয়াডাঙ্গা-২ নির্বাচনী এলাকায় কি হয়েছে সেটা আপনারা সবাই জানেন। আমি সে বিতর্কে যাব না। আগামী নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র মার্কা ধানের শীষ মার্কা। আপনারা সবাই ধানের শীষে ভোট দিবেন। কেন দিবেন ? এই জন্য দিবেন, দেশ পরিচালনায় একমাত্র যোগ্যদল বিএনপি। আমাদের দলটি রাষ্টিয় ক্ষমতায় এবং বিরোধী দলে থেকেও রাষ্ট পরিচালনা করেছে। তাই রাষ্ট পরিচালনার ক্ষমতা একমাত্র বিএনপি’রই আছে।

মানুষের জীবযাত্রার মান উন্নয়ন এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য আপনারা অবশ্যই ধানের শীষের প্রতীকে ভোট দিবেন। আমি কোন মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিতে পারব না। আমার সাধ্যের মধ্যে যতটুকু সম্ভব সেটুকু করার চেষ্টা করব। রাষ্টগঠণে তারেক রহমান ৩১ দফা ঘোষনা করেছেন। যেখানে ধর্ম নিয়ে বলা হয়েছে- ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার এই মূলনীতির ভিত্তিতে প্রত্যেক নাগরিকের নিজ ধর্ম পালনের পূর্ণ অধিকার নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করা হয়েছে। জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সংবিধানস্বীকৃত সকল অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। বিগত সময়ে সংখ্যালঘুদের মন্দির, বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা কিংবা স¤পত্তি দখলের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রæতি দিয়েছে বিএনপি।

তরুণদের নিয়ে বলা হয়েছে, তরুণ প্রজন্মের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে যুগোপযোগী জাতীয় যুবনীতি প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে। শিক্ষিত বেকার যুবকদের জন্য কর্মসংস্থান না হওয়া পর্যন্ত বেকার ভাতা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। বেকারত্ব দূর করতে বহুমুখী ও বাস্তসম্মত কর্মসূচি গ্রহণ এবং তরুণদের দক্ষতা বৃদ্ধি করে বাংলাদেশের বিপুল যুব জনগোষ্ঠীকে উৎপাদনশীল সম্পদে রূপান্তরীত করার লক্ষ্য রয়েছে।

স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পুষ্টি খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়ে যুবসমাজের সক্ষমতা বাড়ানো হবে। কৃষি নিয়ে বিএনপি’র ভাবনা হলো কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে ধান-গমসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্যের সরকারি ক্রয়কেন্দ্র প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যায়ে স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

কৃষিজমির অহেতুক অকৃষি ব্যবহার নিরুৎসাহিত করা হবে এবং কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের গবেষণা ও উন্নয়নে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। তিনি আরও বলেন, বিএনপি’র এই ৩১ দফা রূপরেখা কেবল সরকার পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি নয় বরং রাষ্ট্র পরিচালনার প্রায় সকল গুরুত্বপূর্ণ দিক জুড়ে একটি ব্যাপক সংস্কার পরিকল্পনা। সংবিধান ও রাষ্ট্রের কাঠামোগত পরিবর্তন থেকে শুরু করে অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ, নারীর ক্ষমতায়ন, প্রযুক্তি প্রতিটি ক্ষেত্রে উন্নয়নের একটি খসড়া কর্মসূচি এখানে দেওয়া হয়েছে। এগুলোর উদ্দেশ্য হলো, বিএনপির ভাষায়, গুণগত পরিবর্তন এনে দেশে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, মানবাধিকার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা। তাই আপনাদের প্রতি আমার উদ্যাত্ত আহবান মিথ্যা অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হবেন না। এক দল অতীতে কি করে গেছে সেটা যেমন জানেন তেমনি আর একটি দল ক্ষমতায় আসার জন্য নানা ভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে। দল বা কোন মার্কার উপরে পরকালে ভাগ্য নির্ধারণ হবে না। এটা যারা বলছেন তারা আপনাদের সাথে মিথ্যা কথা বলছেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, জেলা বিএনপি’র সাংগাঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ মিল্টন, দর্শনা থানা বিএনপি’র সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা খাজা আবুল হাসনাত, সাধারণ সম্পাদক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আহম্মদ আলী, সিনিয়র সহসভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান আকতার হোসেন, যুগ্নসাধারণ সম্পাদক খাইরুল ইসলাম যুদ্ধ, সাংগাঠনিক সম্পাদক মহিদ জোযার্দ্দার, নেহালপুর ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি ফরজ আলী, সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, সহসভাপতি মাসুদ রানা, যুগ্নসাধারণ সম্পাদক আবুসালেহ মেম্বর, সাংগাঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম। দর্শনা থানা যুবদলের আহবায়ক জালাল উদ্দিন লিটন, সদস্য সচিব সাজদেুর রহমান মিলন, যুবদল নেতা হিজলগাড়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি মেহেদী হাসান মাষ্টার প্রমুখ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, বিএনপি নেতা জসিম উদ্দিন, জহুরুল ইসলাম, নুরননবী, ছানোয়ার হোসেন, জলিল উদ্দিন, আমজেদ হোসেনসহ ৯টি ওয়ার্ডের নেতাকর্মীরা।




