বাংলার পতাকাতে- জুলফিকার আলী

নয়টি মাসের যুদ্ধের শেষে
বাংলার দামাল ছেলে,
এ দেশ মুক্ত করল বুকের
তাজা রক্ত ঢেলে।

পাক সেনাদের শাসন বেড়ি
ছিঁড়লো নিজের হাতে,
‘জয় বাংলা’ বিজয় ধ্বনি
মুক্তি পেলাম তাতে।

মায়ের মুখে ফুটল হাসি
সোনার বাংলা গানে,
যুদ্ধে জয়ে মিলল সবাই
ভালোবাসার টানে।

তাই তো গাই ফুল ও পাখিরা
বাংলা প্রান্ত জুড়ে,
বিজয়ের বাতাসে বাংলা
খুশিতে যায় মুড়ে।

তিরিশ লক্ষ প্রাণের দানে
বিজয় পেলাম হাতে
আলোর নাচন লাল সবুজের
বাংলার পতাকাতে।




বিষ ভালোবাসা- মাহবুবা করিম

ভালোবাসলেই জেনে শুনে বিষপান করে মানুষ;
বোধহয় ভালোবেসেই, অন্ধ হয়ে
অমৃত ভেবে তোমাকে গলগল ঢেলে দিয়েছি অন্তরে;
প্রেম ভেবে
সুখ ভেবে
নেশার পেয়ালা ভেবে
শুষে নিয়েছি সাপের চুম্বন

ইতোমধ্যেই
রক্তে মজ্জায়
টের পাই বিষের জ্বালা
ভালোবাসা টের পাই না কেন বলোতো?
ভালোবাসলেই বিষধর সাপ হয়ে যায় বুঝি প্রেমিক?




ডিজিটাল শিশু- গোলাম মোরশেদ চন্দন

বাবা বলে পড়তে বসো, আম্মু বলে খাও
পড়তে এখন ভাল্লাগে না, খেলতে একটু দাও
খেলা শেষে খেয়ে নেবো, বসবো না হয় পড়তে
খাঁচার ভেতর বন্দি করে, বলছে আমায় উড়তে।

এই শহরে নেই এখন আর, খেলার মতো মাঠ
বন্দিজীবন পার করছে, জানালা কপাট।
তারই ফাঁকে সুকৌশলে, আবদ্ধ জীবন
কেউ বোঝেনি সে যন্ত্রণা, করতে হয় বহন।

তাই তো এমন হাজার শিশু, গুহার অন্ধকারে
বাবা মায়ের ভুল ভাবনায়, খেলে কম্পিউটারে।
ডিজিটাল এই যুগের সাথে, মাঠের হয় না দেখা
মায়েরা আজ ভেবে দেখুন, সবশিশুরা একা।।

এই সমাজের সব বড়োরা, আসলে কি বড়
ভাবতে গেলে মনটা আমার,
হয় যে জড়োসড়ো।।




শীতের পিঠা- আরিফুল ইসলাম সাকিব

দাও দাও পিঠা দাও
খাবো পেট ভরে,
খেজুরের গুড় দাও
থালা পুরা করে।

কুয়াশায় ভোর হয়
খুব শীত পড়ে,
কারে কই এই কথা
কাঁপুনি যে ধরে।

পিঠা নিয়ে যাই রোদে
পোহাবার তরে,
কী’যে মজা পাই আহা!
বুঝাই কী করে।




আকাশী রঙের পাঞ্জাবি- রাফিয়া

আমি অনেক কিছুই ভুলে যাই
মনে রাখতে রাখতে কখন যেন ভুলে যাই
যেমনটা ভুলে গেছি মহুয়ার ঘ্রাণ
কোকিলা কন্ঠী বোষ্টমীর গান

মনেই ছিল না বছর ফুরিয়ে বয়স বাড়িয়ে দিল
কাফন চেয়ে চিঠি লিখেছিলাম তাও ভুলে গেছি
দিন বদলের খেলাতে মন বদলের ঋতু পরিবর্তন
মনে পড়ে না ভালোবাসতে চেয়ে ভুল করেছি।

