
হিমেল হাওয়ায় নীরব কান্না, একটু সহানুভূতির চোখে একটুকরো শীতবস্ত্র নামক কম্বলের আকুল আবেদন। ধনবান ও সম্পদশালীদের এগিয়ে আসার আহ্বান। ঠান্ডা হিমেল বাতাসে শীতের তীব্র আক্রমণে সাধারণ মানুষের জীবন থমকে গেছে।
আলমডাঙ্গায় তাপমাত্রা নেমে এসেছে প্রায় ৯ ডিগ্রিতে। কনকনে শীতে কাঁপছে উপজেলাবাসী, কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকরভাবে কম্বল বিতরণের কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ নেই। নামমাত্র স্টেশনে দু’দিন বিতরণের কথা শোনা গেলেও সেই কম্বল ছিন্নমূল মানুষের হাতে পৌঁছায়নি।
উপজেলাজুড়ে ঘুরে দেখা গেছে, ঠান্ডার রাতে কারও কপালে জোটেনি একটুকরো উষ্ণতা। কনকনে শীতে প্রাণ কাঁপে, অথচ প্রশাসনের কম্বল এখনো পৌঁছায়নি অসহায় মানুষের হাতে। রাস্তায় এবং যারা খোলা আকাশের নিচে রাত কাটায়, তাদের জন্য প্রশাসনের এই উদাসীনতা সরাসরি অমানবিকতার শামিল।
২০২২ সালের আদমশুমারি রিপোর্ট অনুযায়ী, আলমডাঙ্গায় ১৫টি ইউনিয়নের ২১১টি গ্রাম ও ১টি পৌরসভা নিয়ে প্রায় ৩ লাখ ৮০ হাজার মানুষ বসবাস করে। এছাড়াও উপজেলায় রয়েছে ৬টি আবাসন, ১৩টি এতিমখানা ও ১টি বৃদ্ধাশ্রম যার কোনোটিতেই এবার দৃশ্যমানভাবে কম্বল দেওয়া হয়নি।
অথচ এই শীতে বৃদ্ধদের শরীর নিথর হয়ে আসছে, আর প্রশাসন নীরব দর্শকের ভূমিকায়। প্রশ্ন জাগে এই শীতেও যদি প্রশাসন দায়িত্ব না নেয়, তাহলে কবে নেবে দায়িত্ব?
এটি শুধু অবহেলা নয়, এটি দায়িত্বহীনতার নির্মম উদাহরণ। দ্রুত ও সুষ্ঠুভাবে কম্বল বিতরণে ব্যর্থতার দায় সম্পূর্ণভাবে উপজেলা প্রশাসনের।
জামজামি ইউনিয়নের নারায়ণপুর আবাসনের এক বৃদ্ধা বলেন, এই শীতেও একটা কম্বল পেলাম না। যে শীত পড়ছে, মনে হচ্ছে এবারই সবচেয়ে বেশি শীত পড়ছে। আমরা গরিব মানুষ অন্যের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি কখন একটু গরম কাপড় পাব এই আশায়। গতবার উপজেলা থেকে আগে কম্বল দিয়েছিল, কিন্তু এবার এখন পর্যন্ত পাইনি।
কম্বল বিতরণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে মানবাধিকার কমিশন আলমডাঙ্গা শাখার সভাপতি আল-আমিন হোসেন পরশ বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে যে কনকনে শীত পড়ছে, তাতে মানুষের হাড় কাঁপছে, অথচ উপজেলা প্রশাসন এখন পর্যন্ত কম্বল বিতরণের কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
সিনিয়র সাংবাদিক হামিদুল ইসলাম আজম বলেন, শীত কারও জন্য অপেক্ষা করে না, কিন্তু সহায়তা কেন এত দেরি করে? একটি কম্বল কারও কাছে শুধু কাপড় নয় এটাই তার জীবন বাঁচানোর শেষ আশ্রয়।
এ বিষয়ে আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার পান্না আক্তার বলেন, নির্বাচনের ব্যস্ততার কারণে এবার একটু দেরি হচ্ছে। প্রতিদিনই মিটিং অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে দুই-তিন কার্যদিবসের মধ্যে কম্বল দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।