জীবননগরের মনোহরপুরে জামায়াতের গণসংযোগ

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মনোনিত চূয়াডাঙ্গা-২ আসনের এমপি নমিনী জেলা আমীর এডভোকেট রুহুল আমিন মনোহরপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় গনসংযোগ করেন।

গতকাল শনিবার বিকাল ৫ টার সময় মনোহরপুর ইউনিয়ন জামায়াত অফিস থেকে শুরু করে ধোপাখালী, কালা, গাংপাড়া ও মনোহরপুর গ্রামের বিভিন্ন বাজার ও মহল্লায় গনসংযোগ করেন। এসময় তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী সরকার গঠন করলে এদেশের রাজনৈতিক কালচার পরিবর্তন করতে চাই। কাউকে রাজনীতি করার কারণে হয়রানি করা হবেনা। ভোট কাটার স্বপ্ন, দুঃস্বপ্নে পরিনত করা হবে। জামায়াত মানুষের হক জনগণের দোর গোড়ায় পৌছে দিতে চাই। আমরা শাসক নই বরং জনগণের সেবক হতে চাই।

গণসংযোগে উপস্থিত ছিলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি সাগর আহম্মেদ, জেলা প্রশিক্ষন সম্পাদক জিয়াউল হক, জেলা উলামা বিভাগের সভাপতি মাওলানা ইসরাইল হোসেন, জীবননগর উপজেলা আমীর মাওলানা সাজেদুর রহমান, নায়েবে আমীর সাখাওয়াত হোসেন, হাফেজ বিল্লাল হোসেন, জীবননগর উপজলোর সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা আবু বকর, উপজেলা যুব বিভাগের সভাপতি মাজেদুর রহমান লিটন, সেক্রেটারি জাহিদুল ইসলাম, মনোহরপুর ইউনিয়ন সভাপতি রবিউল ইসলাম , সেক্রেটারি মনির হোসেন, জামায়াত নেতা নেয়ামুল হক, শফিকুল ইসলাম, বেতের আলী, যুবনেতা মোমিনল ইসলাম, সাগর আহম্মেদ প্রমুখ ।

এছাড়াও বিকাল ৪ টার সময় মনোহরপুর গ্রামে এক মহিলা সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, জেলা আমীর রুহুল আমীন।




ঐতিহ্যবাহী দর্শনা: নিভে আসছে আলো”

দশর্না একটি নাম। যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে ইতিহাস, সংস্কৃতি, শিল্প ও বাণিজ্যের দীর্ঘ ঐতিহ্য। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১২.৫০ বর্গ কিলোমিটারের এই ছোট্ট শহরটি এক সময় ছিল গৌরবের প্রতীক। সীমান্তবর্তী এই নগরী থেকেই ১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর বর্তমান ভারতের রানাঘাট থেকে দর্শনা হয়ে কুষ্টিয়ার জগতি পর্যন্ত রেলপথের আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রেন চলাচলের মাধ্যমে রেল পরিষেবার সূচনা ঘটে আজকের বাংলাদেশ ভূখণ্ডে।