শুধু মনে আছে তোমার পাঞ্জাবির রঙ ছিল আকাশী
প্রথম দিয়েছিলাম আবেগে আবেশ ঘেরা মায়াবী চোখে আকর্ষণ
আমাকে না পাওয়ার বেদনা ভরা মন খারাপের আবেদন

আর সব ভুলে গেছি মনে নেই কিচ্ছু মনে নেই
কিচ্ছু না ।




নতুন বছর- মজনু মিয়া

এল আবার বছর ফিরে
সুখ শান্তি থাকুক ভরে,
আমাদের এই ছোট্ট নীড়ে
এই কামনা যাই করে।

বন্ধ হোক অন্যায় অবিচার
অশান্তি আর অনাচার,
সবাই থাক সুখে সুবিধায়
বন্ধ হোক সব অত্যাচার।

শান্তি সুখের এই করি পণ
ধর্ম কোন বাঁধা নয়,
যে নামেই ডাকি তাঁরে মন
সে তা শুনে সর্বময়।

দ্বিধা দ্বন্দ ভুলে সবে
এক কাতারে দাঁড়ায় আয়,
এর’চে ভালো পথ নাই ভবে
নতুন বছর কামনায়।




অভিমান- আবুল হাসেম

হে! আমার প্রাণ প্রিয় ছাত্র-ছাত্রী
তোমাদের তরে খেটেছি দিবারাত্রি।
তবু-দিতে পারিনে কিছু,
আমি চেয়েছি এগিয়ে নিতে
তোমরা হটেছো পিছু।
তবে কি আমি অপরাধী?
ভেবো না তোমরা জিতে যাবে,
দিতে হবে ভুলের মাশুল জীবনাবধি।
আমি যে তোমার শিক্ষাগুরু
মম হাতে তব শিক্ষা শুরু।
তাচ্ছিল্যর ভরে মাননি সেদিন,
কথা শুনে দিয়েছো-করতালি কিংবা কর্কশ হর্ষ।
আমি দেয়নি কভু অভিশাপ,
হৃদয় দিয়ে বেসেছি ভাল
তাইতো করেছি মাফ।
দোয়া মাঙ্গী বড় হও বৎসরা
নিয়ে দ্বিতীয় জনকের জীবনাদর্শ,
ঘুচে যাবে তব মনের কালিমা
জ্ঞানের মশাল তাড়াবে তিমির
হৃদয় বীণায় বাজিবে সানাই
ওষ্ঠে রাঙ্গিবে হর্ষ।




পরিবার- চাঁদনী

সুন্দর একটা ঘর
সুন্দর একটা বাড়ি,
সুখ আনন্দের পরিবার
চায় ছোট সোনামনি।

ভাল মা-বাবা,
ভাল ভাই-বোন
ভাল নানা-নানী।
ভাল দাদা-দাদী
থাকবে তারা সৎ,
বলবেনা মিথ্যা।
তাদের দেখে
বলব আমি,
সদা সত্য কথা।
সবার ছাড়া-অনেক বেশি
হবে মোর সততা।




মেহেরপুরে গাঁজা রাখার দায়ে একজনের কারাদন্ড

মেহেরপুরে গাঁজা রাখার দায়ে  রুবেল হোসেন নামের এক ব্যাক্তির এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমান আদালত।

শনিবার দুপুরে শহরের ওয়াপদা মোড়ে রুবেল হোসেন কে গাঁজা সহ আটক করা হয়। দন্ডপ্রাপ্ত আসামী রুবেল  দীঘিরপাড়ার হেলাল উদ্দিন এর ছেলে।

ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে  তৌহিদুর রহমান। এসময় উপস্থিত ছিলেন জেলা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এর উপ পরিচালক শাহজালাল খান।

-নিজস্ব প্রতিনিধি




মানব সেবাই যার আমৃত্যু সাধনা

পেশায় নার্স রোজ শুধু অসুস্থদের সেবা দিয়েই দায়িত্ব শেষ করেননি। মেহেরপুরের মুজিবনগরের নিভৃত পল্লী বল্লভপুর মিশন হাসপাতালের এই কর্মী রোগীদের সেবার পাশাপাশি গড়ে তুলেছেন কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। ওই হাসপাতালে নিজ প্রচেষ্টায় স্থাপন করেছেন স্পেশাল বেবি কেয়ার ইউনিট।

