মেহেরপুরের একটি বৃদ্ধাশ্রমে চোখে মুখে হতাশা আর ছেলে মেয়ে স্বজনদের প্রতিক্ষায় দিন কাটছে সাতজন বৃদ্ধ বাবার। চাকুরিজিবি ছেলে মেয়েরা বৃদ্ধ বাবা মায়েদের সময় দিতে না পেরে অবশেষে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে গেছেন।
কবে দেখতে আসবেন সে কথা সন্তানরা কখনো বলেনি। তবে কোনো এক সময় হঠাৎ বৃদ্ধাশ্রমে এসে বাবাকে সারপ্রাইজ দেবে ফ্রান্স প্রবাসি মেয়ে গ্লোরিয়া লিপি হালদার। আর সে প্রত্যাশায় বৃদ্ধাশ্রমে দিন কাটছে ৮৬ বছর বয়সি বাবা রবার্ট রঞ্জিত হালদারের। শুধু রবার্ট রঞ্জিত হালদারই নয়, ৯০ বছর বয়সি এ্যাডমিন মনিময় সর্দার,৭৮ বছর বয়সি পল মিত্রের। বিয়ে না করায় জগতে আপন কেউ না থাকায় বৃদ্ধাশ্রমে টেলিভিশন দেখে সময় কাটাতে হয় ৯৫ বছর বয়সি শুসেন সরকারের। তিনিও দিন কাটাচ্ছেন স্বজনদের আশায়।
কষ্টের মাঝেও পরম মমতায় ঘর বাঁধেন যে বাবা মা, এক সময়ে সন্তানের কারণে আপন নিবাস ছেড়ে যেতে হয় তাদের। নিজ ঘরে তখন তারা হয়ে ওঠেন পরবাসী। যে বয়সে নাতি নাতনি আর আপনজনদের সাথে হেসে খেলে একান্তে সময় কাটানোর কথা, সেই বয়সে কাটে তাদের প্রবীণ নিবাস বা বৃদ্ধাশ্রমের ছোট্ট কামরার বিছানায়। ঝাঁপসা চোখে আপনজনদের কথা ভেবে ভেবেই কাটে তাদের সময়।
মেহেরপুর মুজিবনগরের এই বৃদ্ধাশ্রমের অনেক বাবার গল্পই এমনি। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এমন বাস্তব জীবনের মুখোমুখি হতে হবে কোনোদিন ভাবতেও পারেনি বয়সের ভারে নুয়ে পড়া এসব মানুষগুলো। মুজিবনগরের বল্লভপুরের এই বৃদ্ধাশ্রমে জায়গা হয়েছে ২৫ জন বৃদ্ধ মানুষের। এদের মধ্যে ৭ জন পুরুষ ও ১৮ জন নারী। যাদের থেকেও নেই আপনজন, নেই মাথা গোঁজার ঠাই।
বার্ধক্যের কারণে কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন অনেক আগেই। ঢাকা থেকে আসা রবার্ট রঞ্জিত হালদারের একমাত্র মেয়ে থাকেন ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস শহরে। উচ্চবৃত্ত পরিবারের এই ব্যক্তিটিই ছিলেন একজন উচ্চ শিক্ষিত মানুষ। স্ত্রী মারা যান, আর একমাত্র মেয়ে গ্লোরিয়া লিপি হালদারের বিয়ের পরে চলে যান ফ্রান্সে। তাকে দেখা শোনার আর কেউ নেই। পরে ঠাই হয় মুজিবনগরের এই বৃদ্ধাশ্রমে।
সারাদিনই তার সময় কাটে একমাত্র মেয়ের মুখটি দেখার আশায়। মেয়ে দিনে দুবার কল দেন। রাতে গুড নাইট আর সকালে গুড মর্নিং বলেন। অনেক আকুঁতি জানালেও মেয়ে কবে আসবে তার নির্দিষ্ট সময় বলেনা। শুধু বলে কোনো একদিন হঠাৎ এসে তোমাকে সারপ্রাইজ দেবে বাবা। আর ৯০ বছর বয়সি এ্যাডমিন মনিময় সর্দারের খুব মন চাই নাতি নাতনিদের সাথে ফুটবল খেলে আর খুনসুটি করে কাটাতে।
কিন্তু সেই ভাগ্য তার হয়ে ওঠেনি। কানাডা প্রবাসী ছেলে তার সন্তানদের বৃদ্ধ দাদুর কাছে আসতে দেননা, সময় নেই তাদের। আশ্রমের এসব বৃদ্ধদরা নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। তারপরেও বৃদ্ধাশ্রমে নি:সঙ্গ জীবন যাপন করছেন এসব বৃদ্ধরা। জৈষ্ঠ সেবিকা আন্না মন্ডল বলেন, পরিবারের চেয়ে এখানেই ভাল আছেন তারা। তবুও স্বজনদের প্রতিক্ষার প্রহর গুনতে হয় তাদের। এটাই সংসার জগত,এটাই মায়া। নিজের দাদা,বাবাদের মতই আদর যত্ন আর খুনশুটি করেন প্রশিক্ষনার্থী সেবিকা প্রিয়া মন্ডল,পিউ মল্লিকসহ অনেকে।
তবে পিএসকেএসএর নির্বাহী পরিচালক মুহাঃ মোশাররফ হোসেন বলেন, মানুষ বৃদ্ধ হয়ে পড়লে শিশুর মত অসহায় হয়ে পড়ে। তখন পরিবার সন্তানদের সঙগ খুবই জরুরী। প্রতিটি বাবা মায়ের জন্য পরিবারই হয়ে উঠুক সহায় আমরা এটাই প্রত্যাশা করি। শেষ বয়সে পিতা মাতার এবমাত্র ভরসা সন্তান সন্ততি।