বাংলাদেশের প্রথম রেলপথ, ‘দর্শনা’ নামে একটি নগরীর পত্তন। ইতিহাসের পাতা থেকে পাওয়া যায় দর্শনা নামটি ১৮০০ সালের কিছু আগে থেকেই প্রচলিত। ১৭৮৭ সালের ২১ মে মার্চ নদীয়া জেলা গঠিত হয়, তখনও এই স্থানটির নাম দর্শনা ছিল। রেনল্ড গেজেট থেকেও জানা যায় ১৮০০ সালের গোড়ার দিকেও এই অঞ্চলের নাম ছিল দর্শনা। সেইটা কিন্তু আমার এখন যে দর্শনার কথা বলি, সেইটা না! এখন বহুল প্রচলিত দর্শনার পাশেই ‘কোটালি দর্শনা’ নামের একটি গ্রামের নামের খন্ডাংশ থেকে পাওয়া বর্তমান ‘দর্শনা’। সবচে প্রচলিত এবং আলোচিত যা পাওয়া ইতিহাস,- কোটালি দর্শনার একজন ইঞ্জিনিয়ার রানাঘাট থেকে জগতি পর্যন্ত চলাচলের জন্য নির্মিত রেলপথের দায়িত্ব পাওয়া একজন মানুষের কৃতিত্ব। সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ‘বাংলার ইতিহাস’ বই থেকে পাওয়া যায়, ‘রামনগর থেকে ভবানীপুর (ঈশ্বরচন্দ্রপুরের পুরাতন নাম) গ্রামের বুক চিরে পদ্মা নদীর শাখা মাথাভাঙ্গা নদীর পাশ দিয়ে বাষ্পশকট চলাচলের লৌহ নির্মিত পথ নির্মাণের মহাযজ্ঞ চলিতেছে’। তখনও আমাদের এ দর্শনা পায়নি। শোনা যায় কোটালি দর্শনার শ্রদ্ধেয় সেই ইঞ্জিনিয়ার মানুষটির মেধা আর বর্তমান ভারত থেকে আসা হাজার হাজার বিহারি সম্প্রদায়ের মানুষের শ্রম-ঘামের বিনিময়ে নির্মিত হিন্দু জমিদার এস্টেটের ভূমির ওপর মাথাভাঙ্গা নদীর কাটা খালের মুখের জায়গাটা কোটালী দর্শনার মানুষটির দেয়া নামের পত্তন হলো “দর্শনা” নামের এক নগর সভ্যতার। দর্শনা তখন থেকেই  শুরু এ অঞ্চলের মানচিত্রের যোগাযোগ, সংস্কৃতি ও উন্নয়নের এক প্রাণকেন্দ্র।

১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বরের নির্মিত সেই দর্শনার কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আজ আলোর প্রদীপটি ধীরে ধীরে নিভে যাচ্ছে। শহরের প্রাণবন্ততা কমে এসেছে, পুরনো ঐতিহ্যের জায়গায় এসেছে অব্যবস্থাপনা, উদাসীনতা আর অবক্ষয়। জন কেরু নামের ব্রিটিশ সাহেবের ১৯৩৮ সালে কেরু এন্ড কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত  চিনিকলের হুইসেল বাজত, সেখানে এখন নীরবতা। রেলস্টেশনের কোলাহল ম্লান হয়ে গেছে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর ১৯৫২ সালে ১৩.৬৬ একর জমিতে তৎকালীন কাস্টমস ও এক্সাইজ কালেকটরেট খুলনার অধীনে প্রতিষ্ঠিত দর্শনা কাস্টমস কলোনি। এক এলাহি ব্যাপার! রেল-কেরু-কাস্টমস, সব মিলিয়ে ২৪ ঘন্টায় কমপক্ষে ২০ হাজার কর্মজীবী মানুষ ছুটে চলা, আনন্দ-উৎসব।

সে শহরের দোকানপাটে আগের মতো বেচাকেনা নেই। শহরের প্রান্তে দারিদ্র্য আর বেকারত্বের ছায়া ঘন হয়ে উঠেছে।

দর্শনার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যও আজ ক্ষয়ে যাচ্ছে। একসময় এখানে নাট্যচর্চা, সাহিত্যসভা, সংগীত-আড্ডা—সব ছিল প্রাণবন্ত। আজ সেসব উদ্যোগ নেই বললেই চলে। তরুণ প্রজন্মের অনেকেই শহরের ইতিহাস জানে না; তারা অন্য শহরের চাকরির টানে বা জীবিকার প্রয়োজনে চলে যাচ্ছে দূরে। ফলে দর্শনার মাটিতে যেই আলোর রেখা একদিন গর্বের সঙ্গে জ্বলেছিল, আজ তা নিভু নিভু।

