
দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন পূরণে ১৮ বছর ধরে বৃত্তি দিয়ে আসছে ‘আসিশ’ নামের একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। এর ধারাবাহিকতায় বুধবার কোটচাঁদপুর পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে বৃত্তি পরীক্ষা।
সামনের দিনগুলোতেও এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের সভাপতি ইসাহক আলী।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা অব্যাহত রাখতে ২০০৭ সালে ‘আসিশ’ নামের অরাজনৈতিক সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়। হাঁটি হাঁটি পা পা করে সংগঠনটি আজ ১৮ বছরে পদার্পণ করেছে। এ বছরও শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদানের লক্ষ্যে বুধবার সকালে কোটচাঁদপুর পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
এ বছর ওই পরীক্ষায় ৫টি বিদ্যালয়ের ৬৫ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। এর মধ্যে কোটচাঁদপুর পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ের ৩৬ জন, বলুহর শেখ মোজাফফরের ৭ জন, শেরখালী বিদ্যালয়ের ১ জন, কোটচাঁদপুর বালক বিদ্যালয়ের ৫ জন এবং হাকিমপুর একটি বিদ্যালয়ের ১৬ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন।
এ বিষয়ে ‘আসিশ’ এর সভাপতি ইসাহক আলী বলেন, স্বপ্নের শুরুটা হয় ৫ম ও ৮ম শ্রেণিতে বৃত্তি না পাওয়ার বেদনা থেকে। আর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয় এইচএসসিতে বোর্ড বৃত্তি পাওয়ার পর। সালটা ছিল ১৯৮৯। মাত্র ৪০০ টাকা জমিয়ে সিদ্ধান্ত নিই এই টাকা থেকে কিছু কিছু করে দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের সহায়তা করব।
তিনি আরও বলেন, আমি নিজেও একটি হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান। সে কারণেই ২০০৭ সালে আমার বাবা মারা যাওয়ার পর আমার জীবনে বড় ভূমিকা রাখা মা, বাবা, বাবাতুল্য এক ভারতীয় বৃদ্ধ ব্যক্তি এবং আরও একজন বিশেষ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানবিক মানুষের নামের সমন্বয়ে ‘আসিশ’ নামে একটি অরাজনৈতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা হয়। শুরু থেকেই প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রী বাছাই করে আর্থিক সহায়তা ও সনদ প্রদান করা হয়ে থাকে। এর ধারাবাহিকতায় এ বছরও বৃত্তি প্রদানের লক্ষ্যে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও সংগঠনটি প্রতি বছর দরিদ্র ও অসহায়দের শীতবস্ত্র ও নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করে আসছে। এ পর্যন্ত প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থীকে ক্রেস্ট, অর্থ ও সনদ প্রদান করা হয়েছে। সামনের দিনগুলোতেও এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
ইসাহক আলী কোটচাঁদপুর পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি উপজেলার তালসার গ্রামের মৃত আশরাফ আলী মিয়াজির ছেলে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অশোক কুমার বলেন, বিধি অনুযায়ী শিক্ষকরা বেশ কিছু কাজের সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন না, তবে এটি সেই কাজগুলোর মধ্যে পড়ে না। সেহেতু তিনি এ কাজ করতেই পারেন। এটি একটি অত্যন্ত ভালো উদ্যোগ। এর মাধ্যমে সমাজের ঝরে পড়া দরিদ্র শিক্ষার্থীরা পড়ালেখায় উৎসাহ পাচ্ছে এবং ফিরে আসার সুযোগ পাচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাসান বলেন, এ ধরনের আয়োজন অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। এটি সমাজের ঝরে পড়া দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের আবারও পড়ালেখায় ফিরিয়ে আনতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।


