‘বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচ্যগ্র মেদিনী’। সিলেটের লাক্কাতুরায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ যেভাবে পারফরম্যান্স করেছে, সেটি কঠিন এক যুদ্ধেরই নামান্তর। তবে সেই যুদ্ধের শেষটা টাইগারদের পক্ষে কথা বলেনি। তাতে একটি অঘোষিত চাপ তৈরি হয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তদের ওপর।
আর এটা নিয়েই আজ সন্ধ্যা ৬টায় লঙ্কানদের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে মাঠে নামবে টাইগাররা। এই ম্যাচ জিতে লঙ্কান বাহিনী চাইবে সিরিজ নিশ্চিত করতে আর স্বাগতিকদের লড়াই সিরিজ বাঁচানোর। সেই লড়াইয়ের আগে দুই দলই গতকাল বিশ্রামে সময় পার করেছে। এদিকে গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচে স্বাগতিকদের এগিয়ে রাখছেন লঙ্কানদের পরামর্শক সনাথ জয়াসুরিয়া।
গতকাল গণমাধ্যমে জয়াসুরিয়া বলেছেন, ‘এর আগে যখন বাংলাদেশে আসতাম, তখন মূলত উদ্দেশ্য ছিল ক্রিকেট খেলার। মানে খেলোয়াড় হিসেবে আসতাম। এবার এসেছি নতুন দায়িত্ব নিয়ে। শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট প্রশাসন নিয়ে কাজ করছি।’ আজকের ম্যাচ নিয়ে বলেছেন, ‘শ্রীলঙ্কা প্রথম ম্যাচটি জিতেছে, এর মানে এই নয়, তারা এগিয়ে আছে। বুঝতে হবে, এটি বাংলাদেশের পরিচিত জায়গা। এখানে তারা যে কোনো সময় ঘুরে দাঁড়াতে পারে।’ প্রথম ম্যাচে জাকের আলি অনিকের খেলাও জয়াসুরিয়ার নজর কেড়েছে। বাংলাদেশি তরুণকে নিয়ে বলেছেন, ‘সে অসাধারণ ইনিংস খেলেছে। বাংলাদেশ তরুণদের নিয়ে যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, সেটি খুবই ভালো।’
এর আগে প্রথম ম্যাচে অল্পের জন্য জয় থেকে ফিরেছেন জাকের, ফিরেছে বাংলাদেশও। যেই ব্যাটের হাতল ধরে বাংলাদেশকে জয়ের আশা দেখাচ্ছিলেন, আউটের পরে সেই ব্যাট যেন আর টেনেই তুলতে পারছিলেন না জাকের আলি অনিক। হতাশায় নুয়ে পড়া বাংলাদেশি তরুণকে সাজঘরে ফিরতে হয়েছে সেই ব্যাটেই ভর দিয়ে। জয়ের পথে হাল ছেড়ে ড্রেসিংরুমে ফেরার সময় ব্যাট কিছুটা উঠিয়ে আবার যখন সবুজ গালিচার বুকে রাখছিলেন, তখন যেন আর তুলতেই পারছিলেন না সেটি।
রোমাঞ্চকর ঐ মুহূর্তে হতাশায় ডোবেন কোটি কোটি ভক্তও। মাত্র ২৫ বলে ফিফটি তুলে নেওয়া জাকের থেমেছিলেন ৩৪ বলে ৬৮ রান করে। বাংলাদেশের তখন দরকার ছিল ৪ বলে ১০ রান। দাসুন শানাকার করা তৃতীয় বলটিতে সজোরে ব্যাটও চালিয়েছিলেন বাঁহাতি ব্যাটার। কিন্তু লং অফে চারিথ আসালাঙ্কার হাতে ধরা পড়েন তিনি। এরপর ৩ রানের আক্ষেপ নিয়ে ফিরতে হয় লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের। এটি ছিল টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের চতুর্থ ক্ষুদ্র ব্যবধানে পরাজয়।
প্রথম ম্যাচটিতে ২৭ বলে রিয়াদও করেছিলেন ফিফটি। তবে এরপর তিনি ইনিংসটাকে আর বড় করতে পারেননি। বাংলাদেশের বড় ধাক্কাটা আসে সেখান থেকেই। রিয়াদ যদি আর কিছু বল খেলে যেতে পারতেন, তাহলে ম্যাচের ফল অন্য রকমও হতে পারত। ম্যাচ শেষে শ্রীলঙ্কার সাদিরা সামারাবিক্রমা বলেন, ‘প্রথমত, আমি যখন মাহমুদউল্লাহর ক্যাচ ছেড়ে দিলাম, আমার মনে হয়েছিল ম্যাচ আমাদের হাত থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। পরে মাহিশ (থিকশানা) মাহমুদউল্লাহর উইকেট নিয়ে নিল। সেটাই টার্নিং পয়েন্ট ছিল মনে হয়। আমাদের বোলাররা বেশ ভালো বোলিং করেছে চাপের মধ্যে। মাহিশ থিকশানা দারুণ বোলিং করেছে। শেষ ওভারে দাসুন শানাকা দুর্দান্ত করেছে। এর ফলেই ম্যাচ ঘুরে গেছে।’
এদিকে প্রথম ম্যাচের মতো আজকের ম্যাচেও বাংলাদেশের ট্রাম্পকার্ড হিসেবে থাকবেন রিয়াদ ও জাকের। ব্যাট হাতে এ দুই তারকা আলো ছড়াতে পারলে বাকি কাজটুকু সারতে হবে বোলারদের। প্রথম ম্যাচে বল হাতে হতাশ করেছেন পেসাররা। প্রথম ওভারটা শরিফুল ইসলাম যেভাবে শুরু করেছিলেন, সেটি আর ধরে রাখতে পারেননি। কাজের কাজটি করতে পারেননি তাসকিন আহমেদ-মুস্তাফিজুর রহমানরাও। তবে এই জায়গা থেকে ব্যবধান গড়ে দিয়েছেন অভিজ্ঞ অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। ব্যক্তিগত কোটার চেয়ে ১ ওভার কম বল করেও থামিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের জয়রথ। সেই পরিকল্পনা মাথায় রেখেই সিরিজ বাঁচানোর লড়াইয়ে নামছে বাংলাদেশ। তবে লিটন দাস, সৌম্য সরকার, তাওহীদ হৃদয় কিংবা অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তদেরও দায়িত্ব কম নয়। লঙ্কান কিংবদন্তি জয়াসুরিয়া যেভাবে বাংলাদেশকে এগিয়ে রাখছেন, সেই ভাবনা নিয়ে স্বাগতিকদেরও এগিয়ে যেতে হবে।
আজকের ম্যাচে হারলে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের পরে প্রথম টি-টোয়েন্টি সিরিজ হারের স্বাদ পাবে টাইগার বাহিনী, বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড-পাকিস্তান তিন জাতির সিরিজ বাদে। এর আগে সংযুক্ত আরব আমিরাত (২-০), ইংল্যান্ড (৩-০), আয়ারল্যান্ড (২-১) ও আফগানিস্তানকে (২-০) হারিয়ে এসেছে লাল-সবুজের দল। শ্রীলঙ্কার আগে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলা সিরিজটাও (১-১) ড্র করেছিল বাংলাদেশ। তাতে দলটিকে ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত এই সংস্করণে অপ্রতিরোধ্য হিসেবেই দেখা হচ্ছে। এবার সেটি আরো একবার প্রমাণ করতে হবে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে।
সূত্র: ইত্তেফাক