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তবর্তী শহর দর্শনা ইতিহাস, ঐতিহ্য ও অর্থনৈতিক গুরুত্বে এক সময় ছিল গৌরবময় নাম। এটি কেবল একটি সীমান্তনগরী নয়, বরং বাংলাদেশের প্রথম রেলস্টেশন এবং প্রথম চিনিকল। এই শহর দেশের প্রাচীন শিল্পবাণিজ্য, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিকাশের সাক্ষী। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় দর্শনা তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। রাজনৈতিক নেতৃত্বের লালসা, অর্থনৈতিক অনিয়ম, সামাজিক অবক্ষয় ও সাংস্কৃতিক বিভাজন আজ শহরটিকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

রাজনৈতিক নেতৃত্বের লালসা-নৈতিক অবক্ষয় : 

দর্শনার রাজনৈতিক ইতিহাস ছিল একসময় সংগ্রামী ও আদর্শনিষ্ঠ। যখন জন কেরু সাহেব চিনিকলের আখ চাষের জন্যে আশ-পাশের জমিগুলো দখল নিয়ে ফার্ম তৈরী শুরু করে তখন উপমহাদেশের প্রখ্যাত কমিউনিস্ট নেতা মুজাফফর আহমদ এসে এ অঞ্চলের চাষিদের সংগঠিত করতে জনসভা করেছিলো আজকের বাজার মসজিদ সংলগ্ন বলখেলার ফিল্ডে। ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধকালীন আন্তর্জাতিক যোগাযোগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিলো।  মুক্তিযুদ্ধ-পূর্ববতী সময়ে এখানকার নেতৃত্ব জনকল্যাণ, অবকাঠামো, শিক্ষা ও শিল্পোন্নয়নকে কেন্দ্র করে কাজ করেছিল। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী, বিশেষত ১৯৯১ সালের পর থেকে বর্তমানে সেই নেতৃত্ব পরিণত হয়েছে ক্ষমতার প্রতিযোগিতা ও ব্যক্তিস্বার্থে নিমজ্জিত এক গোষ্ঠীতে। দলীয় রাজনীতির প্রভাবে স্থানীয় প্রশাসন, শিল্প প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সাংস্কৃতিক সংগঠন পর্যন্ত—সব ক্ষেত্রেই ছড়িয়ে পড়েছে পক্ষপাতিত্ব ও দখলদারিত্ব। প্রকৃত জননেতৃত্ব আজ হারিয়ে গেছে দলীয় ‘কর্মী’ ও ব্যবসায়িক সিন্ডিকেটের হাতে। ফলে দর্শনার উন্নয়ন এখন কেবল বক্তৃতা বা ব্যানারে সীমাবদ্ধ, বাস্তবে নয়।

অর্থনৈতিক কাঠামোর ভাঙন; ঐতিহ্যের পতন : 

দর্শনার অর্থনীতি একসময় দাঁড়িয়ে ছিল তিনটি স্তম্ভের ওপর—রেলপথ, কেরু অ্যান্ড কোম্পানি এবং সীমান্ত বাণিজ্য।

রেলপথ: ব্রিটিশ আমলে দর্শনা থেকে যে রেল সংযোগ গড়ে ওঠে। এটি ছিল দেশের শিল্পবাণিজ্যের মূলধারা কিন্তু বর্তমানে সেই ঐতিহাসিক রেলপথ অবহেলা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে আর লুটপাটে প্রায় অচল। একইভাবে পাকিস্তান পর্বে নির্মিত খুলনা-দর্শনা সংযোগকারী রেলপথ ‘হল্ট ষ্টেশন’ আধুনিকীকরণ তো দূরের কথা, ন্যূনতম পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাও অনুপস্থিত।

কেরু অ্যান্ড কোম্পানি : ১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই চিনিকলটি দেশের প্রথম শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর একটি। একসময় হাজারো শ্রমিকের জীবিকার উৎস ছিল এটি কিন্তু আজ সেটি দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা, দলীয় প্রভাব ও অবকাঠামোগত দুর্বলতার কারণে টিকে থাকার লড়াই করছে। নিয়মিত উৎপাদন বন্ধ, শ্রমিক অসন্তোষ ও আর্থিক সংকট এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে।

