মেহেরপুরে আশঙ্কাজনক ভাবে বেড়েছে ব্যাটারি চালিত রিক্সা, ভ্যান ও ইজিবাইক থেকে ব্যাটারি চুরির ঘটনা। নানা ভোগান্তির অজুহাতে থানায় অভিযোগ করতে ভুক্তভোগীদের অনীহা।
গত এক মাসে মেহেরপুর পৌর শহরের মিয়া পাড়া থেকে মনিরুল ইসলাম, হাসমত, মজিবর ও জনি নামের রিকশাচালক, ভ্যান চালক বাবু এবং ইজিবাইক চালক ইজিল সহ মোট ৬ জনের বাড়ি থেকে তাদের বাহনের ব্যাটারি খুলে নিয়ে গেছে সঙ্ঘবদ্ধ চোরেরা। জানা গেছে প্রত্যেকের রিক্সার চারটি ব্যাটারির মধ্যে দুইটি করে চুরি করে নিয়ে গেছে চোরেরা।
মেহেরপুরের মল্লিক পাড়ার দবিরের মোড় এলাকার কয়েকজন রিক্সা চালক জানান মাস খানেক আগে মেহেরপুরের গোরস্থান পাড়ায় এক রিকশা চালকের রিকশা থেকে চারটি ব্যাটারিই চুরি করে নিয়ে যায় চোর চক্র। দিঘির পাড়া থেকে খাইরুল নামের এক রিকশা চালকের ব্যাটারি চালিত রিকশাটিই চুরি হয়ে গেছে রাতের আধারে।
এছাড়াও বিগত কিছুদিন যাবত বেড়েছে ইজিবাইক চুরি ও ছিনতাই এর ঘটনা। সম্প্রতি মেহেরপুরে ঘটে যাওয়া কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের সাথে ইজিবাইক ছিনতাইয়ের যোগসূত্র পাওয়া গিয়েছিল।
মেহেরপুর জেলা অটো মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘জেলাতে সমিতির তালিকাভুক্ত প্রায় ২ হাজার ৭০০ জন ইজিবাইক চালক রয়েছেন। সমিতির বাইরেও মেহেরপুরে চলে আরো অসংখ্য ইজিবাইক। যাদের ক্ষয়ক্ষতির হিসাব সমিতির জানা নেই।’
গোলাম মোস্তফা আরো বলেন, ‘বিগত কয়েক মাসে আমার জানামতে মেহেরপুর জেলা থেকে দশটার অধিক ইজিবাইক চুরি হয়েছে। এরমধ্যে ইজিবাইক মালিক সমিতি শামীম ও সামাদ নামের দুই ইজিবাইক মালিকের ইজিবাইক উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। কয়েকদিন আগে দক্ষিন শালিকা গ্রামের বাহারুলের ছেলে অটোচালক আকাশ অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে তার ইজিবাইকটি খোয়াই। চারদিন পর আকাশের জ্ঞান ফিরেছিলো। মাস ছয়েক আগে হানিফ নামের এক অটোচালক মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের কাটাই খানার সামনে থেকে তার ইজিবাইক খুইয়েছেন। ঘটনাগুলোতে নিয়ে মেহেরপুর সদর থানা ও মুজিবনগর থানায় অভিযোগ ও সাধারণ ডায়েরি করলেও ইজিবাইক গুলি এখনো উদ্ধার হয়নি।
রিকশা চালকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে ব্যাটারি হারালেও তারা থানায় কোন অভিযোগ করেননি। থানায় অভিযোগ না করার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তারা বলেন, অভিযোগ করতে গেলে আগেই ৫০০ টাকা দেয়া লাগে, এরপরও কোন উদ্ধার হয় না। এজন্যই তারা অভিযোগ না করে বিভিন্ন জায়গা থেকে লোন করে নতুন ব্যাটারি কিনেছেন।
মিয়া পাড়ার অধিবাসী ভুক্তভোগী রিক্সা চালক মনিরুল ইসলাম (মনি) বলেন, ‘সারাদিন রিক্সা চালিয়ে রাতে নিজ বাড়িতে রিক্সা চার্জ দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। সকালে উঠে দেখি চারটি ব্যাটারির মধ্যে দুইটি ব্যাটারিই চোরে নিয়েগেছে। রিকশা চালিয়ে সারাদিন যা আয় করি তা দিয়েই কোনরকমে সংসার চালাই। ব্যাটারি হারানোর পর নিরুপায় হয়েই সমিতি থেকে লোন করে ২৭ হাজার টাকা দিয়ে নতুন ব্যাটারি কিনেছি। ‘
মেহেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ কামরুল আহসান বলেন, ‘থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে কোন খরচ হয়না। দেশের প্রচলিত আইনের প্রতি সম্মান দেখিয়ে ভুক্তভোগীদের পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ। ভুক্তভোগীরা সংশ্লিষ্ট থানায় অভিযোগ করলে তার প্রেক্ষিতে পুলিশ অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে।’