দিনমজুর বাবা মুকুল হোসেনের স্বপ্ন ছিল দুই ছেলেকে মানুষ করবেন, লেখাপড়া শিখিয়ে গড়ে তুলবেন ভবিষ্যৎ। তাই জীবনের কষ্ট ভুলে চার-পাঁচ বছরের জন্য পাড়ি জমিয়েছিলেন মধ্যপ্রাচ্যে। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন আজ ছিন্ন-ভিন্ন।
গত ১১ মে, সৌদি আরবের দাম্মাম শহরে হঠাৎ হৃদরোগে মৃত্যু হয় গাংনী উপজেলার কাজীপুর ইউনিয়নের নওদাপাড়ার মৃত আরমান আলীর ছেলে মুকুল হোসেনের। মাত্র দুই মাস আগে, গত ১০ ফেব্রুয়ারি পাড়ি দিয়েছিলেন প্রবাস জীবনে। কিন্তু ভাগ্য দিল না স্বপ্ন পূরণের সে সময়।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে তার মরদেহ সরকারি ব্যবস্থাপনায় নিজ গ্রাম গাংনী উপজেলার কাজীপুর ইউনিয়নের নওদাপাড়ায় পৌছালে বিকালে নিজ গ্রামের কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয় এই প্রবাসীর মরদেহ।
দিনমজুর মুকুল হোসেনের (৪২) স্বপ্ন ছিল ছেলেদের লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করবেন। তাই অর্থের টানে পাড়ি জমিয়েছিলেন সৌদি আরব। গত ১০ ফেব্রুয়ারি তিনি পাড়ি দেন দাম্মামে। সেখানে একটি ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে গাড়ি ধোয়ার শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। পরিবার জানায়, কঠোর পরিশ্রম করলেও আশাবাদী ছিলেন একটু টাকা-পয়সা জমিয়ে দেশে ফিরে একটি ছোট ব্যবসা করবেন। কিন্তু ভাগ্য যেন তার সেই স্বপ্ন পূরণ করতে দিল না।
সৌদি যাবার মাত্র দুই মাস পর, গত ১১ মে হঠাৎ হৃদরোগে মৃত্যুবরণ করেন মুকুল হোসেন। কিন্তু এই মৃত্যু শুধু মুকুল হোসেনের না, ভেঙে পড়া এক পরিবারেরও।
মুকুলের মরদেহ দেশে পৌঁছায় মৃত্যুর প্রায় ৪০ দিন পর। গতকাল মঙ্গলবার সকালে যখন গ্রামের বাড়িতে যখন লাশ পৌঁছে, তখন কান্নায় ভেঙে পড়ে গোটা পরিবার ও প্রতিবেশীরা।
স্ত্রী কাজল রেখা কাঁদতে কাঁদতে বললেন, “ছেলে দুইটার জন্যই উনি গেছেন। কিছুদিন কামাই করে ফিরে আসবেন বলছিলেন। আজ লাশ হয়ে ফিরলেন আমার মানুষটা”।
মৃত্যুর প্রায় ৪০ দিন পর মুকুল হোসেনের মরদেহ দেশে পৌঁছে। স্বজনদের চোখে তখন শুধু কান্না আর অনন্ত অপেক্ষার পরিসমাপ্তি।
মুকুল হোসেনের বড় ভাই আরিফুল ইসলাম বলেন, “প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রথমবার আমরাই দ্রুত মরদেহ হাতে পেয়েছি। সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। তবে, এত দীর্ঘ সময় লাগলো, এই কষ্ট কোনো পরিবারের কাম্য নয়।”
প্রবাসে কর্মরত হাজারো শ্রমিকের মতোই মুকুল হোসেনও ছিলেন একজন স্বপ্নবাজ বাবা। তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন থেমে গেছে এক পরিবারের ভরসা, তেমনি প্রশ্ন উঠেছে প্রবাসে কর্মজীবী শ্রমিকদের সুরক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও দ্রুত মরদেহ ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা আরও দ্রুততর করা যায় কিনা।
তামিম আর হামিম এখনো জানে না, তাদের বাবা আর কোনোদিন ফিরে আসবেন না। রেখে গেলেন শুধু এক বুক স্বপ্ন, ভাঙা একটি ভবিষ্যৎ আর স্ত্রীর চোখের শুকিয়ে না যাওয়া জল।