কাস্টমস হাউস ও সীমান্ত বাণিজ্য: দর্শনা সীমান্ত বাংলাদেশের অন্যতম ব্যস্ততম স্থলবন্দর। কিন্তু বাণিজ্যের বড় অংশ এখন চলে যায় প্রভাবশালী গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে। সাধারণ ব্যবসায়ী ও স্থানীয় জনগণ বঞ্চিত হয় সুযোগ থেকে। রাজনীতি ও অর্থনীতির অদ্ভুত মিশ্রণ তৈরি করেছে এক ধরনের দখলদার অর্থনীতি, যা উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে।

সামাজিক নেতৃত্বের বিভাজন ও গোষ্ঠীবাদ :

দর্শনার সমাজ একসময় ছিল ঐক্যবদ্ধ ও সহানুভূতিশীল। এখন সেই সমাজ বিভক্ত। সমাজসেবামূলক সংগঠনগুলোতেও দলে-দলে ভাগাভাগি, নেতৃত্ব নিয়ে টানাপোড়েন। কিছু ‘ছদ্মনেতা’ নিজেদের প্রভাব বজায় রাখতে সামাজিক কাজকে ব্যক্তিগত প্রচারের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করছে। ফলে সমাজে নৈতিকতা ও দায়বদ্ধতার পরিবর্তে বেড়েছে হিংসা, বিভাজন ও অবিশ্বাস।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবনতি ও নীতিহীনতা : 

দর্শনার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেমন— ১৯১৬ সালে মেমনগর বিপ্রদাস উচ্চ বিদ্যালয়, ১৯৬২ সালে দর্শনা বালিকা বিদ্যালয়, ১৯৬৭ সালে কেরু উচ্চ বিদ্যালয়, ১৯৬২ সালে দর্শনা ডিএস মাদ্রাসা, ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত দর্শনা কলেজ ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একসময় ছিল উচ্চমানের শিক্ষা ও চরিত্র গঠনের কেন্দ্র। আজ সেই প্রতিষ্ঠানগুলো রাজনৈতিক প্রভাব, শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম, এবং ছাত্র সংগঠনের দলীয়করণের কারণে মানহীন হয়ে পড়েছে। শিক্ষা এখন আর মেধা বিকাশের মাধ্যম নয়, বরং ক্ষমতার সোপান। তরুণ প্রজন্ম তাদের নৈতিক ভিত্তি হারাচ্ছে, যা ভবিষ্যতের জন্য বিপদজনক সংকেত।

সাংস্কৃতিক সংগঠনের দলাদলি ও অবক্ষয় :

দর্শনার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য একসময় ছিল উজ্জ্বল। নাটক, সংগীত, সাহিত্যচর্চা, নাট্যদল ও পাঠচক্র—এসব ছিল শহরের প্রাণ। এখন সেই সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো দলীয় দ্বন্দ্বে ভুগছে। পাকিস্তান পর্বেও সারাবছর পালাগান-জারিগান, যাত্রা-সার্কাস, কাওয়ালী, গণসঙ্গীতের সুরে মাতোয়ারা থাকতো এ মশহুর শহর।

স্বাধীনতা পরবর্তী স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের জ্বালানি হিসেবে ১৯৮৩ সালে সৃষ্টি অনির্বাণ সাংস্কৃতিক সংগঠন, ১৯৮৬ সালে সাম্প্রতিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের গণ নাটকের মাধ্যমে সারাদেশে দর্শনাকে এক আইকনিক মাত্রায় দাঁড় করাই সেইসময়ের বিপ্লবীরা । যদিও তারও আগে ১৯৬২ সালেই যে আগুনের সূচনা করেছিলো হিন্দোল সঙ্গীত পরিষদ এবং সীমান্ত সংসদ।

আজ সেখানে সংগঠনগুলোর অন্ত:দ্বন্দ্ব, একটি সংগঠন অন্যটির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে ব্যস্ত, আর প্রকৃত শিল্পীরা হয়ে পড়ছে উপেক্ষিত। সংস্কৃতি এখন আর আত্মার প্রতিফলন নয়, বরং রাজনৈতিক পরিচয়ের প্রতীক। এখন এক পীর সাহেবের বিষ-নিশ্বাসে আর তার ভাই-ভাগ্নেদের পারিবারিক তালুকদারীতে; পীরের কতিপয় পাছা-চাটা মুরিদের সেরেস্তাদারীতে ঢাকের কাঠি নড়ে।