বিভিন্ন এলাকার শিশুরা কম খরচে এখানে সেবা পাচ্ছে। প্রায় ১৭ বছর হলো হাসপাতালে ‘জি ওয়ার্ড’ নামে একটি বৃদ্ধাশ্রমও চালু করেছেন, যেখানে বর্তমানে ১৮ জন নিবাসী রয়েছেন।

হাসপাতালের সঙ্গে নার্সিং প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটও প্রতিষ্ঠা করেছেন নার্স রোজ। বর্তমানে সেখানে ৯৬ জন প্রশিক্ষণার্থী রয়েছেন। এখান থেকে প্রতিবছরই প্রশিক্ষণ শেষে নিজের পায়ে দাঁড়াচ্ছেন অনেকে।

স্থানীয় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের জন্য গড়ে তুলেছেন কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার। সেখানে ১৬ জন প্রশিক্ষণার্থী রয়েছেন।

বল্লভপুর মিশন হাসপাতালের ফার্মাসিস্ট সুজিত মণ্ডল জানান, ইংল্যান্ডে জন্ম নেওয়া রোজ সিস্টার ২২ বছরের বেশি সময় ধরে এই হাসপাতালে নার্স হিসেবে কাজ করছেন। এর পাশাপাশি অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোও তত্ত্বাবধান করেন মমতা দিয়ে, নিষ্ঠার সঙ্গে।

তিনি জানান, রোজ সিস্টার এই মিশন হাসপাতালের প্রাণ।

জিলিয়ান এম রোজ ওরফে রোজ সিস্টারের বয়স এখন ৮০ বছর ছুঁই ছুঁই। ধর্মপ্রচারের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে এসেছিলেন। একপর্যায়ে জড়িয়ে পড়েন চিকিৎসাসেবায়। ১৯৮১ সাল থেকে সেবিকা হিসেবে মিশনারি হাসপাতালে যোগ দেন। মানুষের সেবায় আত্মনিবেদিত এই মানুষটি এখন এলাকায় একনামে রোজ সিস্টার হিসেবে পরিচিত।

রোজের বাবা সিএ রোজ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। ১৯৩৯ সালে দক্ষিণ ইংল্যান্ডে জন্ম নেওয়া রোজ ছোটবেলায়ই বাবাকে হারান। মায়ের সংসারে একমাত্র ভাইয়ের সঙ্গে ভালোই চলছিল রোজের। তরুণ বয়সেই নিয়ে ফেলেন জীবনের গুরুত্বপূর্ণ এক সিদ্ধান্ত। তা হচ্ছে খ্রিস্টধর্ম প্রচারে আত্মনিয়োগ। ১৯৬৪ সালে ২৫ বছর বয়সে খ্রিস্টের বাণী প্রচারের উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ড ছেড়ে চলে আসেন এ দেশে।

১৯৮১ সালে ধর্মপ্রচার ছেড়ে সরাসরি চিকিৎসাসেবার মাধ্যমে মানবসেবার সিদ্ধান্ত নেন রোজ। নার্স হিসেবে শুরু করেন মানবসেবা। মাঝখানে ১৯৮৬ সালে বয়োবৃদ্ধ মায়ের সেবার জন্য দেশে ফিরে যান। তবে মা মারা গেলে ওই বছরই ফিরে আসেন বাংলাদেশে। এরপর প্রায় তিন দশকের অধিক সময় ধরে বল্লভপুর মিশন হাসপাতালে সেবিকা হিসেবে সেবা দিচ্ছেন।

মানবসেবায় নিবেদিত এ মানুষটির ব্যক্তিগত জীবনে সংসারী হয়ে ওঠা হয়নি। তাঁর একমাত্র ভাই ডক্টর ডি এ রোজ ইংল্যান্ডে থাকেন পরিবার নিয়ে।

