মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে কমনওয়েলথ গেমস মেয়েদের ক্রিকেট বাছাইয়ে কেনিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের জয় ৮০ রানে। এটি বাংলাদেশের টানা দ্বিতীয় জয়। বুধবার কিনরারা একাডেমি ওভাল মাঠে ২০ ওভারে বাংলাদেশ তোলে ১২৫ রান। এই রান তাড়া করতে কেনিয়া অলআউট হয়েছে মাত্র ৪৫ রানে।
৯ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান ছিল ৬ উইকেটে ৫০। সপ্তম উইকেটে সালমা ও রিতু গড়েন ৭৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি। মেয়েদের টি-টোয়েন্টিতে এটি সপ্তম উইকেটের রেকর্ড। আগের রেকর্ড ছিল তাঞ্জানিয়ার মনিকা পাসকাল ও নাসারা সাইদির। ২০১৯ সালে তারা উগান্ডার বিপক্ষে রুয়ান্ডায় সপ্তম জুটিতে তুলেছিলেন ৭২ রান। তবে ম্যাচের সেরা হয়েছেন নাহিদা। তিনি ১২ রানে শিকার করেছেন ৫ উইকেট।
মেয়েদের টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সেরা বোলিং কীর্তি এটি। আগের সেরা ছিল ২০১৮ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে পান্না ঘোষের ১৬ রানে ৫ উইকেট। স্পিন বোলিংয়ে ৫ উইকেট বাংলাদেশের এটিই প্রথম। ২০১২ সালে শ্রীলংকার বিপক্ষে সালমা খাতুনের ৬ রানে ৪ উইকেট ছিল স্পিনে আগের সেরা। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামার পর এ দিন বাংলাদেশের শুরুটা খুব খারাপ ছিল না। মুর্শিদা খাতুনের ব্যাটিংয়ে প্রথম ২ ওভারেই আসে ২৪ রান।
তৃতীয় ওভারে আউট হন ওপেনার শামিমা সুলতানা। আরেক প্রান্তে মুর্শিদা রান তুলতে থাকায় তবু ৫ ওভারে ৪০ রান চলে আসে। এর পরই কুইন্টর অ্যাবেল ও মার্সিলিন ওচিংয়ের বোলিংয়ে একের পর এক উইকেট হারাতে থাকে বাংলাদেশ। অধিনায়ক নিগার সুলতানা, অভিজ্ঞ রুমানা আহমেদ, ফারজানা হকরা স্রেফ উইকেটে আসা যাওয়া করেন। ৮ রানের মধ্যে ৫ উইকেট হারিয়ে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং।
রেকর্ড গড়া বোলিং করে ম্যাচের সেরা নাহিদা আক্তার। সেই ধ্বংসস্তূপ থেকেই দারুণ লড়াইয়ে দলকে এগিয়ে নেন সালমা ও রিতু। একসময় দলের প্রধান ব্যাটার ছিলেন সালমা, ব্যাট করতেন টপ ও মিডল অর্ডারে। সময়ের পরিক্রমায় ব্যাটিং ধার হারিয়ে এখন তিনি ব্যাট করে লোয়ার-মিডল অর্ডারে। আরেক প্রান্তে অলরাউন্ডার রিতু মনি খেলেন তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস। ৬৬ বলে ৭৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন দুজন।
বাংলাদেশের হয়ে সপ্তম উইকেটে আগের সর্বোচ্চ জুটি ছিল মাত্র ৩৮ রানের। ২০১৯ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে লাহোরে ফারজানা হক ও লতা মণ্ডল গড়েছিলেন ওই জুটি। ৩ চারে ৩২ বলে ৩৩ রানে অপরাজিত থাকেন সালমা। ২০১৪ সালের মার্চের পর টি-টোয়েন্টিতে এটি তার সর্বোচ্চ ইনিংস। অবিশ্বাস্যভাবে ২০ ইনিংস পর তিনি ছুঁতে পারলেন দুই অঙ্ক।
৩ চারে ৩৪ বলে ৩৯ রান করে অপরাজিত থাকেন রিতু। আগের ৩১ টি-টোয়েন্টিতে তার সর্বোচ্চ ইনিংস ছিল ২৩ রানের। কেনিয়ার অফ স্পিনার কুইন্টর অ্যাবেল ১৪ রানে তুলে নেন ৩ উইকেট। বাংলাদেশের বোলিংয়ের সামনে এর পর দাঁড়াতে পারেনি কেনিয়া। নতুন বলে সালমা খাতুন উইকেট এনে দেন প্রথম ওভারে। দুই চার মেরে বিপজ্জনক হয়ে ওঠার ইঙ্গিত দেওয়া কুইন্টর অ্যাবেলকে বোল্ড করে দেন পেসার সুরাইয়া আজমিন। মিডল অর্ডারে কিছুটা লড়াই করা শ্যারন জুমাকে (২০ বলে ২৪) থামান ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি খেলতে নামা সানজিদা আক্তার মেঘলা। আর কোনো ব্যাটার দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি।
কেনিয়ার মিডল ও লোয়ার অর্ডার ধসিয়ে দেন অভিজ্ঞ নাহিদা। তার ৫ উইকেটে লাগেনি কোনো ফিল্ডারের সহায়তা। বোল্ড করেন তিনজনকে, একজন এলবিডব্লিউ, একটি নিজের বলেই ক্যাচ। মাত্র ১২.৪ ওভারে শেষ হয় কেনিয়ার ইনিংস। ৫ দলের এই বাছাইপর্ব থেকে কেবল শীর্ষ দল যোগ্যতা অর্জন করবে মূল পর্বে খেলার। আগামী জুলাই-আগস্টে বার্মিংহামে হবে কমনওয়েলথ গেমস।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১২৫/৬ (শামিমা ৪, মুর্শিদা ২৬, নিগার ১, রুমানা ০, ফারজানা ৬, সোবহানা ২, সালমা ৩৩*, রিতু ৩৯*; অ্যাবেল ৪-০-১৪-৩, ওচিং ৪-০-২১-২, ইদাম্বো ৪-০-৩২-১)।
কেনিয়া: ১২.৪ ওভারে ৪৫ (জুমা ২৪, অ্যাবেল ৯; সালমা ৩-০-১৫-১, সুরাইয়া ২-০-৫-১, রুমানা ২-০-৮-১, নাহিদা ৩.৪-১-১২-৫, মেঘলা ২-০-৫-১)।
ফল: বাংলাদেশ ৮০ রানে জয়ী।