এর ফলে দর্শনার সৃজনশীল মনন ভেঙে পড়েছে, এবং তরুণ প্রজন্ম দূরে সরে যাচ্ছে শিল্প-সংস্কৃতি থেকে।

স্বাস্থ্যসেবা হয়েছে দানবদের কারখানা :

৫০ হাজার জনসংখ্যার এ নগরে নূন্যতম উপযুক্ত স্বাস্থ্যসেবার সুবিধা নেই। জরুরী চিকিৎসা পাওয়ার কোন অধিকার নেই দর্শনার মানুষের। প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোতে জরুরী সেবা দেবে না। রাত ৯ টার পরে ডাক্তার সাহেবকে পাবেন না। ফোনও বন্ধ। শুধু রাত ৩ টায় ডাক্তার সাহেবকে যদি বলেন, সিজার করতে হবে বা এপেন্ডিস কাটতে। পেয়ে যাবেন! কেরু হাসপাতালে সব সুবিধা পাওয়া যেতো। কিন্তু যে নেতৃত্ব ছড়ি ঘোরাতে তাদের নজর, এটা বন্ধ করে দাও! সিন্ডিকেট বানাও! জনকল্যাণমুখী প্রাইভেট হাসপাতাল বানাও। রাস্তার দু’পাশে যে ডাক্তার…. সাইনবোর্ড লাগিয়ে বসে আছে, খোঁজ নিয়ে দেখে তো কতজনের সত্যিকার ডাক্তারী সার্টিফিকেট আছে –

ভরসা ফার্মেসীগুলো।

ঐতিহ্যবাহী দর্শনার ঐতিহ্য ধ্বংসের কারিগর :

দর্শনা সব মিলিয়ে ছিল এক প্রগতিশীল নগরচেতনার প্রতীক। কিন্তু সময়ের স্রোতে আজ সেই দর্শনা এক মৃত ইতিহাসের পৃষ্ঠা মাত্র। আর এই মৃত্যুর মূল কারিগর কোনো বহিরাগত শক্তি নয়—বরং শহরের ভেতরেই জন্ম নেওয়া কেরানী শ্রেনী মানসিকতার মতলববাজ-বাকোয়াজবাজ এলিট সম্প্রদায়। এই শ্রেণিটি হলো দর্শনার সামাজিক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক পরজীবী। এরা রাষ্ট্রীয় বা প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতার নিচু স্তরে থেকে ধীরে ধীরে উপরে উঠেছে, কিন্তু চিন্তা-চেতনায় থেকে গেছে নীচেই। এদের কাছে প্রশাসন মানে সুযোগ, নেতৃত্ব মানে প্রভাব, উন্নয়ন মানে নিজের স্বার্থ রক্ষা। এই কেরানী মানসিকতাই দর্শনার ঐতিহ্যবাহী কাঠামোকে ভিতর থেকে খেয়ে ফেলেছে—যেভাবে ঘুনপোকা কাঠকে খায়, কিন্তু বাইরে থেকে সব ঠিকই দেখা যায়।

এই এলিট সম্প্রদায়,— বাকোয়াজবাজ ও বুদ্ধিজীবক, পাকা অভিনেতা । এরা সভা করে, আলোচনা করে, ব্যানার টাঙ্গায়, পত্রিকায় ছবি ছাপে কিন্তু কাজের নামে করে কেবল প্রহসন। তারা উন্নয়ন শব্দটাকে ব্যবহার করে নিজেদের অর্থনৈতিক স্বার্থের ঢাল হিসেবে আর ঐতিহ্যের কথা বলে পুরনো স্থাপনা ও জনসম্পদ বেচে দেয় ব্যক্তিগত কমিশনের বিনিময়ে। ফলে দর্শনার সাংস্কৃতিক ও প্রশাসনিক ঐতিহ্য ধীরে ধীরে পরিণত হয়েছে “নথির কবরস্থানে”।

রাজনৈতিক দিক থেকেও এই শ্রেণি ভয়ঙ্কর। তারা কোনো দল বা মত নয়—বরং ক্ষমতার প্রতি আনুগত্যই তাদের একমাত্র আদর্শ। সরকার বদলায়, রঙ বদলায় কিন্তু এদের মুখের হাসি বদলায় না। কারণ এরা জানে,- যে-ই আসুক, তাদের প্রয়োজন এই ‘অফিস-স্মার্ট’ কেরানী শ্রেণির। ফলে দর্শনার রাজনীতি বা সমাজ কিংবা সংস্কৃতি এখন আর নীতির নয়—এখন তা নেটওয়ার্ক, কমিশন, আর আত্মস্বার্থের সমীকরণ। সামাজিক দিকেও তাদের প্রভাব গভীর। এই শ্রেণি দর্শনার তরুণ প্রজন্মকে শিক্ষা দিয়েছে কীভাবে আদর্শ নয়, পরিচয়ই জীবনযাত্রার মূলধন। তারা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানকে পরিণত করেছে তোষামোদের উৎসবে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বানিয়েছে পদোন্নতির সিঁড়িতে।

কত তার বাহারি নাম- নাগরিক কমিটি, বাস্তবায়ন কমিটি, আন্দোলন, ঐক্য, জইন্ন্যে আমরা আর একটা শ্রেনী আছে!

যারা দর্শনার মানুষ বলে রাজধানীর বুকে বছর বছর মিলনমেলায় হাজির হয়ে ডায়াসে দাঁড়িয়ে কিংবা কফির কাপ হাতে এসে বলে, …. কেমুন আছো–, এখন কি করচ্ছো— আচ্ছা, আপনার তো সরকারের বড়-বড় আমলা ছিলেন। তাই না?

কেউ সচিব, কেউ মহাপরিচালক, কেউ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, কেউ চীফ কনসালটেন্ট আরো, আরো, আরো…….। আপনারা তো ইচ্ছে করলেই দর্শনা অঞ্চলের আপনার অধীনস্ত দফতরেই বা আপনার লিংকের একটা একটা সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি দিতে পারতেন এ শহরের একজনকে । ১৯৯০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত আপনারা যতজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন তারা যদি আজ প্রতিটা ঘরে একজন করে অন্তত সরকারী চাকুরীর বন্দোবস্ত করে দিতেন তাহলেও দর্শনার বর্তমান ৫০ হাজার জনসংখ্যার শহরে ৫ হাজার সরকারি চাকুরে থাকতো। টাকা নিয়েই দিতেন! এইটা তো এখন সিস্টেম। ইচ্ছে করলেই আমি বা আপনি যেতে পারবো না। কিন্ত আপনি দেননি, করেননি। আবার আপনি যে খুবই সৎ মানুষ তাও না। টাকা আপনি নিয়েছে। চাকরিও দিয়েছেন। সেইটা কই?  শশুড়বাড়ী এলাকায় কিংবা অন্য এলাকায়।

দর্শনা হারিয়েছে তার মূল্যবোধ, আত্মসম্মান ও নাগরিক ঐক্যের চেতনা। তবু আশার জায়গা আছে। যে সমাজে ধ্বংসের চোরাগোপ্তা শক্তি প্রবেশ করে, সেই সমাজের অন্তঃস্থলে একদিন প্রতিরোধের আগুনও জ্বলে ওঠে। দর্শনার ঐতিহ্য একদিন হয়তো পুনর্জন্ম নেবে—যেদিন এই কেরানী মানসিকতার মতলববাজ ও বাকোয়াজবাজ এলিট সম্প্রদায়ের মুখোশ খুলে যাবে, সেদিন দর্শনা আবার হবে প্রগতির প্রতীক, মানুষের শহর।

আর কিছু আশা করার নেই পুরোনোদের কাছ থেকে :

যারা দশকের পর দশক এই শহরকে শাসন করেছে, তারা আজও নিজেদের ভুল স্বীকার করতে পারে না।

তারা এখনো “আমি করব”, “আমরা উন্নয়ন এনেছি” বলে প্রচারণা চালায়—কিন্তু বাস্তবতায় দর্শনা প্রতিদিন আরও পেছনে পড়ে যায়। তাদের কাছ থেকে এখন আর কিছুই আশা করার নেই। কারণ তারা শহর নয়, নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়েছে; মানুষ নয়, নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করেছে।

কিছুদিন আগে এ জেলার একজন শীর্ষস্থানীয় নেতার সাথে গল্প করতে করতে তিনি দারুণ কথা বলল,’তোমরা গত ১৫/১৬ বছরে দর্শনার বাইরের মানুষদের কখনো মানুষ হিসেবেই গণ্য করোনি। এমপি তোমাদের, জেলা পরিষদ তোমাদের, উপজেলা তোমাদের, সেক্রেটারী তোমাদের, প্রেসিডেন্ট তোমাদের… সবই তোমরা। মিছিল করার, মিটিং করার, মহড়া করার সময় আমরা। আমাদের প্রয়োজন গেলে সারারাত বসিয়ে রেখে রাত ৪ টায় দেখা দিয়ে কও তাড়াতাড়ি বল…ঘুমাবো..।

এবার দেখবো তোমরা কি করো!

