
ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলা সিনিয়র সহকারী জজ আদালত চত্বরে জাল কোর্ট ফি’র রমরমা বাণিজ্য চলছে দীর্ঘদিন ধরে। স্ট্যাম্প ভেন্ডার ও ফটোকপির দোকানগুলোর মাধ্যমে প্রতিনিয়তই ছড়িয়ে পড়ছে জাল কোর্ট ফি। এতে সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব, আর লাভবান হচ্ছে একটি প্রভাবশালী অসাধু সিন্ডিকেট।
জানা গেছে, সম্প্রতি জমিজমা সংক্রান্ত একটি দেওয়ানি মামলার আবেদনপত্রে (আর্জিতে) লাগানো কোর্ট ফি নিয়ে সন্দেহ হলে আদালতের সিনিয়র সহকারী জজ বিচারক মেশিনের মাধ্যমে কোর্ট ফি যাচাইয়ের নির্দেশ দেন। গত ৮ জুলাই পরীক্ষা করে দেখা যায়, আর্জিতে লাগানো বেশির ভাগ কোর্ট ফি জাল। এসব কোর্ট ফিতে কোনো সরকারি জলছাপ, সিরিয়াল নম্বর কিংবা বৈধতা নিশ্চিতকরণ চিহ্ন মেলেনি।
এই ঘটনায় আদালতের সেরেস্তাদার আবু সাঈদ বাদী হয়ে ১০ জুলাই মহেশপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা একাধিক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, আদালত প্রাঙ্গণের আশপাশে থাকা কিছু স্ট্যাম্প ভেন্ডার ও ফটোকপির দোকান থেকেই মূলত এই জাল কোর্ট ফি বাজারজাত হচ্ছে। এসব দোকানে পাঁচ, দশ ও বিশ টাকার কোর্ট ফি পাওয়া যায়। তবে বিশ টাকার কোর্ট ফিতেই বেশি পরিমাণে জাল কাগজ শনাক্ত হচ্ছে।
আইনজীবীদের সহকারীরা জানিয়েছেন, আমরা স্ট্যাম্প ভেন্ডারদের দোকান থেকেই কোর্ট ফি সংগ্রহ করি। তবে হাতে কোনো যাচাইকরণ মেশিন না থাকায় কাগজটি জাল কি না তা যাচাই সম্ভব হয় না।
এ বিষয়ে স্ট্যাম্প ভেন্ডার বাবর আলী বলেন, আমার দোকানের কোনো কোর্ট ফি এখনও পর্যন্ত জাল প্রমাণিত হয়নি। তবে এটা ঠিক, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অতিরিক্ত লাভের আশায় নকল কোর্ট ফি বিক্রি করে থাকেন। অনেকেই জানে না যে তারা জাল কোর্ট ফি কিনছেন।
সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের সেরেস্তাদার আবু সাঈদ বলেন, জাল কোর্ট ফি শনাক্ত হওয়ার পরপরই আমরা বিচারকের নির্দেশে পরীক্ষা করেছি। বেশিরভাগই জাল প্রমাণিত হয়েছে। বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়ে নিয়েছি এবং থানায় মামলা করেছি। তদন্তের জন্য পুলিশের সহায়তা চাওয়া হয়েছে।
মহেশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তদন্ত সাজ্জাদুর রহমান বলেন, আমরা ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু করেছি। আদালতের দেওয়া নমুনা কোর্ট ফি ও দোকানগুলোর কার্যক্রম খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয়রা মনে করছেন, এই সিন্ডিকেট অনেকদিন ধরেই গোপনে এই জালিয়াতি করে আসছে। প্রশাসনের নজরদারি এবং কার্যকর অভিযানের অভাবেই তারা পার পেয়ে যাচ্ছে।
এদিকে আদালত সংশ্লিষ্টরা কোর্ট ফি বিক্রির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট লাইসেন্স, যাচাইযোগ্য উৎস এবং মেশিনে পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি তুলেছেন।
সরকারি রাজস্ব ফাঁকি এবং বিচার ব্যবস্থার মতো একটি সংবেদনশীল জায়গায় এমন জালিয়াতির ঘটনায় সাধারণ মানুষ উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে।