মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে গাইনি ওয়ার্ডে চলমান টাইলস লাগানোর নির্মাণকাজের মধ্যে গত এক মাসে জন্ম নিয়েছে ৪২ নবজাতক। এর মধ্যে সিজারিয়ানের মাধ্যমে ৩১ এবং স্বাভাবিকভাবে জন্ম নিয়েছে ১১জন শিশু। এই নবজাতক ও তাদের মায়েদের রাখা হয়েছে গাইনি ওয়ার্ডের বিভিন্ন কক্ষে, যেখানে প্রতিদিন উচ্চ শব্দে টাইলস কাটার যন্ত্র ও হাতুড়ির আঘাতে কম্পিত হচ্ছে চারপাশ।
গাইনি ওয়ার্ডের পাশেই অবস্থিত অপারেশন থিয়েটারে নিয়মিত সিজারিয়ান অপারেশন চলছে। সেসব শিশুদের রাখা হচ্ছে অপারেশন থিয়েটারের পাশের রুমগুলোতে। যেখানে জোরালো নির্মাণকাজ রোগীদের জন্য একপ্রকার নিরব যন্ত্রণা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নির্মাণযন্ত্রের শব্দে শিশুরা ঘন ঘন চমকে উঠছে, ঘুম ভেঙে যাচ্ছে, কান্নাকাটি করছে, এবং মা-বাবারা পড়ছেন উদ্বেগে।
গাইনি ওয়ার্ডে থাকা নবজাতকের মা শুভরাজপুর গ্রামের মোছা. রুনা খাতুন বলেন, “আমার বাচ্চা একটু শব্দ হলেই কেঁদে ওঠে। ডাক্তাররা বিশ্রাম নিতে বলেছে, কিন্তু এখানে বিশ্রাম নেওয়া অসম্ভব।”
গাইনি ওয়ার্ডের এক সেবিকা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “শিশুরা শব্দে অস্থির হয়ে ওঠে। মায়েরা ঘুমাতে পারছেন না। আমরা কর্তৃপক্ষকে বলেছি, কিন্তু এখনো কোনো কার্যকর পদক্ষেপ হয়নি।”
হাসপাতালের ওই ওয়ার্ডের সেবিকা ইনচার্য শিউলী সরকারের মতে, নবজাতকেরা শব্দের প্রতি অতিমাত্রায় সংবেদনশীল। অতিরিক্ত শব্দ তাদের শ্রবণশক্তি, স্নায়ু ও ঘুমের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। জন্মের পরপরই শিশুদের শান্ত ও শব্দমুক্ত পরিবেশে রাখা অত্যন্ত জরুরি। কর্ত্তৃপক্ষ যেভাবে বলেন, আমরা সেভাবে দায়ীত্ব পালন করি।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শাহরিয়ার শায়লা জাহান বলেন, “পরিস্থিতি আমরা জানি। গণপূর্ত বিভাগ জানিয়েছিলেন ১০ দিনের মধ্যে কাজ শেষ হবে। একমাসেও শেষ হচ্ছেনা। এখনও বেশ ক‘দিন লাগবে মনে হচ্ছে। দ্রুত কাজ শেষ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তবে শব্দ যাতে নিয়ন্ত্রণে থাকে সে চেষ্টাও চলছে।”
অভিভাবক ও সচেতন মহলের দাবি, হাসপাতালের মতো সংবেদনশীল জায়গায় এই ধরনের নির্মাণকাজ সময় ও স্থান বিবেচনায় পরিচালনা করা উচিত। নবজাতক শিশুদের অন্যত্র সরিয়ে অথবা নির্মাণের সময় সীমিত করে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। অথবা গাইনি ওয়ার্ড সাময়িক স্থানান্তর করা উচিৎ ছিল।
শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্যের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত বিষয়টি দ্রুত সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পিত ও দায়িত্বশীল আচরণই হতে পারে স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নের অন্যতম ভিত্তি।