হয় জীবননগরে ফেলা হবে।

না হয় আন্দুলবাড়িয়া!

একদম শূন্য করে দেয়া হবে।

দর্শনার বর্তমান সংকটের সবচেয়ে ভয়াবহ দিক হলো—নেতৃত্বের প্রতি জনগণের আস্থার মৃত্যু।

পরিবর্তনের দায়িত্ব তরুণদের হাতে:

এখন যদি কিছু করার সুযোগ থেকে থাকে, তবে সেটি তরুণদের হাতে। যাদের বয়স এখন সর্বোচ্চ  সর্বোচ্চ ৪০ বছর, যাদের মনে এখনো আদর্শের আগুন, সৎ থাকার সাহস এবং নতুন করে ভাবার শক্তি আছে—তাদেরই নিতে হবে দায়িত্ব। তরুণরা যদি রাজনীতিকে ব্যবসা না বানিয়ে জনসেবার মঞ্চ বানায়, যদি সমাজের ভাঙা বন্ধন জোড়া লাগায়, যদি শিক্ষায় নৈতিকতা ফিরিয়ে আনে, আর সংস্কৃতিতে সত্য ও মানবতার চর্চা করে—তবেই দর্শনা আবার জেগে উঠতে পারে।

এই প্রজন্মের তরুণদের দরকার “আমি পারব” নয়, বরং “আমরা পরিবর্তন আনব”—এই বিশ্বাস।

দর্শনার আলো আবার জ্বলবে তখনই, যখন তরুণরা পুরোনো মুখগুলোর তোষামোদি রাজনীতি ভেঙে নিজেদের সততা ও দক্ষতার মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব গড়ে তুলবে।

পুরোনোরা হারিয়েছে, নতুনরা সেটা ফিরে পেতে পারে :

দর্শনার অতীত গৌরবকে হারিয়েছে একদল আত্মস্বার্থপর নেতৃত্ব। তাদের হাতে রাজনীতি হয়েছে নাটক, অর্থনীতি হয়েছে ব্যবসা, সংস্কৃতি হয়েছে প্রদর্শনী, শিক্ষা হয়েছে কারচুপি, আর স্বাস্থ্যসেবা হয়েছে দানবদের কারখানা।

কিন্তু আশার কথা—দর্শনার মাটি এখনও উর্বর, তরুণদের হৃদয় এখনও সৎ। যদি তারা চায়, তবে তারা পারবে—এই শহরকে আবার নতুন করে গড়ে তুলতে, সততা, সৃজনশীলতা ও সম্মিলিত নেতৃত্বের আলোয়। কারণ ইতিহাসের সব বড় পরিবর্তনই শুরু হয়েছে তরুণদের হাত ধরে। দর্শনাও তার ব্যতিক্রম নয়।

দর্শনার ভবিষ্যৎ এখন তরুণদের হাতে—যারা এখনো বিশ্বাস করে যে পরিবর্তন সম্ভব, যদি কেউ সত্যিই চায়।

দর্শনা একসময় ছিল দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আলোকবর্তিকা। আজ সেই আলো নিভে আসছে—নেতৃত্বের লোভ, অব্যবস্থাপনা ও মূল্যবোধের সংকটে। তবে পুনর্জাগরণের সম্ভাবনা এখনও রয়েছে। যদি স্থানীয় জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়, যদি তরুণ

প্রজন্ম ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতি সচেতন হয়, এবং যদি সত্যিকারের নৈতিক নেতৃত্ব সামনে আসে—তবে দর্শনা আবারও জেগে উঠতে পারে নতুন আলোয়।

ঐতিহ্য হারিয়ে গেলে একটি শহর কেবল ভূগোল হয়ে থাকে; কিন্তু ঐতিহ্য ফিরে এলে সেটি হয়ে ওঠে ইতিহাসের প্রতিধ্বনি।

লেখক: আব্দুস সামাদ আজাদ বিপু

নিউজ এজেন্সি