তিনি বল্লভপুর মিশন হাসপাতাল থেকে কোনো বেতন নেন না, ব্রিটিশ সরকারের পেনশনে চলে রোজের সংসার। অন্যদিকে বিভিন্ন দাতা সংস্থা থেকে কিছু অর্থ নিয়ে ও নিজের থেকে কিছু অর্থ দিয়ে বল্লভপুর মিশন হাসপাতালের দরিদ্র রোগীদের সেবা দেন তিনি।

কথা হয় জিলিয়ান এম রোজের সঙ্গে। বয়সের ভারে ন্যুব্জ তবুও কর্মচঞ্চল রোজ বলেন, ‘মানবসেবাই হচ্ছে পরম ধর্ম। সেবার মধ্য দিয়ে ঈশ্বরকে পাওয়া যায়। আমার এই সেবার কার্যক্রমে পরিবারের লোকজনও সন্তুষ্ট। আমি যত দিন বেঁচে থাকব, তত দিন এভাবে সেবা দিয়ে যাব।

পৃথিবীতে এসেছি সেবা দিতে। বৃদ্ধদের জন্য কেউ কিছু করে না। তাই আমি নিজে একটি বৃদ্ধাশ্রম খুলেছি। সেখানে তাঁরা যেন ভালোভাবে মৃত্যুবরণ করতে পারেন।’

রোজ সিস্টার হাসপাতালের রোগী ও প্রশিক্ষণার্থীদের সঙ্গে মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ। মানবসেবায় তিনি যেমন পেয়েছেন আত্মার প্রশান্তি, তেমনি হয়ে উঠেছেন সবার আপনজন। সেবা দিতে গিয়ে এলাকার মানুষের সঙ্গে গড়ে উঠেছে তাঁর আত্মার সখ্য।

অশীতিপর এই বয়সে চলার শক্তি অনেকটা কমে গেলেও দমে যাননি শীর্ণকায় এই আত্মপ্রত্যয়ী নারী।

তবে নিজ দেশ ছেড়ে সুদূর এই দেশে মানুষের সেবায় নিয়োজিত থাকলেও পাঁচ বছর পর পর পাসপোর্ট নবায়ন করতে গিয়ে রোজকে পড়তে হয় বিড়ম্বনায়।

নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছেন। কিন্তু ইতিবাচক সাড়া এখনো পাননি। তাঁকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দিলে একদিকে ভিসা জটিলতা থেকে তিনি মুক্তি পেতেন, অন্যদিকে মানবসেবী এই নারীকে প্রকৃত সম্মানও দেওয়া হতো বলে বলে মনে করেন স্থানীয় ইউপি সদস্য শংকর বিশ্বাস।

বল্লভপুর মিশন হাসপাতালের সব কার্যক্রম চলে চার্চ অব বাংলাদেশের অনুমোদনে। ১৯৮৯ সালে চার্চ অব বাংলাদেশ খ্রিস্টানপ্রধান বল্লভপুরে প্রায় তিন একর জমির ওপর এ হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠান করেন।

এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে নার্সিং প্রশিক্ষণের ছাত্রী মেরি মণ্ডল ও শিলা মণ্ডল বলেন, ‘জুলিয়ান এম রোজ একটি আদর্শ। আমাদের মায়ের মমতা দিয়েই কাজ শেখান তিনি। তাঁকে আদর্শ হিসেবে নিয়ে আমরাও তাঁর মতো জীবন গড়তে চাই।’

বাগোয়ান ইউপি চেয়ারম্যান আইয়ুব হোসেন জানান, এখানে সেবা নিতে আসা রোগীদের সঙ্গে জুলিয়ান এম রোজের এক প্রকার সখ্য গড়ে উঠেছে। মায়ের মমতা মাখা হাত দিয়ে চব্বিশ ঘণ্টা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। সেবা করতে গিয়েই এলাকার মানুষের হৃদয়ে এক অন্য রকম জায়গা করে নিয়েছেন রোজ। এলাকার রোগী ও সাধারণ মানুষ জিলিয়ানকে খুবই আপনজন হিসেবে দেখে।

মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক আতাউল গনি বলেন, ‘জিলিয়ান এম রোজ বাংলাদেশকে ভালোবেসে দীর্ঘদিন ধরে গ্রামীণ মানুষকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়।’

-মর্তুজা ফারুক রুপক