মেহেরপুরে আমবাগানগুলোতে চলতি মৌসুমে এক অজানা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। যা আমচাষীদের জন্য বড় ধরনের উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। এই রোগে পরিপক্ব আম গাছ থেকে নামানোর ২-৩ দিনের মধ্যেই বোটার (ডাঁটার) দিক থেকে পচে যাচ্ছে এবং খাওয়ার অযোগ্য হয়ে পড়ছে। কৃষি বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন রোগটি ‘স্টেম-এন্ড রট’ বলে। জেলায় ২৩৬৬ হেক্টর বাগানে ৪৫৫১০ মেট্রিক টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা। এক হাজার মেট্রিক টন আম পচে গেলেও প্রতি মন আম ১৫ শ টাকা হলেও দেড়শ কোটি টাকার ক্ষতি।
প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে, এই রোগ প্রতিটি বাগানে ছড়িয়ে পড়েছে। এবং প্রায় ২ হাজার হেক্টর আমবাগান মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন। বিগত বছরগুলোতে এমন পরিস্থিতি কখনো দেখা যায়নি। ভোক্তারা বাজার বা বাগান থেকে আম ক্রয় করে বাড়িতে নেয়ার দুইদিন পর থেকেই তাদের আমে পচন ধরছে। এসব পচনধরা আম পৌরসভার ডাস্টবিনগুলো ভরে যাচ্ছে প্রতিরাতে। শহরের গড়পাড়ায় একটি পুকুরপাড়ে দেখা যায় ফেলে দেয়া আমের স্তুপ।
শহরের গড় পাড়ার শিখা বেগম জানান, বাজার থেকে আম কেনার পর আমে পচন দেখা দেয়াতে আবর্জনার স্তুপে ফেলে দিয়েছেন।
অনেকেই কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে নিকটস্বজনদের কাছে মেহেরপুরের সুস্বাদু হিমসাগর আম পাঠিয়েছেন। সেসব ভোক্তারা আম পচে গেছে বলে প্রেরণকারীকে জানিয়েছেন। রাজশাহী আমচাষের জন্য বিখ্যাত হলেও সুস্বাদু আমের জেলা মেহেরপুর। যার সুখ্যাতি ইউরোপ মহাদেশে ছড়িয়েছে। অজানা রোগের কারণে এবার সেই সুখ্যাতি বিলিন হয়ে পড়েছে। আমপচা রোগের কারণে স্থানীয় বাজারে ভোক্তাসংকট দেখা দিয়েছে।
কৃষি বিশেষজ্ঞগণ ধারণা করছেন, এটি হয়তো ছত্রাকঘটিত কোনো মহামারি (যেমন স্টেম-এন্ড রট বা অ্যানথ্রাকনোজ) বা পরিবেশগত পরিবর্তনের কারণে হয়ে থাকতে পারে। তবে কোন চাষী অভিযোগ না জানানোর কারণে কৃষি কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ে সরিজমিনে কোন বাগান বা আম বাজারে কারিগরি টিম প্রেরণ করেননি।
মেহেরপুর জেলা কৃষি অফিসের এক কর্মকর্তা জানান- তিনিও বাজার থেকে আম কিনে দুইদিনের মধ্যে পচে গেছে। ফ্রিজে রাখলেও আমে পচন ধরছে। গাছ থেকে সংগ্রহ করা আমেও এমনটা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এ রোগের বিস্তার রোধ ও ভবিষ্যতের জন্য সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হবে। এখনই পরবর্তী মৌসুমের জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা বা বর্তমান পরিস্থিতি বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা না হলে আমচাষে চরম বিপর্যয় দেখা দেবে।
মেহেরপুর জেলায় ২৩৬৬ হেক্টর জমিতে আমের বাগান আছে। চলতি মৌসুমে আম উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৫৫১০ মেট্রিক টন। এক হাজার মেট্রিক টন আম পচে গেলেও প্রতি মন আম ১৫ শ টাকা হলেও দেড়শ কোটি টাকার ক্ষতি।
সদর উপজেলার আমচাষী রুস্তুম আলী জানান, ১৮ মে পরবর্তী ২৭ মে থেকে এক সপ্তাহ ধরে বৃষ্টির পর গাছ থেকে আম সংগ্রহর পর সেই আম সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না। তিনি ধারণা করছেন- আবহাওয়া জনিত কারণে এক ধরণের ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে প্রতিটি বাগানে।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সামসুল আলম বলেন- ‘আবহাওয়াজনিত ছত্রাকবাহিত ‘স্টেম-এন্ড রট’ রোগে এমন হতে পারে। আম সংগ্রহের অন্তত পনেরদিন আগে ফলবান গাছে কোনধরণের ওষুধ স্প্রে করা যাবে না।’ কোন আমচাষী বা ভোক্তা থেকে অভিযোগ না পাওয়াতে কারিগরি টিম সরেজমিন পর্যবেক্ষণ করানো হয়নি। বিষয়টি তিনি দেখবেন বলে জানান।