
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মধুপুর বাজারে একটি ১৫০ বছর বয়সী কড়ই গাছ কাটা ঠেকাতে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত আবেদন এবং পরে এলাকার ৬১ জন মানুষের ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে অঙ্গিকার নামা জমা দেওয়ার পরেও অনড় প্রশাসন।
উপজেলা প্রশাসন নিলামের সমস্ত প্রক্রিয়া শেষ করেছে। তবে গাছ কাটার ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়ার আগে আবারও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এলাকাবাসী।
বুধবার দুপুরে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হোসনে আরার কার্যালয়ে অঙ্গিকারে স্বাক্ষর করা ব্যক্তিদের ডেকে হ্যাঁ-না ভোট করা হয়। তবে সেখানেও গাছ না কাটার পক্ষের জয় হয়েছে।
সদর উপজেলার পোড়াহাটি ইউনিয়নের মধুপুর বাজারটির আনুমানিক বয়স দেড়শত বছর। এই বাজারের পেরিফেরির জায়গায় রয়েছে সার্ধশত বছর বয়সী রেইন্ট্রি কড়ই গাছটি। ওই বাজারের ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমিতির সভাপতি একলাচুর রহমান জানান, তার বর্তমান বয়স ৭২ বছর। ধারণা করা যায় বাজারটি গড়ে ওঠার সময় বাজারের দক্ষিণ পাশে এই গাছের চারা রোপণ করা হয়। যা কালক্রমে অনেক বড় হয়েছে। বর্তমানে বাজারটিতে ২৫০ টির অধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যার একপাশের শতাধিক প্রতিষ্ঠান এই গাছের ছায়া ভোগ করছে। গাছটি বাজারের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করছে। তাছাড়া এখন পর্যন্ত গাছের ডাল পড়ে তাদের বা কোনো ব্যবসায়ীর কোনো ক্ষতি হয়নি।
তিনি জানান, গত জুলাই মাসের শেষ দিকে প্রবল বৃষ্টির কারণে মাছ বাজারের পাশে একটি ছোট বট গাছ চাঁদনীর ওপর হেলে পড়ে। তারা চান এই গাছটি অপসারণ করা হোক। এ জন্য স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে উপজেলা প্রশাসনকে সেই সময় অবহিত করা হয়। উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে নির্বাহী কর্মকর্তা হোসনে আরা সরেজমিনে দেখতে আসেন। পরে উপজেলা ্রশাসনের পক্ষ থেকে হেলেপড়া গাছটি কাটার উদ্যোগ নিয়ে ওই বট গাছের সঙ্গে তরতাজা সবুজ কড়াই গাছটি নিলাম আহবান করা হয়েছে। গত ১০ সেপ্টেম্বর এই নিলাম অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। সেদিন আবেদন ও অঙ্গিকার নামার কারণে সাময়িক স্থগিত করা হলেও পরবর্তীতে আবার নিলাম আয়োজন করা হয়েছে। নিলামে সর্বোচ্চ দরদাতা নির্বাচিত হয়েছেন যবদল নেতা মনিরুল ইসলাম।
বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম জানান, তারা হঠাৎ করে জানতে পারেন বাজারের হেলেপড়া বট গাছটি কাটতে গিয়ে সঙ্গে বড় কড়াই গাছটিও নিলাম ডাকা হয়েছে। এই খবর পেয়ে তারা প্রথমে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেনের কাছে যান। তিনি সঠিক উত্তর দিতে না পারলে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন নিয়ে যান। সেখান থেকে তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার যান। সেখানে গিয়ে তাদের অভিযোগ জানান ও গাছটি না কাটার দাবি জানালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাদের দাবি প্রথমে রাখতে রাজি হন। এই দাবি রাখতে তিনি একটি অঙ্গীকার দেওয়ার কথা বলেন। যেখানে গাছের ডাল পড়ে অথবা গাছ উপড়ে কোনো জানমালের ক্ষতি হলে বা আর্থিক ক্ষতি হলে তাদের দায়ি থাকতে হবে। গাছ রক্ষায় এলাকার ৬১জন মানুষ ৩০০ শত টাকার ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে অঙ্গীকার দিয়েছেন। এভাবে তারা গাছটি রক্ষা করেছেন, কিন্তু গাছ রক্ষা করতে গিয়ে তাদের কাঁধের ওপর একটি বোঝা চাপিয়ে দেওয়ায় তারা হতাশ হয়েছেন। তারা প্রয়োজনে মানববন্ধন করবেন বলেও জানান।
স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন জানান, তিনি অল্পদিন এখানে যোগদান করার পর বট গাছটি হেলেপড়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গাছটি দেখতে আসেন। তিনি সরোজমিনে দেখে গাছ নিলাম আহবান করেছেন।
ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, তিনি ওই একটি গাছ অপসারণের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করেছিলেন। ঝড় বাদলে কড়াইগাছটি ভেঙে পড়ে মানুষের ক্ষতি হতে পারে ভেবে। তবে এখন তিনিও সবুজ গাছটি বেঁচে থাক এটাই চান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোসনে আরা জানান, গাছ নিলামের অনুমতি দিয়েছেন ডিসি স্যার। তিনি পরবর্তীতে কেন নিলাম হলোনা সেই কৈফিয়ত চান। ডিসি স্যার তাদের অঙ্গিকারনামা আমলে নেননি। তাছাড়া সদর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত ভূমি সহকারী কমিশনার হিসেবে নিলাম কমিটির সেক্রেটারি। আমি শুধু নির্দেশ পালন করছি।