
অর্ধশত ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন, রাসুল পাক (সাঃ) কে নিয়ে কটুক্তি এবং মেয়েদের পর্দা নিয়ে বাজে মন্তব্য করা ঝিনাইদহ ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির (আই.এইচ.টি) ডেন্টাল ইন্সট্রাক্টর ইসকন সদস্য কার্ত্তিক গোপাল বিশ্বাস এখনো চাকরিতে বহাল রয়েছেন।
গত ৫ আগষ্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পর ভারতে পালিয়ে যাওয়া কার্ত্তিক গোপাল বিশ্বাসের বিরুদ্ধে আদালতে একাধিক মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ও তদন্তে দোষ প্রমাণিত হলেও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর তাকে চাকরীচ্যুত করতে পারেনি। এ নিয়ে ঝিনাইদহ ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজিতে নতুন করে আন্দোলন দানা বেঁধে উঠতে পারে বলে নতুন করে আশংকা দেখা দিয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, ঢাকার স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর ও ঝিনাইদহ ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি স্বৈরাচারের দোসররা ইসকন সদস্য কার্ত্তিক গোপাল বিশ্বাসকে বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। ফলে বিনা ছুটিতে প্রায় এক বছর কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলেও তার বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করেনি। তিনি এখনো চাকুরীতে বহাল রয়েছেন।
আইএইচটি’র একটি সুত্র জানায় ছাত্রীদের যৌন নির্যাতন ও ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ওঠায় কার্ত্তিক গোপাল বিশ্বাস পালিয়ে যান। ২০২৪ সালের ২ সেপ্টম্বর তিনি অজ্ঞাত স্থান থেকে পদত্যগপত্র পাঠিয়ে ভারতে পালিয়ে যান। ওই বছরের ৫ সেপ্টেম্বর ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি’র ছাত্র নাইমুল হাসান মারুফ কার্ত্তিক গোপালকে একমাত্র আসামী করে বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলা করেন, যার মামলা নং ঝিসিআর-৮০৯/২৪। মামলাটি আমলে নিয়ে বিজ্ঞ বিচারক ফারুক আযম ঝিনাইদহ ডিবিকে তদন্তের নির্দেশ দেন।
এদিকে বিষয়টি তদন্তের জন্য গঠিত হয় তদন্ত কমিটি। ২০২৪ সালের ৩ সেপ্টম্বর পাঁচ পৃষ্ঠার একটি তদন্ত প্রতিবেদন ১৯৩৯ নং স্মারকে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠানো হয়। তদন্ত প্রতিবেদনে ডেন্টাল ইন্সট্রাক্টর ও ইসকন সদস্য কার্ত্তিক গোপাল বিশ্বাসের বিরুদ্ধে দোষ প্রমানিত হয়। এ খবর নিশ্চিত করেন আইএইচটির সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডাঃ রেজিনা আহম্মেদ।
এদিকে ২০২৫ সালের ১৪ মে ডেন্টাল ইন্সট্রাক্টর কার্ত্তিক গোপালের বিরুদ্ধে আদালত গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি করলেও এখনো তার কোন সন্ধানে পুলিশের দৃশ্যত কোন তৎপরতা নেই বলে মামলার বাদী অভিযোগ করেন।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, ডেন্টাল ইন্সট্রাক্টর কার্ত্তিক গোপাল বিশ্বাস ডেন্টালের ছাত্রীদের শহরের ব্যাপারীপাড়াস্থ তার চেম্বারে ডেকে এনে হাতে কলমে প্রশিক্ষনের নামে যৌন নির্যাতন চালাতেন। যৌন কর্মে লিপ্ত না হলে মৌখিক পরীক্ষায় ফেল ও লিখিত পরীক্ষায় কম মার্ক দিতেন। এভাবে লম্পট কার্ত্তিক গোপাল একাধিক ছাত্রীর সঙ্গে জোর করে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হতেন।
তাছাড়া কার্তিক গোপাল ক্লাসে নারী শিক্ষার্থীদের পর্দা করার বিষয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে মানহানীকর বক্তব্য দিতেন। তিনি রাসুল পাক (সাঃ) ও আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) কে নিয়েও ক্লাসে কটুক্তি করতেন। হাসিনা ক্ষমতায় থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা কোন প্রতিবাদ করতে পারতেন না। লম্পট কার্ত্তিক গোপাল বিশ্বাসের দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকায় গত ৫ আগষ্টের পর তিনি সহজেই ভারতের পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহ ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি’র অধ্যক্ষ ডাঃ রফিকুল ইসলাম জানান, বিষয়টি ঢাকার স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরকে আগেই লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে। কিন্তু ৫ আগষ্টের পর অফিসিয়ালি অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এ কারণে হয়তো অধিদপ্তর এই চিঠি নাও পেতে পারে। তিনি জানান, কার্ত্তিকের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তারী পরোয়ানার বিষয়টি উল্লেখ করে দ্রুতই অধিদপ্তরকে জানানো হবে।
ঢাকার স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (শৃংখলা) ডাঃ মিছবাহ উদদীন আহমদ জানান, তার দপ্তর এ বিষয়ে কিছুই জানে না। নতুন করে তিনি ঝিনাইদহ ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি কর্তৃপক্ষকে আবার চিঠি দিতে পরামর্শ দেন।