মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কের বনবিভাগের সামনে দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে এক সরকারি প্রকৌশলী ও এক কলেজছাত্র নিহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার সকাল আনুমানিক ১০টার দিকে এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন, মেহেরপুর গাংনী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী মো. এ কে এম মাহফুজুর রহমান (৪৭) এবং মেহেরপুর সরকারি কলেজের ছাত্র মো. আকমল হোসেন (২০)। মাহফুজ গহরপুর গ্রামের বাসিন্দা এবং আকমল শেখপাড়া গ্রামের মাবু মিরের ছেলে। এনিয়ে গত ৬ মাসে মেহেরপুরে বিভিন্ন সড়ক দুর্ঘটনায় ২১ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
গতকালের ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান অফিসের উদ্দেশ্যে গাংনীর দিকে যাচ্ছিলেন। অপরদিকে কলেজ শিক্ষার্থী আকমল হোসেন গাংনীর দিক থেকে মেহেরপুরের দিকে আসছিলেন। ঘটনার সময় জেলা বনবিভাগের সামনে পৌছালে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুটি মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে দুইজনই গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে মেহেরপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত মাহফুজের মোটরসাইকেলের নম্বর ছিল ঢাকা মেট্রো-হ ৩৬-৫৪২৯ এবং আকমলের মোটরসাইকেলের নম্বর মেহেরপুর হ-১৩-৫১৯৪। তাদের দুজনের মোটরসাইকেলেই হেলমেট ছিল কিন্তু হেলমেট পরিহিত ছিল না বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
দুর্ঘটনার পর এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে এবং দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত শুরু করেছে।
এদিকে, মেহেরপুরে গত ডিসেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ১৯ জন নিহত এবং অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে শিশু, শিক্ষার্থী, নারী, প্রবাসফেরত যুবক, কলেজ ছাত্র এবং বৃদ্ধও রয়েছেন। দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে রয়েছে মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, ট্রাক, ভ্যান ও বাইসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনের সংঘর্ষ ও নিয়ন্ত্রণ হারানোর ঘটনা।
গত ১০ জুন মেহেরপুর সদর উপজেলার বাড়াদিতে দুই মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে সৌরভ নামের এক যুবক নিহত হন, আহত হন একই পরিবারের ৪ জন সদস্যসহ মোট ৫ জন। ৫ জুন গাংনীতে সড়ক দুর্ঘটনায় আবুল কাশেম (৬২) নিহত হন। ৪ জুন মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা মহাসড়কে দুর্ঘটনায় ছাগল ব্যবসায়ী নজিম উদ্দিন (৬৪) নিহত হন, আহত হন আরও ৪ জন। ৩ জুন মুজিবনগরে ট্রলি ও ইজিবাইকের সংঘর্ষে ৪ শিশু শিক্ষার্থী আহত হয়। ১০ মে গাংনীতে রাস্তা পার হতে গিয়ে আড়াই বছরের শিশু তাছনিয়া খাতুন নিহত হয়। মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কের শুকুরকান্দিতে ট্রাক-মাইক্রোবাস সংঘর্ষে ৩ জন নিহত, ৩ নারী আহত হন। ৯ এপ্রিল গাংনীতে চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফেরার পথে বৃদ্ধ সামসুল হক (৬৫) নিহত হন। ৩১ মার্চ মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক মহাসড়কে প্রাইভেটকার, ভ্যান ও মোটরসাইকেলের ত্রি-মুখি সংঘর্ষে এক ব্যাংক কর্মকর্তা, এক শিশু ও আরও একজন নিহত হন। এ ঘটনায় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন মেহেরপুর সদর উপজেলার উজলপুর গ্রামের হাসান মোল্লার ছেলে ও এনআরবিসি ব্যাংকের রূপনগর শাখার অফিসার আক্তারুজ্জামান ওরফে শোভন, সদর উপজেলার বাড়িবাঁকা গ্রামের মোখলেসুর রহমানের ছেলে আল ইমরান এবং গাংনী উপজেলার ধানখোলা গ্রামের ভ্যানচালক আলী হাসানের শিশু পুত্র জুবায়ের হাসান। ২৭ মার্চ সদর উপজেলার আশরাফপুরে মোশাররফ হোসেন (৬০) সড়কে প্রাণ হারান। ২২ মার্চ কুঠি ভাটপাড়ায় শ্যালো ইঞ্জিন আলগামনের সাথে ধাক্কায় প্রবাস ফেরত সাগর মিয়া (২৪) নিহত হন। ৪ ফেব্রুয়ারি আমঝুপিতে ট্রাকের ধাক্কায় লাল্টু হোসেন (৩২) নিহত, মিনারুল ইসলাম গুরুতর আহত।
২৭ জানুয়ারি, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জামায়াত নেতা শেখ মোমিনুল ইসলাম (৫৫)। ৮ জানুয়ারি গাংনীতে পৃথক দুর্ঘটনায় নিহত হন স্কুল ছাত্র তাইমুজ্জামান (৯), কলেজ ছাত্র সিয়াম হোসেন (১৮) ও আব্দুল্লাহেল বাকী (১৮)। ১ ডিসেম্বর, তেঁতুলবাড়িয়ায় মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে স্কুলছাত্র সজিব হোসেন (১৬) প্রাণ হারান।
এই ছয় মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে কমপক্ষে ৭ জন শিশু ও শিক্ষার্থী রয়েছেন। স্কুলে যাওয়ার পথে, রাস্তা পার হতে গিয়ে বা ভ্যানে থাকাকালীন তাদের মৃত্যু হয়।
দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে কমপক্ষে ৪ জন প্রবাস ফেরত যুবকও রয়েছেন, যারা ছুটি কাটাতে দেশে এসে প্রাণ হারিয়েছেন।